ভোরের শিশির পর্ব ১০

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:১০

রাধিকা নিজ মনের ভয় দূর করে তার মায়ের কাছে যায়।রাবেয়া রাধিকাকে দেখে বলেন কিছু কি লাগবে?রাধিকা ঢোক গিলে বললো আম্মা আমি বিয়ে করতে পারবো না।রাবেয়া মেয়ের কথা কর্ণ কুহরে প্রবেশ করতেই তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন দেখ কিছুক্ষন পর তর বিয়ে হয়ে যাবে।তাই এখন অহেতু কথা বলিছ না।রাধিকা রাবেয়ার হাত ধরে কেঁদে দিয়ে বলে ওঠলো আম্মা আমি মাহিন ভাইয়াকে ভালোবাসি।আমি ওনাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে চাই না।ভাইয়াও আমাকে ভালোবাসে।

রাবেয়া শান্ত কন্ঠে বলেন আমি জানি,আর মাহিনের পরিবার তকে মেনে নিবে না।তাই পাগলামি না করে ঘরে গিয়ে বস।

তুমি জেনে বুজে নিজের মেয়েকে কষ্ট দিচ্ছো?

রাবেয়া রাধিকার গালে থাপ্পর দিয়ে বলেন একটা কথা কান খোলে শুনে রাখ তর বিয়ে আবিবের কাছেই হবে।বেশি উল্টা পাল্টা কিছু করলে আমার চেয়ে কেউ খারাপ হবে না।

রাধিকা চোখের জল মুছে রুমে ঢুকে।বর পক্ষের মেয়েরা তাকে সাজাতে এসেছে।রাধিকার মনের বিরুদ্ধে তারা সাজাতে লাগলো।মেয়ে সাজিয়ে চলে যেতেই হেমতি রাধিকার কাছে এসে বলে মাহিন ভাইয়াকে ফোনে সব বলছি।

রাধিকা কান্না চেপে বলে তাকে বললে আর কি হবে।যা হওয়ার তা হয়েই যাচ্ছে।

একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।শুন ভাইয়া বলছে তুই পালিয়ে নদীর পারে যেতে।ভাইয়া এরপর থেকে তকে নিয়ে যাবে।

কিন্তু আমি পালিয়ে গেলে আম্মা কষ্ট পাবে।

এখন যদি বিয়েটা করিছ তাহলে মাহিনকে কোনো দিন পাবি না।আর পালিয়ে গেলে একদিন না একদিন তর মা বিয়েটা মেনে নিবে।

কিন্তু,,,,,

আর কিন্তু না,তুই আমার সাথে আস।

হেমতি খুব সাবধাণে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে রাধিকাকে নদীর পারে নিয়ে যায়।নৌকা পূর্ব থেকে ছিলো।তাই রাধিকা বিলম্ব না করে ওঠে পড়ে।রাধিকা হেমতির কাছে থেকে বিদায় নেওয়া শেষ হলে মাঝি নদীতে নৌকা ভাসিয়ে দিলো।

নৌকা দমকা বাতাসে দুলছে।মাঝি গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো।রাধিকা আচঁল দিয়ে ভালো ভাবে চেহারা ঢেকে রাখলো।চাঁদের আলোতে সাদা বালুগুলো হালকা অস্পষ্টভাবে ধু ধু করছে।বাতাস এলোমেলো করে বয়ছে।মেঘ এসে আকাশে হানা দিচ্ছে।জলের উপরে মেঘবিচ্ছুরিত একটা চন্দ্রা আলোক পড়েছে এবং ক্ষণে ক্ষণে নদীর তীর হতে আরেক তীর পর্যন্ত শিহরিয়ে উঠছে।স্টীমার যথানিয়মে চলছে।কিন্তু মাঝ নদীতে আজ কোনো নৌকা নাই।দুই একখানা যা দেখা যাচ্ছে তাদের উৎকন্ঠিত ভাব স্পষ্টই বুঝা যায়।জলার্থিনী মেয়েরা বহু আগেই ঘাট থেকে চলে গেছে।দমকা হাওয়ার জোর ক্রমে বাড়িয়ে উঠল।নদীর ফেনা ফেনা হয়ে ফুলতে লাগলো

রাবেয়া রাধিকাকে রুমে না পেয়ে রাগান্বিত হয়ে হেমতির কাছে এসে বলে তুই রাধিকাকে পালাতে সাহায্য করছিস।বল রাধিকা কোথায়?আমার মানসম্মান শেষ করার মতলব । তুই ছাড়া এমন কাজ কেউ করবে না।

হেমতি শুকনো ঢোক গিলে বলে আমি কেনো এমন করব?শুধু শুধু আমাকে দোষী বানাচ্ছো কেনো?

ভালোই ভালোই বল রাধিকা কোথায়।

আমি জানি না , তোমার মেয়ে কোথায় সে তুমি জানার কথা।

রাবেয়ার চিৎকারে হেমতির মা বলেন কোনো প্রমাণ আছে যে হেমতি রাধিকাকে পালাতে সাহায্য করেছে?কোন ছেলের হাত ধরে চলে গেছে তার ঠিক নেয় এখানে আসছে হেমতিকে দোষতে।

রাধিকার রুমে হেমতি শেষে গিয়েছিলো।এরপর থেকে রাধিকা নেয়।

শেষে গেছে এর মানে এটা দাঁড়ায় না যে হেমতি পালাতে সাহায্য করেছে।

রাবেয়া তর্কে জরাতে চায় না তাই তিনি স্ব স্হান ত্যাগ করে।পুনরায় ঘরটা আরো দেখে নেয়।কোথাও মেয়ে না পেয়ে তিনি রমজানের কাছে এসে বিস্তারিত ঘটনা বলেন।

রাধিকা নৌকা থেকে নেমে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে যখন মাহিনকে দেখতে না পায় তখন সামনে চলতে থাকে।রাস্তা ঘাটে নিরবতা বিরাজ করছে।কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনা যাচ্ছে।আকাশে ফালি ফালি মেঘ ভীর করছে।চাঁদকে মেঘ এসে ঢেকে ফেলল।চারপাশে অন্ধকার নেমে আসলো।রাধিকার ভয়ে হাত পা কাঁপছে। মাহিনকে না পেয়ে তার ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।মাহিন তো থাকার কথা,কিন্তু আশপাশে সে তাকে দেখতে পারছে না কেনো?তাহলে কি মাহিন আসে নি,না হেমতি মিথ্যা বলেছে?তখনেই আকাশ গর্জন করে তমুলবেগে বাতাস এবং মুষলধারে বৃষ্টি আসতে লাগলো।রাধিকা ভিজে একাকার।দশ কদম হেঁটে একটা টিনের ঘর দেখতে পেলো।কাছে গিয়ে দেখে এখানে কেউ থাকে না।এখন সে কোথায় যাবে?তার ভয় হচ্ছে , তীব্রভাবে ভয় হচ্ছে।

এই বৃষ্টির মাঝে রাধিকাকে সবাই খুঁজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও তারা পাচ্ছে না।রাবেয়া নিজের কর্মে অনুতপ্ত।আজ মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে না দিতে চাইলে এমন হতো না।
তিনি আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করছেন।মেয়ে ছাড়া যে তার কেউ নেয়।তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু সময় হারিয়ে তিনি হয়তো ভুলটা বুজতে পারছেন।

মাহিনের বন্ধুরা মাহিনের কান্ড দেখে অবাকের শেষ সীমানা পৌছলো।যে ছেলে সিগারেটের গন্ধ নিলে বুমি করে আজ সে ড্রিং করছে।প্রেমের কষ্ট মানুষকে কত খারাপ করতে পারে তা কিছু মানুষকে না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না।মাহিন শেষ গ্লাসের ড্রিং খেয়ে বললো আমার কি অন্যায় ছিলো যার জন্য রাধিকা এমন করেছে। ও কেনো অন্য ছেলেকে বিয়ে করছে।সব মেয়েরা এক।রাধিকাকে চিনতে আমার ভুল হয়েছে।

রাজ মাহিনের কাধে হাত দিয়ে বলে হতে পারে রাধিকার বিয়ের সংবাদটি ভুল।

না ভুল না,হেমতি ফোনে বলছে রাধিকা তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করছে।আমি যেনো তাকে বিরক্ত না করি।রাধিকা নাকি আমাকে ঘৃণা করে।শুধু এতদিন ভয়ে ভালোবাসার অভিনয় করেছে।সে অভিনয় করে এখন ক্লান্ত তাই অন্য ছেলেকে বিয়ে করছে।

মাহিন টেবিল জুরে লাথি দিয়ে বলে আমি কি এতই খারাপ যার জন্য আমায় ভয় পাই।রাধিকাকে আমি দেখে নিবো।আমার সাথে অভিনয় করার প্রতিশোধ আমি নিবো।আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয় নি আমার সাথে অভিনয় করতে।এই রাধিকাকে আমি যদি না দেখে নেই তাহলে আমার নাম মাহিন না।প্রতিশোধ নিবো ঠিক ওর মত।

রাধিকা বাসের সিটে বসে ঘুমিয়ে পড়ে।চোখ খোলে দেখে বাস চলছে।রাধিকা চুপচাপ বসে থাকে।বাস চলে তাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যাক।মাহিন তাকে ধোকা দিয়েছে।আসবে বলে আসে নি।নিজের ডায়েরিটা খোলে লিখতে শুরু করে।

বাস নিজের গন্তব্য থামলে রাধিকা নেমে পড়ে।সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে।এই গরমে তার খিদা বেড়ে গেলো।চায়ের দোকান থেকে বিস্কিট কিনে খেয়ে পেটকে শান্ত করে।সে এখন কোথায় যাবে?আবিবকে বিয়ে করাটা দরকার ছিলো।তাহলে এত কষ্ট সহ্য করতে হতো না।আর এই সুভাদে মাহিনের আসল চেহারা চিনতে পারলো।রাধিকাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভদ্র এক লোক বললো এই মেয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?

রাধিকা আমতা আমতা করে বলে গরীব মানুষের কি কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে।

তার মানে তুমি কোথাও যাচ্ছো না?

জি,,,

কাজ পারো?মানে বলতে চাচ্ছি বুয়ার কাজ করতে চায়লে দিতে পারি।

রাধিকা কিছু একটা ভেবে বললো জি আমি রাজি।আপনি যদি একটা কাজ দিয়ে আমাকে উপকৃত করেন তাহলে আমার খুব ভালো হবে।

আসো আমার সাথে।

রাধিকা ভবিষ্যতে কি হবে তা না ভেবেই লোকটার সাথে চলতে লাগলো।মাঝে মাঝে ভাগ্যকে নিয়তির কাছে ছেড়ে দিতে হয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতেই হয়।

এক সাপ্তাহ ধরে রাধিকার কোনো খবর না পেয়ে রাবেয়া খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।আজ তার ভুলের জন্য মেয়েকে হারিয়েছে।তিনি বিষণ অনুতপ্ত।কিন্তু সে অনুতপ্ত দিয়ে কিছুই হবে না।রাবেয়া চাদর গায়ে জরিয়ে শহরের দিকে যাওয়ার সংকল্প করে।মাহিনের কাছে রাধিকা হয়তো আছে।তিনি মেয়েকে একপলকের জন্য দেখতে চাই।
রাবেয়ার এই বেহাল অবস্হা দেখে হেমতির মা মৃদ হাসে।তিনি এটাই চেয়েছেন।মেয়ের শোকে মা মারা গেলো সব সম্পত্তি তার।তিনি খুশিতে আত্মহারা।তিনি হেমতিকে বড় এক উপহার দিবেন।তার মেয়ে তো এত বড় কাজে তাকে সাহায্য করেছে।আজ হেমতির জন্য অসম্ভব জিনিস সম্ভব হয়েছে।হেমতি তখন হাসতে হাসতে মায়ের কাছে এসে বললো আম্মা আমাকে কিন্তু এখন রাজনের সাথে বিয়ে দিতে হবে।তোমার এত বড় কাজ করে দিলাম আমায় কিছু তো দিতে হবে।

মেয়ের কথা শুনে তিনি হাসতে হাসতে বলেন তা বলতে এই মাসে তর বিয়ে দেবার ব্যবস্হা করছি।উফ তুই যে এত বুদ্ধিমতী তা আগে জানতাম না তো!

তোমার সাথেই থেকে তো বুদ্ধিমতি হইছি মা।যাক রাধিকা বিদায় হয়ছে।ওর সৌন্দর্য দেখলে আমার শরীর জ্বলে।

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here