#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্বঃ৭
মেহমেত ক্লাবে গিয়েছে আবার,, মরিয়ম কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মানুষ টা এতো পাষাণ কি ভাবে হয়ে গেল। তার কি এতো টুকু মায়া হলো না, মরিয়মের কপাল ফেটে গেছে তার আঘাতে তবুও নিশ্চিন্তে ক্লাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ড্রাইভার চাচাই বলেছিল সেদিন পতিতাপল্লীতে মেহমেত আছে। কিভাবে জানলো সে এক কাহিনী, মরিয়মের জানামতে,মেহমেত দেশের বাইরে গেছে। তাই ম্যানেজার ফোন দিয়ে বলেছিলেন,যে একটা জরুরী ফাইল বাসায় রয়ে গেছে। তা এখনি লাগবে। তার কারনে মিলন চাচা কে দিয়ে ফাইল টা অফিসে পৌঁছে দেয় মরিয়ম। মিলন চাচা যখন ফাইল দেওয়ার জন্য অফিসে পৌঁছাই। তখন দেখতে পাই মেহমেত হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। চোখে মুখে ক্লান্তি এবং চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট !
তখনই মরিয়মের ফোন বেজে উঠে মিলন চাচার ফোনে। এবং বলে সে যেন তারাতারি বাসায় ফিরে, কারণ সে ভুল ফাইল নিয়ে গেছে। তখন মিলন চাচা হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানিয়ে বলেন ঠিক আছে বাসায় ফিরছে সে।আর এটাও বলে একটু আগে মেহমেত স্যার কে দেখেছে সে । মরিয়ম তখন অবাক গলায় বলে,এটা কি ভাবে সম্ভব, ঘন্টা খানেক আগেই ম্যানাজার বললেন যে মেহমেত কাজে অনেক ব্যস্ত তার কারনে মরিয়ম কে একটা ফোন ও দিতে পারছেন না। তার জন্য নাকি মেহমেত সরি ও বলেছে। অবশ্য মরিয়ম এটা জানতো যে মেহমেত ইচ্ছে করেই তাকে কোন ফোন দেয়নি,ম্যানেজার কে ফোন দিতে পারলে তাকে ফোন দিতে পারতো না বুঝি।
মরিয়ম তখন কি ভেবে না ভেবে মেহমেত কে ফলো করতে বলে।
তার পরই জানতে পারে সে শহরের শেষ প্রান্তে একটা লালকুঠির নামে এক পতিতাপল্লীতে মেহমেত ঢুকেছে।
এর ৬দিন আগে মরিয়ম জানতে পারে
মেহমেত ড্রাগ নেই। সেদিন মরিয়মের উপর দিয়ে যে ভূমিকম্প গেছে। তা সে কোন দিন ভুলবে না।
নিজের প্রানপ্রিয় স্বামীর নামে পর পর এমন কুৎসিত সত্যতা জানতে পারে,যাকে বাবার পরে আদর্শ মানুষ হিসেবে জানতো অথচ সে এমন হবে তা কল্পনার উর্ধ্বে ছিল।
মেহমেত কখনোই একেবারে মাতাল হয়ে বাসায় কখনো ফিরেনি। যে মরিয়ম বুঝতে পারবে যে ৬মাস ধরে সে ড্রাগ নেই। কিন্তু সেদিন মেহমেত অনেক রাত করে বাসায় ফিরেছিলেন। এবং তাকে দেখে খুব অসুস্থ মনে হচ্ছিল। হঠাৎ মেহমেত বার বার বমি করতে লাগে। তখন মরিয়ম ভয় পেয়ে মেহমেত কে বলে ডাক্তারের কাছে যেতে। কিন্তু মেহমেত কোনো মতে রাজি হয়না ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য। অগত্যা নাজিম কে ফোন দেয় মরিয়ম। নাজিম সবেমাত্র বাসায় পৌঁছেছেন, মরিয়মের ফোন পেয়ে তারাতারি করে চলে আসে।
মেহমেত কয়েক বার বমি করাই,একদম অসার হয়ে শুয়ে আছে।
নাজিম” ভাইয়ের এমন হাল দেখে অবাক হয়ে যায়, সুদর্শন পুরুষ টির মুখের লাবন্য ভাব টা যেন হারিয়ে গেছে।
নাজিম মেহমেতকে ভালো ভাবে চেকাপ করে বলে,ভাবি ভাইয়ার হয়তো ফুড পয়জনিং হয়েছে, ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। তবে কিছু টেস্ট করতে হবে। হঠাৎ শরীরের এই অবনতি টা ঠিক কি কারণে হচ্ছে তা বুঝা যাবে। ভাইয়াকে হসপিটালে নিয়ে চল।
মেহমেত হসপিটালের কথা শুনে কেমন যেন ভয় পেয়ে যায়। সে হসপিটালে যেতে চাচ্ছে না। অনেক জোরাজুরি তে পরেরদিন মেহমেত কে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া হয়। তখন মেহমেত কিছু টা সুস্থ। নাজিম মেহমেতের ব্লাড আর ইউরিন নিয়ে টেস্ট করানোর জন্য ল্যাবে নিয়ে যায়।
মরিয়ম আর মেহমেত কে ২ঘন্টা ওয়েট করতে বলে। কিন্তু মেহমেতের হঠাৎ একটা ফোন কল আসার পর কেমন যেন চিন্তিত হয়ে পড়ে তার পর একটা মেসেজ টোন বেজে উঠার পর হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যায়।
মরিয়ম মেহমেতের যাওয়ার পানে এক ধ্যানে চেয়ে রইল। মানুষ টা কে বড্ড বেশি অচেনা লাগে কেন এতো এখন!!
পরক্ষনেই ভাবে হয়তো কাজের চাপ। গোপনে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে রইল সে।
মেহমেতের রিপোর্ট বের হয়েছে, মরিয়ম নাজিমের চেম্বারে বসে রয়েছে। একটু পর নাজিম গম্ভির মুখ করে চেম্বারের ভিতরে ঢুকলো। মরিয়মের সামনে চেয়ারে বসে বললেন। ভাইয়া কই???
তোমার ভাইয়ের একটা আর্জেন্ট কাজ পড়েছে।তাই সে চলে গেছে। কিন্তু তুমি এতো গম্ভির কেন??? সব কিছু ঠিক আছে তো???
নাজিম কাঁচুমাচু মুখে বললেন,ঐ আসলে ভাবি তুমি একবার ভাইয়া কেই আসতে বলো। যখন ও বাসায় ফিরবে।
উনার অনেক রাত ও হয়ে যেতে পারে আসতে আসতে তুমি আমাকেই বলনা হয়েছে কি?? কোন সমস্যা। কথা টা মরিয়ম ভয়ে ভয়ে বলল। তার মনে হচ্ছে মেহমেতের কি কোন রোগ ধরা পড়েছে রিপোর্টে!!!
।
।
।
নাজিম তখন একটা ছোট করে শ্বাস নিয়ে বলতে আরম্ভ করে। ভাবি ভাইয়ার রিপোর্ট এমনিতে নরমালি আছে। কিন্তু ভাইয়া হয়তো গত কয়েক মাস ধরে ড্রাগ নিচ্ছে।
মরিয়মের কাছে নাজিমের কথা টা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। এসব তুমি কি বলছো?? এটা হতেই পারে না তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে
তুমি আবার টেস্ট করো।
ভাবি রিলাক্স,, আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা। আমি নিজেও হতভম্ভ হয়ে গেছি। যে মানুষ সব সময় নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিপক্ষে সে কিভাবে এটা করতে পারে???
কিন্তু নাজিম মেহমেতকে কখনো তো আমি মাতাল অবস্থায় দেখেনি।
exactly এটা এমন এক নেশা দ্রব্য যা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়। অতিরিক্ত নিলে মাতলামু ভাব চলে আসবে কিন্তু অল্প নিলে মাতাল হবে না। কিন্তু সে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়বে । সব কিছুর মধ্যে এক বিরক্তিকর ভাব চলে আসবে।
ভাইয়া নিজে ইচ্ছেতে ড্রাগ নিতে পারে বলে আমার মনে হচ্ছে না।
কারন ওর মত একটা ভালো ছেলে কি করে পারে এটা করতে।
মরিয়ম সেদিন কোন উত্তর না দিয়ে সোজা চলে আসে বাসায়। মেহমেতের সাথে এ নিয়ে কথা বলতেই হবে। কিন্তু কখনো তেমন পরিস্থিতি হয়ে উঠলো না। নানান কাজের বাহানায় মরিয়মের কোন কথায় শুনতে চাইলো না।
আর লালকুঠিরেই গিয়ে কিছু টা খোঁজ পেয়েছে সে । যে কোন মুখোশ পরিহিত লোক মেহমেত কে এখানে দিয়ে গেছে। মরিয়মের দৃঢ় বিশ্বাস যে মেহমেত ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু করছে না। কিন্তু আজ কের ঘটনার পর মনে হচ্ছে এটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই সে করছে। তার টাকা সে মা ইচ্ছে তাই করবে তার কৈফিয়ত সে কাউকে দিতে নারাজ।
মরিয়ম আকাশ পাতাল ভাবছে আর অতৃপ্ত কোন ব্যাথায় টনটন করছে তার মস্তিষ্ক।।।
মিলন চাচার কাছে থেকে আরো জানল সে ক্লাবের নাম মধুবালা। শহরের শেষ প্রান্তে। যেখানে সব বড় লোকদের আনা গোনা। মিলন চাচা ভিতরে ঢোকার অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু ভিতরে তাকে তার পোশাকের জন্য ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
মিলন চাচা চলে যায়। মরিয়ম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি সে সেই ক্লাবে যাবে। আর এটা জানবে সেই মুখোশধারী ব্যক্তি টা কে???
এক ক্ষীন আশা বুকের ভিতর রাখছে মরিয়ম। ইশ্ যদি এসব মেহমেত ইচ্ছাকৃত ভাবে না করে। কারো সঙ্গ পেয়ে করছে। তাহলে তার সঙ্গ ছাড়িয়ে সব এক সময় না হয় ঠিক করা যাবে।
।
।
।
মেহমেত আবার হেরে গেলি তুই??? আমি তো আবার জিতে গেলাম। নিশান অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ছে যেন।
বার বার হাতে তালি দিয়ে বলছে এবার আবার কি হতে চলেছে তোর মেহমেত।।
মেহমেত নিশানের কথাতে ঘাবড়ে যায়। এমনিতেই সে এখন ভীতিকর পরিস্থিতি বিচরন করছে খেলায় হেরে গিয়ে। প্রানপণ চেষ্টা করেছে আজ খেলাটাই জিতে যাওয়ার জন্য কিন্তু তার ভাগ্যে সায় দেয়নি।
নিশান তখন আয়েশে ভঙ্গিতে বসে পায়ের উপর পা তুলে বললো। ঠিক আছে মেহমেত এবার তোকে আমি এমন একটা সুযোগ দিবো যেখানে তুই তোর ফ্যামিলি কে একে বারে সেভ করতে পারিস।
নিশানের কথায় মেহমেত উদ্বিগ্নতার সাথে নিশানের দিকে ঝুঁকে বলে কি সুযোগ। আমি রাজি। নিশান মুচকি হেসে বলল আরে আরে তুই দেখছি ফ্যামিলিকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে আমার পুরো কথা না শুনেই রাজি হয়ে গেলি।
আগে শুন কি বলি আমি। মেহমেত একটা শুকনো ঢুক গিলে বলে বল আমি শুনছি।
নিশান মেহমেতে কে কিছু বলল। যাতে সে প্রচন্ড ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বলে,, আমি এই কাজ কখনোই করতে পারবো না। আমি মা বাবাকে কখনোই ধোকা দিতে পারবো না কখনো না।
নিশান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললেন, একটু আগে তো রাজি হয়ে গেছিলি। এই সুযোগ সব সময় আসবে না ভেবে দেখতে পারিস। এই ক্যাসিনো থেকে সারা জীবনের জন্য মুক্তি ও পেয়ে যেতে পারিস।
মেহমেত তখন করুন গলায় অনুরোধ করে নিশানের দিকে চেয়ে বলে। নিশান হাত জোর করছি আমি আমার পরিবারের সাথে এমন করতে বলিস না আমায় প্লিজ। তুই কি তোর পরিবারের সাথেই এমন টা করতে পারতিস বল আমায়???
পরিবারের কথা বলতেই নিশানের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। দাঁত কিরমির করতে করতে বলল। আমার পরিবার কে তো তোদের কারনেই মরতে হয়েছে। সব শেষ হয়ে গেছে আমার। আমার কোন পরিবার নেই এখন। আমি নিশ্ব আমি একা আমার কেউ নেই। শেষের কথা টা নিশান অনেক জোর গলায় বলে।
মেহমেত তখন……___&
চলবে_____????
ছোট পর্ব হয়েছে। ইনশাল্লাহ আগামী পর্ব বড় করে দিতে চেষ্টা করবো।