বস বর পর্ব ১৫+১৬

#বস_বর (পর্ব-১৫ ও ১৬)
পর্ব-১৫
Writer : Eti Chowdhury
.
– কিন্তু স্যার….

– ইটস ওকে রিমি আর স্বার্থপর হতে পারছি না আমি।

রোদ রিমিকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলেন না। মন চাইছিলো সব বলে দিতে তার রোদকে। কিন্তু পারল না ব্যার্থ হয়ে বের হয়ে চলে এলো। মুখ ভার করে রাফসানকে সব বলল রিমি। সব কিছু শুনে রাফসান নিজেও মুখ ভার করে বসে রইল। রিমি আর রাফসান দুজনেই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

রাফসান আর রিমি মুখ ভার করে বসে রইল। রিমি বলল,

– এখন কি হবে?

– হুম কিছু একটা তো করতেই হবে।

দু দিন পর অফিসে নতুন লোক নেয়া হবে তাই ইন্টারভিউ চলছে।

ইতি আর রাফসান মিলে ইন্টারভিউ নিচ্ছে। রোদের বিশেষ কাজ থাকায় সে থাকতে পারেনি। তাছাড়া ইতি আর রাফসানের উপর তার বিশ্বাস আছে। তারা বেস্ট টাকেই বেছে নিবে।

সকাল থেকে অনেকগুলো ইন্টারভিউ নেয়া হলো। কিন্তু কোম্পানির জন্য যোগ্য বলে কাউকেই তাদের পছন্দ হচ্ছে না।

– মে আই কাম ইন ?

– ইয়েস কাম ইন। সিট ডাউন।

– থ্যাংক ইউ।

– মিস্টার আদি। ইউর সিভি ইজ কোয়াইট ইমপ্রেসিভ।

ইতি আর রাফসান একে একে প্রশ্ন করল।

রাফসান বলে

– আপনি একটু বাহিরে অপেক্ষা করেন আমরা আপনাকে একটুপর ডাকছি।

ওরা দুজনই পজেটিভ আদির ব্যাপারে। ইতি বলে,

– ওকে তাহলে এটাই ফাইনাল।

– ওকে।

আদিকে আবার ভিতরে আসতে বলা হলো। ইতি বলে,

– ওয়েলকাম টু দ্যা কোম্পানি।

– থ্যাংক ইউ ম্যাম।

রাফসান ইতিকে দেখিয়ে আদিকে বলে,

– সি ইজ ইতি চৌধুরী। মেম্বার অফ কোম্পানি বোর্ড। ফ্রম নাও অন ইউ উইল এসিস্ট হার।

ইতি আসির সাথে হেন্ডসেক করল হাসি দিয়ে। আসি বলল,

– থ্যাংক ইউ ম্যাম।

– আপনি কাল থেকে জয়েন করছেন।

পরের দিন থেকেই আদি সট্রংলি ইতিকে এসিস্ট করা শুরু করল। কাজের প্রতি ভালোই ডেডিকেটেড ছেলেটা।

দুদিন পর বিজনেস ট্রিপ শেষ করে রোদ বাসায় না গিয়ে সোজা অফিসে চলে আসে। কারণ রোদ জানে বাসায় গেলে সে তার ইতিকে পাবে না। আর দুদিন পর দিরে রোদ সবার আগে তার ইতিকেই দেখতে যায়। তাই অফিসে চলে যায়।

ইতি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় সে এখনো জানে না যে রোদ এসেছে। ইতি মিটিংএ শেষ করে বের হতেই রিমি এগিয়ে এসে বলে,

– ম্যাম এমডি স্যার এসেছেন।

ইতি প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে চোখের পলক ফেলে ধন্যবাদ জানলো রিমিকে। ইতি সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলো। নিজের হাতে কফি বানালো রোদের জন্য। এতো দিনে রোদের কফির টেস্টটা ভালোই রপ্ত করতে পেরেছে ইতি। আর ইদানিং ইতির হাতের কফি ছাড়া রোদ খায়ও না। ইতি কফি নিয়ে রোদের কেবিনের দিকে হাটা দিলো। কেবিনের কাছাকাছি আসতেই ইতি টের পেলো আদিও ওর পিছু পিছু আসছে। ইতি থেমে গিয়ে পিছনে ঘুরে দাড়ালো। আদিকে জিজ্ঞেস করল,

– কিছু বলবে?

– নো ম্যাম।

– তাহলে?

– নো একচুয়্যলি।

– তুমি আমার কেবিনে গিয়ে ফাইল গুলো কমপ্লিট করো আমি আসছি।

– ওকে।

ইতি হাসি মুখে রোদের কেবিনে ডুকে গেলো। কতক্ষণে রোদকে দেখবে আর তর সইছিলো না ইতির তাই নক না করেই ভিতরে চলে গেলো।

ইতি মুখে একটা হালকা হাসি নিয়ে বলে,

– কফি।

রোদ পিছনে ফিরে তাকায়। ইতিকে দেখে রোদের চোখ, মুখ উজ্জল হয়ে গেলো সেও হেসে দিলো। ইতি কফিটা টেবিলে রেখে দিলো। রোদ ইতির দিকে এগোতে লাগলো। রোদ এক পা এগোচ্ছে ইতি এক পা পিছাচ্ছে। রোদ বলে,

– থ্যাংকিউ।

– হাউ অয়াজ দ্যা ট্রিপ?

– সাকসেসফুল।

– কোগ্রাচুলেশনস।

– থ্যাংকিউ।

কথা বলতে বলতে এসে ইতির পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো। রোদ ইতির একদম সামনে এসে দাড়িয়ে গেলো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। রোদ তার দু হাত ইতির দুপাশে দিয়ে ইতিকে আটকে দাড়িয়ে রইল। অপলক তাকিয়ে রয়েছে রোদ ইতির দিকে। রোদের গভীর চোখ দুটোতে ইতির হারিয়ে যেতে মন চাইছে। রোদ মন ভরে ইতিকে দেখছে সে। মুখটা ইতির আরো কাছে নিতেই ইতি চোখ বন্ধ করে নিলো। রোদ আলতো করে ইতির কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো। ইতি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। এমন সময় রিমি এসে তা দেখে ফেলল।

– সরি আমি কিছু দেখি।

বলেই রিমি পিছনে ফিরে গেলো।

– ইসস,,,,

লজ্জা পেয়ে ইতি বের হয়ে গেলো।

রিমি গিয়ে অলরেডি রাফসানকে সব বলে দিয়েছে। রাফসান ইতিকে দেখে বলে,

– তাই বুঝি তলে তলে এতো কিছু চলছে?

ইতি রাগি রাগি চোখ করে রিমির দিকে তাকিয়ে রইল। রাফসান বলে,

– হুহ….আমাদের বলে কিছুই বলবে না আর নিজেরা নিজেরা ঠিকি।

– ওয়েট ওয়েট ওয়েট…..তোমরা যা ভাবছো আসলে তেমন কিছুই না। না আমি উনাকে বলেছি না উনি আমাকে বলেছেন।

– তাহলে…..

– এটা সত্যি যে আমি উনার স্ত্রী আর আমার ওপর উনার অধিকার আছেন। উনাকে পাবো কি না জানি না তাই যেটুকু পাই তা হারাতে চাই না। আর পাগলটা যে আমাকে ভালোবাসে তা তো আমি জানিই শুধু তাকে দিয়ে বলানোর অপেক্ষায় আছি। বলতে তো হবেই তাকে বাই হুক ওর বাই কুক।

– তোমরা দুজনই পাগল যত্তসব।

রাফসান রাগ করে চলে গেলো।

রোদ সারাদিনে খেয়াল করল। একটা ছেলে সারাক্ষণ ইতির পাশে পাশে থাকছে। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য কাউকে কিছু জিঙ্গেস করা হয়নি তার।

বাসায় এসেও রোদ কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ইতির সাথে সেভাবে কথা হয় নি।

পরের দিন অফিসে।

সকাল থেকে ইতির মনটা খারাপ। সুন্দর মুখটায় কালো মেঘের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু কেউ বুঝতেই পারছে না। সকাল থেকে এক কাপ কফি হাতে নিয়ে বসে আছে ইতি কিন্তু এক চুমুক কফিও সে মুখে দেয়নি। ইতির মন খারাপ দেখে রোদ অস্থির হয়ে যাচ্ছে ঠিকি কিন্তু তাও কিছু বলছে না। কারণ ইতির উপর তো তার অধিকার নেই। কিন্তু রাফসান আর থাকতে না পেরে ইতিকে জিঙ্গেস করেই ফেলে,

– সমস্যা কি?

ইতি ভাবনায় বিভর। রাফসানকে সে দেখেইনি। রাফসান টেবিলে একটা বারি দিয়ে রাফসান ইতি বলে চিৎকার দেয়। ইতি কেঁপে উঠে বলে,

– হ্যাঁ কে কি?

– সমস্যা কি তোমার? কি হয়েছে?

– কিছু না রাফসান। আমি ঠিক আছি।

এমন সময় আদি চলে আসে। নক না করেই সরাসরি ভিতরে চলে এসে বলতে নেয়,

– এই পেপারগুলো….

তা দেখে রেগে গিয়ে ইতি একপ্রকার চিৎকার করে বলে,

– কি ব্যাপার মেনার ভুলে গেছো নাকি? আই এম ইউর বস। নক না করে ভিতরে আসার পারমিশন কে দিলও তোমাকে? আমি কি ডেকেছি তোমাকে?

রাফসান অবস্থা সামলানোর জন্য আদিকে বলে,

– আদি প্লিজ নাও গো।

– আই এম সরি।

মন খারাপ করে চলে যায় ছেলেটা।

রাফসান ইতির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় তাকে। ইতি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে মেয়েটার। রাফনাস বলে,

– কি হয়েছে?

ইতি চুপ করে রইল।

– চোখের পানি মুছো। কি হয়েছে বলো?

ইতি তাও চুপ করে রইল।

– দেখো এখন যদি তুমি আমাকে কিছু না বলো তাহলে কিন্তু আমি স্যারকে গিয়ে জিঙ্গেস করবো।

কথাটা বলে রাফসান আর দাড়ালো না হাটা শুরু করলো।

– সময় শেষ হয়ে আসছে রাফসান।

ইতির কথা শুনে রাফসান দাড়িয়ে গেলো।

– আমি মনে হয় ওনাকে হারিয়েই ফেলবো।

– কেনো বলছো এই কথা?

– আর মাত্র দেড় মাস বাকি এর পরে আমায় উনাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে রাফসান। আমি পারবো না উনাকে ছাড়া থাকতে। আমি পারবো না।

অনেক্ষণ কান্না করল ইতি।

– তুমি কেনো বলছো না তাকে?

– না রাফসান তা হয় না উনার ওপর বোঝা হতে চাই না। আর আমার ভালোবাসা তার ওপর চাপিয়ে দিতে চাই না আমি। তাই তার জন্য হলেও তাকে ছেড়ে চলে যাবো।

– কিন্তু ইতি…

– প্লিজ রাফসান আর না আমি আমার ডিসিশন চেন্জ করবো না।

বলেই ইতি চলে গেলো। রাফসানকে আর কোন সুযোগ দিলো না।

ইতি নিচে নামতেই আদিকে দেখতে পেলো। অহেতুক ছেলেটাকে বোকল তখন সে। সরি বলা দরকার ভেবেই ইতি আদির কাছে যায়। গিয়ে আচমকাই বলে,

– সরি।

আদি অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে ইতি। ইতিকে দেখেই হাসি দিয়ে দিলো সে। ইতি বলে,

– আসলে তখন আমার ওভাবে বলা উচিত হয়নি। একচুয়েলি…..

– ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু…

– কিন্তু কি?

– আপনার মন খারাপ কেনো?

– তোমাকে না কত বার বলেছি আমাকে তুমি করে বলতে।

– ওকে ওকে। বলছি আগে বলো তোমার মন খারাপ কেনো?

– ও কিছু না।

– কিছু তো অবশ্যই কিন্তু বলতে না চাইলে জোর করছি না।

ইতি অনেক্ষণ বসে আদির সাথে গল্প করল। ছেলেটা অনেক সুন্দর করে কথা বলে। এত মজার মজার কথা বলল যে ইতি খিল খিল করে হেসে দিলো। আদির কথা শুনে যেনো ইতির হাসিই থামছে না। রোদ দেখছে ইতি আদির কথা শুশে খিলখিলিয়ে হাসছে। দেখেও রোদ কিছু বলছে না।

আদি ইতিকে বলে,

– এভাবে হাসলেই আপনাকে সরি তোমাকে ভালো লাগে।

রোদ ইন্টার কোমে রিমিকে কল দিয়ে বলে,

– রিমি আমার কেবিনে একটু আসতো।

– আসব স্যার?

– হুম….ওই ছেলেটাকে দুদিন ধরে দেখছি। কে?

– ও তো আদি। ইতি ম্যাম কে এসিস্ট করছে। কিছুদিন আগেই যে ইন্টারভিউ হলো ওকেই সিলেক্ট করেছে ম্যাম আর স্যার।

– ওহ…..ওকে তুমি যাও।

আদির সাথে কথা বলেই ইতির মনটা কিছুটা ভালো হয়ে গেলো। মন খারাপের কথা ভুলেই গিয়েছে সে।

রোদ বেরিয়ে এলো নিজের কেবিন থেকে। ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

– কি ব্যাপার কাজ রেখে হাসা হাসি হচ্ছে খুব।

রোদকে দেখেই ইতির হাসি থেমে গেলো। সে বলে,

– না স্যার একচুয়েলি আমরা জাস্ট…

– দেখেছি। নতুম ক্লাইন্টের ফাইল টা কি রেডি?

– ওই ফাইলটা আদি কে দেয়া হয়েছে।

আদি- আলমোস্ট ডান।

– আলমোস্ট বলতে কিছু নেই হয়ত হয়েছে নয়ত হয়নি। আর ইতি মিটিংটা কাল সো ২ টার মধ্যে ফাইলটা রেডি হয়ে যাওয়া চাই। আর মিটিংএ তুমিও থাকছো।

– ওকে স্যার আমি দেখছি।

বলেই রোদ চলে গেলো। রোদ চলে যেতেই আদি ইতিকে জিজ্ঞেস করে,

– এই রাক্ষসটা কে?

ইতি ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকায়। একটা রাগি রাগি লুক দিয়ে বলে,

– কি বললে?

– ঠিকি তো বললাম রাক্ষসই তো।

– হি ইজ দ্যা এমডি অফ দ্যা কোম্পানি।

বলেই ইতি সেখানে থেকে চলে যায়। আর আদি হা করে তাকিয়ে রইল। তারপর সে নিজেও ইতির পিছু পিছু গেলো। ইতিকে আরো জিজ্ঞেস করল,

– সিরিয়সলি !!! উনি আমাদের এমডি?

– হুম….

– বাট বান্দা হ্যান্ডসাম আছে।

– মোস্ট হ্যান্ডসাম ম্যান ইন দ্যা কোম্পানি।

বলে ইতি মনে মনে হাসলো। আর মনে মনে বলল দেখতে হবে না জামাইটা কার।

হাজার কাজের মাঝেও রোদের মন ইতির উপরই রয়ে গেছে। আদিটা যে বড্ড বেশি ইতির পিছু ঘুরছে। তার বাকিদের দৃষ্টি গোচর না হলেও রোদের দৃষ্টিকে তা ফাঁকি দেয়নি।

অনেক্ষণ হলো ইতিকে দেখছে না রোদ। কাচের গ্লাসের এপাশে ওপাশে ওদের কেবিন। বার বার চোখ যাচ্ছে তার। নাহ মেয়েটা আসছে না গেলো কোই। রোদ আর অপেক্ষা করতে পারলো না। বেরিয়ে গেলো। বেরিয়ে রিমির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

– রিমি ইতি কোথায়?

– ম্যাম তো স্টোরে গেছেন।

– ওকে।

বলে রোদ চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এলো। ফিরে এসে আবার জিজ্ঞেস করল,

– ইতি কি একা গেছেন?

– না স্যার ম্যামের সাথে আদিও গেছেন।

মনে মনে এটাই ভাবছিলো রোদ। কারণ অনেক্ষণ ধরে ইতির সাথে সাথে আদিকেও দেখা যাচ্ছিলো না। রোদ আর অপেক্ষা না করে স্টোরে চলে গেলো। স্টোরে গিয়ে রোদের চোখ কপালে উঠে গেলো। ইতি সেল্ফের উপর উঠেছে ফাইল নামানোর জন্য। আর আদি নিচে দাড়িয়ে কথা বলছে শুধু কথা না রিতিমত সে ইতিকে হাসাচ্ছে। দেখে রাগ উঠে গেলো রোদের। বেখেয়ালে পরে যেতে পারে মেয়েটা। রোদ যা ভাবল তাই। ইতি পরে যেতে নিলো দেখেই রোদ দৌড়ে এলো। আদিও এগিয়ে যাচ্ছিলো। রোদ আদিকে হাত দিয়ে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই আদি গিয়ে ছিটকে পরে। আর রোদ নিজেই ইতিকে ধরে ফেলল।

ইতি আআআ বলে চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। ভাবলো এই বুঝি সে শেষ। কিন্তু না নিজেকে কারো কোলো অনুভব করল ইতি। চোখ খুলতেই দেখে সে রোদের কোলো। রাগে তার চোখ লাল হয়ে এতো বড় বড় হয়ে গেছে। রোদ ইতিকে একপ্রকার ধমকে বলল,

– এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি? এতো উপরে কেনো উঠেছো? মাথায় সমস্যা নাকি? এখন যদি কিছু হয়ে যেতো। এখন আমি না থাকলে কি হতো?

ইতি মিট মিট করে হাসতে লাগল। ইতিকে হাসতে দেখে রোদের রাগ উঠে যায়।

– আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে। আর এই ছেলে তুমি থাকতে ও কেনো উপরে উঠলো। আর এতো হাসা হাসির কি আছে? এভাবে ডিসট্রেক করলে তো পরেই যাবে। যত্তসব ইউসলেস পিপল।

বলেই রোদ বাহিরের দিকে হাটা শুরু করল। ইতি চেচিয়ে উঠে সাথে সাথে,

– এ্যা কি করছেন?

– আবার কি হলো?

– কোথায় যাচ্ছেন?

– এখন কি আমি আমার কেবিনেও যেতে পারবো না?

– যান কিন্তু আমাকে তো নামান।

– ওহ….

রোদ ভুলেই গিয়ে ছিলো যে ইতি ওর কোলে। ইতিকে নামিয়ে দিয়ে রোদ রেগে বেরিয়ে গেলো। ইতি পিছনে ঘুরতেই দেখে আদি উঠে দাড়াচ্ছে। তা দেখে ইতি বলে,

– পরে গেলাম আমি আর উঠে দাড়াচ্ছো তুমি কেনো?

– স্যার যে ধাক্কা দিলোরে বাবা।

– স্যার তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে বাট কেনো?

– কি জানি কোথা থেকে চলে এলো। তুমি পরে যাচ্ছো দেখে ধরতে নিলাম আর কোথা থেকে উনি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন। আসলেই রাক্ষস লোকটা।

ইতি চোখ বড় করে তাকাল আদির দিকে,

– আবার কি বললা?

– রাক্ষসকে রাক্ষস বলেছি।

বলেই আদি দৌড়ে বেরিয়ে গেলো স্টোর থেকে।

– পাগল একটা ছেলে।

বলে হেসে দিলো ইতি। কিন্তু উনি আদিকে ধাক্কা দিয়ে আমায় ধরলেন। ওয়েট ওয়েট তার মানে উনি আগেই এসেছেন। সামনে আসেননি। আড়াল থেকে দেখছিলেন আমায়। আর যেই আমি পরে গেলাম আদি আমায় ধরবে ভেবে উনি আদিকে ধাক্কা দিয়ে আমায় কোলে তুলে নিলেন। ইয়েস…..আমার #বস_বর আপনি ফেসে গেছেন। আপনাকে তো মনের কথা বলতেই হবে। তাও ব্যাপারটা আরেকটু সিওর হতে হচ্ছে। হুম ভাবতে হবে। পেয়েছি। বুদ্ধি ও হাজির এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই ইতি একটা হাসি দিলো।

সারাদিন রোদের রাগে রাগেই কাটলো। ইতি পরে যাওয়ার জন্য নয়। ওই আদির উপর। ছেলেটা এতো কেনো ইতির পিছে পিছে থাকে।

বিকেলে কাজ শেষ করেই ইতি রিমির কাছে হাজির। ইতিকে দেখে রিমি বলে,

– ম্যাম এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

ইতি আজব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে। রিমি বুঝে গেছে রিমিকে দিয়ে কোন কাজ করাবে তাই এভাবে তাকিয়ে আছে ইতি। কারণ রাফসানও এটাই করে তাই রিমির বুঝতে অসুবিধা হলো না।

রিমি অসহায়ের মতো ইতির দিকে তাকিয়ে রইল আর বলল,

– কি করতে হবে আমায় ম্যাম?

ইতি সব বলে দিলো কি করতে হবে রিমিকে। প্লেন অনুযায়ী সব ঠিক হলো।

রোদ করিডরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো। এমন সময় রিমি আর রাফসানের কথা শুনতে পেলো সে। সেদিকে কান দিলো না রোদ। কিন্তু রিমির কথা শুনে থমকে গেলো রোদ। কান থেকে ফোন নামিয়ে ফেলল। রিমি হেসে দিলো তাই রাফসান বলল,

– হিহিহিহিহি…..

– হাসছো কেনো?

– আজ কিছু হতে যাচ্ছে।

– কি?

– গেস করেন।

– পারছিনা তুমি বলো আমার সহ্য হচ্ছে না।

– আজ আদি ইতি ম্যামের জন্য স্পেশিয়াল কিছু প্লেন করেছে।

– স্পেশিয়াল মানে? আদি আর ইতির মধ্যে কিছু চলছে নাকি?

– আদির সাইড থেকে তো ফুল অন চলছে। এখন শুধু ম্যাম কি ফিল করে তা জানার অপেক্ষা।

কথা গুলো শুনে রোদ যেনো আকাশ থেকে পরল। ইতির কেবিনের দিকে গেলো রোদ কিন্তু ইতি নেই সেখানে। পিছনে ঘুরতেই দেখে ক্যান্টিন থেকে ইতি আর আদি হাসাহাসি করতে করতে আসছে। ভালো ভাবে খেয়াল করতেই দেখতে পেলো ইতি যে সাইড দিয়ে আসছে সামনে কিছু পরে আছে ইতি সেদিকে দেখছেই না। দেখবেই বা কিভাবে সে তো আদির কথা শুনে হাসায় ব্যস্ত। অসহ্য!! যা ভাবা তাই আজ রোদ যা ভাবছে তাই হচ্ছে ইতির সাথে। ইতি আর দু কদম আগালেই পা পিছলে পরে যাবে। কিন্তু না হয়ত পরবে না আদি ধরে ফেলবে। ইম্পসিবল। রোদ আবার দৌড় লাগালো। ঠিকি দু কদম আগাতেই ইতির পা পিছলে গেলো। ইতি পরে যাওয়ার আগেই রোদ ওকে ধরে ফেলল। এক হাত ইতির কমড়ে আরেক হাত দিয়ে ইতির হাত ধরে ফেলে। ইতি হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল। রোদও তাকিয়ে রইল ইতির দিকে। দুজন দুজনকে দেখতে লাগলো। কেউ কারো দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না। ইতি মনে মনে মিট মিট করে হাসছে। পাগলটা তাই করল ইতি যা ভেবে ছিলো তাই হলো। কারণ রিমি আর রাফসান এর কথা গুলো ইতির সাজানো ছিলো। রোদ কি করে দেখার জন্য।
.
চলবে…………..
.
.
.
#বস_বর
পর্ব-১৬
Writer : Eti Chowdhury
.
.
রোদের এক হাত ইতির কমড়ে আরেক হাত দিয়ে ইতির হাত ধরে ফেলে। ইতি হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল। রোদও তাকিয়ে রইল ইতির দিকে। দুজন দুজনকে দেখতে লাগলো। কেউ কারো দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না। ইতি মনে মনে মিট মিট করে হাসছে। পাগলটা তাই করল ইতি যা ভেবে ছিলো তাই হলো। কারণ রিমি আর রাফসান এর কথা গুলো ইতির সাজানো ছিলো। রোদ কি করে দেখার জন্য।

রোদ ওভাবেই অনেক্ষণ আগলে রাখে ইতিকে।

ইতি আস্তে করে বলল,

– সবাই দেখছে।

রোদ কিছুটা বিব্রতবোধ করল। ইতিকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে যায় সে। রোদ ইতিকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিলো। ছোট করে একটা কাশি দিলো সে। ইতি বলে,

– আপনি ঠিক আছেন তো।

– আমার কি হবে। সবার এখানে কি যে যার জায়গাও যাও।

ইতির দিকে তাকিয়ে রোদ বলে,

– এই মেয়ে এই চোখ কোথায় থাকে হ্যাঁ দেখে হাটতে পারো না? আর সমস্যা কি এতো হাসাহাসি কেনো করো? আমি কি সব সময় ফ্রি থাকি নাকি তোমাকে পাহাড়া দিতে যে কখন তোমার বিপদ হবে আমি বাঁচাবো।

ইতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদ নিজের কথা বলে চলে গেলো।

ইতি রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আর মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আদি বলল,

– এটা কি হলো?

ইতি আদির দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,

– কোনটা?

– উনি সেধে এসে বাঁচালো আবার কথা শুনিয়ে চলে গেলো? আর উনি না আসলেই বা কি হতো আমি ছিলাম না বুঝি।

আদি মিনমিন করে আরো বলল বার বার আমাদের মাঝে আসতেছে লোকটা।

– কি বললা?

– আরে কোই কিছু না তো।

– হুম বেটার।

অফিস টাইম শেষ হয়ে গেলো। একে একে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। ইতিও রেডি হচ্ছে বেরবে বলে। রোদ দেখছে বসে বসে ইতিকে। মেয়েগুলো পারেও আসার আগে রেডি হয় যাওয়ার সময় রেডি হয় এরা পারেও বটে। বাসায়ই তো যাবে এতো রেডি হবার কি আছে। ইতি বেরলেই রোদ বেরবে। এমন সময়ই দেখে আদি ইতির রুমে হাজির একসাথে বেরবে বলে। রোদ আর দেড়ি না করে ইতিকে ইন্টার কোমে ফোন দিয়ে বলে,

– একটু আমার কেবিনে এসো তো?

– আমি তো বের হবো।

– আমি কেবল একটা ফাইল দিবো নিয়ে যাও সাথে করে।

– ওকে আসছি।

ইতিকে ফোন রাখতেই আদি জিজ্ঞেস করে,

– আবার কি হলো?

– কিছু না তুমি যাও। লবিতে একটু ওয়েট করো আমি আসছি।

– দেড়ি করো না।

– দেড়ি হলে তুমি চলে যেয়ো।

– জ্বি না আজ যাচ্ছি না আপনাকে ছাড়া।

ইতি রোদের কেবিনের সামনে গিয়ে বলে,

– আসবো স্যার?

– এসো। আদি তোমার কেবিনে কি করছে এখন বাসায় যায়নি।

ইতি হা করে অবাক হয়ে একবার পিছনে ফিরে দেখল না মাঝের কর্টানটা তো দেয়া তাহলে উনি দেখলো কিভাবে যে আদি এসেছে। ইতিকে হা করে থাকতে দেখে রোদ বলে,

– কি হলো? বললে না।

– ও বায়না ধরলো আজ একটু ওর সাথে বের হতে তাই আর কি।

রোদ বসা থেকে উঠে দাড়াল। ভ্রু কুচকে ইতির দিকে তাকাল। তা দেখে ইতি মনে মনে বলল,

– ওমা উনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

রোদ এক ঝটকায় ইতির হাত দরে বলল,

– যাওয়াচ্ছি।

বলেই ইতিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। আদি লবিতে ওয়েট করছে তাই ইচ্ছে করেই করিডরের লিফট দিয়ে ইতিকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো রোদ। তা দেখে ইতি বলল,

– এসব এর মানে কি?

– তুমি এখন বাসায় যাবে। অন্য কোথাও যাবে না তাই।

– আমি অন্তত ওকে বলে আসতাম।

– সেটা এখনও বলতে পারো। ফোন করে বলে দাও।

ইতি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিলো কেবল আবার সাথে সাথে রোদ চিৎকার করে উঠলো।

– ওয়েট ওয়েট ফোন করা লাগবে না টেক্সট করে দাও।

ইতি রাগি চোখে রোদের দিকে তাকালো। তা দেখে রোদ বলল,

– দেখে লাভ নেই যা বলছি তাই করো। নাও উই আর ফ্রেন্ডস তাই তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য।

– উফফ….

রোদকে নিয়ে আর পারে না ইতি। তাই কথা না বাড়িয়ে রোদ যা বলল তাই করল মিথ্যে মিটিং এর বাহানা দিয়ে দিলো আদিকে। তারপর রোদকে বলে,

– এখন খুশি তো?

রোদ একটা হাসি দিলাম আর কিছুই বলল না।

ইতি মনে মনে ভাবছে, “আপনি খুশি হন আর না হন। আজ আমি অনেক খুশি। আমি জানি আদির মনে আমার জন্য ফিলিংস আছে শুনেই আপনি আমাকে ওর সাথে যেতে দেননি। আমি জানি আপনি অন্য কারো সাথে আমাকে সহ্য করতে পারবেন না। প্লিজ একবার বলে দেন না আমাকে ভালোবাসেন আমি প্রমিজ করছি আপনার বলতে হবে না আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকবো প্লিজ বলেন না একবার মনে মনে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে ভাবছিলো কথাগুলো ইতি।ইতিকে ভাবনায় বিভর দেখে রোদ জিজ্ঞেস করে,

– হ্যালো কোথায় হারিয়ে গেলে?

– হ্যাঁ কি?

– কোথায় হারিয়ে গেলে?

– না কিছু না।

– বাসায় এসে গেছি নামবে না।

– হুম….

ইসস আমিও না পাগল একটা মনটা যে কোই থাকে মনে মনে ভাবে ইতি।

দুজনে ফ্রেস হয়ে নিলো। রোদ তার ডেইলি রুটিন অনুযায়ী তার প্রেমিকাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। রোদের প্রেমিকা কেবলি তার কাজ আর তার ল্যাপটপ। ইতির নিজেরও আজ কিছু কাজ ছিলো শেষ করে নিলো। রোদের কাজ শেষ হলেই ডিনার করবে। তাই বারান্দায় গিয়ে বসলো ইতি। প্রত্যেকদিন খাওয়ার পর বসে আজ আগেই বসলো। রোদের কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে।

রোদের ফোনটা বেজে উঠলো। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাতেই দেখল প্রায় ১১টা বাজে। এতো রাতে কে হতে পারে। রোদ ফোনটা হাতে নিতেই দেখে লইয়ার আঙ্কেলের ফোন।

– আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।

– ওয়ালাইকুম সালাম।

– হঠ্যাৎ এতো রাতে আঙ্কেল সব ঠিক আছে তো?

– হ্যাঁ সারাদিন তুমি ব্যস্ত থাকো ভেবেই এসময় ফোন দিলাম। ব্যস্ত ছিলে না তো?

– না আঙ্কেল বলেন কি বলবেন।

– আর মাত্র এক মাস আছে রোদ। এর পরেই কিন্তু সাইনিং।

আর মাত্র এক মাস আছে কথাটা শুনে রোদের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। মনে হচ্ছে ওর বুকের মাঝে কেউ ছুড়ি দিয়ে আঘাত দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলছে। হ্যাঁ, এক মাস তার মানে ইতিও আর মাত্র একমাস আছে তার সাথে। সাইনিং হয়ে গেলেই ইতি চলে যাবে। ভাবতেই রোদের দমবন্ধ হয়ে আসছে। পায়ের নিচের মাটিটা একটু একটু করে সরে যাচ্ছে।

– রোদ তুমি আছো?

– হ্যাঁ, জ্বি আঙ্গেল বলেন।

– এনি প্রবলেম?

– না আঙ্গেল বলেন আপনি।

– গেট রেডি ফর দ্যা ডে। আর ইতিকেও বলে দিও।

– জ্বি।

ফোনটা রেখে রোদ বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো। ইতি চলে যাবে ভাবতেই পারছে না রোদ। একটা বছর এভাবে চলে গেলো।“ আমি কিভাবে থাকবো। ইতি থাকতে পারবে তো আমাকে ছাড়া? ওকি সত্যি চলে যাবে? প্লিজ যেও না আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে আর জ্বালাবো না আই প্রমিজ। অনেক ভালোবাসা দিবো তোমাকে। প্লিজ আমায় একটু তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ দাও প্লিজ” ইতির দিকে তাকিয়ে ভাবছে রোদ।

ইতি রোদের দিকে তাকিয়ে ভাবে, “কি ব্যাপার এভাবে বসে কি ভাবছে উনি। হলো কি”। ইতি উঠে এসে রোদের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকে।

– এই যে….

কিন্তু না রোদের কোন সাড়া নেই। এই যে বলে ইতি দিলো চিৎকার।

– নাহ….

বলেই থতমত খেয়ে গেলো রোদ।

– কি না?

– নাহ কিছু না বলো কি।

– ১১টার উপরে বাজে ডিনার করবেন না?

– হ্যাঁ তুমি যাও আমি আসছি।

“কি জানি কি হলো তার। এমন লাগছে কেনো তাকে? উফফফ…এতো যে কি ভাবে লোকটা অসহ্য আমাকে বলেও না” নিজে নিজে ভাবতে ভাবতে চলে গেলো ইতি। ডিনার সার্ভ করে বসে রইলো কিন্তু রোদ আসছে না কেনো? আবার রোদকে ডাকার জন্য ইতি উঠতে নিলো আর তখনি রোদ বেরিয়ে এলো। মুখটা অনেক মলিন লাগছে তার। এমন দেখাচ্ছে কেনো ইতির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল কিছু হলো না তো কেমন যেনো লাগছে ইতির। মনটা বড্ড কু ডাকছে মেয়েটার।

রোদ খেতে পারছে না। তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। প্লেটের খাবারগুলো নেড়েই যাচ্ছি সে।

ইতি লক্ষ করল রোদ সেই কখন থেকে খাবার নেড়েই যাচ্ছে কিন্তু এক লোকমাও মুখে দিচ্ছেন না। আর চুপ থাকতে পারছে না ইতি তাই জিঙ্গেস করে বসলো,

– কি হয়েছে আপনার?

রোদ মাথা তুলে ইতির দিকে তাকালো।

– আমার হয়ে গেছে।

বলেই উঠে গেলো রোদ। বারান্দায় এসে সিগারেট ধরালো সে।

ইতি অবাক হয়ে রইলো। না খেয়েই চলে গেলো মানুষটা। মনে মনে ভাবছে কি হলো উনার। ইতি নিজেও উঠে গেলো। তার গলা দিয়েও যে আর খাবার নামবে না। সব রেখে রুমে চলে গেলো ইতি। রোদ বারান্দায়, গিয়ে তার পাশে দাড়ালো ইতি। পাশে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে গেলো। রোদ সিগারেট টানছেন। এক বছরের জীবনে তাকে কখনো সিগারেট ধরতেও দেখেনি ইতি আর আজ কিনা।

রোদ সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে ফেলে দিলো। ইতি কে বলতে হবে লইয়ার আঙ্কেলের কথা।

ইতি নিজের হাতটা তুলল রোদের কাঁদে রাখবে বলে। রোদ কি ভাববে তা ইতি জানে না কিন্তু ইতির মন বলছে এটা করা দরকার।

– একমাস পর সাইনিং।

ইতি হাতটা থমকে গেলো। অজানতেই পরে গেলো হাতটা। আর মাত্র এক মাস।

– এক মাস পরেই সাইনিং তারপর তু… (গলায় কথা আটকে আসছিলো রোদের) তু্…তুমি মুক্ত হয়ে যাবে।

ইতি নীরব হয়ে রইল।

রোদ নিজেও অনেক্ষণ নীরবতা পালন করলো। তারপর আবার বলল,

– একটা কথা বলি?

– হুম,

– আদি ছেলেটা খারাপ না। আর তোমাকে পছন্দও করে তুমি ভেবে দেখতে পারো। ভালো থাকবে তুমি।

ইতি রোদের কথা শুনে আকাশ থেকে পরল। রোদ ইতিকে অন্য একজনের কথা বলছে। কিভাবে পারছে সে বলতে। তাহলে কি সে ইতিকে ভালোইবাসে না।

– আদির ব্যাপারটা তুমি একবার ভেবে দেখো প্লিজ।

বলেই রোদ রুমে চলে গেলো। রোদের চোখে যে পানি টলটল করছে যে কোন সময় পরে যাবে ইতি তা দেখে ফেলল সর্বনাশ হয়ে যাবে।

কত সহজে কথাটা বলে রোদ চলে গেলো। ইতি রকিং চেয়ারটায় বসে পরলো। ইতির সারা শরীর অসাড় হয়ে পরেছে। ভেতরটা ভেংঙ্গে চুরমাড় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাহিরে একটা শব্দও কেউ শুনতে পাচ্ছে না। রোদ ইতিকে অন্য একজনের কথা বলছে ইতি তা ভাবতেই মানতে পারছে না। অনেক্ষণ পর ইতি রুমে এসে দেখে রোদ ঘুমিয়ে আছে। ইতি রোদের মাথার কাছে গিয়ে বসে পরলো। রোদকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো মেয়েটা টেরই পায়নি।

সকালে।

রোদের ঘুম ভাংঙ্গেই চেয়ে দেখে তার মাথার কাছে মেয়েটা বসে রয়েছে। চোখ মুখ ফুলে একাকার অবস্থা। রাতে মনে হয় খুব কেঁদেছে। অপলক চেয়ে রইলো রোদ ইতির দিকে।
.
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here