চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি আমাদের বাড়ির স্টোর রুমে। আর আমাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে আছে নিদ্র ভাই।
আমাকে হঠাৎ করে এভাবে টেনে এনে দেয়ালে চেপে ধরার কারন আমি আদোও খুজে পাচ্ছি না। শরিরের আঘাতের চাইতে ভয়ই বেশি লাগছে আমার। কারন নিদ্র ভাইয়ে রাগ সম্পর্কে আমার অনেক ছোট বেলা থেকেই ধারনা আছে।
কি পড়েছিস এটা?
আমার ভাবনার মাঝেই নিদ্র ভাইয়ের ঝাঁঝাল কন্ঠে বলা কথা আমি কেঁপে উঠে আরো শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নেই।
কি রে কথা কানে যায় না কি পড়েছিস এটা? এনছার দে।
শা শাড়ি, কাপা কাঁপা গলায় বললাম।
নিদ্র ভাই আমার এতটাই কাছে যে তার নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে।
আমার মুখের এক্সপেশন দেখে নিদ্র ভাই আমাকে ছেরে দিয়ে দুরে সরে দারালো।
শরির যদি বের করে সবাই কে দেখাবি তাহলে এমন কাপড় না পড়ে খুলে বেরাতে পারিস না। ছেলেদের পেট পিঠ দেখাতে তো আবার তোর খুব ভালো লাগে।
নিদ্র ভাইয়ের কথাশুনে এবার আমি ডুকরে কেদে উঠলাম। আমাকে এভাবে কেউ কখনো কথা শুনায় না।
আমাকে কাদতে দেখে নিদ্র ভাই রাগে দেয়ালে নিজের হাত ঘুষি দিয়ে বলরেন যা শাড়ি বদলে থ্রি পিছ নয় তো গ্রাউন পড়।
নিদ্র ভাইয়ের বলতে দেরি আমি ছুটে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কাদতে লাগলাম।
এভাবে ছাগলের বাচ্চার মতো না কেদে তারাতাড়ি আয়। ভুলে যাসনা আজ তোর একমাত্র ভাই নোমানের গায়ে হলুদ। তোর ভাই তোকে ছারা হলুদে যাবে না , আর নোমান কে হলুদ লাগিয়ে আবার কনের বাড়িতেও যেতে হবে।
আমার দরজার সামনে নিদ্র ভাই দাড়িয়ে বলে চলে গেলেন।
আমি এবার চোখের পানি মুছে আলমারি থেকে একটা মিষ্টি কালারের গ্রাউন পড়ে নিলাম।
শাড়ির সাথে মেচ করে চুল বেধেছিলাম, চুরি পড়েছিলাম, সেগুলো খুলে রেখে হাতে বেচলেট পড়ে চুল সাধারন ঝুটি করে নিয়ে আয়নায় তাকিয়ে দেখি চোখের সাজ নষ্ট হয়ে গেছে। মুখের দুই গালে আঙ্গুলের চিন্হ বসে আছে।
এবার আমার নিদ্র ভাই য়ের উপড় ভিষন রাগ হলো। আমার এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট করে দিয়েছে।
কি আর করা ওয়াশ রুমে গিয়ে মুখ ধুরে সাধারন সাজ দিয়ে বের হলাম, এর মাঝেই মামি, মা ডেকে গেছেন আমাকে।
তাড়াতাড়ি করে সাদে যাচ্ছি আর ভাবছি না জানি কি কপালে আছে আমার আজকে।
( চলুন পরিচয় হয়ে যাক, আজকে আমার বড় ভাই নোমানের গায়ে হলুদ, আর নিদ্র ভাই হচ্ছে আমার ভাইয়ার এক মাত্র বেষ্ট ফেন্ড।আমরা দুই ভাই বোন আমি নেহা আর আমার ভাই নোমান। নোমান ভাইয়া ডক্টর, আর নিদ্র ভাইয়া এবার বিদেশ থেকে পড়া শেষ করে
এসেছে। আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। আমরা জয়েন ফ্যামিলি। সব কাজিন রা মিলে নোমান ভাইয়ের বিয়ের জন্য হলুদ শাড়ি কিনেছিলাম।।শাড়ি পড়ে ছাদে ওঠার সময় হঠাৎ নিদ্র ভাই আমাকে টেনে নিয়ে যান আমাদের চিলে কোঠার স্টোর রুমে। আর তার পড়ের কাহিনি তো আপনারা জানেনই।)
দীর্ঘ ছয় বছর পর নিদ্র ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছে। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন নিদ্র ভাই পড়াশোনার জন্য আমেরিকা চলে যান। এর পরে তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম তার কথা। আজকে হঠাৎ করে আবার তাকে দেখে মনে পড়লো যে আমার ভাইয়ে একটা খা*র*সু বেষ্ট ফেন্ড আছে।
আজকে সকালে নিদ্র ভাই আমাদের বাড়িতে এসেছে। গতকাল নাকি সে দেশে ফিরেছে। আর এসেই আমার ভাইয়ার বিয়েতে চলে এসেছে। বিকেলে যখন আন্টি মানে নিদ্র ভাইয়ার আম্মু বলছিলো তখনি শুনতে পেয়েছিলাম।
ভাবতে ভাবতে ছাদে উঠতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম আরিয়ানের সাথে, ওরে দেখেই আমার মনের সব রাগ ঝারতে মন চাইলো ওর উপড়।
আরিয়ানের বাচ্চা তুই আমাকে ধাক্কা দিলি কেন।।
কি বললি পে*ত্নি আমি, আমি তরে ধাক্কা দিবো কেন। আমার তো খেয়ে কাজ নাই সেধে সেধে তর মতো পে*ত্নী রে নিজে ধাক্কা দিয়ে কাধে নেবো।
কি তর এতো বড় সাহস তুই আমাকে আবার পে*ত্নী বললি,আজকে তোর এক দিন কি আমার একদিন, বলেই ওর সামনের চুল ধরে টান দিয়ে দিলাম দৌড়।
সাদের দরজায় গিয়ে কারো বুকের সাথে পড়তে নিলে সামনের পান্জাবি খামছে ধরে শক্ত করে দাড়িয়ে, চোখ বন্ধ করে আছি।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি স্বয়ং নিদ্র ভাই আমার সামনে ভ্রু কুচকে দারিয়ে আছে আর আমি তার পান্জাবি ধরে আছি।
এমন সময় পিছনে আরিয়ান বলে ওঠে পেত্নী আবার ধাক্কা খাইছোস। দেখ এখন দোস কার।
ওর কথাশুনে আমি চট করে নিন্দ্র ভাইকে ছেরে দিয়ে আরিয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, ওই তুই আমারে পেত্নী কস কেন, আমি তর ঘারে চরছি না ঘার মটকাইছি।
মনে মনে আজ বুঝি আমার ধাক্কা খাওয়ার দিন।
আরিয়ানকে ধরতে গেলে ও এক ছুটে স্টেজের মাঝখানে চলে যায়।
পেত্নী কে পেত্নী বলবেনা তো কি বলবে শুনি মিছ ঝগড়ুটে।
নিদ্র ভাইয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। তার সাথে কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছাই নেই। কারন সে আমার এতো শখের কেনা শাড়িটা পড়তে দিলো না। সবাই কত সুন্দর করে সেজেছে আর আমি পাউডার টাউ দিতে পারলাম না। তার জন্য আমাকে মুখ ধুয়ে ডেস বদলে আসতে হয়েছে।
সাইড কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় নিদ্র ভাই বলা একটা কথা কানে আসলো, এতটা সুন্দর সে না হলেও পারতো।
আমি মুখ ভেংচে সামনে এগুতেই মামনি মানে আরিয়ানের আম্মু বলে উঠলো,
কিরে নেহা তোর এতো সময় লাগে আসতে, আর একি তোর শাড়ি কই, মুখের একি হাল। এমন হলো কেমনে?
আমি কি করে বলি এসব নিদ্র ভাইয়ের কাজ। সেই আমার শাড়ি পড়তে দেয়নি।
মামনির কথা শুনে নিরাও বলে উঠলো হ্যারে নেহা আমরা সব কাজিন রা কত শখ করে শাড়ি কিনলাম আর তুই কিনা গ্রাউন পড়ে আসছিস।
আমি কথা কাটানোর জন্য বললাম এই ছারতো তোরা, এমনিতেই আমার ভাইয়ের হলুদ ছোয়াতে দেরি হচ্ছে, আবার হলুদ নিয়ে ভাবি মনির বাড়িতেও তো যেতে হবে তাই না।
বলেই আমি নোমান ভাইয়ার পাশে বসে একটা হাসি দিয়ে ভাইয়াকে হলুদ ছোয়াতে নিলে নিদ্র ভাই বলে এক মিনিট আমি আসছি বলেই আমার ভাইয়ার পাশে বসে হলুদ লাগিয়ে দিলো।
এবার আমি লাগিয়ে উঠতে নিলে নোমান ভাইযা বলে কি বনু রেগে আছিস মনে হয় কারো উপড়।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম না তো কই ভাইয়া।
তাহলে তুই আমার পাশে বসছিস না কেন। একদিনেই পড় করে দিচ্ছিস নাকি?
ভাইয়ার কথা শুনে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বললাম, আরে ভাইয়া না। আমি পর করবো কেন, ভাবি আসলে তুমিই আমাকে ভুলে যাবা।
তোমার এতো বছরের ভালোবাসা রাত পহালেই তো তোমার ইদ।
ভাইয়া আমার কথার ধরন দেখে হেসে বললেন এখনি পাকা পাকা কথা বের হচ্ছে মুখ থেকে। দারা তোর ব্যবস্থা করছি।
পাত্র তো ঠিক করাই আছে।
কি বললা ভাইয়া?
কই কি বলছি, তুই ভুল শুনছিস নাকি।
আচ্ছা বুঝলাম এবার তুমি বাকি ভাই বোনের থেকে হলুদ ছোয়াও।
বলেই চলে আসলাম নিচে।
নিজের রুমে এসে দরজা ভিজিয়ে ওয়াশ রুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে বেডের দিকে না তাকিয়ে শুতে গেলে কেউ আহ্হ্ করে উঠলে,লাফদিয়ে উঠে পিছন ঘুরে দেখি নিদ্র ভাই আমার রুমে বসে আমার বিছানায় শুয়ে আছে।
এই দিনে দুপুরে কানা হইছিস তুই।
আমি কানা না, আপনি কানা, কানার নানা। এখন দিন না সন্ধা।
হইছে বউ ক্ষমা দে।
ওই কি বলেন আপনি?
কই কি বলছি!
আপনি আমার রুমে কি করেন?
ভালো লাগছেনা একজনকে ছারা, তাই নিচে আসছিলাম তোর রুমে একটু ঘুমাবো বলে। কিন্তু তুই তো আমাকে তাড়াই দিচ্ছিস।
আমার মেজাজ গরম হয়ে গেছে তাই কথা না বাড়িয়ে রুম ছেরে চলে যেতে নিলে নিদ্র ভাই হেচকা টানে আমাকে তার বুকে ফেলে দেন,,,,
চলবে,,,,
#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠ_গোলাপ
#সূচনা_পর্ব
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা ঙৃ