মাদকাসক্ত স্বামী
___________________
লেখিকা:বাবুন
_________________
(পার্ট:৫)
সকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো “তাম্মির”__ সে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো “রামিম” এখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে__ “তাম্মি” বিছানা ছেড়ে উঠে গেল__সোফার পাশেই জানালা, জানালার পর্দা টা টেনে সরিয়ে দিল __ পূর্ব আকাশে সূর্য টা রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার মতোই রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে চারিদিকে__ সেই সূর্যের হালকা আলো এসে পড়েছে “রামিমের” মুখে__
“তাম্মি” চুপচাপ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আলোর খেলা দেখছে , আর তা উপভোগ করছে__
হঠাৎ “রামিম” নড়াচড়া করে উঠলো , ও আলো সহ্য করতে না পেরে চোখ খুলার চেষ্টা করলো__
“তাম্মি” দ্রুত পায়ে ওর পাশে এসে বললো, এই যে মিস্টার তাড়াতাড়ি উঠেন__
“রামিম” অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আলো থেকে চোখ সরিয়ে __চোখ না খুলেই ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো, কেন উঠবো _! আমি ঘুমাবো এখন ডিস্টার্ব করিস না তো__ যা এখন__
“তাম্মি” এখন কিসের ঘুম , আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়বেন তারপর ঘুমাবেন__
“রামিম” এবার কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল, দূররর বললাম না ঘুমাবো এখন __ আমি এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি না যা এখান থেকে__ তর নামাজ তুই পড়__
“তাম্মি” আপনি কিন্তু আমার কথা শুনছেন না_ আমি কিন্তু আব্বু আম্মু কে বলে দেবো__ যদি ভালো চান তাহলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে ,আমার সাথে নামাজ আদায় করেন__ আর যদি না আসেন , আম্মু আব্বু কে বললে কি হবে বুঝতেই তো পারছেন__
“রামিম” এবার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ঘুম থেকে উঠে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেল__
“তাম্মি” ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো__
কিছুক্ষণ পর “রামিম” ওযু করে টুপি মাথায় দিয়ে “তাম্মির” সামনে আসলো__
“তাম্মি” হা করে তাকিয়ে রইলো “রামিমের” দিকে__ টুপি পড়লে যে রামিমকে এত সুন্দর লাগে তা “তাম্মি ” কখনো বুঝতে পারে নি__ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে__
“রামিম” ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিল__ তারপর বললো, আমি কি তাহলে আবার ঘুমিয়ে পড়বো__
“তাম্মির” ঘুর কাটলো ওর কথায়, সে তাড়াতাড়ি জায়নামাজ বিছিয়ে নিল__
তারপর দুজন পাশাপাশি জায়নামাজ এ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলো__
নামাজ শেষ হলে_” রামিম” বললো , ঐ তর কথা তো শুনেছি এখন আর আমাকে ডিস্টার্ব করবি না একদম__ আমি এখন ঘুমাবো যদি আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তাহলে তর খবর আছে বলে দিলাম__ 😡 কিছুটা রাগি কন্ঠে কথা গুলো বলে , সে ঘুমিয়ে পড়লো বিছানায় গিয়ে__
“তাম্মি” আর কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলো__ মনে মনে বললো আল্লাহ তোমার দরবারে লাখ লাখ সুখরিয়া__ আমার একটা ইচ্ছা তো অন্তত পূর্ণ হলো__ আমার খুব আনন্দ লাগছে , আমার স্বামী আর আমি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পেরেছি__
হে আল্লাহ তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া আমি যেনো আমার স্বামীকে দীনের পথে আনতে পারি__ তাকে যেনো আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারি__
সকাল প্রায় ৭টা হয়ে গেছে__ “তাম্মি” আর দেরি না করে রান্না ঘরে চলে গেল __ গিয়ে দেখলো এখনও নাস্তা তৈরি হয় নি, ওর খুব খিদে পেয়েছে__ ও ওর বাবার বাসায় থাকতে ও রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে , নাস্তা করতো__ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেলে ওর খুব খিদে পায়__ এদিকে কাজের লোকগুলো এখনো ঘুমাচ্ছে অঘুড়ে __ সে কি করবে বুঝতে পারছে না, এদিকে হয়তো ওর শশুড় শাশুড়ি ও ঘুম থেকে উঠে গেছেন__ ওনাদের জন্য ও তো নাস্তার প্রয়োজন__ সবদিক বিবেচনা করে সে নিজেই নাস্তা তৈরি করবে ঠিক করলো__ যেই ভাবা সেই কাজ__ সে ম্যামলেট আর রুটি , আর “রামিমের” জন্য নুডুলস স্যুপ তৈরি করলো__ কারণ সে জানে “রামিম” নুডুলস স্যুপ পছন্দ করে __ সেদিন কথা বলতে বলতে “রিমির” কাছ থেকে সে “রামিমের” পছন্দের জিনিস পত্র গুলোর কথা জেনে নিয়েছিল__
নাস্তা তৈরি হয়ে গেলে ওর শশুড় শাশুড়ি কে নাস্তা নিয়ে দিল__ ওর ” শাশুড়ি” বললেন, তুমি কেন কষ্ট করে এসব করতে গেলে মা__! কাজের লোক গুলো কোথায়__
“তাম্মি” আম্মু কাজের লোক ঘুমাচ্ছে__ আর এ এমন কি কাজ যে আমার কষ্ট হবে__ আমি এ বাড়ির বউ এসব একটু আধটু কাজ তো করা আমার ই দায়িত্ব__ বলে ও চলে গেল কফির মগ হাতে নিয়ে , “রিমিকে” ডাকতে__
ও চলে গেলে ওর শশুড় বললেন, দেখেছো “আসমা” কত লক্ষ্মী একটা মেয়ে আমাদের ছেলের জন্য পেয়েছি__
“আসমা বেগম” হে এতো আমাদের সাতজন্মের ভাগ্য ওর মতো একটা লক্ষ্মী মেয়ে আমাদের ঘরে আনতে পেরেছি__ কত বড়লোক বাপের মেয়ে তবুও কোনো অহংকার নেই__
“রফিক সাহেব” হুমমম , ঠিক ই বলেছো__
“তাম্মি” কফির মগ হাতে নিয়ে “রিমির দরজায় নক করল __
“রিমি” দরজা খুলে দিল ঘুম ঘুম চোখে, আরে ভাবি তুমি__ এত সকাল সকাল কি মনে করে আমার রুমে__
“তাম্মি” এই যে তোমার কফি নিয়ে আসলাম__
“রিমি” আরে তুমি কেন কষ্ট করে কফি নিয়ে আসতে গেলে__ “রহিমা” ই তো এনে দিতো ও কোথায়__
“তাম্মি” রহিমা, ঘুমাচ্ছে__ আর আমি কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো দরজার সামনে নাকি ভেতরে আসতে বলবে__
“রিমি” সরি ভাবি, আসো ভেতরে আসো__
“তাম্মি” ভেতরে ঢুকে কফির মগ টা টেবিলে রাখলো__
“রিমি” ভাবি বসো__
“তাম্মি” বিছানার উপর বসলো , “রিমি” তুমিও আসো আমার পাশে বসো__
“রিমি” ওয়েট ভাবি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি জাস্ট ২ মিনিট দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি__
কিছুক্ষণ পর , “রিমি” কফির মগ হাতে নিয়ে ওর পাশে বসলো__ হুমমম বলো এখন কি বলবা__
“তাম্মি” রিমি, তুমি কি নামাজ পড়েছো ফজরের__ !
“রিমি” মাথা টা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো , ইয়ে মানে ভাবি খুব ঘুম পায় সকালে তাই পড়তে পারি নি__
“তাম্মি” এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে, এরকম হতেই পারে কিন্তু এরকম যাতে আর না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে__ তুমি রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো যতটা সম্ভব__ আর হে সকালে ঘুমে ধরে বেশি ঠিক আছে__ তুমি এর্লাম দিয়ে রাখবে, যাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় নামাজ টা পড়তে পারো__ নামাজ আদায় করে তোমার ইচ্ছে মতো ঘুমাও কোনো সমস্যা নেই__ “রিমি” তুমি আমার কথা শুনে কিছু মনে করো না __ যে সময় চলে যাচ্ছে তা তুমি আর ফিরে পাবে না শত চেষ্টা করলেও__ তোমার এখন ইবাদত করার যে শক্তি আছে, তা আরো ২০বছর পর থাকবে না__ তোমার বয়েস বাড়বে__ তুমি চাইলেও এখনকার মতো শক্তি ও মনোবল ফিরে পাবে না__ বিভিন্ন বয়েস জনিত সমস্যা ও রোগে আক্রান্ত হবে__ তখন তোমার ইচ্ছে করবে না ইবাদত বন্দেগী করতে__ তাই প্রয়োজন আগে থেকেই অভ্যাস গড়ে তুলার এসব বিষয়ে__ তাছাড়া যৌবন কালের ইবাদত , গরমের কালে পর্দা করা , এবং শিতের দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়__ তুমি আশা করি আমার কথা গুলো বুঝবে কারণ তুমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত মেয়ে__ “রিমি” তুমি কি আমার কথা শুনে মন খারাপ করেছো__ রাগ করো না আমার কথায় আমি তোমার ভালোর জন্যই কথা গুলো বললাম__
“রিমি” ভাবি আমি তোমার কথা শুনে মোটেও রাগ করি নি বরং মুগ্ধ হচ্ছি__ জানো ভাবি এইভাবে কখনো ভেবে দেখিনি আমি__ সত্যি ভাবি তুমি আমাদের সবার জীবনে গর্ব করার মতো একজন মানুষ __ তোমাকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ হচ্ছে__ ভাবি তোমাকে অনেক ভালোবাসি__ আই লাভ ইউ ভাবি___ জরিয়ে ধরলো “তাম্মিকে”__
“তাম্মি” শুধু মুখে বললে হবে না, কাজে ও প্রমাণ চাই কিন্তু__
“রিমি” চিন্তা কর না ভাবি , পেয়ে যাবে প্রমাণ_ আর ভুল কিছু হলে তুমি আছো তো__
“তাম্মি” আলতো করে ওর গাল টেনে দেয়__ তারপর নিজেও নাস্তা করে নিয়ে টুকটাক কাজ করলো বাসায়, মেহমান আসবে তাই__
তারপর গোসল করে নেয়, দুপুরের খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে “তাম্মি”__
হঠাৎ খেয়াল হলো “রামিমের” কথা__ ও নিশ্চয়ই এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে__ এদিকে বাসায় মেহমান আসার সময় হয়ে গেছে__ মেহমানদের জন্য বাইরে খাবার রান্না করা হচ্ছে প্যান্ডেল তৈরি করে__
ও ঘরে সবার জন্য খাবার দাবার তৈরি তে সাহায্য করছে, ওর শাশুড়ি ও ওর সাথে__
হঠাৎ “রিমিকে” চোখে পড়ে “তাম্মির”__
রিমিকে দিয়ে “রামিমের” নাস্তা টা পাঠিয়ে দিলো__
“রিমি” নাস্তা নিয়ে গিয়ে দেখে “রামিম” উঠে গেছে__ সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে__
“রিমি” রুমে ঢুকার আগে বললো__ ভাইয়া আসবো__!
“রামিম” তাড়াতাড়ি সিগারেটসহ হাত টা পিছনে লুকিয়ে বললো__ আয়___
“রিমি” টেবিলে নাস্তা রাখতে রাখতে বললো__ ভাইয়া আমি কিন্তু দেখেছি তুই সিগারেট খাচ্ছিস__ ওটা ফেলে দে __
“রামিম” ও ওর বোন কে অনেক ভালোবাসে ওর সামনে সবসময় ভালো সাজার এক্টিং করে সে__ আড়ালে যা ইচ্ছা তাই করে, ওর কথা শুনে সিগারেট টা ফেলে দিল__
“রিমি” নে এবার নাস্তা করে নে___বলে “রিমি” চলে গেল__
“রামিম” নুডুলস স্যুপের বাটি টা হাতে নিয়ে, মাত্র এক চামচ মুখে নিয়ে ত্বমেরে বসে রইলো___
চলবে__!
#ধন্যবাদ সবাইকে গল্প টা পড়ার জন্য , ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন___