#মিশে_আছো_আমার_অস্তিত্বে❤️
#মেঘ পরী🍀🍀
#Part-৮+৯💞
আকাশ হন্তদন্ত হয়ে তার মাকে কোলে নিয়ে নামছে,,চোখে মুখে কোনো কিছু হারানোর ভয়।তৃষা মাকে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়,,আকাশকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই আকাশ তার মাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।তৃষা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো কি হচ্ছে কিছুই যেন তার মাথায় আসছে না।বাইরে বেরিয়ে দেখলো আকাশ চলে গিয়েছে।পরে সার্ভেন্টদের কাছে জানতে পারলো বিকালে তৃষা বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে মায়ের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রথমে বাড়ির কাজের লোকেরা সকাল আকাশকে ফোন করে কিন্তু আকাশের মিটিং থাকাই ফোন রিসিভ করতে পারে না,, তারা তৃষাকে ও ফোন করে কিন্তু অনেকবার রিং বেজে যাওয়ার পরেও তৃষা যখন রিসিভ করেনা,, তখন বাধ্য হয়ে আকাশের ম্যানেজার কে ফোন করে জানাই,, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ বাড়ি ফিরে তার মাকে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়।
কথাগুলো শোনার পর তৃষা সঙ্গে সঙ্গে নিজের ফোন চেক করে দেখলো ২৪+ মিসড্ কল তার মধ্যে আকাশের ও অনেক গুলো মিসড্ কল। ফোন সাইলেন্ট হওয়ায় বুঝতে পারেনি।এতগুলো কল দেখে তৃষার নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করলো।সার্ভেন্টদের কাছ থেকে হসপিটালের নাম জেনে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
সেখানে গিয়ে দেখল আকাশ ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,মুখ অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে।আকাশকে দেখে তৃষার খুব মায়া হলো।আস্তে করে আকাশের কাছে গিয়ে তার পিঠে হাত রাখলো। আচমকা পিঠে কারোর স্পর্শ পেয়ে আকাশ পিছনে ফিরে তৃষা কে দেখতে পেল। মুহূর্তের মধ্যে আকাশের শুকিয়ে থাকা মুখ ভয়াবহ হয়ে গেল।আকাশের রক্তিম চোখ দেখে তৃষার বুক ছ্যাত করে উঠলো,,শুকনো ঢোক গেলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকাশ হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো-;
-:কোথায় ছিলে তুমি??
আকাশের কথার কী উত্তর দেবে তৃষা ভেবে পাচ্ছে না।আকাশ আবার বলে উঠলো-;
-:কোথায় ছিলে??(রেগে চিল্লিয়ে)
তৃষা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো-;
-:ফে…ফ্রেন্ডের সা..সাথে দ..দেখা করতে গিয়েছিলাম।
-:তুমি জানো না আমার মা অসুস্থ??তোমাকে কিসের জন্য আমি বিয়ে করেছি তা কী তুমি ভুলে গিয়েছো??
তারপর তৃষাকে বাহু দুটো শক্ত করে ধরে বলে উঠলো-;
-:তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমি তোমাকে কতবার ফোন করেছি??আরে যদি আমি সঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে কী হতো??বলো(চিৎকার করে)তোমার বাবা মরতে মরতে বেঁচেছে শুধুমাত্র আমার দয়ায় আর তুমি!!তুমি আমার মাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো।কেন??
আকাশের এরকম ভয়বাহ রুপ আর চিৎকার করে কথা বলায় তৃষা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।ভয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদতে শুরু করে। আকাশ এতে আরো রেগে যায়-;
-:এই শোনো তোমার এই ড্রামটিক কান্না বন্ধ করো।আমার মায়ের যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোমায় ছারবো না।
-:আ..আ..আ..মি স..ত..ত্যি..(ফুঁপিয়ে)
-:চুপ একদম চুপ।সড়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে।
হঠাৎ পিছন থেকে একজন বলে উঠলো-;
-:আকাশ কী হয়েছে আন্টির??
আকাশ পিছনে তাকিয়ে দেখলো রিনা এসেছে,,আকাশ আর কিছু না ভেবে রিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এতক্ষন সে একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল,,রিনাকে দেখে তার মনে হলো সে সেই আশ্রয়টা পেয়ে গিয়েছে। সত্যিই কি তাই??
রিনাকে আকাশের বুকে দেখে তৃষার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।হোক না এটা শুধুমাত্র একটা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ তবুও সে তো আকাশের ই বিবাহিত স্ত্রি।কী করে সহ্য করবে নিজের স্বামীর বুকে অন্য একজন নারীকে??
-:কী হয়েছে আকাশ??
-:মা..মা হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে(কাঁপা কাঁপা গলায়)
-: চিন্তা করো না আন্টির কিছু হবে না।
এই বলে আকাশকে ধরে সামনের একটা চেয়ারে বসালো আর তৃষার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিল।এই হাসি দিয়ে হয়তো সে তৃষাকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে তার স্বামি খুব তাড়াতাড়ি অন্য কারোর হতে চলেছে।দেখা যাক কী হয়..সবই নিয়তির উপর নির্ভর।।
.
.
.
(বাকিটা নেক্সট পর্বে)
.
.
.
“”ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আজ আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে মনের মতোন রেজাল্ট হয়নি,,তাই আজ মনটা খারাপ।মাত্র ৮২% মার্কস পেয়েছি😔😔😔””
#Part-৯💞
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে আকাশকে
তার কেবিনে যেতে বলল,,আকাশ সেখানে গিয়ে যা জানতে পারলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।ডাক্তার তাকে জানালো যে আকাশের মায়ের কাছে আর বেশি সময় নেই,,পরিবারের সদস্যরা চাইলে তার সাথে এখন দেখা করে নিতে পারে,,খুব বেশী হলেও আর মাত্র দুই ঘণ্টা সময় আছে আকাশের মায়ের হাতে।আকাশের মায়ের লিভার ক্যান্সার ছিল তাও আবার থার্ড স্টেজের তাই লিভার নষ্ট হয়ে জার্মগুলো পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে।
ডাক্তারের কাছ থেকে এমন জবাব পেয়ে আকাশ পুরোপুরি ভেঙ্গে পরেছে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বাইরে বেরিয়ে এলো।আকাশকে বের হতে দেখে তৃষা আকাশের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;
-:ডাক্তার কী বলল??(চিন্তিত হয়ে)
আকাশ চুপ করে আছে কোনো কিছু বলার ক্ষমতা নেই এখন তার,, চারিদিকে একবার তাকিয়ে ধীর গলায় বলে উঠলো-;
-:রিনা কই??
-:আপু তো…মানে উনি তো চলে গেলেন একটু আগে।
-:চলে গেল মানে!!(কিছুটা অবাক হয়ে)
-:মানে ওনার একটা ফোন কল আসায় উনি বেরিয়ে গেলেন।
আকাশ আর কিছু না বলে নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিনার নম্বরে ডায়েল অরল কিন্তু অপর পাশ থেকে একজন মহিলা কন্ঠী বলে উঠলেন-;
-:আপনি যেই নম্বরে ডায়েল করেছেন সেটি এখন সুইচ অফ আছে।
আকাশের আর বুঝতে বাকি রইল না রিনা তার ফোনটা সুইচ অফ করে রেখেছে।ফোনটা পকেটে রেখে পাশে থাকা বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো।আকাশকে এইভাবে বসে পড়তে দেখে তৃষা গিয়ে আকাশের পাশে বসল,,তারপর ধির গলায় জিজ্ঞেস করল-;
-:ডাক্তার কি বলল??মা সুস্থ হয়ে যাবে তো??
আকাশ আবারও চুপ হয়ে আছে,,আর তৃষা অধির আগ্রহে একটা নিরাপদ উত্তরের আশায় চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে তার মুখের দিকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আকাশ বলে উঠলো-;
-:ম… মায়ের ক..কাছে আর মাত্র দুই ঘণ্টা সময় আছে।
এতটুকু কথা বলতে আকাশের গলা বার বার কেঁপে উঠছিল।আকাশের বলা কথাটা তৃষা যেন কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা,,তার সদ্য শুষ্কতা পাওয়া আঁখি যুগল মূহুর্তের মধ্যেই আবার আদ্র হয়ে উঠলো,,ভেজা গলায় বলে উঠলো-;
-: কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব??মায়ের এতো বাড়াবাড়ি হয়ে গেল কীভাবে??মা তো একদম সুস্থ ছিল,,অসুস্থতার কোনো লক্ষন আমি দেখি নি একয়দিন।
-:ডাক্তার বলল মায়ের লিভার নষ্ট হয়ে গিয়েছে আর শরীরের মধ্যে ক্যান্সারের জার্ম গুলো ছড়িয়ে পড়েছে,,মা হয়তো আমাদের বুঝতে দেয় নি..
আকাশ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই একজন নার্স এসে বলল-;
-:পেশেন্টের কনডিশান খুব খারাপ,,আপনার কেউ চাইলে তার সাথে দেখা করতে পারেন কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
এই বলে নার্স চলে গেল,,নার্স চলে যাওয়ার পরই আকাশ হন্তদন্ত হয়ে তার মায়ের কেবিনের দিকে হাঁটা ধরলো,,তৃষা ও আকাশের পিছন পিছন হাঁটা দিল। কেবিন গিয়ে দেখলো তার মা বেডে শুয়ে আছে দুহাতে ক্যানেল লাগানো,,মুখে অক্সিজেন মাস্ক।মায়ের এমন রূপ দেখে আকাশ আর কান্না আটকাতে পারল না হু হু করে কেঁদে উঠলো কিন্তু মাকে যে জড়িয়ে ধরে শেষ বারের মতোন কাঁদবে তারও উপায় নেই,,মা যে তার আর আগের মতোন নেই যে যখন তখন হুটহাট করেই মাকে জড়িয়ে ধরবে,,তার মা যে আজ মৃত্যু পথযাত্রী।তার মায়ের প্রায় সারা শরীরে ক্যানেল আর মুখে মাস্ক লাগানো,,এইসব দেখে আকাশ বুঝতেই পারছে না যে সে তার মাকে কী উপায়ে অন্তত একবার হলেও জরীয়ে ধরবে।কিন্তু আর উপায় না পেয়ে খুব সাবধানে মায়ের ডানহাতের উপর হালকা করে হাত ছুঁইয়ে কাঁদতে লাগলো।
তৃষাও তার শাশুড়ি মায়ের এমন অবস্থা দেখতে পারছে না,,একপাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে।কমদিনের পরিচয় হলেও তিনি যেন তৃষার খুব কাছের একজন মানুষ হয়ে গিয়েছিল।আকাশের মা আলতো করে চোখ খুলে তাকালো তারপর তার কাঁপা হাতে আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো-;
-:আমার মনে হয় তোদের ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে রে।
-:মা এইভাবে প্লিজ বলো না মা,, তোমার কিচ্ছু হবে না আমি তোমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবো সেখানে তোমার ভালো চিকিৎসা করাব এটা ভালো হসপিটাল নয় এ আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।(কান্না করতে করতে)
-:চুপ কর বাবা মিথ্যা আশা দিস না আমি জানি আমার হাতে আর বেশি সময় নেই,,তুই আমার একটা কথা রাখবি??
-:মা ও মা এইভাবে বলো না প্লিজ তুমি আমার ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না।
-:উফ তুই আমার কথা শোন চুপ করে,,আমি চলে গেলে একদম ভেঙে পড়বি না,,তোকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে নিজের বাবার কোম্পানি টাকে আরও বড়ো করতে হবে।তুই যদি ভেঙে পড়িস তাহলে তো আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো না রে।
এতটুকু বলেই তিনি কাশতে লাগলেন,, আকাশ তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলো-;
-:মা..তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে না,,তুমি দাঁড়াও আমি ডাক্তারকে এক্ষুনি ডেকে আনছি।তৃষা তুমি মায়ের পাশে একটু বসো আমি এক্ষুনি আসছি।
এই বলে আকাশ বেড়িয়ে গেল,, আকাশের মা অসুস্থ গলায় বলে উঠলো-;
-:তৃষা
তৃষা পাশ থেকে বলে উঠলো-;
-:এ..এই তো মা আ..আমি এখানে।(কান্না করে)
-:আয় আমার পাশে এসে বস।
তারপর তৃষা র হাত নিজের হাতের মুঠোয় এনে বলে উঠলো-;
-:কথা দে তুই আমার এই পাগল ছেলেটাকে সামলাবি ওকে ছেড়ে কোনোদিন ও কোথাও যাবি না।আমি চলে গেলে ও যে বড্ড ভেঙে পড়বে ওকে তুই সিমলাবি কথা দে আমায়।
-:মা তোমার কিছু হবে..
আর কিছু না বলতে দিয়ে বলে উঠলো-;
-:দেখ তৃষা আমি বাচ্চা নয় আমি সব জানি তাই বলছি কথা দে আমায়।
তৃষা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের হাত আলতো করে চেপে বলে উঠলো-;
-:কথা দিচ্ছি মা ওনাকে ছেড়ে আমি কোনোদিন ও যাবো না।
-:তুই আমাকে আজ অনেক শান্তি দিলি রে মা।ভালো থাকিস তোরা মন থেকে এই দোয়া করলাম।
একটু পর আকাশ এলো সঙ্গে ডাক্তার নিয়ে কিন্তু ততক্ষণে সব কিছু শেষ….
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]
.
.
.
“”ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আপনারা আকাশ আর তৃষার মিল চান না কি বিচ্ছেদ??””