বস বর পর্ব ৯+১০

#বস_বর (পর্ব- ৯ ও ১০)
পর্ব-৯
Writer : Eti Chowdhury
.
.ইতি মনে মনে ভাবছে ড্রাইভারকে জিঙ্গেস করবে কি না। অনেক সংকোচ নিয়েই জিঙ্গেস করল।
-আপনার স্যার কি খুব সকালেই বেরিয়ে গেছেন?
-নাহ তো বউমণি।
-হয়ত আপনি আসার আগেই চলে গেছেন।
– না বউমণি আমি তো এখানেই ছিলাম স্যার কাল রাতে ফেরেনি বলেই তো আমি যাই নি।
“উনি রাতে ফেরেনি” মনে মনে ভাবছে ইতি।
-কিছু ভাবছেন বউমণি?
-নাহ কিছু না। অফিসে চলেন।
অফিসে গিয়ে যেনো অস্থিরতাটা আরো বেড়ে গেলো ইতির। কারণ রোদের কেবিনটা ফাঁকা, সে নেই। তাহলে কি আজও অফিসে আসেনি রোদ? মানুষটা হুট করে গেলো কোথায়। ইতি রোদের জন্য এতো ভাবছে কেনো সে যেখানে খুশি যাক তাতে ইতির কি। ইতি নিজের সাথে বলে,
-হুহ….খারাপ একটা মানুষ মরে যাক আমার কি? খাটাশ উফফ….. আমি চাই না ওনার কথা ভাবতে।
বলেই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ইতি। তখনি রাফসান এসে বলে,
-কার কথা ভাবতে চাও না?
-হুমম….(হায় খোদা শুনে ফেলেনি তো-মনে মনে ভেবে বলে) কিসব বলছো?
-বলছো তো তুমি। কার কথা ভাবতে চাও না?
-কি আবলো-তাবলো বলছো। আমি আবার কার কথা বললাম?
-সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।
-তোমার মাথা গেছে চলো ক্যান্টিনে যাই চা খেয়ে আসি তোমার মাথা ঠিক হয়ে যাবে।
-মাথা আমার না তোমার গেছে। চলো।
ক্যান্টিনে গিয়েও ইতির চোখ যেনো রোদকেই খুঁজছে। কিন্তু তাকে তো কোথাও দেখতে পারছে না ইতি। মনে মনে বলে “উফফফ…..কেন জ্বালায় উনি আমাকে এতো”। রোদের কথা ভেবে কান্না আসছে ইতির।
ইতি অনেক্ষণ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখলো।
ইতির কেবিনের দরজাইয় নক করে রিমি বলে,
-মেম আসবো?
-এসো। রিমি গতকালকের জন্য আই এম সো সরি। তুমি কিছু মনে করো না কেমন।
-না না ম্যাম কি বলেন। আমি কিছু মনে করি নি।
রিমি জিঙ্গাসু চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে রইল। ইতি বলল,
-হুম। কিছু বলবা?
-ম্যাম আপনি স্যারের কোনো নিউজ জানেন?
-কোন স্যার?
-এমডি স্যার।
ইতি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪টা বাজে। আবার রিমির দিকে তাকিয়ে বলে।
-উনি এখনো আসেন নি?
রিমি অসহারের মত জবাব দিলো,
-নাহ ম্যাম। কিছু পেপারে স্যারের সই দরকার। কি করবো বুঝতে পারছি না।
-তাহলে ফোন দাও।
-দিয়েছি আউট অফ রিচ বলে ম্যাম।
-হুম,,,,,তুমি যাও আমি দেখছি।
রিমি চলে যেতেই ভাবে “বলে তো দিলাম আমি দেখবো কিন্তু এখন কি করি”। মাথায় কিছু আসছে না ইতির। সাত পাঁচ ভেবে ইতি রোদকে ফোন দিলো। কিন্তু ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে এলো, “আপনার ডায়েলকৃত নম্বরটি এখন বন্ধ আছে। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ”।
-উফফ….ফোনটাও আউট ওফ রিচ এখন কি হবে? দূর আসলে আসুক না আসলে নাই। চিন্তাও হচ্ছে বিরক্তও লাগছে। আর ভাবতে পারছি না আমি।
অফিস টাইমও শেষ।
ইতি বেরতেই দেখে ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে। ইতি গিয়ে গাড়িতে বসে পরলো।
পিছন থেকে রাফসান ইতিকে এতো ডাকলো তাও শুনলো না মেয়েটা। ইতিকে গাড়িয়ে যেদে ভাবে কার গাড়িতে যাচ্ছে ইতি। জানার জন্য রাফসান সিকিউরিটিকে জিঙ্গেস করে,
-সিকিউরিটি
-জি স্যার?
-ইতি ম্যাম কার গাড়িতে গেলেন। জানেন গাড়িটা কার?
-জি এমডি স্যারের গাড়ি।
-এমডি স্যার?
– জি স্যার সকালে তো এই গাড়িতেই আসতে দেখেছি।
রাফসান ভাবে এমডি স্যারের গাড়ি করে ইতি যাওয়া আসা করে কাহিনিটা ঠিক মিলছে না।
ইতি আবার হাজার চিন্তায় পরে গেলো। কাকে জিঙ্গেস করবে সে রোদের কথা। কোথায় খুঁজবে। এভাবে কাউকে না বলে মানুষটা গেলোই বা কোথায়।
– বউমণি স্যার বাসায় যাবেন না? গতকাল যেভাবে রেগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন আমাকে শুধু বলে গেলেন আপনাকে যেন একা বাহিরে না ছাড়ি।
ইতি কোন জবাব দিতে পারলো না। ঐ সময়ও ইতির কথা ভেবেছে মানুষটা। অনেক আশা নিয়ে বাসায় ডুকলো ইতি হয়ত এখন রোদকে বাসায় পাবে। কিন্তু না রোদ নেই। সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত হয়ে গেলো তার আসার কোন খবর নেই। ফোনের পর ফোন দিয়েই যাচ্ছে ইতি কিন্তু কোন খবর নেই। এখন যে পাগল পাগল লাগছে নিজেকে ইতির। কি করবে সে। কোথায় পাবে রোদকে। কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার? যে মানুষটা বিনা কারণে এতো কষ্ট দেয় তার জন্য ইতির বুক জ্বলছে। কিন্তু কেনো? হঠ্যাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো রোদ এসেছে ভেবেই এক দৌড় দিলো ইতি দরজা খুলতে।
কিন্তু দরজা খুলেই হতাশ হলো ইতি। ডেলিভারী ম্যান এসেছে একটা পার্সেল দিতে রোদের জন্য,
– মিস্টার রোদ চৌধুরী এর নামে পারসেল আছে।
-উনি বাসায় নেই আমি উনার Wife আমাকে দিন।
পার্সেল নিয় ইতি রেখে দিলো। কান্না করে দিলো ইতি। মানুষটা কোথায় ইতির যে আর সহ্য হচ্ছে না। আবার ফোন দিলো সে। খাটের পাশে রাখা রোদের ছবিটা নিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো ইতি। ছবিটা বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পরল মেয়েটা। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ইতির রোদকে একবার দেখার জন্য। ওভাবে বসে বসেই ঘুমিয়ে পরলো মেয়েটা কান্না করতে করতে।
সকাল,
ইতির ঘুম ভাঙতেই আবার রোদকে খুঁজতে শুরু করলো সে। কিন্তু না রোদ আসেনি। ইতি বলছে,
– তাহলে কি আমি উনাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম?ভাবতেই বুকটা খা খা করছে মেয়েটার। মনে হচ্ছে এখনি যদি রোদ সামনে এলে ইতি রোদকে বুকের মাঝে লুকিয়ে নিবে। অনেক্ষণ অপেক্ষা করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলো ইতি। রোদ নেই ইতিও যদি না যায় কিভাবে হবে। যাবার সময় সিকিউরিটিকে বলে গেলো রোদ স্যার আসলে যেনো সাথে সাথে তাকে ফোন করে জানায়।
অফিসে,
ইতিকে অফিসে আসতে দেখে রাফসান প্রায় দৌড়ে এলো তার কাছে। সামনে এসেই বলা নেই কওয়া নেই জিজ্ঞেস করল,
– গাড়িটা কার?
ইতির চোখ কপালে উঠে গেলো। নিজেকে সামনে নিয়ে বলে, -কিসের গাড়ি?
– যে গাড়িটা দিয়ে তুমি মাত্র এসেছো।
– কিসের গাড়ি?
রাফসান আর কোন কথা বলল না। সে ইতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সবার সামনে দিয়ে। ইতি বাধা দেয়ার চেষ্টা করে বলে,
– আহ রাফসান লাগছে। প্লিজ….
কিন্তু রাফসান কোন জবাব দিলো না। টানতে টানতে ইতিকে টেরেসে নিয়ে গেলো। ইতিকে অলমোস্ট সামনের দিকে ছুড়ে মারলো রাফসান। ইতি ওর ব্যবহারে অনেক অবাক হয়ে গেলো।
– কি হচ্ছে রাফসান? আমার হাতে লাগছে। এ ভাবে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে আসার মানেটা কি?
– মানে কি তুমি বুঝ না ? আজ অনেকগুলো দিন ধরে দেখছি তুমি অন্য মনস্ক হয়ে আছো। কখনও কাঁদছো আবার কখনও কষ্ট পাচ্ছো বাট কেনো ? কেনো কষ্ট পাচ্ছো ? কে দিচ্ছে তোমাকে এতো কষ্ট ? কারো কোন কথায় এতো কষ্ট পাওয়ার মানুষ তুমি না। অবশ্যই মানুষটা তোমার লাইফে অনেক ইম্পর্টেন্ট তা না হলে তুমি এমন আচরণ করতে না।
ইতি রাফসানের কথা শুনে থর থর করে কাঁপছে। এতোক্ষণ অনেক চেষ্টা করেছে সে নিজে ধরে রাখার কিন্তু আর পারছে না সে। রাফসান বলে,
-এমডি স্যারের সাথে তোমার কি সর্ম্পক ? কেনো উনার গাড়ি তোমাকে দিয়ে যায় নিয়ে যায় ? হোয়াই ? অফিসের সবাই তোমাকে নিয়ে নানারকম মন্তব্য করছে। তোমাকে আর স্যারকে জড়িয়ে কেনো ? এসব কানে আসলে খারাপ লাগে আমার। ডেম এন্সার মি…..
রাফসান অনেক রেগে গেছে। রোদের কথা বলায় ইতি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। এবার মেয়েটা কেঁদেই দিলো। রাফসান না থেমে বলেই যায়,
– তার উপর আজ তিন দিন হলো স্যার অফিসে নেই। কোথায় গেছেন উনি ইতি ? সবাই বলে তুমি জানো। কেনো বলে তোমার কথা ? তুমি কে হও উনার যে তুমি জানবে ? বলো ?
ইতি কেঁদেই দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলো ফ্লোরে। কাঁদতে কাঁদতে ইতি বলে,
-আমি জানি না উনি কোথায় প্লিজ রাফসান প্লিজ উনাকে এনে দাও…..প্লিজ
রাফসান ইতির কথা শুনে রিতিমত ধাক্কা খেলো। রাফসানের বেশি অবাক লাগছে ইতির আচরণ দেখে। সে বলে,
-কি হয়েছে ইতি ?
– আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনও এমন করবো না। শুধু একবার ওকে উনে দাও প্লিজ একবার।
– কাকে এনে দেয়ার কথা বলছো ?
– উনি এতোটা কষ্ট পাবে আমি বুঝতে পারিনি। আমি উনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না রাফসান আমার রোদকে চাই প্লিজ কেউ উনায় এনে দাও প্লিজ…
– রোদ স্যার !!! এই ইতি ইতি তাকাও আমার দিকে তাকাও বলছি। ঠান্ডা হও প্লিজ ইতি…
– আমার সত্যিই ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনও স্ত্রীর অধিকার ফলাতে যাবো না তার লাইফে। কখনো না আই প্রমিজ…
ইতি এতোটাই ভেঙে পরেছিলো যে আর আটকে রাখতে পারলো না সবটা নিজের মধ্যে। তাই রাফসানকে সব বলে দিলো। ইতির কথা শুবে রাফসান যেন শূন্যে ভাসছে। বেশ অবাক হয় রাফসান। বলে,
– স্ত্রী ? এই ইতি শান্ত হও প্লিজ শুনো আমার কথা শুনো।
ইতি কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলো না। অনেক কষ্টে শান্ত করলো মেয়েটা। তাও বুক ফেটে কান্না আসছে তার। রাফসান জিজ্ঞেস করে,
– তোমরা বিয়ে করেছো ?
ইতি ভাবে বলে তো দিয়েছেই তাই আর বাকিটা লুকানোর মানে হয় না। ইতি সব কিছু বলে দিলো রাফসানকে। সব কিছু কিভাবে হলো ওদের বিয়ে আর কেনো হলো সব বলে দিলো ইতি রাফসানকে। সব শুনে রাফসান বলে,
– ইতি তাকাও তো আমার দিকে।
ইতি রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসান ইতির হাতটা ধরে বলল,
– প্লিজ এখন যা জিঙ্গেস করবো তার সত্যি সত্যি জবাব দিবে। ভালোবাসো তাকে ?
ইতি কিছুক্ষণ অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো। রাফসান আবার জিজ্ঞেস করে,
– ভালোবাসো তাকে ?
– ভালোবাসি হ্যাঁ নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। হ্যাঁ, রাফসান ভালোবাসি আমি আমার স্বামীকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।
রাফসান ইতির চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,
– তো এভাবে ভেঙে পরলে চলবে খুঁজে বের করতে হবে না তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে ?
– হুম
– আর এবার সামনে পেলেই বলে দিবে তাকে কতটা ভালোবাসো।
– প্লিজ একবার খুঁজে দাও। তাকে সারাজীবন বুকে আগলে রাখবো প্লিজ…
– পাগলী একটা চলো আর কেঁদো না।
ওরা টেরেস থেকে চলে আসছিলো এমন সময় ইতি আবার দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
-রাফসান।
-বলো
-আমাদের কথা কাউকে বলো না প্লিজ।
রাফসান ইতির মাথায় হাত দিয়ে চুল নেড়ে বলল,
-পাগলী তুমি না বললেও আমি কাউকে বলতাম না এখন কিছুই।
বলে একটা হাসি দিলো রাফসান।
ওরা নিচে নেমে এলো। ইতি আর রাফসানকে দেখে রিমি দৌড়ে এলো। রিমি হাপাতে হাপাতে বলল,
-আমি আপনাদের সারা অফিসে খুজছি আর আর আপনারা এখানে?
রাফসান জিজ্ঞেস করে,
– কেন ? কি হয়েছে ?
– আপনাদের মিটিং এর সময় হয়ে গেছে আর ঐদিকে ক্লাইনটরাও চলে এসেছে।
ইতি বিচলিত হয়ে বলে,
– ওহ শীট !!! এই ডিলটা আমাদের কোম্পানীর জন্য অনেক ইম্পর্টেন্ট রাফসান। ডিলটা আমার চাই ই চাই।
বলেই ইতি দিলো এক দৌড়।
মিটিং রুমে,
ইতি সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
-আই এম এক্সট্রিমলি সরি জেন্টেল ম্যান ত কিপ ইউ গাইজ অয়েটিং ফর সো লং। লেটস স্টার্ট দ্যা মিটিং।
ইতি মিটিং শুরু করে দিলো। কিছুক্ষণ পরেই একটা ফোন এলো। তাড়াহুড়ো ফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে গিয়েছিলো ইতি। সবার উদ্দেশ্যে সরি জেন্টেল ম্যান। বলে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো সে। কিন্তু ইতির ফোন আসতেই থাকলো। বার বার ফোন আছে দেখে ইতির ভিতরে কেমন যেন করে উঠলো। হঠ্যাৎ রোদের কথা মনে পরে গেলো ইতির। তাই সে ফোনটা তুলে হাতে নিয়ে বলল,
-এক্সকিউজ মি জেন্টেল ম্যান।
ইতি কলটা রিসিভ করলো,
-হ্যালো কে বলছেন ?
-আপনি কি ইতি বলছে ?
– জি, আপনি কে ?
ফোনে যা বলল তা শুনে ইতির চোখ কপালে উঠে গেলোো। রাফসান ইতিকে লক্ষ করছে। ইতি ফোন রেখেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো মিটিংয়ের মাঝ থেকে। নিচে নেমেই গাড়িতে উঠতে উঠে ইতি ড্রাইভার বলে,
-যলদি চলো।
-বউমণি কি হয়েছে ?
ইতি কিছুই বলল না শুধু যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালাতে বলল। জলদি পৌছে গেলো ইতি। লিফটটাও উপরে ইতি আর অপেক্ষা না করে সিড়ি দিয়েই ৭ তলায় উঠে গেলো। উপরে উঠেই কেবিন নম্বর ৮০৩ এ চলে যার সে। কেবিনে ডুকেই আর কান্না চেপে রাখতে পারল না ইতি। বসে পরলাম।
-আমার রোদ।
বলেই কেঁদে দিলো ইতি। ইতির রোদ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। তার কোন হুস-জ্ঞান নেই।
.
.
চলবে………
.
.
.
#বস_বর
পর্ব-১০
Writer : Eti Chowdhury
.
ইতি কিছুই বলল না শুধু যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালাতে বলল। জলদি পৌছে গেলো ইতি। লিফটটাও উপরে ইতি আর অপেক্ষা না করে সিড়ি দিয়েই ৭ তলায় উঠে গেলো। উপরে উঠেই কেবিন নম্বর ৮০৩ এ চলে যার সে। কেবিনে ডুকেই আর কান্না চেপে রাখতে পারল না ইতি। বসে পরলাম।
-আমার রোদ…
বলেই কেঁদে দিলো ইতি। ইতির রোদ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। তার কোন হুস-জ্ঞান নেই।
একজন নার্স এসে বললেন,
– আপনি কে ?
– উনি আমার স্বামী।
– আচ্ছা আপনি এখানেই থাকুন আমি ডাক্তারকে খবর দিচ্ছি।
ইতি রোদের পাশে গিয়ে বসে পরলো। ইতির চোখের পানি যেনো থামার নাম ই নিচ্ছে না।
নার্সটা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এলেন। উনি রোদেরই ডাক্তার। এর আগেও ইতির দেখা হয়েছে তার সাথে যখন রোদ জ্ঞান হারিয়ে ছিলো ইতির বাবার বাসায়। ডাক্তার বললেন,
-যাক ফাইনালি আপনি এলেন।
-উনার কি হয়েছে ?
-এ্যাক্সিডেন্ট। অনেক বেশি আঘাত পেয়েছেন তাই ফিরে আসে আবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।
-উনি ঠিক হয়ে যাবে তো ?
-হ্যাঁ, জ্ঞানটা ঠিক মতো ফিরলেই একদম আশংকা মুক্ত হয়ে যাবেন।
-থ্যাংকিউ সো মাচ।
-ইটস ওকে ডিয়ার। তুমি শুধু উনার একটু যত্ন নিও।
ইতি ডাক্তার চলে যেতে নিয়ে আবার কি ভেবে যেন থেমে গেলেন। বললেন,
-আচ্ছা তুমি এখন কেমন আছো ?
-আমার কি হবে ? আমি তো ঠিকি আছি।
-সেদিন রোদ তোমাকে নিয়ে অনেক ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলো।
– আমাকে ?
– সেকি তোমার খেয়াল নেই। তিনদিন আগেই তো তুমি সাওয়ারের নিচে জ্ঞান হাড়িয়ে পরে ছিলে। ভিজে তোমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়ে ছিলো। ইনজেকশনেও কাজ হচ্ছিলো না। ভাগ্যিস তোমরা মেরিড ছিলে তাই তো।
-সে রাতে…..আমাকে বাঁচাতে ?
-হ্যাঁ… কেনো রোদ তোমাকে কিছু বলে নি ? তোমাকে নিয়ে যে কি ভয়টা না পেয়েছিলো ছেলেটা।
ইতি ডাক্তার কথাটা বলে চলে গেলেন। ইতি হা করে রোদের দিকে চেয়ে বসে রইলো। চোখের পানি যেনো বাধ মানছে না মেয়েটার। মানুষটা তার জন্য তার কাছে এসেছিলো। আর সে কিনা তাকেই এভাবে ছোট করলো। এখন নিজেকে বেশি ছোট মনে হচ্ছে ইতির। ইতি রোদের হাতটা ধরে বাকিটা দিন বসে রইলো। কিন্তু রোদের জ্ঞান ফিরার কোন নামই নেই।
ইতি রাফসানকে ফোন দিয়ে জানায় রোদকে সে খুঁজে পেয়েছে। সে হাসপাতালে আছে। ইতি রাফসানকে বলে অফিস দেখে রাখতে। এখন রোদকে ইতির বেশি প্রয়োজন তাই সে আপাততো অফিসে যেতে পারবে না। ইতি বলে,
-আমি উনার পাশে থাকতে চাই কেবল।
-ঠিক আছে আমি দেখছি এদিকটা।
পরের দিন সকালে,
রোদের জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু চোখ খুলতে পারছে না সে। বুকের উপর কারো ভার অনুভব করতেছে সে। চোখ খুলতেই ঝাপসা ঝাপসা দেখলো কেউ তার পাশে বসে বুকের উপর মাথা রেখে আছে।
রোদ হালকা নড়ে উঠলো। তা টের পেয়ে খুশিতে মাথা উঠিয়ে রোদের দিকে তাকায় ইতি। রোদ নিজেও ইতির দিকে তাকিয়েছে। রোদের চোখ খোলা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ইতি বলে,
-আপনার জ্ঞান ফিরেছে।
ইতি দুহাত দিয়ে রোদের মুখ চেপে ধরলো। তার কপালে চুমি দিলো ইতি। দু গালে চুমু খেলো।
-আপনার এখন কেমন লাগছে ? কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ? থাক বলা লাগবে না। আমি ডাক্তারকে ডেকে আনি।
ইতি বেড়িয়ে যাচ্ছিলো আবার ফিরে এলো। রোদের সামনে ফিরে এসে তার কপালে আবার একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো মেয়েটা ডাক্তারকে ডাকতে।
রোদের চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি পড়ে গেলো। মেয়েটার মুখ শুখিয়ে কি অবস্থা করেছে নিজের। পাগলের মতো আদর করলো সে রোদকে যেনো রোদ বেঁচে ফিরে আসায় ও নিজে জীবন ফিরে পেয়েছে। মনে মনে অনেক সুখ অনুভব হচ্ছে রোদের। নিমিষেই সব কষ্ট ভুলে গেলো রোদ।
ডাক্তার এসে রোদ এর চেক আপ করে বললেন,
-হুম,,,,নাও হি ইজ টোটালি আউট অফ ডেঞ্জার।
-থ্যাংকিউ সো মাচ ডক্টর।
-তুমি আসাতে যে উনি এতো জলদি সুস্থ হয়ে যাবে জানলে তোমাকে আরো আগে খবর দিতাম। নাও হি ইজ ইউর রিসপন্সিব্লিটি। ইউ হেব টু টেক কেয়ার হিম ভেরি কায়ারফুলি এন্ড প্রোপারলি।
-আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি আমার দিন রাত এক করে দিবো। উনাকে সুস্থ করবোই ইন-শাহ-আল্লাহ।
রোদ কথা বলতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে তার। পারলে পাগলীটার সাথে অনেক কথা বলত সে। এই পাগলীটাই সেদিন তাকে সহ্য করতে পারছিল না আর আজ তার জন্য কত কত পাগলামী করছে ভাবা যায়।
ইতির যে কি ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবে না সে তা। রাফসানকে ফোন দিলো রোদের জ্ঞান ফিরেছে তা জানাতে। রাফসান ইতির জন্য খুশি হলো। মেয়েটার খুশির সীমা থাকছে না রোদকে পেয়ে। ইতি নিজে রোদকে খাইয়ে দিলো। ওর উঠে বসতেও কষ্ট হয়। আরো ৪দিন ইতি রোদকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলো। রোদ এখন অকেনটাই বেটার তাই আজ রিলিস দিয়েছে ডাক্তার তাকে। ইতি ওকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। রোদের নিজে নিজে হাটতেও কষ্ট হচ্ছে। তাই ইতি রোদকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। মাথার নিচে হাত দিয়ে ইতি রোদকে বসাতে গিয়ে অনেকটাই কাছে চলে যায়। ধীরে ধীরে রোদকে শুইয়ে দিলো সে। রোদ শুধু ইতিকে ওপলক দেখছে। এই চার দিনে রোদ কেবল হ্যাঁ, না, ঠিক আছে, ভালো লাগছে, আচ্ছা এ জাতীয় কথা ছাড়া কোন বাড়তি কথা বলেননি।
রোদ মেয়েটাকে যত দেখছে অবাক হচ্ছে। এই কি সেই মেয়েটা নাকি এ অন্য কেউ। এখন ইতিকে দেখে রোদে মনে হচ্ছে ওর পৃথিবীটা কেবল রোদকে ঘিরেই। মেয়েটা এতো বদলে গেলো কেনো হঠাৎ।
ইতি বলে,
-আপনি বিশ্রাম নিন আমি আপনার জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে আসি। আপনাকে খাওয়াতে হবে।
রোদ মাথা ঝুলিয়ে সায় দেয়।
ইতি রান্না শেষ করে রুমে এসে দেখে রোদ ঘুমিয়ে আছে। ইতি রোদের পাশে গিয়ে বসে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। রোদের কপালে একটা চুমু খেতে মন চাইছে ইতির। নিজের অজানতেই ইতির রোদের মুখের কাছে ঠোঁটটা এগিয়ে নিতেই রোদ চোখ মেলে তাকায় হুট করে।
রোদ বুঝতে পারে ইতি তার পাশে এসে বসেছে। সে কি বলে তাই শুনার জন্য রোদ এতোক্ষণ চোখ খুলেনি। সে অনুভব করলো পাগলীটা তার আরো কাছে আসছে। সাসপেন্স ধরে রাখতে পারছিলো না রোড তাই চোখ খুলে ফেলল।
ইতি লজ্জায় সাথে সাথে সেখান থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো। কি লজ্জা কি লজ্জা। রোদ কিছু বলার আগেই মেয়েটা পালিয়ে গেলো। রোদ মনে বলে বলে,
– ইস…পাগলীটা লজ্জা পেয়েছে। আদরটা না করেই চলে গেলো। আটকাতেও পারলাম না।
আজ রাফসান এসেছে রোদকে দেখতে।
– এখন কেমন আছেন স্যার ?
– এখন মাচ বেটার।
এর মধ্যে ইতি রুমে ডুকলো রাফসানের জন্য কফি নিয়ে। কফিটা রাফসানকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– এই নাও তোমার কফি
– থ্যাংস ম্যাম।
বলেই হালকা হাসি দিলো সে। আফটার অল এমডি স্যারের অয়াইফ ম্যাম তো বলাই লাগে। এটা অবশ্য ইতি বুঝেছে তাই রাফসানকে মুখে বলতে হয়নি। কারণ এক মাত্র রাফসানই জানে ইতি তার রোদকে কতটা ভালোবাসে।
রোদ রাফসানের কাছ থেকে অফিসের সব খবরা-খবর সব নিচ্ছে। ওই সময় কিছু ডিল বাকি ছিলো। রোদ বলে,
-আচ্ছা এমএম কোম্পানির সাথে যে ডিলটা হওয়ার ছিলো সেটার কি হলো ?
– ইতি ম্যাম থাকতে আমরা কি কোন ডিল হারিয়েছি স্যার। এবারো তাই হয়েছে ডিলটা আমরা পেয়েছি। আর কাজও প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু আজ আমি একটা বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি।
– কি ?
– স্যার আপনার যা অবস্থা আপনার আরো রেস্ট দরকার। কিন্তু জাহান কোম্পানির সাথে ডিলটা এখনো ফাইনাল হয়নি।
– ওয়াটটটট ? কেনো ?
– ঐ ডিলটা স্যার আপনি পারসোনালি দেখছিলেন। তাই মিটিং পোসপন করা লেগেছে আপনি না থাকায়। কিন্তু তারা আর অপেক্ষা করতে চাইছেন না। আমি সব পেপার সাথে করে এনেছি। উনারা বলেছেন আজ যদি মিটিং না করা হয় তাহলে তাদের নতুন করে ভাবতে হবে তারা ডিলটা করবে কি না আমাদের সাথে।
রোদ কিছু বলার আগেই ইতি বলে,
– ইমপোসিবল ডিলটা আমার চাই ই চাই রাফসান। পেপারগুলো আমাকে দাও।
সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে রাফসান চলে গেলো। অফিসের সাময়িক দায়িত্ব রাফসানকে দেয়া হয়েছে। ইতি পেপার নিয়ে বসে পরলো। সব দেখবে সে। সব কিছু স্টাডি করবে। এই ডিলের অনেক কিছুই ইতি জানে আগে থেকে তাই বাকিটা বুঝতে তার বেশি কষ্ট হলো না।
রোদ দেখছে মেয়েটা সব পেপার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। সব বুঝে নিচ্ছে। অনেক্ষণ সময় দিলো পেপারে। ইতি উঠে গিয়ে রোদের ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পরলো। তাদেরকে মেইল করতে হবে। মিটিং আজই হবে।
রোদ দেখছে আর ভাবছে “ল্যাপটপে কি করছে দেখতে পারছি না। করছে কি মেয়েটা ?” ইতি উঠে মিররের সামনে গিয়ে চুল ঠিকঠাক করে হালকা ফ্রেস হয়ে বসে পরলো আবার ল্যাপটপের সামনে। হঠ্যাৎ চমকে গেলো রোদ ইতির কাজ দেখে।
ইতি স্কাটপে মিটিং করতে চেয়ে মেইল পাঠায়। তারাও আপত্তি করেন নি।
Hello gentle man’s at first I am very sorry for the inconvenience . And thank you for waiting and your cooperation’s.
Our MD is out of town for some very important issue. Now at this moment I will handle the deal and I hope you will definitely be fine with the deal. সব বলে মিটিং শুরু করে ইতি।
রোদ চমকে গিয়ে হা করে বসে রইলো তার বউটার এতো বুদ্ধিমান। কি সুন্দর ভাবে সব কিছু সামলে নিলো। ডিলটাও কনফার্ম হয়ে গেলো।
ইতি স্কাইপে মিটীং শেষ করে রোদের দিকে তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল,
-কোংগ্রাচুলেশন্স।
-থ্যাংকিউ।
রোদকে ফ্রেস করাতে হবে। গোসল তো করানো যাবে না তাই ইতি ভাবলো রুমেই হাত মুখ দুয়ে দিবে। তাই ইতি রোদের কাছে গেলো। মাথার নিচে হাত দিয়ে ধরে উঠিয়ে বসালো। হাত কাঁপছে ইতির রোদের শার্টের বোদাম গুলো খুলতে লাগলো সে।
রোদ মনে মনে হাসছে আর ভাবছে মেয়েটা কি ভয়ে কাঁপছে এভাবে। ওকে এতো কাছে পেয়ে ভালোই লাগছে রোদের।
ইতি স্পন্জ দিয়ে রোদের বুক পিঠ ধুয়ে দিচ্ছে। সামনে থেকে পিছনে মুছতে গিয়ে রোদকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ইতি খেয়ালই করেনি। এক হাত দিয়ে রোদের ঘারের উপরের চুল গুলোতে আঙ্গুল দিয়ে ধরেছে আরেক হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে। ইতি রোদকে বুকের সাথে আটকে রেখেছে। ইতির মন চাইছে এভাবেই ধরে রাখতে সারাজীবন।
রোদ মনে মনে বলে,
– পাগলীটা বুকের সাথে আটকে রেখেছে এমনভাবে যেনো কখনই ছাড়বে না।
রোদ হালকা নড়ে উঠলো। ইতি রোদকে ছেড়ে দিয়ে লজ্জায় উঠে যেতে নিলে।রোদ পিছন থেকে হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে নিলো ইতিকে। ইতি রোদের এক টান দিতেই হুমড়ি খেয়ে তার বুকে গিয়ে পরে।
ইতির প্রতিটা নিঃশ্বাস রোদের বুকে এসে লাগছে। রোদের ভেতরটা তোলপাড় করে দিচ্ছে। ইতির মুখটা দু হাত দিয়ে তুলে ধরলো রোদ। আসতে আসতে ওর মুখটা নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলো রোদ। ওর ঠোঁটটা নিজের ঠোঁটের শুধু এক ইঞ্চি দূরত্বে ধরে ইতির প্রতিটা নিঃশ্বাস অনুভব করছে রোদ।
ইতির নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। রোদ তাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ইতি রোদের বেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
-রোদদদদদদদদদদদদদদদ…….
হুট করে কারো চিৎকার করে ডাকাতে সে ইতিকে ছেড়ে দিলো।
ইতি রোদের থেকে সরে বসলো। তারা বেশিই ঘনিষ্ট অবস্থায় ছিলো।
যে রোদের নাম ধরে ডেকেছে তাকে দেখে রোদ বলে,
– আরে লিজা তুই ?
– হ্যাঁ আমি। তোমার এ্যাক্সিডেন্টের কথা শুনে মা যে সে কি কান্না কি বলবো তোমায়।
– ছোট মা আসেনি ?
– এইতো আমি বাবা ? কেমন আছিস তুই ? একি হাল হয়েছে আমার সোনা মাণিকের ?
পিছন থেকে একজন বয়স্কা মহিলা বললেন। ইতি এদের কাউকেই চিনে না। আগে দেখেও নি এমনকি তাদের কথা শুনেওনি। তাই ইতি উনাদের দেখে পাশে সরে গেলো।
রোদের ছোট মা কান্না করছে তাই সে বলে,
– আরে কাঁদছো কেনো ? আমি তো ঠিক আছি দেখো।
রোদ উঠে বসতে নিলে তার ছোটমা বাধা দেয়। এতোক্ষণে রোদের ছোটমা ইতিকে লক্ষ করলেন। হাত দিয়ে ইশারা করলেন তার কাছে যেতে। ইতি আমি গুটি পায়ে তার সামনে গিয়ে দাড়ায়। উনি লিজা মানে তার মেয়ে কে সরিয়ে দিয়ে উনার পাশে ইতিকে হাত ধরে বসিয়ে দিলেন। ইতির হাত দুটো পরম মমতায় ধরে রাখলেন তিনি। ইতির মনে হচ্ছে এই বুঝি শাশুড়ির আদর। ছোটমা রোদের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলেন,
– একি আমার ঘরের লক্ষী ?
রোদ হাসি মুখে জবাব দিলো,
– জ্বি।
ইতির বুকটা কেঁপে উঠলো সে কারো ঘরের লক্ষি এটা শুনে। কপালে এতো সুখ ছিলো ইতির তা তার জানা ছিলো না। রোদ ইতিকে তার ঘরের লক্ষি বললে। ছোটমা জিজ্ঞেস করলেন,
– নাম কি তোমার মা ?
– জ্বি ইতি।
– আলহামদুল্লিলাহ এবার আমার পাগলটার জীবনের সব কষ্টের ইতি হয়ে যাবে। শুরু হবে নতুন সুখের গল্প।
কথাটা বলেই তিনি ইতির থুতুনিতে হাত দিয়ে হাতে চুমু খেলেন। ইতিকে তার অনেক পছন্দ হয়েছে। ইতি উঠে উনাকে সালাম করলো। কিছুক্ষণ পর লিজার বাবাও এলেন। এতোক্ষণে জানতে পারলো ইতি ছোটমা আর ছোটবাবা হচ্ছে রোদের চাচা-চাচী। বাবা-মার পরে যদি কেউ রোদকে ভালোবেসে থাকে তা হলো ছোটমা আর ছোটবাবা। ইতি উনাদের জন্য রুম গুছিয়ে দিলো। তাদের ফ্রেস হতে বলে ইতি কিচেনে চলে যায় সবার জন্য রান্না করতে। সবই ঠিক আছে শুধু লিজা একটু কেমন যেনো। হয়ত ইতি তার সাথে ফ্রি হতে পারছে না তাই এমন লাগছে। ছোটমা-বাবাকে খাইয়ে ইতি গেলো রোদের কাছে তাকে খাইয়াবে বলে। কিন্তু ইতি রুমে ডুকতেই দেখে লিজা রোদের সাথে বসে গল্প করছে। ইতি রোদকে বলে,
– কি ব্যাপার আপনাকে না বললাম ঘুমাতে ?
ইতির কথা শুনে লিজা কেমন ভাবে তাকালো আমার দিকে। রোদ বলল,
– লিজার সাথে গল্প করছিলাম তাই ঘুম আসেনি।
– আমি একদম অনিয়ম মানবো না বলে দিচ্ছি।
ইতি আসলে রাগে কথাটা বলল কারণ গল্পতে তার আপত্তি নেই কিন্তু লিজা রোদের বেশ অনেকটা গা ঘেষে বসে ছিলো যা দেখে ইতির একদম পছন্দ হয়নি। রোদ মিট মিট করে হাসছে ইতিকে দেখে তাই আরো বিরক্ত লাগছে ইতির। ইতি বলে,
– এখন খেতে হবে। কোন কথা শুনব না।
খাওয়ার কথা বলাতে লিজা বলে,
– আমাকে দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
লিজা আমার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে নিলো। তা দেখে ইতির আরো রাগ উঠে গেলো। ইতি সাথে সাথে পাল্টা লিজার হাত থেকে বাটিটা নিয়ে নিলো সেই সাথে বলল,
-তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি রান্না করেছি আমিই খাইয়ে দিতে পারবো। তুমি যাও বিশ্রাম নাও। অনেকটা যার্নি করে এসেছো।
ইতির কথা শুনে লিজা উঠে চলে গেলো। ইতি রোদকে খাইয়ে দিচ্ছে রোদ মিট মিট করে হাসছেআর মনে মনে ভাবছে “পাগলীটা রেগে গেছে। আমার ভাগ কাউকে দিবে না”। রোদকে হাস্তে দেখে ইতি বলে,
– চুপ একদম হাসবেন না। রাগে আমি গজ গজ করছি। আর উনি হাসছেন।
বিপত্তি হলো পরের দিন।
সবাই মিলে গল্প করছিলো। ইতি উঠে বলে,
-আমি যাই উনার স্যুপটা রান্না করে নিয়ে আসি।
লিজা ইতিকে বাধা দিয়ে বলে,
– আজ আমি রান্না করবো।
ছোটমা বললেন,
– না লিজা তোর রান্না করা লাগবে না। তুই অনেক ঝাল দেস রোদ খেতে পারবে না।
– না আমিই রান্না করবো।
নিষেধ করা সত্ত্বেও লিজা ছোটমার কথা শুনলো না। জেদ করে রান্না করলোই সে। ঝালের কথা শুনেই ইতি চিন্তায় পড়ে গেলো রোদেরজন্য। রোদের তো ঝালে সমস্যা হয় তাই ইতি পায়েস রান্না করলো আদালা করে। রান্না শেষ করে ইতি গিয়ে রোদের পাশে বসলো। লিজা রোদের জন্য স্যুপ নিয়ে আসলো। লিজাকে স্যুপ নিয়ে আসতে দেখে ইতি বলে,
– দাও আমাকে দাও।
– নাহ,,,,আমি রান্না করেছি আমিই খাওয়াবো।
কথাটা শুনেই ইতির মাথা গরম হয়ে গেলো। মেয়ে বলে কি। জামাই আমার আর সোহাগ দেখাবে সে। হুহ……ঢং দেখে গা জ্বালা শুরু হয়ে গেলো ইতির। লিজা যেন আগের দিনের প্রতিশোধ নিলেন। রোদ বুঝতে পারলো ইতি রেগে গেছে।
রোদ বলে,
– থাক কাউকে কষ্ট করতে হবে না আমি নিজেই খেতে পারবো।
লিজার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে নিলো সে। স্যুপ মুখে দিচ্ছে রোদ আর ইতি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। রোদ মুখে দিতেই চেঁচিয়ে উঠে,
– এরে বাবা এতে ঝাল দিয়ে একাকার অবস্থা। এতো ঝাল কেনো ?
– স্যুপ ঝাল হয়েছে???
– পানি খাবো।
ইতি রোদের হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে রহিমাকে ডেক দেয়,
– রহিমাআআআ
ইতির এক ডাকে রহিমা দৌড়ে আসে কিচেন থেকে। রহিমা মূলত রোদের মেজো ভাইয়ের বাসার পরিচারিকা ছোটমারা আসায় রোদের ভাবী তাকে পাঠিয়েছে ইতির হেল্প হবে তাই।
– জি ভাবী ?
– এটা নিয়ে ফেলে দাও।
ইতির কথা শুনে লিজা রাগে ফুলতে লাগলো। ইতি লিজাকে বলে,
– লিজা তুমি একটু যাও। আমি উনার কাপড় বদলাব।
ইতির কথা শুনে রাগে উঠে চলে গেলো লিজা। রোদ চেয়ে চেয়ে ইতির পাগলামী দেখছে। লিজা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ইতি জিজ্ঞেস করে,
– আপনার কি বেশি ঝাল লাগছে ?
ইতি অস্থির হয়ে পড়লো রোদের জন্য। কারণ আগের বারের কথা ইতির মনে আছে। রোদ চুপ করে রইলো। মেয়েটা তাকে নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পড়লো। যেনো ঝাল খেয়েছি রোদ আর কষ্ট হচ্ছে ইতির।
– চুপ করে আছেন কেনো ? বলেন না প্লিজ খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আপনার ?
– অনেক ঝাল।
রোদের অনেক ঝাল লাগছে শুনে মনের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ইতির। আবার যদি জ্ঞান হারায় মানুষটা তাহলে লিজার খরব করে ছাড়বে ইতি। রোদ খাটে বসা ছিলো। ইতি উঠে গিয়ে নিচু হয়ে হাত দিয়ে রোদের ঘাড়ের নিচ থেকে চুলের ভিতর হাত দিয়ে রোদের মুখটা হালকা উপরে তুলে তার ঠোঁটটা নিজের ঠোঁটের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। ইতি নিজ থেকে নিজের ঠোঁটের আবেশে রোদের ঠোঁটের সব ঝাল সুশে নিচ্ছে। রোদের সব ঝাল নিয়ে নিচ্ছে ইতি। ইতি দাঁড়িয়ে ছিলো। রোদ তার হাত দুটো ইতির কোমড়ে রাখলো। জোরে চেপে ধরলো রোদ ইতিকে। রোদ নিজেও ইতির সাথে তাল দিয়ে চুমু খেতে লাগলো ইতিকে।
রোদ ঝাল শব্দটা শেষ করতে পারিনি আচমকা পাগলীটা উঠে এসে তাকে চুমু খেতে লাগলো। ঘাড়ের নিচ দিয়ে ওর আঙ্গুল গুলো রোদের চুলে দিয়ে টানতে লাগলো। রোদ নিজেও ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখে। পাগলীটা পরম আদরে ভরে দিচ্ছে রোদকে।
ইতি অনেক্ষণ সেভাবেই ছিলো। থেমে গিয়ে রোদের কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে দাড়িয়ে রইলো ইতি। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ইতি। রোদ এখনো ইতির কোমড়টা জোরেই চেপে ধরে রেখেছে। ইতি লজ্জায় আর রোদের দিকে তাকাতে পারলো না। লজ্জায় পালিয়ে গেলো ইতি রোদের কাছ থেকে।
– আহ….
ধরার চেষ্টা করেও ধরতে পারলো না রোদ ইতিকে। মেয়েটা পালিয়ে গেলো লজ্জা পেয়েছে।
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here