ক্যাসিনো পর্ব -০৬

#ক্যাসিনো © লেখিকা_(মায়া)

#পর্বঃ৬

নিজেকে কন্ট্রোল কর মেহমেত। তোর মেয়ের স্কুলে গিয়েছি, দূর থেকে একটা পিক উঠিয়েছি শুধু, কাছে যাইনি কিন্তু!!
তোর মেয়ে কিন্তু বাড়িতে ঠিক সময় পৌঁছেছে অক্ষত অবস্থায়। কথা টা শেষ করেই উচ্চ স্বরে হেসে ফেললেন লোকটি।

মেহমেত রাগে থরথর করে কাপছে, চোখ দিয়ে আগুনের লেলিহান শিখা যেন বের হয়ে আসবে এখনি , নিজের চোয়াল শক্ত করে চোখ দিয়ে যেন এতক্ষনে হাজার খানেক বার সামনে থাকা লোকটাকে খু*ন করে ফেলেছে।

লোকটি গর্বের হাসি দিয়ে পাশে থাকা সোফাতে আয়েশে ভঙ্গিতে বসলেন। তার পর মেহমেত কে তার সাথে বসতে বললেন। মেহমেত চোখে মুখে রাগ বজায় রেখেই লোকটির পাশে বসল।

এতো রাগ শরীরের পক্ষে ভালো নয় মেহমেত যাস্ট রিলাক্স। যতদিন ফ্যামিলি থেকে দূরে আছিস ততদিন তোর ফ্যামিলি সেভ থাকবে।

মেহমেত করুন স্বরে লোকটিকে রিকুয়েস্ট করলেন। প্লিজ নিশান স্টোপ দ্যা গেম। ফ্যামিলির থেকে দূরে সরে থাকছি। কিন্তু তাদের মাঝে যে আমি এখন অনেক দূরত্ব তৈরি করে ফেলছি।
মরিয়মের গায়ে ফুলের টোকা পড়তে দিবো না বলে কথা দিয়েছিলাম, সেখানে আজ আমি তার মুখ রক্ত রাঙা করেছি।
আমার মেয়েটা আমায় ভয় করছে,ও আমার কাছে আসে না, আমাকে দেখলেই ভয়ে লোকায় নিশান প্লিজ। তোর এই গেম বন্ধ কর।

নিশান মেহমেতের করুন হাল দেখে এতো খুশি হয়েছে যে তার খুশি যেন চোখে মুখে ঝিলিক দিচ্ছে। নিশান মেহমেতের দিকে তাকিয়ে বললেন। আরে দোস্ত কাঁদাবি না কি আমায়?? এতো ইমোশনাল হচ্ছিস কেন?? দেখ দোস্ত এটা যেমন তেমন গেম নয়, যে মাঝপথে বন্ধ করে দিবি। এটা হলো ক্যাসিনো,,জুয়া ভাই এটা জুয়া। এই খেলা তো তুই মাঝ পথে ছাড়তে পারবি না‌। এই খেলা তোকে শেষ পর্যন্ত খেলে যেতে হবে। হয় তুই জিতবি নয় তুই হারবি। অন্তিম পর্ব পর্যন্ত না খেললে তোকে কেউ ছাড়বো না। কথা টা শেষ করেই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে নিশান। তার হাসিতে যে বিশ্রী শব্দ হচ্ছে তা মেহমেতের মাথায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। রাগে দুঃখে কপালের রোগ দপদপ করছে।

চল এখন ক্যাসিনোর বোর্ডে যাওয়া যাক। এক সময় আমি ক্যাসিনো খেলা না বুঝেও আমার নামে আরোপ করা হয়েছিল যে আমি একজন পাক্কা খেলোয়াড় সেটা পূরো দেশবাসী দেখেছিল সেদিন,আরো কত জঘন্য মিথ্যাচার কতশত আরোপ করা হয়েছিল কথা টা বলতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে নিশানের। চোখে মুখে দেখা যায় এক অজানা কষ্ট যন্ত্রনা। আর এখন দেখ,
আমি সত্যি সত্যি এক জন পাক্কা খেলোয়াড়, কিন্তু কেউ জানে না সেটা।

মুহূর্তেই মেহমেতের মনে অপরাধ বোধ কাজ করে ‌। অনাকাঙ্ক্ষিত এক ভুলের জন্য তার এবং নিশানের আজ এই পরিনতি।

নিশান নিজের সেই চিরচেনা ব্যাথা কে দমিয়ে রেখে,মেহমেতের দিকে চেয়ে বললেন,চল খেলা শুরু করা যাক। আজ তোর কপালে কি আছে দেখি। নেশা, পতিতাপল্লী নাকি খুন???
তার পর নিজের সেই বিশ্রী হাসি দিতে দিতে মেহমেত কে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। মেহমেতের নিজেকে এখন একজন নর্দমার কীট মনে হচ্ছে,এই জীবনের চেয়ে মৃত্যু কে উত্তম মনে করছে।

নূর মোহাম্মদ আর তমাল গাড়িতে বসে রয়েছে। উদ্দেশ্য গতকাল খুন হওয়া ব্যাক্তির বাড়িতে যাওয়া। গাড়িতে বসেই মাডারের ফাইল গুলো চেক করছে। গত ৫জন খুন হওয়া ব্যাক্তিদের নাম যতটুকু পেরেছে তাদের ডিটেল রয়েছে।
প্রথম যে ব্যক্তিটি খু*ন হয় তার নাম হলো মুনির, পেশায় একজন ট্রাক ডাইভার, দ্বিতীয় ব্যাক্তির নাম, মজনু মিয়া,যিনি একজন কারেন্ট মেকানিক ছিলেন, তৃতীয় ব্যাক্তি ফয়সাল হক এক জন ফল ব্যাবসায়ী। আর বাকি দুই জনের মধ্যে একজন রিকশাচালক রিপন, দ্বিতীয় মোজাম্মেল এক জন বেকার যুবক। আর সব থেকে বড় অবাক করা বিষয় হলো গতকাল কে যে খু*ন হয়েছে তা ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময় দপ্তর পোস্টে চাকরি করেছেন নাম আজম হোসেন।

একজন ৫৪বছর বয়সি বৃদ্ধ কে খু*ন করার পিছনের উদ্দেশ্য ঠিক কি হতে পারে তা নূর মোহাম্মদের মাথায় ঢুকছে না।

অফিসার তমাল গাড়ি চালাচ্ছেন। হঠাৎ করে নূর মোহাম্মদের মুখ টা চিন্তা ভার হতে দেখে অফিসার তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, কোন সমস্যা??? নূর মোহাম্মদ ভাবনারত অবস্থায় জবাব দেন। গতকালের খু*ন টা ঢাবির সাবেক দপ্তর কে করা হয়েছে। যিনি এক জন বৃদ্ধ বয়সি ছিলেন। কেন খু*ন করলো?? আর সব খুন গুলোই এমন বেওয়ারিশ লোক দের করা হলো কেন?? যাদের পরিবারের তাদের খু*নের পর এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলার ও লোক নেই?? আচ্ছা এই খু*ন গুলো কি কোন শত্রুতা থেকে হচ্ছে না তো?? আর এদের মধ্যে কেউ কাউকে চিনতো নাকি?? নাকি এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল???

অফিসার তমাল এতোগুলো প্রশ্ন এক সাথে শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। কি বলবে ভেবে পেলেন না।

কিছু ক্ষন চুপ থেকে বললেন, হতেও পারে কোন বিশেষ কারণে তাদের খু*ন হতে হয়েছে। আবার হতে পারে অন্য কিছু??

নূর মোহাম্মদ চিন্তিত স্বরে জবাব দিলেন,দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি কারনে তাদের মারা হয়েছে তা অবশ্যই জানা যাবে।।

হঠাৎ অফিসার নূর মোহাম্মদের দিকে চেয়ে আবার ড্রাইভে মনোযোগ দিয়ে বললেন, তোমার এই গেট আপ কিন্তু তোমার কাজের সাথে এক দম বেমানান।
তুমি থাকবে স্টাইলিশ। তোমার কাজের সাথে যেটা মানাবে। এমন আদ্রি কালের লোক হয়ে থাকলে কেউ তোমায় দাম দিবে না।

নূর মোহাম্মদ মুচকি হেসে জবাব দিলেন। সহজ সরল হয়ে থাকা বেমানান নয়। মনুষ্যত্ব টাই মূল। আর স্টাইলিশ হয়ে হবে কি?? প্রত্যেক স্টাইলিশ ব্যাক্তিই কি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাকি???

আর আমার স্টাইলিশ রূপ দেখলে কিন্তু আপনার মেয়ে জন্য আবার আমাকে চেয়ে বসবেন। কথা বলেই দুজনে রসিকতায় হেসে উঠলেন।

আজম দপ্তরের বাসাটা ছোট খাটো ধরনের ইটের তৈরি বাড়ি,রঙ ব্যান্ডিজ করা নয়। বাসায় কেউ নেই তা তারা জানে। আশেপাশে লোক জনের কাছে সন্তোষজনক কোন জবাব পাওয়া গেল না ‌। নূর মোহাম্মদ আশাহত হলেন। ভাবলেন সূত্র বুঝি এখানে আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু হঠাৎ এক ব্যক্তি কে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে দেখতে পেলেন। নূর মোহাম্মদ ভ্রু মৃদু কুঁচকে তাকালেন ভালো করে। হাতের ইশারায় লোক টাকে ডাকলেন। লোকটি ভয়ে ভয়ে কাছে আসলেন। তার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন কে তুমি?? লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে কেন???

লোকটি তেমন কিছুই বলতে চাচ্ছে না।হয়ত পুলিশ দেখে ভয় পাচ্ছেন। তখন নূর মোহাম্মদ লোকটির পকেটে ৫০০ টা টাকা গুঁজে দিলেন।
এবং অভয় দিয়ে বলতে বললেন।
লোকটি তখন তার পান খাওয়া লাল টুকটুকে মুখের পানের পিক ফেলে দিয়ে হাসি মুখে বলতে লাগলেন। তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা হলো। তিনি আজম দপ্তরের পাশের বাসায় থাকেন। মা তরুণ বয়সে মারা যান,বাবা আরেক টা বিয়ে করে তাকে একা রেখে চলে যায়।
৭বছর আগে কি যেন ঝগড়া ঝাটি তে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। বিয়ে একটা করেছিলেন যুবক বয়সে কিন্তু আজম দপ্তরের একটা বাজে অভ্যাসের কারণে বউ তালাক দিয়ে চলে গেছে তার বাজে অভ্যাস টা হলো প্রতি রাতে ম*দ খেয়ে বাসায় ফিরে বউয়ের গায়ে হাত তুলতো।

চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর একটা ক্লাবে চাকরি নেন এবং সারাদিন রাত খেটে রাতে ম*দ খেয়ে বাসায় ফিরতেন মাতাল হয়ে। কিন্তু গত ১মাস ধরে তার ভিতরে এক বদল আসে তা হলো সারাজীবন মদ খাওয়া লোক টা গত একমাস বিনা মাতাল হয়ে বাসায় ফিরতেন। সব সময় খুশি খুশি থাকতেন। খু*ন হওয়ার দুই দিন আগে বলেছিলেন,যে তার জীবন বদলাতে চলেছে। নিজেই একটা ক্লাব বানাবেন।নিজের ইচ্ছে মত ম*দ গিলবেন তার কারনে এক মাস ম*দ ছেড়েছেন। তার এক দিন পর শুনি তিনি খু*ন হয়েছেন। এই ছিল তার মূল বক্তব্য।

নূর মোহাম্মদ আর অফিসার পাশাপাশি হাঁটছেন ‌ । গলির রাস্তার কারনে গাড়ি মেন রাস্তায় রেখে এসেছেন। নূর মোহাম্মদ কিছু টা সূত্র পেলেন। তার মধ্যে মূল যেটা হলো,উনি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের সাথে জরিয়ে ছিলেন যেখানে তাকে অনেক টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল। উনি যেই ক্লাবে চাকরি করতেন সেখানে সে রাতে যাবে। এখন খু*ন হওয়া জায়গায় টাই যেতে হবে। এবং গতকাল খু*ন হওয়া লোকদের বাসায় ও যেতে হবে।

মরিয়মের জ্বর কিছু টা কমেছে। কিন্তু এখানো শরীরের তাপমাত্রা বেশ রয়েছে। রাত প্রায় সাড়ে ৯টা বেজেছে। রহিমা খালা কে দিয়ে মিহি কে খাবার খাইয়ে দিয়েছেন। মিহি কে আজ জোর করে তারাতারি ঘুমিয়ে দিয়েছেন সে। আধশোয়া হয়ে মিহির পাশে শুয়ে আছে মরিয়ম। চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। মেহমেত কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে শরীর আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মেহমেত কাল থেকে বাসায় ফিরেনি। মরিয়ম এক বার ফোন ও দেয়নি। কিছু টা রাগে আবার কিছু টা অভিযোগে।

হঠাৎ রহিমা খালা এসে বললেন মিলন চাচা এসেছে। তাকে কিছু জরুরি কথা বলতে চায়। অসুস্থ হওয়ার কারনে রহিমা কে নিজের কাছে রেখেছেন আজ। মিলন চাচা হলো তাদের পুরনো ড্রাইভার। অনেক সৎ এক জন মানুষ।

তরিঘরি করে ড্রয়িং রুমে আসলেন। মিলন চাচা মরিয়ম কে আসতে দেখে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। মরিয়ম মুচকি হেসে চাচাকে বসতে বললেন। কিন্তু ঠাঁই তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তখন মরিয়ম জোর গলায় বললেন।

মিলন চাচা আমি কিন্তু আপনাকে বসতে বলেছি। মিলনের খুব অস্বস্তি লাগে মরিয়মের মুখে এই আপনি ডাকটি। মালকিন মানুষ কেন তার মত কাজের লোক কে আপনি বলে সম্বোধন কেন করবে?? অগত্যা মিলন চাচা মরিয়মের সামনে থাকা সোফায় গুটিসুটি হয়ে বসলেন। মরিয়ম তখন মুচকি হেসে বললেন কি জরুরী কথা চাচা বলেন।যেই কাজ দিয়েছি তা কি সম্পূর্ণ হয়েছে???

তখন তারাতারি নিজের ফোন বের করে একটি ভিডিও প্লে করলো। ভিডিও টি দেখে মরিয়মের চোখ জ্বলে ওঠে। মাথায় আগুন ধরে গেল। সবাই পেজটা ফলো করে রাখুন। কেমন লাগতাছে কমেন্ট করে জানাবেন।

চলবে _____?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here