ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -৩১+৩২

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩১

আবরন ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলের মুখে “প্রমিজ” ধ্বনি শুনে সেই তিনজনকে স্টেজে উপস্থিত হতে বলল ।

আবরনের ডাক শুনে সেই তিনজন ক্যাম্পাসে উপস্থিত হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে স্টেজের দিকে এগোতেই সবার টনক নড়ল ।

সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে । ওদের তিনজনকে আজকের এই দিনটিতে কেউ আশা করে নি ।

পূর্ণতা ও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । তবে মুখে কিছুই বলছে না ।

সেই তিনজন স্টেজে পৌঁছাতেই আবরন বলতে শুরু করল ,

– এই তিনজনকে তোমরা চিনতে ভুল করোনি তা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি । তবুও বলি , এরা সেই তিনজন যারা পূর্ণতা কে ভুল বুঝে প্রথম ওকে ক্যাম্পাসে মারার জন্য নিজেদের দল ভারি করেছিল । হ্যা , এরা সেই তিনজন যারা নিজে পূর্ণতা জামানের গায়ে প্রথম হাত তুলেছিল । এরা সেই তিনজন যাদের কে খুঁজে বের করে আমি তাদের সেই হাতের উপর ঠিক সেই পরিমাণ কষ্ট ফিল করিয়েছি যতটা কষ্ট এরা কিছু না জেনে বুঝেই পূর্ণতা জামানকে দিয়েছিল । এরা সেই তিনজন‌ই যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এতকিছুর পরেও আমার সাথে যোগাযোগ করে পূর্ণতা জামানকে আবার এই ভার্সিটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে । হ্যাঁ, এরা সেই তিনজন‌ই যারা পূর্ণতা জামানকে তার রেসপেক্ট সহ তাকে এই ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনেছে । হ্যাঁ, এরাই সেই তিনজন !!

এরা সবার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী এবং সবার প্রথম পূর্ণতা জামানের নিকট ।

আমি এখন মাহবুব , সাঈদ আর ইশানের হাতে মাইক তুলে দিচ্ছি পূর্ণতা জামান এবং এখানে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার জন্য ।

আবরন ওদের হাত মাইক তুলে দিতেই ওরা একে একে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে শুরু করলো ,

– সবার কাছে ক্ষমা চাইছি । আমাদের প্লিজ ক্ষমা করে দেবেন আপনারা সবাই । আর পূর্ণতা আপু , তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি , প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দাও । তুমি ক্ষমা করলেই আমাদেরকে সবাই ক্ষমা করে দেবে বলে আমাদের ধারনা ।

– হ্যা , আপু । আমরা অনেক বড় ভুল করেছি তোমার সাথে । তুমি আমাদের মাফ করে দাও । তুমি আমাদের ছোট বোনের মতো । বড় ভাইদের কি মাফ করে দেয়া যায় না ??

– আমরা এত বড় ভুল করেছি যা ক্ষমার অযোগ্য !

জল আপু যে এত বড় কাহিনী সাজিয়েছে সেটা আমাদের অজানা ছিল । তবে ভুল আমাদের‌ই । আমাদের উচিত ছিল আগে তোমার সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলা । আমরা সেসব না ভেবে সরাসরি তোমার উপর অ্যাকশন নিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি । আমাদের কারনে তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । অনেক অপমানিত হতে হয়েছে । এই ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলে তোমাকে ঘৃণার চোখে দেখেছে । তোমাকে এত নিচে নামিয়ে দিয়েছি যে এখন নিজেদের ই সেই পর্যায়ে রেখে একবার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে যে একটা নির্দোষ মেয়েকে এই অবস্থায় কতটা লড়াই করতে হয়েছে !

– পুলিশ এবং সাইবার নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু আবরন ভাই আমাদের সেখান থেকে জামিনে ছাড়িয়ে আমাদেরকে বুঝিয়েছে যে কতটা কষ্ট সেদিন তোমাকে আমরা দিয়েছি । কিভাবে বুঝিয়েছে সেটা বলার মতো মুখ আমাদের নেই কিন্তু আমরা এসবের যোগ্য । ভুলের মাশুল তো দিতেই হবে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাদের মাফ করবে না যদি তুমি আমাদের মাফ না করো ।

– প্লিজ , আমাদের মাফ করে দাও , প্লিজ ।

এই বলে তিনজন‌ই পূর্ণতার পায়ের কাছে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল ।

পূর্ণতা এতক্ষন চুপ করে ওদের কথা শুনছিল । ওদের কথার মাঝেই যেন সেদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা বার বার ওর মনে ছবির মতো প্রকাশিত হচ্ছিল । এত অপমান , এত কষ্ট !! কিভাবে এদের ক্ষমা করা যায় ??

কিন্তু ওরা পায়ে এসে পড়তেই যেন ভিতরের সব জমে থাকা কষ্ট গুলো চোখ থেকে পানি হয়ে বেরিয়ে এলো । ওর ভেতরটা কেমন যেন করছে ! ইচ্ছে করছে যেন স্বজোরে চিৎকার করে কেদে নিজের মনের ভেতরে জমিয়ে রাখা আবর্জনার মতো স্মৃতি গুলো বের করে দিতে । পূর্ণতা নিজেকে সামলাতে পারছে না ।

আবরন পূর্ণতার থেকে একহাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে । হঠাৎ ওকে এভাবে কাদতে দেখে জলদি এসে ওর হাত টা নিজের হাত দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে ওর দিকে আবেগীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইল ।

ইশান বলছে ,

– ভুল করে ক্ষমা চাইলে তো আল্লাহ ও মাফ করে দেয় আপু , আমাদের কে কি তুমি পারো না মাফ করে দিতে ?

ওদের কথা শুনে পূর্ণতা আরো জোরে কেদে উঠল । ওর মনটা বলছে ,

– ওদের মাফ করে দে !

কিন্তু মস্তিষ্ক টা বলছে ,

– এত সহজে ছেড়ে দিবি ?

পূর্ণতা আবরনের দিকে কাদতে কাদতেই তাকালো । আবরন মাথা নাড়িয়ে ইশারা করল ,

– সম্পূর্ণ টা তোমার ডিসিশন ।

পূর্ণতা ওদের দিকে তাকাতেই ওর বিবেক ওকে নাড়া দিল ।

– পূর্ণ , মনের কথা শোন । মাফ করে দে ওদের । মাফ করে দে তুই ।

মস্তিষ্কের কথা শুনে চললে তোর আর জলের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না । ওদের জীবন মরন নির্ভর করছে তোর এই একটা ডিসিশনের ওপর । তাই বলছি , মাফ করে দে ।

পূর্ণতা ভাবনা বন্ধ করে চোখ থেকে পানি মুছে নিজে ওদের বসা থেকে দাঁড় করিয়ে বলল ,

– আমি খুশি হয়েছি যে তোমরা তোমাদের ভুল টা বুঝতে পেরেছো । আর আমার রেসপেক্ট আবার আমাকে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছো । আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম ভাইয়ারা । তোমরা প্লিজ , এভাবে কেদো না । তোমাদের অনেক অনেক থ্যাংকস আজকের মতো একটা দিন আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য ।

পূর্ণতা ওদের হাত থেকে মাইক টা নিয়ে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হাজার মানুষের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমি তো মাফ করে দিলাম , তোমরা মাফ করবে না ???

ক্যাম্পাসের মানুষ পূর্ণতার এই কঠিন প্রশ্ন শুনে নীরব হয়ে গেল ।

আবরন , পূর্ণতা , সাঈদ , মাহবুব আর ইশান ওদের উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্ৰহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ।

প্রায় ১ মিনিট পর ,

ভরা ক্যাম্পাসের মাঝ থেকে একজন সামনে এগিয়ে এসে বলল ,

– স্বয়ং অত্যাচারিত ব্যক্তি অপরাধকারীদের মাফ করে হাসি মুখে তাদের মেনে নিল , স্বয়ং সৃষ্টি কর্তা ও এতক্ষণে অপরাধকারীদের মাফ করে দিয়েছেন , তাহলে আমরা কেন পারবো না ??

কি চুপ করে আছো কেন মেডিক্যালবাসী ?? সবাই বলো ,

– We forgive you …. We forgive you ….. We forgive you ….

ভরা ক্যাম্পাসের মাঝে উপস্থিত ব্যক্তিকে আর কেউ না চিনলেও পূর্ণতা একপলক সেই ব্যক্তিকে দেখেই চিনে ফেলল আর মাইক হাতে থাকা অবস্থাতেই বলে উঠল ,

– বাবা ………

পূর্ণতার মুখে ‘বাবা’ শব্দটা শুনে আবরন সহ ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলে এক মূহুর্ত্তের জন্য অবাক হয়ে গেল ।

তারপর সবার প্রথম নীরবতা ভেঙে ফাহিম আর তাসিন চিল্লিয়ে বলে উঠল ,

– We forgive you , we forgive you , we forgive you .

ওরা বলা শেষ করতেই সমস্ত ক্যাম্পাস এক‌ই ধ্বনিতে ধ্বনিত হলো ।

খুশি হয়ে মাহবুব , ইশান আর সাঈদ আবরনকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কেদে উঠল । ওরা বিশ্বাস করতে পারছে না ক্যাম্পাস আজ পূর্ণতার পাশাপাশি ওদেরকেও বরণ করে নেবে ।

পূর্ণতা আফতাব উজ্জামানকে দেখে খুশি হয়ে স্টেজ থেকে নেমে দৌড়ে তার দিকে ছুটে গেল ।

আফতাব উজ্জামান খুশি হয়ে তার ছলছল চোখ নিয়ে মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছে , অপেক্ষা করছে কখন তার ছোট্ট মেয়েটা তাকে এসে জড়িয়ে ধরবে ।

যত‌ই বড় হোক না কেন , মেয়েটা তার বাবার কাছে এখনো সেই ছোট্ট পূর্ণতা ই আছে ।

ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলে এখন এই বাবা মেয়ের স্নেহ আর মমতা মিশ্রিত ঘটনা দেখতে ব্যস্ত ।

পূর্ণতা অবশেষে দৌড়ে গিয়ে আফতাব উজ্জামানকে জড়িয়ে ধরতে পারল ।

বাবা মেয়ে দুজন‌ই কাদছে ।

এদের দেখে ক্যাম্পাসে উপস্থিত সবার চোখের কোন জল দেখা দিল । এমনকি আবরন ও হাসির মাঝেই কাদছে । এসব হচ্ছে খুশির বন্যা ।

পূর্ণতা কাদতে কাদতেই বলল ,

– তুমি সত্যি এসেছো বাবা ?? সত্যি ই তুমি এসেছো ??

আফতাব উজ্জামান উত্তর দিল ,

-হ্যাঁ রে মা , আমি সত্যিই এসেছি ।

বাবার বুক থেকে মাথা তুলে পূর্ণতা বলল ,

– আজকে এত বড় বড় দুটো সারপ্রাইজ পাবো ভাবতেই পারি নি ।

– আমি তোকে বলেছিলাম না আমি তোকে না জানিয়েই হুট করে একদিন চলে আসবো ??

– হুম । কিন্তু তুমি কি করে জানলে যে আমি এখানে ??

– জিব্রান জানিয়েছে । ও ই তো বলল আবরন তোর জন্য এখানে সারপ্রাইজ রেখেছে । তাই সারপ্রাইজের ওপর তোকে আরো একটা সারপ্রাইজ দিতে বাসায় না গিয়ে সোজা এখানে চলে এলাম ।

– তার মানে ভাইয়া ও জানতো এসব ব্যাপারে ! কেউ একবারও বলল না আমায় !

আফতাব উজ্জামান হেসে বলল ,

– তুই এখনো সেই আগের মতোই সাদা সিধে আছিস ! তোকে যদি বলেই দিত সব তাহলে কি আর সারপ্রাইজ দিতে পারতাম ??

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– আসলেই তো । তুমি ঠিক ই বলেছো আমি এখনো সেই তোমার দেখা ছোট্ট পূর্ণতার মতোই আছি ।

– হু , কিন্তু আমার মেয়েটা দেখতে অনেক বড় হয়েছে আর আগের চেয়ে সুন্দর ও হয়ে গিয়েছে ।

পূর্ণতা একগাল হাসল ।

এর‌ই মধ‍্যে মাইকে আবরনের গলা শোনা গেল ।

– সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে থেকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য এবং পূর্ণতা জামানকে তার হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তাকে আবারো নতুন ভাবে বরণ করে নেওয়ার জন্য । তোমাদের এই ঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব হবে না ।
তবে চেষ্টা করবো সবাইকে ভালো কিছুর জন্য সুযোগ করে দিতে । আজ এখানেই শেষ করছি । কাল সবাই যথারীতি তে ক্লাস এর জন্য উপস্থিত থাকবে । আজ আর কোনো ক্লাস হবে না । আজকের দিনটা শুধু পূর্ণতা জামানের জন্য‌ই বরাদ্দ ছিল । সবাই ভালো থেকো , সুস্থ‍্য থেকো এবং কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আগে সেই বিষয়ে ভালো করে জেনে বুঝে তারপর কিছু করার জন্য অনুরোধ করা হলো । সবাই কে ধন্যবাদ ।

ক্যাম্পাসের সবাই স্বজোরে তালি বাজালো । আফতাব উজ্জামান আর পূর্ণতা ও খুশি হয়ে তালি বাজালো ।

আবরন দৌড়ে স্টেজ থেকে নেমে এসে আফতাব উজ্জামান আর পূর্ণতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ই আগে আফতাব উজ্জামানকে সালাম দিল ।

– আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল । কেমন আছেন ??

আফতাব উজ্জামান হেসে সালামের জবাব নিয়ে আবরনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ড শেইক করার জন্য ।

আবরন‌ ও হেসে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেইক করলো ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে নিজের বাবা আর প্রিয় মানুষটার ভাব বিনিময় দেখছে ।

আবরন বলল ,

– আঙ্কেল এখন বাসায় চলুন । অনেকটা দূর থেকে জার্নি করে এসেছেন । রেষ্টের প্রয়োজন আছে ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বলল ,

– একদম ঠিক বলেছো । চলো বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তুমি আমি আর জিব্রান মিলে জমিয়ে আড্ডা দেব ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । অনেক খুশি হয়েছি আঙ্কেল , আপনি এসেছেন বলে ।

– তোমার সাথে দেখা হয়েও আমার কি যে খুশি লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না । চলো চলো , বাসায় যাওয়া যাক ।

– ওকে , আঙ্কেল চলুন ।

আবরন , পূর্ণতা আর আফতাব উজ্জামান আবরনের গাড়িতে করেই পূর্ণতা দের বাসায় ফিরছে ।

আবরন ড্রাইভ করছে আর ওর পাশে আফতাব উজ্জামান বসেছে আর পেছনে পূর্ণতা একা বসেছে ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– পূর্ণর মায়ের মুখে তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি ।

আবরন হেসে বলল ,

– আঙ্কেল , এভাবে লজ্জা দেবেন না ।

পূর্ণতা ওদের কথা শুনে মনে মনে হাসছে । আর মনে মনে ভাবছে ,

– আজ আমি খুব খুশি । ইয়েএএএএএএ !! অনেকদিন পর এত হালকা ফিল হচ্ছে । মনে হচ্ছে আমি জীবনে আগের চেয়েও বেশি খুশি ফিরে পেয়েছি ।

আবরন ব্যাক মিররে তাকিয়ে মাঝে মাঝে পূর্ণতা কে দেখছে আর ড্রাইভিং করতে করতে আফতাব উজ্জামানের সাথে কথা বলছে ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– সত্যি বলছি , মিলি তোমাকে যতটুকু বর্ণনা করেছে আমার কাছে , তোমাকে সামনের থেকে দেখে আমার আরো বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে ।

আবরন মুচকি হেসে ব্যাক মিররে তাকালো আর পূর্ণতাও আফতাব উজ্জামানের কথা শুনে সামনে তাকাতেই মিররে আবরনের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল ।

পূর্ণতা জলদি জলদি চোখ সরিয়ে নিল । আবরন এক গাল হেসে আফতাব উজ্জামান কে বলল ,

– আপনিও খুব ইন্টারেস্টিং আঙ্কেল । কেউ কারো সাথে এতো টা ফ্রি লি কথা বলতে পারে প্রথম দেখাতেই তা আপনাকে দেখেই শিখলাম । আপনি ঠিক আমার বাবার মতোই । বাবার সাথেও আমার সম্পর্কটা এমন ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,

– আমি এমন‌ই ফ্রি মাইন্ডের । তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে ।

পূর্ণতা নিজের বাবার মুখে আবরনের প্রশংসা শুনে আবারো মিররের দিকে না তাকিয়ে পারলো না । আবরন ও মিররের দিকে তাকিয়ে যখন দেখল পূর্ণতা ও তাকিয়ে আছে তো কথা আর হাসির মাঝেই সুযোগ বুঝে চোখ মেরে দিল ।

পূর্ণতা এখন না পারছে হাসতে না পারছে ওকে কিছু বলতে কারন বাবা সামনে । চুপচাপ হজম করে নিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে র‌ইল ।

বাসায় পৌঁছতেই …………………
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩২

পূর্ণতা দের বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করে একে একে পূর্ণতা , আফতাব উজ্জামান ও আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।

আবরন ফোন করে নিজের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে জানিয়েছে যে ও পূর্ণতাদের বাসায় এসেছে । ওরা যেন চলে যায় । আর ওদের সব জিনিস গুলো আবরনদের বাসায় আছে তাই সেগুলো এক ফাঁকে বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতে বলল ।

এদিকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান আবরনের কথা মতো ওদের বাসার সামনে পৌঁছতেই দাড়োয়ান জানালো আম্মাজান আর বড় কর্তা কেউ ই ঘরে নেই ।

ওরা তাই আবার আবরনকে কল দেয় । আবরন কল রিসিভ করতেই ফাহিম জানায় ,

– তোর আম্মু আর বাবা কেউই নাকি বাসায় নেই !

আবরন অবাক হয়ে বলল ,

– নেই মানে ? কোথায় যাবে ? আমাকে তো কিছু জানায় নি !

– ওও , তাহলে কি করবো ?

– আচ্ছা , তোরা বাসায় চলে যা । আমি দেখছি বিষয়টা ।

ওদের সাথে কথা বলে আবরন পর পর আধিরা আনজুম এবং শাদমান চৌধুরী কে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু ওনাদের ফোনে রিং বেজে সেটা কেটে যাচ্ছে । কল কেউ পিক করছে না ।

সাথে পূর্ণতা আর আফতাব উজ্জামান থাকায় আবরন এখন কিছু করতেও পারছে না । তাই কিছু একটা ভেবে গেইটের দাড়োয়ান চাচাকে কল করে জানতে চাইলো , তারা কোথায় গিয়েছে তা তোমার কাছে বলে গিয়েছে কিনা ! দাড়োয়ান চাচা জানালো , সে জানে না । তাকে কিছু বলে যায় নি ।

আবরন কিছুক্ষণ চিন্তা করে পরে মনে মনে ভাবল ,

– বাবা তো আছেই মায়ের সাথে । আই হোপ দুজনেই ঠিক আছে ।

আবরনকে চিন্তিত হতে দেখে আফতাব উজ্জামান ওকে জিজ্ঞেস করলো , কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা !

আবরন স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল ,

– তেমন কিছু না , আম্মু আর বাবা নাকি কাউকে কিছু না বলে একসাথে কোথাও বেরিয়েছে ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– চিন্তা করো না । একসাথেই তো আছে তারা । সমস্যা হবে না ।

– হুম ।

কিন্তু অবাক হ‌ওয়ার বিষয় হচ্ছে পূর্ণতা দের গেইটে পৌঁছতেই বটতলার মোড়েই আবরন চার সিটের প্রাইভেট কারটা দেখেছে যেটা ওর বাবার অফিসিয়াল কার ।

পূর্ণতাদের গেইটে আবরন গাড়ি পার্ক করল । সবাই নেমে দাঁড়াতেই আফতাব উজ্জামান চারিদিকে তাকিয়ে বলল ,

– এলাকাটা খুব‌ই ঘনবসতিপূর্ণ ।

পূর্ণতা বলল ,

– হু , বাবা । এলাকা পরে দেখা যাবে । চলো ভেতরে চলো ।

আবরন বলল ,

– পূর্ণতা , শোনো । আঙ্কেলকে আগে যেতে দাও । আমরা পেছনে যাই ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল ,

– কেন ?

আবরন চোখ টিপ মেরে বলল ,

– আরে , এত দিন পর আঙ্কেল এসেছে । আগে আঙ্কেল গিয়ে কলিং বেল বাজাক , তারপর আন্টি দরজা খুলে আঙ্কেলকে প্রথমে দেখে খুশি হবে ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,

– ঠিক বলেছো জিনিয়াস । ঠিক আছে , আমি ই আগে যাচ্ছি । তোমরা বরং পেছনেই এসো ।

আবরন বলল ,

– হু , দোতলায় গিয়ে বাঁ পাশের ফ্ল্যাট টা নক করলেই হবে ।

– ওককে ।

আফতাব উজ্জামান গেইট দিয়ে ঢুকে ভেতরে প্রবেশ করে এগিয়ে গেলেন ।

তিনি চলে যেতেই পূর্ণতা আবরনকে জিজ্ঞেস করলো ,

– কি হয়েছে বলুন তো ! আপনাকে সেই কখন থেকে চিন্তিত দেখাচ্ছে !

আবরন বলল ,

– আম্মু আর বাবা নাকি একসাথে কোথায় বেরিয়েছে । তাও আমাকে এবং দাড়োয়ান চাচাকে কিছু না বলে যে , কোথায় গিয়েছে , কখন আসবে এসব ব‍্যাপারে আরকি !

তো আসার পথে বটতলায় দেখলাম বাবার অফিসিয়াল কার টা পার্ক করা সেখানে । এখন তো মনে হচ্ছে , ওনারা সব এখানে ।

পূর্ণতা চোখ বড় করে বলল ,

– কি বলছেন কি ?? তার মানে কি আরো কোনো সারপ্রাইজ দেওয়া বাকি নাকি ?

– আমার তো তা ই মনে হচ্ছে । চলো , ভিতরে গিয়ে দেখি ।

– চলুন , চলুন ।

আবরন আর পূর্ণতা কিছুটা দৌড়েই গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দোতলায় পৌঁছালো ।

আফতাব উজ্জামান কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে আছেন । ভেতর থেকে কারো দরজা খোলার নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই ।

পূর্ণতা বলল ,

– বাবা , আবার চাপো বেল ।

– সেই কখন থেকে চাপছি , খুলছে না তো !

– ভাইয়া তো জানে যে তুমি আসবে তাহলে খুলছে না কেন ?

– কি করে বলব ? দেখ , তোর মা হয়তো নামাজ পড়ছে । এখন তো নামাজের টাইম ।

আবরন বলল ,

– হতে পারে আঙ্কেল ।

মিনিট দুয়েক আরো অপেক্ষার পর ,
নিঃশব্দে কেউ ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল ।

আফতাব উজ্জামান , আবরন আর পূর্ণতা ভেতরে তাকাতেই স্বজোরে পেপার বোম্ব ফাটানোর শব্দের সাথে সবাই বলে উঠলো ,

– সারপ্রাইইইইইইইইইজজজ !!! 🥳

পূর্ণতা আর আবরন ভালো করে তাকিয়ে দেখল ভেতরে জিব্রান , ফাহিম , তাসিন , আয়মান , শাদমান চৌধুরী , আধিরা আনজুম এবং মিলি রহমান সবাই একসাথে এখানে ।

আবরন ফাহিম , তাসিন আর আয়মানকে এখানে দেখে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,

– থ্যাংক ইউ গাইজ ফর দ্যা সারপ্রাইজ । আই এম রিয়েলি সারপ্রাইজড !!

আবরন বলল ,

– আঙ্কেল শুধু আপনি না সাথে আমিও সারপ্রাইজড হয়েছি !!

শাদমান চৌধুরী হেসে বললেন ,

– আমাকে আর তোর মাকে এখানে দেখে সারপ্রাইজড হয়েছিস তাই না ??

আবরন বলল ,

– না , তোমরা যে এখানে সেটা তো আমি আগেই আন্দাজ করেছি ।

আধিরা আনজুম আবরনের কথা শুনে ফাহিম , তাসিন আর আয়মানের দিকে তাকালেন ।

– এই , তোরা বলেছিস তাই না ??

ফাহিম , তাসিন আর আয়মান বলল ,

– না , আন্টি । বিশ্বাস করো , আমরা কিছু বলি নি ।

আবরন বলল ,

– না , ওরা কিছু বলে নি ‌। ঘটনা পরে বলছি , আগে আঙ্কেলকে ভেতরে তো ঢুকতে দাও ।

আফতাব উজ্জামান এত মানুষের মধ্যে এতক্ষন শাদমান চৌধুরীকে খেয়াল ই করে নি , হঠাৎ তার দিকে চোখ যেতেই বলে উঠল ,

– শাদমান ?? তুই ই তাহলে শাদমান চৌধুরী !! আমাদের শাদমান চৌধুরী ??

শাদমান চৌধুরী বলল ,

– আরে বেটা , এতক্ষন পর দেখলি ? আমি তো জেনে বুঝেই তোকে সারপ্রাইজ দিতে কাজ কর্ম ফেলে আধিরার সাথে এখানে চলে এসেছি ।

সবাই একে একে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল । পূর্ণতা নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে । আর আবরন‌ও হাত মুখ ধুতে জিব্রানের রুমে চলে গেল ।

আবরন ফাহিম , তাসিন আর আয়মানকে কেলাতে কেলাতে বলল ,

– শালা , আমার সাথে নাটক করলি তোরা ?? আমার সাথে ?? আমাকে বললে কি হতো হ্যা ?? আমাকে বললে কি হতো ??

জিব্রান হেসে ওদের লড়াই ঝগড়া থামিয়ে বলল ,

– আরে ওদের কোনো দোষ নেই আবরন । আমি ই জানাতে নিষেধ করেছি । তুই ও সবার মতো সারপ্রাইজড হলি !

বাই দ্য ওয়ে , আঙ্কেল আন্টি যে এখানে সেটা তুই কি করে আন্দাজ করলি রে ?

পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে সোজা সবাইকে জিব্রানের রুমে দেখে সেখানে হাজির হয়ে বলল ,

– আমি বলছি ।

পূর্ণতা সব খুলে বলতেই ওরা হাসতে শুরু করলো ।

জিব্রান বলল ,

– হায়রে , আমরা গেইটের সামনে থেকে সবার জুতো ঠিক‌ই ভেতরে এনে রেখেছি কিন্তু আসল চিহ্ন ই রাস্তায় তোদের জন্য ক্লু হিসেবে ফেলে এসেছি ।

আবরন আর পূর্ণতা হাসল ।

পূর্ণতা হাসি থামিয়ে বলল ,

– আচ্ছা , আমিও কিন্তু বাসায় এসে সারপ্রাইজড হয়েছি !

সবাই বলল ,

– সেটা কিভাবে ??

পূর্ণতা বলল ,

– শাদমান আঙ্কেল আর আমার বাবা ও যে আধিরা আন্টি আর আম্মুর মতো ছোট বেলার বন্ধু সেটা কিন্তু আমি জানতাম না !

আবরন বলল ,

– আসলেই তো ! আমিও জানতাম না !

ফাহিম বলল ,

-বাহ , তোদের বিয়ে এবার পাক্কা ।।।।

ফাহিমের কথা শুনে আবরন আর পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।

জিব্রান বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল ,

– তোরা গল্প কর আমি একটু বাবা আর আঙ্কেলের সাথে গিয়ে বসি ।

আবরন বলল ,

– ভাইয়া , আমি আর পূর্ণতা একটু ছাদে যাই ?

জিব্রান বলল,

– এর জন্য আবার পারমিশন চাইছিস ?যা ..

আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– চলো , একটু কথা আছে ।

আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে ছাদে চলে গেল ।

ছাদে গিয়ে পূর্ণতা বলল ,

– বলুন , কি হয়েছে ?

– প্রেনা আর আয়মানের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে তো !

পূর্ণতা বলল ,

– ভালো কথা মনে করেছেন ! প্রেনা আমাকে আজ সকালে বলছিল ও আমাকে কাল কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চায় । আমার মনে হচ্ছে ও এই বিষয়টাই জানাতে চাইছে ।

-হু , কিন্তু আয়মান এর কোনো টেনশন‌ই নেই এই বিষয়ে । ও এখনো নিজ পায়ে দাঁড়ায়নি আর আমার জানা মতে আঙ্কেল ওর বড় ভাইয়ের আগে ওকে বিয়ে করাবে না ।

– হ্যা !! আপনি এটা ভাবছেন ?? প্রেনার মা ও তো প্রেনা কে ডাক্তারি সম্পূর্ণ না পড়িয়ে বিয়ে দেবে না ।

– বলছো কি ?? সব ঝামেলা দেখি একসাথে এসে হাজির !!

– ওরা কি করে এত বড় ভুল করতে পারলো ?? আমরাও গাঁধা , কেন ওদের একসাথে করতে গেলাম !! মন চাইছে এখন নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলি ।

আবরন বলল ,

– তুমি টেনশন নিও না । একটা ব্যবস্থা হবেই । আর ওদের ভুলের জন্য নিজের এত সুন্দর চুল গুলো ছিড়তে যাবে কেন ??

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– আপনি সবসময় ই এমন করেন কেন বলেন তো ?? এতো সিরিয়াস টপিকের মাঝে একটা আজাইরা কথা বললেন !

– এটা আজাইরা কথা ? ঠিক আছে , তোমার কষ্ট করে নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে হবে না , আমি ই টেনে ছিঁড়ে দিচ্ছি ।

এই বলে আবরন পূর্ণতার দিকে তেড়ে আসতেই পূর্ণতা দিল ভো দৌঁড় ।

পূর্ণতা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলছে ,

– আরে আরে !! প্লিজ , আমি এমনি বলেছি । প্লিজ , আমার এত সাধের চুল গুলোর প্রতি এমন অসামাজিক আচরন করবেন না । প্লিজ ।

আবরন ওর পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলল ,

– না , তুমি নিজেই তো বললে আমি নাকি আজাইরা কথা বলেছি , এখন সমস্যা কোথায় ??

– বললাম তো ভুল করেছি । সরি !!

– কোনো সরি চলবে না ।

দুজনই ফাঁকা ছাদে কতক্ষন টম এন্ড জেরির মতো দৌঁড়াদৌড়ি করে এখন হাপাচ্ছে ছাদের পানির ট‍্যাংকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ।

জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দুজন‌ই দুজনের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠল ।

হাসতে হাসতে দুজন‌ই নিচে বাচ্চাদের মতো বসে পড়ল ।

আবরন হাসতে হাসতে বলল ,

– আজকের দিনটা অনেক ভালো কেটেছে তাই না ??

পূর্ণতা হাসি থামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত মেলে বলল ,

– শুধু অনেক ভালো না বরঞ্চ জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মূহুর্ত গুলো আজ‌ই খুঁজে পেয়েছি ।

পূর্ণতাকে প্রাণ খুলে কথা বলতে দেখে আবরন‌ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– তাহলে আমি কি পেরেছি তোমাকে খুশি করতে ??

পূর্ণতা হাত নামিয়ে আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আপনি অনেক ভালো জানেন । আজ আপনাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই , আপনার কাছে কি আমার জন্য একটু সময় হবে ?

আবরন পূর্ণতার দিকে এগিয়ে এসে ওর হাতে হাত রেখে বলল ,

– একটু কেন ? তুমি চাইলে সারাটা জীবনের সবটুকু সময় তোমার নামে লিখে দিতে পারি ।

পূর্ণতা মুচকি হেসে বলল ,

– সারাটা জীবন সময় দেওয়ার আগে এইটুকু সময় দিয়ে ফ্ল‍্যাশব্যাক টা জেনে নিন ।

আবরন বলল ,

– ফ্ল্যাশব্যাক টা কি বিষয়ে ??

পূর্ণতা বলল ,

– আপনার বিষয়ে ।

– সত্যি ? তাহলে শুনতে রাজি আছি ।

– কেন ? অন্য কারো বিষয়ে হলে বুঝি শুনতেন না ?

– উহু , অন্যেরটা জেনে আমার কি লাভ ! আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট দেম ।

– ঠিক আছে । এখানে বসুন । তারপর বলছি ।

আবরন আর পূর্ণতা ছাদের পাকাতেই বসে পড়ল । আবরন বলল ,

– বলো ।

– প্রথম দিন আপনার সাথে ধাক্কা খেয়ে ক্যাম্পাসের মেইন গেইটের পড়ে গিয়েছিলাম মনে আছে ?

– মনে না থাকলে কি আজকে আবার এক‌ই ভাবে তোমাকে বরণ করে নিতাম ??

পূর্ণতা হাসল । তারপর আবারো বলতে শুরু করলো ,

– ঐদিন এতো রাগ লাগছিল আপনার উপর তা বলে বোঝাতে পারবো না ।

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– তারপর ?

– রাগের বসে আপনাকে মনে মনে অনেক বকা দিয়েছি । এই জন্য সরি ।

– আচ্ছা , মাফ করলাম ।

– তারপর আপনার ভাষন শুনে সেদিন মনে হয়েছিল আপনি মুখে মুখেই কঠোর , বাস্তবে না । তাই অপেক্ষায় ছিলাম আপনার বাস্তবতা টা দেখার জন্য ।

– তা কি বুঝলে ??

– কে জানতো যে আল্লাহ তায়ালা সেই বাস্তবতাটা আমার সামনে তুলে ধরতে আমাকে দিয়েই আপনার পরীক্ষা টা নেবে !

– হুম ।

– আমার সাথে সেদিন ক্যাম্পাসে যা হয়েছে , যারা আমার সাথে এমনটা করেছে তাদের সবাইকে আপনি শাস্তি দিয়েছেন তা আজ ইশান ভাইয়া না বললে আমি কখনো জানতেই পারতাম না ।

আবরন চুপচাপ পূর্ণতার কথা গুলো শুনছে ।

পূর্ণতা বলছে ,

– আপনি যে ভালোয় ভালো আর খারাপে খারাপ সেটা আজ ভালোই বুঝতে পারছি । আপনি সবাইকে অপরাধের জন্য সমান সাজা ই দেন তা ও বুঝতে পারছি ।

কিন্তু না বোঝার আগে যে আপনাকে মনে মনে অনেক খারাপ ভেবেছি , অনেক বকা ঝকা করেছি সেজন্য আজ নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে বাকি সবার মতোই । এর সাজা কি আপনি আমায় দেবেন না মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন ??

বলুন , চুপ করে আছেন কেন ? আমিও তো অপরাধী , আমাকে কি সাজা দেবেন না আপনি ?

আবরন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ,

– হুম , সাজা তো তোমাকেও পেতে হবে । কিন্তু সেটা সময় এলে দেব ।

পূর্ণতা বলল ,

– হুম , আপনি আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন যে আপনি দুর্বল না , আপনি আপন – পর সবাইকেই সমান চোখে দেখেন ।

আবরন বলল ,

– হুম , কিন্তু সবাইকে কিন্তু সমান ভালোবাসা দিতে পারি না আমি ।

পূর্ণতা বলল ,

– মানে ?

– মানে টা সহজ । আপনজনদের প্রতি ভালোবাসা অন্যরকম আর অন্যদের প্রতি কিছুটা কম তো বটেই । এইদিক থেকে আমি নিষ্ঠুর । সবাইকে ভালোবাসতে পারি না । নাহলে আমার মতো ড্যাশিং হ্যান্ডসাম ছেলের সহস্রাধিক গার্লফ্রেন্ড থাকতো ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ,

– উফফফ , আপনি আবারো শুরু করেছেন !!

এই বলে পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ।

আবরন ওর হাত টেনে ধরে বলল ,

– কোথায় যাচ্ছো ?

– নিচে ।

– কেন ?

– এক্ষুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে ।

– আরেকটু থাকি ?

এই বলে আবরন উঠে দাঁড়ালো ।

পূর্ণতা বলল ,

– সেই কখন এসেছি । সবাই অন্যকিছু ভাববে ।

আবরন বলল ,

– কেউ কিচ্ছু ভাববে না । সবাই জানে !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কি জানে বলুন তো !

– এটা যে আমরাও বাকি সবার মতো কাপল ।

– এহহহ , পাগল নাকি ! সেটা তো দুষ্টুমি করে এই কয়দিন আমরা সবাইকে দেখিয়েছি ।

আবরন পূর্ণতার ড্যানা ধরে ওকে কাছে এনে বলল ,

– কেন ? আমরা কি সারা জীবনের জন্য কাপল হতে পারি না ? তোমার এতে আপত্তি আছে কোনো ?

পূর্ণতা মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে । মনে মনে বলছে ,

– আপনি মাঝে মাঝে এমন সব প্রশ্ন করেন আমি উত্তর দিতে ভয় পাই ! কেন , আপনি বোঝেন না আমি কি চাই ? সেটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় ?

আবরন বলল ,

– কি হলো চুপ করে আছো কেন ?? আমি কি তোমার জন্য পারফেক্ট না ?? আমার সাথে তুমি হ্যাপি না ??

পূর্ণতা বলল ,

– আমি কি করে বলবো ? আমরা কি বিয়ে করা স্বামী স্ত্রী নাকি যে আমি আপনার সাথে সুখী নাকি অসুখী সেটা বুঝতে পারবো ??

আবরন হেসে বলল ,

– তারমানে এটা বুঝতে হলে তোমার আগে আমাকে বিয়ে করতে হবে ??

– অবশ্যই ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । বিয়ের পরেই নাহয় উত্তর টা দিও ।

এই বলে পূর্ণতা কে ছেড়ে সিড়ির দিকে হাঁটতে লাগল ।

পূর্ণতা বলল ,

– নিজের বিয়ের স্বপ্ন না দেখে আগে আয়মান ভাইয়া আর প্রেনার বিয়ের ব্যবস্থা করুন ।

– সেটাই করতে যাচ্ছি ।

পূর্ণতা বলল ,

– মানে ?? এই দাঁড়ান । আমিও আসছি ।

পূর্ণতা ও দৌড়ে আবরনের পিছু পিছু গিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল ।

আবরন বলল ,

– আইডিয়া এসেছে মাথায় একটা ! 💡

পূর্ণতা বলল ,

– কি সেটা ?

– ভেতরে গিয়ে বলছি । চলো ।

– ওকে ।

আবরন পূর্ণতাকে বলল ,

– আইডিয়াটা হলো ………………………

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here