ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -২৩

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব — ২৩
*
রাতে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। পুরো টেবিলটাই ধরে খাবারে ভরপুর। মাংসের বাটি ধ্রুবর সামনেই ছিলো। কিন্তু সে ভেবে রেখেছে নিজে থেকে একদমই নিবে না। রূপা নিজের হাতে তার পাতে তুলে দিলে তারপরই খাবে সে। ইদানীং রূপা তাকে এড়িয়ে চলছে। যেটা ধ্রুবর মেনে নেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা ওর সাথে এমন বিহেভ করছে কেন? এমনভাবে এড়িয়ে চলছে কেন? সে কী বুঝে না তার এমন বিহেভিয়ার এর জন্য তার কতটা কষ্ট হয়?
ধ্রুব হালকা কেশে রূপার উদ্দেশ্য বলল,

-‘রূপা, আমার একটু মাংস লাগবে।’

একথা শুনে রূপার চোখ গেল ধ্রুবর দিকে। বেশ মায়াভরা চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে নিলুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রূপা। নিলু ধ্রুবর পাশের চেয়ারেই বসেছে। আর রূপা ফারজানা বেগমের সঙ্গে ওদের সামনাসামনি বসেছে। রূপা বলল,

-‘নিলু, তুমি তো উনার পাশেই বসে আছো। তাইলে তুমিই মাংসটা বেড়ে দাও।’

-‘ঠিকাছে ভাবি।’

বলেই নিলু ধ্রুবর প্লেটে কয়েক পিচ মাংস, আলু এবং সে সঙ্গে একটু ঝোল বেড়ে দিলো। রূপার এহান কান্ডে হতম্ভিত হয়ে গেল ধ্রুব। কার দেয়ার কথা ছিলো, আর কে দিলো?

ধ্রুব আহত চোখে রূপার দিকে তাকাল। রূপা বরাবরই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবর এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে ভাত না খেয়েই চেয়ার ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো। ফারজানা পিছন থেকে তাকে ডেকে অবাক হয়ে বললেন,

-‘একী রে? ভাত না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস? আয় বস। খেয়ে নে।’

ধ্রুব প্রথমেই রূপার দিকে তাকালো। তখনও রূপার দৃষ্টি নিচের দিকে। ধ্রুব রাগ এবার আরো বেড়ে গেল। বলল,

-‘আমার খাওয়ার ইচ্ছা উবে গেছে।’

বলেই কারো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ধ্রুব থরথরে পায়ে হেটে চলে গেল। ওর এমন আচরণে সবাই অবাক। অপরদিকে রূপা হাসতে হাসতে পুরো শেষ। কোনোরকম হাঁসিটা চাপিয়ে রাখলো সে। মা এবং নিলুকে একদমই বুঝতে দেয়া যাবেনা যে সে হাঁসছে।

ফারজানা বললেন,

-‘ছেলেটার হঠাৎ কী যে হলো?’

রূপা উত্তর দিলো,

-‘কি জানি!’

.
-‘হা হা হা! একদম উচিত কাজ করেছিস। এই না হলে তুই আমার ফ্রেন্ড?’

-‘আমি আর পারছি না রে। বাদ দে এসব।’

-‘বাদ দেব কেন? ও যে তোর সাথে কতটা অন্যায় করেছে, তার কাছে তো এটা তুচ্ছ।’

-‘তবুও, এমনটা করা একদমই ঠিক হচ্ছে না আমাদের।’

-‘একশো বার ঠিক হচ্ছে। তুই যেমন তাল করছিস যেনো আমি তোকে খু*ন করতে বলেছি। শোন, ধ্রুবকে এত লাই দিস না বলে দিলাম। ধ্রুব তোকে কম ক*ষ্ট দেইনি। এটা কেন বার বার ভুলে যাস তুই? আর আমি তোকে জাস্ট ধ্রুবকে দেখলে ইগনোর করতে বলেছি। দ্যাটস ইট!’

-‘(নিশ্চুপ)’

-‘আমি বুঝতে পারছি তুই ধ্রুবকে ভালোবাসিস। এবং সেও তোকে ভালোবাসে। কিন্তু সে নিজের দোষ দেরী করে বুঝেছে। যা একদমই কাম্য নয়।’

এবারও চুপ রূপা। লিমা বলল,

-‘তুই যত তাকে এড়িয়ে চলবি ততই সে তার ভুলগুলো বুঝতে পারবে। আর আফসোস করবে কেন সে অন্যের কথা শুনে তোকে মেরেছিল! প্রতিনিয়ত তোর ক*ষ্টের মুহূর্তগুলোকে সে অনুমান করবে। আর ধুকরে ধুকরে ম*রবে।’

লিমার কথাগুলো যুক্তিযুক্ত হলেও কেন জানি রূপা এটা মানতে পারছে না। তার কাছে কেবল মনে হচ্ছে ধ্রুবকে এড়িয়ে চলাটা একদমই ঠিক হচ্ছে না। অস্থির লাগছে খুব। লিমা বলল,

-‘আমি পরে কথা বলছি। ও ডাকছে। যা যা বলেছি তাই তাই করবি। এখন বাই।’

-‘ওয়েট! ওয়েট! ও টা আবার কে?’

লিমা মুঁচকি হাঁসলো। বলল,

-‘তোর জীজু।’

-‘মানে কি? তুই বিয়ে করে নিয়েছিস?’

-‘হ্যা দুই বছর হলো।’

-‘দুই বছর! আর আমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধও করলি না?’

-‘একটা থা*প্পড় দেব! ফেসবুকে গিয়ে দেখ বলেছি কিনা। আমাদের সন্তা*নের ছবি পর্যন্ত দিয়েছি তোকে।’

রূপা অবাক হয়ে বলল,

-‘বাবুও হয়ে গেছে?’

-‘হু….’

-‘কতদিন হয়েছে?’

-‘এই তো এক বছর চলছে।’

-‘ও, ডাক নাম কি রেখেছিস?’

-‘মীম।’

-‘বাহ! সুন্দর নাম তো। আচ্ছা, জিজু কী বলছে শুনে আয়। এই ফাঁকে আমি মীম সোনামনির ছবিটা দেখে আসি।’

-‘ঠিকাছে।’

লিমা ফোন রেখে দিতেই রূপা কান থেকে ফোনটা সরিয়ে চটজলদি ডাটা অন করে ফেসবুক লগ ইন করলো। অনেকদিন হয়েছে ফেসবুকে যাওয়া হয়নি তার। সেই বিয়ের আগে একবার গিয়েছিল সে। অবশ্য যাওয়ার একমাত্র কারণ ছিলো দ্বীপ। দ্বীপের কথা মনে পড়তেই এক অসহ্য য*ন্ত্রণা ঘিরে ধরলো তাকে। এই মানুষটার কথা কোনোভাবে মনে রাখতে চাইনা সে। মানুষ এতটা নি*কৃষ্ট হতে পারে তা আগে জানা ছিলো না রূপার। এত বছর পেরিয়ে গেল তবুও একটাবারও তার কাছে ফোন দিলো না। আচ্ছা দ্বীপ কী ম্যাসেঞ্জারে একটা হলেও ম্যাসেজ দিয়েছে? রূপা প্রথমেই ম্যাসেঞ্জারে ঢুকলো। সবার আগে দ্বীপের আইডি খুঁজতে লাগলো সে। অবশেষে পেয়েও গেল। তাদের কনভেনশনে ঢুকে দেখলো তার লাস্ট ম্যাসেজ এখনও আন সিন হয়ে পড়ে আছে। এর মাঝে দ্বীপ একবারও ফেসবুকে আসেনি। এটা কিভাবে সম্ভব? যে মানুষ ফেসবুকে না আসলে থাকতে পারতো না, ফেসবুকে সারাদিন একটিভ থাকা নিয়ে দুজনের মাঝে খু*নশুটিময় ঝগড়াফসাদ লেগেই থাকতো, আর আজ সে কিনা এতদিন ধরে ইনএকটিভ!

রূপা দ্বীপকে নিয়ে আর ঘেটালো না। সে পুরনো কষ্টগুলোকে তাজা করতে চাইনা। তাই দ্বীপের ভু*ত মাথা থেকে তাড়িয়ে সানজিদা লিমা নামে ফেসবুক আইডি খুঁজতে লাগলো। এতশত ম্যাসেজের ভীরে ওর আইডি খোঁজাটা দূরষ্কর। যদিওবা ওর সাথে সেই কলেজে থাকাকালীন একবার ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়েছিলো। এরপর সময়ের অভাবে কথা হয়ে উঠেনি। রূপা আর দেরী না করে সার্চ অফশনে ক্লিক করে সানজিদা লিমা নামে সার্চ দিলো। এই নামে ওর ফ্রেন্ডলিস্টে একজনই ছিলো তাই সবার আগেই লিমার আইডি শো করলো। রূপা তার আইডিতে ক্লিক করতেই ছোট্টছোট্ট গুটিগুটি দুটো হাত ও পা তার নজরে আসলো। এরপর বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো একদম মায়ের মতো হয়েছে। আচ্ছা যেদিন তার সন্তান পৃথিবীতে আসবে তখন কী সেও তার মতোই দেখতে হবে?
রূপা রিপ্লাই অপশনে ছোট্টো করে লিখলো, ‘মাশাআল্লাহ!’
.
শোয়ার জন্য ঘরের ভিতরে ঢুকতেই সবকিছু এলোমেলো আবিষ্কার করলো রূপা। বালিশ, কাথা সবকিছু মেঝেতে পড়ে আছে। ফুলদানি ভে*ঙে মেঝেতে টুকরো*টুকরো হয়ে আছে। ঘরের এমন নাজেহাল কে করলো? আশেপাশের দিকে তাকালো রূপা। ঘরে কারো বিন্দুমাত্র ছায়া পেলো না। একটু আগেই তো সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই এমন কাহিল অবস্থা কীভাবে হলো?
পরোক্ষণে রূপার ডাইনিং টেবিলের কথা মনে পড়ে গেল। তার মানে তখন তার বৌদলতে নিলু মাংস বেড়ে দিয়েছিলো বলেই কী ধ্রুব রা*গের বশে ঘরের এই করুণ অবস্থা করেছে? ভাবতেই ভ*য়ে আ*ৎকে উঠলো রূপা। ধ্রুবর রা*গের সাথে বেশ করে পরিচিত সে। মানুষটা একবার রে*গে গেলেই কী করে, কী না করে সেটা একদমই মাথায় থাকেনা তার। পরোক্ষণে রূপা চোখমুখ বন্ধ করে নিজেকে শ*ক্ত করতে লাগলো। কোনোমতে ধ্রুবর সামনে তার দূ*র্বল হলে চলবে না। তাকে শক্ত হতেই হবে।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো রূপার। স্ক্রি*নের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল লিমা কল দিয়েছে। প্রায় সঙ্গে কল রিসিভ করলো রূপা। দুজন কিছুক্ষণ তার শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে কথা বললো। এরপর রূপা দেরী না প্রকাট ঘূ*র্ণি*ঝ*ড়ে ঘরের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা খুলে বললো সে। সবটা শুনে লিমা ধা*তস্থ হয়ে বলল,

-‘তার মানে তীরটা একদম আসল জায়গায় গিয়ে লেগেছে।’

-‘মানে কী বলতে চাইছিস তুই?’

-‘শোন, ধ্রুব রা*গ করে ঘরের সবকিছু ভেঙে ফেলেছে এটা এর আগে কখনো হয়েছে?’

-‘না।’

-‘তাহলে আমিই ঠিক ভাবছিলাম। ধ্রুব তোর এমন অবহেলা মেনে নিতে পারছে না। ও শুধু রা*গের বশে ভা*ঙ*চুর করেনি। ক*ষ্ট কমানোর জন্যও করেছে।’

-‘আমি জেনেশুনে উনাকে আর কষ্ট দিতে পারবো না রে লিমা। খুব কষ্ট হচ্ছে।’

-‘ভুলে যাবি না পরের কথা শুনে সে তোকে কতটা নির্মমভাবেই না মেরে*ছিলো। কই, তখন তো তোর জন্য তার মনে একটুও মায়া জন্মেনি। তাহলে তোর কেন এত মায়া হচ্ছে? হ্যা জানি, তুই ওকে ভালোবেস ফেলেছিস। তাই বলে কী অতীতের সবকিছু ভুলে ওকে ক্ষমা করে দিবি? তুই যদি এমন দূ*র্বল হয়ে পড়িস, তাহলে পরের পরজন্মের মানুষেরা কী শিক্ষা পাবে? তাদের জীবনেও তো দ্বিতীয়, তৃতীয় ধ্রুব আসতে পারে। বল পারে না? দাড়া, আমার একটা কাহিনী বলি তোকে। রাশেদের সাথে আমার রিলেশন প্রায় সাত বছরের মতো ছিলো। বাড়ির কেউ জানতো না। এমন কি তোরাও জানতিস না। একদিন ফেসবুকে চ্যাটিং করতে করতে হুট করেই একেঅপরকে মন দিয়ে ফেলি। ভালোবাসার অতল সাগরে ডুব দেই আমরা। রিলেশনের কিছুদিন পরই রাশেদ আমাকে স*ন্দেহ করতে লাগলো। তার ধারণা আমি তার সাথে ছাড়া আরে ৪-৫ টা ছেলেদের সাথেও প্রেম করে বেড়ায়। তার অনুভূতি নিয়ে নাকি আমি খেলা করেছি। ওর মুখে যখন এই কথাটা শুনি তখন বিশ্বাস কর, আমার তখন কেবল মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা থমকে গেছে। আমি যেনো এই পৃথিবীতেই নেই। সেদিন সারারাত খুব কেঁ*দেছিলাম। রাশেদ অবশ্য আমাকে বারবার ফোন করেছিলো কিন্তু তখন আমার ফোন রিসিভ করার মতোও শক্তি ছিলোনা। এভাবে টানা ১ মাস তাকে এড়িয়ে চলি। একদিন হঠাৎই কলেজ থেকে ফেরার সময় ওর সাথে দেখা হয়ে যায়। অনেক আকুতি-মিনুতি করে, তবুও আমি তার কথা শুনতে না*রাজ। আমি যখন তার কাছে পাল্টা প্রশ্ন করি যে, ‘আমি ৪-৫ টা ছেলের সাথে প্রেম করি এটা তোমাকে কে জানালো?’ সে উত্তরে ক্ষী*ণ ক*ন্ঠে বলে, ‘আমার একটা বন্ধু।’ ওর মুখ থেকে একথা শুনে আমি যেনো বাগ*রুদ্ধ হয়ে যায়। আমার থেকে ওর ফ্রেন্ড আপন হয়ে গেলো? আমাকে কী সে একটুও বিশ্বাস করে না? অন্যের কথা শুনে শেষমেশ আমাকে অবিশ্বাস করলো? কেবল এসব কথায় আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম সে কী আদৌ সে ছিলো? এমন নিচু মন অমা*নুষি*কতা কারো হতে পারে আমার জানা ছিলো না। আমি এক প্রকার ক্ষোপ দেখিয়েই সেখান থেকে চলে আসি। এর মাঝেই যখনি কলেজ থেকে বাসায় ফিরতাম তখনি তাকে বাইক নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখতাম। এতে আমার কোনো প্রভাব পড়তো না। যতটুকু পারতাম তাকে এড়িয়ে চলতাম। হঠাৎ একদিন সে আমাকে কন*ভেন্স করার চেষ্টা করলো। বললো আর কখনো কারো কথা শুনে আমার চ*রিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। একটা সুযোগ চাইলো আমার কাছে। আমি তাও এত সহজে তাকে ক্ষমা করিনি। বুদ্ধি করে তিন রাস্তার মোড়ে নিয়ে গিয়ে ৫০ বার কান ধরে উঠবাস করিয়েছিলাম। এরপরই ওকে ক্ষমা করে দেই।’

বলতে বলতেই হেঁসে দিলো লিমা। বলল,

-‘তুই বিশ্বাস কর ওর মুখটা সেদিন দেখার মতো ছিলো। ওকে দেখে তখন এত মায়া লাগছিলো যে মাফ না করে পারলাম না।’

লিমা এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে রূপাকে বলতে লাগলো,

-‘এবার বল কী বুঝলি? আমি যদি সেদিন তাকে এড়িয়ে না চলতাম তাহলে সে অন্যের কথা শুনে আমাকে নিয়ে বারবার সন্দেহ করতো। সংসার গড়ার আগেই ভে*ঙে যেতো। একপর্যায়ে আমাদের বিয়েটাই হতো না। আর সবথেকে অবাক করার বিষয় হলো আমি ওকে কতদিন পর ক্ষমা করেছিলাম জানিস?’

-‘কত?’

-‘সাত মাস পর।’

-‘কীহ? সাত মাস!!’

-‘হুম। ঠিক শুনেছিস। এই সাত মাসটা ঠিক তোর মতোই কষ্ট করে কাটিয়েছিলাম। বারবার মন বলছিলো ওকে এবারের ক্ষমা করে দেই। কিন্তু তবুও করিনি। আমি যদি সেদিন তাকে এত সহজেই ক্ষমা করে দিতাম তাহলে সে আজ প্রতিনিয়ত আমাকে নিয়ে সন্দেহ করতো। কিন্তু এখন রাশেদ আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। তারপর থেকে সে আমাকে নিয়ে আর কখনো সন্দেহ করেনি।’

একটু থেমে লিমা আবারও বললো,

-‘রূপা, তোকে যে এত করে বুঝাচ্ছি পাবলিকরা কিন্তু আমাকেই ক্রা*ইম ভাবছে।’

-‘পাবলিক আবার কোথায় পাচ্ছিস?’

-‘এই যে, পাশে আছে না একজন। তোর সো ক*লড জিজু। পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সব কথা শুনছে। আর রা*গে ফুঁ*সছে। যেকোনো সময়ে আমাকে ব*লির পাঠা বানিয়ে দিতে পারে।’

বলেই ফিঁক করে হেঁসে দিলো লিমা। বলল,

-‘অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমিয়ে পড়।’

-‘হুম।’

-‘আর শোন, ধ্রুব কিন্তু তোকে কনভেন্স করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তুই তোর দেমা*গে অটল থাকবি।’

-‘হুম।’

রূপা কল কেটে দিয়ে রুমের সবকিছু গুছাতে লাগলো। লিমা ঠিক বলেছে। ধ্রুবকে এতো তাড়াতাড়ি লায় দেয়া ঠিক হবে না। আগে তাকে শিক্ষা দিতে হবে। তারপর সৈকতের কথা সুযোগ পেলেই বলে দেবে। ঘর গুছাতে গুছাতে একসময় হাঁপিয়ে গেল রূপা। কোনোরকম গুছিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে শরীরটা এলিয়ে দিলো সে। শরীর এতোটাই ক্লান্ত লাগছিলো যে গভীর নিন্দ্রার অতলে চলে গেল রূপা।সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে ”

ভোরবেলা আযানের মধুর সুরে ঘুম ভেঙে গেল রূপার। নামাজ পড়বার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠতে চেষ্টা করলেও উঠতে পারলো না। বুঝতে পারলো কেউ তাকে আঁ*কড়ে ধরে গভীর নিন্দ্রায় নিন্দ্রিত। ঘুমের রেশ কাটতেই রূপা চোখ মেলে তাকালো। নিজেকে ধ্রুবর বিছানা এবং তার বাহু*ডোরে আবিষ্কার করলো সে। ধ্রুবর বিছা*নায় সে কীভাবে এলো? সে তো রাতেরবেলায় মেঝেতে শুয়েছিলো। তাহলে কী ধ্রুব’ই তাকে এনেছে?
হালকা আবছা আলোয় রূপা ধ্রুবর দিকে তাকালো। কী নিষ্পাপ চেহারা! রূপার মন চাইলো ধ্রুবর কপালে চু*মু খেতে। কিন্তু সাহস পেলো না। যদি ধ্রুব বুঝতে পারে? এদিকে নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে। ধ্রুবর থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করলেও পেরে উঠলো না। একপর্যায়ে বি*রক্ত হলো রূপা। এক হাত দিয়ে ধ্রুবকে ঝাকাতে লাগলো সে। তবুও সাড়া পেলো না সে। রূপা এবার, ‘এই যে শুনছেন?’ বলে ধ্রুবকে ডাকতে লাগলো। তবুও ধ্রুবর কোনো পাত্তা নেই। সে আরো শক্ত করে আঁ*কড়ে ধরলো তাকে। রূপার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ধ্রুব বেডের একদম কোণায় শুয়ে আছে। গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে সে ধ্রুবকে দুহাত দিয়ে ধা*ক্কা দিতেই দড়াম দিয়ে নিচে পড়ে গেল। ব্যাথা পেয়ে ‘আহ’ বলে চেঁচিয়ে উঠলো সে। ঘটনার আক*স্মিকতায় অপ্র*স্তুত হয়ে গেছে রূপা। ধ্রুব মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো। রা*গী লুক নিয়ে রূপার দিকে তাকালো সে। রূপার ভ*য়ে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হাঁসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। কোনোরকম পা টিপে টিপে বিছানা থেকে নেমে এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুমের বন্ধ করে পুনরাবৃত্তি ঘটনা মনে পড়তেই বাথরুম কাঁ*পিয়ে হেঁ*সে দিলো সে। মনের সুখে গান ধরলো,
‘আহা! কী আনন্দ, আকাশে-বাতাসে’

চলবে,,,,,,,,

লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here