#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
কিছু সময় কাজ করার পরে হঠাৎ করে অয়ন দেখতে পায় তার কেবিনের দিকে কেউ একজন মৃদু পায়ে হেঁটে আসছে। অয়ন ঐ দিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। ল্যাপটপের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাজ করছে সে।
— আসতে পারি মিস্টার অয়ন চৌধুরী।
মিষ্টি মধুর সুমিশ্র কন্ঠে ভেসে এলো অয়নের কানে। অয়ন ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই ভিশন অবাক হয়ে গেলো। “একি হঠাৎ করে রোহানা এখানে কি জন্য”? আপন মনে ভাবছে অয়ন। রোহানাকে দেখতে পেয়ে তার চোখ জোড়া পঞ্চম আকাশে উঠে গেছে তা রোহানার দৃষ্টির অগোচরে নয়। রোহানা অয়নের কেবিনে মৃদু হেসে প্রবেশ করলো। অয়ন পিছনে কফের দিয়ে বসে রোহানাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো
— বাহ এ আমি কাকে দেখছি আমার অফিসে? মিসেস রোহানা আমার অফিসে! তা কি মনে করে?
— না তেমন কিছু না। এমনি এসেছি। তোমার কি অবস্থা?
— আমার অবস্থা নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে মিসেস রোহানা। কি জন্য এসেছেন এতো বছর পরে?
— আসলে অয়ন আমার তোমার সাথে…..
রোহানাকে সম্পূর্ণ কথা বলার সুযোগ দিলো না অয়ন। অয়ন কিছুটা রেগে গিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— শার্ট আপ। আমার নাম ধরে ডাকার মতো দুঃসাহস দেখাবেন না। আমার নাম ধরে ডাকার অধিকার আপনি অনেক আগেই হারিয়েছেন।
— হুম।
* অয়নের কর্কশ কন্ঠ রোহানাকে নিস্তব্ধ করে দিলো। অনেক বছর আগে যেই অয়ন তার প্রিয়জন হিসেবে তাকে এক বুক ভালোবাসা দিয়েছে। আজ সেই অয়ন তার মুখ থেকে নিজের নামটি পর্যন্ত শুনতে পারে না। যদিও অয়নের বদলে যাবার পিছনে রোহানার হাত ছিলো। দিনের পর দিন বাজে রকম ভাবে অয়নকে ঠকিয়ে, অয়নের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে, অয়নের মন ভেঙ্গে রোহানা অন্য কারোর হয়। অয়ন সেই দিন থেকে আর কখনও ভালোবাসা নামক কোনো মায়ায় নিজেকে জড়ায় নি। অয়নের কাছে ভালোবাসার আরেক নাম প্রতারনা। অয়নের এই প্রতারণার শিকার তার স্ত্রী ও হয়েছে।
রোহানা কিছু সময় মাথা নিচু করে বসে থাকলো। অয়ন রোহানাকে কেবিনে রেখেই নিজে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। “অসহ্য মনে হচ্ছে রোহানাকে। এতো বছর পরে ভালোবাসা দেখাতে এসেছে। যত্তসব”। কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে কথাটা বাঁকা হেঁসে দিয়ে বলল অয়ন। সময় সব সময় বদলায়। আর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যায় কিছু মুখ।
— বৌমা তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?
ভিশন রকম মায়াবী কন্ঠে অধরাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল অয়নের মা। অধরা অয়নের মা এর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়। আসলে নিজের তো মা ছিলো না। সৎমা এর অত্যাচারে মূল্যেই গিয়েছিলাম মা এর ভালোবাসা, মমতা কেমন হয়। অয়নের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরে এই বাড়িতে এসে আমি নিজের মা কে পেয়েছি। ইনি আমার শাশুড়ি নন। নিজের মা এর থেকে কোনো অংশে কম ভালোবাসা উনি দেননি। আমার চোখের কোনে জল দেখে উনি একটু কৌতূহলী হয়ে পরেন। বুকে জড়িয়ে নিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করেন
— অয়নের সাথে ঝগড়া হয়েছে? ছেলেটা আমার অনেক ফাজিল। সব সময় আমার মেয়েকে কষ্ট দেয়। ও অফিস থেকে ফিরুক আচ্ছা ভাবে বকে দিবো আমি।
শাশুড়ি মা এর কথা শেষ হতেই অধরা তাকে উদ্দেশ্য করে একটু এড়িয়ে গিয়ে বলল
— না মা। অয়নের সাথে আমার ঝগড়া হয়নি। বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে তাই ভাবছি একটু বাড়ি যাবো।
অধরার কথা শেষ হতেই উনি একটু নিরব হয়ে যান। ভিশন চিন্তা নিয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছেন উনি। অধরার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বললেন
— অয়নকে সাথে নিয়ে যাও। দুদিন এক সাথে থেকে ঘুরে এসো।
— না মা আসলে অয়নের অফিসের কাজের চাপ বেশি। তাই ও যেতে পারবে না। আমি একাই যাবো। দুদিন থেকে আবার ফিরে আসবো।
— আচ্ছা।
অধরা নিজের ব্যাগ আগেই গুছিয়ে রেখেছে। “আজকের অয়নের বলা কথা গুলো শোনার পর এখানে থাকার কোনো মানে হয় না। আত্নসম্মান বলে একটা জিনিস আছে। আর একজন ২য় নারীতে আসক্ত পুরুষ কখনোই কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না’। অধরা ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। ২য় নারীতেই হোক বা পরক্রিয়ায়। অয়ন যে অধরার ভালোবাসার প্রিয় মানুষ। এই কথাটা যে সত্যি তা অধরার চোখের জল প্রকখন করছে। অধরার চোখ জোড়া ছলছল হয়ে এসেছে। অয়নের কথা ভূলে থাকবে কি করে? “একটু ভালোবাসা তার জন্য অয়নের কাছে নেই। যা আছে তা হলো অবহেলা। আরে অবহেলা করার হলে ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছিলে কেনো? ইচ্ছে করে তো তোমার জীবনে আসিনি আমি। নিজেই বাধ্য করে নিজের সাথে আমায় জড়িয়েছো। তবে আজ কেনো এতো অবহেলা? কেনো অন্য নারীর প্রতি দুর্বল তুমি”? কথা গুলো মনে তোলপাড় করে দিচ্ছে। সত্যি কার ভালোবাসা বুঝি এমনটি হয়। অধরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে যায় নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। চোখ জোড়া দিয়ে ঝরছে অধর ধারায় নোনা জল।
— আর ইউ ম্যাড অর্পা? এটা কি তোমায় কাজের জায়গা না অন্য কিছু? কি সব ফাইল রেডি করেছো?
— উফফফ! অয়ন আমার দোষ কোথায়? সারা দিন তোমার কথা মাথায় ঘোরে তাই মন দিয়ে কাজ করতে পারি না আমি। এখানে আমার ভূল কোথায়?
অয়নের রাগি চেহারার দিকে ভিশন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্পা। অর্পার দৃষ্টিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিছু চাওয়া পাওয়া। কিছু আহ্বান। অয়ন অর্পার চোখের ভাষা ঠিক বুঝতে পারলো। অয়ন একটু শব্দ করে হেসে দিয়ে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তোমরা নারীরা সত্যি অদ্ভুত জীব। মানে একজন মানুষের উপর মায়ার জাল ফেলতে দুমিনিট সময় নাও না। যখন কোনো পুরুষ সেই মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ঠিক তখনি তোমরা নিজেদের আসল রূপে ফিরে আসো।
অয়নের কথা শেষ হতেই অর্পা অয়নের ভিশন কাছে এসে অয়নকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে অয়নের ঠোঁটে দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে মৃদু কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো
— আমার মায়ায় আছে ভালোবাসা। এই মায়ায় নেই কোনো ছলনা। একটিবার নিজের আপন করে নাও। আমি তোমার সব কিছু ভুলিয়ে দিবো।
অর্পা অয়নের ঠোঁটের ছোঁয়া পাবার জন্য ব্যাকূল হয়ে পরছে। অয়ন মৃদু হেসে চলেছে। অর্পার মিষ্টি ঠোঁট জোড়া অয়নের ঠোঁটের দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। অর্পার ঠোঁট জোড়া যখন অয়নের ঠোঁট ছুই ছুই অবস্থা ঠিক তখনি অয়ন অর্পাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলো নিজের কাছ থেকে। অর্পা ভিশন অবাক হয়ে যায় অয়নের ব্যবহারে। অয়ন কেনো তার হয়েও তার নয়? কেনো নিজেকে তার কাছে প্রকাশ করছে না? অর্পার মনের মধ্যে প্রশ্ন গুলো ঘোরপাক খাচ্ছে। অয়ন অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল অন্যমনস্ক ভাব নিয়ে বলছে
— অর্পা প্লিজ! এসব আমার ভালো লাগছে না। তুমি এখন নিজের কাজে তাও। পরে কথা বলবো।
অয়নের এই এড়িয়ে যাওয়াটা অর্পাকে ভিশন আঘাত করলো। অর্পা রেগে গিয়ে অয়নের দিকে দৌড়ে এসে অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— সমস্যা কি তোমার? আমাকে ভালোবাসতে পারো কাছে ডাকলে কেনো ফিরিয়ে দাও? তুমি কি সত্যি আমায় ভালোবাসো? নাকি ঐ অধরাকে ভালোবাসো? অধরাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা বললেই তোমার সমস্যা শুরু হয়ে যায়। আসলে তুমি এখনও ঐ রাস্তার গেও মেয়েটাকে ভালোবাসো। ঐ রাস্তার………
অর্পার কথা শেষ হবার পূর্বেই অয়ন অর্পাকে এক ধাক্কায় নিজের থেকে সামান্য দূরে সরিয়ে দিলো। সজোরে কসিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো অর্পার উজ্জ্বল বর্ণের মুখে। অর্পা থাপ্পড়ের ভার সহ্য করতে পারলো না। একদিক হেলে গালে হাত দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায় সে। অয়ন থাপ্পড় দিতেই বলতে শুরু করলো
— অধরাকে রাস্তার মেয়ে বলার কোনো রাইট তোমার নেই। আরে তুমি একটা মেয়ে? ভাবতেই অবাক লাগছে আমার। নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে নিজে বাজে মন্তব্য করা কোন ধরনের ভদ্রতা? আমি অধরাকে ভালোবাসি না। এমনকি তোমাকেও ভালোবাসি না। আমি মন ফ্রেশ করতে তোমার কাছে আসি। একটু সময় কাটাতে তোমার কাছে আসি। এর থেকে বেশি কিছু না। এটাই সত্যি। কাউকে ভালোবাসার আগে কাউকে সম্মান করতে শিখে নিও। নাউ ইউ গেইট লস্ট।
* অয়নের কর্কশ গলায় বলা কথা গুলো অর্পার মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। অর্পা একটি কথাও না বলে নিশ্চুপ হয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অর্পা চলে যেতেই অয়ন নিজের চেয়ারে বসে বাকি কাজ গুলো গুছিয়ে নিলো। কাজ শেষ করে অয়ন রাতে বাড়ি ফিরলো। বাড়ি আসতেই অয়ন বেশ চমকে যায়। অধরাকে নিজের রুমে এসে না দেখে নিচে চলে আসে অয়ন। মা এর থেকে জানতে পারে অধরা ওদের বাড়ি গিয়েছে। অয়ন কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে। ফ্রিজ থেকে ড্রিংক্স বের করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ড্রিংক করতে লাগলো অয়ন। অয়ন ড্রিংক করছে এমন সময় হঠাৎ করে অয়নের………………………
#চলবে…………………………
(