ভোরের শিশির পর্ব ১১

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:১১

ভদ্রলোকের আশ্রয়ে রাধিকার প্রাণটা যেনো অল্পজল ত্রঁদো পুকুরের মাছের মতো ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।এখান থেকে বের হয়ে বাঁচে,কিন্তু সে যাবে কোথায়?তার মা কি তাকে গ্রহন করবে?আর মাহিন সে কি আজও তাকে ভালোবাসে?ভদ্রলোকটা যথেষ্ট ভালো,কিন্তু তার স্ত্রী যেনো খিটখিট করার মেনেজার।রাধিকার কাজে ভুল না ধরলে ওনার ভাত হজম হয় না।আজ সকালে নলিনা রাধিকাকে ডেকে বলেন আজ ডিম সেদ্ধ ,আর সবজি রান্না করিছ।রাধিকা নিঃশব্দে সব শুনে কাজে চলে যায়।চুপচাপ তরকারি কাটতে লাগলো।নলিনার মেয়ে নিলা এসে রাধিকার কাছে বললো তাড়াতাড়ি রান্না করেন।আজ কলেজে অনুষ্ঠান আছে তাই জলদি যেতে হবে।

রাধিকা মাথা নেড়ে বললো জি তাড়াতাড়ি করছি।
কিছুক্ষন পর নিলা এসে বললো উফ আপনি তো এখনোও রান্না শেষ করেন নি।জানে আজ কলেজে মাহিন স্যার আসছে।ভেবেছি স্যারকে খুব কাছে থেকে দেখবো কিন্তু আপনি সেটা দিচ্ছেন না।

নিলার মুখে মাহিনের নাম শুনে রাধিকা বললো কোন মাহিন?

অনেক বড় ব্যবসাহী,,

রাধিকা আশার কিরণ দেখতে পেলো।সে মাহিনের কাছে যেতে চাই।মাহিনের প্রতি প্রথম দিকে অভিমান থাকলেও এখন নেই।সে মাহিনের মুখোমুখি হবে।কারণ তার কেনো মনে হচ্ছে এখানে মাহিনের কোনো দোষ নেয়।তার সাথে হেমতি হয়তো বড় কোনো গেম খেলেছে।

আহারের সামগ্রী সব রান্না শেষ করে সে সবাইকে খায়িয়ে নিজেও অল্প খেয়ে নেয়।নলিনার কাছে এসে বলেন আপা ঘরে তরকারি নেই,তাই বলছি কি রাতের খাবারের জন্য এখনেই বাজার থেকে কিনে আনি।

তাই বলে বেশি দামি কিছু কিনতে যাবে না।গরীরদের একটা দোষ বড় লোকের বাড়িতে কাজ পাইলে বেহিসাবে জিনিস ক্রয় করে।

রাধিকা এই অপমানের কথার কোনো জবাব দিলো না।আজ যেনো নলিনা গোপনভাবে অপমান করেছে।কিন্তু সে চুপ,কারণ আজ তার বাহিরে যেতেই হবে।নলিনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে বেরিয়ে পরে।নিলার কলেজের সামনে দিয়ে বাজারে যেতো হয়।এটাই তার সুযোগ।কলেজের কাছে আসলে রাধিকা একজনকে বলে মাহিন স্যার কি আসছে?

লোকটা রাধিকার পা থেকে মাথা অব্দি দেখে নেয়।লোকটার মনে প্রশ্ন উঁকি দেয় মাহিনকে তার কি দরকার? লোকটার কাছে রাধিকাকে স্টুডেন মনে হচ্ছে না।লোকটা ছোট করে উত্তর দেয় না ।
রাধিকা প্রশ্নোচুক্ষে বললো কখন আসবেন??

লোকটা এখন বেশ বিরক্ত হন।বিরক্তে কপালের চামড়া ভাজ করে বলেন আমি কি করে জানবো!আর আপনাকে দেখে তো স্টুডেন মনে হচ্ছে না।তাহলে আপনি এসব জানতে চাচ্ছেন কেনো?

রাধিকা কোনো উত্তর না দিয়ে আহত মনে স্ব স্হান ত্যাগ করে।বাজারে এসে প্রয়োজনিয় জিনিস কিনে যখন ফিরছিল তখন পুনরায় কলেজের গেইটে দৃষ্টি দেয়।এই তো মাহিন!রাধিকার চোখের উপর সমস্ত আকাশের আলো আহত বীনার স্বর্ণতন্ত্রীর মতো কাঁপতে লাগলো।সে দ্রুত বেগে গেইটের কাছে আসে।কিন্তু এত মানুষের ভীরে সে মাহিনের কাছে আসতে পারছে না।কয়েকবার চিৎকার করে মাহিনকে ডাকলো।কিন্তু তার আওয়াজ মাহিনের কান অব্দি পৌঁছে নি।এত মানুষের চেচামেচিতে তার আওয়াজ যেনো তার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।মাহিন গাড়িতে ওঠে চলে যায়।এত তাড়াতাড়ি চলে গেলো কেনো!রাধিকা অবাক হয়ে পাশে একটা মেয়েকে প্রশ্ন করলে মেয়েটি বলে তার ভীষন ব্যস্ততা তাই অনুষ্ঠানে পাঁচ মিনিট থেকে চলে গেলেন।রাধিকা দুঃখিত মনে বাসায় চলে আসেন।যে আশার কিরণ দেখতে পেয়েছিলো তা যেনো কোনো মেঘের খন্ড ঢেকে দিয়েছে।

মাহিন সারা রুম পায়চারি করতে লাগলো।রাধিকা তার কাছে না আসলে গেলো কোথায়?মাহিনের চিন্তা হচ্ছে।মেয়েটি কি তার কাছে আসতে গিয়ে হারিয়ে গেলো?এই প্রশ্নের উত্তর সে পাচ্ছে না।রাবেয়া মাহিনের পেরেশানী দেখে বলে আমি তো ভাবছি সে তোমার কাছে আসছে।তোমার কাছে যদি না আসে তাহলে কোথায়?

বুজতে পারছি না।মাথা যেনো জ্যাম হয়ে যাচ্ছে।

রাবেয়া আঁচল দিয়ে অশ্রু মুছে বলেন দয়া করে আমার মেয়েকে খোঁজে দাও।রাধিকা ছাড়া আমার কেউ নেই।

আপনি কোনো চিন্তা করবেনা।আমি দেখছি,,

আচ্ছা তাহলে আসি।

রাবেয়া হতাশা নিয়ে চলতে লাগলো।সে এখন কোথায় মেয়েকে খুঁজবে?মেয়েটি তার ভয়ে কোথায় চলে গেছে।এভাবে তাকে জুর করে বিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি।রাবেয়া যখন ভাবনায় মগ্ন তখন তিনি খেয়াল করেনি তার দিকে যে দানব আকৃতির বাস আসছে।মূহুর্তে বাসটি রাবেয়াকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।রাবেয়ার প্রাণহীন নিস্তেজ দেহ রাস্তার বুকে ছিটকে পড়ে।চারদিক থেকে মানুষের ভীর জরো হয়।কেউ কেউ বলছে মহিলাকে আমি চিৎকার দিয়ে বলেছি বাস আসছে সরে যান।

আরেক জন বলে ওঠে যেখানে হায়াত শেষ হয় সেটা তার মরণ হয়েই।কেউ ফিরাতে পারে না।

মাহিন সবার ভীর সরিয়ে সামনে আসে। রাবেয়ার প্রাণহীন দেহ দেখে অজান্তে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।জিবনের শেষ মূহুর্তে মেয়েটিকে দেখে যেতে পারেনি।কত কষ্ট নিয়ে তিনি হয়ত মারা গেছেন।চোখ বন্ধ করার সময় হয়ত রাধিকার মুখটা খুঁজেছেন।কিন্তু শত মানুষের মাঝে তাকে পায়নি।

মায়ের মৃত্যুর সময় রাধিকা উপস্হিত থাকতে পারেনি।মায়ের মুখটা শেষ বারের মত দেখতে পারেনি।সে তো জানে না তার মা আর নেই।যখন জানবে তখন কি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে?
বাস্তবতা অনেক কঠিন।কি থেকে কি হয় তা মাবুদ ছাড়া কেউ জানে না।মেয়েকে খুঁজতে এসে নিজেই অজানা দেশে পাড়ি দিয়েছেন।মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গেলেও কি মাকে পাওয়া যাবে?না কখনোও না।এটা যে অসম্ভব।

মাহিন রাবেয়ার লাশ গ্রামে পাঠিয়ে দেন।নিজেও রাবেয়ার জানাযার ও দাফনে শরিক হয়।সব কাজ শেষ করে পুনরায় ঢাকায় চলে আসে।রাধিকাকে তার খুঁজতে হবে।তার জন্য আজ রাধিকা ঘর ছাড়া।কিন্তু এই ইট পাথরের শহরে সে কোথায় খুঁজবে?তার কাছে বিষয়টা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।তবুও মাহিন পরাজয় না মেনে খুঁজার তীব্র চেষ্টা শুরু করলো।

নলিনা কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠেন তুমি তো কাজ করার নামে ফাকিবাজি করো।

রাধিকা মাথানত হয়ে বললো আমার ভুলটা কোথায়?আমি যথাযথ সব কাজেই করেছি।

নলিনা আঙ্গুল দিয়ে পাতিলগুলোর দিকে ইশারা করে বললো দেখো তো তুমি কিভাবে মাজছ?পাতিলগুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার হয়নি।এভাবে কাজ করলে তোমাকে রাখবো না।

রাধিকা অপরাধীর মতো নিচু কন্ঠে বললো মাপ করে দেন।আর এমন হবে না।

হয়েছে আর ন্যাকার মত কাঁদতে হবে না।যাও জলদি পাতিলগুলো মেজে নিয়ে আসো।

রাধিকা পাতিগুলো নিয়ে পুনরায় মাজার জন্য চলে গেলো।মানুষ কত নিষ্টুর।কাজের লোকদের এখই কাজ করিয়ে যে তারা কি শান্তি পায় তা আল্লাহ জানে।রাধিকা পাতিলগুলো ভালো ভাবে দেখে সেগুলো পরিষ্কার।নিজের মনে বিরবির করে বলে পরিষ্কারেই তো,তাহলে মাজতে পাঠালো কেনো?
রাধিকা পানি দিয়ে ধুয়ে চলে আসে।সে আজ তার ডায়েরিতে অনেক কিছু লিখবে।তাকে কিভাবে তারা কষ্ট দেয়,তার মন মাহিনকে দেখতে চাওয়া সব লিখবে সে।ডায়েরি নিয়ে লিখার সময় তার মনে হয় মাহিনের নাম্বার তো ডায়েরিতে আছে।রাধিকা বিলম্ব না করে উক্ত পৃষ্টা বের করে।কিন্তু তাতে নাম্বার তো দূরের কথা উক্ত পৃষ্টা যে ছিড়া।কে ছিড়লো পৃষ্টা?রাধিকার মাথায় প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে লাগলো।তার হেমতির প্রতি সন্দেহ হয়।সে ছাড়া কেউ ডায়েরিতে নাম্বারের কথা জানে না।তার সাথে এত ষড়যন্ত্র কিসের।সে কার কি করেছে?

________________________________________________

প্রায় নয় মাস ধরে মাহিন রাধিকার কোনো চিহ্ন পায়নি।সে ব্যর্থ হয়েছে।যা যা করার সব করেছে কিন্তু কোথাও রাধিকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।এই নয় মাসে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।হেমতির বিয়ে খুব ধুমধামে রাজনের সাথে হয়।প্রথম দিকে সে রাজনের ভালোবাসা পেলেও পরে অবহেলা ছাড়া কিছুই পায়নি।হেমতির ছোট ননদি তাকে ওঠতে বসতে খুব জ্বালায়।আর রাজনের পরিবার হেমতিকে বলেছে দুই লাখ যৌতুক না দিলে তাদের বাড়ি থেকে বিদায় হতে।রাজনও হেমতিকে যৌতুক নিয়ে মানসিক শারীরিকভাবে খুব কষ্ট দেয়।আর এদিকে হেমতির মার ক্যান্সার হয়েছে।বিটে জমি বিক্রি করেও তিনি পুরোপুরি সুস্হ হচ্ছেন না।তারা তাদের পাপের শাস্তি পেয়েছে।কেউ কাউকে কষ্ট দিয়ে সুখে থাকতে পারেনা।তারাও রাধিকার সম্পত্তি দখন করলেও তা ভোগ করতে পারেনি।তারা এখন নিজেদের ভুলের জন্য আক্ষেপ করেন।

মাহিন মাথায় হাত চেপে বসে থাকতে দেখে তার মা বলেন অনেক চেষ্টা করেও যখন পাওনি তাই বলছি এভাবে অপেক্ষান না করে বিয়েটা করে ফেলো।

মাহিন কোনো উত্তর না দিয়ে পূর্বের ন্যায় বসে রইলো।তার মা প্রায় এক মাস ধরে কথাটা বলছে।বিয়ে করার প্রতি তার কোনো ইচ্চা নেই।সে আজীবন এভাবে থাকতে চাই।মাহিনের মা ছেলের হেলদুল না দেখে বলেন তুই ছাড়া আমার কোনো ছেলে নেই।আমার কি ইচ্ছা হইনা দাদি হতে।জীবনে শেষ বয়সে কি তুই আমার ইচ্ছা পূরণ করবি না।

মাহিন সোজা হয়ে বসে বললো কত বার বলবো আমি বিয়ে করবো না।তোমার কেনো বারবার এখই কথা বলো।

করবো না মানে কি?আজকেই আমি মেয়ে দেখতে যাবো।তর ইচ্ছা থাক বা না থাক বিয়ে তর করতেই হবে।রাধিকা কোথায় আছে তার ঠিক নেই।ওর জন্য বসে আছে থাকার মানে হয় না।আচ্ছা হতেও তো পারে রাধিকা মারা গেছে।

প্লিজ আম্মু এমন কথা বলো না।আমার বিশ্বাস সে বেঁচে আছে।

বিশ্বাস নিয়েই থাক।আমি এই দুই দিনের ভিতরে তকে বিয়ে করিয়ে ছাড়বোই।

মাহিনের মা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যান।

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here