ভুলবোঝার শেষপ্রান্তে পর্ব ৬ এবং শেষ

#ভুলবোঝার_শেষপ্রান্তে🥀
#ওয়াজিওয়াত_লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০৬(Last Part)
.
🍁
.
আফ্রাজ- সময় হলে সব জানতে পারবে।

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। এভাবেই অনেক রাত হয়ে গেলো কিন্তু আফ্রাজের কোনো খবরই নেই। ফোন টাও ফেলে গেছে নইলে ফোন করে হলেও তো জিজ্ঞেস করতে পারতাম। আফ্রাজের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই।

আফ্রাজ- এই মাইরা উঠো তাড়াতাড়ি।

ঘুম ঘুম চোখে আফ্রাজের দিকে তাকালাম। দেখি আফ্রাজ আমার পাশে বসে আমায় ডাকছে।

আমি- কোথায় চলে গেছিলে তুমি?(উত্তেজিত হয়ে)

আফ্রাজ আমার কথায় শকড হয় সাথে আমিও বেকুব বনে গেলাম।

আফ্রাজ- ডিরেক্ট তুমিইইই??(অবাক হয়ে)

আমি কিছু মাথা নিচু করে বললাম,

আমি- আসলে বুঝতে পারিনি তাই…..

আফ্রাজ হেসে বলতে লাগে,

আফ্রাজ- কোনো ব্যাপার না আসো আমার সাথে। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

আমি- সারপ্রাইজ মানে?

আফ্রাজ- আরে আসোই না।

বলেই আমার হাত ধরে অন্য রুমে নিয়ে আসলো। রুমের মধ্যে থাকা মানুষ টাকে দেখে অনেক টাই অবাক হয়ে গেলাম কারণ আমার সামনে রিদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে। আমায় দেখে হাসিমুখে বল্ব উঠে,

রিদ- বাহ আমার বোন টাকে তো বউ রূপে সেই সুন্দর লাগছে।

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। রিদ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি। ভাইয়াও আমায় জড়িয়ে ধরে।

রিদ- আরে আরে কাঁদিস কেন বোন? এইযে দেখ আমি তো তোর সামনেই দাঁড়িয়ে।

আমি- তোমরা দুইজনই পচা খুব খুব খুউউব পচা। তোমরা আমার থেকে এতোদিন অনেক কিছু লুকিয়েছো। কিন্তু কেন? কেন আমায় কেউ কিছু বলোনি? আর তোমার বড় ভাই তো আমায় তোমার খুনি হিসেবেও দোষারপ করেছিলো। আমি নাকি তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলাম টাকার জন্য তোমায়…..

বলেই আবার কেদে উঠলাম। আফ্রাজ এবার বলে,

আফ্রাজ- মাইরা বিলিভ মি আমি সত্যিই কিছুই জানতাম না তোমার ওই বোন স্নেহার কথাতেই তো….

স্নেহা নাম টা শুনতেই কান্না থামিয়ে রিদ ভাইয়াকে ছেড়ে আফ্রাজের দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে বললাম,

আমি- স্নেহা এখানে আসছে কি করে?

রিদ- আমি তোকে সব বলছি,
,
,
তুই যখন আমার সাথে স্নেহা কে মিলিয়ে দিলি তখনই আমার স্নেহার উপর সন্দেহ হয়েছিলো। কারণ স্নেহার মতো মেয়ে কখনো ভালো হতে পারে না সে বেলায় এতো নম্র,ভদ্র? বিষয়টা হজম হচ্ছিলো না। তবুও তোকে বা স্নেহাকে কিছু বুঝতে দিলাম না। এমন ভাব করলাম যে আমি স্নেহাকে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু আসলে ওর প্রতি আমার রাগ টাই বেশি ছিলো। তো এভাবেই তিন বছর কেটে যায় আমার একদমই স্নেহার প্রতি কোনো ফিলিংস আসে নি। তারপর সেদিন আমি স্নেহা কে এক ছেলের সাথে এক ক্যাফেতে দেখি। সেটা দেখে আমি অনেক গুলা ছবি তুলে নেই এবং স্নেহাকে সেগুলা দেখিয়ে ভালো হওয়ার চান্স দেই। কিন্তু স্নেহা শুনেনি উলটা সে বাড়িতে গিয়ে তোর উপর আমার ঝাল মিটিয়েছে। পড়ে কয়েকজনের মাধ্যমে তোর বিয়ের খবর পাই সাথে সাথেই তোকে আমি ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তোর থেকে বেশি জানার আগেই তোর ফোনটা হঠাৎ সুইচড অফ পাই। আমার ভেতরে তোর আরও ভয় ঢুকে। পরে নিজেই যাই তোর বাড়িতে তোকে নিয়ে আসার জন্য। কারণ আমি জানতাম তোকে ভাইয়া ভালোবাসে।তাই তো তোকে নিয়ে এসে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু ভাইয়া এইটা জানতো না তোর সাথে আমার পরিচয় আছে। তোর বাড়িতে একা যাওয়াই হয়তো সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আমার। সেদিন বাড়িতে যেতেই স্নেহা তার কিছু ভাড়া করা লোক কে দিয়ে আমায় এক জায়গায় বন্ধি করে রাখে আর মরন অবস্থা করে ছাড়ে।

আফ্রাজ- এই দিক দিয়ে রিদের খোঁজ নিতে আমি তোমার বাসায় যাই কিন্তু সেদিন স্নেহাকে ছাড়া আর কেউ বাড়িতে ছিলো না। স্নেহা আমায় জিজ্ঞেস করে আমি কে কেন তার বাড়িতে আসছি? আমি সব খুলে বললাম। স্নেহাকে অনেক ভদ্র মনে হয়েছিলো তাই।স্নেহা সব টা শুনে বলে তার সাথে যেনো ক্যাফেতে দেখা করি। আমিও রাজি হয়ে যাই। তাই পাশের এক ক্যাফেতে সেদিন বিকাল বেলা দেখা করি। স্নেহা আমায় কেঁদে কেঁদে বলেছে যে তুমি নাকি রিদের গার্লফ্রেন্ড ছিলে। তুমি অনেক রিলেশনস করতা সেটা রিদ জেনে গেছে তাই প্রাণে মারার হুমকি দাও পড়ে সম্পত্তি টাকার লোভে নাকি তুমি রিদ কে খুন করো। প্রথমে বিশ্বাস করিনি কিন্তু পরে বলে ভার্সিটির সবার কাছে জিজ্ঞেস করতে যে তুমি আসলেই রিদের গার্লফ্রেন্ড কিনা। তাই আমিও প্রমাণ করতে সবাইকে জিজ্ঞেস করি তারাও একই কথা বলে। আমি সেদিন সত্যি পাথর হয়ে গেছিলাম এটা শুনে যে আমার ভালোবাসা আমারই প্রাণপ্রিয় ভাইকে খুন করেছে। তখন মন একটাই কথা বলেছে যে তোমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলবো আর আমার ভাইয়ের খুনের বদলা নিবো। তাই তোমার বিয়ের দিন তোমায় কিডন্যাপ করে আনি। তারপর এতো কস্ট দেই। কিন্তু তোমার সাথে দেখা করার পরপরই রিদ আমায় কোনোভাবে ফোন দেয় আর সব টা জানায়। আমিও তাড়াতাড়ি ওকে উদ্ধার করি আর স্নেহাকে প্রমাণ সহ অনেক বড় শাস্তি দেই। তোমায় না বুঝে কস্ট দিয়েছি ভেবেই আমি অনেক কেদেছিলাম।

রিদ- তাই আমি অনেক কস্টে ভাইয়াকে রাজি করাই তোকে বিয়ে করার জন্য।তারপর প্লেন করি দুইভাই মিলে।আমাদের প্লেন অনুযায়ীই তোমাদের বিয়ে টা হয়। এতো আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে ভাইয়া ভুলেই যায় সেদিনের কথা তাই তোকে কিছু বলতে পারেনি আর আমিও বলেছিলাম যেনো কিছু না বলতে তোকে স্পেশাল সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

আমি- তোমরা আস্ত শয়তান আমায় এসব বল্ললে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হতো?

আফ্রাজ, রিদ- আচ্ছা সরি আর কখনো এমন হবে না।

আমি- সত্যিই আর হবে না তো?

আফ্রাজ- একদম না বউরানী এখন আসেন নাস্তা করবেন। রাতে তো মনে হয় আমার চিন্তায় ঘুমান নি খানও নি।

আমি- ইয়ে মানে আসলে….

আফ্রাজ- থাক হয়েছে আর কোনো বাহানা দিতে হবে না আজ একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।

রিদ- হুউউউম চল।

তারপর ৩জন মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে। আফ্রাজের আম্মু তো খুব খুশি পুরো পরিবার একসাথে হতে দেখে।

বিকালে,

আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি এমন সময়ই রিদ ভাইয়া ছাদে আসে এবং বলে,

রিদ- ভাবিজি কি ভাবছেন?

আমি- ভাইয়া প্লিজ ভাবি বলবা না আমি তোমার বোন ওকে?

রিদ- আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।(হেসে) বাই দ্যা ওয়ে কি ভাবা হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়ে?

আমি- না মানে জীবন টা কতোটা বদলে গেছে। কোন এক সময় এতোটুকু ভালোবাসার জন্য ছটফট করতাম আর এখন ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। আমি যেনো সব পেয়েছি বিয়ের পর।(আকাশের দিকে তাকিয়ে)

রিদ- ও আচ্ছা তাই? তা আমার ভাই কি দোষ করলো? আমার ভাই কে কি তোর এখনো ভালো লাগে না? ক্ষমা করতে পারিস নি?

আমি- তোমার ভাইকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি অনেক লাকি ভাইয়া। সত্যিই মানুষটা আমাকে হাসিখুশি রাখার জন্য অনেক কিছু করেছে। আর ক্ষমার কথা বলছো সে তো আমি কবেই তাকে করে দিয়েছি। সে যে পরিস্থিতির স্বীকার ছিলো। আমি তার জায়গায় থাকলে হয়তো সেই সেম কাজ টাই করতাম। আমার সেদিন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই তার কাছে।

রিদ- সব যেহেতু বললি বাকি টুকুও বলে দে।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

আমি হেসে বললাম, ” হ্যা আমি তোমার ভাই কে ভালোবাসি। নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি তাকে।”

বলেই পাশে তাকালাম দেখি আফ্রাজ দাঁড়িয়ে। রিদ ভাইয়া ছাদের কোথাও নেই। এর মানে ভাইয়া আমার সাথে চিট করলো। আমি লজ্জায় অন্যদিকে যেতে নিলাম আফ্রাজ পেছন থেকে আমার হাত ধরে হেচকা টান দেয়। যার ফলে আমি সোজা গিয়ে আফ্রাজের বুকে দিয়ে পড়লাম।

আফ্রাজ- কোথায় পালাচ্ছো জান?

আমি- মা.. মা.. মানে কোথায় পালাবো আমি আ.. আজিব ত.. তো!

আফ্রাজ- তো এমন তোতলাচ্ছো কেন?(হেসে)

আমি- কই তোতলাচ্ছি ছাড়েন তো।

আফ্রাজ- তখন যেনো কি বলছিলে?

আমি- কিছু না ছাড়েন।

আফ্রাজ- ও আচ্ছা তাই?

বলেই জড়িয়ে ধরলো।

আফ্রাজ- আমিও তোমায় অনেএএক ভালোবাসি মাইরু। হয়তো কখনো বলা হয়নি। কিন্তু আজ বলছি ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়।।

আমি তার কথা শুনে মুচকি হেসে জরিয়ে ধরি। আহ কি পরম শান্তি তার বুকে। মনে হচ্ছে যেনো সবচেয়ে শান্তির জায়গা তার এই অংশ টা। শেষ পর্যন্ত আমাদের ভুল বোঝাবোঝি মিটলো। এভাবেই আমাদের দিন গুলো এমন খুনশুটি ভালোবাসা তে কেটে যাচ্ছে। সবাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
,
,
,
,
সমাপ্ত❤️

(পুরো গল্প টি কেমন লাগলো জানাবেন আশা করছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here