#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৯
আবরন আর পূর্ণতা রিকশায় চড়ে বসতেই রিকশা চলতে শুরু করল । পূর্ণতা রিকশায় উঠে বসতেই মিলি রহমানের কল এলো । পূর্ণতা কানে ফোন দিয়ে কথা বলছে । পাশ থেকে আবরন ওকে জ্বালিয়ে মারছে । কখনো তো ওর গাল টিপে দিচ্ছে , কখনো ওর নাক । কখনো হাতে চিমটি কাটছে তো কখনো চুল ধরে টান দিচ্ছে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ঠিক আছে , আজ ই তো রওনা হচ্ছিস । তখন ফোন দিয়ে জানাস ।
পূর্ণতা বলল ,
– ঠিক আছে আম্মু । এখন রাখছি । আল্লাহ হাফেজ ।
পূর্ণতা কল কেটে জলদি জলদি ব্যাগে ফোনটা ঢুকিয়ে আবরনের দিকে চক্ষু গরম করে বলল ,
– এই সমস্যা কি আপনার ?? আজাইরা ভালো লাগে না ??
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– না । যদি আজাইরা ভালো লাগত তাহলে কি আর এমন করতাম ??
পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,
– হুহ , চুপচাপ বসুন নয়তো ………..!!
আবরন ভ্রু নাচিয়ে বলল ,
– নয়তো কি বলো ?? …….. কি হলো চুপ করে গেলে যে ?? নয়তো কি আমাকে রিকশা থেকে ফেলে দেবে ।
পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,
– হ্যা , তা-ই করবো ।
আবরন চোখ বড় করে বলল ,
– ওও , ওকে , আম স্কেয়ার্ড !!
তারপর হু হা করে হেসে বলল ,
– পিচ্চি গাঁধা টা নাকি এই বড় হাতিটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবে !!
এই বলে আবারো হাসতে লাগল ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে রাগ দেখিয়ে বলল ,
– কি বললেন ?? আমি পিচ্চি গাঁধা ??
আবরন বলল ,
– হ্যা ।
– এই তাহলে আপনি নিজেকে হাতি কি করে ভাবতে পারেন ?? আপনি তো তাহলে কিংকং মুভির শিম্পাঞ্জি ।
এই বলে পূর্ণতা ও হাসতে লাগল ।
আবরন বলল ,
– বাহ , এই কয়দিন আমার সাথে থেকে থেকে তবুও গাঁধা থেকে ছাগল হতে পেরেছো !!
– আপনার সাথে থেকে ?? এটা ও আমাকে শুনতে হবে ??
– তাহলে কি অন্য কারো সাথে ছিলে ??
– কারো সাথেই ছিলাম না , বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিউরনের বিকাশ ঘটছে ।
আবরন বলল ,
– তাই নাকি ?? সত্যিই যদি নিউরনের বিকাশ ঘটে থাকে তাহলে ১৯ বছর বয়সে এসেও তুমি এখন ১২ বছরের বাচ্চাদের মতো বিহেইভ করো কেন ??
পূর্ণতা বলল ,
– আমি ১২ বছরের বাচ্চাদের মতো বিহেইভ করি ?? ওকে , ফাইন । মেনে নিলাম ।
আবরন খুশি হয়ে বলল ,
– সত্যি বলছো ?? এটলিস্ট শিকার তো করলে । আ’ম প্রাইড অব ইউ ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবল ,
– মার্কেটে চলুন আগে দেখাবো আপনাকে ১২ বছরের বাচ্চা কাকে বলে , কত প্রকার ও কি কি !! হুহ । আমার সাথে পাংগা নিচ্ছেন । হারে হারে বোঝাবো ।
………………………………………………..
চট্টগ্রাম শহরের জনপ্রিয় মার্কেট রিয়াজ উদ্দিন বাজারে পৌঁছে একে একে সবাই রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালো । সব রিকশার ভাড়া মিটিয়ে সবাই গলির মুখের দিকে রওনা হলো ।
জিব্রান বলল ,
– এই জায়গায় দেখি ঢাকা নিউ মার্কেটের মতো অবস্থা ! এতো মানুষ !!
আবরন বলল ,
– হু , এটা চট্টগ্রাম শহরের জনপ্রিয় একটা মার্কেট । তোমার যাবতীয় সব কিছু তুমি এখানেই পাবে পাইকারি দামে । আর এখানেও নিউ মার্কেট আছে । এখানে ঘুরে দেখে তারপর সেখানে যাচ্ছি । আরো অনেক মার্কেট আছে ।
জিব্রান বলল ,
– অনেক ভিড় । এই মেয়েরা সব সাথে থাকো । হারিয়ে গেলে সমস্যা ।
আবরন পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে হেঁটে চলছে । বাকিরাও একই কাজ করছে । কারন সেইফটি ফার্স্ট ।
মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে পূর্ণতা আবরনকে বলে উঠল ,
– আমার একটা সানগ্লাস লাগবে ।
আবরন বলল ,
– ওকে , সামনে অনেক দোকান আছে । কিনে দেব ।
– সাথে একটা ঘড়িও লাগবে ।
– সেটাও আছে । কিনে দেব ।
একটা বড় সুপার শপের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে পূর্ণতা আবরনকে হাত টেনে দাঁড় করিয়ে দিল ।
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি হলো ?
পূর্ণতা আবরনকে টেনে সুপার শপে ঢুকতে ঢুকতে বলল ,
– চলুন চলুন । দেখি কি পাওয়া যায় এখানে ??
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে । বাকিদেরকে বলি সামনে যেতে ।
আবরন বাকিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তোমরা সামনে এগোতে থাকো । কিছু পছন্দ হলে গলির নাম্বার আর দোকানের নাম্বার বলো ফোন করে । আমি আর পূর্ণতা আসছি একটু পর ।
সবাই সামনে চলে গেল ।
আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে সুপার শপে ঢুকতেই পূর্ণতা একটার পর একটা নিয়েই চলেছে ।
– আমি চকোলেট খাবো ।
– আমার ড্রাই ফ্রুটস পছন্দ । একটা নিয়ে নিই ।
– আমার এই আমের আচার টা খুব ভালো লাগে । এটাও নিবো ।
– আমার এই পিকাচুর সফট টয় টা পছন্দ । আমি এটা নিই ।
– আমার নিউটেলা খালি খেতে ভালো লাগে । আমি এটাও নিব ।
আরো অনেক হাবিজাবি পূর্ণতা নিল সুপার শপ থেকে । আবরন রীতিমতো শকড্ । পূর্ণতা সব বিল করিয়ে আবরনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পে করে দিল ।
সুপার শপ থেকে বের হওয়ার সময় আবরন পূর্ণতা কে বলল ,
– তুমি খাদক হলে কবের থেকে ?
– ছোট থেকেই খাই আমি । এখন জলদি চলুন । আরো কত কিছু কিনতে হবে !
আবরন বলল ,
– এই খাবার গুলো তো ঢাকা ই পেয়ে যেতাম । এখান থেকে টেনে নেওয়ার কোনো মানে হলো ??
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ১২ বছরের বাচ্চা এত কিছু বোঝে নাকি ? আমরা তো এই বয়সে যা দেখবো তা ই কিনতে মনে চাইবে তাই না ??
এত কথা না বলে চলুন জলদি ।
আবরন মনে মনে ভাবছে ,
– ওও আচ্ছা , এই খবর !! এতক্ষনে বুঝলাম । আমি ও তো ভাবছি তোমার হঠাৎ মাথা গেল নাকি ? এখন বুঝতে পারছি তুমি জাতে মাতাল কিন্তু তালে ঠিক । ওকে , আমি ও দেখবো তুমি কি কি কিনতে পারো । আমার কোনো সমস্যা নেই । আমি টাকা দিতে দিতে টায়ার্ড হবো না কিন্তু তুমি নিজেই কিনতে কিনতে টায়ার্ড হয়ে যাবে । আই প্রমিজ ।
এই ভেবে মনে মনে মুচকি হেসে পূর্ণতা কে নিয়ে এগিয়ে গেল ।
………………………………………………..
দুপুর ৩ টা ,
সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে লাঞ্চ করবে বলে ।
এর আগের পুরো সময় পূর্ণতা প্রায় এক ট্রাক মার্কেটিং করেছে ।
এতো ব্যাগ দেখে জিব্রান আবরনকে বলল ,
– কিরে , তোরা কি কিনেছিস এতো ??
আবরন হেসে পূর্ণতার দিকে তাকালো । ওর মুখটা চুপসে গিয়েছে । মনে মনে ভাবছে ,
– আল্লাহ, ভাইয়া যে সাথে আছে সেটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম । এখন উনি যদি ইচ্ছে করে সত্যি টা বলে দেয় তাহলে তো ভাইয়া আমার খবর করে দেবে । আল্লাহ বাঁচাও । আমি আর কিছু কিনবো না । এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও । প্লিজ আল্লাহ প্লিজ ।
আবরন পূর্ণতা কে চুপ করে থাকতে দেখে বিষয়টা বুঝতে পেরে জিব্রান কে জবাব দিল ,
– আরে , নিজের জন্য কিছু কিনেছি আর বাবা আর আম্মুর জন্য ।
সবাই বলল ,
– বাহ , ভালো তো । আমরাও বাসার সবার জন্য একটা করে কিছু কিনে নেব । তাহলে সবাই খুশি হবে ।
আবরনের উত্তর শুনে পূর্ণতা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো । মনে মনে নিজের ভুল স্বীকার করল ।
লাঞ্চ করে সবাই আবার বেরিয়ে পড়ল মার্কেট থেকে সবার জন্য কিছু কেনার উদ্দেশ্যে ।
সবাই আগে আগে বেরিয়ে গেল । আবরন আর পূর্ণতা পেছনে । কারন , সব ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে তারপর বের হতে হয়েছে ।
বের হওয়ার সময় পূর্ণতা আবরনকে বলল ,
– একটা কথা বলি ??
আবরন বলল ,
– হু , বলো ।
– I’m sorry .
আবরন বলল ,
– সরি কেন ??
পূর্ণতা আবরনের সামনে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,
– এই যে , আপনার সাথে এতক্ষন এমন বিহেইভ করে আপনার টাকা গুলো শুধু শুধু নষ্ট করলাম । এই জন্য সত্যি ই সরি । রাগের মাথায় অনেক বড় ভুল করেছি । প্লিজ , মাফ করে দিন ।
আবরন হেসে বলল ,
– ইটস ওকে । তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এই জন্য আমি খুশি হয়েছি ।
পূর্ণতা মন খারাপ করে বলল ,
– কিন্তু এতসব জিনিস যে কিনলাম ? এগুলোর কি হবে ??
– তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো তাই তোমার প্রতি খুশি হয়ে আমার পক্ষ থেকে এই সব তোমাকে উপহার হিসেবে দিলাম । এবার খুশি ??
পূর্ণতা চোখ বড় করে বলল ,
– আপনি সত্যি বলছেন ?? এত কিছু আমাকে এর জন্য উপহার হিসেবে দিয়ে দেবেন ।
– তুমি চাইলে দুজনে মিলে ভাগ করে খাবার গুলো খেতে পারি । আর ঘড়ি , সানগ্লাস আর বাদ বাকি যেসব গার্লস এক্সেসরিজ নিয়েছো সেগুলো তোমার । সেগুলো তো আর আমি ইউজ করতে পারবো না ।
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– আপনি খুব ভালো । 😏
আবরন বলল ,
– সত্যি বলছো ? আমি তো জানতাম আমি খারাপ ! 🤭
পূর্ণতা হাসলো । তারপর বলল ,
– আরেকটা কথা ??
আবরন বলল ,
– আবার কি ??
পূর্ণতা বলল ,
– ধন্যবাদ ।
– এখন আবার ধন্যবাদ কেন ??
– আমার ফেস রিয়্যাক্ট দেখে আমার মনের কথা বুঝে নেওয়ার জন্য ।
আবরন মুচকি হেসে বলল ,
– এটা আমি শুধু তোমার ক্ষেত্রে ই বুঝতে পারি , অন্য কারো ফেস রিয়্যাক্ট দেখে তার মনের কথা বোঝার ক্ষমতা আমি রাখি না । এই সিক্সথ সেন্স টা আল্লাহ আমাকে দিয়েছে । so , ধন্যবাদ যদি কাউকে দেওয়ার হয় , তাহলে সেটা আল্লাহ কে দাও ।
পূর্ণতা কিছু বলল না কিন্তু মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল ।
তারপর আবরন আর পূর্ণতা বাকিদের কাছে আবার গিয়ে পৌঁছালো ।
………………………………………………..
সন্ধ্যা নেমেছে আকাশে , এমন সময় সব মার্কেট ঘুরাঘুরি শেষ করে যাবতীয় জিনিস পত্র কিনে নিয়ে আবরন গাড়ির ড্রাইভার কে কল দিয়ে মার্কেটের প্রবেশ পথে আসতে বলে । কারন এত সব জিনিস নিয়ে এই সময় রিকশায় গেলে রিস্ক । তাই গাড়িতে করেই ফার্মহাউজে ফিরে গেল ।
সন্ধ্যায় চা নাস্তা খেয়ে সবাই যার যার রুমে গিয়ে ব্যাগ – স্যুটকেস এবং অন্যান্য সব জিনিস গুছিয়ে নিল । এরপর কেয়ার টেকার রা এক এক করে সবার রুম থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে গাড়িতে তুলে দিল ।
এখন রওনা হলে ঢাকা যেতে যেতে সকাল ৬ টা ৬: ৩০ এর মতো বাজবে কারন রাস্তায় প্রচুর জ্যাম । ফার্মহাউজের শেফ ডিনারের জন্য ফ্রাইড রাইস সাথে চিকেন উইংস আর ভিজেটবল প্যাকিং করে দিয়ে দিয়েছে । খাবার নিয়ে খাওয়ার জন্য সাথে দিয়েছে ওয়ান টাইম প্লেট এন্ড গ্লাস । সাথে করে কিছু কোল্ড ড্রিংকস এর ক্যান ও দেওয়া হয়েছে আর পানি তো আছেই ।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে ফার্মহাউজ থেকে গাড়ি বের হয়ে ঠিক ৮:৩০ টার সময় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো ।
আজ এভাবে রওনা হতে হতো না নাইট কোচে যদি রবিবার থেকে মেডিক্যাল ওপেন না হতো । অর্থাৎ কাল বাসায় পৌঁছে ই মেডিক্যাল এ সবার উপস্থিত হতে হবে । শুধুমাত্র জিব্রান আর নাদিরা ছাড়া । তবে ওদের ও ছুটি শেষ অফিসের । কাল থেকেই জয়েন করতে হবে ।
ডিনার করে সবাই অনেকক্ষন আড্ডা দিলেও রাত ১ টা ৩০ এর দিকে সবাই ঘুমে বেহুশ । কারন সেই সকালে উঠেছে । তারপর থেকে তো বাহিরেই ঘুরছে । সবাই খুব টায়ার্ড । তাই যে যেভাবে পারছে সেভাইবেই ঘুমুচ্ছে । কেউ সিটে হেলান দিয়ে তো কেউ কারো কোলে কাত হয়ে । কেউ দুই মাথা একসাথে করে তো কেউ কারো কাধে মাথা রেখে ।
আবরন আর পূর্ণতা পেছনে একা বসাতে ওদের সুবিধা হয়েছে । দুজনই
সিটের উপরে পা তুলে পা একসাথে করে দুজন দুদিকে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে । কিন্তু আড়াইটার দিকে সবার শরীরেই এসির বাতাসে কিছুটা শীত শীত অনুভূতির সৃষ্টি করেছে । জিব্রান এসির হাওয়া ড্রাইভার কে কম করতে বলে নাদিরাকে পেচিয়ে ধরে আবার ঘুম দিল । সবাই সবাইকে পেচিয়ে ধরেই ঘুমুচ্ছে । জায়গা কম হওয়াতে কেউ নড়তে চড়তেই পারছে না ।
পূর্ণতার শীত লাগতেই ও নিজের সুতি ওরনা পা থেকে গলা পর্যন্ত মেলে ঘুমিয়ে পড়ল । একটু পড়েই আবার শীত লাগতে শুরু করেছে পূর্ণতার । ঘুম ভেঙ্গে যেতেই তাকিয়ে দেখল ওর ওরনা আবরন টেনে নিজের শরীরে দিয়ে রেখেছে । পূর্ণতা ভাবছে ও এখন কি করবে ?
আবরন এমন ভাবে ঘুমুচ্ছে পূর্ণতা ওরনা টান দিলেই ও জেগে যাবে । তাই কিছুক্ষণ এভাবেই চুপ চাপ বসে বাহিরের অন্ধকার পরিবেশ দেখতে নিজেকে ব্যস্ত রাখলো । কিন্তু অবশেষে নিজের ঘুম কে সামলাতে না পেরে আবরনকে ডেকে বলল ,
– আপনি একটু উঠবেন প্লিজ ? আমরা ওরনাটা শেয়ার করে গায়ে দিই ? 🥺
আবরন উঠে বসে ওকে ওরনাটা দিয়ে বলল ,
– সরি , আসলে ঘুমের ঘোরে নিয়ে নিয়েছি হয়তো ।
– হুম আমি বুঝেছি । কোনো ব্যাপার না । শেয়ার করলেই তো হয় ।
-সেটা কিভাবে ?
– বাকিদের দেখুন । সবাই বসে ঘুমুচ্ছে । সেভাবেই ঘুমুতে হবে । আর অল্প কিছুক্ষন ই তো ।
– তোমার আপত্তি না থাকলে আমার আর কিছু বলার নেই । লেটস শেয়ার ইট ।
পূর্ণতা উপরে পা তুলে আবরনের কাধে মাথা রাখলো আর আবরন সিটে মাথা রেখে তারপর ওরনা দুজনের শরীরের ওপর দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ।
সকাল ৬ টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি ,
ড্রাইভার আবরন কে বলল ,
– ছোট দাদা , আমরা রাজার বাগ পুলিশ লাইন্স এ আছি ।
আবরন চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল , বাহিরে এখনো আলো আধারের খেলা চলছে । অনেকটা জলদি ই ওরা পৌঁছে গিয়েছে । তাই মনে মনে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে ড্রাইভার কে বলল ,
– শোনো , তুমি আর আমি ওদের কে নামিয়ে দিয়ে তারপর বাসায় ব্যাক করি কেমন ? এত সকালে তো গাড়ি ঘোড়া দেখছি না ।
– ঠিক আছে । আগে কোথায় যাবো ??
– আগে আজিমপুরে ই চলো । ভাইয়া আর পূর্ণতা কে নামিয়ে দিই ।
– আচ্ছা ।
একে একে সবাই জেগে গেল । রাস্তায় চলার পথে একটা সি এন জি দেখতে পেয়ে নাদিরা বলল ,
– আবরন , গাড়ি থামাও । আমি সি এন জি দিয়ে চলে যাচ্ছি । আমার বাসা উল্টো পথে । তোমাদের দেড়ি হবে ।
জিব্রান বলল ,
– পাগল তুমি ? এই সকালে তুমি একা সি এন জি তে যাবে ??
পূর্ণতা বলল ,
– ভাইয়া , তুমি বরং ভাবিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর সেই সি এন জি দিয়েই আমাদের বাসায় চলে এসো ।
জিব্রান বলল ,
– হ্যা , ঠিক বলেছিস । তাহলে আমরা এখানেই নামি ।
জিব্রান আর নাদিরাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটল আজিমপুরের দিকে । যাওয়ার পথে ফাহিম আর রুহি নেমে গেল ওদের বাসার সামনে । আরেকটু সামনে গিয়ে আয়মানও নেমে গেল ।
প্রেনার বাসার সামনে আসতেই প্রেনা ও গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো । প্রেনাকে উদ্দেশ্য করে পূর্ণতা বলল ,
– সাবধানে যা । বাসায় পৌঁছে ম্যাসেজ দিস ।
– ঠিক আছে । ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে সবার সঙ্গে । টাটা ।
প্রেনার বাসার সামনে রিকশা দেখতে পেয়ে নীরা আর তাসিন ও নেমে গেল । বাকি রইল শুধু আবরন , পূর্ণতা আর ড্রাইভার ।
পূর্ণতা কে বাসার গেইটে নামিয়ে দিয়ে আবরন বলল ,
– সবার সব জিনিস গাড়ির ডিকিতেই আছে । সেগুলো আস্তে ধীরে ভার্সিটি শেষে সবাইকে দিয়ে দিব নে । ওকে ?
– ওকে ।
– এখন যাও ।
পূর্ণতা চলেই যাচ্ছিল । আবরন আবার গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণতা দের গেইটে ঢুকে ওকে পেছন থেকে ডাক দিল ।
– পূর্ণ ?
পূর্ণতা পেছনে ফিরে তাকাতেই আবরন মুচকি হেসে বলল ,
– আল্লাহ হাফেজ । ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে ।
পূর্ণতা ও মুচকি হাসি দিয়ে বলল ,
– আল্লাহ হাফেজ । দেখা হচ্ছে ।
তারপর চলে গেল উপরে ।
আবরন গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি এখন ওর নিজের বাসার দিকে রওনা হলো ।
আবরন সিটে মাথা রেখে গাড়ির রুফের গ্লাস দিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে ভাবল ,
– এই কটা দিনে তোমার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি পূর্ণ ! আর বার বার প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের দুজনের ভালোবাসাই সমান ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ।
আমি তোমাকে প্রমিজ করেছিলাম যে তোমার রেসপেক্ট আমি আবার মেডিক্যালের সবার সামনে ফিরিয়ে দেব । আর সেটা আমি আজ রাখতে চলেছি । এখন অপেক্ষা শুধু কিছু সময়ের । তারপর তোমার জন্য একটা বিগ সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে । রেডি থেকো মিস পূর্ণতা জামান ।
এই ভেবে ভেবে বাসায় পৌঁছে গেল আবরন । #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩০
পূর্ণতা রেডি হয়ে বসে আছে মেডিক্যালে যাবে বলে ।
সকালে বাসায় পৌঁছে মিলি রহমানকে জড়িয়ে ধরে তার কোলেই মাথা রেখে ঘুমিয়েছে পূর্ণতা । সাড়ে দশটার দিকে ঘুম ভাঙতেই পূর্ণতা দেখল মিলি রহমান নাস্তা নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে । মিলি রহমান বলছে ,
– তোকে ছাড়া এই কয়দিন যে কিভাবে কেটেছে আমার !! প্রথমদিন তো আধিরা এসে জোর করে ওদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু পরদিন আবার বাসায় আসতেই ফাঁকা বাসায় নিজেরই কেমন যেন লাগছিল ।
পূর্ণতা উঠে বসে মিলি রহমানের হাত থেকে প্লেট টা নামিয়ে রেখে মিলি রহমান কে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– আমিও তোমাকে মিস করেছি আম্মু । এই প্রথম তোমাকে ছাড়া কোথাও গিয়েছি , আলাদা রকমের ফিলিংস কাজ করছিল জানো । কিন্তু মনে হয়েছে তুমি বাসায় একা থেকে নিশ্চয়ই বোর হচ্ছো ।
– হু । এই দুইদিনে হারে হারে টের পেয়েছি তোরা আছিস বলেই আমি এখনো বেঁচে আছি ।
– আমাদের জন্য ই তো বাঁচতে হবে তোমায় !
– হু । এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয় । তারপর আমি খাইয়ে দিচ্ছি ।
– ঠিক আছে , ঠিক আছে । তুমি বসো , আমি এক্ষুনি আসছি ।
ব্রেকফাস্ট পূর্ণতা মিলি রহমানের হাতেই সাড়ল । তারপর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো ভার্সিটিতে যাবে বলে । বের হতেই দেখল বিছানার ওপর রাখা ফোনটা বাজছে ।
জলদি দৌড়ে গিয়ে কিছু না দেখেই ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে নিল ।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল একজন চেনা জানা প্রিয় মানুষের গলা ,
– গুড মর্নিং পূর্ণতা জামান । আপনি দয়া করে রেডি হয়ে থাকুন , আমি আপনাকে নিতে আসছি ।
পূর্ণতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আবরন কলটা কেটে দিল ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে মনে মনে আবরনকে একশ এক টা গালি দিয়ে তারপর রেডি হতে শুরু করল ।
রেডি হয়ে সেই কখন থেকে বসে আছে । আবরনের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই । এদিকে প্রেনা ও কল তুলছে না ।
প্রেনা কল না রিসিভ করাতে ওর মেজাজ আরো খারাপ হলো । তার মধ্যেই প্রেনার দুর্ঘটনা জনিত কথা গুলো মনে হতে শুরু হলো ।
– কি ভাবে করবো আমরা এর সমাধান ?? প্রেনা আমাকে একবারো কথা গুলো শেয়ার করার কথা ভাবল না । আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ই এত বড় একটা ভুল করলো আর আমাকেই জানালো না । জানাবেই বা কিভাবে !
ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠল ।
ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল প্রেনা কল করছে । ভাবনা বাদ দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পূর্ণতা কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে প্রেনার গলা শোনা গেল ।
– কল দিয়েছিলি ??
– হু । দিয়েছিলাম ।
– বল , কি বলবি ?
– আজ ভার্সিটিতে যাবি না ?
– যাবো । কিন্তু মনটা ভালো নেই ।
পূর্ণতা খুবই স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ,
– কেন ??
– আজ না কাল বলবো ।
– কি বলবি কাল ??
– অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা ।
– ঠিক আছে । কিন্তু আজ কেন নয় ??
– না , আজ না । কাল । আর প্রশ্ন করিস না ।
– ঠিক আছে । যেমন তোর ইচ্ছা ।
প্রেনা বলল ,
– হু , তাহলে ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে ।
– ওকে , সাবধানে থাকিস । আল্লাহ হাফেজ ।
– আল্লাহ হাফেজ ।
………………………………………………..
আবরন ক্যাম্পাসের মাঝে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা ।
ফাহিম বলল ,
– আবরন , সব রেডি । এখন শুধু পূর্ণতা ই আসা বাকি ।
– গেইটের দিকটা যেভাবে বলেছি সেভাবেই করেছিস তো ??
– হু সব পারফেক্ট আছে ।
– আজকে ও যদি কোনো আকাম করিস না তাহলে তোদের খবর আছে !
ফাহিম হু হা করে হেসে বলল ,
– ঐ দিন যদি আকাম না করতাম তাহলে তো তোর সাথে পূর্ণতার দেখা ই হতো না । আমার ভুলের জন্যই কিন্তু ঐদিন তোদের দুইজনের উপর ফুল পড়েছে ।
আবরন ও মুচকি হেসে বলল ,
– হু । ঠিক আছে । আমি তাহলে যাচ্ছি ওকে নিয়ে আসতে । ম্যাডাম আবার নাহলে রাগ করবে ।
– ঠিক আছে তুই যা !
আবরন মেডিক্যাল থেকে বের হতেই তাসিনের সাথে দেখা ।
– আবরন , পূর্ণতা কে আনতে যাচ্ছিস ?
– হ্যা , তোকে যা বলেছি সব ঠিক ভাবে করিস কিন্তু ।
– তুই কোনো টেনশন নিস না ব্রো ! আমি আছি তো । সব সামলে নেব ।
– থ্যাংকস রে ।
– থ্যাংকস এর কি আছে ?? বুকে লাগ ।
আবরন হেসে তাসিনের সাথে HUG করল ।
তারপর ওকে বিদায় জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল পূর্ণতা কে আনতে যাবে বলে ।
মিনিট ১৫ এর মধ্যে আবরন পূর্ণতা দের বাসার নিচে পৌঁছে ওকে কল দিল ।
পূর্ণতার প্রেনার সাথে কথা শেষ হতেই আবার ফোন বেজে উঠল । স্ক্রীনে ‘ ‘ ‘আবরন ‘ লেখা দেখেই কলটা রিসিভ করল ।
আবরন বলল ,
– আমি নিচে আছি । জলদি এসো ।
পূর্ণতা বলল ,
– এতক্ষন লাগল আসতে ? নিজেই দেড়ি করে এসে এখন আমাকে বলছেন জলদি করতে ? বাহ , ভালোই ।
আবরন বলল ,
– আচ্ছা , সরি । এসো ।
– ইটস ওকে । আসছি ।
আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করছে ।
এরই মধ্যে পূর্ণতা বাহিরে বেরিয়ে এলো । আবরন দেখল , আজকে পূর্ণতা কে অন্য দিনের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম লাগছে । পূর্ণতার পরোনে গাঢ় সবুজ এর সাথে হলুদ মিশ্রিত একটা লং ড্রেস । আজ ও হলুদ রং হিজাব পড়েছে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে আর এক কাধে ম্যাচিং করে সবুজ আর হলুদ শেডের ওরনা পড়েছে । ঠোঁটে ন্যুড কালার লিপস্টিক দিয়েছে শুধু । এতেই অনেকটা অন্য রকম লাগছে ।
পূর্ণতা বের হতেই দেখল আবরন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । নিত্যদিনের মতো আজ ও তার গায়ে পাঞ্জাবি আর গরমের মাঝেও কাশ্মীরি শাল তো আছেই । আজ আবরন ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে আর কালোর মাঝে মাল্টিকারের কাশ্মীরি সুতো কাজের শাল পড়েছে । দেখতে একদম বাদশাহ দের মতো লাগছে ।
পূর্ণতা আবরনের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আবরন গাড়ির দরজা খুলে ওকে বসতে জায়গা করে দিল । পূর্ণতা ভিতরে উঠে বসতেই আবরন ও এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল ।
পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দেখল ও সিট বেল্ট বাঁধেনি । তাই মুচকি হেসে নিজেই ওর সিট বেল্টটা বেঁধে দিল ।
তারপর নিজের সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশ্যে ।
আবরন ড্রাইভিং করতে করতে পূর্ণতা কে জিজ্ঞেস করল ,
– কেমন লাগছে আজ আবার প্রথম বারের মতো ভার্সিটির উদ্দেশ্য নিয়ে যেতে ?
– কোনো ফিলিংস কাজ করছে না ।
– তাই ??
– হু ।
– কেন ??
– কারন , আমার ব্রেন রিকভারি করে ফেলেছে ।
– হু , তা ঠিক । এই জন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া ।
– হুম ।
– আজকে তোমাকে দেখতে ভালো লাগছে ।
– কেন অন্যদিন লাগে না ??
– লাগে কিন্তু আছে না গুডের মধ্যে বেষ্ট ! আজকে বেষ্ট লাগছে ।
– ধন্যবাদ ।
– এখন থেকে হিজাব পড়বা । আর বোরকা ও পড়বা ।
– ঠিক আছে । চেষ্টা করবো ।
– উহু , শুধু চেষ্টা না । বাধ্যতামূলক ।
পূর্ণতা বলল ,
– ওকে । পড়বো ।
আবরন বলল ,
– আমরা এক্ষুনি ভার্সিটির এরিয়ায় ঢুকছি । তুমি বাহিরের দিকে দেখো । ওকে ?
– কেন বলুন তো ?
– দেখোই না ।
– ঠিক আছে ।
বাহিরে তাকানোর ১ মিনিটের মধ্যে মোড় ঘুরতেই আবরন গাড়ির স্পীড একদম স্লো করে দিল ।
পূর্ণতা দেখতে পেল রোডের দুইপাশে শত স্টুডেন্ট হাতে ফুলের থালা আর ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাথে স্লোগান তো আছেই ।
সবাই গাড়ির ওপরেই ফুল ছিটাচ্ছে আর মুখে বলছে ” Welcome Back Purnota Jaman ” .
আর ব্যানারেও লিখা , ” Welcome back Purno ”
“Welcome back to our campus purno ”
“Welcome purnota . We miss you a lot ”
“Welcome purno . We’re always with you ”
“Welcome Purnota . We love you all ”
এমন আরো বিভিন্ন লেখার ব্যানার হাতে নিয়ে রাস্তার দুই পাশ থেকে সবাই চিল্লাচিল্লি করছে আর হৈ হুল্লোর করছে ।
এসব দেখে পূর্ণতা বিশ্বাস ই করতে পারছে না । খুশিতে ওর চোখ টল টল করছে । টলটলে চোখ নিয়ে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন এক গাল হেসে পূর্ণতা কে বলল ,
– welcome back purnota jaman . All of the students and professors love you a lot and missed you too much . So , don’t cry … Give a smile and accept their infinity love . ♥️
গাড়ি গেইটের সামনে দাঁড় করিয়ে আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে নামার জন্য দরজা খুলে দিল ।
পূর্ণতা নেমে দাঁড়াতেই রোডে উপস্থিত সবাই ওর পেছনে এসে জড়ো হলো ।
পূর্ণতার চোখ থেকে টল টল করে পানি ঝরছে । পেছনে তাকিয়ে সবাইকে দেখে খুশিতে আরো পানি ঝরাতে লাগল নিজের চোখ থেকে । আবরন বলল ,
– সামনে চলো পূর্ণতা । তোমার জন্য পুরো ভার্সিটি অপেক্ষা করছে । আর প্লিজ কেদো না । কাদলে সবাই কষ্ট পাবে ।
পূর্ণতা চোখ মুছে বলল,
– আমি খুশিতে কাদছি । ভিতরে চলুন ।জলদি ।
-হু , চলো ।
মেইন গেইটের কাছে এগোতেই গেইটের দুইপাশে পুরো ক্যাম্পাস ভর্তি স্টুডেন্টস দের দেখা যাচ্ছে । গেইটের প্রবেশ পথ খালি রেখে সবাই দুইপাশে ভিড় জমিয়েছে । গেইটের বাম ও ডানের শুরুতেই তাসিন , আয়মান , প্রেনা আর ফাহিম কে দেখা গেল ।
গেইট দিয়ে প্রবেশ করার সময় আবরন পেছনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– পূর্ণতা জামান । সবাই তোমাকে বরণ করতে দাঁড়িয়ে আছে । এই পথ টুকু তুমি একাই পার করো । আমি আছি বাকি সবার মতো তোমার পেছনে ।
পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে আবরনের কথা শুনে আবারো কাদছে ।
ওর কথা মতো গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই ফাহিম আগে থেকে বেঁধে রাখা দড়িটা খুলে দিতেই গেইটের ওপর থেকে ডালা কাত হয়ে এক ঝুড়ি ভর্তি গোলাপের পাপড়ি পড়লো ওর উপরে ।
ফুলের বৃষ্টি তে ভিজে পূর্ণতা থেমে দাড়িয়ে উপরে তাকিয়ে আবারো সামনে পেছনে তাকালো ।
এত এত সারপ্রাইজ ও একসাথে নিতে পারছে না । এত খুশি আর এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে ওর ভেতর যে খুশিতে কেদেই চলেছে ।
আবরন দৌড়ে এসে ওর পাশে দাঁড়াতেই আয়মান , তাসিন , ফাহিম , প্রেনা ও এসে ওকে চারপাশ থেকে গোল করে ঘিরে ধরলো ।
ওদের সবার ওপর একসাথে পেপার বোম্ব ফাটানো হলো ।
সারা ক্যাম্পাস একসাথে বলে উঠল ,
Three cheers for purno …… Hip hip hurray !!!
Three cheers for coming back ….Hip hip hurray !!!
পূর্ণতা খুশি হয়ে কি করবে বা কি বলবে বুঝতেই পারছে না ।
সবাই হঠাৎ নীরব হয়ে গেল । এরই মধ্যে মাইকে আবরনের গলা শোনা গেল ।
পূর্ণতা ওর চারদিকে তাকিয়ে দেখল আবরন নেই । মনে মনে ভাবল ,
– একটু আগেই তো সাথে ছিল । হঠাৎ কখন চলে গেল খেয়ালও করি নি ।
তারপর হেসে আবরনের কথা শোনায় মনোযোগ দিল ।
আবরন বলছে ,
– ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি । সবাই ১ মিনিট নীরবতা পালন করি ।
১ মিনিট পর ….
আবরন বলল ,
– আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ।
সবাই বলল ,
– ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ।
আবরন বলতে শুরু করল ,
– প্রথমেই ক্যাম্পাসের সকলের প্রতি রইল আমার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং অবিরাম ভালোবাসা ।
আজকের এই সারপ্রাইজের আয়োজন
শুধু মাত্র তোমাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে । এই প্ল্যানের পেছনে মূলত ৩ জন বিশেষ মানুষের হাত আছে এবং তাদের ধারনাকে কাজে লাগিয়েই আজকের এতো আয়েজন ।
আমি তাদের নামটা বলবো কিন্তু তার আগে পূর্ণতা জামানকে স্টেজে উপস্থিত হওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হলো ।
সবাই চিল্লিয়ে উঠল । পূর্ণতা আস্তে আস্তে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল ।
আবরন এসে স্টেজের উপর থেকে হাত বাড়িয়ে দিল পূর্ণতার দিকে । পূর্ণতা আশেপাশের সকলের দিকে একবার তাকিয়ে আবরনের দিকে তাকালো । আবরন মাথা নেড়ে ইশারা করলো হাতটা ধরার জন্য ।
পূর্ণতা ভাবনা বাদ দিয়ে আবরনের হাতে নিজের কাপা কাপা হাতটা তুলে দিতেই আবরন নিজের হাতের মাঝে পূর্ণতার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ওকে আস্তে টেনে নিল স্টেজের উপর ।
পূর্ণতা স্টেজে উঠতেই ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলে আরেক দফা চিল্লিয়ে উঠল ।
আবরন বলল ,
– ওকে । এখন আমি সেই তিনজনে স্টেজে ডাকতে চাই যারা আমাকে প্রথম এই প্ল্যান সম্পর্কে ধারনা দেয় ।
তবে তাদের স্টেজে ডাকার পর আমি চাই , কেউ তাদের কে অপমানিত করবে না এবং তাদের কে খারাপ চোখে দেখবে না । আগে সবাই প্রমিজ করো ।
সবাই কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে প্রমিজ করল । কিন্তু পূর্ণতা খুবই চিন্তিত হয়ে গেল । ও মনে মনে ভাবছে ,
– আবরন কাদের কথা বলছে ? কোন তিনজন ? সবাই কি তাদের চিনে ?? আর তাদের দেখলে সবাই অপমানিত ই বা কেন করবে ?? কারা তারা ?? কারা ?? আবার কোনো সমস্যা আসতে চলছে না তো ?? সবাই যদি প্রমিজ ব্রেক করে তাদের অপমান করে বসে ! কি হবে তখন ??
আল্লাহ মাফ করো । আজ যেন কোনো খারাপ কিছু না হয় । সব তুমি ঠিক করে দিও । তোমার উপর ছেড়ে দিলাম আল্লাহ । এই খুশির দিনটা তুমি নষ্ট করো না আল্লাহ । প্লিজ , দয়া করো । সব ঠিক ভাবে হতে দাও । প্লিজ ।
সবার প্রমিজ শুনে আবরন সেই তিনজনকে স্টেজে ডাকল একসঙ্গে । তাদের দেখে ক্যাম্পাসের সকলে নীরব হয়ে গেল । এমনকি পূর্ণতা ও ।
সবার একটাই প্রশ্ন !!
– এই তিনজন ?? কেন ওদের ডাকা হলো ?? কেন ??
#চলবে ♥️