বিলম্বিত বাসর পর্ব ১৬

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz
.
.
.
-ওদিকের কি অবস্থা লামিয়া?
.
ফোনের ওপারে আয়ানের প্রশ্নটি শুনে চিন্তিত স্বরে লামিয়া বললো-
আমি কিভাবে বলবো? আমি আমার রুমে বসে আছি।
-আড়ালে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনো?
-হু! বললেই হলো? কেউ দেখে ফেলবে বলবে টা কি!
-উফফ…. আমার যে ওখানে কি হচ্ছে তা জনার জন্য আর তর সইছেনা।
-তা তুমি সাথে আসলেই পারতে উনাদের সাথে।
-আসতে কি চাইনি? আনেনি বলো।
.
আয়ানের কথা শুনে হাসলো লামিয়া।
তার হাসির শব্দ শুনে আয়ান বললো-
হায়রে! আমি মরি চিন্তায় সে দিচ্ছে হাসি!
.
.
.
লামিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় আবেশ জিজ্ঞাসা করলো-
আপনার সিদ্ধান্ত কি আঙ্কেল?
-আকদ করিয়ে রাখাই যায়। তবে মেয়ে আমি এখন পাঠাবো না। আয়ান আগে কাজে মন দিক।
.
লামিয়ার বাবার মুখে কথাটি শুনেই ফাতেমা বেগম বলে উঠলেন-
আলহামদুলিল্লাহ। তা
কখন এই শুভ কাজটা সেরে ফেলতে পারি?
-আপনাদের কখন ইচ্ছে?
-এই শুক্রবারে?
-জ্বী ঠিক আছে।
-আমি কি লামিয়াকে একটু দেখতে পারি?
.
লামিয়ার মা বলে উঠলেন-
কেনো নয়! আমি এখুনি তাকে নিয়ে আসছি।
.
.
.
-লামিয়া?
.
আয়ানের সাথে কথা বলছিলো ফোনে লামিয়া। মায়ের ডাকে সে তাড়াহুড়ো করে ফোনের লাইন কেটে বললো-
হুম?
-তোকে যেতে হবে আমার সাথে। গায়ের উড়নাটা মাথায় দে।
-কেনো মা?
-যেটা বলছি কর আর চুপচাপ আমার সাথে আয়।
.
বাধ্য মেয়ের মতো উড়না মাথায় টেনে এনে লামিয়া এগুলো মায়ের সাথে।
.
.
ফাতেমা বেগম ও আদুরের ঠিক মাঝখানে বসে আছে লামিয়া। ফাতেমা বেগম তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে একটি চেইন বের করে লামিয়ার উদ্দেশ্যে বললেন-
এদিকে আসো মা, চেইনটা পরিয়ে দেয়।
.
আদুরে বুঝতে পারলো লামিয়ার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্ন। তার বাবা কি সম্মতি দিয়েছে এই বিয়েতে!
আদুরে তার অবস্থা বুঝতে পেরে তার কানের পাশে মুখটা এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো-
আগামী শুক্রবার তোমাদের আকদ৷ এখন চেইনটা পরে নাও!
.
.
.
সারারুমে পায়চারী করা শুরু করে দিয়েছে আয়ান। ও বাড়িতে কি চলছে এই নিয়ে তার মনে চলছে নানারকমের প্রশ্ন। লামিয়ার সাথে ফোনে কথা বলার সময় হঠাৎ-ই লাইন কেটে গিয়েছে। কেউ এসেছিলো বা অন্যকিছু! না আর ভাবতে পারছেনা আয়ান। হাতে থাকা মোবাইলটায় ভাইয়ের নাম্বার তুলে ডায়াল করলো সে।
.
.
সবে মাত্র মুখে মিষ্টিটা তুলেছে আবেশ। তার মাঝেই আসলো আয়ানের ফোন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে সে এগুলো ড্রয়িংরুমের পাশে থাকা বারান্দার দিকে।
-কিরে ভাই?
.
আবেশের এমন প্রশ্ন শুনে হালকা কেশে আয়ান বললো-
-তোমরা এখনো ও বাড়ি?
-তোর বাড়ি হলে চোখে দেখতিনা?
-না, তা দেখতাম! এখনো কি করছো?
-মিষ্টিটা সবে মুখে তুলেছিলাম। তোর ফোন আসাতে তুলতে পারিনি। মানে মিষ্টিমুখ করতে পারিনি।
.
মিষ্টিমুখ! কথাটি শুনতেই যেনো আয়ানের বুকের মাঝে টুংটাং শব্দ করতে লাগলো। তবে কি তারা রাজী হয়েছে আকদের জন্য?
.
ওপাশ থেকে আয়ানের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবেশ বললো-
কি হলো?
.
খানিকটা বিরক্তি নিয়েই আয়ান বললো-
আচ্ছা ভাইয়া। তুমি কি আসলেই বুঝতে পারছোনা আমি কি বলছি বা কি জানতে চাইছি?
-কি?
-আরে ওখানে কি আমার আকদের ব্যাপারে সকলে রাজী হয়েছেন?
-হ্যাঁ!
.
হ্যাঁ কথাটি শুনতেই আয়ানের মুখে একটা স্বস্থির হাসি ফুটলো।
হেসে হেসেই সে বললো-
আজ বুঝলাম ভাইয়া, ভাবী তোমাকে কেনো ম্যান্দামার্কা বলে!
-মানে?
-আমি রাখছি।
.
আয়ান লাইন কেটে দিলেও আবেশ কান থেকে ফোন নামালো না। গভীর চিন্তায় যেনো তলিয়ে পড়ছে সে। আদুরে কি সবাইকে জানান দিবে নাকি? আবেশ একটা ম্যান্দামার্কা? আচ্ছা, এই ম্যান্দামার্কা মানেটা কি?
.
.
.
-এই শুক্রবারে আকদের অনুষ্ঠান করলে তোমার কোনো আপত্তি নেইতো?
.
বাবার মুখে কথাটি শুনেই মাথাটা আরো নিচু করে ফেললো লামিয়া। পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা যেনো তাকে ঘিরে ধরেছে।
গলার স্বরটা নরম করে লামিয়া বললো-
না নেই।
-আলহামদুল্লিলাহ! তা ফাতেমা আপা? আপনার ছোট ছেলেকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করুন, সে এই বিয়েতে রাজী কিনা?
.
মুজিবুর আহসানের কথা শুনে হেসে ফেললেন ফাতেমা বেগম। হাসতে হাসতেই তিনি বললেন-
সেতো এক পায়েই খাড়া!
এখন বললে এখুনি রাজি হবে।
.
রুমে থাকা উপস্থিত সকলে হেসে উঠলেন।
এদিকে লামিয়ার লজ্জায় মুখে লালচে আবরণ ফুটে উঠলো। ইচ্ছে করছে দৌড়ে ভেতরের রুমে চলে যেতে। তার অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরে আদুরে বললো-
লামিয়া তুমি আমাকে তোমার রুম দেখাবেনা?
.
আদুরের কথা শুনে যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পেলো লামিয়া।
খুশিতে গদগদ হয়ে লামিয়া বললো-
হ্যাঁ ভাবী। চলুন না!
.
.
.
-বাহ লামিয়া! তোমার রুমটা তো বেশ গোছানো।
.
আদুরের কথা শুনে মুচকি হাসলো লামিয়া। তারপরেই দৃষ্টি দিলো বিছানার উপরে থাকা মোবাইলটার দিকে।
যেকোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার মনের অবস্থা যেনো আদুরে বুঝতে পারে। ৬বছরের এক্সপেরিয়েন্স আছে কিনা!
তাই লামিয়ার মনের অবস্থাও সে সহজে বুঝে গেলো। এখন যে আয়ানের সাথে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে লামিয়ার তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হলোনা আদুরের।
-তুমি তাহলে আয়ানের সাথে কথা বলো আমি আসি।
-তুমি কি করে বুঝলে আমি…..
-উহু! কেনো ভুলে যাও? আমিও প্রেমিকা ছিলাম!
.
.
.
শুক্রবার হতে মাত্র ২দিন বাকি। লামিয়াদের বাড়ি থেকে এসেই লিস্ট করতে বসে গেলো আদুরে।
লামিয়ার জন্য কি কি বাজার করতে হবে এই দায়িত্ব টি সে নিয়েছে।
-কি লিখছো আপু?
.
পরীর ডাকে হাতে থাকা কলমটা টেবিলের উপর রেখে আদুরে বললো-
তোমার আয়ান ভাইয়ার বউ এর জন্য কি কি লাগবে তা লিখে রাখছি।
-নতুন বউ কি নিয়ে আসবে?
-আনবেনা। আকদ করে রাখবে। পরে আনবে।
-কবে আকদ?
-এইতো ২দিন পরেই। তুমি পড়তে এসেছো না?
-হ্যাঁ।
-যাও পড়া শেষ করে আসো।
.
.
পরী বের হতেই আবেশ প্রবেশ করলো রুমে।
বাসায় আসার পর থেকেই দুজনের আর কোনো কথা হয়নি।
আদুরের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবেশ।
তা দেখে আদুরে বললো-
কি হয়েছে? ওমন করে তাকিয়ে আছো কেনো?
.
কোনো কথা না বলে দ্রুতবেগে আদুরের পাশে আসলো আবেশ।
আদুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো-
কিছু বলবে?
.
আচমকা আদুরের হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে তার রসালো ঠোঁট জোড়ায় ঠোঁট ডুবালো আবেশ।
কিছুক্ষণ আদুরের ঠোঁটের স্বাদ নেয়ার পর সে ফিসফিস করে বললো-
এসব করলে আমাকে ম্যান্দামার্কা বলা থেকে বিরত থাকবে?
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here