#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:৫
বিষন্ন মন নিয়ে তমালিকা বাসর ঘরে বসে আছে।ক্রমে ক্রমে তাকে ভয় বেষ্টন করছে।এসি অন থাকা শর্তেও সে ঘামে ভিজে যাচ্ছে।লাল বেনারসি তে তাকে দারুন মানিয়েছে।দরজায় খোলার আওয়াজ পেয়ে তমালিকা ঘোমটা আরো টেনে নিচে নিলে।সে আড় ভাবে তাকিয়ে দেখে তার শাশ্বড়ি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।তমালিকা শিথিল কন্ঠে বলে ওঠে মা আপনি?
শাকিরা বেগম গ্রীষ্মকালের ন্যায় নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলেন বউমা তুমি শুয়ে পড়।আবিবকে পাচ্ছি না।
তমালিকা মূহুর্তের মধ্যে সেন্স হারায়।সে কখনো ভাবিনি আবিব তার সাথে এমনটি করবে।আবিব তো তাকে অনেক ভালোবাসে।এই রাতটি নিয়ে তাদের কত স্বপ্ন ছিল।আবিব সর্বদায় তাকে এই রাতটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাতো।বিয়ের দুই দিন আগে আবিব তাকে ফোনে বলেছিল এই বিয়ে সে রাজি না।সে তার কম্পানিকে আরো বড় করে তাকে বিয়ে করবে।
কিন্তু বাসর রাতে আবিব যে আসবে না তা তমালিকার কল্পনার বাহিরে ছিল।শাকিরা বেগম তার মেয়ে মায়াকে নিয়ে তমালিকার সেন্স ফিরান।তমালিকার সেন্স ফিরার পর সে প্রথমে আবিবকে ফোন দেয়।আবিবের ফোন বন্ধ দেখে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।শাকিরা তার ছেলের এই কান্ডে বেশ চটে আছেন।মেয়েটাকে শুধু শুধু কষ্ট দিলো।তার ছেলের পছন্দ বলেই তো তিনি বিয়েটা করিয়েছেন।তিনি তমালিকাকে কিছু বুজিয়ে ঘুমাতে চলে যান।কিন্তু ঘুম কি তার আসবে।তার ছেলের এই কান্ডে আজ সবার সামনে ছোট হতে হলো।
আচ্ছা রাদিকা তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো।রাদিকা মলিন মুখ নিয়ে মাহিনের মুখশ্রীতে দৃষ্টি দেয়।নিজের এই কান্ডে রাদিকা খুবেই লজ্জিত।ভেবেছিল মাহিন ধমকা ধমকি ছাড়া কিছু বলবে না।শাস্তির কথা শুনে সে শুকনো ঢোক গিলে বলল মাপ করে দিন।
তা বললে হবে না।তুমি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছ,তার জন্য আমি তোমাকে শাস্তি দিতে চায়।
মাহিন রাদিকার শুকনো মুখ দেখে বললো তুমি সারা রাত আমার মাথা টিপে দিবে।
রাদিকা কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারল না।তার কন্ঠনালি দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না।মুখে যেন জড়তা পড়েছে।সংকীর্ণ হয়ে বললো কি বলছেন এগুলো।
এটা না পারলে আমার বুকে মাথা রাখো।দুটি থেকে যে কোনো একটা করতে হবে।
আচ্ছা তাহলে আমি আপনার বুকে মাথা রাখতে প্রস্তুত।কথাটা বলে রাদিকা তার মুখ চেপে ধরল।সে এটা বলতে চায় নি।রাদিকা বাকরোধজনিত অক্ষমতার কারণে এমনটা বলে পেলেছে।মাহিন সেটা বুজতে পেরেও মুচকি হেসে বললো ওকে তাহলে রাখো।
রাদিকাকে লজ্জা ধীরে ধীরে বেষ্টন করতে লাগলো।নিজের হস্ত নাড়িয়ে বললো আমি সেটা বলতে চায় নি।আমি বলতে চাচ্ছি আমি আপনার মাথা টিপে দিতে প্রস্তুত।
মাহিন রাদিকাকে তার অনিচ্ছাকৃত ভুল কথা পেশ করার জন্য লজ্জা না দিয়ে শুয়ে বললো মাথা টিপা শুরু করো।
রাদিকা তার কাঁপা কাঁপা হস্ত সম্প্রসারিত করে মাহিনের কপাল টিপা শুরু করল।
মাহিন প্রফুল্ল হয়ে বললো তোমার তুলতুলে হস্তের স্পর্সে আমার চোখে ঘুম নেমে আসল।
হে রজঁনি তুমি লম্বা হও,প্রভাত তুমি ফিরে এসো না,তোমার আগমণে আমার পুষ্প পরি তার হস্ত নামিয়ে নিবে।হে নিদ্রা তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও।যাতে তার স্পর্স আমি অনুভব করতে পারি।
রাদিকা কিছুই বুজতে না পেরে বললো কি বলছেন এগুলো।
এগুলো কবিতার লাইন।আরেকটা বলি
জি বলেন।
যখন সে তার কালো নেকাব খোলে আমার সামনে এলো তখন যেন তার সৌন্দর্য পূর্ণিমার চাঁদকে ঢেকে রেখেছিল।সে আতরমাখা অঙ্গুরি (মুখ) থেকে মুক্তামালা ঝরালো।
রাদিকা তার প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের কারণে হতভম্ব হয়ে বললো এটা কি আপনি নিজে বানিয়ে বলছেন না নকল করে।
আমি নিজে বানিয়েছি।কেমন লাগলো?
অনেক ভালো লাগছে,কিন্তু কবিতাগুলো কেমন যেন।
আরবদের নিয়মে কবিতা বলছি তাই এমন লাগছে।
রাদিকা ছোট করে বললো ও
________________________________________________
তমালিকা পুনরায় আবিবকে ফোন দেয়।ফোনটা তখন সে অন পায়।দুই মিনিট পর আবিব ফোন রিসিব করে বললো এত ফোন দিচ্ছ কেনো?
তমালিকা শব্দ করে কেঁদে বললো আমি কি অন্যায় করেছি যার জন্য এমন শাস্তি দিলে।
আবিব কর্কশ কন্ঠ বললো দেখো তমা আমার আর তোমাকে ভালো লাগে না।এটা আমি বিয়ের আগেই বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ব্যস্ততায় সময় পায় নি।তুমি আমার জন্য অপেক্ষায় করো না।
তুমি এসব কি বলছো!তুমি তো আমাকে অনেক ভালোবাস।
কিন্তু এখন ভালোবাসি না।আমি তোমাকে কিছু দিনের মাঝে ডিফোর্স দিতে চায়।
আবিব প্লিজ বলো কি করেছি আমি।দুই বছরের রিলেশন এভাবে শেষ করে দিবে।
তমা সত্যি করে একটা কথা বলি।
হুম বলো,তবুও ডিফোর্সের কথা বলো না।
আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছি।
তমালিকা আবিবের কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে বললো কি বলছো এসব।তুমি আমাকে ভালোবাস আর আমি তোমাকে।এর মাঝে অন্য কাউকে এনো না।
তমা তোমাকে আমার ভালো লাগে না।আমি ঐই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চায়।
তমালিকা চিৎকার করে কেঁদেই যাচ্ছে।তার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে।পৃথিবীটা তার কাছে যেন সংকির্ণ মনে হতে লাগলো।যে তাকে এত ভালোবাসে সে আজ অন্য আরো।
আবিব ধমক দিয়ে বললো তোমার ন্যাকা কান্না বন্ধ করো।শুধু তো ন্যাকামি করতে যান।
তমালিকা কান্না চেপে বললো আমার কান্না তোমার কাছে এখন ন্যাকামি লাগে?
হুম লাগে,তোমারকে দেখলেই আমার অসহ্য লাগে।তাই যত দিন তুমি আমার বাসায় থাকো ততদিন আমি আসব না।আর আমি খুব জলদি তোমাকে ডিফোর্স দিবো।
তমালিকা কিছু বলতে চায়লে দেখে আবিব ফোন কেটে দিয়েছে।পুনরায় ফোন দিলে দেখে বন্ধ।নিজেকে তার বড্ড একা লাগছে।আগে তো আবিব তাকে কত ভালোবাসত।সে কান্না করলে পাগলের মত হয়ে যেত।তার আর বাঁচতে ইচ্ছা করছে না।সে মরতে চায়।এই প্রেম ব্যাধি থেকে সে মুক্ত চায়।
প্রেমিকের বিচ্ছেদে রাতটা তার কাছে দীর্ঘ লাগছে।কিন্তু সে প্রভাতের অপেক্ষায় না করে আজ এই ধরণী থেকে বিদায় নিবে।তাকবে না এই বেয়মান ধরণীতে।চলে যাবে সে বহু দূরে।আবিবকে সে আটকাবে না।আবিব যদি ঐই মেয়েকে নিয়ে খুশি হয় তাহলে সেও খুশি।ছাদে কর্ণারে সে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আবিবের সাথে কাটানো সব মূহুর্ত ভেবে সামনে পা বাড়ালো।মৃত্যুকে সে আজ বরণ করবে।দমকা বাতাসে তমালিকার বেনারসির আচঁল হাওয়াই উড়তে লাগলো।মূহুর্তের মাঝে তমালিকার দুঃখে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ হলো।প্রকৃতিও তার দুঃখে দুঃখিত।তবুও তারা তাকে বরণ করতে এসেছে।সাথে তাকে উপহার দিয়েছে এক বৃষ্টিস্নাত পৃর্ণিমার রজঁনি।
চলবে,,,,,,,,,