বসন্তের ছোঁয়া পর্ব ১৯

❤বসন্তে ছোঁয়া❤
লিখাঃ Ayesha Ariya Afiya
পর্বঃ ১৯
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ই নিজেকে রাজের বুকে আবিষ্কার করলো সারা মুচকি হাসি দিয়ে উঠতে নিলে এক টানে আবার শুয়ে নিজে উপরে উঠে।
রাজঃ গুড মর্নিং টুনটুনির আম্মু( মৃদু হেসে)
,
সারাঃ (মুচকি হেসে) গুড মর্নিং টুনটুনির আব্বু।
,
রাজঃ আমার লাইফের সব চেয়ে ভালো ঘুমিয়েছি কালকে।
,
সারাঃ সত্যি।
,
রাজঃ হুম।
,
সারাঃ সকাল সকাল দুষ্টমি শুরু করে দিলে আবার প্লিজ উপর থেকে সরো।
,
রাজঃ উহুম মর্নিং কিস টা কে দিবে।
,
সারাঃ ঐ দিকে তাকাও।
,
রাজঃ পালিয়ে যাওয়ার ধান্দা দাঁড়াও।
,
অতপর
আজকে রেহেনা আর মিস্টার আফজালের বিয়ে সারা রাজি করিয়েছে আফজাল কে সবকিছু রেডি শুরু আফজাল আসবে আর বিয়ে।
,
রেহেনাঃ সারা হয়েছে আর কত সাজাবে হ্যা প্লিজ এবার থামো আমার ভালো লাগছে না।
,
সারাঃ তা বললে হবে আমার একমাত্র বোনের বিয়ে আমি এই ভাবে হতে দিব ভাবলে কিভাবে চুপচাপ যেভাবে বলছি ঠিক সেই ভাবে বসে থাকো।
,
রাজের ফুপিঃ ( চোখ মুছে) পরের ঘরে যাচ্ছিস ভালো ব্যবহার করবি সবার সাথে আমার মেয়ে টা এত বড় হয়ে গেছে ভাবতেই অবাক লাগছে সুখী হ মা তুই ছোট বেলা থেকেই সবুর করেছিস আল্লাহ তোকে অবশ্যই সুখ দিবে আমি মন ভরে দোয়া করলাম।
মা মেয়ে কি কান্না সত্যি একটা মেয়ের জীবনে বিয়ে একটা নতুন ধাপ।
সারাঃ উফ ফুপি তুমি এসে আপুর সাজটা দিলে তো নষ্ট এ্যা এত কষ্ট করে সাজালাম আমি।
,
রাজের ফুপিঃ আর কাঁদবো না চল এবার।
,
সারাঃ হুম চলো।
,
,
সাজানো শেষ একটা লাল বেনারসি শাড়ি, হালকা সাজ, গা ভর্তি গয়না একেবারে ওসাম লাগছে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিল রেহেনা খুব সুন্দর নিজে কে এইভাবে দেখে লজ্জা পেল।
একটু পর আফজাল এসে হাজির রেহেনাকে পাশে বসানো হয়েছে আফজাল হা করে তাকিয়ে দেখছে রেহেনা কে সারাও পড়েছে একটা লাল শাড়ি রাজ হা বাট সুযোগের অপেক্ষায় কিন্ত পাচ্ছে না বেচারা।
,
সারাঃ এই যে দুলা ভাই এই ভাবে হা করে কি দেখছেন হ্যা বাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখেন মন ভরে কেউ মানা করবে না।
,
আফজাল লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিল রেহেনাও লজ্জা পেল আফজাল বিয়েটা করতে চায়নি সারার রিকুয়েস্ট শুধু রাখতে তাই আর ও নিজেও চাই সারার আশেপাশে থাকতে রেহেনাকে পছন্দ নয় যে এটাও না।
বিয়ে টা হয়েই গেল যাওয়ার সময় রেহেনা কি কান্না টাই না কেঁদেছে।
,
আফজালঃ( রুমাল এগিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে ) এই টা দিয়ে মুছুন।
,
রেহেনাঃ লাগবে না( আস্তে করে)
,
আফজালঃ না মানে মুছুন চোখ মুখ ফুলিয়ে কি লাভ বলুন তো আপনার গুন্ডি বোন যদি দেখে তাহলে আমার হাড় দিয়ে ঘুড়ি উড়াবে।
,
রেহেনাঃ ( চোখ মুছে) আমার বোনের নামে কোন বাজে কথা একদম বলবেন না বলে দিলাম।
,
আফজালঃ ( মৃদু হেসে) তাই তো কি করবেন শুনি।
,
রেহেনাঃ,,,,,,,,,।
,
আফজালঃ আমি কিন্ত আমার প্রশ্নেরউত্তর পায়নি?
,
রেহেনাঃ,,,,,,,,,,।
,
অতপর দুজনের দিকে দুজন তাকিয়ে লজ্জা পেল বাড়ি পৌঁছে গেছে বউ এসেছে বউ এসেছ হৈ হুল্লোড় চিৎকার পড়ে গেছে আফজালের মা বাবা বেশ খুশি রেহেনা কে দেখে আফজালের বাবা অবশ্য যায়নি কেননা ওনি অসুস্থ তাই শুধু আফজাল আর ওর কয়েক জন ফ্রন্ড গিয়েছিল।
,
,
রাজ এগুচ্ছে সারা পিছাচ্ছে আজকে ঘোর লেগে গেছে সেই ঘোর ভাঙা সম্ভব না যেতে যেতে দেওয়ালে লেগে গেল রাজ তার এক হাত মাথার উপর রেখে হালকা ঝুঁকে সারার মুখ অব্দি এসে থেমে গেল।
,
সারাঃ রা,,,,জ,,,,,, হ,,,,,,চ্ছে টা কি।
,
রাজঃ যা হচ্ছে হতে দাও কালকে ছেড়ে দিয়েছি বাট আজকে ছাড়বো না গো টুনটুনির আম্মু আমার একটা সারা চাই ( কানে কানে)
,
সারাঃ ঠিক আছে ( লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে)
,
রাজঃ সত্যি।
,
সারাঃ তবে?
,
রাজঃ তবে কি?
,
সারাঃ তোমার পেটে হতে হবে বুঝলে তাহলে রাজি আছি নয়তো আউট ( ভেংচি দিয়ে)
,
রাজঃ মজা করছো আমার সাথে দাঁড়াও দেখাচ্ছি।
সারাকে আর পায় কে এক দৌড়ে ছুটে পালিয়েছে। আজ পর্যন্ত ওদের মধ্য ফিজিক্যাল রিলেশন হয়নি।
,
,
রেহেনা একটা ফুলে ভরা বিছানায় বসে আছে এই বাসর রাত নিয়ে সব মেয়েদের একটা স্বপ্ন থাকে ওর ও কম না কিন্ত লজ্জায় মরে যাচ্ছে গাড়ি তে করে আসার সময় যা লজ্জা দিল আফজাল এখন না জানি আবার কি বলে।
তখনই শব্দ হলো দরজা লাগানোর হুম আফজাল এসেছে একটু সামান্য নড়েচড়ে বসলো আফজাল এসে পাশে বসলো।
আফজালঃ আপনার সাথে আমার খুব গুরুত্ব পূর্ণ কথা আছে যদি অনুমতি দিতাম তাহলে বলতাম।
,
রেহেনাঃ জি বলতে পারেন।
,
আফজালঃ আমি পরিবারের বড় ছেলে আমার এক ভাই লন্ডনে থাকে ও ওখানে থেকে পড়াশোনা করে দেশে আসে বছরে একবার। আমার মা আমার বাবা অসুস্থ ও নাকে নিশ্চয়ই দেখেছেন।
,
রেহেনাঃ জি।
,
আফজালঃ বিয়ে করার কথা চলছে গত পাঁচ বছর ধরে মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর থেকেই কিন্ত আমি রাজি হয়নি সেকরম কাউকে পছন্দ হয়নি। কিন্তু আপনার বেন সারাকে যেদিন দেখেছি চোখ টা আটকে যায় পছন্দ করতে শুরু করি তারপর বুঝলাম ভালোবেসে ফেলেছি বলি কিন্ত পরে জানতে পারি ওনি ম্যারিড আপনাকে কথা গুলো বলছি বলে কি কষ্ট পাচ্ছেন।
,
রেহেনাঃ জি না আপনি বলুন আমি শুনছি।
,
আফজালঃ যাই হোক এসব কথা বাদ আপনার কাছে আমার মা বাবা কে নিজের মা বাবা হিসেবে দেখবেন।
,
রেহেনাঃ আর আপনাকে?
,
আফজালঃ চুপ।
,
রেহেনাঃ আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন আমি নিচে ঘুমিয়ে পড়ি সারাকে আপনি ভালোবাসেন সেটা আমিও জানি এই বিয়ে তে রাজি হয়েছি শুধুমাত্র সারার জন্য আমার ও কোন ইচ্ছা ছিল না আপনার মতো আর কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে আমি ঘুমাবো।
বালিশ কাঁথা নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লো চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে রেহেনা অনেক কষ্ট করেছে ছোট বেলায় বাবা কে পায়নি তারপর আবার রাজের এই অবস্থা এখন তো মিটেছে বাসর রাতে বলার আর কিছু পায়নি আফজাল বুঝতে পেরেছে বিষয়টা।
,
আফজালঃ ( ধমক দিয়ে) আপনার সাহস কি করে হয় বালিশ কাঁথা নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ার উপরে উঠুন বলছি
,
রেহেনাঃ আপনার সাথে থাকার অধিকার শুধু আপনার ভালোবাসার মানুষের আমার না নিচে কোন দিন থাকিনি তবে অব্যাস হয়ে যাবে আপনার চিন্তা করতে হবে না আর আপনার মা বাবার ও না ছোট বেলা থেকেই বাবাকে পায়নি আমি নিজের বাবার মতো ই দেখবো আর আপনার ভাইকেও।
,
আফজালঃ( কোলে করে বেডে শুয়ে দিয়ে) আর কোন দিন যদি দেখি নিচে গিয়েছেন খবর আছে এটা আপনার জায়গা অন্য কারো না। ( চোখ মুছে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল)
,
রেহেনা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে এই টুকু মেডিসিনে এত কাজ দিবে ভাবতে পারেনি।
,
আফজালঃ এই ভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে স্যরি।
,
রেহেনাঃ ( মুচকি হেসে) কিসের জন্য।
,
আফজালঃ না মানে আমি কাজটা ঠিক করিনি। কোন মেয়ে বাসর ঘরে তার স্বামীর ভালোবাসার কথা শুনলে খারাপ লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু না ঘুমিয়ে পড়ুন( পাশে শুয়ে)
,
রেহেনাঃ ( জরিয়ে ধরে) সত্যি বলতে আমি না কাউকে জরিয়ে না ধরে ঘুমাতে পারি না আজকে থেকে আপনি আমার কোল বালিশ।
,
দুজনেই হেসে দিল সম্পর্ক তো এই ভাবেই তৈরী হয় একজন কঠোর হলে আরেকজন নরম আফজাল চেয়ে ও সরাতে পারেনি কখন যে নিজেও জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছে খেয়াল করেনি।
,
,
রাজ মুখ গোমড়া করে বসে আছে সারাকে মন ভরে আজ একবছর হয়ে গেছে বিয়ের একটু ও ভালোবাসতে পারেনি যখনই কাছে যায় আজেবাজে কথা বলে দৌড়ে পালিয়ে যায় রাজের ফোনে একটা মেসেজ আসলো দেখে বুঝে গেছে এটা সারার আস্তে আস্তে রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাত বার টা আজকে ওদের এনিভারসারি।
,
রুমটা পুরো অন্ধকার পুরো বেড ফুল দিয়ে সাজানো রাজ লাইট টা জ্বালালো ঠিক বেডের মাঝ খানে একটা লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে বসে আছে সারা মুখটা এখনো দেখতে পারেনি এক ঘুমটা দেয়া মুচকি হেসে পাশে গিয়ে বসলো হুম মেসেজ টা এমন ছিল।
” হ্যাপি এনিভারসারি টুনটুনির আব্বু আজকে তোমায় একটা রাজ গিফট করবো আই প্রমিজ মেনে নিয়েছি মন থেকে আই লাভ ইউ অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো ( সারা) ❤❤❤❤❤❤❤❤”
রাজ আস্তে আস্তে পাশে গিয়ে শাড়ির আঁচল টা সরালো সারা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে রাজ হা করে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেন্স হারিয়ে সারার উপর ঢলে পড়লো। কারণ এতটাই সুন্দর লাগছে একটা লাল বেনারসি শাড়ি চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিবষ্টিক কানে ঝুমকো গলায় রাজের দেয়া পেন্ডিং আর অনেক গয়না এত কিছু দেখে রাজ সেন্সলেস হয়ে গেছে। সারা শকড।

আপনাদের নায়ক বাসর ঘরে গিয়া সেন্সলেস হইয়া গেছে হা হা হা হা ( আপনাদের লেখিকা)

চলবে………..❤❤❤❤❤❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here