ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব -০৪

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অয়ন ড্রিংক করছে এমন সময় হঠাৎ করে অয়নের ফোনটা বেজে উঠে। অয়ন ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই অয়নের চোখ থমকে যায়। অয়ন ঠোঁটের উপর থেকে গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখে। ফোনটা চরম বিরক্তি নিয়ে পিক করলো

— হ্যালো,

— অয়ন সরি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়। তুমি আমার সামনে থাকলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না। খুব ইচ্ছে করে তোমাকে নিজের করে পেতে। তোমার আদর পেতে ভিশন রকম ইচ্ছে জাগে মনের মধ্যে। তোমার পাশে অধরাকে আমার সহ্য হয় না। আমার তোমাকে চাই। এই জন্য ঐ সময়ে তোমাকে রাগিয়ে দিয়েছি ভূল করে। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়।

*অর্পার কান্না ভেজা কন্ঠ অয়নের মন গলাতে পারলো না। আসলে যার মধ্যে হৃদয় নেই। তার মন গলবে তা ভাবা যায়? অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বলল

— দেখো অর্পা আমি এখন নেশার ঘোরে আছি। মুখ থেকে বাজে নিকৃষ্ট কথা না বের হবার আগে কলটা কাটলে খুশি হবো।

— অয়ন প্লিজ! একটু কথা বলো আমার সাথে প্লিজ! ক্ষমা করে দাও আমায় প্লিজ!

— হুম করে দিয়েছি। এখন রাখছি।

— অয়……!

* অর্পার মুখের উপর কলটা কেটে দিলো অয়ন। কলটা কেটে দিয়ে অয়ন ফোনটা সোফার উপর ফেলে সিগারেটটা ঠোঁটে তুলতেই ভিশন শব্দ করে হেসে উঠলো সে। তার হাসির শব্দে পুরো রুমটা কেঁপে উঠছে মনে হচ্ছে। অয়নের হাসির কারনটা অজানা। তবে অয়নকে দেখে ভিশন অদ্ভুত লাগছে। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে কিন্তু ঠোঁট ভর্তি হাসি তার। অয়ন সিগারেটটা ফেলে দিয়ে মদ ভর্তি গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেললো। ড্রিংক শেষ করে অয়ন একা একা হাসতে হাসতে বলতে লাগলো “প্লিজ ছেড়ে যেও না আমায়! অনেক ভালোবাসি তোমায়? এতোটা ঠকিয়েছো তবুও আমি তোমাকে চাই। তুমি ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। বিশ্বাস করো প্লিজ! যেও না”। সেদিন আমিও এভাবে মিনতি করে কেঁদে ছিলাম রোহানার সামনে। ভিক্ষে চেয়েছিলাম ভালোবাসা। তবে আমার কপালে সেই বিন্দুমাত্র ভালোবাসাটাও জুটলো না। দূর দূর করে তারিয়ে‌ দেয়া হয়েছে আমায়। ঐ দিন হ্যাঁ সেই দিন আমি আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু না করি নাই। কারন যে কষ্ট আমি পেয়েছি। সেই কষ্ট অন্যকে দিয়ে আমি বুঝিয়ে দিবো ভালোবাসা কাকে বলে।

অয়ন আবারও ড্রিংক করতে লাগলো। অয়নের সাইকো ম্যান্টাল কথার কোনো মানে সে নিজেও জানে না। অয়ন ড্রিংক করে মাতাল হয়ে বিছানায় পরে রইল।

— কিরে মা হঠাৎ করে তুই বাড়ি চলে এলি! জামাই কোথায়?

অধরাকে দরজার সামনে দাড় করিয়ে রেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো তার সৎ মা। অধরাকে একা দেখতে পেয়ে যে উনি মোটেও খুশি হয়নি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অধরা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অধরাকে নিশ্চুপ দেখে তার মা একটু এগিয়ে আসলো অধরার দিকে। অধরার কাছে আসতেই উনি অধরার হাতে সুটকেস দেখে একটু অবাক হয়ে যায়‌। “সচরাচর অধরা এই বাড়িতে আসে না। আর যদিও আসে তবে সকালে এসে রাতে ফিরে যায়। অয়ন পছন্দ করে না একদমই অধরা এই বাড়িতে থাকুক। তবে আজ কেনো অয়ন এলো না আর‌ কেনোই বা অধরা সুটকেস নিয়ে এসেছে”? প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার। অধরা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ছলছল দৃষ্টিতে। আসলে মাতৃত্বের টান এই বিষয়টা সার্থের উর্ধ্বে। অধরা তার মা এর দিকে ভিশন আবেগপ্রবণ হয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। হঠাৎ করে অধরার সৎ মা অধরাকে উদ্দেশ্য করে ভারী কন্ঠে বলে উঠলো

— ওখানেই দাঁড়া। আগে বল জামাই কোথায়? ও আসেনি কেনো? কোনো ঝামেলা পাকিয়ে এসেছিস তাই না! জানতাম আমি। আমি আগেই বলে ছিলাম তোর বাবাকে যে আমরা যেই জায়গার ওমন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। কিন্তু না। আমার কথা কে শোনে? ঐ বড়লোক বাড়ির ভাত তোর কপালে সে সহ্য হবে না তা আমার অনেক আগে থেকেই জানা ছিলো। বল কি জন্য চলে এসেছিস? চলে এসেছিস নাকি গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছে?

অধরা তার সৎ মা এর চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতেই হবে যখন অয়নের সাথে আসতাম মনে হতো মেয়ের জন্য পাগল। আসলে তা নয়। যদি তাই হতো তবে আজ আমি বাড়ি আসর সাথে সাথে আমাকে কটাক্ষ করে কিছু বলতো না। দরজার সামনে থেকেই শুরু করে দিয়েছেন উনি। কি আর বলবো? সৎ মা তো এমনি হয় হয়তো। অধরা নিজের চোখের জল আড়াল করতে পারলো না। তার মা এর কর্কশ গলার কথাতে তার চোখ দিয়ে জল ঝরাতে যথেষ্ঠ। অধরার সৎ মা এর চিৎকারের শব্দে অধরার বাবা বাড়ির ভিতর থেকে তরি গড়ি করে বেরিয়ে এলো।

— এই সমস্যা কি তোমার? সাতসকালে শুরু করে দিয়েছো। কি হয়ে কি? বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছো কি জন্য?

কথাটা বলতে বলতে উনি দরজার কাছে চলে আসেন। অধরাকে দরজার সামনে দেখতে পেয়ে অধরার বাবার আনন্দে চোখে জল চলে‌ এলো। অধরাকে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলতে লাগলো

— মা তুই এসেছিস! কখন এলি? আমায় ডাকবি তো। আয় মা ভিতরে আয়। কি হয়েছে তোর? এমন কান্না করছিস কেনো মা?

অধরা তার বাবাকে দেখতে পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। দৌড়ে বাবার কাছে ছুটে চলে আসে অধরা। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো অধরা। অধরাকে শান্ত করতে তার বাবা বলতে লাগলো

— আরে কাঁদিস না মা। আমি ভেবেছিলাম কাল যাবো তোকে দেখে আসতে। কিন্তু তুই আজ চলে এসেছিস। এখন থেকে মাঝে মাঝে যাবো আমি। তুই কাঁদিস না মা।

অধরার বাবার কথা শেষ হতেই অধরার সৎ মা ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো

— আরে যেতে হবে না তোমায়। তোমার গুনধর মেয়েকে ওখান থেকে বার করে দিয়েছে। এখন তোমার ঘাড়ে বসে এই বাড়ির অন্ন ধংস করবে।

— আহহ রেহেলা থামবে তুমি? এখান থেকে যাও এখন। সব সময় এই‌ কানের কাছে প্যান প্যান সহ্য হয় না আমার।

— তা কি করে হবে? লাই দিয়ে দিয়ে নিজের মেয়েকে আরো মাথায় তোলো। যত্তসব নেকামি।

* রেহেলা বেগম চলে গেলো বকবক করতে করতে। অধরাকে তার বাবা বাড়িতে নিয়ে আসে। বাবাকে সব কিছু খুলে না বললেও এটুকু অধরা বলেছে যে আর ও বাড়ি যাবে না সে। অধরার কথা শুনে তার বাবা ২য় কোনো প্রশ্ন করেনি। রাতের খাবার খেয়ে অধরা বিছানায় বসে আছে। ঘুম আসছে না তার। অবাধ্য মনটা অয়নের খোঁজ করছে। বোবা মন কোনো ভাবেই বুঝতে চায় না যাকে খুঁজে চলেছে সে, আসলে সে তার কখনও ছিলো না। অয়নের কথা মনে পরতেই অধরার চোখের পাতা ভারী হয়ে যায়। অয়নের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো বেশ করে কাঁদিয়ে চলেছে তাকে।

* চোখ মেলেই অয়ন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১টা বেজে গেছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে অয়ন চেঁচিয়ে অধরাকে ডাকতে লাগলো

— অধরা, কোথায় তুমি? বেলা ১১টা বেজে গেছে আমায় ডেকে দিলে কি পাপ হয়ে যেতো? অফিসে যাবো কখন? অধরা!

অয়নের চিৎকারের শব্দে আজ কেউ সারা দিলো না। শোয়া থেকে উঠে বসে অয়নের মনে পরলো অধরা তো বাপের বাড়ি গেছে। অয়ন আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আজ আর অফিস যাওয়া হবে না। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন ফোনটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে যায় ৬৯ টা মিস কল এসেছে ফোনে। সব গুলো কল অর্পা করেছে। অয়ন ভালো করে ফোনটা ঘেঁটে দেখলো অধরার নাম্বারটা স্ক্রিনে আছে কিনা! কিন্তু অয়ন দেখলো অধরার নাম্বার থেকে কোনো কল আসেনি। অয়ন ফোনটা টেবিলের উপর রাখলো। আপন মনে বলতে লাগলো ” অধরার কথা কেনো ভাবছি আমি? ওর কলের অপেক্ষা আমি কেনো করছি? যত্তসব। গেছে ভালোই হয়েছে। পেইন থেকে মুক্তি থাকতে পারবো কিছুদিন”। অয়ন নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তা করে এসে অয়ন আবার নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে।

*বিকেল বেলা অধরা রুমে বসে কিছু কাজ করছে। হঠাৎ করে দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। অধরা দরজার দিকে এগিয়ে যায়। অধরা ভাবছে এই সময়ে হঠাৎ কে এলো? অধরা দরজা খুলে দিতেই বেশ অবাক হয়ে যায়। অধরা থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। অধরা দরজার ওপারে দেখতে পেলো…………………..

#চলবে………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here