#মায়ায়_জড়ানো_সেই_তুমি
#পার্ট_১৪
জাওয়াদ জামী
” এই যে নবাবজাদা ঘুম ভাঙ্গলো আপনার? সেই কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি কিন্তু তিনি শুনতেই পাননা। এই ওঠ বলছি। এবার আর মুখে ডাকবনা ঝাড়ুপিটা করব। ” রা*গে গজগজ করতে করতে শাহানা সিদ্দিকা ছোট ছেলেকে ডাকতে থাকেন।
” উফ্ মাদার বাংলাদেশ আরেকটু ঘুমাতে দাও প্লিজ। এত রা*গ করছো কেন! ”
” আরেকটু ঘুমাবি মানে? কয়টা বাজে হিসাব আছে। তোর ভাই-ভাবী সেই সকালে এসেছে। তারাও তো ব্যস্ত মানুষ। শুধু তোর মুখের দিকে তাকিয়ে ওরা আজ এসেছে। আর সেই তুই দুপুর একটার সময় বলছিস আরো ঘুমাবি! ”
ইশানের আর ঘুমানো হলোনা।
” এই যে দেবরজী ঘুম ভাঙ্গলো? যার বিয়ে তার খোঁজ নেই, পাড়া পড়শীর ঘুম নেই – বিষয়টা এমন হলোনা? আমরা পাত্রী দেখব বলে কোন সকালে আসলাম খুলনা থেকে আর এদিকে পাত্র নাক ডেকে ঘুমায়। ” ভাবীর কথায় মাথা চুলকে হাসে ইশান।
দুপুরের দিকে পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা থাকলেও ইশানের জন্য দেরি হয়ে গেছে।
শাহানা সিদ্দিকা তৈরী হয়ে এসে দেখে তার ছেলে চুপচাপ বসে আছে।
” ইশান তুই তৈরী হবি কখন! এবার কিন্তু জিসান রাগ করবে। এবার যদি ও ফিরে যায় তবে আর কিছুতেই এসব বিষয়ে ও জড়াবে এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। তই কবে বড় হবি বলতো? ”
” আমি তো সেই চার বছর আগেই বড় হয়েছি মা। আর কত বড় হব আমি! ”
” বাবা, তুই এখনো সেই মেয়েকে ভুলতে পারিসনি! তার জন্য তুই এত বছর অপেক্ষা করলি? যে কখনোই তোর ছিলনা তার জন্য এতটা বছর নিজেকে কষ্ট দিলি! এমনও তো নয় সে তোর সাথে ওয়াদা বদ্ধ ছিল। তবুও কেন এত কষ্ট পাস? ”
” আমি তার জন্য কখনোই অপেক্ষা করিনি মা। আমার ভালোবাসা একতরফা ছিল। সে জানতোই না আমি তাকে পাগলের মত ভালোবেসেছি। যেদিন জেনেছি সে বিবাহিতা সেদিনই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু মায়া বড় খারাপ জিনিস মা। মাঝেমধ্যে তাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করত, তাই ছুটে যেতাম তার ভার্সিটির সামনে। তাকে একনজর দেখতে। ভালোবাসা সেই কবেই কাটিয়ে উঠেছি কিন্তু মায়া থেকেই গেছে। আর রইলো অপেক্ষার কথা। আমি এতদিন শুধু নিজেকে সময় দিয়েছি। অন্য কেউ আসলে যাতে অভিযোগ করতে না পারে। ব্যাস এতটুকুই। ”
” এখন ওঠ। তৈরী হয়ে নে। আমরা কেউই তোর খারাপ চাইনা। মেয়েটাকে দেখলে তুই চোখ ফেরাতে পারবিনা এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। তুই কিন্তু মত পাল্টাবিনা। এবার যদি মত পাল্টাস তবে আমি জিসানের সাথে খুলনা চলে যাবো। ” অভিমানের সুরে বলে শাহানা সিদ্দিকা।
” আহা, মাদার বাংলাদেশ, এত চাপ নিওনা। এবার বিয়ে আমি করেই তবে বাড়ি ফিরব। তোমার নাতি-নাতনিরাও বড় হয়েছে, আবার নতুন করে প্রোডাকশনের ব্যবস্থা না করলে তুমি আণ্ডাবাচ্চা পাবে কই! যাও প্রোডাকশনের দ্বায়িত্ব আজ থেকে নিয়েই নিলাম। ”
” একটুতো লজ্জা কর। আমি তোর মা হই। বেশরম ছেলে একটা। ” হাসতে হাসতে রুম ত্যাগ করে শাহানা সিদ্দিকা।
ইশান ফিটফাট হয়ে তবেই নিচে নামে।
আলিশান ড্রয়িংরুমে শাহানা সিদ্দিকার পরিবার বসে আছে। তাদের সামনে হরেক রকম খাবার। কিন্তু খাবারের দিকে মনযোগ নেই কারো। সবাই নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত।
কিছুক্ষণ পর ভাবীর সাথে মেয়ে হাজির হয়। মেয়ে সালাম দিলে সবার সাথে ইশানও তাকায়। ইশানকে দেখেই মেয়ের চোখ ছোট হয়ে আসে।
এদিকে ইশানের চোয়াল ঝুলে যায়।
” এই ধানিলঙ্কার সাথে শেষ পর্যন্ত বিয়ের কথা বলতে হল! ইশানরে কপাল একখান তোর। এটার ভেতর মেয়ের আইটেম কম খালি ঝাঁঝে ভর্তি! ” নিজের কপালকে কিছু অ*শ্লী*ল গালি দিয়ে বসে।
এদিকে রুশার মাথা গ*র*ম হয়ে গেছে ইশানকে দেখে।
” এই লু*চু বেডা এখানে কি করে! ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকত মেয়েদের দেখার জন্য। আবার রাস্তাঘাটে আমার সাথে ফ্লা*র্ট করত। রিশা শেষ পর্যন্ত কোন লু*চুর বউ হবি তুই! ”
শাহানা সিদ্দিকার পাশে বসে রিশা। সবার কথার টুকটাক উত্তর দেয়। সবশেষে দুজনকে একা কথা বলতে উপরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রিশার পিছুপিছু ইশান দোতলার খোলা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
দুজনেই চুপচাপ। ইশান কথা সাজাচ্ছে আর রিশা রা*গে ফুঁ*স*ছে।
” এই যে লু*চু, এখানে কি? পেছন পেছন বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন? আপনার সাহস তো কম নয়! ”
” সহীহ ভাষায় কথা বলুন। আমি মোটেও লুচি নই থুক্কু লু*চু নই। আমি একজন পিউর জেন্টেলম্যান। আর আমি আপনার পিছু করিনি। আমিতো একজন শান্ত, নম্র, লাজুক, কোমল পাত্রী দেখতে এসেছি। কিন্তু এসে কি দেখলাম! অরিজিনাল ধানিলঙ্কা। ”
” ঐ বেডা মুখ সামলে কথা বলুন। আমি ধানিলঙ্কা হলে আপনি শাখামৃগ। ফাজিল পোলা। ”
ইশান বুঝলো অবস্থা সুবিধার নয়। তাই সে কথা ঘুরিয়ে সরাসরি রিশাকে জিজ্ঞেস করে, ” উইল ইউ ম্যারি মি ধানিলঙ্কা? আপনি চাইলে আমরা মরিচের আড়ৎ দেব, প্রতি বছর দুই-চারটা মরিচের ন্যায় আণ্ডাবাচ্চা প্রোডাকশন দিয়ে আমার বাপের রেখে যাওয়া বাড়িটা ভরে ফেলব। সারাদিন ওরা কিচকিচ করে বাড়িটা মাথায় তুলে রাখবে। আপনি চাইলে প্রোডাকশন চলতেই থাকবে যতদিন না বিশ্বের জনসংখ্যা হাজার কোটি ছাড়ায়। ”
এমন উদ্ভট প্রোপোজ দেখে রিশার হাত-পা কাঁপতে থাকে, মাথা ঘুরে যায়। অনেক কষ্টে উত্তর দেয়, ” আমি কি উৎপাদনের ফ্যাক্টরি না কি! ” রিশার গলার স্বর লো লেবেলে নেমেছে।
” আপনি রাজি থাকলে ফ্যাক্টরি হওয়ার সুযোগ আছে। বিশ্বাস করুন আমি ফ্যাক্টরির অনার হিসেবে খুবই দয়ালু। আপনি চাইলেই সব হবে না চাইলে কিছুইনা। ” বাম চোখ টিপে জবাব দেয়।
এবার রিশার ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। মাথাটা ঘুরে উঠলে বারান্দার গ্রীলে হাত দিয়ে নিজের পতন ঠেকায়। ইশানও এগিয়ে এসে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে।
” কি হলো ধানিলঙ্কা! কি না করতেই তো দেখছি উইকেট পতন হল! উইকেট এত নড়বড়ে হলে প্রোডাকশনের কাজ আগাবে কি করে! ”
” এই আপনি চুপ করবেন। আগে ভেবেছিলাম আপনি শুধুমাত্র লু*চু কিন্তু এখন তো দেখছি আপনি ইন্টারন্যাশনাল লু*চু কমিটির সিইও। অ*স*ভ্য পুরুষ মানুষ। মুখের কোন ব্রেকের ব্যবস্থা না করেই ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে এসেছে পাত্রী দেখতে! ”
” পুরুষদের একটু লু*চু না হলে চলেনা বুঝলেন হবু বউ। এক মিনিট, আমার প্রপোজাল ভেবে দেখেছেন নিশ্চয়ই? জলদি হ্যাঁ বলে দিন। আমি নিচে যেয়ে সুখবর জানানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। ”
” আপনি যেটা করেছেন সেটা লু*চু*গি*রি ছিল। কোন প্রপোজাল ছিলনা। তাই কোন উত্তর নেই।”
” ওহে সুন্দরী, তোমার একমাত্র পতি হিসেবে, আমাকে তোমার কিউট কিউট বাচ্চাদের বাবা হবার সুযোগ দিয়ে, নিজেকে আদর্শ পত্নী হিসেবে উপস্থাপন করার এই সুযোগ হাতছাড়া করে নিজেকে হতভাগীরুপে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করোনা।” একটা আর্টিফিশিয়াল গোলাপ সামনে বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইশান।
রিশা রাগে কোন উত্তর না দিয়েই নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে। আর ইশান নিচে যেয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয় সে রাজি।
শাহানা সিদ্দিকা খুশিতে কেঁদে ফেলে। অবশেষে তার ছন্নছাড়া ছেলেটার সুমতি হয়েছে।
রিশার বড় চাচা আগামীকাল দেশের বাইরে চলে যাবেন। তাই তিনি যাওয়ার আগে ভাতিজীর বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। এতে শাহানা সিদ্দিকার কোন আপত্তি নেই।
রিশার বাবা-মা রিশার সাথে কথা বলে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বাবা-মা’র সামনে বসে আছে রিশা। বাবা ওর মতামত চেয়েছে। কিন্তু ও কনফিউশনে আছে ইশান কে নিয়ে। এমন লজ্জাহীন মানুষ সে জন্মেও দেখেনি। অবশ্য লোকটা দেখতেও বেশ। কিন্তু রিশার বাবার ইশানকে খুব পছন্দ। গত কয়েক বছর থেকে তিনি ইশানকে চেনেন। অফিসে তার মত একজনও নেই। তিনিও চান এখানেই রিশার বিয়ে হোক। রিশাও বাবার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এবং নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করে রাজি হয়।
সেদিনই সন্ধ্যার পর কাজী ডেকে ঘরোয়াভাবে ওদের বিয়ে দেয়া হয়।
শাহানা সিদ্দিকার ইচ্ছানুযায়ী রাতেই রিশাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইশানদের বাড়ি। রিশার মন খুবই খারাপ হয়ে যায়। ওর জীবনের এতবড় ঘটনা তানিশাকে ছাড়াই ঘটল। হঠাৎ করেই সবকিছু হওয়ায় তানিশাকে জানানোর সুযোগটা পর্যন্ত পায়না।
বিছানায় বসে রিশা খুঁটে খুঁটে ইশানের রুম দেখছে। বেশ বড়সড় রুমটা পরিপাটি করে গোছানো। রুমের দেয়াল থেকে শুরু করে ফার্নিচার পর্যন্ত সাদা। যা রিশার চোখে প্রশান্তি এনে দিচ্ছে।
দেয়ালে ঝুলানো ইশানের ছবি দেখ গুটিগুটি পায়ে সেদিকে যায়। কোন ইয়টে তোলা ছবিটা। নীল সাগরের মাঝে সাদা রঙ্গের ইয়টে সাদা টি শার্ট পরিহিত মানুষটাকে দেখেই কেমন প্রেম প্রেম পাচ্ছে রিশার। লোকটার মুখভর্তি হাসি দেখেই বোঝা যায় তার প্রানোচ্ছলের প্রাচুর্যতা।
” এভাবে দেখলে আমার ছবিতে ক্ষয় রোগ ধরবে যে। ছবি না দেখে এই জলজ্যান্ত মানুষকে দেখো। আমার জীবন ধন্য হোক। তোমার চাহনিতে আমি অজানায় হারাই, তোমার হাসিতে আমি প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাই। ” দুষ্টু হাসি খেলা করছে ইশানের ঠোঁটে।
রিশা পারলে লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়। এ কেমন মানুষ কপালে জুটল!
” আমার কি মনে হয় জানেন? লজ্জাও আপনার কথা শুনলে লজ্জা পাবে। নির্লজ্জ লোক একটা। ”
” সে হইনা নির্লজ্জ তবুও তোমারই। এই নির্লজ্জ, অসভ্য পুরুষকেই তোমার আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এটাও একটা ক্রেডিট বুঝলা বউ। ”
” ইশানের মুখে বউ ডাক শুনে রিশার বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়। একরাশ ভালোলাগারা এসে হুমড়ি খেয়ে আছড়ে পরছে হৃদয় গাঙের পাড়ে। এরই নাম বুঝি ভালোবাসা! ”
ইশান নিমেষেই দু’হাতের কঠিন বাঁধনে বেঁধে ফেলে রিশাকে। সে তার একতরফা অতীতকে মাটিচাপা দিয়ে বর্তমানকে নিয়েই সুখী হতে চায়।
সাদিফ বাসায় বসে অফিসের কাজ করছে। ওর পাশে বিছানায় জামিল চৌধুরী শুয়ে আছে। সাদিফ যতটুকু সময় বাসায় থাকে ততক্ষণই বাবার পাশে থাকার চেষ্টা করে। কাজের ফাঁকে সাইরার ছেলে-মেয়েদের দুষ্টুমি উপভোগ করছে। ভাগ্নে-ভাগ্নীরা তাদের মামার ভক্ত। প্রতি সপ্তাহে একবার মামার কাছে আসতেই হবে।
সাইরাও আর আগেরমত নেই। বাবার অসুস্থতা, ছোট ভাইয়ের বেইমানী, সংসার জীবনে চড়াইউৎড়াই সব মিলিয়ে সাইরা বুঝতে পেরেছে তার করনীয়। সংসার জীবনে শ্বাশুড়ির একছত্র অধিপত্য, রাতুলের উদাসীনতা, ননদদের ব্যঙ্গ, বড় জা’র কটুবাক্যে এক সময় বুঝতে পেরেছে সেও তানিশার সাথে অন্যায় করেছিল। তার করা তানিশার সাথের সব অন্যায় প্রকৃতি সুদেআসলে ফিরিয়ে দিয়েছে। নানান ঘাত-প্রতিঘাতে সাইরা আজ সংসারী হয়ে উঠেছে। তবে যখনই সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে দম বন্ধ হয়ে আসে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে বাবার বাড়িতে আসে। সেই আহলাদী, আদরের সাইরা আজ পুরোদস্তুর গৃহিণী। আজ সে ভালো করেই বুঝতে পারে বাবা ঠিক ছিলেন সব সময়ই। বাবার বাড়িতে আসলে সে নিজ হাতে রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়।
শায়লা চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলেন। তার দোষেই মেয়ের এমন অবস্থা। সময় থাকতে যদি মেয়েকে সুশিক্ষা দিতে পারতেন, তিনি নিজেও যদি সবাইকে মুল্যায়ন করতেন তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতোনা।
” মাম্মাম তকেট কাবো ( মাম্মাম চকলেট খাবো)।
থুধা নেগেচে ( ক্ষুধা লেগেছে) । তালাতালি তকেট দাও ( তারাতারি চকলেট দাও)। ”
” ওলে বাবা আমার পাখিটার ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু চকলেট কেন! ক্ষুধা লাগলে ভাত খেতে হয়। তুমি গুড গার্ল হয়ে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি। ”
” তুমি পতা, দুততু ( তুমি পঁচা, দুষ্টু)। আমাকে তকেত দাওনা। ( আমাকে তকেত দাওনা)।
আমি বাত কাবোনা (আমি ভাত খাবোনা)। ”
মেয়ের আধোআধো বুলি শুনে প্রান জুড়িয়ে যায়।
ওর চেহারা, ওর কথার ভঙ্গি, ওর হাসি, ওর হাঁটার ধরন, ওর ঘুমানো, এমনকি ওর জিদ সব কিছুতেই সাদিফের ছাপ স্পষ্ট। যার জন্য আজ তানিশা ঘরছাড়া আজ তারই কার্বনকপি তানিশার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। চাইলেই কি সব ভোলা যায়! সাদিফকে যতই ভুলতে চেয়েছে তখনই তূর্ণা বুঝিয়ে দিয়েছে, ‘ আমিই বাবার অস্তিত্ব, আমার মাঝেই বাবার ছায়া। ‘
তানিশা আজ ক্লান্ত। নিজের সাথে বোঝাপড়ায় হেরে গেছে। যে মানুষটা অপমান ছাড়া কখনোই কিছু দেয়নি, তাকে কিছুতেই কেন ভুলতে পারেনা! একবার চায় সব ছেড়ে তার কাছে যেতে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হয়, সাদিফ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়। পিতার ছায়া ছাড়া সন্তানকে মানুষ করা কত যে কঠিন তানিশা খুব ভালো করেই জানে।
এদিকে তূর্ণা বেশ কয়েকদিন থেকেই দাদুকে দেখবে বলে জিদ করছে। এখন ছুটি পাবে কি না তা সে জানেনা।
সাদিফ শপিংমলে এসেছে সাইরার ছেলে-মেয়ের জন্য খেলনা কিনতে। শায়লা চৌধুরী বারবার বলে দিয়েছে। আজ খেলনা না নিয়ে বাসায় গেলে অসুবিধা আছে। কিন্তু বেচারা সাদিফ বুঝতে পারছেনা কি করা যায়।
পুরো টয় ওয়ার্ল্ড চষে ফেলেছে কিন্তু কিছুই কিনতে পারেনি। একটা টেডি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই উচ্ছ্বল হাসির শব্দে অজান্তেই চোখ যায় সেদিকে। একটা মেয়ে হাসতে হাসতে কোন প্রোডাক্ট দেখছে। সাদিফের মেয়েটিকে চেনা চেনা লাগে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে মনে করার চেষ্টা করে। হঠাৎই মনে পরে মেয়েটিকে কোথায় দেখেছে। টেডিটা জায়গামত রেখে এগিয়ে যায় মেয়েটির কাছে।
” এক্সকিউজ মি। আপনার মেয়েটা কেমন আছে? সে অনেক বড় হয়েছে বুঝি? ”
রিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কার মেয়ে, কিসের মেয়ে!
” সরি, আপনি কে? আর কোন মেয়ের কথা বলছেন? ”
সাদিফ বেশ বিব্রত হয়।
” আমি রিয়েলি সরি। আসলে কয়েক বছর আগে হসপিটালের করিডোরে আপনার সাথেই বোধহয় কথা হয়েছিল। আপনার কোলে একটা পরী ছিল। আমি অবশ্য ওর একটা নাম দিয়েছিলাম, তূর্ণা। ”
এবার রিশা বুঝতে পারে। এদিকে ইশান হা করে দুজনের কথপোকথন শুনছে।
” মাফ করবেন। আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। আসলে ও আমার মেয়ে নয়। ও আমার ফ্রেন্ডের মেয়ে ছিল। কিন্তু ওর নাম তূর্ণা ‘ ই রাখা হয়েছে।” সাদিফ মলিন হেসে রিশাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসতে গেলেই ইশান রিশাকে জিজ্ঞেস করে ঘটনা কি। রিশাও জবাব দেয়,
” আমার ফ্রেন্ড তানিশাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিলাম ওর শ্বশুরকে দেখতে। ভদ্রলোক তখন সেখানে অ্যাডমিট ছিল। আমি তানিশার মেয়েকে নিয়ে করিডোরে হাঁটছিলাম, তখন ইনার সাথে পরিচয় হয়। ”
কথাটা কানে আসতেই জমে যায় সাদিফ। বুকের ভিতর হার্টবিটেরা হাতুড়ি পেটাতে শুরু করে। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নেয়।
ঘুরে তাকিয়ে রিশাকে প্রশ্ন করে, ” তানিশা মেহজাবিন শেখ আপনার ফ্রেন্ড? ”
” আপনি ওকে কিভাবে চেনেন? ” বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে রিশা।
” আমি সাদিফ, সাদিফ চৌধুরি। ”
নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা রিশা।
চলবে…..