গল্পঃ বর্ষার ছোঁয়া। ( দ্বিতীয় পর্ব )
বর্ষার কাছ থেকে একটু দূরে সরে বললাম,– ভালোবাসা না দাও অন্তত একটা বেবি তো দাও! বেবির মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার দেয়া দূরে দূরে থাকার বেদনা ভুলিবার চেষ্টা করতাম আরকি।
মুখের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে বর্ষা বললো,– বাপরে বাপ কি চালাক এই লোক! ঐ, বেবি দিতে গেলে যেসব প্রসেসিং অবলম্বন করতে হবে তাতে আর আপনার থেকে দূরে দূরে থাকায় লাভটা কি হবে? গাছেরও খাবেন আবার তলারও কুড়াবেন, আমি কিন্তু ফিডার খাইনা যে একেবারে কিছুই বুঝবো না।
আমি ফটাস করে বলে ফেললাম,– এতকিছু বোঝো আর, ভালোবাসা বোঝো না। ফিডার তুমি কেন খাবে, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় ফুটফুটে একটা বাবু আসবে, ফিডার তো সে খাবে।
বর্ষা ভেংচি কেটে বললো,– আমাকে স্পর্শ করার হাউস আপনার কোনদিন মিটবে না, বেবি তো দূর কি বাত!
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,– তাইলে বিয়ে করে লাভ কি হলো! কোলবালিশের সাথে জীবনযাপনই তো ভালো ছিল। অন্তত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকা যায়। বিয়ে করে বউয়ের আদর সোহাগ পেলাম না, পেলাম হতাশা আর, হাহাকার।
বর্ষা ঠোঁট বেকিয়ে বললো,– যে মানুষ কোলবালিশকে চুমা খাইতে ছাড়েনা, সে আমারে পাইলে কি করবে ভাবা যায়! চরিত্রহীন।
: বর্ষা এডা কেমন কথা! কোলবালিশ চুমু খাইলে কেউ চরিত্রহীন হয়! কোলবালিশও একান্ত ব্যক্তিগত, আর তুমিও, কিন্তু তুমি বিষয়টা বুঝলা না, বুঝলেও গুরুত্ব দিলানা।
: আপনি আমার চেয়ে দশ বছরের বড়ো! এত গ্যাপ।
: আরে বয়সের দূরত্বের লেজ ধরে বসে থাকবা, দুজনের ফিজিক্যাল দুরত্ব তো দশ হাতও না, একটা মোর দিলেই আমার বক্ষে ঝাপাইয়া পড়ে ভালোবাসা লেনাদেনা করতে পারো, তা না করে খালি দশ বছরের হিসাব।
: তো কি? দশ বছরের বড়ো আপনি আমার থেকে, বুইড়া একটা।
: দশ বছর করতে করতে আরও দশ বছর কাটাও তারপর নিজেই আফসোস করবা আরও দশবছর আগে তাহার বক্ষে ঝাপাইয়া পড়িয়া নারী জনম সার্থক করিলাম না কেন, এসব ভেবে।
: এহ! নারী জনম সার্থক, আপনার লজ্জা করেনা বয়সে দশ বছরের ছোট একটা মেয়ের সাথে আজেবাজে বকতে?
: আরে তোমার আঠারো আমার আটাশ এই তো! আর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে লজ্জা কিসের। স্বামী স্ত্রীর মাঝে লজ্জা থাকলে তো বাচ্চাকাচ্চা হইতো না, মানবজাতি বস্তা বেডিং গোল করে বিলুপ্তির পথে রওয়ানা হইতো সেই কবে!
: বাবারে বাবা, কথায় পেট ভরা এক্কেবারে।
: শুধু কথায় পেট ভরা না, ভালোবাসায় বুকটাও ভরা, আয় তবে সহচরী, ভালোবাসা বিনিময় করি।
: যতই চেষ্টা করেন কাজ হবেনা, দশ বছরের দুরত্ব।
: আরে তুমি নিউজ দেখনা? বাংলাদেশের যুবকের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ভালোবাসার ঠান্ডা জ্বরে ভুগে আমেরিকা থেকে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রেমিকার বাড়িতে এলেন আমেরিকান সুন্দরী। তারা হাজার মাইল পাড়ি দিতে পারলে তুমি দশ বছরের গ্যাপটা অতিক্রম করলে সমস্যা কি।
বর্ষা বিদ্যুৎ বেগে উঠে বসে আমার মুখে বালিশ চেপে ধরে বললো,– এই রেডিওর স্পিকার ব্লক না করলে সারারাত বাজতে থাকবে তাতে আর সন্দেহ নাই।
বালিশের নিচে বসে পরাণ আমার হায় হায় করে উঠলো, কিসের ফিউচার প্ল্যানিং, কিসের কি! স্বপ্ন পুরনের আগেই বউয়ের হাতে স্বপ্নের শ্রাদ্ধ হবার পালা।
হুড়মুড় করে উঠে বসে বর্ষাকে চেপে ধরে শুইয়ে, বর্ষার দুই হাত দুই দিকে শক্ত করে ধরে বললাম,– হতাশায় হতাশায় জিন্দেগী বরবাদ হোগিয়া, আর না। এবার একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো সুন্দরী।
বর্ষা অবাক হয়ে বললো,– হেস্তনেস্ত মানে!
: আরে হেস্তনেস্ত মানে ইয়ে আরকি!
: ইয়েটা কি?!
: আরে ইয়ে মানে ইয়ে, কিসমিস।
: ও আচ্ছা! আমার হাত দুটো ছাড়ুন, রান্নাঘরে বয়ামে কিসমিস রাখা আছে, সেখান থেকে এনে খান।
: আরে এই কিসমিস সেই কিসমিস না, তোমাকে কিস খাবো বলে এতদিন খুব মিস করছি, সেই কিসমিস। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল ব্যাকা করতে হয়।
হাবভাব দেখে বর্ষা একটু নার্ভাস হয়ে বললো,– ভালো হবেনা কিন্তু বলে দিলাম।
আমি বললাম,– ভালো মন্দ রেজাল্ট পরে শুনবো, আগে শুভ কাজটা তো সারি।
বর্ষার ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেলাম, বর্ষা নির্বাক হয়ে আছে, শরীর মৃদু কাপছে বর্ষার।
আমি বললাম,– কিরে ভাই, চুমু নাকি মধুর সমতুল্য, তাইলে চুমু খেয়ে তোমার বডির ভাইব্রেশন মুড অন হইলো ক্যান।
বর্ষা চুপচাপ, তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এই মুহূর্তে বর্ষার চোখের ভাষা কি বলছে তা বোধগম্য হচ্ছে না ঠিক।
বর্ষা চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে শোকেসের পাশে দাড়ালো। আমি বললাম,– ভয় নেই লক্ষীটি, চুমুই তো খাওয়াইছি, নিমের জুস তো না, এসো আমার কাছে এসো। পোলা মাইয়ারা প্রেমে পড়লে আগে খাইতে চায় কিস তারপর ফুচকা বাদাম, আর তুমি তো আমার বউ। তোমারে নিয়ে কিস ভর্তা বানিয়ে খেলেও সেটা বৈধ।
বর্ষা স্লো মোশনে শোকেসের ওপর থেকে চাকু নামিয়ে বললো,– কিস খাবার মজা আজকে বের করবো আপনার, আর একবার আমাকে স্পর্শ করলে আপনার ইয়ে কেটে বিয়ে করার সাধ চিরতরে মিটিয়ে দেবো।
বর্ষার মুখে ইয়ে কেটে দেবার কথা শুনে আমার ইয়ে মানে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল, ইয়ে বিহীন একটা ঝাপসা ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠতেই প্রাণ আমার হায় হায় করে উঠলো। আমতা আমতা করে বর্ষাকে জিজ্ঞেস করলাম,– বর্ষা ইয়ে মানে কী কাটার কথা বলছো তুমি?
বর্ষা হাসতে চেয়েও ঠোঁটে লাগাম টেনে বললো,– ইয়ে মানে আবার কি! ঠোঁট কেটে দেবার কথা বলছি।
যাক বর্ষার কথা শুনে শান্তি পেলাম মনে। ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম, উঠে শুনি বর্ষা বাপের বাড়ি চলে গেছে!
চলবে…
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।