ভালবেসে অবশেষে পর্ব -০৭

#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব:৭

দোকানটা ছোট্ট, সামনে কাঠের ছোট ছোট টুল। দু’একজন স্কুল ছাত্রীরা ফুচকা খাবার প্রতিযোগীতা করছে। সিয়াম প্রথমে এসেই কপাল কুঁচকালো।
“এসব খাবার পছন্দ তোমার? পেট খারাপ হবে না?”

মিলি কপট রাগের ভঙ্গিমা করলো,
“ফুচকা নিয়ে একদম আজেবাজে কথা বলবেন না, কী টেস্টি আপনি জানেন? কখনও খেয়েছেন?”

সিয়াম গম্ভীর গলায় বলল,
“আমি এসব খাই না।”

“আজ খান, একবার খেয়ে দেখুন। ”

সিয়াম উত্তর না দিয়ে বলল,
“মেয়েদের নাকি ফুচকা, আইসক্রিম এই টাইপের খাবার পছন্দের শীর্ষে থাকে? ফুচকার বদলে আইসক্রিম খেতে যাবে?”

মিলি প্রতিবাদ করলো,
“উহু, এমন বিটলামি করা একদম চলবে না। কাল রাতে যে ফুচকার কথা বললেন, আজ আবার সে কথা বদলে গেলো কেনো?”

সিয়াম নমনীয় গলায় বলল,
“এটা কত অসাস্থ্যকর দেখছো না? তাছাড়া আগেরবার তো ঝালে লাফালাফি করছিলে মনে নেই?”

“আপনি দেখেছিলেন আমায়? ফোনই তো তখন আপনার বউ ছিলো, তাকে ফেলে আমাকে দেখার সময় ছিল নাকি?”

সিয়াম সামান্য হাসলো,
“বলো কী? ফোন বউ?”

মিলি বলল,
“আজ আপনি এত কথা বলছেন কীভাবে বলুন তো? আপা বা মা দেখলে হার্টফেল করতো শিউর।”

সিয়াম বেশ মজা পেলো,
“আচ্ছা? তুমি করলে না কেনো?”

“কী, হার্টফেল?”

“হ্যাঁ।”

“করলে খুশি হবেন?”

সিয়াম ভ্রু কুচকালো।
“তোমার তাই মনে হয়?”

কথার সুর গম্ভীরতায় রুপ নেবার আগেই মিলি শব্দ করে হাসলো।
“আরে আমি তো মজা করছি, আপনি এত সিরিয়াস হচ্ছেন কেনো? আইসক্রিম খেতে পারেননি তাই?”

সিয়ামের হুট করে মুড অফ হয়ে গেলো। সে বলল,
“আমি আইসক্রিম খাই না।”

মিলি সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলো,
“আমিও তো খাই না, আমাদের দুজনার কত মিল দেখেছেন?”

সিয়ামের মন খারাপের পরিমাণ দ্বীগুন হলো। আরিয়া আইসক্রিম পছন্দ করতো। দুজনে বাইরে বেরোলেই সে বায়না করতো। বাচ্চাদের মতো খেতে গিয়ে মুখের চারিপাশে লাগিয়ে ফেলতো।

মিলি সিয়ামের অন্যমনস্কতা লক্ষ্য করে বলল,
“কারো কথা মনে পড়ছে? প্রথম স্ত্রীর কথা? তার বুঝি ফুচকা পছন্দ ছিল না?”

সিয়াম বলল,
“তোমার হিংসা হচ্ছে না?”

“আশ্চর্য! আমার হিংসে হতে যাবে কেনো? আপনার কাউকে মনে করাতেও নিষেধাজ্ঞা দেবো নাকি?”

সিয়াম অবাক চোখে তাকালো। তার কলিগ রায়হানের বউ লিয়া, রিলেশন করে বিয়ে তাদের। একদিন রায়হান তার সামনে এক্স গার্লফ্রেন্ড এর নামটা উচ্চারণ করেছিলো কী করেনি, পরি মরি করে পালাতে হয়েছিলো বেচারাকে। এখনও মাঝে মাঝে পিঠে হাত দিয়ে সেই বিখ্যাত ঝাড়ুর বাড়ির কথা স্মৃতিচারণ করে।
আর এদিকে এই মেয়েটা কী না এত স্বাভাবিক?

“তুমি খুব অদ্ভুত মেয়ে মিলি।”

“অদ্ভুত বলতে? ভালো না খারাপ?”

“ভালো।”

মিলি খিলখিলিয়ে হাসলো। কিছুটা পাখির কলরবের মতো শোনা গেলো।
মিনিট খানেক চুপ থেকে মিলি বলল,
“এখন থেকে মনের ভেতর কোনো কথা পুষে রাখবেন না, নির্দ্বিধায় আমায় বলবেন, আমি কিচ্ছু মনে করবো না।”

কিছুটা দুষ্টমি করে বলল,
“হিংসাও করবো না।”

,

,

বাড়ি ফিরতে ফিরতে মিলিদের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো।
সিয়ামকে মিলির সাথে বাড়িতে ঢুকতে দেখে রেনু বেগম আর নীরা দুজনেরই চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। নীরা তো পারলে কেঁদেই ফেলে। মিলিকে চেপে ধরলো। সিয়াম সোজা নিজের ঘরে ঢুকলো।

রেনু বেগম নিজেও তৃপ্তির হাসি হেসে চলে গেলেন। নীরা উচ্ছসিত গলায় বলল,
“সিয়াম ভাই তোকে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলো বোন? সত্যি?”

মিলি কিছুটা রহস্য করে বলল,
“ঘুরতে নিয়ে যায়নি তো আপা, ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলো।”

নীরা হাসলো।
“একই তো কথা, সিয়াম ভাই তোর সাথে সহজ হচ্ছে বল?”

মিলি সে কথায় মিষ্টি হাসলো। বলল,
“তোর আর মায়ের জন্যও ফুচকা এনেছি আপা।”

নীরা আরেকটু খুশি হলো বোধহয়,
“তুই মাকে আন্টি ডাকতি না বোন? আজ মা ডাকছিস যে?”

“এখন থেকে মা ডাকবো ভাবলাম, কেনো? তুই ভাগ দিবি না মায়ের?”

নীরা খুশিতে জড়িয়ে ধরলো। তার আজ এত খুশি লাগছে কেনো কে জানে? দু’টো মানুষই যে তার খুব পছন্দের। একজনের প্রতি রক্তের টান, অন্যজনের প্রতি মমতার। মানুষটাকে নিজ চোখে ভেঙে গুড়িয়ে পরতে দেখেছিলো বলেই হয়তো এত মমতা কখন কীভাবে যেন তৈরী হয়ে গেছে।

খুশিতে তার গলা ধরে এলো।
“আমি খুব খুশি হয়েছি বোন, খুব খুশি। তোরা খুব ভালো থাকবি দেখিস, সাথে ভালো রাখার দায়িত্বটাও নিস।”

,,,

রাতে এ বাড়িতে সবাই একসাথে খাবার খায়। সিয়ামও থাকে। তাকে তো সচারাচর সবার মাঝে পাওয়া যায় না, অফিস টু নিজের রুম ছাড়া তাকে অন্যকোথাও খুব একটা দেখা যায় না।
নীরা সবার খাবার তুলে দিতে দিতে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তুই বসছিস না কেনো বোন?”

মিলি একপাশে দাড়িয়ে ছিলো। খুশিতে আজ তার মন পেট সব ভরে গেছে। সিয়ামের আজকের সহজ ব্যবহারে সে প্রচন্ড খুশি হয়েছে। এমনিতেও সে খাবারের দাবারের ব্যাপারে খুব উদাসীন। বাড়িতে থাকতে বাবা জোর করে খাওয়াতো, নয়তো মা বকবক করতে করতে মাথা খেতো।
সে বলল,
“ক্ষিধে নেই রে আপা পেট ভরা।”

রেনু বেগম ধমকালেন,
“খাবি না কেনো শুনি? না খেয়ে পেট ভরে কীভাবে তোর? এক্ষুনি প্লেট নিয়ে বোস। তোর মা বাড়িতে জোর করতো এখানে আমি আছি না আরেকটা মা? না খেয়ে থাকতে দেবো?”

মিলির বেশ ভালো লাগলো তার কথা। এমন শাশুড়ি ক’জন পায়? হাতে গোনা কয়েকজন পায় বোধহয়।
মিলির বান্ধবী রিমা, যার বিয়ে হলো মাস ছয় আগে? কী দজ্জাল শাশুড়ী পেয়েছে সে, কথায় কথায় বাপের বাড়ির খোটা দেয়। সেসব দেখে তো মিলি ভয়েই মরে যেতো, না জানি কেমন শাশুড়ী জোটে কপালে! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শাশুড়ী না সে আরেকটা মা ই পেয়ে গেছে!

সে বলল,
“আজ ভালো লাগছে না মা!”

তার কথার প্রতুত্তরে রেনু বেগম বা নীরা কেউই কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই সিয়াম হাত টেনে তাকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
প্লেট ভর্তি খাবার সাজিয়ে সামনে দিয়ে বলল,
“চুপচাপ খাবার খাও, শরীরের অবস্থা দেখেছো? টোকা দিলেই পরে যাবে।”

এটুকু সামান্য কথার মাঝে কী ছিল কে জানে? মিলি তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করলো।
নীরা, সৌরভ মুখ টিপে হাসলো।
,

,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here