ভুলবোঝার শেষপ্রান্তে পর্ব ৩

#ভুলবোঝার_শেষপ্রান্তে🥀
#লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০৩
.
🍁
.
আফ্রাজ এক চড় মারে আমাকে। আর বলে,

আফ্রাজ- একদম ন্যাকা সাজতে আসবি না। যেখানে ভার্সিটির সবাই জানে তোরা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সেখানে তুই কি ভেবেছিস আমায় এগুলা বলে বোকা বানাবি নো ওয়ে।

তারপরের কাহীনি তো আপনারা দেখেছেনই

বর্তমান,
,
,
,
,
আমি এগুলা ভাবতে ভাবতে কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ঠিক নেই। যখন জ্ঞান ফিরে দেখলাম আমি একটা পরিপাটি খুব সুব্দর সাজানো রুমে আছি। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা। বেডকাবার্ডে হরেক রকমের খাবার রাখা। খাবার গুলো থেকে লোভ সামলাতে পারিনি খেতে শুরু করলাম কারণ অনেকদিনই ঠিক মতো খেতে পারিনি। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে এমন সময়ই পিরিচিত কন্ঠসর শুনতে পেলাম।

আফ্রাজ- খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি।

আমি আফ্রাজের দিকে তাকালাম তাও অবাক হয়ে।

আফ্রাজ- এতো অবাক হওয়ার কি আছে ইডিয়েট যা বলছি তা করো ডেম ইট।

আমি- মানে কি আমি রেডি হবো কেন?

আফ্রাজ- তো কি এই ছেড়া বেনারসি পড়ে সারাজীবন পার করার ইচ্ছে আছে নাকি? তবে দেখতে তেমন খারাপ লাগছে না।(শয়তানি হেসে)

তার এমন দৃষ্টিতে আমি শিউরে উঠলাম আর নিজের দিকে তাকালাম। আমার বেনারসি একদম ঠিক নেই অনেক জায়গা ছিড়ে যাওয়ায় হাত গলা পেট দেখা যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা চালাতে লাগলাম। আর ওই হনুমান টা হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হনুমান টা যাওয়ার পরপরই আমি গিয়ে দরজা লক করে চেঞ্জ করতে লাগলাম। কারণ ওই ডেবিল টাকে বিশ্বাস নেই কখন ঢুকে আমার মান ইজ্জত খাবে বলা যায় না। প্যাকেট এ একটা খুব সুন্দর শাড়ি পেলাম লাল রঙের। দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন তো পরেছি আরেক ঝামেলায়। বিভিন্ন জায়গায় চট পাওয়ায় শাড়ি পরতে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। তবুও কস্ট করে পড়লাম। এমন সময়ই দরজায় নক পড়লো। মাথায় ঠিকমতো কাপড় দিয়ে দরজা খুললাম দেখলাম একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা আমার দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না আর সব থেকে বড় কথা আমি তো তাকে ঠিক মতো চিনিও না।

এমন সময়ই পেছন থেকে হনুমান টা বলে উঠে,

আফ্রাজ- আরে মা তুমি এখানে?

ভদ্র মহিলাকে মা ডাকায় আমি অবাক হয়ে যাই। তাহলে কি উনিই এই হনুমান টার মা?

মহিলা- হ্যা দেখতে আসলাম তোর পছন্দ কেমন। তা মা আমায় কি ভেতরে আসতে দিবে না? নাকি এখানেই দাড় করিয়ে রাখবে?

প্রথমে অবাক হই “পছন্দ” কথা টা শুনে। কিন্তু তার পরের কথা শুনে এসব নিয়ে না ভেবে বললাম,

আমি- আরে না না আসুন ভেতরে।

তারপর ভদ্র মহিলাটি ভেতরে এসে বেডে বসলো এবং আমাকে তার পাশে বসালো। হনুমানটা কিছু টা দূরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তখন থেকে হা করে তাকিয়ে আছে মহিলাটি আর আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছি এবং অস্বস্তিতে ভুগছি। কিছুক্ষণ পর ভদ্র মহিলা আই মিন রিদ ভাইয়ার আম্মু বললো,

আন্টি- আমার ওকে বেশ পছন্দ হয়েছে আফ্রু। বলতে হবে তোর পছন্দ আছে। এখন আর দেরি করিস না বিয়েটা সেরে ফেল আমি কাজিকে বলছি।

বলেই মহিলাটি চলে গেলো। এতোক্ষণ অবাক হয়ে শুনছিলাম কি বলে গেলো মহিলাটি? বিয়ে তাও এই হনুমানের সাথে?? নেভার এই বিয়ে কখনোই হবে না কারণ এই হনুমান আমায় তিলে তিলে শেষ করার জন্য বিয়ে করছে বেশ বোঝা যাচ্ছে। না না এখনই কিছু একটা করতে হবে।

বলেই দরজা দিয়ে বের হতে নিলাম আফ্রাজ আমার হাত ধরে পিছের দিকে টেনে দরজা লাগিয়ে দেয়। আমি ভয় এবং রাগ নিয়ে বললাম,

আমি- সমস্যা কি আপনার আমায় এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? ছাড়েন বলছি আমি এখানে থাকবো না। আর বিয়ে তো কখনোই করবো না আপনার মতো অমানুষ কে।

বলেই হাত ছাড়াতে নিলাম আফ্রাজ উল্টো আমায় তার সাথে মিশিয়ে নিলেন। ভয়ে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। তার গরম নিশ্বাস আমার মুখে এসে পড়ছে।

আফ্রাজ- তলেই হোক বা পাতালেই হোক তোমায় আমি বিয়ে করবোই সো বেশি চালাকি করার চেষ্টা করো না। করলে আমার থেকে খারাপ আর দুটো পাবা না। বুঝলে হবু বউ?(কিছুটা ন্যাকামি করে)

আমি- হেহহহ আপনার হবু বউ মাই ফুট। আমায় রাস্তার পাগলা কুকুরে কামড়ায়নি যে আপনায় বিয়ে করবো। আমি জানি তো আপনি কেন আমায় বিয়ে করতে চাইছেন আমায় তুলে তিলে মারার জন্য করছেন তাইতো? এটা আমি বেচে থাকতে কখনোই সম্ভব না।

আফ্রাজ- বাহ বেশ ভালোই তো কথা জানো আর বুদ্ধিমতিও দেখছি।

আমি- অনেক বকবক করেছেন এখন ছাড়েন আমায় আমি বাসায় যাবো।

আফ্রাজ হেসে বললো,

আফ্রাজ- যে বাড়ি থেকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসছো সেখানে তোমায় রাজরানীর মতো রাখবে ভাবলে কি করে?

আমার এতোক্ষণে মনে হলো বিয়ের কথা। কিন্তু আমি তো পালাইনি আমায় তো তুলে আনা হয়েছে। কিন্তু সেটা কি মামা মামি শুনবে? অবশ্যই না। তাহলে আমি যাবো কোথায়? আমার যে এই শহরে আপন বলতে কেউ নেই। আমায় চুপ থাকতে দেখে আফ্রাজ- আবার বললো,

আফ্রাজ- ভাবা হয়েছে? এখন বিয়ের জন্য রেডি হয়ে নাও।

আমি- আপনি কি কানে শুনতে পান না কতোবার বলবো আপনায় আমি বিয়ে করবো না।(রেগে)

আফ্রাজ- ওহ আচ্ছা তাই না?? তাহলে চলো ডেট করি।(চোখ টিপ দিয়ে)

আমি- ডে.. ডে.. ডেট মা.. মা… মানে ক.. কি বলতে চাইছেন আপনি?

আফ্রাজ- আরে বুঝো না? বিয়ের পর যা করে তা আমরা আজ এখনই সেরে ফেলি?(ডেবিল হাসি দিয়ে)

বলেই আমার মুখের দিকে এগোতে লাগে। আমি দেই এক ধাক্কা কিন্তু ১ চুল পরিমাণও সরাতে পারলাম না। মাঝে মাঝে ভাবলেই রাগ হয় এই ছেলেদের এতো শক্তি কেন? এরা খায় কি যার জন্য এদের শরীরে হাতির মতো শক্তি ধুর ধুর কিসব ভাবছি আগে একে সরাতে হবে নইলে…নায়ায়ায়ায়ায়া কখনোই হতে পারেনা।

আফ্রাজ আমার দিকে এগিয়ে আসছে তো আসছেই। আমি ওনার মুখ চেপে ধরে বললাম,

আমি- আমি বিয়ে করবো।(চিল্লিয়ে)

আফ্রাজ থেমে গিয়ে ডেবিল হাসি দিয়ে বললো,

আফ্রাজ- That’s like a good girl…এখন কার্বাড খুলেই কয়েকটা ব্লেক কালারের শপিং ব্যাগ দেখতে পাবা। সেগুলা নামিয়ে পড়ে রেডি হও ঝটপট সময় ৪০মিনিট।

আমি- মানে কি আমি আপনার দেওয়া সময়ে রেডি হবো? মগের মুল্লুক পেয়েছেন?(রেগে)

আফ্রাজ- আবার তর্ক। বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি ২কদম পিছে যেয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম,

আমি- না না আমি রেডি হচ্ছি আপনার টাইম অনুযায়ী।

আফ্রাজ মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। আফ্রাজ যাওয়ায় আমি যেনো হাফ ছেড়ে বাচলাম। কিন্তু পড়লাম তো আরেক ঝামেলায়। একে বিয়ে করবো আমি? বিয়ের আগেই তো কতো অত্যাচার করেছে। বিয়ের পর কি করবে কে জানে। বিয়ে মানে তো একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। বিয়ে না করলেও ওই হনুমান টা আমার ইজ্জত হারা করবে। এখন কি করি? ভয়ে তো ঠিকই বলে দিলাম বিয়ে করবো ওই হনুমানকে কিন্তু এই দজ্জালের সাথে সারাজীবন থাকবো কি করে?

না এতো ভেবে কাজ নেই হয়তো আমার ভাগ্যে এই দিনটাই লেখা ছিলো। আল্লাহ তুমি কি চাচ্ছো কিছুই বুঝতে পারছি না।

ভেবেই কাবার্ড থেকে ওই হনুমান টার কথা মতো ব্লেক শপিং ব্যাগ গুলা নিলাম। ব্যাগ দেখেই মনে হচ্ছে দামী দামী। ভেতরের জিনিস কেমন হবে কে জানে। শপিং ব্যাগ খুলে আমি অবাক। এই লেহেঙ্গা তো আমি কিছুদিন আগে চয়েস করেছিলাম। এর দাম প্রায় ১লাখ ৭৬হাজারের তাই এটার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম এটা ভেবে আমার কেনার সামর্থ্য নেই। সেই লেহেঙ্গাই আজ আনার বিয়ের জন্য? কিভাবে সম্ভব। লেহেঙ্গা টা উজ্জ্বল লাল। এর মাঝে সাদা সাদা ছোট ছোট পাথর। যেকারোরই এই লেহেঙ্গার প্রতি আকর্ষণ যাবেই এতোটা সুন্দর। তার সাথে ম্যাচিং ডায়মন্ডের সেট। ওগুলা দেখে আরেক দফা টাস্কি খেলাম। এতো দামী দামী তাও আমার পছন্দ করা আবার একদিনেই? এই হনুমান টা কি আগেই আমায় বিয়ে করার প্ল্যানিং করে রেখেছিলো নাকি? কে জানে। এমন সময়ই দরজায় নক করে ওই হনুমান টা বলে উঠলো।

আফ্রাজ- এইযে আর কতোক্ষণ? ২০মিনিট ধরে বকবক করেই যাচ্ছো কাজের কাজ হয়েছে কিছু না বকবক করেই যাচ্ছো?

ওনার কথায় লজ্জা পেলাম।

আমি- আপনি এখানেই দাঁড়িয়ে আছেন?

আফ্রাজ- তো কি করবো তোমায় বিশ্বাস নাই যদি পালিয়ে টালিয়ে যাও…তাই রিস্ক নিতে চাইনা। এখন দয়া করে তাড়াতাড়ি বের হও আমার পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে।

হনুমান টার কথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো উচিত শিক্ষা দেওয়ার।

আমি-(এইতো চান্দু এসেছো তুমু লাইনে। এবার দেখো এই আরিয়াত মাইরা কি জিনিস)
আমার তো আরও ১ঘন্টা লাগবে রেডি হতে।

আফ্রাজ- ওয়ায়ায়ায়াট এক ঘন্টা? ১ঘন্টা কি করবা রুমে নাচবা নাকি হে? এতো টাইম কেন?

হনুমানটার কথায় আমি হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। তবুও নিজেকে সামলে বললাম,

আমি-……………..
,
,
,
,
,
চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here