ভালোবাসিনী পর্ব ৫

ভালোবাসিনী…..
লেখিকা – রুবি আক্তার

পর্ব-৫

কম্পিউটার শেখাতে চললাম শিউলিদের। আজকে ওদের টাইপ করা শিখাবো। গিয়ে দেখি আজকে শিউলি একটু পরিপাটি হয়ে এসেছে।

আমি এতো দিন ওদের সাথে মিশেছি। কিন্তু আজও ওরা কোন বিষয়ে পড়ে জানতে পারলাম না। এর কারণ ও আছে। আমি ওদের কাছ থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে চলি। কিন্তু হেনা যে মানবিক শাখায় পড়ে তা ভালো করেই জানি‌ । একবার সুযোগ বুঝে একা জিঙ্গেসা করেছিলাম।

তো যথারীতি গিয়ে পিচ্চি কে তার সিংহাসনে পেলাম। পা নাচাতে নাচাতে কথা বলছে বাকিদের সাথে। রাফি ওর দিকে চোখ দুটো কুঁচকে তাকিয়ে আছে। চোখে রাজ্যের বিরক্তি। বোঝাই যায় ও-ও এই পিচ্চি কে পছন্দ করে না। যাওয়ার সাথে সাথেই আমাকে ওরা হৈ হৈ করে স্বাগত জানালো। বিশেষ করে পিচ্চি। হায়রে! ও যদি জানতো ওকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে পিচ্চি ডাকি আর ওর টুলকে সিংহাসন, তাইলে মনে কষ্ট পাবে। একদিন জানাতে হবে।

ওদের আমি টাইপিং এর সকল নিয়ম জানিয়ে দিলাম। তারপর একজন পাঁচ মিনিট করে কম্পিউটার এ টাইপ করার সুযোগ করে দিলাম ‌ এতে সবাই শিখতে পারবে। হেনা আর সীমা মোটামুটি পারলো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে পিচ্চি বেশ ভালোই দক্ষতা দেখালো। হাতের গতি দেখে বোঝা যায় এ মেয়ে এই প্রথম টাইপ করছে না। তাই আমার সেদিনের পর থেকে ওর বিষয় একটু আগ্রহ হলো।

তারপর দিন ও আমাকে আর কম্পিউটার এর কাছেই আসতে দিলো না। বললো”ভাইয়া, আপনি বসে থাকেন বা ওদের শিখান। আমি একটা কাজ করবো। তো কি আর করা। আমি ওদের দিকেই মনোযোগ দিলাম। এই সুযোগে হেনা কে একটু বেশি প্রাধান্য দিলাম। হয়তো পিচ্চি বিষয়টা খেয়াল করলো। তো ও হেনাকে উদ্দেশ্য করে একটা ছড়া টাইপ গাইতে লাগলো। আমিও বুঝি নাই তা কিসের জন্য।

“একবার বের হয়ে আয় না
কিসের এতো খাতির তোর
বের করবো সব বায়না
আমার মালে হাত দিলে
ভেঙ্গে দিবো হাতটা”
(শিউলি বলছে)

এর মানে কি বুঝলাম না। তবে আমি হেনার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যেতে দেখলাম। ও আমতা আমতা করে বলল-”

“আমি কি কিছু করছি
আমি খালি রুল গুলা পড়ছি।
কথা কি আমি কইতে আইছি
বুইনডি কিছু করিস না
আমি কিন্তু ডরাইছি”

আমি আর রাফি স্তব্ধ। এরা কি শুরু করছে। এখানে বসে কি কবিগান শুরু করলো নাকি। ভাইয়া আজকে আসে নাই। তাই বাঁচা গেলো। ভাইয়ার জন্য আজকে মেয়ে দেখতে যাবে তাই আমারো তাড়াতাড়ি যাওয়া লাগবে। সুতরাং আজকে ওদের তাড়া দিতে লাগলাম। মাথাটা এখনো ঘুরছে। এরপর থেকে দেখলাম হেনা আমার থেকে একটু দুরত্ব রাখছে। আগের মতো আর কথা বলছে না। সীমা ওদিকে বোরখা পড়ে আছে। তবুও সে হাসতে হাসতে উল্টিয়ে পড়ছে। কারণ ও ওদের এমন কবি গান শুনে আশ্চর্য। ও বললো” ঐ তোরা এগুলো কি শুরু করলি। এগুলো ‌কি তোদের নতুন কোনো খেলা?” শিউলি বলল” শিগগিরই জানতে পারবি। তাইলে তুইও এই কবিতা শিখে যাবি।” বলে হেনার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। এরা সত্যি একেকটা জিনিস।
দোকান বন্ধ করবো। ওদের তাই বের হতে বললাম। ওরা সবাই বের হলে। পিচ্চি আমার উদ্দেশ্য বললো” ভাইয়া, আজকে আমি টাইপ করলাম আপনি তো দেখেন নাই। আমি সেফ করে রাখছি। দেখে নিয়েন। কেমন টাইপ করলাম কালকে জানাবেন। এখন আসি।”
আসলেই তো পিচ্চি সারাক্ষণ আমাকে কম্পিউটার এর ধারেকাছে ঘেঁষতে দেই নি। মানুষ আসলে অন্য কম্পিউটারে বসতে হয়েছে। তবুও সে তার জায়গা থেকে নড়ে নাই। আমি পরে দেখবো ভেবে দোকান বন্ধ করে চললাম। রাফিও যাবে সাথে। ভাইয়ের জন্য এই নিয়ে পাত্রী অনেক দেখছে। এবার ছবি আর বাড়ি ঘরের অবস্থা শুনে বেশ ভালোই লাগছে সবার‌ । তাই মেয়ে দেখতে গেলাম। মেয়ে পছন্দ হলো। কথা আগালাম আমরা। যাক মার একাকিত্ব কাটবে।

পরেরদিন দোকান খুলে আমি রাফিকে দোকান ঝাড়ু দিতে বলে আমি কম্পিউটার পরিষ্কার করছি। আজকে পরীক্ষার জন্য আমার এ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। তাই চিন্তা করছি। ওদের আর আজকে শিখাবো না। আসলে না করে দেবো। হঠাৎ খেয়াল হলো। কাল পিচ্চি আমাকে তার টাইপ করা লেখা দেখতে বলছে। যা সে সেফ করে রেখেছে। অনেক আগ্রহ নিয়ে আমি কম্পিউটার এর অফিস সফটওয়্যার খুলে সেফ মেনুতে গেলাম। তারপর কালকের সেফ ফ্লোডার খুলে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটা কি আসলেই বোকা না দুরন্ত চালাক।

পুরো ফাইল জুড়ে বিভিন্ন কালারের বিভিন্ন ডিজাইন করে শুধু একটা কথাই লেখা। তা হলো-

I love you auon vaia.

আমার সারা শরীর অসাড় হয়ে গেল। ঘাম দিচ্ছে। আমি কোনো রকম করে ফাইলটা ডিলিট করলাম। আমার মাথা ঘুরছে। রাফি হয়তো বিষয়টা খেয়াল করলো।
আমার কাছে এসে বললো” ভাই, ও ভাই, আপনার কি হইছে? আপনার শরীর ঠিক আছে তো। এমন ঘামান কেন?”
-” রাফি, পা-পানি দে তো এ-এক-একটু। আমার শরীর ভালো লাগছে না।”
রাফি তাড়াতাড়ি পানি দিলে আমি খেয়ে একটু ধাতস্থ হলাম। তারপর আমি রাফিকে বললাম” আমি একটু বাড়ি যাবো রাফি। আজকে শরীরটা ভালো না। ভাইয়া বাজার করেই চলে আসবে। তুই থাকিস। ওদের বলিস আমি আজকে শিখাবো না।”
রাফি একটু ব্যস্ত হয়ে বলল” ভাই, রিক্সা ডাকি। আপনার অবস্থা তো খারাপ লাগছে।”
আমি কোনো মতে না বলে বাইরে বের হয়ে হাটা শুরু করলাম। মাথার ভেতর এখন খালি খালি লাগছে। একরকম মজা কেউ করে। আমি এখন ওর সাথে কিভাবে স্বাভাবিক কথা বলবো? আমার মাথায় আরো অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু তার কোনো উত্তর পাচ্ছি না।

এর মধ্যে মোবাইলের মেসেঞ্জার নোটিফিকেশন এর শব্দ হলো। এই প্রথম শুকতারা আমাকে এই সময়ে মেসেজ দিয়েছে। আমার ভিতরে কেমন জেনো আকুলতা কাজ করলো। মনের সমস্ত কষ্ট গুলো ভাগ করতে ইচ্ছে হলো এই শুকতারার সাথে। মেয়েটার দু একটা লাইন আমাকে অনেক সুখ দেয়। আমি তাড়াতাড়ি মেসেজটা দেখলাম। লেখা- আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন?
আমি সত্যি কথাটাই বললাম” ভালো না, মনে হচ্ছে আমি এই দুনিয়ায় নাই।” সালামের উত্তর দিতে ও ভুলে গেছি। নিস্তব্ধ ওপাশের মানুষটা। বুঝতে পারছি না কি করবো। আমার আজকে তার কেয়ারিং কথাগুলো যে অনেক প্রয়োজন। অনেকক্ষণ পর সে বললো” আমার একটু কাজ আছে। একটু পর কথা বলি।”
আমি জানি পরটা সেই যোহরের নামাজ।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here