মন গহীনে পর্ব -০৩

#মন_গহীনে

#পর্বঃ৩

#দোলন_আফরোজ

মেয়ে আজ ৫ দিন যাবৎ নিখোঁজ। তারেক রহমান এর পাগল প্রায় অবস্থা। এদিকে পুলিশ ও কোনো হদিস দিতে পারছে না।তানিয়া বেগম ৫ দিন থেকে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এতোটুকু একটা মেয়ে। কোথায় আছে কেমন আছে আল্লাহ জানে।
পুলিশ কোনো খবর না পেয়ে সন্দেহ করছে হয়তো বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ভেগে গেছে।কেউ যদি নিজে থেকে পালিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তারেক রহমান এক প্রকার ক্ষেপেই গেছে। তার এতো টুকুনি মেয়ে আবার প্রেম করবে। এটাতো অসম্ভব।
জবাবে পুলিশ বলেছে এখনকার ছেলে মেয়ে রা ক্লাস ৬ থেকেই প্রেম করে, আর আপনার মেয়েতো এবার এস এস সি দিবে।গিয়ে দেখুন বয়ফ্রেন্ড এর সাথেই ভেগেছে।
তারেক রহমান রাগ দেখাতে পুলিশ আরো উল্টো রাগ দেখিয়ে উনাকে বিদায় করে দেন।যান যদি পারেন নিজের মেয়েকে নিজে খুঁজে বের করুন।

হতাশ হয়ে ফিরে আসেন উনি। উনার মতো একজন ছাপোষা মানুষের মেয়ের পিছনে পুলিশ কেনোই বা সময় নষ্ট করবেন।
দুপুরের তপ্ত রোদে বাড়ি ফিরে আসেন উনি।তানিয়া বেগম দৌড়ে স্বামীর কাছে আসেন মেয়ের খোঁজ পেলো নাকি জানতে। স্বামীর নতজানু মুখ দেখে যা বুঝার বুঝে গেলেন উনি। আবারো হাউমাউ করে বিলাপ পেরে কান্না জুড়ে দিলেন।
হঠাৎ করে স্বামী কে বলেন, আচ্ছা শুন না সেলিম ভাই তো এইখানে আছেন অনেক বছর হয়। আর রাজনীতি করে, ভালো নাম ডাক ও আছে। চলো না ওখানে গিয়ে দেখি উনি আমাদের কোনো সাহায্য করতে পারেন কিনা।

এতো বছর আগের কথা, চিনবেন কি উনি আমাদের?
একি এলাকার মানুষ, এতো বছরের চেনা জানা, পরিচয় দিলে নিশ্চয় চিনবেন।

উনি এখন অনেক বড় মানুষ হয়ে গেছে গো, আমাদের মতো ছাপোষা মানুষদের চিনবেন না।

ওসব ভাবার সময় এখন না। চলো না একবার গিয়ে দেখি, এছাড়া তো আমাদের আর কোনো উপায় ও নেই।

সেলিম সাহেবের ঠিকানা পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। সাভারের সবাই উনাকে এক নামেই চিনেন।রানিং এম পি উনি।
আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করে তারেক রহমান আর তানিয়া বেগম চলে গেলেন সেলিম সাহেবের বাড়ি।

গেট থেকে দারোয়ান ঢুকতে দিচ্ছিলো না তাদের। দারোয়ান কে বলা হয়, বলুন উনাকে গ্রামের বাড়ির পোস্ট মাস্টার তারেক রহমান। দারোয়ান ফোনে কথা বলার পর সসম্মানে উনাদের ভিতরে ঢুকান।

শাহানারা বেগম এতো বছর পর পরিচিত মানুষ দেখে আবেগে আপ্লূত হয়ে যান। তারেক রহমান এর সাথে কুশল বিনিময় করে তানিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরেন তিনি। তানিয়া বেগম কিছুটা ইতস্তত বোধ করেন। এতো বড় মানুষ হয়েও এতো আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হন তিনি।

সেলিম সাহেবের বাড়িটা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি।নিচ তলায় ড্রয়িং, ডাইনিং রুম সহ আরো দুটো রুম, আর উপরে উনাদের থাকার ঘর গুলো।

শাহানারা বেগম উনাদের ড্রয়িং রুমে বসিয়ে শেফালি কে বলে উনাদের চা নাস্তা দিতে।
তানিয়া বেগম কে শাহানারা বেগম আগে থেকেই তুমি করে সম্ভোদন করতেন। বয়সে অনেক ছোট হবে উনার।
তারেক রহমান এর খোঁজ খবর নেন উনি।জানতে পারেন প্রায় ২ বছর হয়েছে উনারা সাভার শিফট করেছে। নিজের সারাজীবন এর সম্বল আর পেনশন এর অর্ধেক টাকা তুলে অল্প একটু যায়গা কিনে ওখানেই একটা এক তলা ছাদ দিয়ে বাড়ি করেছেন উনি।
শাহানারা বেগম তানিয়া বেগম কে মেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করতেই মুখটা চুপসে যান উনার।
বলতে থাকেন বড় মেয়ে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ে। আর ছোট মেয়ে এবার এস এস সি এক্সাম দিবে। আজ ৫ দিন হয় ছোট মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।স্কুল থেকে আর বাড়ি ফেরেনি।পুলিশ কেস পর্যন্ত করেছে।কোনো হদিস পাওয়া যায় নি।তাই সেলিম সাহেবের কাছে এসেছেন উনারা, যদি কোনো খোঁজ দিতে পারেন।

কথাটা শুনার সাথে সাথে শাহানারা বেগম এর বুকের ভিতর টা ধক করে উঠে। এতোদিন পর যাও উনাদের খোঁজ পেয়েছে,কিন্তু কাব্য!! কাব্য যদি শুনে তানিয়ার ছোট মেয়ে নিখোঁজ, কি করবে ও! কিভাবে মেনে নিবে এটা।ভাবতেই সারা শরীর শিউরে ওঠে উনার।
আস্বস্ত করেন উনাদের, যেভাবেই হোক মেয়েকে খুঁজে বের করতে বলবেন সেলিম সাহেব কে।

কাব্য মাত্রই ফিরেছে হস্পিটাল থেকে। মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখে মা বসে কারো সাথে গল্প করছে। ওদিকে এক নজর তাকিয়ে উপরে উঠতে নেয় সে।কারণ বাসায় কে এলো কে গেলো এটা নিয়ে তার কখনোই মাথা ব্যথা নেই।দুই সিড়ি উঠার পর শাহানারা বেগম ছেলেকে ডাকেন।
কাব্য এদিকে আয় তো বাবা!
কাব্য এসে মায়ের সামনে দাড়িঁয়ে তারেক রহমান ও তানিয়া বেগম কে সালাম দেয়।

ভালো করে দেখতো চিনতে পারিস কিনা।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকেও চিনতে পারেনি। প্রায় ১৫ বছর হতে চল্লো। তখন কাব্যর বয়স ছিলো মাত্র ৯ বছর। না চিনতে পারার ই কথা।

শাহানারা বেগম ই বলেন, তোর তারেক চাচা, তানিয়া চাচি।
কাব্য যেনো থম মেরে যায়। চোখ দুটো চিকচিক করে উঠে তার। আল্লাহ কোনো মানুষের ইচ্ছে ই অপূর্ণ রাখেন না। তাই তো এতো বছর পর এসে এই মানুষ গুলোর সাথে দেখা করিয়ে দিলেন।

কাব্য তানিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো কেঁদেই দেয়।তানিয়া বেগম কিছুটা ভরকে যান তাতে। এতো বছর পর ও কাব্য এখানো উনাকে এভাবে মনে রেখেছে।( ছোট বেলায় কাব্য তানিয়া বেগম এর কাছেই থাকতো। পাশাপাশি বাড়ি ছিলো তাদের। তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান এর ছেলে ছিলো না তাই কাব্যকেই নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতো)

কোথায় চলে গেছিলে চাচি? কতো খুজেছি তোমাদের।বার বার হতাশ হয়েছি। তবে আশা ছাড়িনি জানো।
পুতুল বউ! আমার পুতুল বউ কেমন আছে??

কাব্যর এমন কথা শুনে তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান দুজনেই আরেক দফা ধাক্কা খান। ছোট বেলায় পুতুল বউ পুতুল বউ করে পাগল ছিলো সে। সারাক্ষণ ওকে নিয়েই মেতে থাকতো। গোসল করানোর সময় পাশে বসে থাকা, খাওয়ানোর সময় পাশে বসে থাকা আর বাকি সময় বউ সাজিয়ে নিয়ে খেলা।এসব ই নিছক ছেলেমানুষী ছিলো তখন। ছেলে যে এখনো পুতুল বউ বলেই সম্মোধন করছে।তবে কি সে এখনো পুতুল বউ কে মনে রেখেছে। প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায় শাহানারা বেগম এর দিকে।
শাহানারা বেগম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।
তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান এর মনে পরে যায় কাব্যদের ঢাকা আসার দিনের কথা। সেদিন কি পাগলামি টাই না করেছিলো ছেলে। কিছুতেই যাবে না সে তার পুতুল বউ ছেড়ে। কতো খেলনা কতো খাবার, ঘুড়তে যাওয়ার লোভ ও দেখানো হয়। কিচ্ছুটি মানেনি ছেলে। ওর কান্নায় পুরো গ্রাম কেঁদেছিল সেদিন।

তারেক রহমান, তানিয়া বেগম ভেবেছিলেন এতোদিনে কিচ্ছুটি মনে নেই হয়তো ওদের।ছেলেযে সব এভাবে মনে রাখবে ভাবতেই পারেননি উনারা।

কি হলো? কিছু বলছো না কেনো চাচি? আমার পুতুল বউ কেমন আছে?
কথাটা শুনেই তানিয়া বেগম হু হু করে কেঁদে উঠেন।
তানিয়া বেগম এর কান্না দেখে কাব্যর বুকের ভিতর টা ধক করে উঠে।
কিছু বলো চাচী,,, আর নিতে পারছি না আমি, হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে এক্ষুনি।

খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তোর পুতুল বউ কে বাবা।স্কুল থেকে বাড়ি ফেরেনি আর।

কথাটা শুনেই কাব্য তানিয়া বেগম কে ছেড়ে দু পা পিছিয়ে যায়।




চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here