মায়াবতী পর্ব -০৩

#মায়াবতী_৩
কলমে রোকেয়া পপি।

আজ দুই দিন ধরে মায়া শ্রেয়ার সাথে আঠার মত লেগে আছে। মায়ার ভালোবাসা আর সেবা শুশ্রুষায় শ্রেয়া আজ অনেক টাই ঝরঝরে।

মায়া স্নেহ মাখা কন্ঠে বললো, শ্রেয়া উঠতো বোন। আর কতো শুয়ে থাকবি। এই দেখ আমি তোর জন্য তোর পছন্দের খাবার তৈরি করেছি। আয় খাইয়ে দেই।

খেতে ইচ্ছে করছে না আপু।

কি বলছিস! খেতে ইচ্ছে করছে না মানে কি! তোর পছন্দের আলুর দম আর পরোটা করলাম। একদম কথা বলবি না। তোকে খাইয়ে দিয়ে একটু ভার্সিটিতে যাবো। আ কর। মুখ খোল।

আপা অনেক গরম। একটু পরে খাই।

অনেক জরুরী ক্লাস মিস করছি দুই দিন। এই দুই দিনের পড়া নোট করতে হবে। অনেক কাজ আমার আজকে। ওঠ বোন। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

শ্রেয়া ছলোছলো চোখে মায়ার মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললো, আপু তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো তাই না?

ওমা, এটা আবার কেমন কথা বলছিস!
আমার একমাত্র ছোট বোন। তাও আবার এতো মিষ্টি একটা বোন, তাকে ভালো না বেসে পারা যায়।

তুমি খুব ভালো আপু।
আর আমি কতো স্বার্থপর।

ছিঃ। মায়া শ্রেয়ার মুখে হাত চাপা দিয়ে থামিয়ে দেয়।এসব কি কথা। তোর মাথাটা গেছে!

না আপু তুমি আমাকে বলতে দাও‌।
নিশ্চয়ই তোমার কষ্টের শ্বাস প্রশ্বাস এসে লেগেছে আমার শরীরে। তোমার জন্য আসা প্রপোজালে আমি কিভাবে বিয়ে করে ফেললাম! স্বার্থপর না হলে কি এমন টুপ করে বিয়ে করে ফেলতাম।

কাঁদিস না শ্রেয়া। এখানে তোর তো কোন হাত ছিল না। শুধু শুধু কেন নিজেকে দোষারোপ করছিস?

আমার হাত ছিল না ঠিক আছে। কিন্তু আমি বাঁধা ও দেইনি। চুপচাপ মায়ের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। যে বোন ছোট থেকে আমাকে এতো আদর যত্ন করে বড়ো করল, মুখে তুলে খাইয়ে দেয় এখনো। আর আমি কিভাবে এতোই খারাপ হলাম। এই শাস্তি টুকু আমার পাওনা ছিল।
দেখ আপা আমারা যখন ফিরা যাত্রায় এলাম। মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো,বর কেমন রে?
আমি তখন বলেওছিলাম ভালোই, কিন্তু মারধোর করে।
মা খুব অবাক হয়ে বললেন, সবসময় সবকিছু নিয়ে ফাজলামি করার স্বভাব তোর গেল না। মারধোর করবে কেন?
এতো ভালো ছেলে, আচার ব্যবহার কতো মোলায়েম। বুদ্ধি মান, সুন্দর একটা ছেলে। মা আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল।

আপা শোন আমি কিন্তু প্রথম দিন বুঝে ফেলছিলাম লোকটা অসুস্থ, নির্বিকার! কিন্তু কথা বলার সময় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। হারামজাদা, ইতর, ছোটলোক একটা।

চুপ করবি। সকাল বেলা উঠেই কি সব পাগলামি শুরু করছিস। বাদ দে।
আমার দেরি হয়ে গেল রে। আমি ভার্সিটিতে গেলাম।মাকে বলিস।

ক্যাম্পাসে পা দিয়েই মায়ার বুকের মধ্যে কেমন যেন ধুকপুক করছে। ও নিজেই নিজেকে বললো, আজ দুই দিন ক্যাম্পাসে আসিনি। শ্রেয়াকে নিয়ে যে অবস্থায় ছিলাম, বাধ্য হয়েই ফোন টাও অফ করে রাখছি। শুভ্রর কি অবস্থা কে জানে। নিশ্চয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই দুই দিনে।

চারদিকে ভালো করে দেখলো। কোথাও শুভ্রকে না দেখে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো ও। ক্লাসে ঢুকবে ঠিক সেই মুহূর্তে হাত ধরে এক টান।

মায়া তাকিয়ে দেখে শুভ্রর মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে, চুলগুলো উস্কো খুস্কো, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দেখতে ঠিক উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে।
কি হচ্ছে শুভ্র। হাতটা ছাড়ো। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

থাকুক তাকিয়ে।
আমাকে পাগল বানিয়ে এখন ক্লাস করা হচ্ছে তাই না।বলি এই দুই দিন কোথায় ছিলে হ্যা?
ফোন টা পর্যন্ত অফ! মানুষ এতো খারাপ হয় কিভাবে!

শুভ্র প্লিজ, শান্ত হও। আমি ক্লাসটা করি।
তারপর তোমাকে সব খুলে বলবো।

কোন ক্লাস হবে না। আগে আমাকে সব বলো।
আমাকে পাগল বানিয়ে রেখে তুমি ক্লাস করবে, সে আমি কখনো হতে দিবো না।
এক রকম টানতে টানতে মায়াকে সে বাইরে নিয়ে আসলো।

একটু ছায়া ঘেরা জায়গায় ওরা দুজন বসলো পাশাপাশি।

শুভ্র কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।

মায়া ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলো। মনে মনে বললো, ওর এ দৃষ্টিতে কি আছে আমি জানিনা। আমি ভস্ম হয়ে যাই। এর আগে কখনো কারো চোখে আমার জন্য এতো ভালোবাসা দেখিনি। ভাবতেই কেমন আনন্দ অশ্রু চলে আসছে চোখে। কেউ একজন আমাকে নিয়ে এতোটা ভাবে।

আর শুভ্র মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে, মায়া হচ্ছে তেমন একটা মেয়ে যাকে দেখলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। একেক দিন একেক রকম লাগে। আজকে লাগছে ঠিক ইন্দ্রানীর মতো। অথচ কোন কোন সাজ নেই। সাজসজ্জা ছাড়াই আজকে তাকে অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে। ঠিক যেনো এক মায়াবতী রাজকন্যা।

কি দেখছো?

তোমাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে মায়াবতী।
কি মায়ায় জড়ালে আমাকে বলোতো?
আমার খাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে। তুমি জানো এই দুটো দিন আমি তোমাকে কতোবার ফোন দিয়েছি।
আগে না হয় ফোন ছিল না। এখন ফোন থাকতে কেন যোগাযোগ করতে পারবো না!
কতো টেনশন করছি তোমার কোন আইডিয়া আছে?

সরি

সরি বললে তো কাজ হবে না। আমাকে কষ্ট দেওয়ার মাশুল আমি সুদে আসলে উসুল করে নিব।
এখন বলো তো কি হয়েছিল? কি কারণে মহারানীর মোবাইল অফ! ক্যাম্পাসে আসা ও বন্ধ!!

চলো হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে বলি।

রৌদ্র ছায়ায় হাঁটতে হাঁটতে মায়া তার ছোট বোনের সব ঘটনা খুলে বললো।

মায়ার কথা শুনে শুভ্র যারপর নাই অবাক।
কি বলছো! এখন কি অবস্থা তোমার বোনের?

আজ একটু ভালো। এই জন্যই আসলাম।

শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, কেমন রোদ উঠেছে দেখেছো? এই রোদের মধ্যে কোন মানুষ হাঁটে।
পাগল!
আমি রোদে হাঁটছি না। নির্ঘাত সান স্ট্রোক হয়ে যাবে। আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না।

মায়া ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, আহ্ আসোই না।
একটু হেঁটে দেখো। প্রথম কিছুক্ষণ খারাপ লাগবে। কান ঝাঁ ঝাঁ করবে। চোখে ঝাপসা ও দেখবে। তারপর দেখবে খুব মজা লাগছে।
অপূর্ব এক ফিলিংস।

যেতে হলো।
মায়াকে অগ্রাহ্য করার মতো শক্তি বা ইচ্ছে কোনটাই শুভ্রর নেই। শুভ্র আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো, সত্যিই ওর কাছে খুব ভালো লাগছে এই রোদের মধ্যে হাঁটতে। হয়তো সাথে মায়া আছে এজন্য ভালোলাগাটাও ছিল দ্বিগুণ।

কিন্তু বাসায় যেয়েই পড়লো জ্বরে। সেই জ্বর সারতে সময় নিলো একসপ্তাহ। জ্বরের ঘোরে স্বপ্নে দেখলো, সারাদিন ও শুধু হাঁটছে আর হাঁটছে।
মায়া আর ও হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।
স্বপ্নে মায়াকে নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল টিপে অসাধারণ লাগছিলো।
চোখের মনি টাও যেন নীল বর্ণের!
এ এক অন্যরকম মায়াবতী।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here