বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -২৩+২৪

গল্পঃ বাক্সবন্দী চিঠি
লেখিকাঃ নিনিকা জামান নূর
পর্বঃ ২৩
সমুদ্রের ধারে বসে আছে আবির। তার একটু সামনে দাঁড়িয়ে ইতু এক মনে সূর্যাস্ত দেখছে। আবির ইতুর দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ চোখে। ইতু আবিরের দিকে তাকিয়ে তাকে কাছে ডাকলো। আবির তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেল।
ইতু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল।
“আবির?”
“বলো”
“আমরা এখানেই থেকে যাই?”
আবির ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইতুর দিকে।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ইতুকে তার দিকে ফেরায়।
“কি হয়েছে? এখানের থাকার কথা বলছো কেন?”
ইতু ইতস্ততভাবে বললো, “কিছু না। আসলে এখানে থাকতে ভালো লাগছে তাই বললাম। প্রতিটি মুহূর্ত তোমার সাথে থাকতে পারছি। তোমাকে ছুঁয়ে দেখছি। আমার না এখান থেকে যেতেই ইচ্ছে করছে না।”
আবির মুচকি হেসে বললো,” বাড়ি ফিরে গেলে কি আমাকে আর পাবে না?এইভাবে বলছো কেন? আমি তোমার হাসব্যান্ড, তুমি চাইলেই আমাকে কাছে পাবে।তুমি যদি একবার বলো সারাদিন তোমার সামনে বসে থাকবো। দরকার হলে অফিস না করে সারাক্ষণ তোমার সামনে ঘুর ঘুর করবো। চলবে?”
ইতু হাসলো। “না অফিস বাদ দিয়ে সারাক্ষন আমার সামনে ঘুর ঘুর করতে হবে না। শুধু এটা মনে রাখলে হবে তোমার একটা আদরের বউ আছে যে দিন শেষে তোমার কাছে, তোমার বুকে মাথা রাখতে চায়।”
আবির ইতুকে তার বুকে টেনে নিলো। ” তোমার কি মনে হয় আমি আমার ভাবুকরানীর কথা ভুলে যাবো?
ইতু হেসে সূর্য ডোবার মুহুর্তে অনুভব করতে লাগল।

কুহু আর আদিত্য একটা পার্কে বসে আছে। দুইজনই চুপচাপ। কুহু অস্থির হয়ে আশে পাশে তাকাচ্ছে।
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমার হাতে সময় নেই৷”
আদিত্য বিরক্ত হয়ে বললো,” ৫মিনিট ও হয়নি এসেছো এমন করছো কেন? ধৈর্য ধরো বলছি।”
“কথাগুলো কি ফোন এ বলা যেতো না? এইভাবে দেখা করা রিক্স। বুঝতে পারছেন আপনি? অয়ন ছেলেটা সারাক্ষন আমাকে চোখে চোখে রাখছে। একবার যদি জানতে পারে আপনার সাথে আমি দেখা করতে এসেছি নিশ্চয়ই সন্দেহ করবে।”
“কুহু পেনিক করো না তো। একবার আমার কথা শুনে দেখো কাজ হয়ে গেলে এইসব অয়ন তোমার সামনে কিচ্ছু না।”
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন অনেক কষ্টে একটা থাকার যায়গা সিকিউর করেছি। আমি চাই না এবার আবিরকে হাত ছাড়া করতে।”
“তাই তো বলছি তুমি আমার ইতুকে আমার হাতে তুলে দাও আর ইতু একবার আমার কাছে চলে এলে আবির তোমার।”

“সত্যি বলছেন? আবির আবার আমার হয়ে যাবে? ওই ইতুকে ভুলে আবার আমার কাছে ফিরে আসবে? ইতুকে আমার সহ্য হয় না আবিরের পাশে। ওই জায়গাটা আমার ছিলো। আমি আবার সে জায়গা ফিরে পেতে চাই। আমার বাচ্চার জন্য একটা সিকিউর ফিউচার চাই।”
“সব হবে। শুধু আমার কথা মেনে চলো।”
“কি করতে হবে?”
“তোমার আর অয়নদের বাসায় থাকা চলবে না। যেভাবে হোক সে বাসা থেকে বেরিয়ে তোমার আবিরের বাসায় জায়গা করে নিতে হবে। ইতু আর আবির হানিমুন থেকে ফিরে এলেই তোমাকে আমি সেখানে চাই।”

“কিন্তু কিভাবে? অয়ন এর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে যদি আবির আমাকে না রাখে?”
” আরে চিন্তা করছো কেন? তুমি প্রেগন্যান্ট কুহু। তোমার এই অবস্থাকে কাজে লাগাও। আবির তোমার প্রতি কঠিন হবে না। আর আবির যদি রাজি হয়ে যায় ইতুও তখন কিছু করতে পারবে না।”

“আমি রাজি। কিন্তু প্ল্যান যদি কাজে না লাগে আর আমি যদি ফেসে যাই, আমি কিন্তু আপনা ছাড়বো না আদিত্য।”

আদিত্য রেগে গেলো তার কথায়৷ এই মেয়ে তাকে হুমকি দিচ্ছে?
” এইসব করে কি আমার একার লাভ হবে? তোমার কিছু হবে না? তাহলে শুধু আমাকে কেন ফাঁসাবে? কুহু মনে রেখো আমার তুমি কিছুই করতে পারবে না আমি তোমার অনেক ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখি। নেক্সট টাইম আমাকে এইসব ফাঁকা হুমকি দিতে আসবে না।”
কুহু ঘাবড়ে গিয়ে কপালের ঘাম মুছলো। তাও নিজেকে শক্ত রাখলো।
“দেখুন আমি শুধু সেফটির কথা চিন্তা করে বলছিলাম।”
“সে সব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। এখন বাসায় গিয়ে কথা মতো কাজ শুরু করো।”
_______________________
ইতু ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখে আবির লেপটপ নিয়ে বসে আছে।
ইতু আবিরের কাছে গিয়ে না দেখার ভান করে চুল ঝাড়লো। হঠাৎ করে গায়ে পানি পড়ায় আবির মুখ কুচকে ফেললো।
” কি করছো ইতু? দূরে গিয়ে চুল মুছো। সব পানি আমার গায়ে এসে পড়ছে।”
ইতু আবিরের কোলে বসে চুলে পানি হাতে নিয়ে আবিরের মুখে ছুড়ে মারলো।
আবির ইতুর কোমর পেচিয়ে ধরে বলে,” ইতু পাখি দুষ্টুমি করে না। অফিসের একটা জরুরি কাজ করছি। এটা শেষ করে আমার পুরো সময় তোমার।”
“নো ওয়ে। আমি আগেই বলেছি এখনে যতদিন আছি পুরোটা সময় শুদু আমার। এইসব কাজ তুমি বাসায় গিয়ে করবে বুঝেছো?”
আবির মুচকি হেসে ইতুর নাকে আলতো করে কামড় দিয়ে বললো, “জি বুঝেছি ম্যাডাম।”
আবির ল্যাপটপ সরিয়ে ইতুকে নিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো।
ইতু আবিরের বুকে মাথা রাখলো।
“এখন ঘুমিয়ে পড় কাল সকালে আমার সেন্টমার্টিন যাবো।”
“সেন্টমার্টিন? কখন প্ল্যান করলে?”
“সব প্ল্যান কি শুধু তুমি করতে পারো? কিছু প্ল্যান তোমার এই ইনোসেন্ট বরটাও করতে পারে।”
ইতু হেসে বললো, “হ্যাঁ খুব ইনোসেন্ট তুমি।”
“কি আমি ইনোসেন্ট না?”
“উঁহু একদমই না ”
“আচ্ছা তাই? তাহলে বলতে চাচ্ছো আমি ইনোসেন্ট না? ওকে ফাইন তাহলে এখন একটু দুষ্টুমি করতেই পারি।”
“এই একদম জ্বালাবে না। মাত্র গোসল করে এসেছি।”
” তো কি হয়েছে আবার করাবো গোসল। আমি নিজে করিয়ে দিবো ওকে?”
“নো ওকে টোকে, ছাড়ো।”
“যাও আজকের জন্য ছেড়ে দিলাম।”
আবির ইতুকে ভালো করে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে নেয়।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে,”লক্ষীর মতো করে ঘুমাও। সকালে জাগিয়ে দিবো।”
ইতু হেসে আবিরের বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে গেলো।
আবির ইতুর দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে এসে সব ভুলে থাকলেও কুহুর ব্যাপারটা তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। সে এটাও ভালো করে যানো ইতুও কুহুকে নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করে। কিন্তু সে এই অবস্থায় কুহুকে রাস্তায় ফেলে দিতে পারে না।
আবির ইতুর গালে আঙুল ছোঁয়ালো৷

“তোকে আর হারাতে পারবো না আমি। না তোকে কষ্টে দেখতে পারবো। আমি সব ঠিক করে দিব ইতুপাখি। কুহু কখনো আমাদের মাঝে আসবে না৷”

আবির ইতুর কপালে গভীর ভাবে চুমু দিলো।
ইতু হালকা নড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো।
আবির দেখলো ইতু কিছু মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে। তাকে এইভাবে ঘুমাতে দেখে আবির হাসলো।
আবিরের ফোনে মেসেজ আসলে আবির ইতুকে সামধানে শুয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে
অয়ন কিছু ছবি পাঠিয়েছে।
আবির ছবিগুলো দেখে অবাক হয়। আবির ভালো করে জুম করে দেখে কুহু আর আদিত্য একসাথে পার্কে বসে আছে।
আবির সাথে সাথে অয়নকে কল দেয়।
“এই ছবি কোথায় পেলি আর এরা দুইজন একসাথে কি করছে?”
অয়ন মেজাজ দেখিয়ে বললো, ” এইসব ছবি আমি তুলেছি। আজকে যখন কুহু কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় আমি তার পিছনে যাই। দেখি সে একটা পার্কে ডুকছে। কাছে গিয়ে দেখি ডাঃআদিত্যর সাথে গিয়ে বসেছে।
আমার তখনই সন্দেহ হয়।
আমি ছবি তুলে রাখি। পরে খোঁজ নিয়ে যানতে পারি এই আদিত্য আমাদের ইতুর পিছনে পড়ে আছে। আর কুহু তোর এক্স জেনে আদিত্য কুহুর সাথে হাত মিলিয়েছে। আমি আগেই বলেছিলাম ওই ফালতু মেয়েকে দয়া দেখাস না। এই মেয়ে তোর দয়ার যোগ্য না।”

“আমার জায়গায় তুই হলে কি করতি? এই অবস্থায় ওকে রাস্তায় ফেলে দিতি? কুহুর জায়গায় যে কেউ থাকলে আমি এটাই করতাম। কুহু আমার প্রতি খারাপ করেছে তাই আমিও তার সাথে সাথে খারাপ ব্যবহার করবো? তাহলে ওর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?”
অয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “ঠিক আছে বুঝেছি। এখন এই ঝামেলাটাকে সামলাবি কি করে? যাই হোক ইতুর দিকে খেয়াল রাখবি মেয়েটা যতোই শক্ত হোক না কেন তোকে নিয়ে খুব সেন্সেটিব জানিস তো।”

আবির ইতুর দিকে তাকালো। শান্তিতে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“আমি ফিরে এসে কথা বললো। এখন প্রতিটা মুহুর্ত আমি ইতুকে নিয়ে কাটাতে চাই। কুহুকে নিয়ে ভেবে এই সময়গুলো নষ্ট করতে চাই না। ”
“ঠিক আছে। ফিরে এসে সবার আগে আমার সাথে দেখা করবি। রাখছি।”
“ওকে বাই।”
আবির ফোন রেখে ইতুর পাশে শুয়ে পড়লো।
কুহুকে নিয়ে না ভাবতে চাইলেও তার টেনশন হচ্ছে। কুহু একা হলে এতো ভাবতো না এখন আদিত্য যোগ হয়েছে। সে কিছুতেই ইতুকে হারাতে পারবে না।
ইতু ঘুমের মধ্যে আবিরের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
আবির ইতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।গল্পঃ বাক্সবন্দী চিঠি
লেখিকাঃ নিনিকা জামান নূর
পর্বঃ ২৪
ভোর হলো অনেকক্ষন হয়েছে। চারদিকে অদ্ভুত এক সোনালী আভা। দূর থেকে ঢেউ এর গর্জন শোনা যাচ্ছে। আবির বারান্দার দরজা খুলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইতু তখনো ঘুমাচ্ছে। আবির তার হাতে পরা ওয়াচের দিকে তাকিয়ে দেখে ৭ঃ৪৫ মিনিট। তাদের হাতে সময় কম। ৯টায় তাদের জাহাজ এ থাকতে হবে।
আবির ইতুর কাছে গেলো।
এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিয়ে ইতুর পাশে বসলো।
কয়েকবার ইতুকে ডাকলো। ইতু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। মেয়েটা এতো ঘুম কাতুরে ভেবে আবির হাসলো। আবির ইতুর চুলে হাত গলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বার কয়েক ডাকলো।
ইতু পিটপিট করে তাকালো।
হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় চিৎকার করে উঠে বসলো।
“হায় আল্লাহ, আমাদের দেরি হয়ে গেছে? জাহাজ কি ছেড়ে দিয়েছে? আমাকে ডাকবে না তুমি?”
“রিলেক্স ইতু। এখনো সময় আছে তুমি যদি আর কিছু সময় এখানে ওয়েস্ট করো তাহলে ঠিক আমাদের লেট হবে। তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হও সে কখন থেকে ডাকছি।”
“উফফ আরো আগে ডাকবা না? আমি ফ্রেস হবো কখন রেডি হবো কখন? তুমি তো নাস্তাও করোনি। কাল রাতেও কিছু খেলে না।”
“চিন্তা করোনা আমি রুম সার্ভিস দিয়েছি ওরা নাস্তা দিয়ে যাবে। আর তুমি শুধু মুখ ধুয়ে চেঞ্জ করে এসো কাল রাতেও গোসল করেছো এখন আবার করলে ঠান্ডা লেগে যাবে। যাও একটু আর্লি করো।”
___________________________
জাহাজ চলতে শুরু করেছে। ইতু আর আবির তাদের কেবিনে তাদের ব্যাগ রেখে বেরিয়ে এলো।
ইতু উত্তেজিত হয়ে জাহাজের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। এর আগে কখনো সে জাহাজে উঠেনি এই প্রথম সে জাহাজ ভ্রমন করছে। এক আলাদা উত্তেজনা কাজ করছে। ইতু আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“আমি শুনেছি সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাকি গাংচিলের দেখা মিলে? কোথাও দেখছি না যে।”
আবির হেসে ইতুর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। “এখানে তাদের দেখা পাবে না। টেকনাফ হয়ে প্রবাহিত নাফ নদীতেই তাদের দেখা পাবে তুমি।
একটু সবুর করো। ততখন না হই তোমার এই বরটাকেই দেখো।”
ইতু হাসলো আবিরের কথায়। সেই সকাল থেকে সে আবিরকেই দেখে যাচ্ছে। কালো টি-শার্ট, ব্লু জিন্স প্যান্ট পরে আছে সাথে সাথে কালো ঘড়ি। গোছানো চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো করে দিচ্ছে। স্নিগ্ধ চোখগুলোয় কি মায়াময়। ইতু চোখ ফেরাতে পারে না তার থেকে। এই মানুষটার সাথে সে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায়।
ইতুকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
“কিছু খাবে তুমি? পানি এনে দিবো?”
“কিছু লাগবে না। তুমি এখানেই থাকো।”
আবির কিছুটা রেগে গেলো। “সকালে নাস্তা করে পানি খেলে না। কতোবার বলেছি তোমাকে পানি খাওয়া স্কিপ করবে না। দাঁড়াও এখানে আমি এনে দিচ্ছি।”
আবির ইতুর কথা না শুনে চলে গেলো পানি আনতে।
ইতু আবিরের যাওয়ার পথে তাকিয়ে হাতাশ হলো। আবির রেগে গেলে সে আর কিছু বলতে পারে না।
ইতু তার শাড়ির আঁচল টেনে আশেপাশে প্রকৃতি দেখায় মনোযোগ দিলো।
কিছুক্ষন পর কেউ তার কোমড় ছুঁয়ে দিলো।
ইতু সাথে সাথে বুঝে গেলো এটা আবিরের হাত নয়।
সে ছিঁটকে দূরে সরে গেলো। সামনে একটা অচেনা লোক দেখে তার পুরো শরীর শিরশির করে উঠলো।লোকটা তার দিকে নোংরা চোখে তাকাচ্ছে। তার চোখ ইতুর পুরো শরীরে ঘুরছে।
ইতু ঘবড়ে গিয়ে আশেপাশে তাকালো এখানে মানুষ খুবই কম। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত।
তার সামনের মানুষটা হঠাৎই কথা বলে উঠলো, “কি রে সইরা গেলি কেন? কাছে আয়। শরম করে তোর? এখানে না করবার চাইলে রুমে চল। তোরে আমার মনে ধরছে। খুশি করতে পারলে মোটা টেকা দিমু। আজকেই একজন এর পকেট মাইরা টেকা পাইছি।
তোরেও বেশ পরিষ্কার লাগতাছে। আমার আবার তেনা পিন্দা মাইয়া ভালা লাগে না।
খারাই আছোচ কেন মা*? আমার লগে যাইবি নাকি জোর করন লাগবো।”
“ছিঃ কি বলছেন এইসব। আমি ভদ্র ঘরের মেয়ে। আপনি কোন সাহসে আমার সাথে এইভাবে কথা বলছেন? আমার স্বামী যদি জানতে পারে আপনাকে আস্ত রাখবে না।”
“ওহ তুই তাইলে বে*শ্যা না? তুই বে*শ্যা হস আর ভালা মাইয়া হস তোরে আমার মনে ধরছে। আজকে আমার তোরেই লাগবে। ভালা ভালা চল নাইলে তোরে কেমনে নেওন লাগে আমার জানা আছে।”
“খবরদার কাছে আসবি না জানোয়ার। আমি চিতকার করে লোক ডাকবো।”
লোকটা বকট শব্দ করে হাসলো।
“চারিপাশে চাইয়া দেখ কেউ নাই। ঐ দুই বেডাও তোরে ধরার লাইগা বইসা আছে।”
ইতুর মনে হচ্ছে সে এখানেই অচেতন হয়ে যাবে। এ কোন বিপদের মুখে পড়লো সে? আবির এখনো আসছে না কেনো? আজ কি তার সব শেষ হয়ে যাবে?
লোকটা ইতুর দিকে ধেয়ে এলো। ইতু চিৎকার করতে গেলে তার মুখ চে*পে ধ*র*লো। ইতু তার হাত পা দিয়ে লোকটাকে সরাতে চাইলো। বাকি দুটো লোক এগিয়ে আসতে লাগলো তার দিকে।
ইতু কান্নায় ভেংগে পড়লো। তার মাথা কাজ করছে না। সে কি মুখ নিয়ে আবিরের কাছে যাবে? আবির এসে তাকে বাঁচাতে পারবে তো? আজকাল পত্রিকায় কতো রে*প হওয়ার খবর পাচ্ছে। কতো মেয়ে এই অসম্মান সহ্য করতে না পেরে সু*ই*সা*ই*ড করছে। ইতু কখনো ভাবে তাকেও একদিন এইসব এর মুখোমুখি হতে হবে। তারও কি এই পরিনতি হবে? আবির সময় মতো আসতে পারবে তো?
_______________________________________
অহনা তার রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
শ্রাবনকে এই নিয়ে ২৬বার কল দিয়েছে। সে একবারও রিসিভ করেনি।
অহনা শ্রাবণকে মেসেজ পাঠালো।
“প্লিজ একটু কলটা ধরুন আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
অহনা আবার চেষ্টা করলো। এইবার কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দিলো।
অহনা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
অহনার মা মিসেস শায়েলা দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে বললো,”অহনা তোকে দরজা খুলতে বলছি। এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? বাসায় মেহামান এসেছে আর তুই দরজা বন্ধ করে বসে আছিস? তোর বাবা খুব রেগে আছে। দরজা খোল বলছি।”
অহনা বিছানায় শুয়ে কানে বালিশ চেপে ধরলো। সে কিছুতেই আজ এই রুম থেকে বের হবে না। যা হওয়ার হোক সে শ্রাবণ ছাড়া আর কারোর সাথে বিয়ের কথা চিন্তাও করতে পারবে না। আজকের পর যদি তাকে বাড়ি ছাড়াও করে তবে তাই হোক।
চলবে।
চলবে।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here