ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব -১২

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#লেখনী_আলো_ইসলাম

“১২” (বোনাস পার্ট)

–” রুহি আস্তে আস্তে রোহানের দিকে এগিয়ে যায়। রুহির সাথে অনিতা পায়েলও যায়। রুহি সোজা উপরে উঠে যায় ছাদে রোহানে কাছে। কিন্তু অনিতা’রা আর আগায় না সেদিকে। রুহি ছাদের দরজার কাছে আসতেই রোহান একটা হাসি দেয়। রুহি নিরবে সামনে এগিয়ে যায়।

– আমি জানতাম রুহি সোনা তুমি আমার ক্ষতি কখনো চাও না। ভালোবাসো যে ভীষণ তাহলে কেনো প্রকাশ করছো না।

– রুহি রাগী লুকে রোহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

–” কেনো আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছো রুহি। মানছি আমি ভুল করেছি তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি কিন্তু এই সবের পেছনে ছিলো একটা উদ্দেশ্য তোমাকে সামনে এগিয়ে দেওয়া। তোমার সাফল্যের পথে যেনো কোনো কিছু বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। আমি চাইনি আমার ভালোবাসা তোমার পড়াশোনারর বাধা হয়ে দাঁড়াক। কারণ তুমি অনেক দুষ্টু আমি জানি। যদি জানতে আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার উপর দুর্বল তাহলে তুমি আরো দুষ্টামি করতে কারো কথা শুনতে না। তাই আমি সব সময় নিজেকে কঠিন ভাবে উপস্থাপন করেছি তোমার সামনে। কিন্তু এখন আমি তোমাকে সেই সব ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে আমার ভালোবাসার বাহুডোরে রাখতে চাই প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে। এইভাবে আর অভিমান করে থেকো না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না তোমার উপেক্ষা প্লিজ রুহি।

– রোহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে রুহি রেগে চড় বসিয়ে দেয় রোহানে গালে। রাগে শরীর রিরি করছে যেনো রুহির।
– তামাশা হচ্ছে এখানে। সব কিছু নিজের মতো করে করতে চাও। কারো অনুভূতির মুল্য নেই তোমার কাছে। তোমার যেমনটা মনে হবে তুমি তেমনটাই করবে তাই না। যখন ভালোবেসে ছিলাম তখন তো দূরে দূরে রেখেছো তাহলে এখন কেনো দূরে যেতে চাচ্ছি তত কাছে আসার চেষ্টা করছো। খেলার পুতুল মনে হয় আমাকে। ইচ্ছে হলে বউ সাজিয়ে ঘরে তুললে ইচ্ছে হলে ছুড়ে ফেলে দিলে। রোহান ছলছল চোখে রুহির সকল অভিযোগ শুনছে। রুহির চোখ দিয়েও অঝোরে পানি পড়ছে কথা গুলো বলতে গিয়ে।

– এমন ভালোবাসো আমায় যে ভালোবাসার মানুষটার চরিত্র নিয়ে কথা বলতেও একবার বাধেনি তোমার। নোংরা ভাবো আমাকে। অন্য মেয়েদের সাথে তুলনা করো আমাকে। আমার নাকি ছেলেদের স্পর্শ ভালো লাগে তার জন্য কি করলে তুমি আমার সাথে। আমাকে স্পর্শ করে আমার অনুভূতি গুলো তুচ্ছ করে দিলে চিৎকার করে বলে রুহি। রোহান এখনো এক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু এবার চোখে জমা থাকা পানিটা গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।

– হ্যাঁ ভালোবাসি আমি তোমায়। ভীষণ ভালোবাসি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে ভালোবাসি আমি তোমাকে। কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে পারিনি কারণ ভয় পেতাম তোমায়। তোমার রাগ জেদ আমাকে দমিয়ে দিতো সব সময় আবার কখনো কখনো তোমার করা কেয়ার গুলো আমাকে ভাবাতো। কিন্তু তুমি তার পরোক্ষনে আমার সব ভাবনা চিন্তা ভুল করে দিয়ে এটা প্রমাণ করতে যে তোমার মধ্যে কোনো ভালোবাসা নেই আমার জন্য। আর এখন কিনা তোমার ভালোবাসা উথলে উঠছে আমার জন্য। হঠাৎ করে ভালোবাসা জেগে উঠেছে তোমার মধ্যে।

– ভালোবাসা স্বপ্ন ভাঙ্গে না নতুন করে তৈরি করে। ভালোবাসা মানুষের অনুভূতি, ইচ্ছা শক্তি আরো বাড়িয়ে দেয়। ভালোবাসার জন্য মানুষ সব করতে পারে সেখানে তোমার #ভালোবাসার_লুকোচুরি আমার মধ্যে শক্ত দেয়াল তুলে দিয়েছে। আমার ভালো করতে গিয়ে তুমি আমার অনুভূতি গুলো কে মেরে ফেলেছো। প্লিজ আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। আর বিরক্ত করো না আমায়। আমি চাই না তোমায় এটা কেনো বুঝতে পারছো না তুমি। কথা গুলো বলতে গিয়ে থেমে থেমে যায় রুহি। বুকের মধ্যে তোলপাড় হচ্ছে তাও নিজেকে শক্ত করে কথা গুলো বলে রুহি। রোহান স্তব্ধ হয়ে রুহির সকল কথা শুনছে।

– রুহির বলা শেষের কথা গুলো রোহানের বুকে তীরের মতো বিধে গিয়ে। হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। অনুভূতি শুন্য হয়ে গেছে যেনো রোহান।
– রুহি কথা গুলো বলে মুখে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে।

– রোহান নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে বেশ তাই হবে রুহি সোনা। রোহানের কথায় রুহি অবাক হয়ে তাকায় রোহানের দিকে। কান্না থেমে যায় চোখে পানি ছলছল।

– তুমি যখন চাওনা আমাকে, আমার জন্য যখন তোমার মধ্যে ভালোবাসা নেই, আমার ভালোবাসা গুলোকে যখন বিরক্তই মনে হয় তোমার কাছে তাহলে আমি আর আসবো না তোমার সামনে ভালোবাসার দাবি নিয়ে। আর বলব না কখনো ভালোবাসি রুহি সোনা। তবে একটা কথা কি জানো বেঁচে থাকতে হয়ত তোমার দূরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না অনেক ভালোবাসি তো। ঠিক আবার কাছে আসতে চাইবে এই বেহায়া মন কিন্তু আমার মৃত্যু ঠিক পারবে তোমার থেকে দূরে রাখতে আমাকে। তোমাকে আর বিরক্ত করতে আসবো না তখন। রোহানের এমন কথায় রুহি চমকে উঠে অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে আছে রোহানের। কি বলছে এই সব রোহান। কি করতে চাইছে সে।

– আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিলো না রুহি। শুধু প্রকাশ করার মাধ্যমটা আলাদা ছিলো। আমি মানুষটাই যে অন্য রকম। কিন্তু আমার ভুল সব। আমি নিজেকে উপস্থাপন করতে পারিনি কখনো। তোমার কোনো দোষ নেই আর না ভুল। ভালো থেকো সব সময় আর কেউ বিরক্ত করবে না তোমাকে৷ আজ থেকে তুমি মুক্ত রুহি পাখি বলতে বলতে পিছু হুটে রোহান। তাই দেখে রুহি ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকায়।

– কি করছো ভাইয়া। তুমি কি করতে চাইছো। পিছু হুটছো কেনো। পড়ে যাবে তো তুমি। রুহির এমন অস্থিরতা দেখে মুচকি হাসে রোহান।
– ভাইয়া প্লিজ না… বলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই রুহি কিন্তু রোহান বলে একদম না রুহি। সামনে এগুলে কিন্তু আমি এখান থেকে লাফ দেবো। আমি তোমার ভালোবাসাময় দৃষ্টির আর্তনাদ দেখে মরতে চাই অন্তত এইটুকু আশা আমার পুর্ণ হতে দাও। আর তো কিছুই চাইনা আর না কখনো চাইবো।

– রোহানের এমন কথায় রুহি এবার চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলে ভাইয়া প্লিজ পাগলামি করো না। আমি মন থেকে বলিনি কথা গুলো। আমি তোমাকে ভালোবাসি যে অনেক। তোমার থেকে দূরে কিভাবে যায়। প্লিজ এমন করো না। তোমার রুহিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা অন্তত আর ভেবো না। আমি ভুল বলেছি। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখতে চাই ভাইয়া প্লিজ না।

– অনেক দেরি হয়ে গেছে রুহি পাখি। বড্ড দেরি হয়ে গেছে বলে রোহান উল্টো দিকে ঘুরে লাফ দিতে যাবে তখনই রুহি দৌড়ে গিয়ে রোহানের হাত টেনে ধরে। আর এতে দুজনে পড়ে যায় নিচে টাল সামলাতে না পেরে। রোহান ছাদের সাথে থাকা একটা পাইপকে আঁকড়ে ধরে এক হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে রুহির হাত ধরে আছে। রোহানের নিচে রুহি আছে। রুহি রোহানের হাত ধরে আছে শক্ত করে।

– এটা তুই কি করলি রুহি। যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি হতো ষ্টুপিড। এখন কি করবো আমি। এভাবে ঝুলে থেকেও বকাবকি করতে পারে সেটা রোহানকে না দেখলে বুঝতোই না রুহি। অবাক হয়ে বলে তুমি এই পরিস্থিতিতে থেকেও আমাকে বকাঝকা করবে ভাইয়া। প্লিজ আমাকে তুলো এখান থেকে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এভাবে থাকতে।

– রুহির কথায় রোহান চিন্তিত হয়ে বলে কিছু হবে না রুহি৷ আমি থাকতে তোর কিছু হতে দেবো না একটু ভরসা রাখ আমার উপর। রোহান এবার চিৎকার করে ডাকতে থাকে সবাই। এইদিকে অনিতা পায়েল দৌড়ে আসে এদের এমন চিৎকার শুনে। ছাদে এসে কাউকে না দেখে ঘাবড়ে যায় দুজন। নিচ থেকে আওয়াজ আসায় দুজন দৌড়ে ছাদের কিনারায় এসে রুহি রোহানকে ঝুলে থাকতে দেখে অস্থির হয়ে পড়ে ওদের তুলতে। বাড়ির কেয়ারটেকার সহ এসে সাহায্য করে ওদের উপরে তুলতে।

– দুজনকে উপরে তোলার পর রুহি ছুটে গিয়ে রোহানকে জড়িয়ে ধরে বলে এমন পাগলামি কেউ করে। আমার কি হতো তোমার কিছু হলে একবারও ভাবলে না। এখনো স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের চিন্তা করলে। আমার ভালোবাসাটা তোমার চোখে পড়লো না এখনো তাই না। আমার অভিমানী তোমার কাছে বেশি থায় পাই সব সময়।

– রুহির কথায় রোহান মুচকি হেসে বলে প্রিয় মানুষের ইচ্ছের মুল্য দিতে হয়। যেখানে তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাও সেখানে তোমার আশা অপুর্ণ রাখি কি করে বলো?

– রোহানের কথায় রুহি এলোপাতাড়ি ভাবে রোহানের বুকে মারতে থাকে৷ দূরে যেতে বলেছি বলে সত্যি দূরে যেতে হবে।

-“অনিতা পায়েল এদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা দেখে মুচকি হাসে। তবে তারাও এবার শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে একটা। অবশেষে সব ঠিকঠাক হলো। রুহিও অনেক কষ্টে ছিলো এটা অনিতা পায়েল দুজনেই বুঝতে পেরেছিলো। তাই তারা চেয়েছিলো এই কষ্ট থেকে দুজনেই মুক্তি পাক৷ দুজনের ভালোবাসার লুকোচুরি শেষ হয়ে কাছাকাছি আসুক। তাই তো তাদের এত চেষ্টা।

– আচ্ছা এবার মাফ কর বইন। নিজ হাতে মেরে ফেলার জন্য কি আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসলি অসহায় ফেস করে বলে রোহান।। রোহানের কথায় রুহি মুচকি হেসে বলে হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো তোমাকে আমি খুন করবো এবার তবে সেটা ভালোবাসা দিয়ে বলে আবার জড়িয়ে ধরে রোহানকে। রোহানও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে আমি তাহলে বারবার খুন হতে রাজি।

– পায়েল গলা খেকাড়ি দিয়ে বলে আপনাদের প্রেম কাহিনি শেষ হলে বলবেন দয়া করে। তাহলে আমরা ফিরতাম এখান থেকে। পায়েলের কথায় রুহি লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দেয় রোহানকে। রোহানও হাসে তারপর ওদের সামনে এসে বলে থ্যাংক ইউ। তোমাদের জন্য আমাদের ভালোবাসাটা পুর্ণতা পেলো আজ। তোমরা সাহায্য না করলে আজো হয়ত অভিমান নিয়ে বসে থাকতো ওই পাগলীটা। কখনোই বুঝাতে পারতাম না ওকে।
– পায়েল অনি হেসে বলে ইটস ওকে ভাইয়া। তবে আমার ফ্রেন্ডকে আর কষ্ট দিতে পারবেন না কিন্তু হুম। রোহান মুচকি হেসে বলে নিজেকে নিজে আঘাত করে এটা হয় নাকি কখনো। ওতো আমার প্রাণ ওর কষ্ট মানে আমার নির্ঘাত মৃত্যু।

– আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে অনেক কথা এবার চলুন বলে অনি পায়েল এগিয়ে যায় রুহি রোহান পিছনে আসে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here