বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব -০৩

#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠ_গোলাপ
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা

আরে ভাবি তুমি এতো মাইন্ড করছো কেনো, আমি কিছু মনে করি নি।

যতই হোক আমার একমাত্র ননদী বলে কথা।

দেখো ভাবি তোমাকে আজকে একটা কথা বলতে চাই, তুমি কি আমার বড় বোন হবে? আমার তো কোনো বড় বোন নেই, আমরা তো দুই ভাই বোন। তুমি আমাদের বাড়িতে আমার ভাইয়ের বউ না হয়ে আমার বোন হয়ে যাবে প্লিজ?
আহা বাচ্চাটা এমন করে বলে না আমি তো তোমার বড় বোনই তাইনা।
আমি তো এমনি বললাম। আমি কি আর জানি না আমার এই বাচ্চা বোনটা অধমের কাছে একটু আদর স্নেহ চায়। সেকি আর আমাকে বলে দিতে হবে।
ভাবি আমাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বললেন।
ভাবির কানে কানে ফিসফিস করে বললাম আছে নাকি কোনো কাজিন! একটু সেটিং করাই দাও না। সিঙ্গেল আর কত দিন।
ভাবি আলতো করে কান মলে বলরেন ওরে দুষ্টু। এই সব চলে মনে মনে।
আমার ভাবি মনির নাম মারিয়া। সেও আমার ভাইয়ের মতো সাইকোলজিষ্ট।
এই তোদের ভাবি ননদের ভাব বিনিময় শেষ হলে আমরা কি হলুদ কার্য শুরু করতে পারি!
সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি তখন যে ছেলেটা আমার উপর জুস ফেলেছিলো সেই কথাটা বলছে।
আমি তার দিকে তাকাতেই সে বলে ওহ্, তাহলে আপনি আমার মামাতো বোনের ননদ।
দেখ মিরাজ এমনিতেই তুই অন্যায় করেছিস ওর হেজাবে জুস ফেলে হেজাব নষ্ট করেছিস, এখন আবার ওকে ব্লেম করছিস।(ভাবি)
এবার মিরাজ নামক ছেলেটা চুপ হয়ে গেলো।
ভাবির বান্ধবি আর কাজিন রা সবাই মিলে ভাবিকে ঠিক ভাবে হলুদ স্টেজে বসিয়ে দিলে প্রথমে বড়রা হলুদ লাগাচ্ছে। এর পড়ে ছোটরা লাগাবে।
এই সুযোগে আমি একটু এদিক ওদিক ঘুরার জন্য উঠতেই দেখি মিরাজ ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
কোথায় যাওয়া হচ্ছে নাকি মিস?
জি বাসাটা ঘুরে দেখতে চাচ্ছিলাম এই আর কি ।
তা আপনার নাম কি?
জি ভাইয়া নেহা।
নাইচ, আমার নাম মিরাজ, বর্তমানে একটা কম্পানিতে জব করি।
জি আমি জানি আপনার নাম মিরাজ। (বেটা তোর কাছে কি আমি জানতে চাইছি তুই কি করিস)
ওহ্ আচ্ছা, আসলে আমি ওই সময়ের ঘটনার জন্য সরি, আমার একটু তাড়া ছিলো তাই খেয়াল করে সারতে পারি নি।
ইট’স ওকে, আমি কিছু মনে করি নি। বিয়ে বাড়িতে এসব ছোট খাটো বিষয় হয়েই থাকে।
মিরাজ ছেলেটা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।
আর মিরাজ সেখানে আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে রইলো।
নেহা আর মিরাজের দিকে আড়াল থেকে কেউ একজন অগ্নি চোখে তাকিয়ে ছিলো যা মিরাজ নেহার চোখের পড়ে নি। যদি নেহা একবার দেখতো তাহলে হয়তো সে আর কখনো কারো সাথে কথাই বলতো না।

এই তো আর কিছু দিন বাচ্চা পাখি, যত পারো ডানা ঝাপটে মুক্ত আকাশে উড়ে নাউ। আসছে তোমার জিবনের সব চাইতে বড় ঝর। যার হাত থেকে তোমায় কেউ বাচাতে পারবে না।তোমার অতিত বড্ড তিক্ত যা সহ্য করতে পারবে না। বলেই একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে ব্যক্তিটি সরে গেলো সেখান থেকে

মিরাজ কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে যখন বুঝতে পারলো সে বোকা হয়েছে তখন মাথা চুলকে নেহার পিছু পিছু বাকিদের কাছে চলে গেলো।
নেহা গিয়ে দেখে বড় দের হলুদ লাগানো প্রায় শেষ। এখ ওরা লাগিয়ে দিবে। নেহা গিয়ে সোজা নিদ্রের পাশে দাড়ালো। তখন নিদ্র ফিস ফিস করে বলে,
কি স্নিগ্ধময়ী এত সময় কোথায় ছিলেন আপনি।
নেহা বড় বড় চোখে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, কি বললেন নিদ্র ভাই, মানে আমাকে আপনি কবে থেকে এই সব নামে ডাকা শুরু করলেন। বিয়ে বাড়িতে সুন্দরী বেয়াইন দেখে কি আপনার মাথা গেলো নাকি।
সুন্দরী বেয়াইন দের ভেবে আমাকে উল্টাপাল্টা বকছেন নাকি।

এবার নিদ্র বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে বললো না আমি সঠিক জায়গায়ই বলেছি। কিন্তু তুই তো গা*ধা। তোর তো আবার এই সব ফিলোসোফি মাথায় ডুকবে না।
ক্ষমা করেন ভাই আমি আপনাদের মতো এতো বিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট না। এই সব ফিলোসফি বোঝার ক্ষমতা আমার নাই।

আমি কি তরে পড়াইতে বসছি। তুই সাধারন কথাও বুঝিস না।
তোরে নিয়ে আমি কেমনে এ জিবন পার করবো।

এক মিনিট নিদ্র ভাই, আপনি কেনো আমাকে নিয়ে জিবন কাটাতে যাবেন, আর সকাল থেকে আপনার ব্যবহার যেনো কেমন সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে।

এনারে বোঝানোই বিথা। যা হওয়ার হবে। আস্তে আস্তে বলে নিদ্র ভাই হলুদ লাগাতে চলে গেলো, আমিও আর কিছু না বলে নিদ্র ভাইয়ে সাথে হলুদ দিতে চলে গেলাম।

সবার হলুদ লাগানো শেষ হলে আমরা বাড়িতে ফিরে যার যার মতো রুমে ঘুমিয়ে গেলাম।কারন কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে। অনেক কাজ বাকি।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নেহা,কেউ খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষন করছে।
ওহ্ মাই বেবি ডল ইউ আর সো কিউট,কিন্তু আমি তো নিরুপায়। আমার যে তোমার সাথে অনেক বোঝাপড়া আছে। বি রেডি, আসছি তোমার সামনে খুবি অল্প সময়ের জন্য তুমি এই পৃথিবীতে এসেছো। নিজের খুশি মতো স্পেন করো।
বেলকনি দিয়ে বের হয়ে গেলো ঠিক যেভাবে এসেছিলো সে।

নেহা জানতেই পারলো না তাকে কেউ বিষ নজরে দেখছে। ধেয়ে আসছে তার জীবনের কালো অধ্যায়।

প্রকৃতি তার আপন সাজে সেজে উঠেছে উৎসবে মেতে উঠেছে নুরজাহান ভিলা।
নুর জাহান বেগম নেহা কে কয়েকবার ডেকেউ গিয়েছেন। কিন্তু তার ঘুম পাগল মেয়ে তো এখন হুশে নেই।
উপায় না পেয়ে নোমানের রুমে গিয়ে দেখেন নিদ্র আর নোমান গলা ধরে ঘুমিয়ে আছে।
বাবা নোমান উঠবিনা বাবা। বেলা পড়ে আসছে এখনো তোরা ঘুমিয়ে আছিস।
নুর জাহান বেগমের ডাকে নোমানের ঘুম না ভাংলেও নিদ্র ঠিকি উঠে পড়ে।
আড়মোরা ভেংয়ে বলে, কি মামনি কি হয়েছে জানই তো কাল রাতে আমরা কত রাতে ঘুমিয়েছি। এখন তোমার নোমানকে ডাকা ঠিক হবে না।
আচ্ছা বাবা তা নাহয় বুঝলাম নেহাকে তো উঠাতে হবে। মেয়ে আমার না খেয়ে আছে, সেই কাল সন্ধায় কি খেয়েছিলো।
যানা বাপ আমার একটু তোল না।
নেহার কথা শুনতেই নিদ্র ঝটাপট উঠে নেহার রুমের বেলকনি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে।
নেহা একটা টেডিবিয়ার জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কিছু সময় মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে নিদ্র।
মাথায় তার দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়।
এক জগ পানি নেহার মুখের উপড়। ধরফরিয়ে উঠে বসে নেহা সামনে নিদ্র কে দেখে মেজাজটাই গরম হয়ে যায়।
এই সাত সকালে আপনি আমার কাচা ঘুম ভাঙ্গালেন কেন হ্যা।(নেহা)
সাত সকাল কই পাস তুই, ঘড়িতে দেখ নয়টা বাজে। বাড়ির সবাই উঠে গেছে আর তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।(নিদ্র)
পড়ে পড়ে কই ঘুমাচ্ছি, আর তার চাইতে বড় কথা আপনি আমাকে ভিজিয়ে দিলেন কেন?( নেহা)
ভিজিয়েছি বেশ করেছির,এবার গোসল করে সেজে গুজে রেডি হ। তোদের মেয়েদের তো সাজতে অনেক টাইম লাগে। (নিদ্র)
হুমম লাগবেই তো, তাতে আপার কি। এখন দয়া করে যান এখান থেকে।
নিদ্র আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। এমনি তেই রাগিয়ে দিয়েছে। আর বেশি রাগালে আবার সামলাতে হিমশিম খেতে হবে।
নেহা বিছানা ছেরে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে বিছানার উপড় একটা লেহেঙ্গা রাখা।
পেকেট খুলে দেখে মেরুন রংএর একটা সুন্দর লেহেঙ্গা, এটাই সেদিন শপিং মলে দেখেছিলো। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারে নি।
ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে নেহার।
কে দিলো সেটা না ভেবই পড়ে নিয়ে নিচে যায় সকালের নাস্তা করার জন্য।
নুর জাহান বেগম মেয়েকে দেখে খাবার বেরে খাইয়ে দিলে নিলে নিদ্রের মা বলে মাশা-আল্লাহ আমার মেয়ে তো অনেক বড় হয়ে গেছে।
মামুনি তুমি না। আমি এতো তাড়াতাড়ি বড় হতে চাই না।
মামনি আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলরেন পাগলী মেয়ে।

বাড়ির সব মেয়ে পার্লার থেকে সোজা মেয়ের বাড়ি যাবো, আর আমাদের রিসিভ করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে নিদ্র ভাই, আরিয়ান আর মুগ্ধের উপড়।
বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আচে নিদ্র ভাই, মুগ্ধ আর আরিয়ান।
ভাই এভাবে আর কত সময় দাড়িয়ে থাকবো। তিন ঘন্টা তো পার হয়ে গেছে।এখনো ওদের বের হওয়ার নাম নেই।( মুগ্ধ নিদ্র ভাইকে বলে)
এর নামই মেয়ে মানুষ, বুঝলা।
ওনারা বলতে না বলতেই আমরা সবাই বের হয়ে এলাম।
ইশা আর নিরা এক সাথে বললো,কি বলা হচ্ছে আমাদের নামে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here