বেদনার রঙ নীল পর্ব -০৭

#বেদনার_রঙ_নীল
সপ্তম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অপেক্ষারত ছিল আজমীর। তার অপেক্ষা বেশি দীর্ঘ হলো না৷ প্রণয় খুব দ্রুত এলো। আজমীর তার কাছে মোবাইল ফোন আর গাড়ির অর্ধচূর্ণ দেহ তুলে দিয়ে বলল,” তোর জিনিস তুই নে আর আমাকে দায়মুক্ত কর।”

প্রণয় হেসে মোবাইলটা দেখে নিল। গাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। ভ্যানগাড়ির উপর পড়ে থাকা গাড়িটির অন্তিম সংস্কারের দিকে চেয়ে থেকে প্রণয় বলল,” এটা এখানে আনার কি প্রয়োজন ছিল? গ্যারেজে দিয়ে আসতি মেরামতের জন্য!”

আজমীর বলল,” আমি ভেবেছিলাম তুই আর এই গাড়ি চালাবি না।”

প্রণয় চোখ বড় করল,” কেন চালাবো না? এটার ইঞ্জিন কত ভালো ছিল জানিস? আবার ঠিক করে আমি এটাই চালাবো। ইট ওয়াজ লাইক মাই বেস্টফ্রেন্ড।”

আজমীর খুব নরম কণ্ঠে দুঃখ প্রকাশ করল,” স্যরি দোস্ত, আমার জন্য তোকে এতো ঝামেলা সামলাতে হলো। তোর গাড়ি মেরামতের দায়িত্ব আমার। এক সপ্তাহের মধ্যে এটা আগের চেয়েও বেটার বানিয়ে দিবো।”

তারপর সে হালকাভাবে বলল,” বিয়েটা ভাঙার জন্য থ্যাংকস। ”

প্রণয় হাসল। আজমীরের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,” মেনশন নট। গাড়ি নিয়ে তোকে কিছু করতে হবে না৷ আমার জিনিস আমি বুঝে নিবো। তোর জিনিসটা তুই বুঝে নে।”

আজমীরের চোখমুখ উজ্জ্বল হলো। সে মোলায়েম স্বরে বলল,” তুলি… খুব সুন্দর সে তাই না?”

প্রণয় মোবাইলে চোখ রেখে বলল,” আমি কি জানি?”

” তুই দেখিসনি? সারারাত তো ওর সঙ্গেই ছিলি। প্রেমে-টেমে পড়ে যাসনি তো?”

প্রণয় উত্তপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” ফালতু কথা বলবি না।”

আজমীর হু-হা করে হাসতে লাগল। প্রণয়ের কাঁধে মালিশ করতে করতে বলল,” মজা করেছি ইয়ার! প্রণয় আহসান এতো সহজে মেয়েদের উপর ফল করে না। সেটা তো আমি জানি! বরং মেয়েরা তোর উপর ফল করবে। আমার তো ভয় লাগছে তুলি আবার তোর প্রেমে পড়ে গেল নাকি? তুই এতো হেল্প-টেল্প করলি, তার উপর এতো হ্যান্ডসাম তুই..”

প্রণয় আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,” হয়েছে৷ আর গ্যাস দিতে হবে না।”

” দ্যাখ গ্যাস দিচ্ছি না৷ সিরিয়াসলি বলছি। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তুলি যদি তোর প্রেমে পড়ে যায় তাহলে তো মহা মুশকিল হবেরে! আমার কি হবে?”

প্রণয় নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,” এরকম কিছু হয়নি।”

” তুই শিউর তো?”

” হুম।”

” কিভাবে বুঝলি?”

” প্রেমে পড়লে বিদায়ের সময় সে নিশ্চয়ই আমার ফোন নাম্বার, ঠিকানা কিংবা সোশ্যাল একাউন্ট চাইতো। কিন্তু তুলি শুধু আমাকে বিদায় জানিয়েছে। আর থ্যাংকস বলেছে। অতএব বোঝাই যায় ওর মনে সেরকম কিছু তৈরী হয়নি।”

আজমীর হাঁফ ছেড়ে বলল,” তাহলেই নিশ্চিন্ত আমি।”

প্রণয় গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। সে আজমীরকে এই মাত্র যেটা বলেছে তাতে তার নিজেরই মন খারাপ হচ্ছে। তুলির মনে কি আসলেই কিছু তৈরী হয়নি?কিন্তু কালরাতে পুলিশের গাড়িতে ওঠার পর তুলি যখন প্রণয়ের কাঁধে মাথা রেখে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিল তখন প্রণয় নিজেও আচ্ছন্ন হয়েছিল তুলিতে! এর আগে কখনও কোনো মেয়ের জন্য এমন অনুভূতি হয়নি তার। কিন্তু আজমীর তো তুলিকে ভালোবাসে পাঁচবছর ধরে। তুলি যখন ক্লাস এইটে পড়ে তখন থেকে। বড়ভাই সামিরের সাথে পছন্দের মেয়ের বিয়ে মানতে পারবে না বলেই সে ঠিক করেছিল বিয়ের দিন তুলিকে ভাগিয়ে নিবে। আজমীরের পরিকল্পনা ছিল যেদিন বিয়ে তার আগের দিন সে তুলিকে প্রপোজ করবে। তুলিও সামিরকে বিয়ে করতে চায় না৷ তাই সে বিপদ থেকে বাঁচতে ঠিকই আজমীরের প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণ করে আজমীরের সঙ্গে পালাতে রাজি হবে।

তার এই অন্যায় পরিকল্পনা শুনে প্রণয় নিষেধ করল। এটা কখনোই ভালো হবে না। একটা মেয়েকে বিপদে ফেলে তার প্রেম আদায় করা কোনো বাহাদুরির কাজ না৷ তাই প্রণয় নিজেই বুদ্ধি খাঁটিয়ে তুলিকে বিয়ে বাড়ি থেকে ভাগিয়ে এনেছে। আজমীরের কাছে তুলির অনেক গল্প শোনে প্রণয়। সব তার মুখস্ত প্রায়। তাই তার ধারণা হয়েছিল, তুলিকে যদি পালানোর কোনো রাস্তা দেখানো হয় তাহলে সে অবশ্যই ফাঁদে পা দিবে। সে খুব সাহসী আর বুদ্ধিমতীও। আর যদি তুলি স্ব-ইচ্ছায় প্রণয়ের গাড়িতে না আসতো তাহলে প্রণয় নিজেই কিছু একটা করে তুলিকে সেখান থেকে তুলে আনতো।

এখন তুলি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। পড়াশুনা করবে। ধীরে ধীরে আজমীর তার মন জয় করবে। এটাই প্রণয়ের পরামর্শ।

কিন্তু আজমীর প্রথমে রাজি হয়নি। কিন্তু সে প্রণয়ের উপর ভরসা করেছে। আর সে ঠকেনি।তবে এখন যে আসলেই বিরাট মুশকিল হয়ে গেল! বন্ধুর পছন্দের মেয়েটিকে তুলে আনতে গিয়ে সে নিজেই মেয়েটির মায়ায় জড়িয়ে পড়ল। এটা অন্যায়। ঘোর অন্যায়! প্রণয়কে এই অনুভূতি থেকে বের হতে হবে। প্রয়োজনে সে নিজের সাথে যুদ্ধ করবে।

প্রণয় শ্রান্ত কণ্ঠে বলল,” চল ক্যান্টিনে যাই।”

আজমীর তার ব্যাগ থেকে বিশাল একটা বান্ডেল বের করে প্রণয়ের হাতে দিল। তাই দেখে অবাক হয়ে জানতে চাইল প্রণয়,” এসব কি?”

” তুই বাবার বিরুদ্ধে কেইস করার জন্য ওসি সাহেবকে পঞ্চাশ হাজার দিয়েছিলি। এখানে আশি হাজার আছে। কেইসটা তুলে নিস।”

” আশি হাজার কেন?”

” বাকিটা তোর বকশিশ!”

” হা*রামী! ফ্রেন্ডকে বকশিশ দিস? আমি কি তোর চাকর? একটা লাথি মারবো।”

আজমীর হাসল। প্রণয় টাকাটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল,” তুলিকে ভালো একটা গিফট কিনে দিস। কাজে দিবে।”

আজমীর ক্ষীপ্ত হয়ে বলল,” আরে শা*লা!”

তারপর হেসে আবার তৃপ্ত কণ্ঠে বলল,” তোর মতো ফ্রেন্ড পেয়ে আমি ধন্য!”

মাথার উপর ফ্যানটা শনশন করে ঘুরছে। তুলি চোখ মেলে সর্বপ্রথম এই দৃশ্যই দেখতে পেল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঢং করছে রাইফা। গুণগুণ করে গানও গাইছে সে,” সাজন জি ঘার আয়ে..”

তুলি আস্তে-ধীরে উঠে বসল৷ সময় আন্দাজ করতে কষ্ট হলো একটু। ঘড়িতে রাত আটটা বাজে৷ শানদের বাড়ি থেকে ফিরেই তার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তারপর সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর এই মাত্র ঘুম থেকে উঠল। না জানি কয়ঘণ্টা ঘুমিয়েছে! তুলিকে উঠে পড়তে দেখে রাইফা লাফিয়ে বিছানায় এলো। পুরো বিছানা নড়ে উঠল।

” তুলি, কি সিদ্ধান্ত নিলি?”

” মানে? কিসের সিদ্ধান্ত?”

” শানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি।”

তুলির মাথাটা আবার ভনভন করে উঠল। তুমুল গতিতে উত্তর দিল,” অসম্ভব! আমি এখনও সুস্থ আছি৷ তুই কি আমাকে ইমারজেন্সীতে পাঠাতে চাস?”

রাইফার মুখ মলিন হয়ে গেল। নিভে যাওয়া গলায় বলল,” তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? শান সবসময় এরকম করে না। কিছু কিছু দিন সে খুব শান্ত থাকে।”

” সে শান্ত থাকুক কি অশান্ত থাকুক। আমি শানকে পড়াতে গিয়ে নিজের শান্তি নষ্ট করতে চাই না।”

” তুলি প্লিজ, প্লিজ, আমি কি এখন তোর পায়ে ধরে কাঁদবো? তাহলে তুই রাজি হবি?”

তুলি খুব বিরক্ত হয়ে ধমক দিতে যাচ্ছিল। তারপর খুব আশ্চর্য লাগল তার। অনেকটা চমকানো কণ্ঠে বলল,” তুই এতো সিরিয়াস হচ্ছিস কেন এই বিষয় নিয়ে? শান তোর কে? নিজের ভাই?”

” না। কিন্তু আমি তাকে মানুষ বানাতে চাই।”

” কেন?”

” তাহলে অজান্তা আন্টি আমার উপর খুশি।”

” অজান্তা আন্টি কি শানের মা?”

রাইফা খুশি খুশি ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। তুলি সপ্রশ্নে তাকালো,” কেন? সে খুশি হলে তোর কি লাভ?”

” মানুষকে খুশি করার জন্য আবার লাভ লাগে নাকি? তারা খুব ঝামেলায় আছে। তোর কি একটুও মায়া লাগছে না তাদের জন্য? এই সমস্যাটা কি সমাধান করা উচিৎ না?”

তুলি মুখ বিকৃত করে জবাব দিল,” ওই ছেলের টিউটর না, ডাক্তার প্রয়োজন। টোটালি অসুস্থ একটা ছেলে।”

” এই কথা প্লিজ ওদের সামনে বলিস না। মিষ্টি আপু আর অজান্তা আন্টির চোখের মণি হলো শান। তারা কিন্তু কষ্ট পাবে। এইযে এতোকিছু করে, এতো যন্ত্রণা দেয়, মিষ্টি আপুকে একবারও অধৈর্য্য হতে দেখেছিস?”

তুলি তার নিচের ঠোঁটটায় আঙুল দাবিয়ে বলল,” আসলেই তো, এতো ধৈর্য্য কই পায়? আমার ভাই হলে আমি সারাদিন হাত-পা বেঁধে ঘরে আটকে রাখতাম।তারপর জানালাও আটকে রাখতাম। চব্বিশ ঘণ্টা কয়েদীর মতো থাকলে সব বদমাইশি বের হয়ে যেতো।”

” এসব শুধু বলাই যায়। করা যায় না৷ তোর কি মনে হয়? তারা চেষ্টা করেনি?”

” এতো মানুষ চেষ্টা করেও পারেনি তাহলে তোর কেন মনে হলো যে আমি পারবো? আমি কি ম্যাজিশিয়ান? নাকি আমার কোনো স্পেশাল পাওয়ার আছে?”

রাইফা তুলির কাঁধে হাত রেখে বলল,” তোর উপর আমার বিশ্বাস আছে।”

তুলি সটান করে হাত সরিয়ে কাটছাঁট কথা বলল,” তুই পাগল হতে পারিস কিন্তু আমি পাগল না। আমি এসব ঝামেলায় নেই।”

তুলি উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল। রাইফা ঢং করে বলতে লাগল,” প্লিজ তুলি, রাজি হো না! আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড? আমার কথার কোনো দাম নেই তোর? এই তোর ফ্রেন্ডশীপ?”

তুলি বালিশ দিয়ে কান চেপে ধরে বলল,” ড্রামা করবি না একদম।”

মোবাইল বেজে উঠল। রাইফার ফোনে কল করেছে তন্বি। রাইফা মোবাইলটা নিয়ে তুলিকে দিল।

” নে ধর। তন্বি।”

তুলি কথা বলার জন্য উঠে বসল। মোবাইল কানে নিয়ে হাসি-খুশি গলায় বলল,” হ্যাঁ তন্বি। কি অবস্থা?”

” অবস্থা ভালো। বাবার রাগ একটু কমেছে। কারণ ইকবাল আঙ্কেল আর বাবার বিরুদ্ধে কেইসটা তুলে নেওয়া হয়েছে। তোকে থ্যাঙ্কিউরে!”

তুলি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকাল রাইফার দিকে। তারপর তন্বির উদ্দেশ্যে বলল,” কিন্তু আমাকে থ্যাংকস দিচ্ছিস কেন? আমি তো কিছুই করিনি। ”

তন্বি ভারী অবাক গলায় বলল,” তুই কেইস তুলিসনি?”

” একদম না। আমি তো জানিও না এই ব্যাপারে কিছু।”

তারপর তুলি একটু ভেবে আবার বলল,” তাহলে মনে হয় উনিই কেইসটা তুলেছে।”

রাইফা হেসে তুলিকে একটু জ্বালানোর জন্য তার কাঁধে কাঁধ ঘেঁষে বলল,” উনি? কে উনি? এটা কি সেই উনি?”

তুলি জ্বলে উঠল। হাসি চেপে ধমক দিল,” শাট আপ, রাইফা। বাড়ির কি অবস্থা তন্বি? মামী কেমন আছে?”

” এইতো, আমরা ভালো আছি। ওদিকে তোদের কি অবস্থা?”

” ভালোই… কিন্তু রাইফা আমাকে যে বিপদে ফাঁসাতে চাচ্ছে..”

রাইফা হাতজোড় করল। অর্থাৎ তন্বিকে কথাটা জানাতে নিষেধ করল সে। ওই পাশ থেকে তন্বি প্রশ্ন করে ফেলল,” আবার কি বিপদ?”

তুলি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,” তেমন কিছু না। তুই ঢাকায় কবে আসছিস? এডমিশনের জন্য প্রিপারেশন নিতে হবে না?”

” খুব শীঘ্রই আসবো। এদিকে পরিস্থিতি আগে ঠিক হোক! বাবার মেজাজ কমুক। সামির ভাইয়ের অবস্থা তো খুবই খারাপ। কাল সারারাত আমাদের বাড়িতেই ছিল।”

তুলি অসহ্য গলায় বলল,” তার কথা আমাকে বলবি না প্লিজ। আমি শুনতেও চাই না।”

” আরে শোন না, মজার ব্যাপার। আমার তো মানুষটার জন্য খারাপই লাগে। কাল আমি উনাকে বললাম তুই লেখা-পড়া শেষ করে আবার ফিরে আসবি। তখন উনি জিজ্ঞেস করছেন, কবে ফিরবি? আমি বললাম তেরোতম মাসের বত্রিশতম দিন। উনি সত্যিই বিশ্বাস করেছে! আজ সকালে আমাকে এসে বলছে, তন্বি ক্যালেন্ডারে আমি তেরোতম মাস খুঁজে পাচ্ছি না। তোমার কাছে কি ভালো ক্যালেন্ডার আছে?”

তন্বি কথা শেষ করে খুব জোরে হাসতে লাগল। তুলিও হেসে ফেলল।

অজান্তাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেবে আজ সন্ধ্যায়। মিষ্টি সারাদিন হসপিটালেই ছিল। অগত্যা প্রণয়কে বাড়িতে থাকতে হয়েছে৷ কারণ শানকে বাড়িতে একা রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু বিকালে প্রণয় খুব জরুরী একটা কাজ পড়ে যায়। সে মিষ্টিকে ফোন করে অনুরোধ জানাল যেন দ্রুত ফিরে আসে। মিষ্টি বলল,” শান এখন কি করে?”

” নিজের রুমে দরজা আটকে বসে আছে।”

” দুপুরে খেয়েছিল?”

” হুম। আমি খাবার নিয়ে দিয়ে এসেছিলাম।”

মিষ্টি একটু বিস্ময় নিয়ে বলল,” কোনো অকারেন্স করেনি?”

” না।”

মিষ্টি নিশ্চিন্তবোধ করল। সুপ্রসন্ন গলায় বলল,” তুই বাড়িতে থাকলেই ও শান্ত থাকে। অন্তত সন্ধ্যাটা পর্যন্ত থাক না, ভাই!”

” কিন্তু আপু আমাকে বিকালে বের হতে হবে। ইটস আর্জেন্ট!”

” ওহ। আচ্ছা দেখি আমি দ্রুত আসার চেষ্টা করবো। তোর সময় হলে তুই চলে যাস। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় কিছু হবে না মনে হয়।”

প্রণয় রসিকতা করে বলল,” কয়েক ঘণ্টা যদি বাসায় আর্থকুয়েক হয় আর তোর যদি মনে হয় সেটা কিছু না তাহলে আমার কিছু বলার নেই।”

মিষ্টি ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,” এখন আমি কি করব বল? আমার হাতে তো কিছু নেই। হসপিটাল থেকে না ছাড়লে আমি কিভাবে ফিরবো? আচ্ছা এক মিনিট, আজকে তো শানের টিচার আসার কথা।”

” তাই নাকি?”

” হুম। মেয়েটা মনে হয় বিকাল পাঁচটার মধ্যে আসবে। সে এলে তুই তার কাছে শানের দায়িত্ব হ্যান্ডওভার করে চলে যাস।”

প্রণয় বিষাক্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” কি? মেয়ে? মানে একটা মেয়ে শানকে হ্যান্ডেল করবে? তুই কোন সেন্সে মেয়ে টিউটর রাখলি বলতো?”

” আচ্ছা, আজকে তো প্রথম দিন। শান প্রথম দিন টিচারের সাথে কোনো দুষ্টমি করে না। তুই টেনশন ফ্রী থাক।”

প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেনে নিল,” ওকে। দেখি এ কোন মহীয়সী? যে শানের মতো বাচ্চাকে ট্রিট করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে!

মিষ্টি হেসে বলল,” রাখছি।”

ফোন রেখে প্রণয় ঘড়ির দিকে চাইল। এখন বাজছে তিনটা। আরও দুইঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here