#মায়াবতী_২
কলমে রোকেয়া পপি।
পরেরদিন থেকে মায়া যেখানে, শুভ্র ও সেখানে। ক্লাসের সময় টুকু বাদে সব সময় জোঁকের মতো মায়ার পিছে লেগে আছে। কখনো হয়তো একসাথে লাইব্রেরী তে বসে নোট করছে, নয়তো ক্যান্টিনে চা আড্ডা। ক্যাম্পাসে এখন সবচেয়ে গরম খবর শুভ্র আর মায়ার রিলেশন। সবার মুখে মুখে এদের নাম।
মাঝে মধ্যে মায়ার নিজেকে খুব ভাগ্যবানদের একজন মনে হয়। কখনো ভুল করেও মায়া ভাবেনি কেউ ওকে এতোটা কেয়ার করবে।
আবার মাঝে মধ্যে ওর খুব ভয় হয়, শুভ্রর মত এমন আধুনিক স্মার্ট সুন্দর ছেলে ওর মতো একটা সাধারন কালো মেয়ের পিছনে ঘুরবে! এটা শুধু মায়া কেন ক্যাম্পাসে কেউ মেনে নিতে পারছে না।
সবসময় দামী গাড়িতে ক্যাম্পাসে আসা, পোশাক, এবং বন্ধুদের পেছনে মুড়ির মতো টাকা উড়ানো দেখলেই বোঝা যায় শুভ্র কেমন ফ্যামিলির ছেলে।
মায়ার বন্ধুরা প্রায় মায়াকে বলতো মায়া সাবধানে থাকিস। শুভ্র কিন্তু তোর সাথে টাইম পাস করছে। ও কখনো তোর মতো একটা সাধারন মেয়েকে বিয়ে করবে না। ও চাইলেও ওর পরিবার কখনো তোকে মানবে না। সময় থাকতে সরে যা।
পরে চোখের পানি মুছে কূল পাবি না।
মায়ার খুব ভয় হতো এ ধরনের কথা শুনে। ওর ভয় পাওয়া দেখে শুভ্র হেসে উড়িয়ে দিতো এসব কথা।
শুভ্রর এক কথা, যে যা বলার বলুক।
তুমি একদম কান দিবে না এসব কথায়।
মায়া যেদিন তাঁতের শাড়ি পরে, খোলা চুলে, হাত ভর্তি কাঁচের রেশমি চুড়ি পরে ক্যাম্পাসে আসে, মুগ্ধতায় ছেয়ে থাকে শুভ্রর দু-চোখ।
কথার ছলে কখনো হাত টা ছুঁয়ে দেওয়া।
কখনো টিপ টা তুলে আবার ঠিক করে পরিয়ে দেওয়া।
খুব উপভোগ করে তখন মায়া।
শুভ্র হঠাৎ হঠাৎ এমন পাগলামি করে, যে মায়া দিশেহারা হয়ে যায়। হুট করে একদিন বলে বসল,
চলো মায়া তোমাকে মোবাইল গিফট করবো।
আরে না কি বলো আমার মোবাইল দরকার নেই।
তোমার দরকার নেই, কিন্তু আমার আছে। শুধু ক্যাম্পাসে দেখা আর কথা বলে আমার মন ভরছে না।
আমি রাতে তোমার সাথে কথা বলতে চাই।
শুভ্র প্লিজ এমন করো না।
আমার মা খুব রাগ করবে আমার কাছে মোবাইল দেখলে।
পাগল নাকি। রাগ করবে কেন?
বলবে পড়াশোনার জন্য মোবাইল লাগে।
তাই তুমি টিউশনির টাকা দিয়ে কিনছো। আর একটাও কথা নয়। গাড়িতে ওঠো।
একটানে বসুন্ধরা। তারপর যেসব মোবাইল শুভ্র পছন্দ করছে দাম দেখে মায়ার অবস্থা কাহিল। ও আমতা আমতা করে বললো, শোন শুভ্র এগুলো রাখো তো। আমি কখনোই এতো দামী সেট ব্যাবহার করবো না।
ওয়েট আমি পছন্দ করি।
আমি অনেক খুঁজে খুঁজে একটা ছোট্ট কালো রঙের বাটন আলা নোকিয়া সেট পছন্দ করলাম।
মোবাইলটা হাতে নেওয়া মাত্র শুভ্র হাসির দমকে কথা বলতে পারছে না।
হাসতে হাসতে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়েছে।
মায়া পুরাই বোকা হয়ে গেছে। ও বুঝতে পারছে না এতো হাসির কি হলো! ও বোকা বোকা চেহারা করে বললো, আমি কি কোন ভুল করলাম?
শুভ্র চোখের পানি এক হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বলছে, আমার শাশুড়ির মেয়েটা এত কিপ্টা কেন?
আমার টাকা আমার বন্ধু বান্ধবরা খায়।আর আমার শাশুড়ির মেয়েটা পছন্দ করেছে কিনা পনেরোশো টাকা দামের নোকিয়া!
হা হা হা
বুঝছি শাশুড়ি আম্মার কাছে আর রাখা যাবে না।
দাঁড়াও খুব শীঘ্রই মাকে পাঠাচ্ছি তোমাদের বাসায়।
কি সব আবোল তাবোল বলছো।
তুমি যতোকিছু বলো না কেন আমি এই সেটটাই নিবো।
দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ মন কষাকষি হওয়ার পর মায়াই জিতলো শেষ পর্যন্ত।
নতুন সেটে শুভ্র নিজের নাম্বারটা সেভ করে দিলো। তারপর ফুড কোর্টে গিয়ে হালকা খাবার খেয়ে যার যার গন্তব্যে ফিরে গেল।
মায়ার মনটা অনেক ফুরফুরে ছিল আজ। ভালো লাগার রেশ টুকু সাথে নিয়েই বাসায় ফিরলো। তখনো ও জানতো না বাসায় ওর জন্য এমন ভয়ঙ্কর একটা দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে।
ঘরে ঢুকে ও বিস্ময়ে থ মেরে গেল! শ্রেয়ার পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ করা। চোখ মুখ ফুলে আছে। পুরো শরীরে জায়গায় জায়গায় কালছে ছোপ ছোপ।
চোখ বন্ধ করে মরার মতো বিছানায় পড়ে আছে। আর মা পাশে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না করছে। বাসার
পরিবেশ খুব থমথমে।
মায়া শ্রেয়ার এই অবস্থা কোন ভাবেই মানতে পারছিল না। এই বোনটা ওর অনেক আদরের। ও ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। কি হয়েছে মা?
আমার আদরের বোনটার এই অবস্থা কিভাবে হলো?
কান্নার দমকে মার সব কথা ও বুঝলো না। যতোটুকু বুঝতে পারলো তার সারমর্ম হলো এই রকম
ওদের কোন চাওয়া না থাকার পরও মা গয়না থেকে শুরু করে সব দামী দামী ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজিয়ে দিয়েছে। তারপরও মাঝে মধ্যেই শ্রেয়ার গায়ে হাত তোলে কাপুরুষ পাষন্ডটা!
তারকথা হলো শ্রেয়াদের নিজের বাড়ি থাকতে তারা ভাড়া থাকবে কেন?
একটা ফ্লোর তার বরকে লিখে দেওয়া হোক। ওরা এসে পারমানেন্ট ভাবে থাকা শুরু করবে।
শ্রেয়া মুখের ওপরে বলেছে সে মরে গেলেও তার মাকে এ কথা বলবে না।
বাবা শষ্যাশায়ী। এই ভাড়ার টাকায় বাবার চিকিৎসা থেকে শুরু করে এক হাতে সংসার চালায় আমার মা।
আমি কিছুতেই এ অমানবিক কথা বলতে পারবো না মুখ ফুটে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মা ছেলে মিলে অমানুষিক নির্যাতন করছে।
খবর পেয়েই মা শ্রেয়াকে নিয়ে এসেছে। সাথে করে পুলিশ নিয়েই গিয়েছিল।
মা ছেলে এখন পুলিশের হেফাজতে।
চলবে….