বৈধ সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ৫

#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz

Jader ay golpo niye allergy ache…tara golpo ta ke avoid korun .
.
.
আফরান শুয়ে পড়লেও মুনিরা পায়চারী করছে রুমের মাঝে।
আফরান তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-
না শুয়ে এত রাতে হাটাহাটি করছো কেনো?
-কেনো যেনো ঘুম আসছেনা।
গল্প করা যাবে আপনার সাথে একটু?
.
মুনিরার কথা শুনে বসে পড়লো আফরান।
মৃদু হেসে বললো-
বলো, কি গল্প করতে চাও?
.
তার পাশে এসে বসতে বসতে মুনিরা বললো-
বাংলা সিনেমার গল্প করি চলুন।
.
সায়নীর থেকে শুনেছে আফরান, মুনিরা বাংলা সিনেমার কাহিনী বলা শুরু করলে থামেই না। অনেকটা সিরিয়াস হয়ে বলে কাহিনী গুলো। আর যতক্ষণ না মনমতো ভাবে কাহিনি বলা শেষ করতে পারবে ততক্ষণ থামবেনা সে। জোর করে হলেও শুনিয়েই ছাড়বে।
তাই আফরান চোখ জোড়া বড় করে আফরান বললো-
কোনো দরকার নেই। অন্য কিছু বলো।
-তাহলে আপনিই বলেন টপিক?
-উম্ম…
তোমার কলেজের গল্প বলো।
-কলেজের আর কি গল্প! সোজা যাই সোজা আসি, ক্লাসে পড়ানো হয়। এছাড়া আর কি গল্প হতে পারে!
ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। একটা আছে।
-কি?
-আমি যখন প্রথম প্রথম কলেজে যেতাম ছেলে একটা আমাকে ফলো করতো। কিছুদিন পর সে আমাকে একটা লেটার পাঠায় তার এক বন্ধুর দিয়ে।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে আফরান বললো-
তারপর?
-লেটারে লেখা ছিলো সে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আমি তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিচ্ছি কিনা জানতে চায় সে। আমি কি করেছি জানেন?
-কি?
-আমিও একটা লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি তাকে।
.
মুনিরার কথা শুনে গলা গম্ভীর করে আফরান বললো-
তুমি আমার বউ হয়ে অন্য একটা ছেলেকে চিঠি দিয়েছো কেনো?
.
ইশ! আমার বউ! কথাটা গিয়ে বুকে লেগেছে মুনিরার।
মুনিরাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আফরান বললো-
না মানে তুমি বিবাহিতা। এসব করা কি ভালো কাজ?
-আরে পুরো কথা তো শুনেন। আমি চিঠিতে লিখে দিয়েছি, আমাকে ভালোবাসেন শুনে খুশি হতে পারলাম না। আরো আগে শুনলে হয়তো বা খুশি হতে পারতাম। কেননা আমি বিবাহিতা। স্মার্ট, হ্যান্ডসাম একটা হাসবেন্ড আছে আমার। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
.
মুনিরার কথা শুনে হেসে উঠলো আফরান।
সাথে হাসলো নিজের বোকামির জন্যও। পুরো কথা না শুনে ওভাবে মুনিরাকে কথা শোনানো উচিত হয়নি তার।
মুনিরার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় আফরান বললো-
কেউ বিরক্ত করলে বা কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে।
.
মুনিরা হাসতে হাসতেই বললো-
করবেনা কেউ। ওই ঘটনার পর থেকেই ক্লাসের সকলে জানতে পেরেছে আমি বিবাহিতা।
-হুম হয়েছে অনেক গল্প। এবার ঘুমাও। কথাটি বলেই শুয়ে পড়েছে আফরান।
.
.
মুনিরা ও আফরান পাশাপাশি আজ একই বিছানায় প্রথমবারের মতো। যদিও দুজনে দুদিকে ফিরে শুয়ে আছে তবুও দুজনের চোখে ঘুম নেই। আফরানের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে আর মুনিরার মনে আনন্দ।
নাহ, কিছুতেই ঘুম আসছেনা মুনিরার। উঠে পড়লো সে। এগুলো বারান্দার দিকে।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো-
এই চাঁদ? এতোদিন আমার দুঃখের সাথী ছিলি তুই। আজ থেকে সুখের সাথীও হবি।
.
-এতো রাতে এখানে কি করছো?
.
আফরানের প্রশ্নে চমকে গেলো না মুনিরা। তার কেনো যেনো মনে হয়েছে আফরান জেগে আছে। আর তার খুব করে আফরানের সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছিলো।
.
মুনিরার পাশে এসে আফরান আবারো প্রশ্ন করলো-
প্রায় রাতে কি চাঁদ দেখো?
-হু। আপনি কি করে জানলেন?
-নাহলে সাথী হতোনা তোমার এই চাঁদ।
.
মুনিরার কথাটি আফরান শুনেছে বুঝতে পারলো সে। মুচকি হেসে বললো-
অনেক ইচ্ছে ছিলো আপনার সাথে এভাবে চাঁদ দেখা উপভোগ করবো একদিন।
-হু।
.
বাইরে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। খোলা বারান্দা হওয়ায় বাতাস ঘিরে ধরেছে তাদের।
মুনিরার খোলা চুলগুলো উড়ছে সাথে শাড়ির আঁচলও।
তার দিকে চোখ পড়লো আফরানের।
এই মুহুর্তটাকে চরমভাবে উপভোগ করছে মুনিরা। তার হাসি মুখটা দেখেই তা বুঝা যাচ্ছে। মেয়েটাকে এমন হাসিখুশিতেই ভালো লাগে। কে বলে সে অলক্ষী? যার মাঝে এতো মায়া সে কিভাবে অলক্ষী হয়?
আফরানের দিকে তাকাতেই মুনিরা দেখতে পেলো সে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
কেনো যেনো মুনিরার অবাধ্য মনটা আফরানের কাছে যেতে চাইছে৷
একটুখানি গেলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে তার?
আর কিছু ভাবতে পারছেনা মুনিরা। মন যেনো মানতেই চাইছেনা!
ধীরেধীরে এগিয়ে গেলো সে আফরানের কাছে। এতোটা কাছে, যতটা কাছে গেলে তার নিঃশ্বাসের শব্দ উপলব্ধি করতে পারবে মুনিরা।
মুনিরা কি করতে চাইছে বুঝে উঠার আগেই সে আফরান কে জড়িয়ে ধরলো আচমকা।
কি করা উচিত আফরানের? বুঝে উঠতে পারছেনা সে। সকলকে কথা দিয়েছে এই সম্পর্কটা আগাতে চেষ্টা করবে সে। তাহলে কি করে এখন মুনিরাকে আটকাতে পারে সে?
.
কতক্ষণ এভাবে ছিলো জানেনা মুনিরা। তবে তার আফরানকে ছাড়তে মোটেও ইচ্ছে করছেনা। মনে হচ্ছে এভাবে যেনো সারা জনম কাটিয়ে দেয়া যাবে!
.
আফরানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে তার ঠোঁটের উপর ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিয়ে মুনিরা বললো-
সম্পর্ক আগাতে আপনি আজ থেকে চেষ্টা করলেও আমি অনেক আগেই মেনে নিয়েছি তাই এটা না করে পারলাম না আজ।
কথাটি বলে দৌড়ে রুমের দিকে চলে গেলো মুনিরা।
মুনিরার ছেলেমানুষী দেখে ফিক করে হেসে দিলো আফরান।
সায়নী ঠিকই বলে, মেয়েটার স্বভাব একেবারেই বাচ্চার মতো।
ভেতরে এসে আফরান দেখতে পেলো মুনিরা গুটিসুটিভাবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ডিম লাইটের আলোয় তার মিটমিট করা চোখ জোড়া স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এমন কান্ড করে এখন লজ্জায় চোখও খুলতে পারছেনা সে।
আফরানও চুপচাপভাবে শুয়ে পড়লো ওপাশ ফিরে।
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো-
সায়নী, ঠিক আছো তো তুমি?
.
.
.
বারান্দার দরজা খোলা, জানালা খোলা, মাথার উপর ভনভনিয়ে ফ্যান চলছে। এতো বাতাসের মাঝেও ঝামছে অনবর‍ত সায়নী।
এর আগেও মুনিরার সাথে আফরান থাকলেও তার কষ্ট হয়নি। কেননা তখন সে জানতো তার আফরান তারই থাকবে। কিন্তু আজ?
সব কিছু ভেবেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে। তবে এতো কষ্ট কেনো লাগছে তার?
.
কিছুক্ষণ সারারুমে পায়চারী করার পর নিজের মনে সায়নী বললো-
আমার যেমন আজ কষ্ট হচ্ছে এমনটা মুনিরারও বুঝি হতো?
.
.
.
সকাল সকাল দুই বন্ধু আড্ডার ঝুড়ি নিয়ে বসলো।
কথা বলতে বলতে আফজাল খানের উদ্দেশ্যে নুরুল আলম বললেন-
আচ্ছা যদি আফরান আগে তোকে জানাতো সে সায়নীকে বিয়ে করতে চায়। তুই কি মেনে নিতি?
-সায়নীর সাথে পাবেলের বিয়ে ঠিক ছিলো। শুরুতে না মানলেও পরে হয়তো মানতাম। বাচ্চারা তা বুঝলো না। করে ফেললো একটা ভুল।
-মুনিরাকে বিয়ে করাটাও ভুল নয় কি?
-হ্যাঁ অবশ্যই ভুল। সে যদি তখনো সত্যিটা বলতো এমন একটা সিদ্ধান্ত আমি নিতামই না। আবার একটা কি জানিস নুরুল?
-কি?
-মুনিরাই আমাকে সায়নী আর আফরানের ব্যাপারে সবটা জানায়। মুনিরা যদি ওদের মেনে না নিতো আমি তাদের ডির্ভোস করিয়েই ছাড়তাম। কারো সামনে আসতে দিতাম না কথাগুলো। যেমন গোপনে বিয়ে করেছে তেমনই গোপনে বিবাহ বিচ্ছেদও করাতাম। তাদের ভুলের শাস্তি মুনিরাকে পেতে দিতাম না। কিন্তু মুনিরাই যখন মেনে নিয়েছে আমার আর কি বলার আছে!
বড্ড ভালো মেয়েটা। সুখ তার জন্য অপেক্ষা করছে। দেখিস ভালো থাকবে সে।
.
.
.
রান্নাঘরে রুটি বেলতে ব্যস্ত সায়নী। তখনি আগমন ঘটে আফরানের। আফরান আসার পর তার দিকে নজর পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেললো সায়নী।
আফরান তার পাশে এসে বললো-
রেগে আছো?
-উহু!
-তবে নজর লুকোচ্ছো কেনো?
.
কান্না পাচ্ছে সায়নীর। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কিন্তু আফরানের সামনে তা প্রকাশ করতে চায়না।
আফরানের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই মুনিরা প্রবেশ করলো।
সায়নীর উদ্দেশ্যে সে বললো-
রুটি বেলা শুরু করে দিয়েছো! আচ্ছা আমি ছেকে দিচ্ছি দাও।
.
আফরানের দিকে তাকিয়ে মুনিরা বললো-
আপনিও কাজ করবেন আমাদের সাথে?
-শখ নেই। তোমরাই করো।
.
.
মুনিরাকে দেখতে আজ উৎফুল্ল লাগছে। মুনিরার জন্য খুশি হলেও বুকে চাপা কষ্ট যেনো থেকেই যায়।
মুখে বললেও এসব করতে অনেক বেশিই কষ্ট হচ্ছে সায়নীর। এমন কষ্ট আগে হবে জানলে আল্লাহর কাছে আগেই বলতো, সে যেনো সুস্থ না হয়ে মারাই যেতো!
.
.
.
সকাল ১০টা….
মুনিরার বাবা মা তাদের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এমন সময় মুনিরা এসে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো-
আজকের দিনটা থাকো?
-মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে থাকা ভালোনা। তোর আব্বার কথা এইটা।
-আব্বার বন্ধুর বাড়িও এটা।
.
মেয়ের কথা শুনে হেসে উঠলেন সেনোয়ারা বেগম। মেয়েকে কাছে টেনে তার কপালে চুমু এঁকে বললেন-
যা করি ভালোর জন্য করি তোর। খারাপ ভাবিস না মাকে।
-উহু।
-আচ্ছা সত্যি করে একটা কথা বলতো? এই বাড়িতে আসলেই পড়ে আছিস কেনো? জামাই কে ভালোবাসিস বলে নাকি আমাদের সম্মানের ভয়ে?
-সম্মানের ভয় আগে থাকলেও ধীরেধীরে আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলি। শুধু উনাকে নয়, সায়নী আপুকেও। এই বাড়ির প্রত্যেককে, প্রতিটা কোণাকে। যখন আমি সর্বহারা হতে যাচ্ছিলাম আল্লাহ আমাকে এই পথে পাঠিয়েছেন। সেটা হোক ভুলে, এসেছি তো। ভালোবাসাও পেয়েছি।
-যার দরকার তার তো পাসনি?
-মন বলছে খুব তাড়াতাড়ি পাবো, আর বেশি দেরী নেই।
-তাই যেনো হয় তবে তোর ওই সতীন…
-আম্মা!
-যা বাদ দিলাম।
.
.
মুনিরার মা-বাবা চলে যাবার পরেই নিজের রুমে এসেই শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয় সায়নী।
সারারাত ঘুম হয়নি তার। ভাবছে এখন হয়তো হবে। না ঘুম আসছেনা সায়নীর।
উঠে পড়লো সে। হাটতে থাকলো সারারুমে।
তখনি আগমন ঘটলো আফরানের।
-ঘুমাওনি সারারাত?
-হয়েছে ঘুম। অফিসে যাচ্ছোনা?
-হুম যাবো। মুনিরার আম্মারা যাবার অপেক্ষায় ছিলাম।
-ওহ।
-সায়নী?
-হু?
-ঠিক আছো তুমি?
-আশ্চর্য! ঠিক কেনো থাকবোনা। আমি ঠিক আছি। একদম ঠিক আছি। বরং…
.
আফরানের চোখের সামনেই কথা বলতে বলতে আচমকা অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে ঢ’লে পড়লো সায়নী।
আফরান দ্রুত বেগে সায়নীর কাছে এসে তার মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বললো-
সায়নী কি হয়েছে তোমার?
.
.
ডাক্তার সায়নীকে দেখছে ভেতরে।
এদিকে ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছে আফরান। মুনিরাও তার পাশে রয়েছে।
আফরান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললো-
সিঙ্গাপুর নিয়ে চিকিৎসা করেছিলাম সায়নীর। এমনটা তো হওয়ার কথা না। তাহলে চিকিৎসায় কোনো ভুল ছিলো!
-এসব কেনো ভাবছেন আপনি! আপুর কিছু হবেনা। হয়তো শরীরটা হঠাৎ খারাপ করেছে তার। মেজর কিছু না।
-তাই যেনো হয়।
.
রুমের ভেতর থেকে এগিয়ে আসছে ডাক্তার সাথী।
তাকে দেখতে পেয়ে আফরান বললো-
কি হয়েছে সায়নীর? ওর তো অপারেশন হয়েছেই আপনি জানেন, সুস্থও ছিলো সে৷ তাহলে হঠাৎ..
-মি.খান রিলাক্স! আপনি বাবা হতে চলেছেন। সায়নী ইজ প্রেগন্যান্ট। আপনি তবুও সিউর হবার জন্য টেস্ট করাতে পারেন। তবে ঘরোয়া সকল টেস্ট শেষ করেই ব্যাপারটা সিউর হয়েই বললাম আমি।
.
.
.
সায়নীকে কোলে তুলে ঘুরছে আফরান।
সায়নী খবররটি শোনার পর তার সব কষ্ট যেনো নিমিষেই ভুলে গেলো! তার আর আফরানের অংশ আসতে চলেছে পৃথিবীতে। এর চেয়ে খুশির খবর কিইবা হতে পারে! এই খুশির কাছে দুনিয়ার সকল কষ্টই যেনো তুচ্ছ।
.
.
-আমার আফরানের অংশ আসতে চলেছে! আমার বংশধর আসতে চলেছে!
.
মুনিরার মুখে খবরটি শোনার পর খুশিতে চোখে পানি চলে এলো আফজাল খানের চোখে।
মুনিরার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন-
আমাকে নিয়ে চলো ওদের কাছে।
.
-নিতে হবেনা। আমরাই এসেছি।
.
আফরানের কথা শুনে আফজাল খান বললেন-
এদিকে আয় ব্যাটা৷ আমার ঘরে নাকি জুনিয়র আফরান আসতে চলেছে?
.
বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আফরান বললো-
সে জুনিয়র আফজাল খানও হতে পারে।
.
বাবা ছেলের আনন্দ দেখে দুই বউ এর চোখের কোণাও যেনো ভিজে গেলো।
সায়নীকে জড়িয়ে ধরে মুনিরা বললো-
সে কিন্তু জুনিয়র সায়নীও হতে পারে। কি বলো আপু?
.
মৃদু হেসে সায়নী বললো-
আল্লাহ যা দেন আরকি।
.
আফজাল খান সায়নীকে উদ্দেশ্যে করে বললেন-
এদিকে আয় মা, দোয়া করি তোকে প্রাণ ভরে।
.
.
.
সারা মহল্লায় হাসির মাধ্যমে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে ফেললেন আফজাল খান।
বাসায় এতো মিষ্টির প্যাকেট দেখে আফরান বললো-
বাবা! বাচ্চা হওয়ার পরেও বিতরণ করতে হবে তো। আজই সব করে ফেলবে নাকি?
-আমার কি টাকা কম আছে নাকি হ্যাঁ? এখনো করবো, তখনো করবো। আরে সবাই দোয়া করার জন্য মাসে মাসে করবো। আমার নাতী আসতে চলেছে বলে কথা।
.
আফজাল খানের কথা শুনে সকলে হেসে চলেছেন।
মুনিরার ফোন বেজে উঠলে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো মায়ের ফোন।
সে একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে বললো-
হ্যালো আম্মা? পৌছে গিয়েছো তোমরা?
-হ্যা।
-জানো আম্মা একটা খুশির খবর আছে।
-কি?
-সায়নী আপু প্রেগন্যান্ট।
-কখন হলো? না মানে সকালেও ওখানে ছিলাম কিছুতো শুনলাম না।
.
মুনিরার মুখে সবটা শোনার পর সেনোয়ারা বেগম বললেন-
এখন দেখবি তোর এই বোনের পরিবর্তন।
-মানে?
-মানে আফরানের মন এতোদিন সায়নীর দিকেই ছিলো এখন আবার সে পোয়াতি। তুই ওই বাড়ির পার্মানেন্ট কাজের মেয়ে হওয়ার প্রস্তুতি নে।
-একটা শিশু দুনিয়াতে আসতে চলেছে তার জন্য শুভ কামনা না করে এসব ভাবছো তুমি!
-কারণ তুই আমার মেয়ে।
আমি চাই তুই সুখে থাক। সম্মান নিয়ে আসছিস না, যখন দূরদূর করে তাড়িয়ে দেবে তখন তুই বুঝবি।
-তোমাকে এসব বলাই আমার ভুল হয়েছে আম্মা।
.
কথাটি বলার পরেই ফোন কেটে মুনিরা নিজের মনে বললো-
উনি কাল বলেছেন, আমাদের সম্পর্কে সুযোগ দিবেন। আর সায়নী আপু মা যেমনটা বলছেন মোটেও তেমন নয়। কেনো যাবো আমি! তারা আমার ভালোবাসার মানুষ। তাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।
.
.
বিছানার উপরে মোবাইলটা ছুড়ে মারলেন সেনোয়ারা বেগম।
বিড়বিড় করে তিনি বললেন-
কি আছে আমার মেয়ের কপালে! এতোদিন কাজের মেয়ে ছিলো এখন সে বাচ্চার আয়াও হবে!
.
(চলবে)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here