বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -১০

গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব: ১০

অনু,অর্পিতা,রুপু,অহনা ওরা অবাক হয়ে সামনের মানুষটাকে দেখছে।
ইতু স্তব্ধ হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ডোলের আওয়াজে অনেকে ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও ইতুদের কাছে দাড়ানো কয়েকজন তা খেয়াল করে ফিসফিস করছে।ওদের কাছাকাছি এসে দাড়ালো কথা শুনার জন্য।
আবির রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ইতুর মুখের উপর চিঠি ছুড়ে মেরে বললো,”তোকে বিশ্বাস করে তোর হাতে চিঠি পাঠাতাম আর তুই কিনা আমার সাথে বেঈমানী করলি?একটা চিঠি ও কুহুকে দিলি না? তোর জন্য,শুধু মাত্র তোর জন্য আজ কুহু অন্যকাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে।তুই এতো নিচু মনের মানুষ?আগে যানলে তোকে কখনো বিশ্বাসই করতাম না।তুই আমাকে পছন্দ করিস যানি তাই বলে আমার এতো বড় ক্ষতি করবি?ছিঃ
তোকে পারলে এখনই মেরে মাটি পুতে ফেলতাম।
মেয়ে দেখে বেচে গেলি।”
ইতু ছলছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।ইতুর বান্ধবীরা প্রতিবাদ করতে গেলে আবির অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললো,”তোরা একটাও যদি এখন কোনো কথা বলিস তার বদলে ইতু চড় খাবে।”
অনু এসে ইতুর হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।ইতু অনুভূতি শূন্য হয়ে দাড়িয়ে আছে।আবিরের এইভাবে অপমান করা ইতু মেনে নিতে পারছেনা।এখানে ইতুর দোষটা কোথায় সে বুঝতে পারছেনা। ইতু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ছেলে মেয়েরা অদ্ভুদ দৃষ্টি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।অপমানে,লজ্জায় ইতুর মরে যেতে ইচ্ছা করছে।আবির কি করে পারলো ওকে এইভাবে সবার সামনে ছোট করতে।একপাক্ষিক কথা শুনেই আবির ওর উপর এতো বড় একটা অপবাদ দিয়ে দিলো?
আবিরের এক চড়েই যেনো আবির নামের ভূত ইতুর মাথা থেকে নেমে গেলো।স্বচোক্ষে বাস্তবতা দেখতে পারছে সে।অপাত্রে এতোদিন তার ভালোবাসা দান করেছে।ওই মুহুর্ত থেকেই ইতু প্রতিঙ্গা করে আবির নামে মানুষটাকে সে পুরোপুরি ভাবে ভুলে যাবে।কখনো তার সাথে কথা বলবে না।তাকে পাত্তা দিবে না।নিজেকে পুরোপুরি চেন্জ করে ফেলবে।
সেদিন বাসা ফিরেই ইতু জানিয়ে দেয় সে আর চট্রগ্রামে থাকবে না।হঠাত্‍ চট্রগ্রাম যাওয়ার সিধান্তে ইতুর মা-বাবার মাথা যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।ইতুর মা কিছুতেই ইতুকে যেতে দিবে না।ইতুর বাবা চুপচাপ মেয়ের জিদ দেখছেন।ঘরে ঝগড়াঝাটি অশান্তি তার মোটেও পছন্দ নয়।এতো বুঝানোর পর যখন ইতুকে রাজি করাতে পারলো না তখন ইতুর বাবা রাতের গাড়িতেই তাকে চট্রগ্রাম পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।ইতু যাওয়ার আগে আবিরের কাছে যায়।ইতুকে দেখেই আবির তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।ওকে কিছু বলার আগেই দুটো বাক্স এনে আবিরের হাতে ধরিয়ে দেয়।আবিরের দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
সেদিন ইতু নিজের মধ্যে পাহাড় সমান রাগ,ক্ষোভ,অপমান আর আবিরের প্রতি ঘৃণা নিয়ে কুমিল্লাহ শহর ত্যাগ করে।
দুই বছরে সেই রাগ,ক্ষোভ কমে এলেও নিজের আত্মসম্মান জলাঞ্জলী দিয়ে সে আবার আবিরের মায়া জড়াবে না।
আবিরের প্রতি হয়তো টান টা রয়ে গেছে কিন্তু ভালোবাসাটা জাগিয়ে তুলতে চায়না ইতু।
আবির তাকে ভুল বুঝেছে তার উচিত ছিলো পুরো সত্যটা যানা।শুধু মাত্র কুহুর কথা শুনে তাকে এতো মানুষের সামনে চড়টা না দিলেও পারতো।এতো অপমান না করলেও পারতো।ইতু অনুর রুমে শুয়ে অতিতের কথা ভাবছিলো।এইসব ভাবতেই বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।অনেকক্ষন ধরে অনু আর তার বান্ধবীরা চুপচাপ বসে আছে।ইতুকে কিছু জিঙ্গেস করার সাহস হচ্ছে না।আবির নিশ্চয়ই খুব কড়া কথা শুনিয়েছে।
এতোক্ষন ধরে বসে থাকতে থাকতে অহনার কোমড় ধরে গেছে।জায়গা দেখে একটু শুয়ে পড়তে গেলেই রুপুর চোখ রাঙ্গানিতে সোজা হয়ে বসলো।
নিরবতা ভেঙ্গে অর্পিতা বললো,”অনু তোর ওই খালাতো ভাই নাকি ফুফাতো ভাই ওকে ডাক।আজ ওর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে।এই ছেলে আমাদের এইভাবে বাঁশ খাওয়ালো?সোজা আবির ভাইকে ডেকে নিয়ে এলো?মিরজাফরকে ও হার মানাবে তোর ওই ভাই।”
অনু বিরক্ত হয়ে বললো,”থাক বাদ দে না।এখন কোনো তামাশা চাইছি না।আমার হলুদ সন্ধ্যা না হয়ে মধ্যরাত হওয়া উচিত ছিলো।নোবেলের মতো তামাশা করতে করতে এতোরাত হলো আর তামাশা নিতে পারবো না।”
অর্পিতা মনে জ্বলে উঠা আগু দপ করে নিভে গেলো।সত্যি একদিনে অনেককিছু হয়ে গেছে।রাফিকে তো সকালে দেখে নিবে।
সবাই যার যার মতো করে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করলো।
____________
সকালে হইচইয়ে আওয়াজে ইতুদের ঘুম ভাঙ্গলো।বাইরে এসে খুশিতে ইতু আর অনু লাফিয়ে উঠলো।বরিশাল থেকে অনুর মন্টু মামা এসেছে।লোকটার বয়স চল্লিশ ছুই ছুই করছে।কোন এক অজানা কারনে তিনি আজ পর্যন্ত বিয়ের পিড়িতে বসেন নি।মানুষটা একটু বোকাসোকা টাইপের বলে বড়দের কাছে তার কোনো কদর নেই।কিন্তু বাচ্চাদের কাছে আর কণা আফরোজের কাছে তিনি অতি মূল্যবান একজন মানুষ।আবিরের বাবা শালাকে তেমন একটা পছন্দ করেন না তার উদ্ভট কর্মকান্ডের জন্য।একবার তিনি আবিরদের বিশাল বাগান জুড়ে খালি জায়গা পেয়ে সেখানে অনেক বড় করে মাটি কেটে গর্ত করে তাতে পানি জমিয়ে একটা মিনি পুকুর তৈরী করেন। বাজার থেকে মাছ এনে ছেড়ে দিলেন।তার ভাষ্য মতে একদিন মাছগুলো বড় হয়ে বাচ্চা দিবে আর এতে করে আস্তে আস্তে অনেক মাছ হবে এই পুকুরে।তার এই পরিকল্পনায় সঙ্গ দিয়েছে ইতু আর অনু।মামার এমন উদ্ভট কাজ তাদের বেশ ভালোলাগে।এডভ্যান্চার খুঁজে পায় এতে।
আবিরের বাবা বাড়ি ফিরে শালার এমন কাজ দেখে রেগে আগুন হয়ে যান।এতো সুন্দর বাগানের এই হাল দেখে তার ইচ্ছা করছিলো তাকে ওই পুকুরে চুবিয়ে মারতে।কণা আফরোজের সাথে এইব্যাপারে কথা বলতে গেলে কণা আফরোজ বলেন,”খবরদার আমার ভাইকে কিছু বলেছো তো।কতো কষ্ট করে, শখ করে ছেলেটা এটা বানিয়েছে তুমি যদি এটা নিয়ে চেঁচামেচি করো আমি আমার ভাইয়ের সাথে বাপের বাড়ি চলে যাবো।”
তার পর থেকেই আবিরের বাবা তাদের ভাই বোনের ব্যাপারে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন। কণা আফরোজ ওই মিনি পুকুরটাকে লোক ডেকে আরো ডিজাইন করে শান বাধিয়ে দিলো।
অনু আর ইতু দৌড়ে মন্টু মামার কাছে গেলো।তার হাতে হরেকরকমে জিনিস।কণা আফরোজ ধরা গলায় ভাইকে বললো,”কেনো রে এতোকিছু আনতে গেলি ভাই? আর এতোদেরি করেছিস কেনো?”
মন্টু দাঁত বের করে হেসে বললো,”অনু মায়ের বিয়ে আমি ওর জন্য কিছু আনবো না বুঝি।
আপা তুই তো যানিস ওখান থেকে এখানে আসতে কতোখাটনি করতে হয়।একটা কাজে আটকে যাওয়ায় দেরী হয়ে গেছে।””আচ্ছা আয় ভিতরে আয়।”
মন্টুর সাথে অনু আর ইতু জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ড্রয়িং রুমে।ওদের বান্ধবীরা এখনো ঘুমাচ্ছে।
আবিরের বাবা পেপার নিয়ে সোফায় বসে সামনে তাকিয়ে মন্টুকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন।মন্টু হেসে তাকে সালাম করে বললো,”দুলাভাই কেমন আছেন?”
আবিরের বাবা গম্ভীর মুখ করে বললেন,”আমি এইসব পা ধরে সালাম করা পছন্দ করি না মন্টু।”
মন্টু আগের মতো হেসে বললো,”দুলাভাই পুরোনো অভ্যাস।”
আবিরের বাবা পেপার ঝেড়ে মুখের কাছে পেপার নিয়ে পড়তে লাগলেন।
বিয়ের অনুষ্ঠান হবে রাতে।তাই আপাতত কারোই তাড়া নেই।অনু আর ইতু জিদ ধরলো তারা মন্টু মামার থেকে গল্প শুনবে।তাদের মতে তার থেকে ভালো গল্প কেউ বলতে পারে না।
অনু আর ইতুর সাথে ছোট ছোট বাচ্চারাও হইচই শুরু করলো।
মন্টু একটু বিরক্ত হওয়ার ভান করে বললো,”আমার অনুটার বিয়ে এখন আমার কতো কাজ বলতো।তোদের সাথে গল্প করতে বসলে হবে?”
আবিরের বাবা পেপারে দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমার এখানে কোনো কাজ নেই।”
মন্টু ক্যাবলার মতো হেসে ইতুদের নিয়ে উপর যেতে লাগলো।পথেই আবিরের সাথে দেখা হলো।
আবির মামাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।
“কেমন আছো মামু?কতোদিন পর আসলা।”
চলবে।
অনেক প্রবলেম এর মধ্যে আছি।এর থেকে ভালো করে লিখার মতো অবস্থায় নেই।
অপটপিক: ছেলেপক্ষ দেখতে আসার এক্সপেরিয়েন্স কার কার আছে?একটু জানতে চাই।
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here