#ভালোবাসব_যে_তোকে🍁
পার্ট ১৮+১৯ (শেষ পর্ব)
লেখিকাঃসারা মেহেক
🍀🍁
এই ঘটনার পর থেকে মৌ অনেক চুপচাপ হয়ে যায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া সে রুম থেকে বের হয় না। কারন এই জায়গাটাই তার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়।
আয়ান, আম্মু,দাদি সবসময় চেষ্টায় থাকে যে তাদের কোনো কাজের মাধ্যমে যাতে সেদিনকার ঘটনাটা মৌ এর মনে না পরে।আয়ান মৌ কে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই তারা কোথাও না কোথাও যেতো।একদিন রেস্টুরেন্ট এ যেতো, তো একদিন পাশের পার্কে ঘুরতে যেতো।
আয়ান এসব করতো যাতে করে মৌ একটু হাসিখুশি থাকে।সে চাইতো মৌ আগের মতো দুষ্টুমি করুক।হাসিখুশি থাকুক।কিন্তু মৌ এর আগের মতো কিছুই হলো না। প্রথম প্রথম ঘুমের মধ্যেও খারাপ স্বপ্ন দেখতো সে। অবশ্য কিছুদিন পরেই তা ঠিক হয়ে যায়।
অহনা এসব শুনে মৌ এর কাছে ছিলো ৪দিনের মতো। সারাটাদিন তারা গল্প করতো। অহনার জন্য মৌ কিছুটা ঠিক হয়ে যায়।৪দিন পরেই অহনা নিজের বাসায় চলে যায়।
এভাবে দেখতে দেখতে ১মাস কেটে যায়। মৌ এখন মানসিকভাবে সুস্থ হলেও বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে সে কিছুটা অসুস্থ। কয়েকদিন যাবত সে ভালোভাবে কিছু খেতে পারছে না। খাবার মুখের কাছে নিলেই গন্ধে বমি করে দেয়। আয়ান তো ভেবেছে মৌ মুখের রুচিই চলে গিয়েছে। সে অবশ্য ডক্টর এর কাছে নিয়ো যেতে চেয়েছে কিন্তু মৌ যায়নি।
আজকে সকাল থেকেই মৌ এর বেশ খারাপ লাগছে শরীর। কোনোমতে নাস্তা বানিয়েছে আজকে সে।আয়ানকে অফিসের জন্য বিদায় দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলো মৌ। আম্মু আর দাদি জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, এমনিই একটু দূর্বল লাগছে।
এদিকে আয়ান অফিসে এসে নিউজ পায় যে তার প্রমোশন হয়ে গিয়েছে।এ খবর শুনে সে অনেক খুশি হয়।নিজের কেবিনে এসে নিজেই বলছে নিজেকে,
“এতো বড় খুশির নিউজ মৌ কে বলবো না ফোনে। বাসয় গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।
এখন তাড়াতাড়িই আমি আমার বিজনেস শুরু করতে পারবো।….”
এরপর আয়ান নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
মৌ দুপুরের দিকে ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠেই সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।
“১টা বাজে!!আমি এতোক্ষন ধরে ঘুমালাম!!কেউ কি ডাকেনি আমাকে!!”
এরপর মৌ উঠে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়ে দেখে আম্মু রান্না করছে আর দাদি ডাইনিং এ বসে কি একটা যেনো কাজ করছে। মৌ গিয়ে আম্মুকে বলে,
“আম্মু আমাকে ডাকোনি কেনো!!”
“ডাকবো কেনো শুনি।। শরীর খারাপ ছিলো তাই ডাকেনি।”
“কিসের শরীর খারাপ। ওসব কিছুই না।তুমি গিয়ে একটু বসো। বাকি যা কাজ আছে তা আমি করছি।”
“আরে বাকি আর কিছুই নেই। সব রান্না শেষ।”
“আচ্ছা তাহলে আমি সব গুছিয়ে দিচ্ছি।”
“ঠিক আছে দে।”
মৌ ঠিকঠাক মতোই কাজ করছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে ওর মাথাটা হালকা ঘুরে। সে পরে যেতো যদি না পাশের রান্নাঘরের দেয়াল ধরতো।এটা দেখে আম্মু এগিয়ে এসে ধরে ওকে।
“বললাম যে কাজ করার দরকার নেই। তাও তো আসলি কাজ করতে। দেখলি তো পরেই যেতি এখন।”
মৌ কিছুই বললো না। এর মধ্য দাদি চলে আসলো রান্নাঘরে। তিনি মৌ কে বললেন ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসতে।
মৌ সোফায় বসতে যাবে কিন্তু তার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো আর সোফার উপর গিয়ে পরলো।এ দেখে দাদি আর আম্মু তাড়াতাড়ি এগিয়ে মৌ এর কাছে আসলো।মৌ এর মুখে পানির ঝাপটা দিলো দাদি কিন্তু জ্ঞান ফিরলো না। তাই আর দেরি না করে আম্মু ডক্টর এর কাছে ফোন দিলো।
এদিকে আয়ান তো অফিস থেকে আসার সময় সবার পছন্দের খাবার নিলো,মৌ এর জন্য একটা সুন্দর শাড়ী নিলো।কিন্তু বাসায় এসে সে অবাক হলো ওদের ফ্যামিলি ডক্টর কে দেখে।
সে দেখলো ডক্টর আফজাল সোফায় বসে মৌ এর চেকাপ করছে আর পাশে আব্বু,আম্মু আর দাদি দাঁড়ীয়ে আছে। ডক্টর কে দেখে আয়ান সব ফেলে মৌ এর কাছে ছুটে গেলো।
আয়ানঃ আফজাল আংকেল মৌ এর কি হয়েছে??
আফজাল আংকেলঃহয়েছে তে অনেক কিছুই, হবেও অনেক কিছু।
আয়ানঃকি বলছেন আংকেল!!
আফজাল আংকেলঃদোস্ত তুই তো এবার আরো বুড়ো হয়ে যাবি।(আয়ানের আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললো)
আম্মুঃ ভাইজান একটু ভালোভাবে বলেন কি হয়েছে ওর।
আয়ানঃহুম আংকেল, প্লিজ তাড়াতাড়ি বলেন। খুব টেনশন হচ্ছে।
আফজাল আংকেলঃআরে কেউই বুঝছে না!!!!!
আরে ভাই তোমাদের ঘরে ছোটো মেহমান আসছে। মানে মৌ মা হবে।
এ কথা শুনে সবাই খুশিতে আত্মহারা।আয়ানের তো খুশিতে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে।এর মধ্য মৌ এর জ্ঞান ফেরে।তার চোখ প্রথমেই আয়ানের উপর যায়।আয়ানকে কান্না করতে দেখে মৌ অবাক হয়ে যায়।
মৌ ঃআয়ান তুমি কান্না করছো কেনো??
আব্বু: মা রে তুই এতো বড় খুশির সংবাদ শুনালি আমাদের…..
দাদিঃ আমার যে কি খুশি লাগছে।।।।আমাকে বড় দাদি বলবে কেউ।খেলবে আমার সাথে…..
এই বলেই দাদি মৌ এর কপালে একটা চুমু দেয়।
আয়ান এসে বললো,
“উই আর গোনা বি প্যারেন্টস”
এ কথা শুনে মৌ খুব খুব খুশি হলো। সে খুশিতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আশেপাশে যে মানুষ আছে সেটা তার খেয়ালই নেই।
আফজাল আংকেল শুকনো কাশি দিয়ে বললেন,
“পরে আরো সময় পাবে মা।”
এ কথা শুনে মৌ লজ্জায় আয়ানকে ছেড়ে দেয়।আর সবাই মুচকি হাসতে থাকে।
হঠাৎ আয়ানের মনে আসলে সে তার প্রমোশন এর কথা বলেনি।তাই সে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“আজকে আমার প্রমোশন হয়েছে।এবার আমি আমার বিজনেসটা শুরু করতে পারবো।”
এ কথা শুনে সবার খুশির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।
আব্বু বললো,
“এই বাচ্চাটা আমাদের জন্য অনেক লাকি। কারন একদিকে এই বাচ্চাটার আসার সংবাদ শুনলাম।আবার একদিকে তোর প্রমোশনের সংবাদ শুনলাম।সত্যিই খুশি দ্বিগুন হয়ে গেলো”
এরপর আম্মু এসে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালো।
এভাবে কেটে যেতে লাগলো সময়।২সপ্তাহ পর পরই মৌ কে চেকাপের জন্য ডক্টর এর কাছে নিয়ে যেতো আয়ান।কখনো সে বিজি থাকলে অহনা নিয়ে যেতো। সব চেকাপ ফাহাদের হসপিটালেই করানো হচ্ছে।
প্রেগনেন্সির থার্ড মান্থে মৌ জানতে পারলো যে তার প্রেগনেন্সিতে বেশ কিছু কম্পলিকেশনস আছে। সেদিন সে একাই চেকাপ করাতে গিয়েছিলো। কারন আয়ানের মিটিং ছিলো আর অহনার শ্বশুর বাড়ীতে মেহমান এসেছিলো।
কম্পলিকেশনসের কথা শুনে মৌ খুব ভয় পেয়ে যায়।ডক্টর এর সাথে কথা বলে অবশ্য কিছুটা টেনশন ফ্রি হয়েছিলো। কারন ডক্টর বলেছিলো যে মৌ যদি সবকিছু মেনে চলে, নিজের পুরোপুরি খেয়াল রাখে তাহলে আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মৌ বাসার কাউকে তার এই প্রবলেম এর কথা বললো না। কারন সবাই অনেক টেনশন করবে।সে সম্পূর্ণ নিজের খেয়াল রাখছে। ভালোমতো খাবার খাচ্ছে। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছে।
নিজের মধ্যে একটা অস্তিত্ব কে অনুভব করতে পেরে মৌ এর আলাদা এক রকম সুখ অনুভুত হচ্ছে। মা হওয়ার যে একটা সবচেয়ে সুখকর আলাদা একটা অনুভুতি, তা মৌ উপলব্ধি করতে পারছে।সে এখন একটা বিষয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছে যা হয়ে কিছু হয়ে যাক, সে এই বাচ্চাকে কিছুই হতে দিবে না। কষ্ট সহ্য করে হলেও তাদের বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাবে।
আয়ান, আম্মু,দাদি নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করে যাচ্ছে যাতে মৌ এর কোনো কষ্ট না হয়।
মৌ এর প্রেগনেন্সির এখন প্রায় সাড়ে ৭ মাস চলছে।এই সাড়ে ৭ মাসে অনেক কিছু বদলেছে। মৌ এর পেট স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। তার নড়াচড়া আগের থেকে একটু কমে গিয়েছে। আয়ান মৌ এর সুবিধার জন্য তাদের রুম শিফট করে নিআে এনেছে।এতে করে সিড়ি দিয়ে উঠানামা করতে হয়না বলে রিস্ক কম।অবশ্য মৌ প্রতিদিনই ছাদে যায়।প্রতিদিন ছাদে যাওয়া তার একটা রুটিন হয়ে গিয়েছে। কেউ না কেউ তার সাথে যায় ছাদে।বিকালের প্রকৃতি তার অনেক ভালো লাগে। এবং সে মনে করছে এই অভ্যাসটা হয়তো বেবির হেল্থ এর জন্য বেশ ভালো।
আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর রুমে এসে কিছুক্ষণ বসে সে।এরপর আম্মুর রুমের দিকে গিয়ে দেখো তিনি ঘুমিয়ে আছেন। দাদির রুমে গিয়েও একই জিনিস দেখে সে। তাই সে ভাবলো একা একাই ছাদে যাবে। কিছুই ভালো লাগছে না তার আজকে। অজানা এক কারনে সকাল থেকেই মনের মধ্যে কেমন যেনো করছে। তাই সে ভাবলো হয়তো ছাদে গিয়ে খোলামেলা পরিবেশ এ কিছুক্ষণ থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তাই সে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
অনেকক্ষন যাবত সে ছাদেই সময় কাটালো। আসরের নামাজ পরার কিছুক্ষণ পরে সে নিচে আসার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছে।কিন্তু নিচে নামার ৪ সিঁড়ি আগেই ঘটলো বিপদ।কিভাবে যেনো হঠাৎ করেই মৌ এর পা স্লিপ কাটলো।আর সে সিঁড়ি থেকে নিচে পরে গেলো। সিঁড়ির রেলিং ধরেছিলো কিন্তু তাও লাভ হলো না। পরার সাথে সাথেই সে এক গগনবিদারি চিৎকার দিলো।সে নিচে উপর হয়ে পরেনি। পরেছে একপাশ হয়ে। তাই ডিরেক্ট পেটের সামনে ব্যাথা লাগেনি। ব্যাথা লেগেছ পেটের এক সাইডে।মৌ এর চিৎকার শুনে যে যার রুম থেকে ছুটে চলে আসলো। দুজনই নামাজ পরছিলো।
আম্মু আর দাদি রুম থেকে বের হয়ে যা দেখলো তাতে উনারা কেউই প্রস্তুত ছিলো না। তারা দেখলো মৌ পেটে হাত দিয়ে কান্না করে যাচ্ছে।উনারা তাড়াতাড়ি মৌ এর কাছে গেলো।
এরমধ্যে আয়ানও অফিস থেকে চলে আসলো।সে অনেকদিন যাবত মাগরিবের আগেই বাসায় চলে আসে।আয়ান বাসায় ঢুকেই মৌ কে এ অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো। সে তাড়াতাড়ি মৌ এর কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে নেওয়ার সময় অবশ্য অনেক কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু এ অবস্থায় তো মৌ হেঁটেও যেতে পারবে না।আয়ান মৌ কে কোলে নিয়ে গাড়ীর উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো।আম্মু আর দাদিও তার পিছে পিছে আসলো।
এদিকে মৌ ব্যাথায় চিৎকার আর কান্না করেই যাচ্ছে।আয়ান তাড়াতাড়ি গিয়ে পিছনের সিটে মৌ কে শুইয়ে দিলো। আর পিছনের সিটে বসলো আম্মু আর সামনে দাদি আর আয়ান।মৌ কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না।কিন্তু মনে মনে সে দোয়াদরুদ পরে যাচ্ছে আর আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে যাতে এই বেবিটার কিছু না হয়।
আয়ান গাড়ী স্টার্ট দেওয়ার আগে ফাহাদকে ফোন করলো।
“হ্যালো ফাহাদ,একটা সমস্যায় পরে গিয়েছি।”
“কি সমস্যা আয়ান?”
“আমি বাসায় এসে দেখি যে মৌ সিঁড়ির কাছে পরে আছে।ব্যাথায় চিৎকার করছে সে। আমি তাড়াতাড়ি তোমাদের হসপিটালে নিয়ে আসছি।”
ফাহাদ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
“আয়ান তুমি চিন্তা করো না।মৌ ভাবিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসো।আমি ডক্টর কে বলে ওটি রেডি করাচ্ছি।’
আয়ান আর কিছু না বলে গাড়ী স্টার্ট দেয়।এদিকে মৌ এর কান্নার গতি বেড়েই যাচ্ছে।দাদি মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বারবার আর দোয়াদরুদ পড়ছে।এদিকে আম্মুও দোয়াদরুদ পড়ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে আয়ানরা হসপিটালে পৌঁছে গেলো।হসপিটালে পৌঁছে সে মৌ কে কোলে করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলো।নার্সরা মৌ কে তাড়াতাড়ি ওটির দিকে গেলো। পিছে পিছে আয়ান,দাদি আর আম্মুও আসছে।
মৌ কে অপারেশনের জন্য নিয়ে গেলো।ইতোপূর্বে অহনাও হসপিটালে পৌঁছে গিয়েছে।ফাহাদ মৌ এর খবর জানার সাথে সাথেই অহনাকে ফোন দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে।
আয়ান মৌ এর এ কথা কাউকে জানায়নি। টেনশনে সে ভুলেই গিয়েছিলো সবাইকে ফোন করে এই এক্সিডেন্ট এর কথা ভুলেই গিয়েছিলো।
তাই অহনা ফোন দিয়ে মৌ এর পুরো পরিবার আর তার আব্বুকে হসপিটালে আসতে বলে।
অহনা এক নজর আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ানকে এখন বিধ্বস্ত লাগছে দেখতে।চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যাচ্ছে যে কিছুক্ষণ বাদেই সে কান্না করে দিবে।এদিকে আম্মু নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছে।কিন্তু এদিক দিয়ে দাদি বেশ শক্ত আছেন। তিনি সবার সামনে কান্না করেন না।কারন এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে যদি তিনিই নিজেকে সামলাতে না পারেন তাহলে ছোটোদের কে সামলাবে।
অহনা গিয়ে তার আম্মুর পাশে বসলো।আর দাদি আয়ানের কাছে গেলো।আয়ান একভাবে ওটির দরজার দিকে চেয়ে আছে।দাদি আয়ানের কাধে হাত রাখলো। আয়ান কারোর উপস্থিতি বুঝতে পেরে সামনে ঘুরে দাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দিলো।
“দাদি,আমার খুব টেনশন হচ্ছে।”
“এতো টেনশন নিস না। আল্লাহর কাছে দোয়া কর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“ওদের দুজনের কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না দাদি।”
“আরে কিছুই হবে না ইনশাল্লাহ। তুই নিজেকে সামলা।”
এর মধ্যে বাকি সবাই চলে আসলো। মৌ এর আম্মুর তো এই সংবাদ শোনার পর থেকে কান্নাই থামানো যাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ বাদে একজন ডক্টর বেড়িয়ে এলো ওটি থেকে।আয়ান উনাকে দেখে তাড়াতাড়ি গেলো উনার কাছে।গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“ডক্টর, মৌ এর কি অবস্থা??”
“এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।এমনভাবে এক্সিডেন্ট করলো,… তারপর আবার উনার বেশ কিছু কম্পলিকেশনস ও আছে।”
“কম্পলিকেশনস!!!!মৌ তো আমাকে কিছু বলেনি এ ব্যাপারে।”
“উনি কাউকে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন না।যাই হোক আপনারা সবাই দোয়া করুন। অবস্থা ধীরে ধীরে ক্রিটিক্যাল হচ্ছে।মা আর বাচ্চা, দুজনেরই জীবনের রিস্ক আছে। ”
এ বলে ডক্টরটা চলে গেলেন।
এদিকে এ খবর শুনে সবার মনে আরো টেনশন কাজ করছে।আয়ানের তো এ কথা শুনে মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া ঘুরে এলো।সে নিজেকে সামলো নিয়ে চেয়ারে বসলো।আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছে।
পর্ব ১৯(শেষ)
🍀🍁
আয়ান টেনশন করতে করতে মনে হয় শেষই হয়ে যাবে।আরো তার আম্মু আর শাশুড়ি মায়ের কান্না তার টেনশনের পরিমান দ্বিগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।এদিকে ডক্টর রাও কিছু বলছে না।
বেশ কিছুক্ষন পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কানে ভেসে আসলো আয়ানের।এ কান্নাটা শুনে মনে একধরনের প্রশান্তি অনুভব করলো আয়ান।
সবার মুখেই হাসি ফুটে উঠলো।কিন্তু এই হাসি যে বেশিক্ষণের না তা তারা জানতো না।কিছুক্ষন পর একজন নার্স বের হয়ে এলো ওটি থেকে।নার্সকে দেখে আয়ান দ্রুত পায়ে নার্সের কাছে গিয়ে দাড়াঁলো। নার্স আয়ানকে দেখে বললো,
“কংগ্রাচুলেশনস, আপনার ছেলে হয়েছে।”
আয়ান আর বাকি সবাই এ কথা শুনে অনেক খুশি হলো।তারা সবাই ভাবলো দুশ্চিন্তার প্রহর হয়তো শেষ হয়েছে।কিন্তু আসলে তা হয়নি।
আয়ান নার্সকে জিজ্ঞাসা করলো,
” নার্স বেবি কেমন আছে?আর মৌ?”
নার্স এ কথার জবাবে গম্ভীর মুখে বললো,
“কিছুক্ষন পর ডক্টর আসবেন।উনার কাছ থেকে শুনে নিবেন সব। এ বলে নার্সটা চলে গেলো সেখান থেকে।কিন্তু আয়ান আর বাকি সবাইকে আরেক দুশ্চিন্তায় ফেলে রেখে গেলো।
বেশ কিছুক্ষন পর ডক্টর বের হয়ে এলেন।সবার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন,
“পেশেন্ট এর হাসবেন্ড কে? আমার সাথে আসুন।”
ডক্টর এর এ কথা শুনে আয়ান এগিয়ে গেলো ডক্টর এর কাছে।ডক্টর আয়ানকে দেখে বললেন,
“আমার কেবিন এ আসুন আমার সাথে।”
এরপর আয়ান ডক্টর এর পিছু তার কেবিনে গেলো। যাওয়ার পথে আয়ানের টেনশনে গলা শুকায় যাওয়ার মতো অবস্থা।
আয়ান আর ডক্টর বসে আছে।কিছুক্ষন পর ডক্টর বলে উঠলেন,
“দেখুন,আমি জানি,আপনি আপনার ছেলে হওয়ার কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছেন।কিন্তু কিছু কথা এ খুশিটাকে হয়তো বেশিক্ষণ রাখবে না।”
ডক্টর এর এ কথা শুনে আয়ানের চিন্তা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো।সে চিন্তিত মুখে জিজ্ঞাসা করলো,
“কি ডক্টর?”
“আপনি তো জানেনি আপনার ওয়াইফ এর সাড়ে সাত মাস চলছিলো।এর মধ্যে এক্সিডেন্টটা হওয়ায় বাচ্চার জীবন বাচাঁতে ডেলিভারি করতে হয়।যেহুতু বেবিটা সাড়ে ৭ মাস চলছিলো তার মানে বেবিটার প্রিমেচুয়ার ডেলিভারি হয়েছেই বলা যায়। প্রিমেচুয়ার হওয়ায় ওর লাইফের এখনো কোনো সিওরিটি দেওয়া যাচ্ছে না। এই জন্য ওকে ইনকিউবিটরে রাখা হয়েছে।এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যাতে বেবিটার লাইফ সেইভ হয়।”
এ কথা শুনে আয়ানের মনে হচ্ছিলো পুরো পৃথিবী হয়তো থমকে গিয়েছে।তাদের প্রথম সন্তান এভাবে মৃত্যুর মুখে দাঁড়ীয়ে আছে!!!
আয়ানের কেনো যেনো মনে হচ্ছে হয়তো মৌ কে নিয়ে খবরটাও ভালো হবে না।তারপরও সে সাহস জুগিয়ে ডক্টর কে মৌ এর কথা জিজ্ঞাসা করলো।
“ডক্টর মৌ ঠিক আছে তো?”
“আমি এতোক্ষন ধরে ভাবছিলাম যে আপনাকে আপনার ওয়াইফ এর কথাটা কিভাবে বলবো।”
আয়ান ভয় নিয়ে বললো,
“সিরিয়াস কিছু ডক্টর?”
ডক্টর কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
“আপনার ওয়াইফ আর দ্বিতীয়বার মা হতে পারবে না।”
এই কথা শুনার জন্য আয়ান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তার মাথায় একটা করা ঘুরছে মৌ এ নিউজ শুনলে কেমন রিয়েক্ট করবে??
ডক্টর আবারও বললো,
“বাচ্চা পেটে থাকার সময় এমন এক্সিডেন্ট করায় ইন্টারনাল কিছু ইনজুরি হয়েছে। এজন্য তিনি দ্বিতীয়বার আর মা হতে পারবেন না।আর এখন পর্যন্ত উনার ব্লিডিং বন্ধ হয়নি।আর আপনি হয়তো জানেন,অনেকের ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ার কারনে তাকে এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়।”
এটুকু বলে ডক্টর মাথা নিচু করে সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন।
আর আয়ান সেখানেই ঠায় দাঁড়ীয়ে রইলো।তার শরীর যেনো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মৌ এর কিছু হয়ে গেলে সে কিভাবে বাচঁবে!!আর তাদের সন্তান!!!
মনে হচ্ছে সব খারাপ কিছু তার সাথেই ঘটছে…
আয়ানের চোখ দিয়ে এখন পানি পরে গেলো।তার ইচ্ছা করছে গলা ফাটিয়ে কান্না করতে।কিন্তু বলে না,ছেলেদের এমন কাঁদতে নেই।
“আল্লাহ,এমন শাস্তি কেনো দিচ্ছো আমাকে?? আমার কলিজাটা মনে হচ্ছে এখনই বের হয়ে যাবে। ওদের দুজনের কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো!!
আল্লাহ তুমি ওদেরকে সুস্থ করে দাও।”
এ বলে আয়ান হাউমাউ করে কেদেঁ উঠলো।হঠাৎ কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেলো সে। পিছে ঘুরে দেখে দাদি দাঁড়ীয়ে আছে। আয়ান দেখলো উনার চোখও ভিজা। তার মানে দাদিও কান্না করেছে!!এতোক্ষন শক্ত থাকা মানুষটাও আর পারলো না শক্ত হয়ে থাকতে।
আয়ান তার দাদিকে জড়িয়ে ধরে আবারও কান্না করতে থাকে,
“দাদি,আমি কি করে বাঁচবো বলো???”
“চিন্তা করিস না।আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।ডক্টর আমাদের সব বলেছে।
তুই এক কাজ কর,এখন এশার নামাজ পরে আল্লাহর কাছে তোদের বাচ্চা আর মৌ এর সুস্থতা কামনা কর।”
আয়ান এ কথা শুনে তাড়াতাড়ি কেবিন থেকে বের হয়ে নামাজের উদ্দেশ্যে গেলো।গিয়ে দেখলো,মাহতাব,মৌ এর আব্বু আর তার আব্বু ও নামাজে দাঁড়ীয়েছে।
নামাজ শেষে যে যার মতো দোয়া করছে।
রুমের বাইরে থেকে আয়ান তাদের সন্তানকে দেখছে।কিছুক্ষন আগে সবাই দেখছিলো। পরে আয়ান মাহতাবকে বলে যে সবাইকে নিয়ে চলে যেতে।সে কিছুক্ষন তার ছেলেকে মনভরে দেখবে।
আয়ানের এখন ইচ্ছা করছে নিষ্পাপ এ শিশুটিকে আলতো করে একটু ছুয়ে দিতে,কিন্তু আফসোস সে পারছে না।
কিছুক্ষন পর অহনা আয়ানের কাছে হাসিমুখে এসে বললো,
“ভাইয়া,আল্লাহর রহমতে মৌ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।”
অহনার এ কথা শুনে আয়ান তাড়াতাড়ি করে ছুটে যায় মৌ কে দেখতে।মৌ কে যে রুমে শিফট করা হয়েছে সে রুমে গিয়ে দেখে যে মৌ শুয়ে আছে।রুমের বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে কখন তারা মৌ এর সাথে দেখা করবে।মৌ এর জ্ঞান ফিরার পর সে ডক্টরকে বলে যে সে আয়ানের সাথে দেখা করবে।
আয়ান গিয়ে মৌ এর পাশে বসে।মৌ আলতো করে চোখ খুলে দেখে যে আয়ান বসে আছে তার পাশে।সে আয়ানকে জিজ্ঞাসা করে,
“আমাদের বেবি কেমন আছে?”
“আমাদের ছোটো বেবিটা সুস্থ আছে। তুই আর কোনো কথা বলিস না তো। একদম সুস্থ হয়ে নে আগে।”
“বেবি সুস্থ থাকলে ডক্টর রা আমার কাছে দিচ্ছে না কেনো ওকে??”
আয়ান আমতা আমতা করে বললো,
“আরে তুই তো অসুস্থ তাই তোর কাছে বেবিকে দেয়নি।”
“মিথ্যা কথা।আমাকে দয়া করে সত্যি কথাটা বলো প্লিজ।আমি কোনো মিথ্যা শুনতে চাই না।”
আয়ান মৌ এর কথা শুনে মাথা নিচু করে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। তারপর বললো,
“আমি যা বলবো তা শুনার পর তুই শান্ত থাকবি ওকে?’
“ওকে।”
“আমাদের বেবির অবস্থা খুব একটা ভালো না। কারন নির্দিষ্ট সময়ের আড়াই মাস আগে ও জন্ম নিয়েছে।তাই বেশ কিছু জটিলতা আছে।এখন ওকে ইনকিউবিটরে রাখা হয়েছে। বাকি আল্লাহ ভরসা।”
মৌ এসব শুনে চুপ হয়ে যায়।তার গলা দিয়ে যেনো কোনো আওয়াজই বের হতে চাচ্ছে না।তার সন্তানের এমন অবস্থা!!!
হঠাৎ করে মৌ আয়ানকে বলে,
“আমি আমার বেবিকে দেখতে চাই প্লিজ।”
“এখন না। তুই এখনো পুরোপুরি সুস্থ না।”
“আমি সুস্থ আছি।আমি আমার বাচ্চাকে দেখতে চাই মানে দেখতে চাই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ডক্টর কে বলছি।”
এরপর আয়ান গিয়ে ডক্টরকে এ কথা বলে।ডক্টর তো প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। আয়ানের জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যায় অবশেষে।
মৌ কে একটা হুইলচেয়ারে করে নিয়ে যাওয়া হলো বেবির কাছে।সে রুমে বাইরে থেকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটার দিকে। মৌ এর খুব ইচ্ছা করছে তাদের বেবিটাকে কোলে নিতে কিন্তু পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক না। তাই চাইলেও পারছে না এমন করতে।
মৌ এর চোখ দিয়ে নিরবে জল পরছে। আয়ান এটা দেখেছে ঠিকই কিন্তু কিছু বলেনি। কারন সে জানে, এখন যদি ওকে শান্তনা দিতে যাওয়া হয়,বা কিছু বলা হয় তাহলে হাউমাউ করে কান্না করে উঠবে মৌ।তাই আয়ান চুপ করে আছে।
প্রায় ১মাস হয়ে গিয়েছে।এখন সব কিছুই মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে।আয়ান আর মৌ আজকে তাদের বেবিকে বাসায় নিয়ে যাবে।তাদের বেবির নাম রাখা হয়েছে মায়ান।এ নামটা অবশ্য অহনা রেখেছে আয়ান আর মৌ এর নামের সাথে মিলিয়ে।
প্রথম দিকে মায়ানের বেশ কিছু অসুস্থতা ধরা পরেছিলো।কিন্তু এখন বেশ সুস্থ সে।আয়ান আর মৌ বাইরে দাঁড়ীয়ে আছে।তারা অপেক্ষা করছে নার্স কখন এসে মায়ানকে কোলে দিয়ে যাবে।
কিছুক্ষন পর নার্স তোয়ালে তে জড়ানো অবস্থায় মায়ানকে নিয়ে এসে মৌ এর কোলে দিলো।মায়ানকে কোলে নেওয়ার পর মৌ এর আজনব এক ধরনের অনুভুতি হচ্ছে। এই প্রথম সে তার বাচ্চাকে কোলে নিয়েছে। এই প্রথম মায়ানের ছোটো ছোটো হাত পা ধরছে।মৌ তে খুশিতে কান্না করে দিলো।আয়ান দেখে বললো,
“কি রে কাঁদছিস কেনো??”
মৌ ভেংচি কেটে বললো,
“কাঁদবো না তো কি হুম??একটা মাস পর আমার বাচ্চাকে কোলে নিতে পেরেছি আমি।”
“আমার কোলে দে ওকে। কতোক্ষন ধরে তুই কোলে নিয়ে থাকবি ওকে??পাশে যে ওর আব্বু দাঁড়ীয়ে আছে তার খেয়াল কি আছে তোর??”
মৌ খানিকটা হেসে আয়ানের কোলে দেয় মায়ানকে।
আয়ান কোলে নেওয়ার পর আলতো হাতে হাত পা ছুঁয়ে দিচ্ছে তার বাচ্চাকে।
“মৌ দেখেছিস?ওর হাত পা গুলো কি রকম নরম!!আমার তো ভয় হচ্ছে যে আমার হাত থেকে না পরে যায় ও।”
“এমন ই মনে হয়। কিন্তু কিছুক্ষন কোলে রাখলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আচ্ছা আজকে কি বাসায় যাবেনা নাকি??কিছুক্ষন পর সবাই ফোন দেওয়া শুরু করে দিবেনে।”
“হুম চল।”
বাসায় এসে মায়ানকে দেখে সবার মধ্য খুশির আমেজ বয়ে যায়।একে একে সবাই কোলে নিচ্ছে মায়ানকে। অহনার কোলে আসার পর তো সে আর কারোর কোলে মায়ানকে যেতে দিবে না। এতোক্ষন মায়ান কান্না করলেও অহনার কোলে আসার পর চুপ হয়ে যায়।ফাহাদ অনেকক্ষন ধরে মায়ানকে কোলে নিতে চাচ্ছে। কিন্তু অহনা দিচ্ছেই না।
ফাহাদ গিয়ে অহনার কানে কানে বললো,
“আরে আরে নিজের বাচ্চাকে এভাবে কোলে করে রেখো বুঝছো??এখন আপাততো ওর ফুপার কোলে একটু দাও।”
ফাহাদের এ কথা শুনে অহনা একটা ভেংচি কেটে মায়ানকে ফাহাদের কোলে দিলো।মায়ানকে কোলে নিয়ে ফাহাদ অহনাকে বললো,
“শুনো,খুব শীঘ্রই কিন্তু আমি এমন একটা বেবি চাই।মায়ানের খেলার সাথিকে তো আনতে হবে না??”
ফাহাদের কথা শুনে অহনা এবার বেশ লজ্জা পেলো।
এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৪টা বছর।মায়ান এখন ৪বছরের হয়ে গিয়েছে। আর অহনা এবং ফাহাদের ২টা বেবি হয়েছে।প্রথম বেবি হয়েছে মেয়ে। আর দ্বিতীয় বেবি হয়েছে ছেলে।দুজনের বয়সের পার্থক্য ১ বছরের।মেয়ের নাম ফারিয়া।আর ছেলের নাম অর্নব।এ দুজনের সাথে মায়ানের বেশ ভাব। একসাথে হলে তারা একে অপরকে ছাড়া থাকেই না।
আজকে অহনা, ফাহাদ,ফারিয়া,অর্নব আসব আয়ানদের বাসায়।মৌ তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছে লান্চে।উদ্দেশ্য একসাথে আড্ডা দেওয়া।
সকালে মায়ানকে গোসল করিয়ে দিয়ে রেডি করাচ্ছে মৌ। আর আয়ান খাটে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।হঠাৎ মায়ান বলে উঠে,
“আম্মু আমাল কোনো তোতো বাইবোন নেই কেনো?”
মায়ানের এ কথা শুনে মৌ একদম চুপ হয়ে যায়। তার মনে পরে যায় ৪ বছর আগেকার সেই স্মৃতি।যখন সে জানতে পারে যে সে আর দ্বিতীবার মা হতে পারবে না।প্রথমে তো তার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না।অনেক হাইপার হয়ে গিয়েছিলো সে।কেউই তাকে শান্ত করাতে পারছিলো না।শেষে আয়ান আর কোনো উপায় না পেয়ে মায়ানকে মৌ এর কোলে দিয়ে বলে,
“আমাদের কি আর কোনো সন্তানের দরকার আছে বল??মায়ান আছে আমাদের লাইফে। আর কোনো বেবি হবে না তে কি হয়েছে। শুধু মায়ানকে নিয়ে আমরা বাকি জীবন কাটিয়ে দিবো।
আর একবার ভেবে দেখ,অনেকের তো কোনো সন্তানই হয়না। তারা কিভাবে বেঁচে আছে?আমাদের কাছে তো মায়ান আছে তাইনা??”
আয়ানের কথা শুনে মৌ তাদের বাচ্চা আর আয়ানকে জড়ীয়ে ধরে।আর ইচ্ছামতো কান্না করতে থাকে।
মায়ানের কথায় মৌ অতিত থেকে ফিরে আসে।
“বলো না আম্মু।”
“আমার বেবিটার হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো??তার কি খেলার মানুষ নেই??ফারিয়া আর অর্নব আছে না?”
“না আম্মু।ওলা তো আমাল থাতে থবথময় তাকে না।ওলা তলে দায় আল অনেকদিন পল আতে।”
মায়ানের কথা শুনে আয়ান ফোন রেখে বলে উঠে,
“বাবা, তুমি কি চাও যে আমরা তোমাকে কম ভালোবাসি??”
এ কথা শুনে মায়ান ভয় নিয়ে বলে উঠে,
“না আব্বু আমি এমন তাই না।আমি তাই তোমলা আমাকে বেতি বেতি ভালোবাতো।”
“এমন চাইলে কিন্তু আর ভাইবোন চাইবে না ঠিক আছে??”
“থিক আতে আব্বু।”
মৌ এদের দুজনের কথা শুনে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়।মায়ানকে রেডি করিয়ে সে নিচে যেতে বলে।
মায়ান নিচে চলে যাওয়ার পর আয়ান গিয়ে মৌ কে জড়ীয়ে ধরে।কিছুক্ষন মৌ চুপচাপ থাকার পর হুট করে কান্না শুরু করে দেয়।মৌ এর কান্না শুনে আয়ান বলে,
“আমি না বলেছি যে এই টপিকে আর কান্না না করতে।”
আয়ানের কথা শুনার পরও মৌ কান্না করতে থাকে।আয়ান আবারো বলে,
“আর কান্না করলে কিন্তু আমি এখনই চলে যাবো।”
এ কথা শুনে মৌ এর কান্না থামে।
বিকালে সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আর বাচ্চারা সবাই খেলছে।
কথার মাঝে মৌ এর চোখ যায় মায়ানের দিকে।কি সুন্দর করে খেলা করছে তার ছেলে।এর জন্যই তো আজ সে অনেক সুখি।তার অপূর্ণতা এই সুখের সামনে কিছু না। আবার মা হতে পারবে না তো কি হয়েছে। তার মায়ান তে আছে তার সাথে। তার জীবনসঙ্গী আয়ান আছে তার সাথে। আর কি চাই তার। এদের দেখেই কাটিয়ে দিবে বাকি জীবন।
“সমাপ্ত”