ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৩
_______________________
মীরা যেনো ঠকঠক করে কাঁপছে, ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
মীরা আর কিছু ভাবতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
– মীরা কারো হাতের নরম স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মীরার যেনো খুব ভালো লাগছে আদর মাখা হাতের স্পর্শ পেতে।
মীরা আস্তে করে ধীরেধীরে চোখ খুলে তাকালো।
তাকিয়ে যাকে দেখলো বুক টা মুচড়ে উঠলো। এ যে আর কেউ নয়, রক্ত খাওয়া সান্ড্রা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
– মীরা সান্ড্রার হাত সরাতে চাইলেও সান্ড্রা আদর মাখা কন্ঠে মীরা কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো চুপ থাকতে।
” মীরারও আর সাহস হলো না সান্ড্রার কথার অবাধ্য হতে।
সান্ড্রা কে মীরার বেশ ভয় লাগলেও কেনো জানি খুব বিশ্বাস করতে ভালো লাগে , যেমনটা ভালো লাগে তাঁর মা জাহানারা বেগম কে।
মীরা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সান্ড্রার আদর মাখা হাতের পরশে চোখ বন্ধ করে স্পর্শ অনুভব করছে।
_______________
মীরা এখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
রুমে কেউ একজন আছে, পুরো রুম জুড়ে যেনো শীতলতা খেলে যাচ্ছে।
কেউ একজন মীরার ঠোঁটে শীতল ঠোঁট নিয়ে এগিয়ে আসছিলো, আর তা গিয়ে মীরার ঠোঁটে অদ্ভুত অনূভুতির জানান দিচ্ছিলো।
ঠিক তখুনি মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো রুমে কেউ নেই।
মীরা যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
কিছুক্ষণ পর সান্ড্রা মীরার জন্য স্যুপ নিয়ে হাজির হলো।
সান্ড্রা কোনো কথা না বলে মীরা কে পরম যত্ন করে খাইয়ে নিচে চলে গেলো।
-মাঝেমধ্যে সান্ড্রার এমন নিরবতা মীরা কে বড্ড বেশি ভাবায়। মানুষ এতোটা নিরব কি করে হতে পারে মীরা তা ভেবে কখনো পাচ্ছে না, আদৌ পাবে কি-না তা-ও জানে না।
– মীরা কিছু প্রশ্ন করবে বলে সান্ড্রার কাছে গেলো।
মীরা সান্ড্রার রুমে উঁকি মেরে দেখলো সান্ড্রা একটা মেয়ের ছবিতে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ইংলিশে বলছে খুব শীঘ্রই তোমাকে ফিরে পাবো, আর কিছুদিন কষ্ট করো, ওঁরা আমাদের শক্তির কাছে কখনো পেরে উঠবে না।
ঠিক আমরা আমাদের প্যালেসে ফিরে যেতে পারবো। আবার আমরা মা মেয়ে হাসি খুশি থাকবো। আমাদের প্রিন্সেস ঠিক ফিরিয়ে আনবে পুনরায়।
– মীরার আর কোনো অনূভুতি কাজ করছে না সান্ড্রার সাথে এই মুহুর্তে কোনো বিষয়ে কথা বলবে।
মীরা তাই গভীর মনের গভীরতা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
মীরা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলো।
___________________
মীরা আজ একা-একা ভার্সিটি যাচ্ছে।
সান্ড্রা গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোথাও বের হয়েছে।
– মীরার কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ যেনো মীরা কে ফলো করছে।
মীরা পেছনে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।
হঠাৎ কারো পেছন দিক টা দেখে মীরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ছেলেটার পেছন দিকটা মীরার কাছে বড্ড বেশি চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
মীরা ভাবছে উনি ইংল্যান্ড আসবে কেনো, তাছাড়া একে অপরের মতো পেছন দিক তো একই রকম হতে পারেই।
তাই মীরা ভুল ধারণা ভেবে ক্লাসে চলে গেলো।
মীরা ক্লাসে গিয়ে বসে আছে আর দেশের কথা ভাবছে। মনটা কেমন জানি করছে মীরার।
খুব অস্বস্তি লাগছে মীরার।
হঠাৎ মীরা এমন কাউকে দেখবে বলে আশা করেনি।
মীরার পৃথিবী টা যেনো থমকে দাঁড়ালো, বাতাসের দল যেনো পথচলা ভুলে গেলো।
মীরা স্বপ্ন ভেবে চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলে তাকালো।
তাকিয়ে দেখলো এ যে অবিকল রুদ্র ভাইয়ের মতো দেখতে। এটা যে স্বপ্ন নয়, একদম সত্যি সত্যি।
সত্যি কি রুদ্র ভাই না-কি অন্যকেউ মীরা ভাবছে ?
মীরা চারদিক তাকিয়ে দেখলো সব মেয়েরা কেমন হা হয়ে তাকিয়ে আছে নতুন প্রফেসরের দিকে।
নিউ প্রফেসর সবার কাছে উনার পরিচয় দিলো, উনার নাম এন্ড্রে মেথিস।
– মীরা নাম শুনে বিশ্বাস করলো এটা রুদ্র ভাই নয়। মীরা যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
মীরা মনে মনে হাসলো, রুদ্র ভাই ইংল্যান্ডে আসবে কেনো, তাছাড়া উনি তো একজন সাইকোলজিস্ট, আর নতুন প্রফেসর উনি তো একজন সাইন্টিস্ট।
মীরা মনে মনে নিজেকে বকলো আর বললো, রুদ্র ভাই আপনি ঠিকই বলতেন আমি মীরা আসলেই বোকা খুব বোকা, তা না হলে এই নতুন প্রফেসর কেও আপনি ভেবে শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি।
নতুন প্রফেসর সবাইকে এক এক করে দাঁড়িয়ে নিজের সম্পর্কে বলতে বললো।
মীরা মেথিসকে যতো দেখছে ততো বেশি অবাক হচ্ছে, শুধু মীরা নয় রুদ্র ভাই কে যাঁরা যাঁরা দেখেছেন সবাই ভুল করবে নতুন প্রফেসর কে রুদ্র ভাই ভেবে।
রুদ্র ভাইয়ের মতো সেই চুল, সেই মায়া ভরা দুটি চোখ, গোলাপি ঠোঁট দু’টো।
মীরার চোখ যেনো মেথিসের দিক থেকে সরাতেই পারছে না।
– এবার আসলো মীরার পালা, মীরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে মেথিস কে দেখেই যাচ্ছে, যতো দেখছে ততোই রুদ্র ভাইয়ের সাথে মিল পাচ্ছে।
-সানা মীরা কে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের পরিচয় দিতে বললো।
-মীরাও নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের পরিচয় দিলো।
-মেথিস বাংলাদেশের নাম শুনে যেনো আকাশ থেকে পরলো।
মেথিস মীরার কাছে এসে দাঁড়ালো।
– মীরা মেথিস কে কাছ থেকে দেখতে পেয়ে আরো বেশি নার্ভাস ফিল করছে।
পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে আসছে।
– মেথিস মীরা কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। মেথিস প্রকাশ করলো, সে খুবি আশ্চর্য হয়েছে, মেয়ে মানুষ হয়েও একা-একা ইংল্যান্ডে পড়তে আসাতে। মেথিস মীরা কে আর কিছু না বলে পড়ানো শুরু করলো।
– মীরা নিউ প্রফেসর কে যতো দেখছে ততো বেশি অবাক হচ্ছে, নতুন প্রফেসর রুদ্র ভাইয়ের মতো দেখতে এক রকম হলেও আচার-আচরণ বেশ ভিন্ন।
তবুও মীরার মনে কোথায় একটা খটকা থেকেই গেলো।
– মেথিস তাঁর ক্লাস শেষ করে নিজের ক্যাবিনে চলে গেলো।
এদিকে মীরা চিন্তা করলো বাসায় গিয়ে রুদ্র ভাই কে একবার কল করে জিজ্ঞেস করে নিবে।
-মীরা ক্লাস শেষ করে বের হতে নিলে সানা মেয়েটা মীরার হাত চেপে ধরে বললো, হেই মীরা কেমন আছো?
– মীরা সানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সানা আজ বেশ খুশি।
মীরাও প্রাণ খুলে নিজের সম্পর্কে সবকিছু বললো।
– সানা মীরা কে রিকোয়েস্ট করলো, সানার সাথে এক জায়গায় যাওয়ার জন্য।
– মীরা প্রথমে না করলেও অনেক রিকোয়েস্টের পর রাজি হলো। তাছাড়া সানা মীরা কে কথা দিয়েছে মীরা কে বাসায় পৌঁছে দিবে।
-সানা নিজে ড্রাইভ করে মীরা কে নিয়ে বিশাল এক রাজমহলের মতো একটা বাড়িতে নিয়ে আসলো।
বাড়িটা বাহিরের দিক থেকে যতোটা বিশাল তাঁর চেয়েও বেশি বিশাল ভেতরে।
মীরা রাজমহল টায় ঢুকে গভীর মনোযোগ দিয়ে সকল আসবাবপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
হঠাৎ একটা ছবি দেখে মীরা দিশেহারা হয়ে গেলো।
ছবিটায় মীরা দেখতে পেলো একটা অর্ধ মানব,অর্ধেক তাঁর বাদুড়ের মতো, দুটি ডানা বিশিষ্ট। তাছাড়া অর্ধ পুরুষ লোকটার মাথাটা কালো কাপড় দিয়ে আবৃত, মুখ ঢাকা কিছুই দেখা যাচ্ছে না স্পষ্ট।
– ছবিটা দেখে যদিও মীরার বুক টা মুচড়ে উঠলো তবুও কেনো জানি ছবিটা মীরা কে খুব গভীরভাবে টানতে লাগলো।
– হঠাৎ মীরা ছবি টার উপর আলতো করে হাত বুলালো, সাথে সাথে কেউ একজন মীরার কানে চুপিচুপি এসে বললো, প্রিন্সেস “ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড। ”
– কথাটা শুনামাত্র মীরা স্তব্ধ হয়ে গেলো।
– সানা এসে মীরা কে ধাক্কা দিয়ে বললো, হেই মীরা কোথায় হারিয়ে গেলে? ( ইংলিশে)
– মীরা শুধু মুখ দিয়ে এটুকুই বললো
” ডার্ক ডায়মন্ড ”
চলবে—-(শেষটুকু পড়তে অপেক্ষা করুন।শেষটা দেওয়া হলে আবারও ইউটিউবে শেয়ার করা হবে)
#
Please taratari den