বেদনার রঙ নীল পর্ব -১০

#বেদনার_রঙ_নীল
দশম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

রাইফাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে ছুটে গেল তুলি। জড়িয়ে ধরেই অভিযোগ করল,” এতো দেরিতে কেন এলি?”

” এসেছিলাম আরও আগে। কিন্তু বাড়ি অন্ধকার ছিল৷ ভাবলাম কেউ নেই। তাই চলে যাচ্ছিলাম। তখন মিষ্টি আপুর ফোন পেয়ে আবার ফিরে এসেছি।”

” তুই আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছিলি? একবার আমাকে খুঁজবি না এসে?”

” তুই কোথায় ছিলি? আর ঘেমে এই অবস্থা কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুই চলে গেছিস বোধ হয়।”

তুলি বিরস মুখে বলল,” যাইনি। স্টোর-রুমে আটকা পড়েছিলাম।”

” কি? কিভাবে?”

” বাসায় গিয়ে সব বলবো। আপাতত এখান থেকে চল।এই বাড়িতে থাকতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে। শান নামক বাদরকে সামলানো আমার দ্বারা সম্ভব না৷ তার উপর এখন আবার বাদরের বড় ভার্সনটাও জুটেছে। সেইটাও কম প্যারাদায়ক না। অবশ্য বড়ভাই-ই যদি এমন খাটাশ হয়, ছোটভাই তো বাদর হবেই! সিম্পল ব্যপার..”

রাইফা তুলিকে থামিয়ে চোখ দিয়ে পেছনে ইশারা করল। তুলি তাকিয়ে দেখল প্রণয় গম্ভীর মুখে হেঁটে যাচ্ছে। বাড়িতে ঢোকার আগে সে আঁড়চোখে তুলির দিকে চেয়ে রাগ প্রকাশ করল। তুলি জীভ কেটে রাইফার দিকে তাকাল। আফসোস করে বলল,” পেছনে যে আছে এটা আগে বলবি না?”

রাইফা কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দিল,” বলার চান্স পেলাম কই? তুই তো থামছিলি না। ”

গাড়ি থেকে ব্যাগ বের করে রাইফা এবার বলল,” চল অজান্তা আন্টির সঙ্গে দেখা করে আসি। আমি উনার জন্য কিছু ফল কিনেছি।”

” চল। এমনিতেও আমার ব্যাগটা আনতে যেতে হবে শানের ঘরে আছে। কিভাবে যে যাই!”

” তুই ফল নিয়ে অজান্তা আন্টির কাছে যা। শানের ঘর থেকে ব্যাগ নিয়ে আমি আসছি।”

” থ্যাঙ্কিউ। ”

রাইফা ছোট ছোট কদম ফেলে শানের ঘরে ঢুকল। আশেপাশে ভালোমতো চোখ বুলিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিল। শান এখানে নেই। রাইফা পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে তুলির ব্যাগে হাত রাখল। তারপর চারপাশে আবার একটু তাকিয়ে নিশ্চিত হয়েই শানের ডায়েরীটা হাতে নিল। ওমনি খুব জোরে একটা শব্দ এলো। রাইফা ভয়ে টেবিলের সামনেই নিচু হয়ে বসল। শান মুখে দানবের মাস্ক পরে আছে। রাইফার উপর সে গর্জন করল। রাইফা আচানক ভয়ে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে চিৎ হয়ে গেল। শান উঠে দাঁড়ালো। ডায়েরীটা ঠিক করে রেখে ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল,” গেট লস্ট।”

রাইফা রাগে আগুন হয়ে গেল। কিড়মিড়িয়ে বলল,” ফাজিল ছেলে, আমি তোমার নামে আন্টির কাছে কমপ্লেইন করছি। ওয়েট।”

শান নির্বিকারচিত্তে বলল,” ওকে। আমিও সবাইকে বলবো। তুমি চোর। আমার ডায়েরী থেকে ভাইয়ার ফোন নাম্বার চুরি করতে এসেছিলে।”

রাইফা নিভে গেল। হতভম্বও হলো। সে ডায়েরী থেকে নাম্বার নিতে এসেছে এটা তো শানের বোঝার কথা না। তাহলে বুঝল কিভাবে? মহা চিন্তায় রাইফার মুখ দিয়ে আর কোনো কথাই বের হলো না। একটু পর সে ধাতস্থ হয়ে বলল,” আমি তোমার ভাইয়ার নাম্বার দিয়ে কি করবো? আশ্চর্য! আমি এসেছিলাম আমার ফ্রেন্ডের ব্যাগ নিতে।”

” লায়্যার!”

” আমি সত্যি বলছি।”

শান কথা বলল না। তার মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা গেল সে রাইফার কথা কানেই তুলছে না। রাইফা বোঝে না, এই ছেলেটা কেন তাকে এতো অপছন্দ করে! সে ব্যাগটা মেঝে থেকে তুলে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু রেখে গেল অনেকদিনের জমানো একরাশ মনখারাপ আর অপেক্ষা।

তুলি চেয়ার টেনে অজান্তার বিছানার সামনে বসল। কিছুক্ষণ আগেই হসপিটাল থেকে এসেছেন বিধায় অজান্তাকে কিছুটা ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু ভদ্রমহিলা দেখতে অসম্ভব রুপবতী।

মিষ্টি তুলিকে অরেঞ্জ জুস আর ফ্রুট কেক খেতে দিল। কিন্তু তুলির আপাতত খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। তার শানকে পড়ানোরও আর ইচ্ছে নেই। সে ইস্তফা দিতে এসেছে।

অজান্তা মুচকি হেসে তুলিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,” তোমার লেখাপড়া কেমন যাচ্ছে মা?”

” ভালো। রেজাল্ট তো কয়েকদিন হল পাবলিশ হয়েছে। এখন ভাসিটিতে ভর্তির জন্য কোচিং করবো। দোয়া রাখবেন।”

” নিশ্চয়ই। ”

তুলি ফলের ব্যাগটা বাড়িয়ে বলল,” এগুলো রাইফা আপনার জন্য এনেছে।”

” অনেক ধন্যবাদ। রাইফা কোথায়?”

” ও আসছে।”

অজান্তা এবার প্রসঙ্গে এলেন,” প্রথমদিন তোমার স্টুডেন্টকে কেমন দেখলে?”

তুলির মুখের হাসি নিভে গেল। দুশ্চিন্তা নামল চোখে। অজান্তা হাসলেন,” জানি ও খুব দুষ্টমি করে। একদম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু তুমি চাইলেই ওকে লাইনে আনতে পারো।”

বিছানার শেষ মাথায় বসে আছে মিষ্টি। ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে গোছাচ্ছে আবার তাদের কথাগুলোও শুনছে। সে ইশারায় অজান্তাকে কি যেন বলল। অজান্তা তুলির উদ্দেশ্যে বলল,” তোমাকে মাসে পনেরো হাজার দিবো। তুমি কি রাজি? চাইলে আরও বাড়াতে পারো।”

তুলি চমকে উঠল। সে এতোটাকা আশাই করেনি৷ সামান্য হাত খরচ যোগানোর জন্য টিউশনির কথা ভেবেছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে প্রথম মাসের স্যালারি দিয়েই সে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে খেয়ে-দেয়ে থাকতেও পারবে। চাকরি করলেও এতো টাকা আসতো কি-না সন্দেহ! অজান্তা উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে রইলেন।

তুলি সামান্য হেসে বলল,” স্যালারি নিয়ে আমার অসুবিধা নেই। কিন্তু এডমিশন পিরিয়ডটা আমি কাজে লাগাতে চাই। বুঝতেই পারছেন, জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। তাই ভেবে দেখলাম এই অবস্থায় আমি কোনো টিউশন নিবো না। সম্পূর্ণ সময়টা পড়াশুনাতেই কাজে লাগাতে চাই।”

অজান্তা মিষ্টির দিকে চাইল। মিষ্টিকে দেখে মনে হলো সে আশাহত। তুলি টাকার লোভে পড়ল না। তার কাছে নিজের জীবন আগে। আজকে যা হতে যাচ্ছিল, প্রণয় না এলে সে নির্ঘাত হার্ট এটাক করতো। এতো রিস্ক নিয়ে জীবন বাজি রেখে পনেরো হাজার টাকা কামানোর ইচ্ছে নেই তার। লাখটাকা দিলেও সে এই টিউশনি করতে রাজি নয়।

অজান্তা একটু অনুরোধ করার উদ্দেশ্যে বললেন, “শোনো তুলি, শান আসলেই খুব দুষ্ট। সেটা আমরা মানছি। আর আজকে ও যেটা করেছে এরপর তোমাকে অনুরোধ করাটাও অন্যায় হবে। তাও বলছি, শান কখনও কারো কথা শোনে না। কিন্তু আমার মনে হয় কি জানো? কোনো স্ট্রিক্ট টিচার ওকে কন্ট্রোল করতে পারবে না। কারণ ও নিজেই ভীষণ জেদি! তাই জেদ দিয়ে ওকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এতে ওর জেদ আরও বেড়ে যাবে। আমাদের প্রয়োজন ওর জন্য খুব ধৈর্য্যশীল আর নরম স্বভাবের একজন গাইড। যেমনটা তুমি। আমার মনে হয় একমাত্র তুমিই পারবে ওকে লাইনে আনতে। ”

তুলি আন্তরিকভাবে বলল,” আমাকে এতোটা গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আন্টি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না যে আমি পারবো।”

” আমার বিশ্বাস তুমি পারবে। দেখো এর আগে কিন্তু কখনও কেউ নিজে থেকে শানকে পড়ানোর জন্য আসেনি। আমাকেই খুঁজে খুঁজে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টিউটর যোগাড় করতে হয়েছে। প্রণয় তো কখনোই শানকে পড়াতে পারে না। পড়ায় কতক্ষন জানিনা! কিন্তু দুই সেকেন্ড পর পর শুধু লাঠি চালানোর আওয়াজ শোনা যায়। প্রচন্ড অধৈর্য ছেলেটার। শানের মতো বাচ্চাদের পড়াতে হয় ধৈর্য্য নিয়ে। যেটা প্রণয়ের নেই।মিষ্টি কিন্তু তোমাকে ভীষণ পছন্দ করে। সাথে আমিও। আমার কথাটা শোনো মা, তুমি শুধু শানকে ধৈর্য্য নিয়ে পড়াও। ও হয়তো প্রথম প্রথম তোমাকে খুব জ্বালাবে, খুব অবাধ্য হবে কিন্তু একবার যদি ওর মনে জায়গা করতে পারো তাহলে দেখবে তোমাকে ছাড়া আর কিচ্ছু বুঝবে না। একদম তোমার বাধ্য হয়ে যাবে। ”

রাইফা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। তুলি দ্বিধা নিয়ে তাকাল। রাইফা ইশারায় বলল রাজি হতে। তুলি মাথা নামিয়ে বলল,” আমি ভেবে জানাবো।”

” ঠিকাছে ভাবো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”

তারপর অজান্তা হাসিমুখে রাইফাকে বললেন,” ভেতরে এসো মা। তুমি আমাকে দেখতে আসায় আমি খুব খুশি হয়েছি।”

রাইফা হাতে থাকা ব্যাগটা বিছানায় রেখেই অজান্তার পাশে বসল। খুব মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করল,” কি অবস্থা এখন আন্টি? আপনার শরীর ঠিকাছে তো?”
“এইতো মা আলহামদুলিল্লাহ!এখন অনেকটা ভালো আছি। ”
” আন্টি আমি কিন্তু আপনার উপর খুব রাগ করেছি। আপনার এতোবড় একটা সমস্যা হয়ে গেল আর আমি জানতেই পারলাম না? আপনি হসপিটালে ভর্তি সেটা বাসায় এসে আমাকে জানতে হবে কেন? আর মিষ্টি আপু একাই দুইরাত হসপিটালে থাকল। অন্তত আমাকে ডাকতে পারতো। আমি এসে থাকতাম আপনার সঙ্গে!”

অজান্তা হেসে রাইফা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,” পাগলি মেয়ে, তুমি কেন থাকবে? তুমি যা করেছো সেজন্যই আমি অনেক খুশি। তুলিকে এনে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস। ”

” এ্যানিটাইম আন্টি।আপনি কিন্তু খুব শুকিয়ে গেছেন। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেন তো? মিষ্টি আপু তুমি কি আন্টিকে খেতে দাও না নাকি? এমন চোখ দেবে গেছে কেন? আন্টি আগে কত সুন্দর ছিল!

মিষ্টি বলল,” আমি তো জোর করেও খাওয়াতে পারি না বোন। এইজন্যই শরীরটা এরকম দুর্বল হয়ে গেছে। ডাক্তারও বকেছে। তুমিই একটু বুঝিয়ে দিয়ে যাও যদি তোমার কথাটা শোনে আর কি!”

” আন্টি এসব কি শুনছি? আপনার তো খাওয়া- দাওয়াটা ঠিক রাখা দরকার সবার আগে। তারপর অন্যকিছু। নিজে ঠিক না থাকলে সবাইকে ঠিক রাখবেন কি করে?”

তুলি খুব অবাক হয়ে দেখছে রাইফাকে। শানের মায়ের প্রতি রাইফার এতো ভক্তির কারণ কি? তার নিজের মায়ের প্রতিও তো এতো যত্ন নেয় বলে মনে হয়না। তুলি উঠে দাঁড়ালো। রাইফাকে ইশারায় বলল সে বের হতে চায়। তখন রাইফা বলল,” তুই নিচে গিয়ে অপেক্ষা কর৷ আমি আন্টির সঙ্গে কথা শেষ করে আসছি।”

” ওকে।”

তুলি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বের হলো। মিষ্টি একটু মজা করতে বলল,” তুমিই আমাদের বাড়িতে চলে আসো না রাইফা। তাহলে একটু দেখে-শুনে রাখতে পারবে।”

রাইফা এই কথায় অপ্রস্তুত হলো। মুখ হয়ে গেল লালচে। সংকীর্ণ কণ্ঠে বলল,” আমি কিভাবে চলে আসতে পারি?”

মিষ্টি ইঙ্গিতপূর্ণ কণ্ঠে বলল,” কত উপায় আছে!”

অজান্তা হাসতে লাগলেন। রাইফা লজ্জায় একদম চুপ হয়ে গেল। অজান্তা প্রসঙ্গ ঘুরাতে বললেন,” আসলে ইদানীং খাবারে তেমন একটা স্বাদ পাইনা। রুচি চলে গেছে। খেতে ইচ্ছে করেনা। ”

” আপনার কি খেতে ইচ্ছে করে আন্টি? আপনি আমাকে বলেন। আমি আপনার জন্য নিজ হাতে বানিয়ে আনবো। আপনার তো খিচুড়ি খুব ফেভারিট তাইনা? কাল আপনার জন্য খিচুড়ি বানিয়ে আনি?”

মিষ্টি আবার বলল,” শুধু আন্টিরই খিচুরি পছন্দ? আর কারো না?”

রাইফা আরক্ত হয়ে বলল,” উফ, আপু! আচ্ছা তোমার জন্যেও আনবো যাও।”

” আমি তো আমার কথা বলছি না ”

রাইফা লজ্জায় শুধু হাসল। কিছু বলতে পারল না।

তুলি অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। রাইফার কথা যেন শেষই হয় না। একবার বের হয়ে এখন আবার ঢুকে গেছে। তুলির অপেক্ষাটা অসহ্য মনে হচ্ছিল। ঠিক তখনি পেছন থেকে একটা নম্র কণ্ঠ ভেসে এলো,” স্যরি।”

তুলি প্রথমে হকচকিয়ে গেল। তারপর অনেকটা বিস্ময় নিয়ে পেছনে তাকাল। প্রণয় বড় গাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে গ্লাস মুছছে। তার নজর সেদিকে হলেও মনোযোগ তুলির দিকে। তুলি অভিমান ঝরা কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কি বললেন?”

প্রণয় হালকাভাবে তাকাল। তারপর আবার নিজের কাজে মনোযোগী হওয়ার ভাণ ধরে বলল,” স্যরি বলছিলাম। আসলে তখন মাথাটা গরম ছিল। তাই হয়তো বেশিই বলে ফেলেছিলাম। এক্সট্রিমলি স্যরি।”

প্রণয়ের অত্যন্ত সরল মুখটি দেখে তুলির মন ইতোমধ্যে গলে জল হয়ে গেছে। তবুও উপরে একটা ঠাঁট বজায় রেখে বলল,” ইটস ওকে।”

তারপর কি যেন ভেবে আরও একটু যুক্ত করল,” আমিও স্যরি। আসলে আমি সব ব্যাপারে একটু বেশি প্যানিকড হয়ে যাই। আর তখন বেশি বেশি কথা বলতে শুরু করি। এটা আমার খারাপ অভ্যাস।”

” আপনার অভ্যাসটা মোটেও খারাপ না।”

” তাই? তাহলে আপনি বিরক্ত হয়েছেন কেন?”

” সেজন্যই তো স্যরি বলছি।”

” ওকে। আপনার স্যরি এক্সেপ্টেড।”

” মন থেকে বলেছেন তো? কিভাবে বুঝবো?”

তুলি ঘুরে তাকিয়ে বলল,” এখন বোঝানোর জন্য কি করতে হবে?”

প্রণয় একটু ভাবার ভং ধরে বলল,” একটা গান শোনাতে পারেন।”

” না, না, আমার গানের কণ্ঠ খুবই বাজে। আপনি ইরিটেট হবেন।”

” তাহলে তো আরও বেশি করে শুনতে হবে। কারণ সুন্দর গানের কণ্ঠ আমার ইরিটেটিং লাগে। তাহলে নিশ্চয়ই বাজে কণ্ঠ ইন্টারেস্টিং লাগবে।”

তুলি ঠোঁট চেপে হাসল। ভ্রু উঁচু করে বলল,” তাই? ঠিকাছে, অন্য আরেকদিন।”

তুলি রাইফাকে ডাকার জন্য বাড়ির ভেতরে ঢুকতে নিলেই প্রণয় আবারও ডাকল,” একটু এদিকে তাকান।”

তুলি তাকাল। প্রণয় চলে যাচ্ছে। তুলি অবাক হয়ে গাড়ির গ্লাসে নজর দিতেই দেখল প্রণয় আঙুল দিয়ে তার ফোন নাম্বার লিখে রেখে গেছে। তুলির ঠোঁটে চমৎকার হাসি ফুটল।

রাইফা আর তুলি জানালার দিকে মুখ করে গাড়িতে বসে আছে। গাড়ি চলছে। রাইফা হঠাৎ বলল,” প্লিজ তুলি, তুই টিউশনটা ছাড়িস না।”

তুলি মুখে হাসি এঁটে বলল,” আমি ছাড়বো কখন বললাম?”

রাইফা হতবাক হয়ে প্রশ্ন করল,” তাহলে কি তুই টিউশনিটা নিচ্ছিস? মানে শানকে পড়াবি?”

” অবশ্যই! আন্টি এতো সুন্দর করে রিকোয়েস্ট করল আর আমি যাবো না?”

রাইফা চরম কৃতজ্ঞ হয়ে বলল,” থ্যাংকিউ তুলি!”

তারপর সে এসে তুলিকে জড়িয়ে ধরল শক্তভাবে। তুলি জানালার দিকে চেয়ে বলল,” আজকে রাতের আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে, তাই না?”

রাইফা হাসি-খুশি কণ্ঠে বলল,” আজকের পুরো দিনটাই খুব সুন্দর! ”

তারপর দু’জনেই নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিন্তু দু’জনের দৃষ্টি ঝলমল আর ঠোঁটে মসৃণ হাসি মিশেই রইল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here