#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১২
হঠাৎ করে টান দেয়ায় ছি’টকে এসে কারোর বুঁকের সাথে বাড়ি খেলো হুর। চোঁখ বন্ধ করে তার বুঁকেই মাথা রাখলো সে। জোরে জোরে শ্বাস টানতে লাগলো।হুশ আসতেই বুঝতে পারলো সে কারো বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ। মানুষ টা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। যেনো বুঁকের মধ্যে পুরে নিতে চায়। হুর শুনতে পেলো লোকটার বুঁকের ধুকপুকানি। এতো জোরে বিট করছে যে মনে হচ্ছে মারা’ত্মক ভ’য় পেয়েছিলো সে।হুর আলতো করে মাথা তুলতেই তার চোঁখের সম্মুখে ভেসে উঠলো পরিচিত একটা মুখ। হুর আস্তে করে ঠোঁট নাড়ালো ;
-“ফাইয়াজ ভাইয়া!”
হুর আস্তে বললেও ফাইয়াজ এর কানে ঠিকই গেলো। ফাইয়াজ হুরের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো হুর। ফাইয়াজ এর চোঁখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। ফাইয়াজ হুর কে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। ফাইয়াজ এর দিকে অবাক চোঁখে তাকিয়ে রইলো হুর। এরমাঝে লিয়া দৌড়ে এসে হুর কে জড়িয়ে ধরে কা’ন্না করতে লাগলো।
-“দোস্ত ঠিক আছিস তুই! তোকে আমি কতবার বললাম সরে যেতে কিন্তু তুই সরলি না কেনো! এখন ফাইয়াজ ভাইয়া না আসলে কি হতো বল! আসলে সব দোষ আমার। আমার কারণেই তুই রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলি। আমার কারণেই হয়েছে সব। ”
লিয়ার কা’ন্না দেখে হুর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“দেখ আমি তো ঠিক আছি। কিছু হয় নি তো আমার। আর এতে তোর কোনো দোষ নেই রে। আমিই কেয়ারলেস হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলাম আর তুই আমাকে সতর্ক করার পরও আমি সরতে পারি নি। ভয়ে আমার ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। নড়ার শক্তি টাও ছিলো না। তুই প্লিজজ কা’ন্না বন্ধ কর। এতে তোর কোনো দোষ নেই। ”
দুই বান্ধুবীর কথোপকথন এর মাঝে ফাইয়াজ শক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“লিয়া তোমার বান্ধুবী কে নিয়ে গাড়িতে ওঠো। ”
লিয়া ফাইয়াজ এর কথা মতো হুর কে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। সারা রাস্তা ফাইয়াজ হুরের সাথে একটা কথাও বলে নি। যা দুই একটা কথা বলেছে তাও লিয়ার সাথে। হুর খুব ক’ষ্ট পেলো ফাইয়াজ এর এমন ব্যবহারে। গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর পর লিয়া নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো। যাওয়ার আগে হুর তার কাছ থেকে কথা নিয়েছে যেনো সে কাউকে ভার্সিটির বিষয় টা না জানায়।
নিজের বাড়িতে ঢোকার পূর্বে হুর ফাইয়াজ কে ডেকে উঠলো। ফাইয়াজ হুরের ডাক শুনে দাঁড়ালেও ঘুরে তাকালো না। হুর নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“প্লিজজ বাসার কাউকে ভার্সিটির বিষয় টা জানাবেন না। অনুরোধ রইলো। এসব জানতে পারলে আম্মু বাবাই অনেক ক’ষ্ট পাবে। আমি চাচ্ছি না তারা এসব জানুক। ”
ফাইয়াজ হুরের দিকে ফিরে তাচ্ছিল্য করে বললো,
-“তুমি তোমার বাবা মা কে কতো টা ভালোবাসো তা নিজের চোখেই দেখলাম হুর। তুমি যদি তাদের ভালোবাসতে, তাদের ক’ষ্ট পাওয়ার কথা চিন্তা করতে তাহলে এত টা অসাবধান হতে পারতে না। লিয়া তোমাকে কতবার বলেছিলো সরে যেতে কিন্তু তুমি হাহ! তুমি তো ভ’য় পাও। ভ’য়ে নিজের জীবন টাই হারাতে চলেছিলে। একবার ভেবে দেখো তো আমি যদি আর একটু লেট করে ফেলতাম বা কোনোভাবে তুমি পর্যন্ত সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারতাম তাহলে কি হতো! তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার বাবা মার কি হতো বলো! জীবন টা এতো সহজ নয় হুর। নিজেকে পরিবর্তন করো। নিজের মাঝে ম্যাচুরিটি আনো। নিজেকে সামলাতে শেখো। তোমাকে বিপ’দ থেকে রক্ষা করার জন্য সবসময় কেউ থাকবে না কিন্তু। নিজেকে নিজেই সেফ করতে হবে। ”
নিজের কথা শেষ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো ফাইয়াজ। এক পলক হুরের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। হুর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোঁখ তার জলে টইটুম্বুর হয়ে আছে। ফাইয়াজ এর ব্যবহারে ক’ষ্ট লাগলেও তার একটা কথাও ভুল ছিলো না এটা মানে হুর । আজ নিজের ভ’য়ের কারণে প্রাণ হারাতে চলেছিল সে। হুর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবে। এমন কঠিন কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে শান্ত রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর বাকি টা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তিনি যদি ভাগ্যে মৃ’ত্যু লিখে থাকেন তাহলে সে টা লঙ্ঘন করা সম্ভব নয়। হুর নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। এখন ফ্রেস হয়ে পড়তে বসবে সে।
——————————————————————
একটা অন্ধকার রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে একটা লোক কে। লোকটার মুখ বাধা থাকায় কিছুক্ষন পর পর গুঙিয়ে উঠছে লোকটা। হঠাৎ করে দরজা খুলে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো। দরজা দিয়ে আলো প্রবেশ করায় বেঁধে রাখা লোকটি চোঁখ খিচে বন্ধ করে নিলো। দীর্ঘক্ষন অন্ধকারে থাকায় হঠাৎ আলো চোঁখে পড়াতে চোঁখ মেলতে ক’ষ্ট হচ্ছে তার। মাথার উপর আলো জ্ব’লে ওঠায় ধীরে ধীরে চোঁখ খুললো লোকটা। প্রথমে স্পষ্ট না দেখলেও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগলো তার দৃষ্টি। সামনে তাকাতেই আঁ’তকে উঠলো লোকটা। সামনে একজন অচেনা লোক বসে আছে যার দেহ সম্পূর্ণ কালো পোশাকে আবৃত হয়ে আছে। চেহারা দেখার কোনো উপায় নেই। মুখটাও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। শুধু দেখা যাচ্ছে তার জ্ব’লন্ত চোঁখ। সেই চোঁখে যেনো আগু’ন জ্বল’ছে। চোঁখ তার জ্ব’লন্ত হলেও আচার আচরণ তার একেবারেই শান্ত। এ যেনো ঝড় আসার আগের পূর্বাভাস। লোকটা শান্ত ভঙ্গিতে বেঁধে রাখা লোকটার দিকে তাকালো। এতেই যেনো আত্মা কেঁ’পে উঠলো লোকটার। বুঝতে পারলো হয়তো খারাপ কিছু হতে চলেছে তার সাথে। মুখ দিয়ে হালকা উম উম শব্দ করলো। অচেনা লোকটা হাত বাড়িয়ে লোকটার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর নাম হাবিব তাই তো! আচ্ছা এসব বাদ। এটা বল কে পাঠিয়েছিল তোকে আমার হুরপরীকে মা’রার জন্য!”
হাবিব নামক লোকটা ঘামতে লাগলো। কিন্তু কোনো জবাব দিলো না। অচেনা লোক টা আবার শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“কে পাঠিয়েছিল তোকে আমার হুরপরীকে মা’রার জন্য! ভালোয় ভালোয় বলে দে। ”
হাবিব নামক লোক টা এবারও কোনো জবাব দিলো না। অচেনা লোক টা নিজের পকেট থেকে একটা ধারা’লো ছু’রি বের করে হাতে নিয়ে ঘোরাতে লাগলো। লোকটা ছু’রি দেখে শুকনো ঢোক গিললো। এই মুহূর্তে তার খুব করে পানির প্রয়োজন।
-“কি বলবি না কে পাঠিয়েছে তোকে হুম!”
হাবিব তারপরও কোনো কথা না বলায় হুট করে তার হাতের কব্জিতে ছু’রি বসিয়ে দিলো অচেনা লোকটা। ছু’রির ধারে কব্জি কে’টে ঝুলতে লাগলো হাবিবের। অসহনীয় ব্য’থায় চি’ৎকার করে উঠলো সে।
-“স… স্যা স্যার আমারে মাফ কইরা দেন স্যার। টাকার লো’ভে পইড়া গেসিলাম আমি। তাই এমন কাজ করতে গেসিলাম। আমারে আপনে মাফ কইরা দেন। ”
-“কে পাঠিয়েছে তোকে নাম বল। ”
-“নাম বলার অনুমতি নাই আমার স্যার। ডিল করার সময় সে আমারে বলে নিসিলো আমি যদি কারোর কাছে তার নাম কই তাইলে সে আমার ফামিলির সবাইরে মাই’রা ফালাবো। আমি তার নাম কইতে পারুম না স্যার। ”
অচেনা লোকটা গ’র্জে উঠে বললো,
-“নাম বল তার নাহলে এতো য’ন্ত্রণাদায়ক মৃ’ত্যু দিবো যে কল্পনাও করতে পারবি না। ”
লোকটা ভ’য়ে আঁ’তকে উঠে বললো,
-“ক… কইতাসি স্যার। আমারে আমারে…. মো.. মোস্তফা চৌধুরী পাঠাইসে ওই মাইয়াটারে মা’রার জন্য।”
হাবিব কথা শেষ করার সাথে সাথে পরপর কয়েকবার তার মাথায় শু’ট করলো অচেনা লোকটা। হাবিবের নিথর দেহের সামনে বসে আফসোস করে বললো,
-“সো সরি তোকে মাফ করতে পারলাম না। কি করবো বল আমার হুরপরির ক্ষ’তি যেই করতে চাবে তাকেই মর’তে হবে। তবে তোর ফ্যামিলির সেফটির দায়িত্ব আমার। ”
অচেনা লোকটা নিজের পার্সোনাল ইনফরমার কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
-“কিছু জানতে পারলে ওই মোস্তফার উদ্দেশ্য সম্পর্কে! আমি তো আগেই ধারণা করেছিলাম সেই এসব করছে।”
-“স্যার কিছুটা জানতে পেরেছি। ওই মোস্তফা চৌধুরীর ধারণা তার ছেলের মৃ’ত্যুর পিছনে হুর ম্যাম এর হাত আছে। কারণ লাস্ট বার হুর ম্যাম তার ছেলের সাথে খারাপ আচরণ করেছিল। তাই সে হুর ম্যাম কে মা’রতে চাচ্ছে। ”
-“ঠিক আছে তুমি এবার যেতে পারো। আর অবশ্যই সব খোঁজখবর রাখতে থাকবে আর আমাকে জানাবে। ”
-“ওকে স্যার। ”
অচেনা লোকটা নিজের গার্ড দের ডেকে তাদের বললো,
-“লা’শটা মোস্তফার বাড়ির সামনে ফেলবে। তারও জানা উচিত কার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছে আর এর পরিণতি কতটা ভ’য়ানক হবে।”
অচেনা লোকটা সিটি দিতে দিতে বেরিয়ে গেলো।
#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৩
মাঝরাত! নিস্তব্ধ পরিবেশ। হঠাৎ ঠোঁটে তীব্র ব্য’থা অনুভব হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো হুরের। ঘুম হালকা হতেই স্পষ্ট বুঝতে পারলো কেউ তার ঠোঁট নিজের ঠোঁট দ্বারা আঁকড়ে ধরে আছে। আঁকড়ে ধরে আছে বললে ভুল হবে লোক টা অনবরত তার ঠোঁট কামড়ে চলেছে। তীব্র ব্য’থায় গুঙিয়ে উঠলো হুর। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। লোকটা কে অনবরত ধাক্কা দিতে লাগলো নিজের কাছ থেকে সরানোর জন্য। কিন্তু লোকটা কে একচুল ও নড়াতে পারলো না। ভ’য়ে বুক কাঁপ’ছে হুরের। এখনই না আবার সেন্স হারায়। কিন্তু তখনই ফাইয়াজ এর বলা কথা গুলো মনে পড়তেই আবার পুরো দমে ধাক্কাতে লাগলো অচেনা লোকটাকে।
নিজের কাজে বাঁধা পাওয়ায় বিরক্ত হলো অচেনা লোকটা। নিজের এক হাত দিয়ে হুরের দুই হাত একত্র করে চেপে ধরলো। হুর ব্য’থায়, ভ’য়ে কেঁ’দে ফেললো। যদিও কোনো শব্দ করতে পারলো না।
হুরের কা’ন্না অনুভব করতেই লোকটার মন যেনো নরম হলো। কাম’ড়ানো বন্ধ করলেও ঠোঁট ছাড়লো না হুরের। সফ্টলি চুমু খেতে লাগলো হুরের ঠোঁটে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর হুরের ঠোঁট ছেড়ে দিলো অচেনা লোকটা। হুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“এটা তোমার প্রাপ্য ছিলো হুরপরি। You know what তুমি আমাকে অনেক ক’ষ্ট দাও। তুমি জানো না তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কতো ক’ষ্ট হবে! হয়তো ম’রেই যাবো। আমার প্রাণ যে তোমার মাঝে আটকে আছে!হয়তো জানতে না। কিন্তু আজ এই মুহূর্ত থেকে জেনে নাও। তুমি শুধু আমার। যে তোমার ক্ষ’তি করার চেষ্টা করবে তাকে যেমন শা’স্তি পেতে হবে তেমনি তোমার অসাবধানতার জন্য যদি তোমার কোনো ক্ষ’তি হয় তাহলে সেটার জন্য তোমাকে শা’স্তি পেতে হবে। আজকে যা শা’স্তি দিলাম তারচেয়ে ভয়া’নক কিছু হবে পরবর্তী বার বুঝতে পেরেছো! যদিও আমার কোনো আপত্তি নেই এমন শা’স্তি দিতে। বরং আমি চাইবো তুমি প্রতিদিন এমন কোনো ভুল করো আর আমি তোমাকে এমন করে চুমু টুমু খাবো। আজ তাহলে আসি!
ভালোবাসি আমার পরিটাকে। অনেক অনেক ভালোবাসি। ”
লোকটা হুরের কানে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। লোকটা সরে যেতেই এক লাফ দিয়ে উঠে বসলো হুর। নিজের বুক চেপে ধরে হাপাতে লাগলো। অচেনা লোকটার কথা মাথায় আসতেই তাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করলো কারণ সম্পূর্ণ ঘর অন্ধকারে ঢেকে আছে। হুরের স্পষ্ট মনে আছে ঘুমানোর আগে সে টেবিল ল্যাম্প অন করে ঘুমিয়েছিল। তারমানে ওই লোকটাই লাইট অফ করেছে যাতে হুর তাকে দেখতে না পারে। হুর দ্রুত টেবিল ল্যাম্প অন করলো। তারপর বেড থেকে নেমে রুমের লাইট অন করলো। সম্পূর্ণ ঘর আলোকিত হতেই হুর দেখলো ঘরে সে ব্যতিত আর কেউ নেই। বেলকনির দরজা বন্ধ যেমন টা সে ঘুমানোর আগে লক করেছিল।
হুর অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো লোকটা তাহলে এলো কোথা থেকে আর গেলোই বা কোথা থেকে। হুরের মনে হচ্ছে সে এতক্ষন কোনো স্বপ্ন দেখছিলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কেউ তার রুমে ঢুকে তার সাথে এমন করবে! আর লোকটা আসলো তো আসলো কোথা থেকে। হঠাৎ নিজের ঠোঁটের কথা মনে হতেই আয়নার সামনে চলে গেলো হুর। আয়নায় নিজের ঠোঁট দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো হুর যে এতক্ষন যা ঘটেছে সত্যি ঘটেছে। তার ঠোঁট বি’শ্রী ভাবে ফুলে আছে। দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ কা’মড়েছে।
বাকি রাতটুকু কিভাবে কি হলো চিন্তা করতে করতেই কেটে গেলো হুরের। চোঁখের পাতা কিছুতেই এক করতে পারলো না ভ’য়ে। গুটিশুটি হয়ে বেডে বসে রইলো।
অন্যদিকে অচেনা লোকটা মিটিমিটি হেসে নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
-“আজ আমাদের first lip kiss ছিলো পরি। ভাবা যায় আমি তোমাকে চুমু খেয়েছি। সেই একটা অনুভূতি। ইস সেই দিন কখন আসবে যখন আমি তোমাকে যেকোনো সময় চুমু খেতে পারবো! ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে। উম খুব শীঘ্রই সেই দিন টা আসুক। অপেক্ষায় আছি। ”
লোকটা নিজের মাথা চুলকে লাজুক হাসি দিলো। তারপর বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। অনেক ক্লান্ত সে। আজকে অনেক ধকল গেছে। শুতেই গভীর ঘুমে ডুব দিলো অচেনা লোকটি।
একজন আরামে ঘুমিয়ে আর অপর জন চিন্তায়, ভ’য়ে না ঘুমিয়ে বাকি রাতটুকু কাটিয়ে দিলো।
————————————————————————
সকাল সকাল ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছে হুর। কিন্তু সমস্যা একটাই তার ঠোঁট এখনো অসম্ভব রকম ফুলে আছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না হুর। হঠাৎ করে মাথায় আসলো লিপিস্টিক এর কথা। deep মেরুন রঙের একটা লিপিস্টিক বের করলো সে। কিন্তু লিপিস্টিক দিতেও কেমন যেনো লাগছে তার। ফাংশন ছাড়া সে সচরাচর সাজে না। আর ভার্সিটি তে তো নাই। শুধু মাত্র অনুষ্ঠানে দুইবার সেজেছিলো। এখন হুট করে সাজলে সবাই বাঁকা চোঁখে তাকাবে জানা আছে তার। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় ও তো নেই। হুর নিজের ঠোঁটে গাঢ় করে লিপিস্টিক দিলো। শুধু লিপিস্টিক দেয়াতে কেমন খালি খালি লাগছে তাই চোখেও হালকা করে কাজল দিলো। এবার পারফেক্ট লাগছে। আর ঠোঁটের ফোলা টাও বোঝা যাচ্ছে না। হুর নিজের ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতেই দেখলো ফাইয়াজ ডাইনিং টেবিলে বসে ফোন টিপছে।
হুর টেবিলের সামনে এসে গুডমর্নিং উইশ করলো ফাইয়াজ কে। ফাইয়াজ হুরের দিকে হাসি মুখে তাকালেও হুর কে দেখার পর তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“ভার্সিটিতে কি পড়াশোনা করতে যাবে নাকি নিজের রূপ দেখাতে! ছেলেদের নিজের রূপ দেখাতে খুব ভালো লাগে তাই না!”
ফাইয়াজ এর কথা খুব আ’ঘাত দিলো হুর কে। কেনো যেনো খুব কা’ন্না পেলো। হুর কোনোমতে কা’ন্না আটকে জবাব দিলো,
-“আ… আপনার কি আমাকে তেমন ধরণের মেয়ে মনে হয় ভাইয়া! ”
-“যদি সেই ধরণের মেয়ে না হয়ে থাকো তাহলে সাজ মুছে এসো। এমন সাজগোজ করে যাচ্ছ যাতে ছেলেরা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে বুঝতেই পারছি। ”
হুর রা’গে, দুঃ’খে কেঁ’দেই ফেললো। ধূপ’ধাপ পা ফেলে নিজের রুমে এসে ধু’ম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঠোঁট ঘষা শুরু করলো। এমনিতেই ক্ষ’ত ছিলো তার উপর এতো জোরে ঘষার কারণে ঠোঁটের চামড়া ফে’টে র’ক্ত বেরিয়ে আসলো। অপ’মানে, ব্য’থা’য় চোঁখ দিয়ে তার গলগল করে জল পড়ছে। ঠোঁট ফে’টে র’ক্ত গড়াতে দেখে ঘষা থামালো হুর। অনেক ক’ষ্টে নিজের কা’ন্না থামিয়ে ওয়াশরুম এ গিয়ে মুখ ধুয়ে আসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
-“সাজলে যদি আমি ছেলেদের রূপ দেখানো টাইপ মেয়ে হই তাহলে আর জীবনেও সাজবো না। সাজের কোনো দরকার নেই আমার। উনি কি জানেন সাজ ছাড়াই আমার জন্য কতো ছেলে পা’গল। ”
হুর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে নেমে গেলো। ডাইনিং টেবিলে বসে চুপচাপ নিজের খাবার খেতে লাগলো। খাবার খেতেও ভীষণ ক’ষ্ট হচ্ছে হুরের। ঠোঁট প্রচন্ড জ্বা’লা করছে। হুরের মুখের দিকে চোঁখ পড়তেই আঁ’তকে উঠলো ফাইয়াজ। নাক চোঁখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কা’ন্না করেছে। আর ঠোঁটের ফা’টা দিয়ে এখনো হালকা হালকা র’ক্ত বেরোচ্ছে। ফাইয়াজ এর হুট করে খুব খারাপ লাগলো হুরের জন্য। সে বুঝতে পারলো একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। ফাইয়াজ ভাবলো হুরের খাওয়া শেষ হলে তাকে সরি বলবে। কিন্তু হুর সেই সুযোগটাই ফাইয়াজ কে দিলো না। নিজের খাবার শেষ করে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। একবারো ফাইয়াজ এর দিকে তাকালো পর্যন্ত না। ফাইয়াজ ভাবলো গাড়িতে ওঠার পর সরি বলে দেবে। কিন্তু বাইরে গিয়ে আর হুরের দেখা পেলো না। দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো হুর নিজের গাড়িতে করে ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে।
ফাইয়াজ নিজের চুল খাম’চে ধরে বিড়বিড় করে বললো,
-“ওহ শিট! আমি আবার ক’ষ্ট দিয়ে ফেললাম হুর কে। আমি জানি আমার অমন করে বলা উচিত হয়নি। কিন্তু ওভাবে না বললে যে তুমি মানতেনা। যাই হোক তোমার রা’গ তো আমি ভাঙিয়েই ছাড়বো। দেখে নিও মিস হুমাইরা জান্নাত হুর। ”
লিয়া আসার পর হুর কে নিয়ে অনেক প্রশ্ন করলো ফাইয়াজ এর কাছে। কিন্তু ফাইয়াজ বারবার এড়িয়ে যাওয়াতে লিয়া বুঝলো আবার কিছু হয়েছে। তাই সে আর বিষয়টা ঘা’টালো না। লিয়া কে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে ফাইয়াজ চলে গেলো তার গন্তব্যে।
চলবে?
(