ভালবাসিনী…..
লেখিকা – রুবি আক্তার
পর্ব – ৪
ওদের সাথে দেখা হয়নি তো কি হয়েছে। পিচ্চি ঠিকই আমার মোবাইলে মেসেজ বা মিস কল দিতো। আজকাল যুগে মোবাইল মেসেজ বা মিস কলের চল আছে।
মেসেজ গুলো ছিল এরকম”ভাইয়া, কি করেন? আপনার পরীক্ষা কবে শেষ”। ” আপনার ঐ টুলটা আপনি বাসায় নিয়ে যান। ওটা কিন্তু আমার টুল।”
এমন সব বোকা বোকা মেসেজ। আমার শরীর জ্বালানো সব কথা। আচ্ছা টুল কিনছি আমি ওর হয় কিভাবে? কি আশ্চর্য ! প্রতিদিন এমন ভাবে জ্বালায়। সশরীরে না হোক বাতাসে এসে মোবাইলের মাধ্যমে আরো বেশি জ্বালায়।
পরীক্ষা গুলো ভালোই হচ্ছে। পিচ্চি বাদে আরেকটা জিনিস এর মধ্যে আমাকে একটু ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু সেই ভাবনাটা অনেক মধুর ছিল। কেনো? জানিনা। যে অচেনা আইডি দিয়ে আমাকে মেসেজ দিয়েছিল। “ভাইয়া, রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন” সেই আইডি থেকে প্রতিদিন আমাকে মেসেজ পাঠায়। কিভাবে জানলাম! আমি তার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করলে আমার একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তার আইডিতে ঢুকে একবার ঢু মারা। বা তার পাঠানো মেসেজ অগোচরে সিন করা। দেখতাম কিন্তু কোনো রিপ্লাই দিতাম না। মেসেজ গুলো কেমন যেন ঘোর লাগানো।
প্রতিদিন সকাল পাঁচটা বাজলে মেসেজ আসে “শুভ সকাল, নামাজ পড়েছেন?” যোহরের সময় ” শুভ দুপুর, নামাজ পড়েছেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়েন। আর প্লিজ রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন না।”। বিকেলে, সন্ধ্যা এবং রাত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় সে আমাকে উইস করে নামাজের তাগাদা দিতো। কি একটা অঘোম টানে আমি তার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেই নিলাম। তবুও ভাব নিতাম। জানার খুব আগ্রহ এই মেয়েটা আসলে কে? কিন্তু একটু তো ভাব বজায় রেখে চলতে হয়। তাকে বন্ধু বানানোর পর আমাকে অনেক বার ধন্যবাদ জানিয়ে মেসেজ ও পাঠিয়েছে।
আমি শুক্রবার ছাড়া নামাজ পড়তাম না। কিন্তু বেশ কয়েকদিন এই মেসেজ গুলো দেখে মনটা কেমন যেন করে উঠল। তাই যে আমি সকালে নয়টায় ঘুম থেকে উঠতাম সে আমি ভোর পাঁচটার সময় উঠে মোবাইলের ডাটা অন করি। আর নামাজের জন্য রেডি হই। একটা মেয়ে একটা ছেলের জীবন এভাবে পরিবর্তন করতে পারে জানতাম না। আর এক্ষেত্রে তো আরো ভিন্ন ঘটনা। আমি যাকে চিনি না, কোনোদিন দেখিনি, আর মেসেঞ্জারেও কথা হয়নি সেই মেয়েটা আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনছে। কেনো যেনো এই পরিবর্তন গুলো ভালো লাগতো।
আমি তাকে কোনোদিন ও আমার আগ্রহ দেখাই নি। সে হয়তো তা বুঝতে পারতো। কারণ তার একটা মেসেজ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। মেসেজটা :
” আচ্ছা, আপনি তো আমাকে চেনেন না। আমি জানি আমার সম্পর্কে আপনার অনেক কৌতুহল। কিছু জানার থাকলে বলতে পারেন। আমি বলবো। কিন্তু প্লিজ আমি কে?, কোথায় থাকি? তা জিগ্গেস করবেন না। আমি মিথ্যা বলতে পারবো না। আর সত্যও বলতে পারবো না।”
সকাল সকাল উঠে নামাজ পড়ার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। আরেকটা উপকার হচ্ছে। আমার পড়ায় । নামাজ পড়ে এসে আমি বই নিয়ে পড়ি একদম আটটা পর্যন্ত। এতে আমার সময়ও অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। পরীক্ষা গুলো কেনো যেনো আরো ভালো হচ্ছে। একটা মাত্র বাকি। তারপর আমার দোকানে যেতে হবে । কারণ অনেক কাজ আছে যা ভাইয়া এখনো ভালো মতো আয়ত্ত করতে পারেনি। তা আমারি করতে হয়। তাছাড়া অর্ধেক শিখিয়ে তো আর ছাড়া যায় না। তাই পিচ্চি শিউলি এর নাম্বার এ ফোন দিলাম। ওপাশ থেকে পিচ্চি ফোন ধরেই বলল,” আসসালামুয়ালাইকুম, ভাইয়া! আপনি আমাকে ফোন করছেন বিশ্বাস হচ্ছে না। উফ্ কি যে খুশি লাগছে।”
(আমি মনে মনে বলছি” আরে হেনার নাম্বার যদি থাকতো তাইলে কি তোমাকে ফোন করতাম, পিচ্চি।)
-“ওয়ালাইকুমুস সালাম, শোনো কালকে আমার পরীক্ষা শেষ, তাই পরশু থেকে কম্পিউটার শিখতে এসো। কেমন।”
-” কি? কালকেই পরীক্ষা শেষ…হুররে। ভাইয়া অবশ্যই আসবো কতোদিন আপনাকে দেখি না। ভাইয়া কেমন আছেন? পরীক্ষা কেমন হয়।” কথা আরো আগাতে চাইলে আমি বললাম ,”আমার পড়া আছে। পরশু দেখা হবে। রাখি..”
-“ভাই….” বলার সময় দিলাম না। কেটে আমি মেসেঞ্জার অন করলাম। দেখি কোনো মেসেজ আসছে কিনা। আমি জানি, না আসার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ছাড়া আমাকে আর বিরক্ত করে না। কিন্তু কেন জানি সেদিন খুব করে চাইছিলাম সে আমাকে এখন কিছু লিখে মেসেজ দিক। আজকে আমি তার সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। কোনোদিন ও তার কথার উত্তর দেই নি ।আজ দিবো। এই চিন্তা করে রাখলাম। তো পড়তে বসে আয় মন বসাতে পারছি না। আমার এমন হয়না কোন সময়। কিন্তু আজ হচ্ছে।
হয়তো আমার মনের কথা ঐ মেয়েটা ধরতে পেরেছে। তাই হঠাৎ মেসেজ নোটিফিকেশন শব্দ শুনলাম। হ্যাঁ, সত্যি তার মেসেজ। মেয়েটার আইডি নামটাও অদ্ভুত “শুকতারা”। আজ এই শুকতারা আমাকে অনেক সুখ দিছে। সত্যি আজ যদি এ মেসেজ না দিতো কালকে আমার পরীক্ষা কেমন হতো আমি জানি না।
মেসেজটা ছিল:
“আসসালামুয়ালাইকুম, কি করছেন। আচ্ছা আপনি কি সত্যি নামাজ পড়েন? আর আমার সাথে কথা বলেন না কেন? আমি কি আপনাকে কথা বললে গিলে খাবো। আচ্ছা, আপনি কি করেন? আর একটু পরেই আছরের আজান দিবে। আমি তখন মেসেজ দিতে পারবো না। তাই এখনি দিলাম। দয়া করে নামাজ পড়ে নিয়েন”।
মেসেজটা পড়ে আমার ভিতরটা প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গেল। আহ, এখন আমার মনের মধ্যে উথাল পাতাল আর নেই। আমি যাই পড়ছি মনে থাকছে। এখন তাই আরেকটা চিন্তা করলাম। আমি আমার পরীক্ষার পরই তার সাথে মেসেঞ্জার এ কথা বলবো।
পরেরদিন পরীক্ষা দিয়ে একটু দোকানে গিয়েছিলাম হালচাল জানতে। জানতে পারলাম পিচ্চি প্রতিদিন আসে। আর আমার পরীক্ষা কবে শেষ তা জানতে। কিন্তু আজকে নাকি আসে নাই। আমি বুঝতে পারলাম কেনো। কারণ কালকে আমি ফোন করে বলেছিল যে আমি পরশু থেকে ওদের শিখাবো তাই।এই পিচ্চি আমাকে শেষ করেই ছাড়বে। মেয়েরা এমন বেহায়া কেমনে হয়।
(চলবে)