#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৭
#তানিশা সুলতানা
দীর্ঘ ছয় ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরে সুযোগ এসেছে স্মৃতির সাথে দেখা করার।
ফজরের নামাজ পড়েই আবির হাসপাতালে চলে আসে৷ হাসপাতালের পিছনে ২০৭ নম্বার রুমের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো আবির। কখন স্মৃতি একা হবে আর আবির একটু দেখা করতে পারবে।
অবশেষে সবাই চলে গেছে। স্মৃতি এখন একা আছে।
বুকে হাত দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে স্মৃতির কেবিনের দিকে পা বাড়ায় আবির।
২০৭ নাম্বার কেবিনে স্মৃতি একা শুয়ে আছে৷ এখন স্মৃতির রেস্ট নেওয়ার সময়। তাই সবাই চলে গেছে স্মৃতিতে ঘুমতে বলে।
ডান পায়ে শুভ রংয়ের ব্যান্ডেজ। মাথাও ব্যান্ডাজ। একহাত মাথার ওপরে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে স্মৃতি। চোখের কুর্ণিশ বেয়ে পানি পড়ছে।
আবির নিঃশব্দে রুমে ঢুকে। দরজা বন্ধ করে দেয়। রিক্স নেওয়া যাবে না। কেউ দেখে ফেললে খুব বাজে হবে বিষয়টা।
টুল টেনে স্মৃতির পাশে বসে আবির। খুব যত্ন করে চোখের কোনের পানি মুছে দেয়।
“মা তুমি এখনো যাও নি কেনো? বললাম তো আমি পরে খেয়ে নেবো। তুমি খেয়ে আসো।
চোখ বন্ধ করেই বলে স্মৃতি। চোখে মুখে বিরক্তি।
আবির মুচকি হাসে।
স্মৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
” মা যাও না প্লিজ।
আমি তো এভাবে সারাজীবনই পরে থাকবো। তোমাকে তো ঠিক থাকতে হবে। নাহলে আমাকে আগলে রাখবে কে? একটা সময় তুমিও বিরক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু ছুঁড়ে ফেলতে পারবে না৷ কারণ তুমি তো মা।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে স্মৃতি।
আবিরের হাত থেমে যায়। খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে স্মৃতি ধরেই নিয়েছে ও আর হাঁটতে পারবে না।
ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ খুলে স্মৃতি। আবিরকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে।
ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেয় স্মৃতি। কোনো কথা বলে না।
“আমাকে দেখে অবাক হও নি?
আবির স্মৃতির মুখটা ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে। স্মৃতি চোখ বন্ধ করে ফেলে। দেখবে না এই লোকটার মুখ। এই সুন্দর মুখটাই সব নষ্টের মুল।
” কথা বলবে না?
আবির করুণ সুরে জিজ্ঞেস করে।
স্মৃতি কিছুই বলে না।
“এই স্মৃতি
কিছু তো। ভালোবাসি তোমায়। খুব
স্মৃতি কিছুই বলে না। এমন ভাব করে যেনো ও ঘুমিয়ে গেছে। আর আবিরের কথা শুনতেই পায় নি।
” কি হয়েছে বলো?
আমাকে বকা দাও। মারো। যা খুশি বলো। কিন্তু কিছু তো বলো
স্মৃতি আবিরের হাত টা সরিয়ে দেয় নিজের গাল থেকে।
“তুমি আবারও হাঁটতে পারবে। কিচ্ছু হয় নি তোমার। জাস্ট একটু হাড় টা বেঁকে গেছে। এটা নিয়ে তুমি ভেবে বসে আছো তুমি আর হাঁটতে পারবে না। সিরিয়াসলি।
এতোটা বোকা তুমি।
হাসার চেষ্টা করে বলে আবির।
স্মৃতি আধো আধো করে চোখ খুলে। চোখ খুলতেই দেখতে পায় আবিরের লাল টলমল করা চোখ দুটো।
” প্লিজ চলে যান।
দুই হাত জোর করে বলে স্মৃতি।
“যাক তাহলে কথা বললে। আমি তো ভেবেছিলাম কথাই বলবে না। তবে আমিও কম যায় না। যতখন না কথা বলতে ততখন বকবক করতেই থাকতাম। আর আমি জানি তো তুমি আমার সাথে কথা বলবেই।
স্মৃতির আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল গলিয়ে দিয়ে বলে আবির।
” সেটাই তো পবলেম। “কথা বলতাম”
তাচ্ছিল্য করে বলে স্মৃতি।
“তুমি খাও নি কেনো?
প্রসঙ্গে পাল্টে বলে আবির।
স্মৃতি উওর না দিয়ে পা টা একটু সরানোর চেষ্টা করে। ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে নেয়।
আবির বিচলিত হয়ে আলতো করে পা টা ধরে বালিশের ওপর উঠিয়ে দেয়।
” এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি। আমি এখানে আছি না? আমাকে বললেই তো আমি পা সোজা করে দিতাম। একদম ছটফট করবে না বলে দিলাম তোমাকে।
শাসিয়ে বলে আবির। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
“আপনি যাবেন প্লিজ
আমার ভাই বোনেরা চলে আসবে এখনি।
স্মৃতি কপাল কুচকে বলে।
” যাবোই তো। থেকে যাওয়ার অধিকার তো আমার নেই।
জানো আজকে কি ডে?
স্মৃতি ফস করে শ্বাস নেয়।
আবির স্মৃতির দুই পাশে হাত দিয়ে ঝুঁকে স্মৃতির দিকে। স্মৃতি অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় আচ করতে পারে না। কিন্তু মুখের ওপর গরম নিশ্বাস আচড়ে পড়তেই ধপ করে তাকায়। আবিরকে এতোটা কাছে দেখে ভরকে যায়।
আবির মুচকি হেসে স্মৃতির কানের কাছে মুখ নেয়। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় স্মৃতি।
“আজকে প্রমিজ ডে
তো
তোমাকে আজকে প্রমিজ করছি পাক্কা বাহাত্তর ঘন্টা পরে তোমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাবো। অনেক দুরে। যেখানে না তোমার পরিবারের চাপ থাকবে আর না আমার পরিবারের চাপ থাকবে। সেখানে শুধু আমি আর তুমি থাকবো। খুব সুন্দর একটা সংসার বাঁধবো।
ফিসফিস করে বলে আবির।
আবিরের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকায় স্মৃতি। কিছু বলার উদ্যোগ নিতেই আবির স্মৃতির ওষ্ঠ দ্বয়ের ভাজে নিজের ওষ্ঠদ্বয় গলিয়ে দেয়।
এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না স্মৃতি। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আপনাআপনি হাত দুটো চলে যায় আবিরের চুলের ভাজে।
স্মৃতির কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয় দুজনই।
হতদম্ভ হয়ে গেছে স্মৃতি। হাত দুটো যেনো থেমে গেছে। মনেই নেই স্মৃতির হাত দুটো আবির চুলে।
“যে করেই হোক রাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে সবাইকে। যদি না দাও তাহলে আমাকে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিবা। ওকে
আমিও কাল থেকে কিচ্ছু খায় নি। তোমার খাওয়া হয়ে গেলে খাবো আমি।
ওই জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকবো। কাল থেকে ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমার খাওয়া শেষ হলেই খেতে যাবো।
আসছি
স্মৃতির কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে মাথায় ভরসা মাখা হাতটা বুলিয়ে বেরিয়ে যায়।
স্মৃতি এখনো চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আবিরের দিকে তাকানোর সাহস ছিলো না। যেমন এখন চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
রাগ গুলো দলা পাকিয়ে কান্না হয়ে বেরচ্ছে। হু হু করে কেঁদে ওঠে স্মৃতি। কেনো কাঁদছে জানা নেই। কিন্তু এটা প্রতিজ্ঞা করে নেয়।
আর আবিরের ডাকে সারা দেবে না। ওই বেইমানের ফাঁদে আর পা দেবে না। কিছুতেই যাবে না আবিরের সাথে।
প্রতিদিনকার মতো আজকে সকালে উঠে স্মৃতি রান্না করে না। বরং ওঠেই না। কম্বল মুরি দিয়ে শুয়েই আছে। অভি ভোর পাঁচটায় চলে গেছে অফিসে। যাওয়ার আগে রেডিওটা চালিয়ে দিয়ে গেছে।যতে তানহা শুনতে পায় অভির কথা গুলো।
তানহা শুনতে পায় নি অভির কথা। কারণ ঘুরিয়ে গেছিলো। সারা রাত কান্না করেছে। সকালের দিকে ঘুমিয়ে পরেছে। অভি যখন গেলো তখন বুঝতে পেরেছিলো।
এগারো টায় অভি বাসায় আসে। যেমন দরজা ভিরিয়ে রেখেছিলো এখন তেমন ভাবে দরজাটা দেখে অভির আর বুঝতে বাকি নেই যে তানহা এখনো ওঠে নি।
ভীষন খিধে পেয়েছে অভির৷ ভেবেছিলো তানহা রান্না করে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অভি৷ ধপ ধপ পায়ে রুমে এসে কম্বল সরিয়ে দেয়। আর এক রাশ আলো এসে বারি খায় তানহার চোখে। চোখ মুখ ফুলে গেছে।
তানহা কপাল কুচকে টেনে টেনে চোখ খুলে। অভিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে এক লাফে উঠে বসে।
“মাএ না গেলেন আপনি
চোখ ডলে বলে তানহা।
” ছয় ঘন্টা আগে গেছিলাম আমি।
অভি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“কিহহহহহহহ
চেঁচিয়ে বলে ওঠে তানহা।
” ওঠো
আমি খাবার নিয়ে আসছি।
অভি যেতে নেয়।
“করলা আনিয়েন না প্লিজ
তানহা করুন মুখে বলে।
“আনবো
বলে চলে যায় অভি।
অভি চলে যেতেই তানহা উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। হাত মুখ মুছে আসতেই দেখে কয়েকজন মহিলা এসে দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে।
” আপনাদের তো চিনলাম না।
মহিলা তিনজন হেসে এগিয়ে আসে।
“ওপর তালায় থাকি আমি। আর ওরা নিচে। তোমাদের দেখি প্রতিদিন আলাপ করতে আসা হয় না।
সুন্দর মহিলাটি এক গাল হেসে বলে।
তানহা ও হাসে।
” আসুন বসুন।
আসলে বসতে দেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। আস্তে আস্তে কিনে নেবো।
তানহা আমতা আমতা করে বলে।
“সমস্যা নেই। নতুন বিয়ে করেছো বুঝি? কিন্তু তোমার নাক ফুল কই? নাক তো ফুটোও করো নি। জানো না বিবাহিত মেয়েদের নাক ফুল না নেওয়া অমঙ্গল।
অন্য মহিলাটি কপাল কুচকে বলে।
” আন্টি আমরা এখানে বিয়ে করি নি।
তানহার কথা শুনে মহিলা তিনজন কেমন করে তাকায় তানহা র দিকে।
“তোমরা বিয়ে না করেই এক সাথে থাকছো?
চলবে