#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৯
#M_Sonali
ছাদের উপর চুপচাপ বসে আছে চাঁদনি। আকাশ পানে তাকিয়ে আছে সে। কেন জানিনা মনটা আজ ভীষণ খারাপ লাগছে তার। বাবা এবং দাদিকে বড্ড বেশি মনে পড়ছে। তার সামনে একটি টেবিলের উপর রাখা আছে ঝুড়ি ভর্তি নানা রকমের ফল। চাঁদনী সেগুলো ছুয়েও দেখছে না। সকাল থেকে সারাটা দিন শুধু এদিক-ওদিক ঘুরে ঘুরেই সময় কাটে তার। কিছুতেই যেন সময় পার হতে চায় না এভাবে। বারবার দাদি এবং বাবার কথা মনে পড়ে মন খারাপ হয়। শ্রাবণ ও তেমন বাড়িতে থাকে না। ওকে বিরক্তও করে না। ভালোবাসার অধিকার নিয়ে কাছেও আসে না। ইদানিং চাঁদনীর খুব বেশি ইচ্ছে করে শ্রাবণ তাকে ভালোবাসার কথা বলুক। আবারো আগের মত তাকে কাছে টেনে নিক। কিন্তু সে তেমন কিছুই করে না। এতে বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হয় চাঁদনীর। সে না পারে মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারে এসব মেনে নিতে। তাই সারাক্ষণ এমন গোমরা মুখে এদিক-ওদিক বসে থাকে সে।
প্রায় একঘন্টা হলো এভাবে ছাদের উপর চুপচাপ বসে আছে সে। এবার বেশ বিরক্ত লাগছে তার। সে উঠে দাঁড়ায়। নিচে নেমে যাওয়ার জন্য। তখনই তার মনে হয় তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ মনের ভেতর কিছুটা ভয় কাজ করে তার। তবুও মনে সাহস নিয়ে ধীরে ধীরে পিছন দিকে ফিরে তাকায়। দেখে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। ওকে এভাবে পিছনে দেখে বিরক্তির সাথে সাথে বেশ ভালো লাগাও কাজ করে তার মনে।
“আপনি কখন এলেন? আর এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন?”
ওর কথার উত্তরে আকাশের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকায় শ্রাবণ। মৃদু হেসে বলে,
“তুমি যখন থেকে ছাদে বসে আছ। আমিও তখন থেকে তোমার পিছনেই এভাবে দাঁড়িয়ে আছি। তোমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার দিকে নজর দেওয়ার সময় কি আছে তোমার?”
চাঁদনী কোন উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে ফেলে। তারপর কিছু একটা ভেবে আবারো ওর দিকে তাকিয়ে ওর কাছে এগিয়ে আসে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার না হয় সময় নেই। কিন্তু আপনারও তো মনে হয় সময় নেই। আপনিও তো এখন আগের মত আমার সাথে কথা বলেন না। সব সময় পালিয়ে বেড়ান।”
ওর কথার উত্তরে শব্দ করে হেসে দিল শ্রাবণ। তারপর ওর দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আবেগী কন্ঠে বললো,
“সত্যিই কি তাই চাঁদপাখি?”
ওর এমন প্রশ্নে চাঁদনী কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ওর প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল। তখনই সে আবারো বলে উঠলো,
“আমি তো সবসময় তোমাকে কাছে টেনে নিতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি আমাকে সারাক্ষণ দূরে ঠেলে দিয়েছো। ভুল বুঝেছো। তাহলে নিজে কেন কাছে টেনে নিতে পারছ না? কেন আমাকে বারবার তোমার কাছে আসতে হবে? আমার কি অধিকার নেই তোমার কাছ থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার?”
ওর এমন কথায় এবার বেশ কষ্ট পেল চাঁদনী। সে করুন দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে। দেখল সেও করুন চোখে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী কি বলবে বা করবে ভেবে পায়না। তাই কোন কথা না বলে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। তখনই শ্রাবন ওর হাত ধরে হ্যাচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। কোমর জড়িয়ে ধরে মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে,
“ঠিক আছে তুমি যেহেতু কাছে টেনে নিবে না। তাহলে না হয় আমি’ই নিলাম। কিন্তু কথা দাও আর কখনো আমার থেকে দূরে যাবে না। যা কিছুই হয়ে যাক না কেন আমাকে কোনদিন ভুল বুঝবে না। সারা জীবন আমার পাশে থাকবে। আমাকে ভালবাসবে।”
চাঁদনী মুখে কোন উত্তর দিল না। ওর বুকে মাথা রেখে আলতো করে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো ওকে। এতেই শ্রাবণ বুঝে নিল তার মনের কথা। ওর মুখে ফুটে উঠল বিশ্ব জয় করা হাসি।
হঠাৎ করে চাঁদনীকে কোলে তুলে নিল শ্রাবণ। তারপর মুহুর্তের মাঝে তাকে নিয়ে পৌছে গেল বেডরুমে। চাঁদনী বেশ লজ্জা ও ইতস্ততায় পড়ে গেল। কি করবে বা বলবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। তাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে শ্রাবণ এসে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর তার একদম কাছে চলে গিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“তুমি জানো চাঁদপাখি এই দিনটির জন্য আমি কতদিন হল অপেক্ষা করে আছি। তোমার কোন ধারনা আছে?”
চাঁদনী কোন উত্তর দিল না। সেভাবেই চুপচাপ বসে রইলো মাথা নিচু করে। লজ্জায় যেন লাল হয়ে যাচ্ছে সে। তাকে এত লজ্জা পেতে দেখে শ্রাবণ আবার বলে উঠলো,
“চাঁদ পাখি আজ যদি তোমাকে পরিপূর্ণভাবে নিজের করে নিতে চাই। ভালোবাসা দিয়ে রাঙিয়ে দিতে চাই। তবে কি তুমি আমায় বাধা দিবে? নাকি তুমিও আমাকে গ্রহন করে নেবে। প্লিজ আজকে অন্তত আমাকে দূরে ঠেলে দিও না। আমি তোমার সম্মতি চাই। তোমার অনেক কাছে যেতে চাই। তোমাকে নিজের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চাই। স্বামীর অধিকার চাই তোমার থেকে। বলো দিবে না আমায় সে অধিকার?”
ওর কথার উত্তরে চাঁদনী কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর কিছু একটা ভেবে ওর দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকায়। করুন গলায় বলে,
“আমি আরেকটু সময় চাই শ্রাবণ। শুধু আর কয়েকটা দিন সময় দিবেন আমায়? নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে চাই। একটু মানিয়ে নিতে চাই আপনার আর আমার জীবনে থাকা অবস্থার মাঝে। কথা দিচ্ছি আমি নিজে থেকেই আপনার কাছে আসব। আমার ভালোবাসা দিয়ে আপনাকে কাছে টেনে নিবো। প্লিজ আমাকে আর একটু সময় দিন।”
শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ওর থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে মন খারাপ করে বলল,
“ঠিক আছে সময় দিলাম তোমায়। আমিও সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো।”
কথাটি বলে ওর কাছ থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে চলে গেল সে। চাঁদনী বুঝতে পারলো ওর মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। তবুও সে কিছু বলল না। সে নিজেকে আরেকটু প্রস্তুত করে নিতে চায়। কারন শ্রাবণ একজন ভ্যাম্পায়ার আর সে মানুষ। এই কথাটা ভাবতেই যেন তার কাছে যেতে নিজের ভীষন ভয় হয়। চাঁদনীর মনে হয় এই বুঝি হিতের বিপরীত কিছু হয়ে যাবে। যদিও সে শ্রাবনকে মনে মনে অত্যান্ত ভালোবেসে ফেলেছে। তাকে মেনেও নিয়েছে স্বামী হিসেবে। তবুও কেন যেন ওর কাছে যেতে ভয় হয়। বারবার মনে হয় কোন বিপদ উৎ পেতে আছে চারিপাশে। হয়তো সে হার মেনে নিলে তাকে গ্রাস করে নেবে মুহুর্তে।
,
,
,
তিন দিন পর,
কালো রঙের অসাধারণ একটি গাউন জামা পড়ে আয়নার সামনে বসে নিজেকে অসম্ভব সুন্দর করে সাজাচ্ছে চাঁদনী। চোখে গাঢ় করে কাজল। আর ঠোঁটে খয়েরি লিপস্টিক। হাতে একটি পাথরের ব্রেসলেট। কানে কালো পাথরের দুল ও গলায় ম্যাচিং হার। চুলগুলো উঁচু করে বেধে ছেড়ে রাখা। মুখে হালকা মেকআপ। এতেই যেন পরীর মত লাগছে চাঁদনীকে।
সে নিজের সাজগোছ কমপ্লিট করে উঠে দাঁড়ালো। আয়নাতে ভালো করে নিজেকে একবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিল। সত্যিই নিজের দিক থেকেই নিজের চোখ ফেরাতে পারছে না সে। মনে মনে কিছু একটা ভেবে লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে। তারপর দু’পাশে গাউনটা ধরে উঁচু করে ধরে এগিয়ে যেতে লাগল দরজার দিকে। দরজার কাছে যেতেই হঠাৎ কিছু মনে পড়ে দৌড়ে এলো আবারো আয়নার সামনে। নিজেকে ভালো করে দেখে নিয়ে আয়নার সামনে থাকা একটি সাদা গোলাপ চুলে গুঁজে নিলো।
“আজকে আমাকে মেরে ফেলার প্লান আছে নাকি তোমার চাঁদপাখি?”
হঠাৎ পিছন থেকে এই কথাটি শুনে কেঁপে উঠল চাঁদনী। আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো শ্রাবন এক পলকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে পিছনে দাঁড়িয়ে। তার চোখে নেশা ভরা। যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ওকে। সে বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো। লজ্জা মাখা মুখে ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
“আপনি কখন এলেন?”
“যখন তুমি আমাকে পাগল করার জন্য এতটা সেজেছো তখন।”
কথাটা বলেই একদম ওর কাছে চলে এল মুহূর্তেই। ওর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে নেশা ভরা গলায় বলল,
“এমনিতেই কি তোমার জন্য কম পাগল ছিলাম, যে এভাবে সেজে পুরোপুরি মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেছো?”
ওর কথার উত্তরে চাঁদনী লজ্জা পেলে বলল,
“আজ আপনাকে আমি আমার সবকিছু সঁপে দিতে চাই শ্রাবণ। তাইতো এত সাজ। অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাকে, কিন্তু আর নয়। আপনি তো আমার স্বামী। আপনি যেই হোন না কেন আপনার অধিকার আছে আমার উপরে। আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি শ্রাবণ। আমিও আপনার কাছে যেতে চাই। নিজেকে রাঙাতে চাই আপনার ভালবাসার রঙে।”
ওর কথা শুনেই ওকে দ্রুত কোলে তুলে নিল শ্রাবন। কোলে নিয়ে হাটা দিল সামনের দিকে। চাঁদনী বেশ অবাক হল। বলল,
“এত রাতে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? অনেক রাত হয়ে গেছে তো এখন বাইরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছেনা। সজ তো আমি আপনার জন্য সেজেছি।”
শ্রাবণ ইশারায় ওকে চুপ করতে বলল। তারপর মুহূর্তের মাঝে ছাদে চলে গেল ওকে নিয়ে। কোল থেকে নামিয়ে দিলো ওকে। চাঁদনী আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল মস্ত বড় একটি চাঁদ মাথার উপর যেন তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। চারিদিকে চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে। সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে পুরো ছাদের উপর গোলাপের পাপড়ি বিছানো।
আর ছাদের ঠিক এক পাশে একটি সাদা পর্দায় ঘেরা খাটপাতা। যার চারিপাশে সাদা পর্দা দিয়ে ঘেরা এবং সাদা চাদর এর উপরে ফুলের পাপড়ি বিছানো রয়েছে। চাঁদনী বেশ অবাক হয়ে শ্রাবনের দিকে তাকাল। বলল,
“এসব কি শ্রাবণ? আপনি কি আগে থেকেই জানতেন আজকে আমি আপনার কাছে আসতে চাইবো। এত কিছু ব্যবস্থা কখন করলেন আপনি?”
শ্রাবন ওর হাতটা ধরল। বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“আমি সব জানি চাঁদ পাখি। তোমার মনের সবকিছু বুঝতে পারি আমি। আমিও যে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আর কথা নয় আমি তোমাকে আপন করে পেতে চাই। আমার আর সহ্য হচ্ছে না। তোমার থেকে দূরে থাকা।”
কথাটি বলেই ওকে নিয়ে বিছানার উপর চলে গেল শ্রাবণ। ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে ওর পাশে বসল। চুলগুলো খুলে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিলো। চাঁদনী চোখ বন্ধ করে ফেলল লজ্জায়। শ্রাবণ এবার কিছুটা উপরে উঠে বসল। ওকে আদর করার ভান করে গলার কাছে মুখ নিলো। নিজের সুচালো দুটি দাঁত বের করে ওর গলায় কামড় বসিয়ে দিল। চাঁদনি যেন এমন অবস্থার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। মরণ যন্ত্রণায় জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল সে। কিন্তু শ্রাবনের সেদিকে দেখার সময় নেই। সেতো চাঁদনীর গলায় দাত বসিয়ে রক্ত খেতে ব্যস্ত।
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৩০
#M_Sonali
গলা-কা-টা মুরগির মত ছটপট করতে করতে একসময় শান্ত হয়ে গেল চাঁদনী। চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। দু চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পরলো দুফোঁটা অশ্রু জল। একদম নেতিয়ে গেলো সে। যেন এই মুহূর্তে প্রাণ বেরিয়ে গেছে তার ভেতর থেকে। কিন্তু শ্রাবণ এখনো তাকে ছাড়েনি। আগের মতোই তার গলায় কামড় দিয়ে ধরে আছে। এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। এক সময় শ্রাবণ ওকে ছেড়ে দিলো। নিজেও ওর পাশে ধপ করে শুয়ে পড়ল। শ্রাবনকে দেখে মনে হচ্ছে যেন অসম্ভব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে সে। ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে পানিতে। হঠাৎ টপ করে গড়িয়ে পড়লো এক ফোটা পানি। সে ক্লান্ত শরীরে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ওর পাশে শুয়ে রইলো।
একটু পর চোখ মেলে তাকিয়ে চাঁদনীর দিকে ফিরে তাকাল। দেখল ওর গলায় কামড় দেওয়া জায়গাটা জ্বলজ্বল করছে। যেন ভিতরে আগুন জ্বলছে সেখানে। তাই ওখানে আলো হয়ে জ্বলছে। চাঁদনীর মুখটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে আছে। সারাটা শরীর একদম ধবধবে সাদা। যেন শরীরে কোনো রক্ত নেই তার।
ওর এই অবস্থা দেখে ক্লান্ত শরীরেও মুখে ফুটে উঠলো রহস্যময় হাশি। সে এবার চাঁদনীর দিকে ঘুরে শুলো। তারপর ওর গালে হাত রেখে করুন গলায় বলল,
“সরি জান, তোমাকে সারা জীবনের মতো নিজের করে রাখতেই এত বড় একটি পদক্ষেপ নিতে হলো আমায়। জানি এই সময়ের কথা তোমার মনে থাকবে না। কিন্তু আমি তোমাকে এতটা কষ্ট দিলাম সেটা আমার মনটাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। এই কষ্টটা আরো তিনবার সহ্য করতে হবে তোমায়। তারপরই তুমি পুরোপুরি ভাবে আমার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। আমাদের দুজনের মাঝে আর কোনো বাধা থাকবে না। আমরা সারা জীবনের মতো এক হয়ে যাব। আমার মায়ের মত তোমাকে মরতে হবে না আমাদের সন্তানের জন্য। বরং তুমি তখন আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রানী হবে। একজন ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হবে। ঠিক আমার মত শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ারে।”
কথাগুলো বলেই মুখে মৃদু হাসি দিল শ্রাবন। তারপর বিছানা থেকে নেমে আকাশে থাকা চাঁদের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল। চাঁদটা যেন ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কিছু বলতে চাইছে ওদের। বেশ কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে এবার চোখ সরিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকাল। দেখল ওর পুরোটা শরীর জ্বলজ্বল করছে চাঁদের আলোয়। যেন ওর শরীর থেকে এক প্রকার আলোকরশ্মি ঠুকরে পড়ছে। বিশেষ করে ওর গলায় কামরের জায়গাটা একদম জ্বলজ্বল করছে।
শ্রাবনের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। সে আবারও চাঁদনীর কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। চোখ বন্ধ করে ওর গলার কাঁটা অংশটায় হাত রাখল। মুহূর্তের মাঝে কাটা অংশ মিলিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে গেল।
সকাল 11 টা 15 মিনিট,
শরীরে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় চাঁদনী। তার সারা শরীর যেন ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। তার সাথে কি হয়েছে কিছুই মনে নেই তার। শুধুমাত্র অনুভব করতে পারছে শরীরের এই তীব্র যন্ত্রণা। সে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু তার চোখের সামনে যেন সব কিছুই ঝাপসা। কোন কিছুই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। তবে যতটুকু অনুমান করতে পারছে, তাতে সে বুঝতে পারছে সে নিজের রুমেই আছে। হয়তো নিজের বিছানাতেই শুয়ে আছে। আশেপাশে কেউ আছে কিনা এখনো বোধগম্য হয়নি তার।
সে শরীরের উপর প্রেসার দিয়ে মাথাটা ঘুরিয়ে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করতে নেয়। কিন্তু কিছুতেই পেরে ওঠে না। তার শরীর যেন একদমই সায় দিচ্ছে না তাকে। সে আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলে। দু চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু’ফোটা অশ্রু-জল। তীব্র যন্ত্রনার হাত থেকে বাঁচার জন্য মনে মনে মৃত্যু কামনা করতে থাকে সে। তখনই অনুভব করে তার মাথায় কেউ হাত বুলাচ্ছে। সে আবারো চোখ মেলে তাকায়। ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পায় শ্রাবণ তার সামনে বসে আছে। হাতে একগ্লাস দুধ নিয়ে। ওকে দেখে কিছু বলার মত সাধ্য নেই তার। শ্রাবনও কোন কথা না বলে তাকে ধরে উঠিয়ে বসায়। তারপর দুধের গ্লাসটা তার সামনে ধরে বলে,
“একটু কষ্ট হবে কিন্তু এটা খেয়ে নাও চাঁদপাখি। সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এখনি সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি।”
কথাটি বলেই তার উত্তরের অপেক্ষা করে না। জোর করে দুধের গ্লাসটা তার মুখে ধরে। এবং তাকে খাওয়াতে থাকে। চাঁদনী ও কোন উপায় না দেখে এক চুমুকে সেটা খেতে থাকে। সবটুকু তরল খেতেই চাঁদনীর ভেতর থেকে যেন উল্টে বমি আসতে চায়। কিন্তু বমি হয় না। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে সে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তখন নিজের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলে,
“আমার কি হয়েছিল শ্রাবণ? আমি এখানে এভাবে পড়েছিলাম কেন? কি হয়েছিলো আমার?”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবন হাতে থাকা গ্লাসটি পাশে টেবিলের উপর রেখে মৃদু হেসে বলল,
“কিছুই হয়নি তোমার। এমনি একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলে তাই তোমাকে জরিবুটি বানিয়ে খাওয়ালাম। এখন তুমি পুরোপুরি সুস্থ। এখন চলো তো আমার সাথে। তোমাকে নিয়ে আজ অনেক দূরে ঘুরতে যাব। ”
ওর কথার উত্তরে সন্দেহের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো চাঁদনী। গম্ভির গলায় বলল,
“আমি আবার কখন অসুস্থ হলাম শ্রাবণ? আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি তো গতকাল রাতে আপনার জন্য অনেক সেজে ছিলাম। আপনার সাথে ছাঁদে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর কি হয়েছে কিছুই মনে পড়ছে না। তাহলে আমি এখানে বিছানায় এলাম কিভাবে। আর আমার গায়ের কাপড় চোপড় সব কিছু চেঞ্জ হলো কি করে? কি হয়েছিল আমার সাথে প্লিজ বলুন?”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ একটুও ভিতু হলো না। বরং সে স্বাভাবিকভাবেই মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
“তুমি তো দেখছি বড্ড ভুলোমন চাঁদপাখি। সারারাত এত আদর ভালোবাসা পেয়েও সব ভুলে গেলে? আর তোমার গায়ের পোশাক তো আমি চেঞ্জ করে দিয়েছি গতকাল রাতে। যদি মনে না থাকে তাহলে বলো, আবার নতুন করে দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে কী করেছি।”
ওর এমন কথায় বেশ লজ্জা পেল চাঁদনী। মাথা নিচু করে ফেললো সে। মনে মনে ভাবল সত্যিই তো সে কালকে রাতে সেজেগুজে শ্রাবনের সাথে ছাদে গিয়েছিল। হয়তো ওদের মাঝে কিছু হয়েছে। তাই সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপরেও মনের মাঝে একটা খটকা থেকেই গেল চাঁদনীর। কিন্তু মুখে আর কিছু বলল না। চুপ করে বসে রইলো।
ওকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শ্রাবণ একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর ওর ডান হাতটা নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“চাঁদপাখি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর দুজনে একসাথে খাবার খাব। আমি অপেক্ষা করছি তুমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসা।”
চাঁদনী ওর কথার কোন উত্তর দিল না। একবার ওর দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। একটু পর ফ্রেস হয়ে আসলে দুজন একসাথে নাস্তা করতে নিচে নেমে এলো। কিন্তু অদ্ভুতভাবে চাঁদনী খেয়াল করল বাসায় শুধু ওরা দুজন ছাড়া অন্য কেউই নেই। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“শ্রাবণ আমাদের বাসার বাকি লোকগুলো কই? মানে যারা এতদিন কাজ করতো তাদের কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।”
” তাদের সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি সাতদিনের জন্য। সবাই ছুটিতে গেছে। এখন বাসায় শুধু তুমি আর আমি। আর সাথে আমাদের রোমান্স।”
” কিন্তু সবাইকে একসাথেই কেন ছুটিতে পাঠালেন শ্রাবণ? আমাকে তো কিছু বললেনও না?”
” বললাম তো উনাদের সবাইকে ছুটিতে পাঠিয়েছি। তোমার সাথে সারাক্ষণ রোমান্স করব বলে। আমাদের তো অনেকদিন হলো বিয়ে হয়েছে। কিন্তু দুজনের মাঝে সেরকম প্রেম মোহাব্বত ভালোবাসা আদর সোহাগ কিছুই হয়নি। সেগুলো কানায় কানায় পূর্ণ করতেই সবাইকে ছুটি তে পাঠিয়েছি। এখন তাড়াতাড়ি চলো দুজনে একসাথে খাবার খাব।”
কথাটি বলেই চাঁদনীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর বসিয়ে দিল। তারপর ওর সামনে বড় এক বাটি তরল রাখলো। যেটা দেখতে অনেকটা সুপ এর মত।
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৩১
#M_Sonali
“এটা কি শ্রাবণ? এমন দেখতে কেন এটা?”
ওর কথার উত্তর দিলো না শ্রাবণ। মৃদু হেসে ওর পাশে বসে বাটি থেকে এক চামচ তরল হাতে তুলে নিয়ে বললো,
“খেয়ে দেখো কি এটা। আমি নিজের হাতে বানিয়েছি শুধুমাত্র তোমার জন্য চাঁদ পাখি।”
চাঁদনীর কেন জানি না ওটা খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। তারপরেও শ্রাবণ এত ভালোবেসে দিচ্ছে দেখে সে এক প্রকার জোর করেই হা করলো। সাথে সাথে শ্রাবণ তরলটা ওর মুখে ঠেলে দিলো। ওটার স্বাদ পেতেই চাঁদনীর রুপ যেন কিছুটা বদলে গেল। চোখটা হালকা লাল বর্ণ ধারণ করলো। সে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকালো তরলটার দিকে। শ্রাবনের হাত থেকে চামচটা কেড়ে নিয়ে দু’চামচ দ্রুত মুখে দিলো। তারপর বাটিটা হাতে নিয়ে এক চুমুকে সবটুকু তরল শেষ করে ফেলল। তরলটা এতক্ষণ সুপের মত দেখা গেলেও, এবার সেটা আর সুপের মতো দেখতে লাগলো না। চাঁদনী যখন পুরোটা খেয়ে ফেলল তখন সেটার রং হল অনেকটা রক্তের মতো লাল। যেটা চাঁদনীর মুখের চারিপাশে লেগে আছে। ওকে এভাবে খেতে দেখে শ্রাবণের মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। সে মনে মনে বলল,
“আমি আমার কাজে অনেকটাই সফল হয়েছি। খুব শিগ্রই তুমি ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাণী হওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে চাঁদপাখি।”
তরলটা খাওয়া শেষ হতেই চাঁদনী আবারো নিজের স্বাভাবিক রূপে ফিরে এল। সে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় ঢুলতে ঢুলতে বলল,
“এটা কি ছিল শ্রাবণ? এটা এতটা মজার ছিল কেন? আমি আরো খেতে চাই।”
কথাটি বলেই সে জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পরলো শ্রাবণের কোলে। সে ওর কথার কোন উত্তর দিল না। শুধু মুচকি হাসল। তারপর তাকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল।
দিন পেরিয়ে রাত নেমে এলো পৃথিবীর বুকে। কিন্তু চাঁদনীর এখনও জ্ঞান ফেরেনি। সে আগের মতোই চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে। যেন গভির ঘুমে তলিয়ে আছে সে। শ্রাবণ তাকে ভালো করে দেখে নিয়ে আবারো সেই অন্ধকার রুমের ভেতর প্রবেশ করল। লাইট জ্বেলে সেই বইয়ের তাকের কাছে গিয়ে পুরোনো সে বইটি বের করলো। সেটা খুলতেই মাঝখানে একটি পৃষ্ঠায় দেখতে পেল বেশ কিছু লেখা। এবং উপরে একটি ছবি আঁকা। যে ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজন ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার একটি নারীর গলায় কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খাচ্ছে। কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য। শ্রাবণ সেটা দেখে মৃদু হাসলো। নিচের লেখাগুলো পড়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা করলো। তারপর বইটা যথাস্থানে রেখে আবার রুম থেকে বেরিয়ে সোজা চাঁদনী কাছে চলে এলো।
ওর সামনে এসে নিজের ভয়ানক ভ্যাম্পায়ার রুপ ধারণ করলো সে। মুহূর্তে ওর কাছে ছুটে গিয়ে গলায় নিজের দাঁত বসিয়ে দিল। সাথে সাথে ঘুমন্ত চাঁদনী ছটফট করতে লাগল গলা-কা-টা মুরগির মত। এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। তারপর শ্রাবণ তাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে স্বাভাবিক রূপ নিয়ে শুয়ে পড়লো। ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। আর মাত্র দুইবার এমন করলে চাঁদনী হয়ে উঠবে একজন ভয়ানক ভ্যাম্পায়ার। কথাটা ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো শ্রাবনের।
১ দিন পর,
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিজেকে আগের মতোই অসম্ভব অসুস্থ লেগেছে চাঁদনীর। শ্রাবণের দেওয়া জোরিবুটি দেওয়া দুধ খেয়ে সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। তারপরেই শ্রাবণ তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কোথায় যেন চলে গিয়েছে। অবশ্য যাওয়ার আগে তার প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর বাড়িতেও আগের কাজের লোক গুলোকে এনে কাজে লাগানো হয়েছে। চাঁদনীর ভীষণ মন খারাপ লাগছে। কেন জানে না ইদানিং মনটা ভীষণ হতাশ হতাশ লাগে। বারবার মনে হয় তার সাথে এমন কিছু হচ্ছে যার ব্যাপারে কিছুই জানেনা সে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ছাদের উপর চলে এসেছে। ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। একটু পরেই হয়তো রাত নেমে আসবে। চারিদিকে অন্ধকার হতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো শ্রাবণের আসার নাম নেই।
আনমনে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবনায় ডুবে আছে সে। আজ বড্ড বেশি বাবা এবং দাদির কথা মনে পড়ছে তার। কেন যেন মনে হচ্ছে আজকে তার সাথে ভয়ঙ্কর কিছু হতে চলেছে। বা অনেক কিছু ঘটে যাবে তার জীবনে। যেটার ব্যাপারে তার কোনো ধারণা নেই। সে একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কখন যে চারিদিকে অন্ধকার নেমে রাত হয়ে গেছে খেয়ালই করেনি। যতক্ষণে খেয়াল হয়েছে ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
হঠাৎ পাশে কিছুর অস্তিত্ব টের পেতেই ধ্যান ভেঙ্গে সেদিক ঘুরে তাকাল সে। দেখল বিশ্রী দেখতে একটি বিশাল বড় বাদুর দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। যার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। চাঁদনী চারিপাশে ফিরে তাকাল। দেখল রাত হয়ে গেছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিপদ বুঝতে পেরে কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে। কিন্তু কেনো জানি তার ভয় হচ্ছে না। বরং ভিতর থেকে এক হিংস্র রুপ বেরিয়ে আসতে চাইছে।
সামনে থাকা বাদুর রুপি ভ্যাম্পায়ার টা মুহূর্তে তার ওপর আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে এলো। তখনই চাঁদনীর মাঝে কি হলো সে জানেনা। সে হঠাৎ’ই হিংস্র হয়ে উঠলো। এবং তার সাথে যেন যুদ্ধে নেমে পরল। দুজনের মাঝে ভীষণ রকম ধস্তাধস্তি শুরু হল। যেন কারো সাথে কেউ পেরে উঠছেনা। ঘটনার এক পর্যায়ে চাঁদনী ওই ভ্যাম্পায়ার টার গলায় কামড় দিয়ে বসল। এবং মুহূর্তেই ভ্যাম্পায়ারটার গলার রগ ছিঁড়ে নিয়ে সেখান থেকে সরে গেল। সাথে সাথে বাদুড় রুপি ভ্যাম্পায়ার ছাদের উপরে পড়ে ছটফট করতে করতে মৃত্যুবরণ করল। কিন্তু চাঁদনীর এখনো হুঁশ আসে নি। সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে থেকে হিংস্র বাঘিনীর মত মুখ দিয়ে গর্জন করছে।
এভাবে বেশ কিছুটা সময় কেটে যেতেই সে ধীরে ধীরে নিজের স্বাভাবিক রূপে ফিরে এলো। তার খেয়াল হল সে কি করেছে। সে নিজের দিকে তাকাতেই খেয়াল করল তার হাতে বিশাল বড় বড় নখ। যেগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তার মুখে লেগে আছে ওই ভ্যাম্পায়ারটার রক্ত। এবং তার মুখ ভেদ করে বেরিয়ে থাকা বড় দুটি সরু লম্বা দাঁত ধিরে ধিরে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। এটা খেয়াল হতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল তার। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তার সাথে এটা কি হলো। তবে তার সাথে যে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গেছে সেটা তার বুঝতে বাকি নেই। নিজেকে এমন ভয়ানক রূপে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো সে। সাথে কষ্টে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় এলো না তার। ভয় ও আতঙ্কে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল তার। সে তো এমন জীবন চায়না।
সে ছাদের উপরে হাটু গেড়ে বসে পড়ল। চিৎকার করে কান্না করতে লাগল। আর বলতে লাগল,
“এটা আমার সাথে কি হচ্ছে? শ্রাবন আপনি কোথায়? আমি জানি এসবের পিছনে আপনি আছেন। আপনি কেন এমনটা করলেন? কেন আমার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে এমন অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার এর জীবন এনে দিচ্ছেন। আমি এমন জীবন চাইনা। যে জীবনে অন্য প্রানী বা মানুষের জীবন শেষ করে তাদের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এর চাইতে ভালো আমাকে মেরে ফেলতেন। তবুও এমন কাজ করতেন না। এটা আপনি কী করলেন শ্রাবণ। আমিতো আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম। মন থেকে স্বামী হিসাবে মেনে নিয়ে ভালবেসে ছিলাম। কিন্তু আপনি আমার সাথে এমন করলেন? আমি আপনাকে কখনোই ক্ষমা কোরবোনা। কোথায় আপনি সামনে আসুন।”
কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বলেই রাগে গর্জন করতে লাগল চাঁদনী। তখনই তার সামনে এসে উপস্থিত হল শ্রাবণ। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে। কারণ সে বুঝতে পেরেছে চাঁদনী সব জেনে গেছে। যেটা তার ধারনার বাইরে ছিল। কারণ আজ রাতেই আর একবার চাঁদনীর ওইভাবে রক্ত পান করলে সে পুরোপুরি ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হবে। শুধু আজকের রাতটাই বাকি ছিল। আজকের রাতে বিশেষ কিছু জিনিসের জন্য একটি জায়গায় গিয়েছিল সে। কিন্তু এখানে এত কিছু ঘটে যাবে সে ভাবতে পারেনি।
শ্রাবণ কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগে গর্জন করতে করতে উঠে দাঁড়ালো চাঁদনী। তেরে এসে শ্রাবনের কলার চেপে ধরল। গালে মুখে জোরে জোরে থাপ্পর মারতে মারতে বলল,
” আর কতবার বেইমানি করবেন আমার সাথে? আর কত ঠকাবেন আমায়? আমারই ভুল হয়েছে আপনার মত একটি মানুষ রুপি পিচাশকে ভালোবেসে। স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে। আমার প্রথমেই বোঝা উচিত ছিল আপনার মনে ভালোবাসা বলতে কিছু থাকতে পারে না। আপনিতো একটা ভ্যাম্পায়ার, একটা নর-পিশাচ। যে কিনা পশু এবং মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। আপনাকে আমি ঘৃণা করি। আপনি আমার সাথে যেটা করেছেন তারপরে আপনার সাথে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আমি এই ভয়ানক জীবন রাখতে চাই না। আমি জানি আমি যদি এই অবস্থাতে বেঁচে থাকি তাহলে আমিও হয়তো কারো না কারো মৃত্যুর কারণ হব। আপনি তো সেই ব্যবস্থা পুরোপুরি করে ফেলেছেন। চাইনা আমার এ জীবন। আমি এখনই নিজেকে শেষ করে ফেলব। মরে গেলেও আপনাকে আর কখনো ক্ষমা করব না। আই জাস্ট হেট ইউ শ্রাবণ। আই জাস্ট হেট ইউ।”
কথাটি বলেই শ্রাবনের মুখে আরও একটা থাপ্পড় মেরে ছাদের কিনারায় দৌড়ে গিয়ে সেখান থেকে নিচে লাফ দিলো চাঁদনী।
কিন্তু নিচে পড়ার আগেই তাকে ধরে ফেললো শ্রাবণ। তাকে বুকের মাঝে শক্ত করে ধরে নিয়ে উড়ে যেতে লাগল অচিন দেশের উদ্দেশ্যে। চাঁদনী অনেকবার তার বুক থেকে ছোটার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠলো না। শেষে শান্ত হয়ে দেখতে লাগলো তাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। সে দেখল ঝাড় জঙ্গল আকাশ বাতাস বেরিয়ে যেন উড়ে চলেছে শ্রাবণ তাকে নিয়ে। এভাবে অনেকটা পথ উড়ে চলার পর একটি গভীর জঙ্গলের মতো জায়গায় গিয়ে পৌঁছালো তারা। চাঁদনী খেয়াল করে দেখল এই জঙ্গলের মাঝে একটি পশুপাখির চিহ্নটুকুও নেই। জঙ্গল টা এতটাই ঘন যে বলার বাইরে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে জঙ্গলের প্রতিটি গাছপালার কোনো পাতা নেই। বা গাছগুলো সবুজ নয়। যেন সবগুলো গাছই মরা ও শুকনো। আর এতটা বিশাল বিশাল যে কল্পনার বাইরে।
চাঁদনী বেশ অবাক হয়ে এসব কিছু দেখতে লাগল। হঠাৎ সে খেয়াল করল যেন গাছগুলো নড়াচড়া করছে। দেখে মনে হচ্ছে গাছগুলো জীবন্ত। যেন একে অপরের সাথে কথা বলছে। এবার বেশ ভয় হল তার মনে। কিন্তু সে কিছু বলার মত অবস্থায় নেই। হঠাৎ দেখল শ্রাবণ তাকে নিয়ে বিশাল বড় একটি প্রাসাদের সামনে নেমেছে। চাঁদনী প্রাসাদটার দিকে দেখেই বুঝে গেল এটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্য। শ্রাবণ তাকে নিয়ে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে চলে এসেছে। কথাটা ভাবতেই আরেক দফা ভয় বাসা বাধলো তার মনে। কিন্তু রাগও হচ্ছে প্রচুর।
শ্রাবণ এখনো তাকে ছাড়েনি। আগের মতোই বুকে জড়িয়ে রেখেছে। তাকে নিয়ে উড়ে যেতে লাগল প্রাসাদের ভেতরে। প্রাসাদটা বাইরে থেকে দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু তার চাইতে বেশি ভয়ানক। কারণ প্রাসাদের দেওয়ালের সাথে ভয়ংকর সব ভ্যাম্পায়ার এর প্রতিচ্ছবি আকা।
শ্রাবণ ওকে নিয়ে সোজা নিজের দাদুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সে শ্রাবণ ও চাঁদনী কে একসাথে দেখে নিজের সিংহাসন থেকে নেমে এলো। গম্ভীর চোখে তাকাল দুজনের দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
“ওকে এখানে নিয়ে এসেছ কেন? ও এইখানে আসার উপযুক্ত এখনো হয়নি। আজ তো তার উপযুক্ত হওয়ার কথা ছিল। তাহলে তুমি নিজের কাজ শেষ না করেই ওকে এখানে কেন এনেছ শ্রাবণ?”
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৩৩
#M_Sonali
“আজ থেকে তুমি চিরমুক্ত চাঁদ পাখি। আর কখনো এই শ্রাবন বিরক্ত করবে না তোমায়। কখনো তোমার সামনে ভালবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়াবে না। আগে যেমন তুমি একা ছিলে। আজ থেকেও তুমি সম্পূর্ণ একা হয়ে যাবে। তোমার জীবনে ভ্যাম্পায়ার শ্রাবণ নামে আর কেউ থাকবে না। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। নিজের মত বাঁচো। নিজের মতো ভালো থেকো। তোমার জীবনে যে কষ্টের ছায়া হয়ে নেমে এসে ছিলাম আমি। সেই ছায়া নিজে থেকেই সরিয়ে নিলাম। তোমার জীবনে #ভয়ংকর_সে নামে আর কখনো কেউ আসবে না। ভালো থেকো, আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।”
চাঁদনী কে সামনে বসিয়ে রেখে এই কথাগুলো বলছিল শ্রাবণ। কথাগুলো বলা শেষে তার থেকে ধীরে ধীরে পিছনে সরে যেতে থাকে সে। মুহুর্তের মাঝে ধোঁয়ার মতো হয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। চাঁদনী উঠে দাঁড়ায় ছুটে যায় সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তার দিকে। কিন্তু সে আর কোথাও পায় না তাকে। শুধু একবারই চিৎকার দিয়ে ডেকে ওঠে “শ্রাবণ” বলে। মুহুর্তেই তার ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুম থেকে জেগে উঠলো মাত্র। এতক্ষণ হয়তো কোনো স্বপ্ন দেখছিল সে।
চিৎকার দিয়ে উঠে বসে সে। তার কানে ভেসে আসে চারিদিক থেকে ফজরের আজান। আশেপাশে চোখ মেলে দেখে নিজের রুমে শুয়ে আছে। জানালা খোলা থাকায় জানালা থেকে হালকা চাঁদের আলো ঘরে এসে পড়ছে। যার মৃদু আলোতে সে স্পষ্টই বুঝতে পারে সে নিজের রুমে। তার সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারছে না এতক্ষণ কি হচ্ছিল তার সাথে। সে কি সত্যিই স্বপ্ন দেখছিল নাকি এটা বাস্তব ছিল। কিন্তু এখানে ও কিভাবে এলো? সে তো শ্রাবণ এর সাথে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে ছিল। তাহলে এখানে পৌঁছালো কিভাবে সে? আর তার সাথে কি হয়েছে কিছুই যেন মনে করতে পারল না সে। সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিচে নেমে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে জানালার কাছে গিয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলো।
না কোথাও কিছু নেই। চারিদিকে সবকিছু স্বাভাবিক। চাঁদনীর কেন যেন ভীষণ রকম অস্থির হতে লাগল। সে ভেবে উঠতে পারছে না তার সাথে কি হচ্ছে বা হয়েছে। সে দরজা খুলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল। তার বাবা এবং দাদির রুমে গিয়ে দরজায় ঠকঠক করতে লাগল। রতন মিয়া এসে দরজা খুলে দিলো। ঘুম ঘুম চোখে তার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত গলায় রতন মিয়া বললেন,
“কি হয়েছে চাঁদনী! এসময় এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেন?”
উনার কথার উত্তরে চাঁদনী বেশ অবাক হল। কেননা ওনাকে দেখে ওনার কথায় বোঝা যাচ্ছে চাঁদনী যে এখানে এসেছে তাতে উনি একটুও অবাক হননি। বরং উনি আগে থেকে জানতেন চাঁদনী এখানে। তাই বেশ অবাক হলো চাঁদনী উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“বাবা উনি কোথায়? ওনাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না কেন? আর আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমি তো এখানে ছিলাম না!”
ওর কথায় ভ্রু কুচকালো রতন মিয়া। অবাক হয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
“এসব কি আবোল তাবোল বকছিস চাঁদনী? কার কথা জিজ্ঞেস করছিস তুই? এই উনি টা আবার কে? আর এখানে ছিলি না মানে কোথায় ছিলি তুই? পাগল হয়ে গেলি নাকি সাত সকালবেলা।”
এবার যেন চাঁদনী আরো বেশি অবাক হলো। তার মাথা ঘুরতে লাগলো। তার বাবার এমন কথায়। সে উত্তেজিত কণ্ঠে চোখের পানি ফেলে বলল,
“বাবা আমি শ্রাবণের কথা বলছি। উনি কোথায়? আমাকে কেন উনি ওসব কথা বলল? আর আমি এখানে কখন এলাম। উনি আমাকে কখন এখানে নিয়ে এসেছে?”
“সকাল সকাল এসব কী পাগলামি শুরু করেছিস চাঁদনী? কে আবার এই শ্রাবণ? কার কথা বলছিস তুই? আর তোকে এখানে রেখে গেছে মানে? তুই তো সারাক্ষণ এখানেই থাকিস। পাগল টাগল হলি নাকি। কীসব বকছিস এসব?”
উনার কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে রত্না বেগম হায় হায় করে বলে ওঠেন,
“আল্লাহ গো আমার নাতনি বুঝি পাগল হয়ে গেল। দুই দুইবার বিয়ে ভাঙার শোকে ওর আজ এই অবস্থা। রতনরে আমার একটা মাত্র নাতনিকে শেষে কিনা এ অবস্থায় দেখতে হবে কল্পনাও করিনি। তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাঁদনীর বিয়ের ব্যবস্থা কর। আমি আমার নাতনি কে এমন পাগল অবস্থায় দেখতে পারবোনা।”
রত্না বেগমের কথায় যেন মাথায় আকাশ থেকে পড়লো চাঁদনীর। ও যেন বাবা এবং দাদির কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। একেতো শ্রাবণের টেনশন তার ওপর তাদের এমন কথায় মাথা ঘুরতে শুরু করলো তার। সে এবার বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,
“এসব তুমি কি বলছো দাদি? কিসের বিয়ে ভাঙ্গার কষ্ট? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। শ্রাবণ আমার স্বামী। আর আমিতো তার সাথেই ছিলাম। কিন্তু আমি এখানে এলাম কখন? আমাকে উনি কখন রেখে গেছেন? তোমরা এমন আবোল-তাবোল কথা বলছ কেন? এমন ভাব করছো যেন কিছুই মনে নেই তোমাদের। প্লিজ দাদি এখন আমার এসব ভালো লাগছে না। সত্যি করে বল উনি কোথায়? উনি আমাকে এসব কথা কেন বলে গেলেন?”
এবার ওর কথায় যেন আঁতকে উঠলেন রত্না বেগম। সে হায় হুতাশ করতে করতে বলে উঠলেন,
“ওরে রতনরে আমার একমাত্র নাতনী এবার সত্যিই পাগল হয়ে গেল। আমি তোকে বারবার বলেছিলাম এভাবে একটি যুবতী মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে সে কতটা আঘাত পায় এবার বুঝতে পারলি তো। এখন আমার নাতনিকে কে বিয়ে করবে? অত পাগল হয়ে গেছে পুরো।”
“আহ মা, চুপ করো তো। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”
রত্না বেগম কে থামিয়ে দিয়ে কথাটা বলে উঠলেন রতন মিয়া। বেশ গভির চোখে তাকালেন চাঁদনীর দিকে। গম্ভীর গলায় বললেন,
“চাঁদনী মা তুই ঘরে যা। চুপচাপ শুয়ে একটু রেস্ট নে। আমি বুঝতে পারছি বারবার বিয়ে ভাঙার কারনে তুই অনেক ভেঙে পড়েছিস। তাই এসব আবোল-তাবোল কথা বলছিস। চিন্তা করিস না আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোর বিয়ের ব্যবস্থা করব। আগের দুই বিয়ের চাইতেও এবার আরো ভালো ঘরে বিয়ের ব্যবস্থা করব তোর। আর এবার তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো। আমার চাঁদনী মায়ের মত রূপসী মেয়ে এই এলাকায় আর একটাও নেই। দেখিস তোর কত ভালো পরিবারে বিয়ে হবে। কত সুখি হবি তুই। একদম রাজরানী হয়ে থাকবি শশুরবাড়িতে।”
কথাগুলো বলে চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন রতন মিয়া। উনার কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। সে মনে মনে কিছু একটা ভেবে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল। আর কোন প্রশ্ন করল না। ওকে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যেতে দেখে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলেন রতন মিয়া এবং রত্না বেগম। চাঁদনী নিজের রুমে ফিরে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো। তারপর চুপচাপ গিয়ে বিছানার উপর বসে আনমনে কিছুক্ষণ জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। এতক্ষণে বাইরে বেশ পরিস্কার হতে শুরু করেছে। চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে কানটা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পা টিপে টিপে চলে যায় ডেসিন টেবিলের সামনে। আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে একবার পর্যবেক্ষণ করে। গলায় হাত রেখে ভালোভাবে দেখে। না তার গলায় কোন দাগ নেই। সে সম্পন্ন ফিটফাট আছে। আয়নার সামনে থেকে সরে এসে জানালার পাশে দাঁড়ায়। সে জানালার গ্রিলে হাত দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি রাখে। অদূরে গাছের ওপর কত রকমের পাকপাখালি এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করছে এবং কিচিরমিচির করে ডাকছে। চাঁদনী মুগ্ধ নয়নে সেসব দেখে। কিন্তু তার মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। মনে মনে যেন খুব করে কিছু একটা ভাবছে সে। জানালার কাছ থেকে আবার সরে গিয়ে বিছানায় বসে। কিছুক্ষণ চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে। মনে মনে বলে ওঠে,
“আপনি সবার স্মৃতি থেকে যতই সব কিছু মুছে দেন না কেনো। আমার স্মৃতি থেকে নিজেকে কখনো আড়াল করতে পারবেন না শ্রাবন। আমি ভালো করেই জানি আপনিই নিজের শক্তি দিয়ে বাবা আর দাদিকে সব ভুলিয়ে দিয়েছেন।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,