মন নিয়ে কাছাকাছি পর্ব – ১৫+১৬

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
১৫

(নিচের কথাগুলো অবশ্যই অবশ্যই পড়বেন।)
🌸
ওদের কথার মাঝেই আবির এসে হাজির হলো। সে ছোট মামীর কোলে রেখেই ঘুমন্ত বাবুকে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। বাবু ঘুমের মাঝে কাচুমাচু করে উঠলে আবির সরে এলো। মাহিকেও এখানে দেখে বলল,

“কী নিয়ে মিটিং হচ্ছে শুনি।”

“ইভান ভাইয়ের বিয়ে।”

“যাহ! আমাকে ছাড়া বিয়ে ঠিকও করে ফেলেছিস!”

“না। কীভাবে ঠিক করব। কেউ তো মেয়ে দেখতেই যেতে চাচ্ছে না।”

বড় মামী আবিরের কাছে নালিশ করে বলল,

“আবির বাবা দেখ তো এরা কী পাগলামি শুরু করেছে। একটা কথাও শুনছে না।”

“পাগলামি না মামী। এরাই তো ইভান ভাইয়ের আসল বোন। এরা ইভান ভাইয়ের কথা ভাবছে। আমরা কি কখনও ভেবেছি?”

“হ্যাঁ তুইও এখন এদের পাগলামিতে সঙ্গ দে।”

আবির ভাই ওদের পক্ষে কথা বলছে শুনে মীরা মাহিমা আবিরের কাছে এসে দাঁড়াল।

“মেয়ের বাড়ি কই? বাপ কী করে? দেখতে ভালো তো? কবে যেতে চাস?”

মাহি খুশিতে ভাইয়ের গলায় ঝুলে পড়ে গদগদ করে বলল,

“আজই।”

“আজই? ওদের না জানিয়ে।”

মীরা বলল,

“জানানোর দরকার নেই। হুট করে চলে যাব।”

“দূর মানুষের বাড়িতে এভাবে যাওয়া যায় নাকি?”

“চলো না। গেলে কিছু হবে না। প্লিজ আবির ভাই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। বিকেলে সবাই রেডি হয়ে থাকিস।”

“আবির তুইও এদের সাথে শুরু করলি।”

“দেখে আসি না মামী। পরে এদের কান টানা যাবে।”

আবির ভাই, তনি আপু, মীরা, মাহিমা এমনকি রুমশিও যাবে। সবাই মহা উৎসাহ নিয়ে রেডি হচ্ছে। এই প্রথম ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাবে বলে কথা। আবির শয়তানি করে ইভানকে কল করে মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা জানাল।

“ভাই তোর বিয়ে ঠিক করতে যাচ্ছি। মন চাইলে তুইও আমাদের সাথে যেতে পারিস।”

“আবির ওরা বাচ্চা বলে মারের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে। কিন্তু তোর মার কিন্তু একটাও মাটিতে পড়বে না।”

“আরে তোর সমস্যা কি। আমরা যাচ্ছি। মেয়ের বাবা মা ঝাঁটা মেরে দিলে আমরা খুশি হয়ে খেয়ে আসব। তুই প্যারা নিচ্ছিস কেন?”

“যা খুশি কর তোরা। এসবের মধ্যে আমাকে একদম টানবি না।”

“ওকে। শুধু ভাবীকে পছন্দ হলে তুই টুপ করে কবুলটা বলে দিবি।”

“তোরা সবাই মিলে এমন পাগলামি করতে থাকলে আমি বাড়িই ছেড়ে দিব।”
🌸
আজ প্রাইভেটে যাবে না। এই কথাটা মীরা মুবিনকে কল করে জানিয়ে দিতে চাইল। নইলে মুবিন ভাই তার জন্য অপেক্ষা করবে। মীরা কল করেই যাচ্ছে। মুবিন ভাই কল তুলছে না। অনেকক্ষণ পর কল রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল,

“হ্যালো।”

মীরা পাত্রী দেখতে যাওয়া নিয়ে ভীষণ এক্সাইটেড থাকায় কন্ঠটা চিনলো না। সে মুবিন ভাই মনে করেই বলে চলল,

“মুবিন ভাই আজ আমি পড়তে আসব না। ইভান ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে যাব। ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে কিন্তু অনেকদিন প্রাইভেট বন্ধ দিতে হবে। কোন হোম ওয়ার্কও দেওয়া যাবে না। আমি টেনশন ফ্রী হয়ে ভাইয়ের বিয়ে এনজয় করতে চাই। মুবিন ভাই এখন আমি রাখি।”

মীরা নিজের কথাগুলো বলে কল কেটে দিল। ফোনের ওপাশে জায়িন দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোট আগের জায়গায় রেখে দিল। মুবিন বাসায় নেই। অনেকক্ষণ ধরে রিং হচ্ছিল। মুবিনের কল কোন সময়ই সে তুলে না। কিন্তু মানুষটার ধৈর্য দেখে নিজেই বিরক্ত হচ্ছিল। কল তুলছে না হয়তো ফোনের কাছে নেই। এটা বোঝা তো কমন সেন্স। একটু পরে কল দিলেই হয়। কিন্তু এই কমন সেন্সটুকু ওই মানুষটার মাঝে নেই। সমানে কল দিযেই যাচ্ছে। জায়িন কল তুলে বলে দিতে এসেছিল, মুবিন বাসায় নেই। কিন্তু স্ক্রিনে সেভ করা নামটা দেখে ইতস্তত করছিল। মা খালামনির ফ্ল্যাটে গেছে। বাধ্য হয়ে জায়িনকেই কল তুলতে হলো। এবং তার কন্ঠ মেয়েটা চিনতেও পারলো না। নিজের প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো বলে এপাশ থেকে কোন উত্তর না শুনেই রেখে দিল।
🌸
মীরা মাহিমাকে দরজার সামনে দেখে ইভা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। মীরা মাহিমা একা আসেনি। ওদের সাথে আরও কতজন ছেলেমেয়ে এসেছে। ইভা বিস্ময়ের প্রচন্ড ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠে ওদের ভেতরে নিয়ে বসালো। হঠাৎ আগত মেহমান দেখে ইভার মা-ও ভরকে গেল। ইভা তার মাকে আড়ালে নিয়ে বলল,

“ওদের জন্য কিছু রান্নাবান্না করো মা।”

মা মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে হাত চেপে ধরে বলেছে,

“এরা কারা ইভা।”

“আমি ওদের চিনি। তুমি ওদের সামনে মুখ এমন করে রেখো না মা। ওদের সাথে একটু হেসে হেসে কথা বলবে।”

“ওরা এখানে কেন এসেছে আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না। আর হেসে হেসে কথা বলব কেন?”

“নাহলে ওরা কষ্ট পাবে। ওরা ভীষণ ভালো মা। ভীষণ নিষ্পাপ। ওরা কষ্ট পেলে আমার খারাপ লাগবে।”

মীরা মাহিমা ইভাকে মাঝে বসিয়ে নিজেরা দু’পাশে বসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। তনি ভাবতেও পারেনি এই দুই পাগলের পছন্দ এতটা সুন্দর হবে। প্রথম দেখাতেই তারও মেয়েটাকে পছন্দ হয়ে গেছে। মীরা মাহিমা নিজেদের পছন্দ নিয়ে গর্ব করে তনিকে বলছে,

“কি বলেছিলাম না? তোমরাই তো পাত্তা দিচ্ছিলে না।”

আবির এখানে আসার পর থেকেই সমানে ইভাকে ভাবী ডেকে যাচ্ছে। একটু পরপর বলছে,

“মীরা মাহি, আজকের পর থেকে তোদের পছন্দ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন হবে না। তোরা যেটা বলবি সেটাই সবাইকে মেনে নিতে হবে। ভাবীও খুঁজেছিস তোরা! হাজারে একটা।”

মীরা টুপ করে এক ফাঁকে ইভাকে বলল,

“তুমি আমার ভাইয়াকে বিয়ে করবে? আমার ভাইয়ার নাম কিন্তু তোমার সাথে মিলে যায়। তুমি ভাইয়াকে বিয়ে করে নাও।”

নাম মিলে যাওয়ায় বিয়ে করতে বলার কথা শুনে ইভা শব্দ করে হাসতে লাগল। তনি মুগ্ধ গলায় আবিরকে বলল,

“আমি মেয়ে হয়েই তো ভাবীর উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি। ভাবীকে দেখে ইভান ভাইয়ের কী অবস্থা হবে আল্লাহই জানেন।”

“ইভান ভাইরে কল করে আসতে বলি। তার আগে মামা মামীকে বলি। ভাবী হলে এই মেয়েই হবে। কী বলিস?”

“হুম। আমি ভাবীর কয়েকটা পিক তুলে ভাইয়াকে সেন্ড করে দিই।”

ইভার মা কিছুই বুঝতে পারছে না। এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে! এদের বাড়িতে কি গুরুজনেরা নেই? বাচ্চারা এসেছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। এমন আশ্চর্য ঘটনা তিনি কোথাও দেখেননি। তিনি তাড়াতাড়ি করে বোনকে খবর দিলেন। ইভার মা’র ছোটো বোন হলেন জায়িনের মা। ইভা জায়িনের খালাতো বোন। সুমনা এসে এদের দেখে প্রথমে নিজেও অবাক হয়েছিলেন। তারপর ইভার মুখ থেকে সব শুনে মীরার কাণ্ড দেখে একচোট হাসলেন। এসব তাহলে মীরার কাজ। তিনি হাসি থামাতে পারলেন না। বোনকে চিন্তা না করতে বললেন। রাতেই বাড়ির বড়রাও এসে হাজির। ইভানের বাবা মা, ছোট চাচা, চাচী, ছোট ফুপু সবাই। শুধু আসতে পারলো না মীরার বাবা। তিনি বাড়িতে নেই। আর বড় ফুপুর বাড়ি চলে গেছে। ইভাকে দেখতে এসেছে শুনে জায়িন, মুবিনও এলো। মীরা জেনে বিস্ময় ধরে রাখতে পারলো না ইভা জায়িনের বোন হয়। সে মুবিন ভাইকে বলল,

“আপনাকে বলেছিলাম না আমরা ইভান ভাইয়ের পাত্রী দেখতে যাচ্ছি। সেই পাত্রী কে জানেন? ইভা আপু।”

মুবিন কিছুই বুঝতে পারল না। মীরা কখন তাকে পাত্রী দেখার কথা বলেছে। ভেতরে বড়রা কথা বলছে। জায়িন ইভাকে ডেকে নিয়ে গেল। ইভা বলল,

“কিছু বলবি?”

“তুমি কি এসব জানতে?”

ইভা জায়িনকে আগাগোড়া সবই খুলে বলল। সেদিন রাস্তায় মীরা মাহিমার সাথে দেখা হওয়ার ঘটনা থেকে আজকের ঘটনা সবকিছু।

“ছোট মানুষ ভেবে ওদের প্রশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনা যে এতদূর আসবে বুঝতে পারিনি।”

জায়িন বলল,

“তুমি কি কিছু ভেবেছ?”

“কী করবো বুঝতে পারছি না।”

“আপু তুমি ভেবে দেখো। চট করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে না। অন্তত হ্যাঁ বা না বলার আগে ইভান ভাইয়ের সাথে সামনাসামনি একবার কথা বলে তারপর সিদ্ধান্ত নিও।”

জায়িন ইভার সাথে কথা বলে সবার কাছে চলে এলো। বড়রা এখনও ঘরে কী আলাপ আলোচনা করছে ওরা জানে না। কিন্তু বাইরে মীরা মাহিমারা ধরে নিল ইভান ভাইয়ের বিয়ে ইভা আপুর সাথেই হবে। তনি ইভান ভাইকে ছবি পাঠিয়েছে। কিন্তু ইভান ভাই সিন করেও রিপ্লাই দিচ্ছে না। আবির মজা করে বলল,

“ভাবীকে দেখে হয়তো ফিট হয়ে পড়ে আছে।”

কথাটা শুনে তনি হাসতে লাগল। মীরা মাহিমা এখনই প্ল্যান করছে বিয়েতে কী কী শপিং করবে। হলুদে কী পরবে? বিয়ের দিন শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা পরবে। অনেকদিন কলেজ মিস দিবে। বিয়ের দিনগুলোতে একটুও পড়াশোনা করবে না। দু’জন কথা বলতে বলতে হেসে একজন আরেক জনের উপর পড়ে যাচ্ছে। মুবিন অন্য একটা সোফায় বসে পলকহীন চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের হাসি দেখে তার ঠোঁটও প্রসারিত হচ্ছে। জায়িন দু’হাত বুকের উপর বেঁধে ড্রয়িংরুমের এক কোনায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কোন একদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

চলবে_
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
১৬
🌸

ইভান মাথা নিচু করে লজ্জিত মুখে বলল,

“ওরা ছোট মানুষ। এদের আচরণে আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। একটা বিষয় ওদের মাথায় ঢুকে গেলে সেটা বের করতে অনেক সময় লাগে।”

ইভা ইভানের বেচারা মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছে। ইভান বোনদের কাজে সত্যিই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। না জানি মেয়েটা কী ভাবছে।

“আপনি ওদের সাথে ভালো করে কথা বলেছেন তো এতেই ওরা ভেবে নিয়েছে আপনি রাজি। পাগল দুইটা আমার কোন কথাই শুনলো না। উল্টো ঘটনা এতদূর নিয়ে এলো। আপনাদের বাড়িতে আসার কথাও আমি জানতাম না। ওটা আবিরের পাগলামি। আপনি কি রাগ করছেন?”

“না। আপনি বলুন।”

“বলার তো আর কিছু নেই। আমার ভাইবোনদের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনাকে ওরা বিব্রত করলো। আপনি প্লিজ এই বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিবেন না।”

“কেন? আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না? আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?”

“হ্যা?”

ইভান বোকার মতো মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা রেগে আছে নাকি এটাও তো বুঝতে পারছে না। সে আমতা আমতা করতে লাগল।

“গার্লফ্রেন্ড নেই। কিন্তু..

” কিন্তু কি? গার্লফ্রেন্ড না থাকলে তো আপনার আমাকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি থাকার কথা না।”

“মানে আমি ভাবছি আপনি হয়তো বিয়েটা করতে চাইবেন না। এভাবে তো বিয়ে হয় না। আপনি আমাকে চেনেন না। আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।”

“যদি বলি আপনার সম্পর্কে আমি সব জানি।”

“জানেন!”

“অবাক হবেন না। আপনার বোনেরা আপনার সম্পর্কে কোনোকিছুই বলতে বাকি রাখেনি।”

ইভান বিড়বিড় করে বলল,

“ওরা পাগল। এখনও বাচ্চামি কমেনি।”

“আচ্ছা আপনি এরকম অপরাধীর মতো বারবার আমাকে সরি বলছেন কেন? আপনার বোনেরা তো অন্যায় কিছু করেনি। ভাইয়ের বিয়ের চিন্তা বোনেরা করবে না তো কে করবে। ওরা যতটুকু পেরেছে করেছে। আপনার তো ওদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।”

“মানে রাস্তায় কাউকে দেখে পছন্দ হয়ে গেল আর ওরা তাকে ভাবী বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে গেল। মেয়েটাকে বারবার বিরক্ত করতে লাগল। ওর ভাইয়ের কথা বলে বিব্রত করতে লাগলো। এমনকি না জানিয়ে বাড়ি পর্যন্ত চলে এলো। এটা অন্যায় না?”

“আপনার কাছে লাগতে পারে। কিন্তু আপনি তো সবার মনের কথা ধরে নিতে পারেন না।”

“আপনার কাছে এটা অন্যায় লাগেনি?”

ইভা হাসতে হাসতে বলল,

“মোটেও না। বরং আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই ইন্টারেস্টিং লাগছে।”

“এক দু’দিন দেখছেন তো তাই ইন্টারেস্টিং লাগছে। সারাজীবনের জন্য এদের মাঝে আটকা পড়ে গেলে বুঝবেন কোথায় ফেঁসেছেন।”

“উঁহু। জানেন আমি সবসময় এরকম একটা পরিবারই চাইতাম। আমার বাবা একাই ছিলেন। আম্মুরাও মাত্র দু’বোন। জায়িন, মুবিন ছাড়া আমার আর কোন ভাইবোন নেই। ওদের সাথেও আমার সম্পর্কটা ততটা গভীর না। আপনার ভাইবোনদের দেখে আমার আফসোস হয়েছে। ইশ, এরকম একটা পরিবার কেন আমার হলো না। এতগুলো পাগলাটে ভাইবোন কেন আমার নেই? ওরা কেন আমার জন্য এতটা ভাবে না?”

ইভান অবাক হয়ে শুনছে। তার মানে মেয়েটা কি রাজি? এরকমও হয়। এই মেয়ের তো তাদের ফ্যামিলি দেখে পালিয়ে যাওয়া উচিত।

“মীরা মাহিমাকে আমি রাস্তায় যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই ভালো লেগেছিল। প্রথম দেখাতেও ওরা কেমন নিঃসংকোচে মনখোলা ভাবে আমার সাথে কথা বলছিল। ছোট ছোট দুইটা মেয়ে তার পরেও একদিন আমার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের মজার মজার কথাবার্তা আমি এনজয় করতাম। আপনাকে নিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে ওদের কথা শুনে আমার হাসি পেত। একদিন ওরা কী করেছে জানেন? আমার আড়ালে আমার পিছু নিয়েছিল। কিন্তু যেভাবেই হোক আমি ওদের দেখে ফেলি। এবং দেখেও কিছু বলিনি। ওরা আমাকে ফলো করতে করতে আমার বাড়ি পর্যন্ত এসেছে। মেয়ে দুইটার কাণ্ড দেখে সেদিন রুমে গিয়ে অনেকক্ষণ হেসেছি। তারপরই তো মজার ঘটনা ঘটলো। আপনার সব ভাইবোন না বলেই হুট করে সেদিন আমাদের বাড়িতে চলে এলো। আবির এসেই আমাকে ভাবী ডাকতে শুরু করলো। আমার মা তো কিছুই বুঝতে পারছিল না। ওরা কারা, কেন এসেছে? আর আমাকে ভাবীই বা ডাকছে কেন? মীরা মাহিমাকে দেখে আমি ব্যাপারটা বুঝে গিয়ে মা’কে বোঝালাম ওদের কিছু বোলো না মা। ওরা বাচ্চা মানুষ। মা অবশ্য একটু রাগ হয়েছিল। বাচ্চা হলেই এরকম করবে নাকি? মীরা মাহিমা সেদিন ধরেই নিয়েছিল আমি ওদের ভাবী হয়ে গিয়েছি। ওরা আমাকে আপনার ছবি দেখাল। ছবি দেখে ভাবলাম ভাইটা মোটামুটি আছে। তাই তো বোনদের এত কনফিডেন্স। ইচ্ছে না থাকলেও আমার জোরে মা ওদের অনেক আপ্যায়ন করলো। ওরা যেন কিছুতেই কষ্ট না পায়। জীবনকে ওরা যতটা সহজ ভাবে নিয়েছে ওদের জন্য সবকিছু ততটা সহজই থাকুক। জীবনের নানান জটিলতা থেকে অজানা।”

অনেকক্ষণ একটানা কথা বলে ইভা থামলো। ইভান বাকরূদ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছিল। কথাগুলো বলার সময় ইভার চোখে অন্যরকম এক খুশি ঝলমল করতে দেখা যাচ্ছিল।

“আপনার ভাইবোন গুলো যতটা পাগল, আপনার পরিবারের বড়রাও তার থেকে কম না। আপনার ভাইবোনরা আমাদের বাড়ি থাকতেই আপনার বাবা চাচারা এসেছে। মা তো উনাদের চিনতো না। খালামনিকে খবর দিলে খালামনি এসে অবাক হয়ে বলল, আপা উনারা আমাদের ইভাকে বাড়ির বউ করতে চাচ্ছে এটা ইভার ভাগ্য। উনাদের মতো মানুষ হয় না আপা। তুমি ওদের ফিরিয়ে দিও না। ইভার ভাগ্যটা অনেক ভালো আপা। জায়িন যে সবসময় আমার সব সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। সে-ও সেদিন বলল। আপু একবার ভেবে দেখো। অন্তত ইভান ভাইয়ের সাথে সামনাসামনি কথা বলে সিদ্ধান্ত নিও। আপনি বলুন তো, আমার ভাগ্য কি সত্যিই এতটা ভালো?”

ইভা চোখে জল নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে হাসছে। ইভান তাৎক্ষণাৎ কিছুই বলতে পারল না। সবকিছু তার কাছে অবাস্তব লাগছে। বিশ্বাসই হতে চাচ্ছে না। ইভান ঢোঁক গিলে গলা ভিজিয়ে বলল,

“আপনি আমাকে একটা চিমটি কাটবেন প্লিজ। আমার মনে হচ্ছে হয়তো আমি স্বপ্ন দেখছি। নয়তো আপনি মজা করছেন।”

ইভা শব্দ করে হাসতে লাগল। ইভান মুগ্ধ হয়ে ইভার হাসি দেখছে। এত সহজে এই মেয়েটা তার বউ হয়ে যাবে? যাকে প্রথম দেখাতেই ইভান মন দিয়ে ফেলেছে। কাল রাতে তনি পিক পাঠিয়েছিল। ইভান ছবির মধ্যে মানুষটাকে দেখে গুলিয়ে ফেলেছিল এটা কি সত্যিই মানবী? নাকি আসমান থেকে নেমে আসা পরী? মীরা মাহিকে এতদিন পাত্তা না দেওয়ায় পস্তাচ্ছিল। বোন দুইটা তার ভাইয়ের জন্য যে কাজটা করেছে ইভান সারাজীবন ওদের কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে। ভাবী পছন্দ করতে ওরা ভুল করেনি। ইভা হাসতে হাসতেই বলল,

“আপনাকে পছন্দ না হলেও আমি বিয়েতে না করতাম না। সরি, কিন্তু আপনাদের এই পাগল ফ্যামিলির অংশ হতে চাই আমি। সারাজীবন এই পাগলামি গুলো উপভোগ করতে চাই। আমি কোনদিনও এরকম কোনো ফ্যামিলি দেখিনি। আপনার ভাইবোনেরা আপনাকে কতটা ভালোবাসে আপনি ভাবতেও পারছেন না। এরকম ভাগ্য সবার হয় না। যাদের হয় তারা লাকী।”

🌸

ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলার মতো মহৎ কাজ করে মীরা মাহিমার এখন মাটিতে পা পড়ছে না। ওরা এখন হওয়ায় হাঁটে। এক সময় তারা সবার কাছে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান করেছিল, ইভা আপুর সাথে যেন ইভান ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে। কেউ পাত্তাই দেয়নি। এখন ইভা আপুর সাথে ইভান ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর ইভা আপু কল করেই প্রথমে মীরা মাহিমার খোঁজ নেয়। ওদের সাথে অনেকটা সময় ধরে কথা বলে। ওদেরক বাড়িতে ডাকে। এতে ওদের ভাবসাবই বদলে গেছে।
বিয়ের দিনতারিখ এখনও ঠিক হয়নি। ইভা আপুর বাবা দেশে এলে তারপর ঠিক হবে। উনি নাকি পনেরো দিনের ভেতরেই চলে আসবেন। বিয়ের সময় পড়তে পারবে না। তাই মীরা এখনই সব পড়া শেষ করে রাখছে।

“মুবিন ভাই, আমাকে এক মাসের পড়া এই পনেরো দিনে পড়িয়ে দিন।”

মুবিন বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে হাসলো। মীরা ঝুঁকে পড়ে লিখছে। মুবিনের দিকে না তাকিয়েই কথা বলছে।

“বিয়ে শেষ হলে মাহিও আপনার কাছে পড়বে।”

মুবিন সহজ থাকতে চেয়েও নড়েচড়ে বসলো। মীরা নিজে থেকে আরও কিছু বলে কিনা অপেক্ষা করতে লাগল।

“আমরা দু’জন একসাথে হলে পড়াশোনা পেছনের রাস্তা ধরে পালায়। আমাদের দু’জনকে একসাথে পড়ানো কিন্তু সহজ হবে না। আপনি পাগল হয়েও যেতে পারেন। আমি তো কম কথা বলি। মাহি আপনাকে প্রশ্ন করে করে পাগল করে দিতে পারবে।”

মুবিন ঢোঁক গিলল। মীরাকে অনেকদিন ধরে পড়ালেও ওর সাথে এখনও এতটা খোলামেলা হয়নি যাতে মুবিন নিঃসংকোচে মীরাকে সব কথা বলতে পারবে। টিচার স্টুডেন্ট সম্পর্কের বাইরে ওদের সম্পর্ক কখনও আগায়নি।

“মুবিন ভাই, পরের টুকু বুঝতে পারছি না।”

মুবিন কিছু ভাবছিল। মীরার কথায় ধ্যান ভাঙলো।

“দেখি। এদিকে দাও।”

পড়তে পড়তে মীরা এক মিনিটের জন্য চুপ থাকলো না। মেয়েটা কথা বলতে ভীষণ পছন্দ করে।

“আমার ভাইয়ার সাথে আপনার বোনের বিয়ে হলে আমাদের সম্পর্কটা কী হবে জানেন?”

মুবিন মৃদু হেসে বলল,

“বিয়াই, বেয়াইন!”

“হুম। তখন আর আপনি আমার টিচার থাকবেন না। তাই আমাকে বকাঝকাও করতে পারবেন না।”

“যতক্ষণ তুমি আমার কাছে পড়বে ততক্ষণ আমি তোমার টিচার। স্টুডেন্ট ভুল করলে টিচার বকা দিতে পারবে আবার মারতেও পারবে।”

“আপনি আমাকে মারবেন! একটুও মায়া লাগবে না? আমি কিন্তু আন্টির কাছে বিচার দিব। ইভা আপুকেও বলে দিব।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here