ভোরের শিশির পর্ব ৬

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:৬

পূর্বাকাশের এক রশ্নি কিরণ এসে রাদিকার চোখে পড়ে।মিটমিট করে তাকিয়ে দেখে সে তার রুমে।তন্দ্রাভাব এখনো তার যায় নি।গতরাতে বৃষ্টির ঠান্ডার প্রভাবটা এখনো রয়েছে।রাদিকা কাঁথাটা টেনে গায়ে জরিয়ে নিলো।সে তো মাহিনের রুমে ছিলো।তাহলে এখানে আসলো কি করে?ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টায় বাজে।শুয়ে না থেকে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

হালকা নাস্তা করে সে স্কুলের দিকে পা বাড়ায়।গেটের কাছে আসতেই মাহিনের মুখোমুখি হতে হয়।

মাহিন পেন্টে হাত গুজে বললো
কাল তোমার কথা ছিলো সারা রাত মাথা টিপে দিবে।তা না করে আমার মাথার উপর ঘুমিয়ে পড়েছ।

মাহিনের কথা কর্ণ ঘোচর হতেই রাদিকা বললো আমি ইচ্ছা করে ঘুমিয়েছি।চোখ আপনা আপনি লেগে যায়।
তখন আমাকে জাগালেন না কেনো?

তোমার মিষ্টি ঘুমন্ত মুখ দেখে জাগাতে ইচ্ছা হয় নি।তাই মাঝরাতে তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।

তোমার এই ন্যাকামির জন্য সকাল সকাল বাসায় আসতে হলো।ভেবেছিলাম কখনোও বাসায় আসবো না।কিন্তু তা তোমার ড্রামার জন্য আসতে হলো।

আবিবের কথায় তমালিকার চোখ থেকে ক’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।শাকিরা বেগম আবিবকে ধমক দিয়ে বললো তর কাছে ড্রামা লাগছে!মায়া ঠিক সময় উপস্হিত না হলে মেয়েটা আজ সবার মাঝে থাকতো না।তুই তো তাকে পছন্দ করিস।হঠাৎ কি হলো যার জন্য এমন করছিস?

আবিব তার মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে রুমে চলে যায়।এতে শাকিরা আরো চটে যান।তার কাছে আবিবের এসব ভালো লাগছে না।

তমালিকা কিছুক্ষন পরে রুমে এসে দেখে আবিব চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।তার কত ইচ্ছা ছিল আবিবকে নিয়ে।আবিবের বুকে মাথা রাখবে,তার হাতে খাবে,ঘুরতে যাবে,কিছু বয়না ধরলে এনে দিবে।কিন্তু হঠাৎ তা এলোমেলো হয়ে গেলো।তার স্বপ্নগুলো সব ভেঙ্গে গেলো।আবিব রুমে কারো উপস্হিত টের পেয়ে চোখ খোলে।তমালিকাকে দেখে শুয়া থেকে ওঠে বললো মরতে গেয়ে ছিলে যখন তখন ঢোল বাজনা না বাজিয়ে যেতে।তুমি মারা গেলে সবচেয়ে খুশি আমি হতাম।

আবিবের কথাগুলো তমালিকার বুকে কাছে তীরের ন্যায় আঘাত হানলো।নিজের বিরুদ্ধে তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।কান্না ভেজা কন্ঠে বলে আমি মারা গেলে সত্যিই তুমি খুশি হবে?

হুম অনেক খুশি হবো।তোমাকে দেখলেই জাস্ট আমার অসহ্য লাগে।গতকাল তুমি মরা অভিনয়টা দারুন করেছ।বাংলাদেশ,ইন্ডিয়া নায়কাদের তুমি হারিয়ে দিলে।আচ্ছা তমা তুমি চিনেমা করো।ভালো জনপ্রিয় হবে।বাংলাদেশে এমন নায়কার খুব অভাব।তোমাকে পেয়ে পরিচালকরা খুব খুশি হবে।

তমালিকা রাগান্বিত হয়ে বলে তোমাকে ভালোবাসি বলে এই না যে আমি সব সহ্য করব।আজ আমাকে এত কথা বলছ যে মেয়ের জন্য একদিন বুজবে যেদিন তোমাকেও সে মেয়েটা ইগ্নোর করবে।একদিন তুমি তোমার ভুলগুলো বুজবে।দুয়া করি মেয়েটাকে তুমি পাও।না আমি তোমাকে কখন অভিশাপ দেয় নি দিবোও না।কিন্তু একটা কথা ভালো ভাবেই শুনে রাখ আমার সাথে এই অন্যায়ের শাস্তি তুমি একদিন পাবে।

তোমার ডায়লকটা অনেক সুন্দর হয়ছে। ডায়লক তুমি fb পোস্ট করলে অনেক লাইক পাবে।

অনেক হয়েছে।আমিও তোমার সাথে থাকতে চায় না।

কে বলছে থাকতে।এখনো বের হচ্ছ না কেনো।

তখনিই আবিবের ফোনটা বেজে ওঠে।রিসিভ করে রুম থেকে চলে যায়।তমালিকা তার চলে যাওয়ার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।তার প্রতিটি কথা আজ আবিবের কাছে অসহ্য লাগে।তাহলে এতদিন কি আবিবের ভালোবাসা আবেগ ছিলো।সত্যিই যদি সে ভালোবাসত তাহলে অন্য মেয়ের প্রতি মুগ্ধ হতো না।কিন্তু তার বিশ্বাস আছে একদিন আবিব তার ভুল বুজবে।তার জন্য চোখের জল পেলবে।কিন্তু সেদিন হয়তো তাকে পাবে না।তমালিকা চোখের জল মুছে ব্যাগ গুছাতে চলে যায়।সে তাকবে না এখানে।বহুদূরে চলে যাবে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো।সবাই যার যার ব্যস্ততা শেষ করে নিজ গৃহে ফিরে।আবিব বাসায় এসে দেখে সবাই চুপ চাপ।তার সাথে কেউ কথা বলছে না।সেও সেদিকে খেয়াল না করে রুমে চলে যায়।রুমে এসে তমালিকাকে না পেয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।দেখতে দেখতে রাত এগারোটা বাজে।কেউ থাকে খেতে ডাকে নি।নিচে এসে দেখে সব লাইট অফ।তার মানে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।আর আসার পর থেকে তমালিকাকে দেখতে না পেয়েও অবাক হয়।ধীরে ধীরে সে মায়ার রুমে দিকে পা বাড়ায়।দরজাটা খোলা দেখে ভিতরে ঢুকে বলে আসার পর থেকে আমার সাথে কথা বললি না কেনো?

মায়া আবিবের কন্ঠ কর্ণ ঘোচর হতেই শুয়া থেকে ওঠে বললো ভাইয়া তুমি!

হুম আমি,বল কি হয়েছে?

মা তোমার সাথে কথা বলতে বারণ করেছে।

ও,এজন্য বুজি কথা বলবি না।তমা কই?

ভাবির কথা তোমার মনে পড়ে বুজি!ভাবি চলে গেছে।আম্মুকে শুধু বলেছে বাসায় যাচ্ছে।সন্ধ্যায় আম্মু ফোন দিলে ভাবির ফোন অফ পায়।তখন ভাবির বাসায় ফোন দেয় তখন তারা বলে তাদের বাসায় আসে নি।

আবিব নিঃশব্দে সব শুনছে।তার কোনো অনুভূতি তমালিকার প্রতি নেয়।তাই একটুও খারাপ লাগে নি।বরং অনেক খুশি হয়েছে।
আবিব চলে যেতে যেতে বললো আচ্ছ তাহলে আসি।

পিছন থেকে মায়া বলে ওঠে ভাবির সাথে এমনটা কেনো করলে?ভাবি আমার সব বলেছে।অন্য মেয়ের প্রতি ভালো লাগার জন্য ভাবিকে এভাবে কষ্ট দেওয়াটা তোমার ঠিক হয় নি।একদিন তুমি খুব পস্তাবে ভাইয়া।

আবিব মায়ার কথায় বলে ওঠে তর ভাবির ন্যাকামি জাস্ট অসহ্য।কিছু না হতেই কান্না করে দেয়।মাথার কাছে শুধু ঘেনঘেন করে।

ভাবির সব কাজকর্ম আগে তোমার ভালো লাগতো।এখন তুমি ভাইয়া পাল্টে গেছো।আমিও দেখবো ঐই মেয়েটি কেমন সুন্দর।

আবিব কিছু না বলে স্ব স্হান ত্যাগ করে।

রাদিকা কফির নিয়ে মাহিনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।তার বিরক্ত লাগছে।কফির কথা বলে মাহিন শাওয়ার নিতে চলে যায়।গেলো তো গেলো আসার নাম নেয়।রাদিকা কফি টেবিলের ওপর রেখে যেন আসতে যাবে তখন মাহিন শাওয়ার থেকে বের হয়ে বলে কোথাও যাচ্ছ?

রাদিকা তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু বলতে গেলে সে বাকরোদ্ধ হয়ে যায়।মাহিনকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে।নীল পেন্ট,সাদা শার্টে তাকে দারুন লাগছে।সদ্য শাওয়ার নেওয়াই চুল থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে।চোখের পাপরিগুলো জলে টুইটুম্বুর।ঘন ঘন পাপড়িগুলো কেঁপে ওঠছে।

মাহিন হালকা কেশে বললো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছ?
মাহিনের কথা কর্ণঘোচর হতেই রাদিকা দৃষ্টি সরিয়ে বললো কিছু না।
মাহিন রাদিকার কাছে এসে টাওয়ালটা দিয়ে বললো মাথা মুছে দাও।
রাদিকা ইতস্হ হয়ে বললো আমি!

তুমি ছাড়া এখানে কি কেউ আছে?

না কেউ নেই।

বিষয়টা যখন বুজতে পারছো তাই লেইট না করে মুছে দাও।

আমি পারব না।আপনার কাজ আপনি করুন।

মাহিন রাদিকার হস্তে টাওয়াল দিয়ে বললো এত কথা শুনতে চাই না।যা বলছি তা তাড়াতাড়ি করো।

অগত্য রাদিকা তার কাঁপা হস্ত চুল মুছার জন্য বাড়ায়।মাহিন তখন মৃদ হেসে বললো ভালো করে মুছো।
রাদিকা জটপট মুছে দূরে সরে যায়।মাহিনের সামনে আসলে তার কেমন যেন অনুভূতি হয়।তার সাথে কথা বললে সে বাকরোধজনিত অক্ষমতায় পড়ে যায়।মাহিন কফি হাতে নিয়ে বললো শার্টে বাকি বোতমগুলো লাগিয়ে দাও।রাদিকা কথাটা শুনেও না শুনার অভিনয় করে দৌড়ে রুম ত্যাগ করে।

রাবেয়া মেয়েকে দৌড়ে আসতে দেখে বলে এভাবে দৌড়া দৌড়ি করছিস কেনো?
রাদিকা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে বললে খুব ঘুম পাচ্ছে তাই।রাবেয়া মেয়ের কথায় আর কিছু বললেন না।

________________________________________________

সকালে ঘুম থেকে ওঠেই রাদিকা কফি নিয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কে যেন ভোরে এসেছে।আস্তে দরজা খোলে দেখে বিছানায় ২২ বছরের এক মেয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।ধীরে ধীরে রাদিকা রুমে প্রবেশ করে কন্ঠটা শিথিল করে বললো আপু শুনছেন,আপনার কফি।কিছুক্ষন ডাকার পর মেয়েটি ভ্রু কুচকে সুরু চোখে তাকিয়ে বললো ডাকছো কেনো?

রাদিকা মেয়েটির বিরক্তি মাখা মুখ দেখে মাথা নিচু করে বললো আপনার কফি আপু।
মেয়েটি মাথাটা বালিশে গুজিয়ে তন্দ্রাভাব নিয়ে বললো রেখে যাও,নেক্সট নাইমে আমাকে ঘুমাতে দেখলে ডেকো না ওকে।

রাদিকা মাথাটা নেড়ে বললো আচ্ছা।
রাদিকা রুম ত্যাগ করে কিচেনে এসে মাকে রান্নায় সাহায্য করতে লাগলো।রান্নার শেষে টেবিলে খাবারগুলো রেখে আসে।সবাই এক এক করে এসে টেবিলে বসে পড়ে।রাদিকা সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি আসছে।পরনে কালো স্কাট ও শার্ট।মেয়েটার সৌন্দর্য যেনো কালো কাপড় বেধ করে বেরিয়ে আসছে।হাবিবুর রহমান তাকে দেখে বললো আরে তমা তুমি বসো,তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
রাদিকা তার মায়ের কাছে এসে বললো মেয়েটা কে?

রাবেয়া বেগম প্লেট মুছে রাদিকার হাতে দিয়ে বললো
বড় সাহেবের ছোট বোনের মেয়ে।মেয়েটা এখন এখানেই থাকবে।
রাদিকা এতক্ষনে বুজলো এই জন্য মেয়েটার জন্য এত আপ্যায়ন।

মাহিন মুখে হালকা খাবার দিয়ে বললো তুই এখন কি করবি ভেবেছিস ?

তমা মাহিনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে এখন কিছু ভাবিনি।
হাবিবুর রহমান বলে ওঠেন তুমি যত দিন মন চায় তাকবে।
তমা হালকা হেসে সম্মতির মাথা নাড়ালো।

রাদিকা মেয়েটাকে দেখে বেশ মুগ্ধ হয়।ঠোঁটে কিণারায় হাসি লেগেই তাকে।দেখতে কম সুন্দর না।

আবিব স্কুল গেইটের সামনে অনেক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।এখানেই পাঁচ দিন আগে মেয়েটি তার কাছে হেল্প চেয়েছিল।স্কুল ড্রেসে মেয়েটিকে দারুন লাগছিন।স্নিগ্ধ চাহোনি,মনমগ্ধকর হাসি তাকে কাবু করেছে।
রোদ আজ প্রখর ভাবে ওঠায় তার পক্ষে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।তবুও সে আজ মেয়েটির সাথে দেখা করে যাবে।এই কয় দিনে সে মেয়েটির চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি।স্বপ্নে মেয়েটি তাকে হাতছানি দিয়ে যেনো ডাকে।তমালিকার প্রতি এমন অনুভূতি কখনো হয়নি।শীতকাল হওয়ার পরও গরমটা অন্য দিনের চেয়ে বেশি।ঘেমে সে একাকার হয়ে যাচ্ছে।ঘড়িতে নয়টায় পয়ত্রিশ বাজঁতে সে তাকিয়ে দেখে তার কাঙ্কিত মেয়েটি স্কুলে ঢুকছে।চোখে হালকা কাজল,ঘন কালো চুলগুলো বেণী করা।আবিব তাড়াতাড়ি পা ফেলে মেয়েটি কাছে আসে।তাকে আজ তার মনের কথা বলবেই।

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here