ঠোটের কোণা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। হাতে দড়িগুলো বাধায় হাতে থাকা চুড়িগুলো কয়েকটা চুড়ি ভেঙ্গে হাতে ঢুকে গেছে যার ফলে সেইসব ক্ষতগুলো অত্যন্ত গভীর এবং রক্ত শুকিয়ে গেছে।ভাবতেই পারছি না বিয়ের দিন কেউ এভাবে আমায় তুলে এনে বেধে কষ্ট দিবে। এতো ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চোখ থেকে জল পড়ছেই। আমার আবস্থা দেখে আমার সামনে থাকা আফ্রাজ এগুলোর মজা নিচ্ছে যা একদমই সহ্য হচ্ছে না। অনেক কষ্টে বললাম,
আমি- সমস্যা কি আপনার এতো কষ্ট কিসের জন্য আমায় এভাবে তুলে এনে কস্ট দিচ্ছেন আমায়?আমি তো বললামই আপনার ভাইয়ের মৃত্যুর পেছনে আমার কোনো হাত নেই।(কাঁদতে কাঁদতে)
আর বলতে পারলাম না কথা শেষ হতে না হতেই আরেকটা চড় মারলো। তারপর জোরে গাল চেপে ধরলো। এতোই জোরে ধরেছে যে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে “আহহ” করে উঠলাম। আফ্রাজ দাতে দাত চেপে মুখ শক্তকরে ধরে বললো,
আফ্রাজ- এই তোর কি আমায় বোকা মনে হয়? তুই কি ভেবেছিস তোকে আমি আমারভাইয়ের মতো অন্ধ বিশ্বাস করবো নো ওয়ে তোদের মতো মেয়েদের আমি বেশ ভালো করে চিনি। তোরা টাকার জন্য খুন করতেও দ্বিধাবোধ করিস না।
বলেই আমায় জোরে ধাক্কা দিলো। তার শরীরের এতো জোর আমি যেই চেয়ারে বাধা অবস্থায় আছি সেটা নিয়ে মাটিতে কাঠের টুকরো তে পড়ে গেলাম। বেনারসি শাড়ি পড়ায় আমার শরীরে সেগুলো বিধেনি। তবে পড়ে যাওয়াতে ব্যথা পেয়ে “আহহ” বলে চিৎকার করে উঠলাম। আফ্রাজ আমায় সেই অবস্থাতেই ফেলে দিয়ে দরজা বাইরে দিয়ে লাগিয়ে চলে যায়। আমি কয়েকবার চেষ্টা করলাম ওঠার কিন্তু একটুও নড়তে পারলাম না। কি করেই বা নড়বো সারা শরীরে যে ব্যথা আনলিমিটেড। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। কেউ যে এই কান্না শোনার মতো নেই। কেন আমার সাথেই বা এমন হচ্ছে? কার কি ক্ষতি করেছিলাম যার জন্য আল্লাহ এতোটা কস্ট দিয়েই যাচ্ছে। এমন সময়ই সামনে থাকা ভাঙ্গা আয়নাটাতে নিজের চেহারা টা দেখতে পেলাম। বেশ কয়েকঘন্টা আগে বধুর সাঁজে ছিলাম আর এখন? চোখের কাজল লেপ্টে গেছে অতিরিক্ত কান্নার ফলে। ঠোটের লিপস্টিক ও ঠিক মতো নেই। থাপ্পড়ের সাথে সব শেষ। গলার ছোট গয়না, কানের দুল টিকলি কিছুই ঠিকমতো নেই। মাথার আঁচলটাও কিছু অংশ ছিড়ে গেছে। এগুলা দেখে কান্নার পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো।
আমি আরিয়াত মাইরা ডাকনাম মাইরা। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। তবে নিজের খরচে পড়াশোনা করছি। হ্যাঁ নিজের খরচে। মামা মামি লেখাপড়ার খরচের জন্য এক পয়সাও দেয়নি। আমার মা বাবা নেই। যখন আমি ১০ম শ্রেণিতে ছিলাম তারা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। তারা মারা যাওয়ার পর বাবা যাদের কাছে ধার দেনা করেছিলো তারা আমাদের বাড়িটিকে নিয়ে নেয়। তাই আমার থাকার জায়গা না থাকায় মামা আমায় তাদের বাড়ি নিয়ে যায় তবে কাজের মেয়ে হিসেবে।সেখানে সারাদিন কাজ করে যতটুকু সময় পেতাম ততটুকু সময়ে পড়াশোনা করতাম। এভাবেই অনেক কস্ট ঝনঝাট পেরিয়ে এসএসসি দেই।
আলহামদুলিল্লাহ এসএসসি তে স্কলারশিপ পাই। স্কলারশিপ পাওয়ায় ভালো একটা কলেজে ভর্তি হতে পারি ফ্রিতে কিন্তু বাসার কাজের জন্য ক্লাস ঠিক মতো করতে পারতাম না। এইচএসসি তে গিয়েও স্কলারশিপ পাই। এবার ক্যাশ পাই সাথে ভালো ভার্সিটিতেও চান্স পাই। আমার রেজাল্টে একদমই খুশি ছিলো না মামি। তাই তো আমায় আরও বেশি কাজ করাতো যেন আমি পড়ার সময় না পাই। মাসে মাত্র ১০ দিন ভার্সিটি যেতে পারতাম। আমার থেকে ৫ মাসের ছোট একটি মামাতো বোন আছে তার নাম স্নেহা। পড়াশোনা তো ঠিক মতো করতোই না সারাক্ষণ ছেলেদের নিয়ে থাকে। এর ওর সাথে রিলেশন করে বেড়ায়। পার্টি, নাইটক্লাব,শপিং এগুলাই তার প্রধান কাজ। আমাকে অনেক ভাবে ভার্সিটিতে আর বাসায় অপদস্ত করতো। এমন কি আমায় ভার্সিটিতেও তেমন যেতে দিতো না। তার একটাই কারণ আমায় ছেলেরা দেখলে নাকি স্নেহার কাছে আমার ফোন নাম্বার,নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে। যা স্নেহার একদমই সহ্য হয়না। তার একটাই কথা সেই একা ছেলেদের উপর রাজত্ব করবে আমি তার ধারে কাছে ঘেষতে পারবো না অথচ আমার এসবের প্রতি কোনো ইন্টারেস্টই নেই। তাই আর কি করার পড়াশোনা চালিয়ে যাবার জন্য বোরকা হিজাব পরে বাসা ভার্সিটি যেতাম।
তখন এক সিনিয়র ভাইয়ার সাথে পরিচয় হয় নাম ছিলো তার রিদ। দেখতে মাহশাল্লাহ। সে আমায় সব দিক দিয়ে হেল্প করতো একদম বড় ভাইয়ের মতো। খুব কেয়ার করতো, অনেক কথা বলতো আমিও বলতাম, মাঝে মাঝে জোর করে দামি রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গিয়ে খাওয়াতো। রিদ ভাইয়া অনেক ভালো শান্তশিষ্ট মানুষ ছিলো।এক কথা সবসময় বলতো “বোন তোর কোনো সমস্যা হলে শুধু একবার মুখ ফুটে বলিস তোর এই ভাই এর কাছে দেখিস তোর এই ভাই তোর জন্য সব কিছু করতে পারবে। এগুলো শুনলে সত্যিই অনেক টা ভালো লাগতো। আমাদের মিলামিশা টার জন্য অনেকেই ভাবতো আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু রিদ ভাইয়া এসব কেয়ার করতো না আমি তাকে কিছু বললেই বলবে, “যার যেমন মনমানসীকতা সে সেরকম টাই ভাববে।” তার একেকটা কথা সত্যি মুগ্ধ করার মতো ছিলো।
রিদ ভাইয়া হ্যান্ডসাম থাকায় স্নেহাও তাকে পছন্দ করতো তাই আমায় বলে সে নাকি রিদিত ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই জেনো আমি ভাইয়ার সাথে তাকে রিলেশন করিয়ে দেই। রিদ ভাইয়া যেমন আমার খারাপ চান না আমিও তার খারাপ চাইনা। তাই স্নেহা কেমন তা জেনে শুনে কেন আমি তার জীবনে দিয়ে তার লাইফ শেষ করবো।আর যাই করি না কেন স্নেহার সাথে তো কখনোই না। ভাইয়া স্নেহার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে ডিজার্ব করে। তাই স্নেহাকে বলে দেই এটা কখনোই সম্ভব না। কিন্তু স্নেহা মানতে নারাজ। সে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে আমায় অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। পরে একদিন কেঁদে কেঁদে আমার রুমে যায়। সেদিন কাজ সেরে আমি মাত্র বিছানায় বসেছি।স্নেহা আমার হাটুর সামনে বসে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগে,
স্নেহা- দি প্লিজ তোর কাছে ভিক্ষা চাইছি আমি রিদ কে ছাড়া থাকতে পারবো না কেন বুঝতে পারছিস না তুই? প্লিজ বোন আমায় একটু বুঝ হাত জোর করছি। তোকে বাড়ির কোনো কাজ করতে হবে না পারলে তুই আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিস তবুও প্লিজ….
বলেই হাত জোর করে কাঁদতে লাগলো।
আমি- এই ছি ছি কি বলছিস? আমি কেন তোকে দিয়ে কাজ করাবো? আমি তো একাই সব সামলাই আর প্লিজ হাত জোর করিস না।
স্নেহা- তাহলে সত্যিইই কি তুই আমায় রিদকে পাইয়ে দিবি?(কান্না থামিয়ে)
আমি- দেখ বোন এটা কখনোই সম্ভব না কেন বুঝতে চাইছিস না?? ভাইয়া আর তোর মধ্যে অনেক ডিফারেন্স আছে।
স্নেহা- কোন দিক দিয়ে কমতি আছে আমার? আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দর আমার টাকা আছে বাড়ি আছে গাড়ি আছে তো?
আমি- টাকা বাড়ি গাড়ি রূপ দিয়েই সব সম্ভব হয়না। দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি দামি এবং সম্মানের হলো চরিত্র ভালো গুণ। তুই এইসব নাইটক্লাব, ফেক রিলেশনস বাদ দিয়ে একজন ভালো শান্তশিষ্ট এবং নেককার হওয়ার চেষ্টা কর দেখবি রিদ ভাইয়া নিজে তোর কাছে ধরা দিবে।
স্নেহা- কি বলছিস?? আমি তো আর রিলেশনই করি না।
আমি- তুই কি ধরণের মেয়ে তা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি চাইনা আমার জন্য কারো জীবন নষ্ট হোক।
স্নেহা- ওহ আচ্ছা তোর মনে হচ্ছে আমি যদি রিদের বউ হই তাহলে আমি ওর লাইফ হেল করে দিবো তাইতো?ওকে ঠিক আছে তাই হবে যদি রিদ কে না পাই তাহলে আমার এই জীবন রেখে কি হবে?
বলেই স্নেহা আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো। তারপর টেবিলের উপর একটা নাইফ পেতেই সেদিকে এগিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।
আমি- স্নেহা নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
বলেই চিল্লিয়ে উঠলাম।
,
,
,
,
,
,
চলবে❤️
#ভুলবোঝার_শেষপ্রান্তে🥀
#লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০১
(এই গল্পের থিম টা হঠাৎই মনে পড়ে গেলো তাই আর দেরি না করে লিখে ফেললাম। গল্পটা একটু রোমাঞ্চকর করার চেষ্টা করবো। আর দয়া করে কেউ প্রথম পর্ব পড়ে পুরো গল্পটি জাজ করবেন না।🙏ধৈর্য্য ধরে পড়ুন আশা করছি নিরাশ হবেন না।কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের জন্যই এই গল্প টি তার পরিবর্তে ভালো মন্তব্য চাইছি🙏)