#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#শেষ_পর্ব
,
,
বাড়িটা টিনের।সামনে ছোট্ট একটা উঠোন।
গাছগাছালিতে ভরপুর চারিদিক।
কি মিষ্টি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।কান পাতলে মাঝে মাঝেই পাখির কলতান শোনা যায়।
উঠোনে বসে রাতের জোৎস্না উপভোগ করা যায়।
অপুও তাই করছে।
একটা টুল পেতে উঠোনে বসে জোৎস্না বিলাশ করছে।
তারা গ্রামে এসেছে প্রায় দিন তিনেক হলো।
এসেই দাদির অবস্থা দেখে অপু হতবাক হয়েছিলো।
দিব্যি হেটে চলে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।কোনরকম অসুস্থ তিনি নন।হ্যা,বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছেন তিনি দীর্ঘদিন কিন্তু তা এতো ফলাও করে বলার মতো না।
অপু আর নোমানকে দেখে তিনি কি যে খুশি হয়েছেন তা বলার অতীত।
এসবের মাঝে অপুর অবাক হয়েছিলো নোমানের কথা মনে করে।
দাদি পুরোপুরি সুস্থ আছে তারমানে নোমান তাকে মিথ্যা বলে গ্রামে এনেছে?নোমান খান মিথ্যা বললো?
কেন?শুধুমাত্র অপুকে খুশিতে রাখার জন্য?তার রাগ ভাঙানোর জন্য?
ব্যাপারটা ভাবতেই অপুর মনে একরাশ ভাললাগা ছেয়ে গেছিলো।
হ্যা,নোমানের উপর সে রেগে ছিলো,যথেষ্ট রেগে ছিলো।কিন্তু তা কিছুসময়ের জন্যই।
নোমানের কথায় অপুর খারাপ লেগেছিলো ঠিকই কিন্তু পরে এ বিষয়ে অপু খুব ভেবেছিলো।
তারও তো ভুল ছিলো।
রায়হানের সাথে কথা হয়েছে সে কথা তো নোমানকে আগে জানানো উচিত ছিলো তার।সে তো জানতো নোমান কেমন মানুষ?কেমন রাগী?রেগে গেলে যে তার হুশ থাকেনা।
তবু কেনো নোমান রেগে যায় এমন কাজ করতে গেলো অপু?
তারপরে নোমান অপুর রাগ ভাঙানোর জন্য যেসব কাজ করেছে সেসবেও তো নোমানের ভালবাসা প্রকাশ পায়।ভালবাসার গভীরতা প্রকাশ পায়।
অপুর নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।
এমন একজন কে জীবনসঙ্গী পাবে,কখনো কি ভেবেছিলো?যে তাকে এতোটা ভালবাসবে?
নোমানের সেদিনের কথাগুলো ভুল ছিলো,অপুর বেশ খারাপও লেগেছিলো কিন্তু একটা সময়ের ব্যবহার বিবেচনা করে পুরো মানুষটাকে দোষী করা যায়না।
প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা খারাপ পয়েন্ট থাকে।নোমানের সে পয়েন্টটা হলো রাগ।অতিরিক্ত রাগী সে।কিন্তু তাই বলে সে পুরো মানুষটাই খারাপ না।হতে পারে তার একটা দিক খারাপ।
কিন্তু কোন মানুষ পুরোপুরি ভাল?সবারই একটা না একটা খারাপ দিক আছে।
খারাপ ভালো মিলিয়েই তো মানুষ।
অপুর ভাবনার সূতো কাটে পাশে শব্দ পেয়ে।
পাশে তাকিয়ে দেখে নোমান বসে আছে একটা টুলে।
তার পাশাপাশি টুলে বসে অপুর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে সে।
এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপু কিছুটা লজ্জা পায়।চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে।
জোৎস্নার রুপালী আলো চোখেমুখে পড়ায়,কি অদ্ভুত সুন্দর দেখায় তাকে।
নোমান মুগ্ধ হয়ে দেখে।
অপু বলে,
—কখন এলেন এখানে?
নোমানের ঘোর কাটে।অপুর লজ্জামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
বলে,
—এইমাত্র।
আরেকটু গা ঘেসে বসে।
নিচে গড়িয়ে থাকা শাড়ির আচল তুলে অপুর মাথায় দেয়।
দৃষ্টি আরো গাড় করে।
অপু বিষয়টা লক্ষ করে আরও নুইয়ে পরে।
—ঢাকা ফিরবেন না?
নোমান উদ্বিগ্ন গলায় বলে,
—কেনো?এখানে থাকতে ভালো লাগছেনা?
—না না ঠিক তা না।
—তাহলে?
কন্ঠ একটু আকুলতা আসে তার।বলে,
—আমাকে কি ক্ষমা করোনি অপরুপা?
বিশ্বাস করো আমি আর কোনদিনও তোমায় অবিশ্বাস করবো না,কক্ষনো না।
কখনো ওরকম ব্যবহারও করবো না।
তুমি তো জানো আমায়,চেনো আমায়।বলো?
তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে?
আমার এই রুক্ষ জিবনে বসন্তের বাতাস তুমি।
আমার জিবনে বসন্ত এনেছো তুমি।
তুমি আমায় না বুঝলে কে বুঝবে বলো?
অপুর খারাপ লাগে।
সত্যিই সে চেনে নোমানকে।
নোমানের হাত দুটো এগিয়ে এসে আঁকড়ে ধরে অপু।
নরম সুরে বলে,
—আমি বুঝি আপনাকে।
নোমান আসস্ত হয়।
ভেতরের উথাল-পাতাল তোলপাড়ের প্রলয় নিমিষে শান্ত হয়।
বুকের ভেতর আশা জাগে।ভালো থাকার আশা।
অপুর চোখে চোখ রাখে সে।
চোখের পলক পরেনা,অপুরও না।
চোখে চোখে হাজারও আলাপন হয়।
মিষ্টি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা হয়।
দুজনে হাতে হাত রেখে জোৎস্নাবিলাশ করে।
দুরে কোথাও অজানা কোন নিশাচর পাখি ডাকে।
হালকা মৃদু বাতাস বয়।
সে শব্দ দুজনার কানে পৌছায় না।
দুজনার মনে তখন একই গান বেজে চলেছে।একই সুরে মত্ত দুজনায়।
,
,
সমাপ্ত।
khub e valo laglo