ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -১১+১২

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ১১
#মাহিয়া_মুন

“এইযে তোমার দাদা মিস্টার মইনুল খান এবং আমার বাবা একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। মূলত তারা বিজনেস পার্টনার ছিলো। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। দুজনেই বিবাহিত ছিলো। একসময় তোমার দাদা-দাদুর কোল আলো করে তোমার বাবা আসে। সবাইতো খুব খুশি কারণ তোমার দাদার আর কোনো ভাই ছিলো নাহ্। আর তোমার বাবা হওয়ার পর তোমার দাদার আর কোনো সন্তান ও হয় নি। খান ইন্ডাস্ট্রির পুরো উত্তরাধিকারী তোমার বাবা। তোমার দাদা এবং আমার বাবা ভেবে রাখলেন আমার বাবার মেয়ে সন্তান হলে তোমার বাবার সাথে বিয়ে দিবে। তাতে অবশ্য সবাই খুব খুশি হলেন এইরকম চিন্তাধারা দেখে।
কিন্তু আফসোস তার ঠিক এক বছর পরই আমার বাবা মায়ের কোল আলো করে আমি আসি। এতে সবাই খানিকটা হতাশ হয়। তবে ততটা গুরুত্ব দেই নি কেউ। ভেবে নিয়েছে পরবর্তীতে দুই বন্ধুর যারই মেয়ে সন্তান হয় তার সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু উপর ওয়ালার কি লীলাখেলা, আমার মায়ের পেটে টিউমার ধরা পড়ে। অপারেশন করার সময় জানিয়ে দেয় আর সন্তান হবে নাহ। আর তোমার দাদাও তার বাবার অভ্যেস পেয়ে গেল, তোমার বাবার পর আর কোনো সন্তান ই হল না তোমার দাদার। মেয়ের আশায় থাকতে থাকতে একসময় আমি এবং তোমার বাবা ভার্সিটিতে ভর্তি হই। তোমার বাবাকে আমার ছোট থেকে কিছুতেই সহ্য হতো না। সবাই তোমার বাবাকেই পছন্দ করতো। স্কুল, কলেজে সব জায়গায় তোমার বাবা বেশি সম্মানিত ছিলো। ক্লাস টপার ছিলো বলে কথা। স্যার দের সম্মান দেওয়া, মেয়েদেরকে সম্মানিত চোখে দেখা মানে আদর্শ ছেলের গুন প্রায় সবই ছিল তোমার বাবার মাঝে। তবে এই জিনিসগুলো আমার নেকামো মনে হতো। মেয়েরা হচ্ছে পুতুল, তাদের আবার সম্মান কিসের। অনেক মেয়ের সাথেই আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। যা তোমার বাবা পছন্দ করতো নাহ।
আমরা যখন চতুর্থ বর্ষে তখন তোমার মা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে নতুন আসে। আমার তো এসব এ কোনো পাত্তা ছিলো না কিন্তু যখন পুরো ভার্সিটির সবাই বলাবলি করছিল যে তোমার বাবা মানে নোমান তোমার মাকে পছন্দ করে তখন বিষয়টা আমায় ভাবালো। আমি একদিন আড়ালে প্রার্থনাকে দেখি। তোমার মতই তোমার মা শ্যামবর্ণের ছিলো তবে এইটা মানতেই হয় যে অসংখ্য মায়াবী ছিলো। হাঁটু সমান চুল, তুমি তোমার মায়ের মতই হয়েছো পুরো।
তোমার মাকে দেখে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা জানিনা তবে তোমার বাবার থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে আমার প্রবল ভাবে জেগে ছিলো।
কিছুদিন যাওয়ার পর তোমার বাবার আগেই আমি তোমার মাকে প্রপোজ করেছিলাম কিন্তু তোমার মা আমায় রিজেক্ট করেছিল এবং নিজে গিয়ে তোমার বাবাকে প্রপোজ করেছিল। পুরো কলেজের সামনে অপমানিত হয়েছিলাম। অনেক চেষ্টা করেছিলাম তাদের আলাদা করার কিন্তু সফল হয়ে উঠি নি। তোমার বাবা সব কিছুতেই এগিয়ে ছিলো।
একসময় আমাদের ভার্সিটি লাইফ শেষ হয়। আমি আমার বাবার কোম্পানি তেই জয়েন দেই। ভেবেছিলাম তোমার বাবাও তাই করবে কিন্তু সেতো আলাদা।পুলিশ এ জয়েন করে কিছুদিনের মাঝেই নিজের যোগ্যতা দিয়ে S.H.O পদ অর্জন করে নিল।
কি প্রশংসা সবার মুখে তোমার বাবার নামে। রাগে ফেটে যাচ্ছিলাম আমি।
S.H.O পদে যাওয়ার পর তোমার বাবা বিয়ে করে নেয় তোমার মাকে।
ওইসময় হটাৎ করে দেশে নারী নিখোঁজ হওয়া শুরু হলো। চারদিকে যুবকরা মাদকাসক্তে জড়িয়ে যাচ্ছিল। তোমার বাবা উঠে পরে লেগেছিল আসল কালপ্রিটকে ধরার জন্য। তবে যে এই কাজটা করছিল সে বুঝতে পেরেছে তোমার বাবা প্রায় তাকে ধরে ফেলবে।
সে তোমার বাবাকে মেরে ফেলতে সুন্দর একটি প্ল্যান করেছিল।
একদিন তোমার বাবা এবং দাদা দুজন গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছিল। কিন্তু মাঝ রাস্তায় তোমার দাদার পানির পিপাসা লাগে অনেক। তোমার বাবা গাড়িতে পানি না পেয়ে গাড়ি সাইডে রেখে পানি আনার জন্য গাড়ি থেকে বের হয়। গাড়ি থেকে অনেকটা দূরত্বে যেতেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে যায়। কারণ গাড়িতে টাইমার বম ফিট করা ছিলো যাতে তোমার বাবা মারা যায়। কিন্তু প্ল্যান ফল্ট হয়ে যায়। তোমার বাবার জায়গায় তোমার দাদার মৃত্যু হয়। তোমার বাবা এতে কিছুটা ভেঙে পরে। তবে যখন আবারো পুনরায় নারী নিখোঁজ হওয়া শুরু হয় তখন তোমার বাবা আধা জল খেয়ে নেমে পরে আসল আসামিকে ধরতে। তোমার বাবা বুঝে গিয়েছিল যে গাড়িতে বম রাখা হয়েছিল তাকে মরার জন্যে।
একসময় তোমার বাবা তার লক্ষ্যে পৌঁছেই যায়। ধরে ফেলে মেন আসামিকে। সে আর কেউ ছিল না, সে ছিলো আমার বাবা। সব সত্যি একসময় বাধ্য হয়ে বলে দেয় বাবা। আর আদালত থেকে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। আমি অনেক অনুরোধ করেছি তোমার বাবাকে যাতে ফাঁসির রায় থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যাবস্থা করে। কিন্তু তোমার বাবা সেইটা করে নি। আমাকে বাবা হারা করেছিল, আমার মাকে বিধবা করেছিল। সেইদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমার বাবা তোমার বাবাকে মারতে পারে নি তো কি হয়েছে আমিতো আছি।
এর কিছুদিন পরই তুমি এবং তোমার ভাই আসো পুরো খান মহল আলোকিত করে। খুশির জোয়ার বয়ে যায় খান মহলে। হাসি আনন্দের মাঝেই কেটে যায় 2 বছর। তবে আমিতো ভুলি নি আমার প্রতিজ্ঞার কথা। তার মধ্যে আবার বাবার আর একটা ইচ্ছে ও পূরণ করা যে বাকি ছিলো।
তোমার এবং তোমার ভাই এর বয়স 2 বছর চলছে। একদিন তোমার বাবা তোমায় নিয়ে বাহিরে হাঁটতে বের হয়। হাঁটতে হাঁটতে তোমায় নিয়ে নদীর পার চলে আসে। ঠিক তখনি তোমার বাবার সামনে আমি হাজির হই। তোমার বাবাকে ছুরি দিয়ে আগাত করতে যাই , তবে সে সরে যাওয়ায় তার হাতে লাগে ছুরি। সে তোমায় বাঁচাতে একটি ট্রলারে উঠে পরে। আমি উঠার আগেই ট্রলার ছেড়ে দেয়। আমি অন্যটায় উঠে যাই। নদীর ওপার তোমার বাবা ট্রলার থেকে নেমে তোমায় নিয়ে নদীর এক্ কিনারে গিয়ে বসে। সে ভাবেনি যে আমিও অন্য ট্রলারে করে আসছি। আমি ট্রলার থেকে নেমে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকি।
তখন রাত 12 টা। চারদিক নীরব হয়ে ছিলো। তোমার বাবা তোমায় নিয়ে সেখানেই ছিলো হয়তো ভেবেছিল সকালের ট্রলারেই তোমায় নিয়ে বাসায় ফিরবে।
আমি ঠিক পিছে থেকে গিয়েই তার পিঠে ছুরিটা চালিয়েছিলাম। তবুও তোমায় নিয়ে ছুটছিল। বেশি দূর যেতে পারে নি। আবারো ছুরি মেরেছিলাম। এইভাবেই তোমার বাবাকে আমি টুকরো টুকরো করেছিলাম। হাত,পা, মাথা, দেহ আলাদা করেছিলাম।
আহ কিযে শান্তি লেগেছিল তখন। তোমায় মারতে পারি নি কেনো যেন। সেই নির্জন নদীর পাড়ে তোমায় একা ফেলে তোমার বাবার টুকরো গুলো নিয়ে সেই রাতেই এপার এসে বিভিন্ন জায়গায় একটা একটা টুকরো রেখেছিলাম। তারপর দিন পুরো শহর কেপে উঠেছিল তোমার বাবার এইরকম মৃত্যু তে। তোমার নানা তোমার মাকে সামলাতে না পেরে তোমার পুরো মা এবং ভাইকে নিয়ে পারি জমায় সুদূর জার্মানি। সেখানেই পরবর্তীতে তোমাদের খান ইন্ডাস্ট্রি ট্রান্সফার করে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তোমার মা-ভাইজার্মানির বার্লিন শহরে আছে। গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছে। ”
এই বলেই লোকটা নিহার দিকে তাকালো। নিহা একদম স্থির চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে যেনো সবকিছুই তার জানা। তবে চোখ ভীষণ লাল হয়ে আছে। লোকটি ভ্রু কুচকে নিহার দিকে তাঁকিয়ে হেসে হটাৎ নিহার গুলি বিদ্ধ হাতটি চেপে ধরলো।
নিহা কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না। স্থির চোখেই তাকিয়ে রইলো সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে।
কিছুক্ষন এভাবে যেতেই নিহা হটাৎ করেই কোমড় থেকে ছুরি বের করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার বুক বরাবর চালিয়ে দিলো।
লোকটি বুক চেপে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।
নিহা লোকটার পকেটে হাত দিয়ে গুলি নিয়ে লোকটির দু পায়ে পরপর দুটি গুলি করলো। লোকটি ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো। নিহা নিজের হাতের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো রক্ত জড়ছে। নিজের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে আবারো হাতে পেঁচিয়ে নিল। লোকটির সামনে ছুরি হাতে নিয়ে বসলো। হালকা হেসে বলে উঠলো,
“ঠিকি বলেছেন মিষ্টার আদিল এহসান। সবটাই সত্যি বলেছেন। তবে এর মধ্যে কিছু কথা স্কিপ করেছেন। সেইটা নাহয় আমিই বলি। আমার দাদার সাথে আপনার বাবার বন্ধুত্ব নামে যে সম্পর্কটা হয়েছিল সেইটা আমার দাদার দিক থেকে বন্ধুত্ব হলেও আপনার বাবার দিক থেকে কিন্তু টা ছিলো নাহ। খান ইন্ডাস্ট্রির প্রতি লোভ হয়েছিল আপনার বাবার। আপনার বাবা চেয়েছিলো ভালো মানুষের মুখোশ পরেই খান ইন্ডাস্ট্রি হাতিয়ে নিতে।কিন্তু যখন দেখলো কন্যা সন্তান হচ্ছে নাহ্ তখন অন্য উপায় অবলম্বন করলো। আপনি বললেন না প্ল্যান ফল্ট হয়ে গেছে, মিথ্যে বললেন। প্ল্যান ফল্ট হয়েছে ঠিকই তবে টা আংশিক। এবং আপনার বাবার কথায় গাড়িতে বম টা আপনিই ফিট করিয়েছিলেন। আপনার বাবার করা কালো কাজে আপনিও তাকে সহায়তা করতেন। যেইটা আপনার বাবা গত 19 বছর আগে আদালতে বলে নি। আর আপনার বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল আমাদের খান পরিবার শেষ করে দেওয়া। খান ইন্ডাস্ট্রি আপনার নামে করে নেওয়া। আপনি বাবাকে মেরেছেন। কিন্তু পরে জানতে পারলেন বাবা পুরো খান ইন্ডাস্ট্রি আমাদের 2 ভাই বোনের নামে উইল করে দিয়েছে। আর আমার বয়স সীমা দিয়েছে 18 এবং আমার ভাই এর 24। যার জন্য এতদিন আপনি অপেক্ষায় ছিলেন। কি ঠিক তো মিস্টার আদিল এহসান!”
মেঝেতে লুটিয়ে থাকা আদিল এহসান ভাঙা কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“তুমি জানলে কিভাবে এসব?”
“আসলে আপনি যেই লোকটাকে আমাকে ফলো করতে পাঠিয়েছিলেন, সে জানতোই না যে আমিও ঠিক তাকেই ফলো করি। অনেকটা চোরের ঊপর বাটপারী। আর তাকে ফলো করেই এসব জানতে পারলাম। আর এই রুমে যে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন আমার উপর নজর রাখার জন্যে সেটাও জানি। তাইতো একটু না জানার অভিনয় করতে হলো আমায়। আসলে আপনি আমার বাবার বয়সী হলেও বুদ্ধিতে আমার থেকেও ছোট মনে হয়। কাল রাতে আমার সামনেই এইখানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগালেন। অবশ্য আপনারও ভুল না এইটা। আপনিতো ভেবেছেন আমার জ্ঞান ফিরে নি। আর সিসিটিভি ক্যামেরা আপনার ফোনের সাথেই কানেক্ট করলেন। তাও এইখানে বসেই।তবে হ্যা, সবটা জানলেও পরিবারের কারও ছবি দেখতে পারি নি আগে। যেটা কাল দেখলাম। আর মা-ভাই তারা কোথায় সেটাও জানতাম না। আজ সেটাও জেনে নিলাম। তবে আমি এতটাও ভালো না যে আইনের হাতে তুলে দিবো আপনায়। এই শহরে আইনের আওতায় সঠিক কোনো বিচার নেই।”
এই বলে নিহা আদিল এহসানের বুক বরাবর আরো একবার ছুরি চালিয়ে দিল।
ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো মিস্টার আদিল এহসান।
নিহা হেসে বলে উঠলো,
“নাহ আপনায় এইভাবে মারবো না। এমন ভাবে মারবো যাতে সাপ ও মরবে , লাঠিও ভাঙবে না।”
এই বলে নিহা উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

#চলবে#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ১২
#মাহিয়া_মুন

দিন পেরিয়ে রাতের কালো আঁধারে ধরণী অন্ধকারে নিজেকে বিলিয়ে দিল। কেউ কেউ এই আঁধারের অপেক্ষায় থাকে তো কেউ এই আঁধার কেটে ভোরের সূর্য উঠার অপেক্ষায় থাকে। এই নিকষ কালো রাতের আঁধারের মতই কারো জীবন মুড়িয়ে থাকে কালো আঁধারে।
নিহা তাকিয়ে রইলো নিজের হাতের দিকে। হাত থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে এখনো। সকাল থেকে সে এভাবেই বসে আছে।এখন রাত প্রায় 11 টা বেজে 30 মিনিট। তার সামনেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে মিস্টার আদিল এহসান। যাকে সে এই নিয়ে তৃতীয় বার ছুরিকাঘাত করেছে।
নিহা নিজেকেই নিজে বলে উঠলো,
“নাহ্, আর সময় নেই। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে যাতে কেউ কিছু জানতে না পারে ঠিক 19 বছর আগের সেই রাতের মত।”
এই বলে নিহা আদিল এহসানের ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে নিল। একটি দীর্ঘ মেসেজ লিখে পরপর কয়েকজনের কাছে পাঠিয়ে দিল। তার ঠিক কয়েক মিনিটস পরই নিহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো, তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য যেই গার্ডস গুলো রাখা হয়েছে তারা সবাই মেন গেটে তালা দিয়ে চলে যাচ্ছে।
নিহা মিস্টার আদিল এহসানের দিকে তাঁকিয়ে বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
“আপনার মতো আপনার গার্ডস গুলোতো দেখছি বোকা। একবার চেক করে গেলো নাহ্ রুমটা। অবশ্য এইটা আমার জন্যই প্লাস পয়েন্ট।”
এই বলে নিহা দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে চারদিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিল। এই জায়গাটা সে চিনে। যদিও আগে চিনত না। গত কয়েক দিন আগেই তাকে ফলো করা লোকটাকে ফলো করেই এইখানে এসেছিল। এই জায়গাটা সেই নদীর পারের অনেকটা কাছাকাছি। নিহা গ্যারেজের পিছের সাইডে গিয়ে দাঁড়ালো। দুই টা কাঠ সরিয়ে একজন মানুষ ওপর সাইডে যাওয়ার মত জায়গা করে নিল। তার কিছুক্ষন পরই মিস্টার আদিল এহসানকে কাধে ভর দিয়ে নিয়ে আসলো। ওপর সাইডে বের করে নিজেও বের হয়ে গেলো গ্যারেজ থেকে। সিসিটিভি ক্যামেরা ও ভেঙে দিয়ে এসেছে। আদিল এহসানকে নিয়ে আসতে আসতে এসে পৌঁছালো সেই নদীর তীরে। কিছুক্ষন নিস্পলক তাকিয়ে রইলো নদীর পানিতে। হয়তো রাত 1 টা কি 2 টা বাজে। মানুষজনের ছিটে ফোঁটা ও নেই আশেপাশে। তার উপর সন্ধ্যা থেকে প্রচুর বৃষ্টির কারণে পরিবেশ যেন স্তব্ধ হয়ে আছে।
নিহা নদীর পানি নিয়ে মিস্টার এহসানের চোখে মারলো।
মিস্টার আদিল এহসান আসতে আসতে চোখ খুলে সামনে তাকালেন। অন্ধকারে বুঝতে পারলেন না তিনি কোথায় আছে। পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলেন।
নিহা আদিল এহসানের পাশে বসে বলে উঠলো,
“কি হলো আংকেল, ভয় পাচ্ছেন। আরেহ এইটা আমি মিস নিহা খান। আর এই মুহূর্তে আপনি এবং আমি সেই নদীর তীরে আছি। চারদিকে তাকিয়ে দেখুন।”
মিস্টার এহসান আসতে আসতে বলে উঠলো,
“আমাকে এইখানে কেনো এনেছিস তুই? ছাড়বোনা তোকে আমি। আমায় আঘাত করা।”
“হুস, শব্দ করবেন নাহ। কাল থেকে অনেক কথা বলেছেন। এইবার চিরশান্তি অনুভব করার জন্য প্রস্তুত হন। মনে আছে ঠিক 19 বছর আগে এইখানে আমার বাবাকে মেরেছিলেন। ঠিক এইখানে আমায় পরিবার হারা করেছিলেন। আর আজ ঠিক এইখানে আপনাকে আমি পৃথিবী হারা করবো।”
এই বলে নিহা মিস্টার আদিল এহসানের শরীলে গ্যারেজ থেকে আনা কেরোসিনের বোতল থেকে কেরোসিন ঢালতে লাগল।
লুটিয়ে থাকা আদিল এহসান আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠলো,
“কি করছিস তুই? পাগল হয়ে গেছিস তুই।”
নিহা হাসতে হাসতে বললো,
“হয়তোবা পাগল হয়ে গেছি। পাগলের পাগলামি দেখেন কতটা ভয়ংকর।”
এই বলে নিহা একটি দিয়াশলাই এর কাঠিতে আগুন জ্বালিয়ে তা মিষ্টার এহসানের শরীলে ছুড়ে মারলো।
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আদিল এহসানের পুরো শরীর। চারদিকে ভেসে বেরালো আদিল এহসানের যন্ত্রণাময় চিৎকার।
নিহা অনুভূতিহীন চোখে তাঁকিয়ে রইলো জ্বলতে থাকা আদিল এহসানের দিকে। একসময় চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেল। নিহার সামনে পরে রইলো আদিল এহসানের জ্বলে যাওয়া শরীলটা।
হাসতে হাসতে বসে পড়লো আদিল এহসানের জ্বলে যাওয়া দেহের পাশে। হটাৎ করেই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো। আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো,
“দাদাভাই, বাবা দেখো, তোমাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নিয়েছি। বাবা তোমার হয়তো পছন্দ হয় নি তাইনা যে তোমার মেয়ে নিজ হাতে খুন করলো। কিন্তু এছাড়া আমার যে আর উপায় ছিল না। এই দেশে যে আইনের সুষ্ঠ বিচার নেই। পরে আমার মা-ভাই কে এই লোকটা ছাড়তো না।”
এই বলে নিহা নিজের চোখের পানি মুছে নিলো। আদিল এহসানের দেহ টাকে টেনে নিয়ে নদীর পানিতে ফেলে দিল। আসতে আসতে তলিয়ে গেলো আদিল এহসান নামক লোকটির অস্তিত্ব।
নিহা ধীরে ধীরে প্রস্থান করলো সেই জায়গাটি। পিছনে রেখে এলো তার প্রতিশোধ কে।
*
*
*
আদ্রিজ এবং মেঘ গাড়িতে বসে আছে। তারা মাত্রই পুলিশ দের সাথে কথা বলে এসেছে। পুলিশরা এখনো নিহাকে খুজে পাওয়ার কোনো ক্লু পায় নি।
মেঘ হতাশ কণ্ঠে বলে উঠলো,
“কি করবো ভাইয়া? দুই রাত এক দিন পার হয়ে গেলো নিহার নিখোঁজের। কোনো ক্লুই পাওয়া যাচ্ছে না নিহাকে খুজে পাওয়ার।”
আদ্রিজ কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মেঘ হতাশ চোখে তাঁকিয়ে রইলো তার ভাই এর দিকে। এই দুই দিনে তার ভাই যেন একদম চুপ হয়ে গেছে।
মেঘ মনে মনে বলে উঠলো,
“আল্লাহ্ দয়া করে নিহার খোঁজ পাইয়ে দেও।”
আদ্রিজ গাড়ি চালানো অবস্থায় নিজের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরা পানি মুছে নিলো। তার চোখ বারবার পানিতে ঘোলাটে হয়ে আসছে। নিহার নিখোঁজ হওয়ার পিছনে সে নিজেকেই দোষারোপ করছে।
হটাৎ বেখেয়ালি কেউ একজন তার গাড়ির সামনে এসে পড়লো। দ্রুত ব্রেক করায় সামনের লোকটির যে ততটা ক্ষতি হয়নি বুঝতে পারল।
মেঘ এবং আদ্রিজ দুজনেই তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গেল।
সামনে গিয়ে তারা যা দেখলো তাতে দুজনেই স্তব্ধ হয়ে গেল। আদ্রিজ যেনো অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে। অপলক তাকিয়ে রইলো রাস্তায় লুটিয়ে থাকা নিহার দিকে। মেঘের চিৎকারে হুস ফিরে পেলো। দৌঁড়ে গিয়ে নিহার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে নিলো।
“এই মেয়ে চোখ খুলো। এই, নিহা…. নিহা চো…. চোখ খুলো।”
নিহা হালকা চোখ খুলে আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
মেঘ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“ভাই ওকে হসপিটাল নিতে হবে। হাতে কেউ গুলি করেছে মনে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠো।”
আদ্রিজ নিহাকে কোলে তুলে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। মেঘ দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here