ভুলবোঝার শেষপ্রান্তে পর্ব ৪

#ভুলবোঝার_শেষপ্রান্তে🥀
#ওয়াজিওয়াত_লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০৪
.
🍁
.
আমি- বেশি কথা না বলে যান তো এখান থেকে।

আফ্রাজ- না যাবোনা এই আমি চেয়ার নিয়ে বসলাম।

আমি আর কিছু বললাম না। আস্তে আস্তে রেডি হতে লাগলাম। যেহেতু কস্ট হচ্ছে তবুও কি করার নিজে নিজেই রেডি হতে হবে।
,
,
,
,
,
অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। মুসলিম রীতিতে আমাদের বিয়ে হলো। আমি এখন এই হনুমান টার বউ। সত্যিই বিশ্বাস করার মতো না। বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই খাওয়া দাওয়া সব হলো। মানুষ বলতে হনুমান টার মা বাবা আর কিছু বন্ধুবান্ধব আর কেউ নেই। আফ্রাজের বাবা মা বলেছিলো ছেলের বড় করে বিয়ে দিবে কিন্তু আফ্রাজ মানতে নারাজ তাই তো এতো তাড়াতাড়ি করাতে বাধ্য হয়েছে।

কিন্তু আমি ভাবছি অন্যটা। বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আফ্রাজ আমায় কস্ট দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। হুম সাবধানে থাকতে হবে এর থেকে। হনুমানের এক মেয়ে ফ্রেন্ড আমায় জোর করে এক ফুলভর্তি সাজানো রুমে নিয়ে আসলো এবং ফুলের বিছানার একদম মাঝে বসালো। বুঝতে বাকি রইলো না এটাই ওই হনুমানের রুম। আমার সাথে কিছুক্ষণ দুস্টুমি করে মেয়েটাও চলে গেলো। মেয়েটার নাম মায়া। চেহারায় যেমন মায়া তেমনি নামও মায়া। কি অদ্ভুত তাইনা?

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেবিল টা এসে হাজির হয় আর কোনো কথা না বলে আমায় ঝাপটে ধরে শুয়ে পড়ে। তার কান্ডে আমি অবাক শেষ পর্যায়ে চলে আসি। এই ছেলে চাইছে কি? এভাবে ঝাপটে ধরার মানে কি?

আমি- এই হচ্ছে কি ছাড়েন আমায় আমার দম আটকিয়ে যাচ্ছে এভাবে কোন পাগলে ঝাপটে ধরে উফফফফফ।

আফ্রাজ- এই তোমার সমস্যা কি বলো তো? এটাও এক ধরণের টর্চার দেখি তুমি কিভাবে আমার হাত থেকে পালাও।

বলেই আমায় আরো শক্তকরে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

আমি- আরে মানে কি এতো ভারী লেহেঙ্গা গয়নাগাটি এগুলা না খুলেই ঘুমাবো নাকি ও আল্লাহ কোন বিপদে ফেললা আমায় ধুর এর হাত থেকে রেহাই কিভাবে পাই ধুরররর।

এরকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরি মনে নেই।

সকালে উঠে দেখি হনুমানটা এখনো আমায় সেভাবেই ঝাপটে ধরে আছে। মন চাচ্ছে হনুমান টার মাথায় ফ্লাওয়ার ভাস টা মেরে ২টুকরা করি মাথা। সালা বজ্জাত পোলা, জোর করে বিয়ে করলো আবার সারারাত এভাবে ঝাপটিয়ে ধরে মরার মতো ঘুমোচ্ছে।

আফ্রাজের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকাতেই সব রাগ যেনো উধাও হয়ে গেলো। কি মায়াবি, নিষ্পাপ লাগে তাকে। ইসসসস এই কিউট ছেলেটা আমার বিয়ে করা বর ভাবতেই প্রাউড ফিল হচ্ছে। যেই তার গাল স্পর্শ করতে যাবো ওমনি আফ্রাজ বলে উঠে,

আফ্রাজ- বাব্বাহ আমি ঘুমিয়ে থাকলেই আদর দিবা বলে প্লেন করে রেখেছো নাকি.?(দুস্টুমি সুরে)

আফ্রাজের কথায় মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেলো। দিলাম এক ধাক্কা কিন্তু এক চুল পরিমাণও সরাতে পারিনি।

আফ্রাজ- আমার সাথে পারবে না জেনেও কেন শুধু শুধু নিজের এনার্জি নষ্ট করো বলো তো? তুমি তো আস্ত একটা শুটকি মাছ।

আমি- কি বললেএএএএন আপনিইইই। আমি শুটকি?? আর আপনি কি জানেন? আস্ত একটা হাতি বুঝলেন আস্ত একটা হাতিইই।

আফ্রাজ- ও আচ্ছা তাইনা। তাহলে এখন দেখো এই হাতি তোমার কি করে।

বলেই আফ্রাজ তার মুখ আমার দিকে এগোতে লাগলো। আমি বেশ বুঝতে পেরেছি এর সাথে জিততে হলে শক্তি দিয়ে নয় বুদ্ধি দিয়ে লড়তে হবে। তৎক্ষণাৎ একটা দুস্টু বুদ্ধি মাথায় আসে। যেই ভাবা সেই কাজ।

আমি- আরে মা আপনি?

আমার কথা শুনতেই আফ্রাজ আমায় ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে আর এদিক ওদিক খুঁজতে লাগে তার মাকে। আমিও তাড়াতাড়ি কাবার্দ থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দেই দৌড়। আমার দৌড় দেখে আফ্রাজ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে এটা আমার চালাকি।

আফ্রাজ- ওরে রে আমার সাথে চালাকী। ওকে ফাইন ওয়াশরুম থেকে আসো দেন দেখো আমি তোমার কি হাল করি।

আমি- আমার পিছে না লেগে ঘোড়ার ঘাস কাটেন গিয়ে তবুও কাজের কাজ হবে।

আফ্রাজ- মুখে ভালোই খি ফুটেছে তোমার।

আমি আর কিছু বললাম না। আর হনুমান টা তো বকবক করেই যাচ্ছে। আমি কোনো রকম উত্তর দিচ্ছি না। শাওয়ার শেড়ে শাড়ি পড়ে দরজা আস্তে করে খুলে একটু ফাকঁ করে দেখলাম হনুমান টা আছে কি না। নাহ নেই দেখছি। তাই নিশ্চিন্তে ওয়াশরুম থেকে বেরোলাম আর ভেজা চুল গুলো ঝাড়লাম কিছুক্ষণ। পেছন ফিরতেই অবাক হয়ে যাই। হনুমান টা বেলকনির দরজার সাথে হেলান দিয়ে হাতে হাত গুজে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ঠোঁটে দুস্টু হাসি। আমি হনুমান টাকে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম। বেশ বুঝতে পারছি কপালে কঠিন দুঃখ আছে। আফ্রাজ আমার দিকে এগোচ্ছে এমন সময়ই দরজায় নক পড়লো। এতে হনুমান টা বেশ বিরক্ত হলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি তো আফ্রাজের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছি। আমার হাসি দেখে আফ্রাজ কিছুটা রেগে বলে,

আফ্রাজ- আমারও দিন আসবে।

বলেই আফ্রাজ দরজা খুলে। খুলে দেখে মায়া দাঁড়িয়ে আছে।

আফ্রাজ- প্রব্লেম কি তোর সকাল সকাল বিরক্ত করতে আসছিস কেন তুই?

মায়া- এই গোবরপোড়া পোলা সকাল কই দেখলি তুই? সকাল ১০টা বাজে আর তুই বউকে নিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস। নাস্তা করতে হবে তো নাকি?তাড়াতাড়ি চল কাকীমা ডাকছে।

আফ্রাজ- ওকে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুই মাইরা কে নিয়ে যা।

মায়া- জো হুকুম ভাইজি।(হেসে)

আফ্রাজ আমায় চোখ টিপ মেরে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হতে। আমায় মায়া আপু নিয়ে যায় নিচে। গিয়ে দেখি শাশুড়ি মা আর শশুড় আব্বু ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছে আর টিভি দেখছেন। আমি তাদের গিয়ে সালাম করলাম। শাশুড়ি আম্মু আমায় তার পাশে বসায় এবং বলে,

শাশুড়ি- ঘুম কেমন হলো?

আমি- জি আন্টি ভালো।

শাশুড়ি- আরেকবার আন্টি বললে কিন্তু তোমার সাথে কথা বলবো না। মা বলবে আমায় বুঝলে

আমি কিছুটা হেসে বললাম, ঠিক আছে মা।

উনি আমায় তখনই পরম যত্নে জড়িয়ে ধরে। তার এতো স্নেহ ভালোবাসা পেয়ে নিজের অজান্তেই চোখ দুটো বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। আমায় কাঁদতে দেখে মা বলে উঠে,

আম্মু- এই পাগলি মেয়ে কাঁদছিস কেন? বল আমায়।

আমি- আসলে আজ অনেক বছর হলো মাকে দেখিনি। এতো বছর শুধু পেয়েছি অপমান বঞ্চনা। আজ আপনার মধ্যে আমি আমার মাকে খুজে পেয়েছি।

আম্মু- ধুর বোকা আমি তো তোর মা-ই তাইনা? আফ্রাজ যেমন আমার ছেলে তুইও তো আমার মেয়ে তাইনা? এখন এগুলা বাদ দে তো শুধু শুধু মন খারাপ করছিস তুই। এখন যা আমার ছেলেটাকে কফি দিয়ে আয়।

আমি- আ..আ.. আমি?

আম্মু- হ্যা অবশ্যই তুই কেন নয়? আমার ছেলেটার কফি তো মাস্ট চাই-ই চাই।

আমি- ঠিক আছে।

বলেই কফি নিয়ে আবার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি ডেবিল টা শাওয়ার নিয়ে এসে গলায় টাওয়াল রেখে চুল মুছছে। শুধু একটা টাউজার পড়া আর কিছুই পড়েনি। এই হনুমানের বডি দেখে আমি অবাক। আগে যখন মুভি দেখতাম মুভিতে হিরোদের বডিও এমন হতো। তখন বেশ করে চাইতাম যদি আমার বরও এমন হতো? ঠিক মেঘ না চাইতে ই জল। ডেবিল টা আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলতে লাগলো,

আফ্রাজ- ও হ্যালো ম্যাম এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন হুম?
,
,
,
,
চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here