মিসেস চৌধুরী পর্ব ৬+৭

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_06
#Writer_NOVA

আদিয়াত ও আকশি আজ ছদ্মবেশে অফিসে এসেছে।ফিহা আজ কোম্পানির সব ক্লাইন্টের সাথে মিটিং রেখেছে।ওরা দুই বন্ধু ক্লাইন্ট সেজেই এসেছে।
দুজন এমনভাবে সেজে এসেছে যে কেউ ওদের দেখলে চিনবে না।আলগা দাড়ি,চুল,তিল লাগিয়ে ভিন্ন ধরনের বেশ ধরেছে দুজন।আবদুল আজিজ সাহেব ওদের দুজনকে ফিহার কেবিনে ঢুকলো। ফিহা অনিয়াকে চামচ দিয়ে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছিলো।সারা মুখে অনিয়ার খিচুড়িতে মাখামাখি। তাতে যেনো অনিকে আরো বেশি কিউট লাগছে।

আবদুলঃ ছোট বউমা আসবো?
ফিহাঃ কতবার বলেছি চাচা,আপনি আমার থেকে অনুমতি নিবেন না।নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।

ফিহা অনির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।আকশি ও আদিয়াত এমনভাবে এসেছে যে আবদুল সাহেবেও চিনে নি।আর এদিকে আবদুল সাহেবের মুখে ছোট বউমা ডাক শুনে আকশির মাথা ঘুরে গেছে। ফিহা অন্য দিকে ঘুরে থাকায় এখনো দেখি নি।আবদুল সাহেব আকশির কানের কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বললো।

আবদুলঃ আমাদের ছোট বউমা খুব ভালো। আকশি বাবা নিজের জন্য একটা পারফেক্ট মেয়ে খুঁজে নিয়েছে।বউমার সবদিকে নিখুঁত নজর। দেখেন না স্বামী নেই তারপরও সবকিছু নিজে একা সামলে নিচ্ছে। কোন অভিযোগ করে না।আমাদের দিদিভাই তো বউমার জীবন।
ফিহাঃ চাচা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।

তারা তিনজন ভেতরে ঢুকলো। টেবলেট টেবিলের সামনে চুপ করে বসে ছিলো।হঠাৎ একটা পরিচিত ঘ্রাণ পেয়ে আকশির সামনে এসে ঘুরঘুর করতে লাগলো।
আবদুলঃ ছোট বউমা তোমার সাথে পরিচয় করতে নিয়ে এলাম এদের।
আবদুল সাহেবের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে ঘুরলো ফিহা।সামনে আকশি ও আদিয়াতকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবদুল সাহেবের দিকে তাকালো।
আকশিকে দেখিয়ে আবদুল চাচা বললো।
আবদুলঃ উনি হলেন মি.সুমন পাটোয়ারি।
ফিহাঃ পাটোয়ারি আবার কি রকম বংশ পরিচয়?
(মনে মনে)
এবার আদিয়াতকে দেখিয়ে বললো
আবদুলঃ উনি মি.সুমন পাটোয়ারীর ভাই সোহেল পাটোয়ারী।

আকশি ও আদিয়াত হ্যালো বলে হাত বাড়িয়ে দিলো ফিহা সুন্দর করে একটা সালাম দিলো।কিন্তু হাত মিলালো না।সেটা দেখে আকশি কিছু সময় ফিহার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
আকশিঃ না,মেয়েটাকে দেখে তো ফ্রড মনে হচ্ছে না।ব্যবহারেও অমায়িকতার ছোঁয়া রয়েছে। আমার ভাতিজীর তো বেশ খেয়াল রাখে মনে হচ্ছে। কিন্তু টেবলেটের জন্য আবার বিপত্তি না বেঁধে যায়।সে যে আমায় চিনতে পেরেছে তা আমি বুঝে গেছি। আমার সামনে যদি টেবলেট এরকম ঘুরে ঘুরে ঘনঘন লেজ নাড়ে তাহলে আমি ধরা পরে যাবো।আল্লাহ রাস্তা দেখাও।আমি এখন ধরা পরতে চাই না। এখন ধরা পরলে আমি সব রহস্যের সমাধান করতে পারবো না। (মনে মনে)
ফিহাঃ বসুন, মি.পাটোয়ারী।
আকশিঃ হ্যাঁ,ম্যাডাম তাতো বসতেই এসেছি।আমাদের এখনো কত কাজ বাকি।(চেয়ারে বসে)

আনমনে কথাটা বলতেই আকশিকে আদিয়াত কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারলো।

ফিহাঃ আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বললেন?
আকশিঃ না মানে আমি বললাম যে এখন কি বসে থাকলে চলবে।মিটিংটা জলদী সেরে নিলে ভালো হতো।আমাদের অফিসেও তো কাজ আছে।
ফিহাঃ ওহ বুঝতে পেরেছি। আমার বাচ্চাকে খাওয়ানো শেষ হলেই আমি মিটিং শুরু করবো।এক মিনিট (একটু ভেবে)আমি তো ১১ টার সময় মিটিং শুরু করবো বলেছি।এখন বাজে ৯টা ৪৫। আপনারা এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন যে??

অনির মুখে খিচুড়ি ভর্তি চামচ দিতে দিতে কথাটা বললো ফিহা।আকশি আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে মুখটা শুকনো করে ফেললো।যার মানে হলো ভাই এবার তুই সামলা।আমি পারবো না।

আদিয়াতঃ আসলে ঢাকার রাস্তায় তো ভীষণ জ্যাম থাকে।আমরা ভাবলাম জলদী রওনা দেই। যদি জ্যামে পরি তাহলে তো মিটিং-য়ে এটেন্ড করতে পারবো না।তাই জলদী চলে এসেছি।
ফিহাঃ ওহ্ ভালো।
আকশিঃ এই কুকুর কি আপনার?কখন থেকে আমার পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করছে।আমার অবশ্য এসব কুকুর ছানা পছন্দ না।

আকশির কথা শুনে আদিয়াত ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। আকশি চোখের ইশারায় বুঝালো, এই কথাটা না বললে ওকে সন্দেহ করে ফেলতো।

আবদুলঃ কুকুরটা ছোট বউমার নয়।আমাদের আকশি বাবার। আকশি নেই বলে এখন সবসময় ছোট বউমার সাথেই থাকে।
আকশিঃ আকশি কে?(না জানার ভান করে)
আবদুলঃ ছোট বউমার স্বামীর নাম আকশি।

মাত্রই বেচারা আকশি টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে মুখে দিয়েছিলো।আবদুল সাহবের কথা শুনে বিষম খেলো।কথাটা হজম করতে না পেরে পেচকির মতো সব পানি আদিয়াতের শরীরে ছিটিয়ে দিলো।সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদিয়াতঃ কি করলি এটা তুই?
আকশিঃ সরি ভাই, খেয়াল করিনি।

ফিহা টেবিলে থাকা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে আদিয়াতের দিকে বাড়িয়ে দিলো।আদিয়াত হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে কোর্ট মুছতে লাগলো।টেবলেট এখনো ঘন ঘন লেজ নাড়িয়ে তার মালিকের আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু আকশি মোটেও সেদিকে তাকাচ্ছে না।টেবলেটের দিকে তাকালেই ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবে।সাথে ওকে আদর করতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠবে।ফিহা টেবলেটের দিকে একবার তাকিয়ে আকশির দিকে তাকালো।

আকশিঃ মেয়েটা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আমায় চিনে ফেললো নাকি?
ফিহাঃ আপনাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথাও যেনো দেখেছি।(ভাবার মতো করে)
আদিয়াতঃ কোথায় দেখবেন আমাদের?আমরাতো অনেক বছর পর দেশে ফিরলাম।তাছাড়া এক মানুষের চেহারার সাথে অন্য মানুষের চেহারা অনেক সময় মিলে যায়।আপনি হয়তো তেমনি ভাবছেন।
ফিহাঃ আপনি ঠিক বলেছেন।হয়তো অন্য কাউকে দেখেছি।(টেবলেটের দিকে তাকিয়ে) টেবলেট এদিকে চলে আয়।উনাদের বিরক্ত করছিস কেন?অনিকে দেখে রাখতে হবে তো।

কিন্তু টেবলেটের কানে কথাটা ঢুকলো না।সে আকশির পায়ের কাছে ঘাপটি মেরে বসে রইলো।সে এখন কিছুতেই এখান থেকে উঠবে না।এতদিন পর মালিককে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়েছিলো।কিন্তু আকশি এখনো ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেইনি বলে মন খারাপ করে চুপটি মেরে বসে আছে। চোখ দুটো ছলছল। মনটাও তার ভীষণ খারাপ। টেবলেটকে এভাবে নিতে পারছে না আকশি।ভীষণ অস্থির লাগছে তার।আবদুল আজিজ সাহেব বললেন।

আবদুলঃ মি.পাটোয়ারী আপনারা বসুন।আমি মিটিংয়ের তৈরী করি।আমার কত কাজ বাকি আছে। অনেক ফাইল কমপ্লিট করতে হবে।

আবদুল আজিজ সাহেব চলে গেলেন।তিনি চলে যেতেই আকশি ইচ্ছে করে টেবিলে থাকা পেপারওয়েট
ফেলে দিলো।সেটা তোলার বাহানায় টেবলেটর মাথা নেড়ে দিলো।ওমনি টেবলেট খুশি হয়ে কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
ফিহাঃ টেবলেট হচ্ছেটা কি?তুই তো কখনও এমন করিস না।উনাদের সাথে এমন করছিস কেন?

টেবলেট খুশি মনে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতদিন পর মালিকের হাতের ছোঁয়া পেয়ে সে বেশ খুশি।
ফিহাঃ আপনারা কিছু মনে করবেন না প্লিজ। টেবলেট কারো সাথে এমন করে না।ও খুব ভালো।ও তো সাধারণত কারো সাথে মিশে না।কিন্তু মি.সুমন আপনার সাথে সাথে কেন ঘুরছে তা আমি বুঝতে পারছি না।আপনার পায়ের নিচে গিয়ে কেন বসে আছে সেটাও আমার জানা নেই।
আকশিঃ আপনি জানবেনও না মিস।(বিরবির করে)
ফিহাঃ কিছু বললেন মি.সুমন?
আকশিঃ না না কিছু বলি নি।আপনার কুকুরটা খুব ভালো তাই বললাম।

ফিহা অনিয়াকে খিচুড়ি খাওয়ানো শেষ করে ফিটারে করে পানি খাইয়ে দিলো।মুখটা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিলো।তারপর টিস্যু দিয়ে মুখের পানি মুছিয়ে দিলো। নিজের হাত ধুতে ওয়াস রুমে চলে গেল।যাওয়ার আগে ওদের দুজনকে বললো।

ফিহাঃ আমার মেয়েকে দুই মিনিটের জন্য একটু দেখবেন প্লিজ। আমি হাত ধুয়ে আসছি।আমার বেশি সময় লাগবে না।
আদিয়াতঃ আপনি যেতে পারেন।
ফিহাঃ ধন্যবাদ।

ফিহা ওয়াসরুমে ঢুকতেই আকশি জলদী করে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো। যদিও এর আগে কখনও নেয়নি।অনিয়ার ছবি দেখেছে।দুই বছর লন্ডনে থেকে গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে তারপর ফিরলো।কিন্তু বাড়িতে যাওয়া হলো না।তার আগেই ঘটে গেল অঘটন।ভাই-ভাবীর মৃত্যুতে আসতে পারেনি।এর থেকে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে?অনিয়াকে কোলে তুলতেই মনটা হালকা হলো আকশির।অনিয়া তো ওর ভাই-ভাবীর শেষ স্মৃতি।এখন সব ঠিক হয়ে গেলে নিজের বাবা ও ভাতিজী কে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে।অনিয়াও মনে হয় বুঝতে পেরেছে এই মানুষটার সাথে তার রক্তের সম্পর্ক।তাই চুপটি করে আকশির বুকের সাথে মিশে আছে।নিজের মাথাটা হেলিয়ে রেখেছে।টেবলেট সামনে এসে খুশিতে লেজ নারতে লাগলো।আকশি এক হাতে অনিয়াকে ধরে টেবলেটের মাথায় অন্য হাত বুলাতে বুলাতে বললো।

আকশিঃ শোন টেবলেট আমি এখানে ছদ্মবেশে এসেছি।এখন যদি তোকে যখন তখন সবার সামনে আদর করি তাহলে তো ধরা পরে যাবো।আমার সামনে তুই একদম মন খারাপ করে থাকবি না।তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার কি ভালো লাগে বল।তোর চোখের পানি আমি একদম সহ্য করতে পারি না।সব ঠিক হলে আমি তোকে সবসময় আমার কাছে রাখবো।এখন আপাতত মেয়েটার সাথে থাক।

টেবলেট সব কথা বুঝতে পেরে অনির দোলনার সামনে বসে মুখ গুঁজে রইলো।টেবলেট যে আকশির ওপর রাগ করেছে সেটা আকশি ঢের বুঝতে পারলো।

আদিয়াতঃ তুই এখানে থাক আমি বাইরের দিকটা দেখছি।সাবধানে কথা বলিস।
আকশিঃ ওকে তুই যা।মেয়েটার সব ইনফরমেশন নিতে থাক।কোন কিছু যাতে বাদ না পরে।
আদিয়াতঃ অফিসের কেউ মনে হয় না ওর ব্যাপারে জানে।কাউকে তো কিছু জানায়নি।
আকশিঃ তারপরও তুই খোঁজ লাগা।যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়।
আদিয়াতঃ তার চেষ্টাই করতে হবে।
আকশিঃ আর শোন সাবধানে কাজ করিস।
আদিয়াতঃ আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না।আমি সবধানেই থাকি।তুই অসাবধানে মুখ ফসকে কথা বলে ফেলিস।

আদিয়াত চলে যেতেই আকশি টেবলেটের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।ওর মাথায় আলতো করে হাত রাখলো।অনি ওর কোলে খুশিমনে বুড়ো আঙ্গুল চুষছে।যার কারণে চুক চুক শব্দ ভেসে আসছে আকশির কানে।

আকশিঃ টেবলেট প্লিজ আমার অবস্থা বোঝার চেষ্টা কর।আমি এখন পরিস্থিতির শিকার।আমি চাইলেও তোকে আমার কাছে রাখতে পারবো না।তোকে কতবার বলবো তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।
ফিহাঃ কে মন খারাপ করে থাকলে আপনার ভালো লাগে না?(কপাল কুঁচকে)

আকশির বুকটা ধুক করে উঠলো।ফিহা ওদের সব কথা শুনে নেয়নি তো।এবার কি করবে সে?যদি সব কথা শুনে ফেলে।তাহলে তো ধরা পরে যাবে।আর সবকিছুর পেছনের মাস্টার মাইন্ডকে ধরতে পারবে না।আকশির নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে। কিছু সময় এদিক সেদিক তাকিয়ে বুদ্ধি পেয়ে গেলো।পকেট থেকে মোবাইল বের করে হাতে নিলো।

ফিহাঃ কি ব্যাপার মি.পাটোয়ারী? বললেন না কে মন খারাপ থাকলে আপনার ভালো লাগে না?
আকশিঃ আমি ফোনে কথা বলছিলাম।আমার এক ফ্রেন্ড। ও মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না।
ফিহাঃ ওহ্। আপনি ঐ খানে কি করছেন?
আকশিঃ অনিয়া কান্না করছিলো তাই ওকে কোলে তুলে এদিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম।(আমতা আমতা করে)

আকশি বড় করে হাফ ছারলো। ফিহা কিছু শোনে নি।এমনকি সে যে টেবলেটের সাথে কথা বলছিলো সেটাও বুঝতে পারে নি ফিহা।আকশি পেছনে ঘুরে থাকায় ফিহা টেবলেটকে খেয়াল করলো না।ফিহা যে খুব চতুর ও সব দিকে নজর রাখে সেটা আকশি বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকে আরো সাবধানে থাকার তাগিদ দিলো।আকশি খেয়াল করলো অনিয়া ও ফিহা আজ এক রংয়ের ড্রেস পড়ে এসেছে।দুজনকে বেশ মানিয়েছে। ফিহাকে তার ভালোই লেগেছে।

আকশিঃ মেয়েটার চেহারাটা বেশ মায়াবী।যতটুকু বুঝলাম অনিয়া ও টেবলেটকে সে অনেক ভালবাসে।আমারতো তাকে ভালোই লেগেছে।চোখ দুটো একটু বেশিই মায়াবী।এক কথায় সব মিলিয়ে অপূর্ব।ধ্যাত,আমি এসব কি ভাবছি? পাগল হয়ে গেলাম নাকি।(মনে মনে)

ফিহা আকশির চোখের সামনে তুরি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙ্গে। এতখন সে এক ধ্যানে ফিহাকে দেখছিলো।সেটা মনে করে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।

ফিহাঃ আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছেন মিস্টার?
আকশিঃ ক ক কই কিছু না তো।
ফিহাঃ তোলাচ্ছেন কেন?আপনারা এখানে কেন এসেছেন বলেন তো?আপনাদের বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।(চোখ, মুখ কুঁচকে)
আকশিঃ এই রে বুঝে ফেললো নাকি।এবার কি হবে?আদি থাকলে ম্যানেজ করে নিতো।এবার আমি কি করবো?মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।(মনে মনে)

ফিহা আকাশির মুখের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে উঠলো। তাতে অবাক হয়ে আকশি ওর দিকে তাকালো।না,মেয়েটা হাসলে আরো বেশি ভালো লাগে।আজ মনে হয় আকশি ফিহার প্রতি পাগল হয়ে যাবে।ফিহার সবকিছু তার ভালো লাগছে।

ফিহাঃ আমি মজা করছিলাম।আর আপনি সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছেন।আপনারা তো এখানে মিটিংয়ের জন্য এসেছেন। সেটাও ভূলে গেছেন নাকি।
আকশিঃ ভূলে নি মনেই আছে।(হাসি দিয়ে)
ফিহাঃ আমার মেয়ে কে আমার কোলে দিন।নাকি ওকে আপনি রেখে দিবেন।
আকশিঃ রাখতে পারলে তো রেখেই দিতাম।আপনাকে কখনও দিতাম না।
ফিহাঃ আমিও আমার মেয়ে কাউকে দিচ্ছি না বাপু।তাই ওই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
আকশিঃ আচ্ছা ঝেড়ে ফেললাম।

আকশি অনিয়াকে উল্টো করে ফিহার দিকে ঘুরিয়ে কথা বলছিলো।ফিহা টুপ করে অনির থুতনিতে আদর করে একটা চুমু খেলো।এক হাতে আলতো করে অনির গাল ধরে রেখেছে।আকশিও এই সুযোগে অনির মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।পুরো ঘটনাটা ক্যামেরা বন্দী করতে ভুললো না আদিয়াত।এতো সুন্দর একটা মোমেন্টে পিকচারটা বেশ উঠলো।রুমে ঢোকার সময় হাতে মোবাইল ছিলো।তাই দেরী না করে হুট করে ছবিটা তুলে নিলো।ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চা, বাবা-মা নিয়ে হ্যাপি ফ্যামেলী।তিনজনকে একসাথে বেশ মানিয়েছে।
#মিসেস_চৌধুরী
#Part_07
#Writer_NOVA

যথা সময়ে মিটিংয়ের জন্য সবাই হাজির হলো।ফিহা অনিয়াকে ঘুম পারিয়ে মিটিং রুমে চলে এলো।আপতত এখন অনিয়া টেবলেটের তত্ত্বাবধায়নে থাকবে।আকশি ও আদিয়াত ছারা আরো অনেক ক্লায়েন্ট এসেছে।ফিহা রুমে ঢুকতেই সবাই যার যার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওকে সম্মান জানালো।যাতে ফিহা বেশ অবাক হলো।এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবদুল সাহেবের দিকে তাকালো।আবদুল সাহেব ফিহার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো।

আবদুলঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই ছোট বউমা।এখানে যারা যারা এসেছে সবাই আমাদের কোম্পানির অধীনে আছে।তোমার একটা সিগনেচার ছারা তাদের এক পয়সার পণ্যও বিক্রি হবে না।তুমি যদি বিল পাস না করো তাহলো কোন কোম্পানি তার পণ্য বাজারে ছারতে পারবে না।আমদানি, রপ্তানি, পুনঃরপ্তানি তো অনেক দূরেই থাক।

ফিহা ব্যাবসায় বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করেছে।তাই এসব সে ভালো করেই বুঝে।যাতে করে আবদুল সাহেবের কথার মধ্যে পুরো ব্যাপারটা আঁচ করে ফেলেছে। মুখে একটা গম্ভীরতা নিয়ে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসলো ফিহা।পুরো রুমটা আবছা নীল আলোতে ঘেরা।নীল আলোটা অবশ্য মাল্টিমিডিয়ার।বিশাল বড় রাউন্ড টেবিল।২০-২৫ জন ক্লায়েন্ট হবে।সবার মাঝে নিজেকে কেমন জানি লাগছে ফিহার।ভেতরে ভেতরে বেশ ভয় পাচ্ছে। তবে মুখে একটা পাঁজি পাঁজি ভাব রেখে দিয়েছে।ওদের কোম্পানিটা আমদানি,রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি নিয়ে কাজ করে।

আবদুলঃ আসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই ভালো আছেন।ভালো থাকারি কথা।আজকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে মিটিং রেখেছি।তবে প্রথমে আমি আমাদের কোম্পানির নিউ ওনারের সাথে পরিচয় করে দিতে চাই। যদিও এর আগে আপনারা তাকে দেখেন নি।

আবদুল সাহেবের কথা শুনে আকশির গলা শুকিয়ে আসছে।কারণ এখন আবারো ওর নাম নিবে।আর মেয়েটাকে ইঙ্গিত দিয়ে বলবে ঐটা ওর বউ।বেশ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে হাতের সামনে থাকা পানির বোতল খুলে মুখে দিলো।

আবদুলঃ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমাদের কোম্পানির সাবেক ওনার আনিস চৌধুরী এখন অসুস্থ। তার বড় ছেলে ও বউ কার এক্সিডেন্টে মৃত্যু বরণ করেছে।ছোট ছেলেও তিনমাস ধরে নিখোঁজ। তাই আনিস চৌধুরী বাধ্য হয়ে তার ছোট ছেলের বউকে এই কোম্পানির ওনার করেছে।সকল বিষয়ের দায়িত্ব ছোট বউমার হাতে তুলে দিয়েছে।এখন থেকে আমাদের পুরো কোম্পানি চালাবে আমাদের ছোট সাহেব আকশি চৌধুরীর বউ।আপনারা উনাকে মিসেস আকশি চৌধুরীও বলতে পারেন।

ব্যাস এই ভয় আকশি পাচ্ছিলো।পানি মুখে দেওয়ার আগেই বিষম খেলো।কাশতে কাশতে অবস্থা নাজেহাল। পানি মুখে দিয়ে ঘটালো আরেক বিপত্তি।
এবারো সে সেম কাজটা করলো।মুখের পানি আর গিলতে পারলো না।পিচকিরির মতো করে ছিটিয়ে আদিয়াতের পুরো শরীর ভিজিয়ে দিলো।ভাগ্যিস আদিয়াতের ওপর পরছে।অন্য কেউ হলে ওর খবর নিয়ে ফেলতো।আদিয়াত ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।

ফিহাঃ এনিথিং রং মি.পাটোয়ারী?
আদিয়াতঃ নো ম্যাম।ইট’স ওকে।
আকশিঃ দোস্ত সরি রে।আসলে বার বার আমার নামটা এমনভাবে নিচ্ছে যে আমি নিজেই কনফিউশানে পরে যাচ্ছি। আমার আসলে কথাটা হজম হচ্ছে না।বিয়ে না করেই বউ হয়ে গেছে আমার।

কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথাটা বলেও পার পেলো না আকশি।আদিয়াত চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

আদিয়াতঃ শালা,তোর খবর আছে। আরেকবার এমন করেছিস কিছু বলেনি।কিন্তু এবার ছারবো না।শুধু মিটিংটা শেষ হতে দে। তারপর দেখ কি করি?

আদিয়াতের কথার বিনিময়ে আকশি শুধু মুচকি হাসলো। কারণ সে ভালো করেই জানে আদিয়াত কিছুই বলবে না।আদিয়াত তো ওর সাথে এক মিনিটের জন্যও রাগ করে থাকতে পারে না।ফিসফিস করে দুজন চারিদিকে তাকাতেই দেখলো সবাই ওদের দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

আকশিঃ সরি এভরিওয়ান।যাস্ট মিসটেক।
আবদুলঃ আর ইউ ওকে মি.সুমন?
আকশিঃ ইয়াহ আই এম।
আদিয়াতঃ আপনারা প্লিজ মিটিং শুরু করুন।
আবদুলঃ আমি এখন আমাদের নতুন ওনারকে বলবো আমাদের উদ্দেশ্য কিছু বলতে।
ফিহাঃ চাচা,আমায় কেন ফাঁসিয়ে দিলেন।আমি কি বলবো?আমি তো কিছুই জানি না।কীভাবে শুরু করবো তাও বুঝতে পারছি না।ভীষণ ভয় করছে।মনে হচ্ছে কেউ বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটা করছে।

কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে কথাটা বললো ফিহা।আবদুল সাহেব ওকে আশ্বাস দিয়ে বললো।

আবদুলঃ তুমি চিন্তা করো না বউমা।আমিতো আছিই।এখন তোমাকে সবার উদ্দেশ্য কিছু কথা বলতে হবে।নয়তো তাদের মনঃক্ষুন্ন হয়ে যাবে।তুমি ভয় পেয়ো না।সাহস করে বলে দেও।
ফিহাঃ কি বলবো?
আবদুলঃ তোমার মনে যা চায় তাই বলো।
ফিহাঃ আমার ভীষণ ভয় করছে🥺।
আবদুলঃ ধূর বোকা মেয়ে। তোমার আবদুল চাচা থাকতে তোমার কোন ভয় আছে।

ফিহা ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালো। হৃৎপিন্ডটা ধুকপুক করছে।এত জোরে চলছে যে মনে হচ্ছে বের হয়ে যাবে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কানে থাকা ব্লুটুথ ওন করলো।এখন ফিহা কিভাবে বক্তব্য শুরু করবে তাও খুঁজে পাচ্ছে না।

ফিহাঃ আল্লাহ কোন মসিবতে ফেললে আমায়?আমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। একে তো বিয়ে না হয়ে কোন আকশি না ফাকশি তার বউ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়েছে। তার মধ্যে এক বাচ্চার মা হয়ে গেছি।এবার এই ব্যাঙের অফিস সামলাতে হবে।সে না হয় মেনে নিলাম।কিন্তু এখন মিটিং কিভাবে সামলাবো?ধূর ব্যাঙ🐸।আর ভালো লাগে না।কবে যে ব্যাটা বজ্জাত, হাতির নাতি,চামচিকার বয়ফ্রেন্ড,শয়তানের দুলাভাই আকশি ফিরবে। ঐ আকশি ফিরলে তার হাতে সব তুলে দিয়ে আমি ছুটি নিবো। এসব বাবা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।

মনে মনে কথাগুলো বলে ইনসেট ফেস করে সবার দিকে তাকালো।ফিহার মুখের রিয়েকশন দেখে আকশি ফিক করে হেসে উঠলো।তবে শব্দ না হওয়ায় কেউ ওর দিকে তাকালো না। আকশি আর ফিহা দুজনেই এখন ফাটা বাঁশের চিপায় আছে।বিয়ে না করেও বউ।ব্যাপারটা মনে হতে আরেকবার মিটমিট করে হাসলো আকশি।আকশির চোখ ফিহার দিকে পরতেই দেখলো ফিহা ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।আকশি মাথা নিচু করে ফেললো।ফিহার দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকলে নিজের চোখ সারানো দায় হয়ে যেতো।কোন ঘোরে চলে যেত সে।কারণ আকশি ফিহাকে যত দেখে তত মুগ্ধ হয়ে যায়।আকশিকে হাসতে দেখে ফিহা মনে মনে বেশ রাগলো।

ফিহাঃ দাঁড়াও ব্যাটা।আমাকে দেখে হাসি আসছে।আমিও তোমার হাসি বের করছি।কি ভেবেছো মশাই?আমি কিছু বলতে পারবো না।হু হু আমিও দেখিয়ে দিবো ফিহা কি চিজ?আমাকে কি তোমার জোকার লাগে?এবার তোমার ভূল আমি ভেঙে দিচ্ছি মহাশয়।নয়তো আমার নামও ফিহা নয়।(মনে মনে)

ফিহা চোখ বন্ধ করে একটা বড় করে নিঃশ্বাস ছারলো।নিজেকে মনে মনে শক্ত করছে।একজন ক্লায়েন্ট বলে উঠলো
—প্লিজ মিসেস আকশি চৌধুরী আপনি কিছু বলুন।
ফিহাঃ আসালামু আলাইকুম। আমার পরিচয় তো আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার সাহেব বলেই দিয়েছেন।তাই নতুন করে আমি কিছু বলতে চাইনা।
আদিয়াতঃ দয়া করে ম্যাম, আপনার নামটা যদি বলতেন?
ফিহাঃ আমি মিসেস চৌধুরী। আপাতত আমার এখন কোন নাম নেই। আমি এই নামেই সবার কাছে পরিচিত হতে চাই। আপনারা আমাকে মিসেস চৌধুরী বললেই আমি খুশী হবো।এবার ফেরা যাক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়।আমি প্রথমে আমাদের প্রযেক্টের ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি।

ক্লায়েন্টদের মধ্যে থেকে একজন বললো
—ম্যাম আমাদের চট্টগ্রামের প্রযেক্টের ব্যাপারে কিছু বললে ভালো হতো।কারণ সেখানেই আমদানি রপ্তানি করতে হলে অনেক বিপত্তিতে পড়তে হয়।

ফিহাঃ ওকে মিস্টার। আমরা তাহলে সে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি।আমি প্রথমে আমাদের কোম্পানির মেইন টপিক মানে আমদানি, রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি কি সেটাই বলি।যদিও আপনারা সবাই সেটা জানেন।আমরা বিদেশ থেকে যে পণ্যটা কিনি সেটা হলো আমদানি।আর বিদেশিদের কাছে যে পণ্যটা বিক্রি করি সেটা রপ্তানি। মেইনলি যেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয় সেটা হলো পুনঃরপ্তানি।এটা হলো আমরা বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানি করে আমাদের দেশে এনে সেটাকে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করাকে পুনঃরপ্তানি বলে।

মধ্যে বয়স্ক এক ক্লায়েন্ট বললো
—ম্যাডাম আমাদের কোম্পানিগুলো যথেষ্ট পরিশ্রম করেও লোকসানের মুখে কেন পরে সেটা যদি বলতেন?

ফিহাঃবিদেশ থেকে একটা পণ্য আমদানি করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের সেই পণ্যটা কিনতে হয়।তারপর যে ভেজাল সেটা হলো জাহাজে পণ্য আনায়ন।আমাদের কে পণ্যটা আনতে হলে অবশ্যই জাহাজের সাহায্য নিতে হবে।কিন্তু বিপর্যিত পরিবেশে পণ্য আনায়নটা অনেক টাফ হয়ে যায়।যে কোন সময় ঝড়ের মুখে পরার সম্ভাবনা আছে।তবে যদি সেটা হয় বাংলা মাসের বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যমাসের সময়।তাছাড়া বিভিন্ন ঝুঁকি, সমস্যা তো আছেই। কোন রকম সাগর পারি দিলে দেশে আসার পর বিভিন্ন খরচ।ডকচার্জ,কুলিভাড়া,গুদামভাড়া,পরিবহণ খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক খরচ পরে যায়।তারপর বিভিন্ন শুল্ক তো আছেই। অবশেষে যখন আমরা পণ্যটা আমাদের হাতে পাই। যদি এর মাঝে একটু দেরী হয়ে যায় তাহলে আমরা যথা সময়ের পণ্য তথা সময়ে বাজারে ছারতে পারি না।কারণ পণ্য হাতে পাওয়ার পর আরো বেশ কয়েক ধাপে মোড়কিকরণ,সিল লাগানো ইত্যাদি পেরিয়ে ভোক্তাদের জন্য উপযুক্ত করে বাজারে ছারতে হয়। আমরা যদি যথাসময়ে আমাদের পণ্য বাজারে ছারতে না পারি তাহলে বেশ বড়সড় একটা লোকসান গুনতে হয় আমাদের। এম আই রাইট??

সবাইঃ ইয়েস ম্যাম।
ফিহাঃ আমাদের আমাদানির পুরো ক্ষেত্রে বেশ নজরদারি করেও আমরা লোকসানে পরি।যার কারণ বিপ্রতিকূল পরিবেশ।শুধুমাত্র পণ্যটা পৌঁছাতে কিছু দিন দেরী হওয়ার কারণে আমরা কোটি কোটি টাকার লোকসানে পরে যাই।সেটা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। নিশ্চয়ই উত্তর পেয়ে গেছেন আপনারা।

মেয়ে ক্লায়েন্টঃ ম্যাম এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?

ফিহাঃ গুড কোশ্চেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো আমদানি করার আগে সঠিক পণ্য যাচাই করে, বাজর চাহিদা বিবেচনা করে, পণ্যটির সিজন শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে সকল পদক্ষেপ নিয়ে আমদানি করা।তাছারা বিকল্প হিসেবে ইনসুরেন্সে তো আছেই। তারপরও সঠিক পদক্ষেপে আমরা আমাদের কোম্পানিকে কোটি কোটি টাকার লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে পারি।

একজন যুবক বয়সের ক্লায়েন্ট বললো
—ম্যাম আমরা কি রপ্তানির ক্ষেত্রেও সেম পদক্ষেপ গ্রহণ করবো??

ফিহাঃ মোটেও না।আমদানি ও রপ্তানি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও দুটো কথার ভিন্ন অর্থ,ভিন্ন পদক্ষেপ।রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের পণ্যকে আকর্ষণীয়,টেকসই,সবদিক থেকে বেটার হতে হবে।নয়তো বিদেশিরা আমাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না।কিন্তু পুনঃরপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা ঠিক দুটো পদক্ষেপের দিকে খেয়াল রাখবো। তাহলে আমাদের কাজগুলো সঠিক হবে।এবং বিদেশিরা আমাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী ও উৎসাহী হবে।সেজন্য সবার প্রথমে আমাদের পণ্যের মান ভালো হতে হবে।পণ্যের মানের ওপর ডিপেন্ড করে কোম্পানির লাভের মুখ দেখবে নাকি লোকসানের মুখ। আমি আশা করি আপনাদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি।

সবাই একসাথে হাতে তালি দিয়ে উঠলো।ফিহা নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায় সম্পর্কে এত কথা সে কি করে বললো?তারপর একে একে সবাই যার যার প্রোজেক্ট বুঝিয়ে দিতে লাগলো।কিন্তু আদিয়াত ও আকশি অবাক হয়ে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সুন্দর করে গুছিয়ে ফিহা কথা বলতে পারবে সেটা ওরা দুজনের কেউ ভাবতে পারে নি।আকশি তো কখন থেকে দুই হাতের ওপর নিজের গাল রেখে এক ধ্যানে ফিহার দিকেই তাকিয়ে আছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here