মিসেস চৌধুরী পর্ব ৮+৯

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_08
#Writer_NOVA

রাতে একসাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে ফিহা ও আনিস চৌধুরী।দুপুরের মিটিংয়ের কথা আবদুল সাহেবের কাছ থেকে শুনেছেন তিনি।ফিহা যে প্রথম বার দূর্দান্ত বক্তব্য রেখে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, সেটা শুনে আনিস চৌধুরী বেশ খুশি।
নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটেছে তার।তিনি সবদিক থেকে পারফেক্ট একটা মেয়ে চুজ করেছেন।অনিয়াকে একটা মেয়ে সার্ভেন্টে কোলে নিয়ে ঘুরছে।টেবলেট অনিয়ার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।

আনিসঃ আজকের মিটিং কেমন হলো বউমা?

ফিহাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা।আমি ভাবতেই পারিনি এতো কথা বলতে পারবো।পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া এতো কথা কি করে বললাম তাতে আমি নিজেই কনফিউশানে পরে গিয়েছিলাম।প্রথম প্রথম তো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আবদুল চাচা ভয় ভেঙে দিলো।উনি যদি আজকের মিটিংয়ে না থাকতো তাহলে আমি ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করে ঐখানেই চিৎপটাং হয়ে মরে পরে থাকতাম।

আনিসঃ ভয়ের কিছু নেই বউমা।আমি জানি তুমি পারবে।তাই তো তোমাকে আমি চয়েজ করেছি।তোমার চোখে আমি জেতার অদম্য শক্তি দেখেছি।যা আর কোন মেয়ের চোখে দেখতে পাইনি।তোমাকে যে শক্ত হাতে সবকিছুতে সামলে নিতে হবে।

ফিহাঃ বাবা আপনি চিন্তা করবেন না।আপনি শুধু রেস্ট নিন।আপনার ধারণা আমি একদিন অবশ্যই সত্যি করবো।

আনিসঃ মা রে আমায় মাফ করে দিও।নিজের স্বার্থের জন্য তোমাকে কতগুলো দায়িত্বে বেঁধে রেখেছি।আফিস,সংসার,মেয়ে আরো কতকিছু তোমায় সামলাতে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করো বউমা আমি যে নিরুপায়।আমার হাতে এছাড়া আর কোন পথ ছিলো না।আমি এই বয়সে কখনো এতকিছু সামলাতে পারতাম না।টেনশনে টেনশনে শেষ হয়ে যেতাম।তখন আমার দিদিভাই টার কি হতো?সেটা ভেবেই তোমাকে নিয়ে এসেছি।আমি যে তোমার মাঝে মাতৃত্ব দেখেছি।
ওর মা হওয়ার আগ্রহ, যোগ্যতা দেখেছি।ওর জন্য তোমার মনে মায়া, ভালোবাসা, স্নেহ খুঁজে পেয়েছি।তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে আমাদের সাথে জরিয়ে ফেলেছি।

ফিহাঃ আমি কিছু মনে করি নি বাবা।বরং অনেক খুশি হয়েছি।কারণ আমি নিজের বাবা ও মেয়ে পেয়েছি। পেয়েছি সুন্দর একটা ছোট পরিবার।এখন আমিও সবার কাছে মাথা উঁচু করে বলতে পারবো আমারও একটা পরিবার আছে।আমারও মাথার ওপরে বাবা নামক ছায়া আছে।আমি এতিম নই।না,আমি এখন সত্যিই এতিম নই। আমার একটা পরিচয় আছে। আনিস চৌধুরীর মেয়ে আমি।আমি এখন মিসেস চৌধুরী। আপনি আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন।সবার কাছে পরিচয় করে দিয়েছেন আমি অনিয়ার মা। এটাই তো আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া বাবা।

আনিসঃ বউমা তুমি দেখো, একদিন তুমি অনেক বড় হবে।আমি দোয়া করে দিলাম তোমাকে।তবে বউমা কখনও অন্য পাঁচজন মেয়ের মতো আমাকে ও আমার নাতনিকে দূরে ঠেলে দিয়ো না।তাহলে যে সে দিনই হবে আমার শেষ দিন।

ফিহাঃ ছি:ছি:বাবা এসব কি বলেন?এখন যা আছে সবই আপনাদের।আমি তো শুধু আপনাদের আমানতদার।আপনাদেরকে এবং অফিস দেখে রাখার দায়িত্ব আমার।এগুলো আগে আপনাদের ছিলো, সারাজীবন আপনাদেরি থাকবে।আমার এগুলো চাই না।আপনি ও আমার মেয়ে আমার পাশে থাকলেই চলবে।আর কিছু লাগবে না আমার।আপনি মনে হয় আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না,তাই না বাবা।আমি সঠিক বলেছি তো??

আনিসঃ না বউমা সেটা নয়।আমি শুধু তোমার কাছে অনুরোধ করছি।আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি।কারণ আমি তোমাকে টাকার কথা বলে আনতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি তা প্রত্যাখান করো।যখনি অনির কথা বললাম তখন তুমি রাজী হলে।অনিয়াকে লালন-পালনেও তুমি কোন টাকা নিতে রাজী হলে না।
এমনকি আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলে তুমি কখনও মাতৃত্ব টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে না। ঠিক তখনি বুঝে গেছি তুমি কি রকম মেয়ে। তরপরও ভয় হয় বউমা।কখন মানুষের মন পাল্টে যায়।সেটাতো বলা যায় না।জানো বউমা,মানুষের মনকে আকাশের রংয়ের সাথে তুলনা করা হয়।কারণ দুটোই খনে খনে রং বদলায়।

ফিহাঃ আপনি আমাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন বাবা।আমি আপনাকে বাবা বলে ডেকেছি। কোন মেয়ে কি তার বাবার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে?কেউ যদি করেও থাকে,আমি কখনও আমার বাবার সাথে বৈঈমানী করবো না।নিজের সর্বস্ব দিয়ে আপনাদের সাহায্য করবো।এখন যে সবকিছু আমার।যেমন আপনি,অনিয়া।আপনি তো আমাকে অধিকার দিয়েই দিয়েছেন।তাই তো আমি বলতে পারি আমার বাবা,আমার মেয়ে।এর থেকে বেশি আমার মতো এতিম মেয়ের আর কি লাগে বলুন তো?

আনিসঃ একদম কথায় কথায় এতিম বলবে না।আমি ও অনি কি মারা গেছি।যেদিন আমরা থাকবো না সেদিন বলবে তুমি এতিম।আমরা বেঁচে থাকতে কখনও নয়।তুমি আমার মেয়ে আর অনি তোমার মেয়ে।কথাটা মনে রেখো বউমা।

আনিস চৌধুরীর কথা শুনে চোখ খুশিতে দুটো চকচক করে উঠলো ফিহার।একটা এতিম মেয়ের এর কাছে এটা যে কতবড় খুশির সংবাদ সেটা শুধু মাত্র সেই জানে।আনিস চৌধুরীর চোখের আড়ালে ফিহা নিজের চোখের পানি মুছে নিলে।গাল বেয়ে দুই ফোঁটা পানি খুশির কারণে পরে গিয়েছিল। কিন্তু সে তো সাফান ছারা নিজের চোখের পানি আর কাউকে দেখায় না।তাই জলদী করে মুছে নিয়েছে।

খাবার শেষ করে ফিহা অনিয়াকে নিয়ে রুমে চলে গেল। কিছু সময় অনিয়াকে ঘুম পারানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো।কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা আর সফল হলো না।অনিয়া ওর মায়ের সাথে দুষ্টুমী করতে লাগলো।

ফিহাঃ কি হচ্ছে এগুলো মাম্মাম?তুমি ইদানীং ভীষণ ফাজিল হয়ে যাচ্ছো।মাম্মিকে জ্বালানোর ধান্দায় থাকো।খাবার খেতে গেলে আর ঘুমাতে গেলে তোমার দুষ্টুমী শুরু হয়ে যায়।এটা তো ঠিক কথা নয়।এরকম তো পঁচা মেয়েরা করে।তুমি কি পঁচা মেয়ে বলো?মোটেও না।তুমি তো আমার ভালো মেয়ে। আমার লক্ষ্মীসোনা,জাদুর কণা।তুমি যদি মাম্মিকে এভাবে জ্বালাতন করো তাহলে মাম্মি তো বিরক্ত হয়ে তোমাকে বকা দিবো।তখন কি তোমার ভালো লাগবে বলো। একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরো মানিক।তুমি জেগে থাকলে তো আমি ঘুমাতে পারবো না।সারাক্ষণ তোমার টেনশন হবে।আর কিছু সময় পর পর জেগে উঠবো।জলদী করে ঘুমিয়ে পরো।সকালে উঠে আমাদের আবার অফিসে যেতে হবে।সেটা কি তুমি ভুলে গেছো মাম্মাম??

খাটের কোণা থেকে টেবলেট উঠে এসে ফিহার পায়ের কাছে চুপটি করে বসে রইলো।একটু আগে তারও রাতের ডিনার হয়েছে। সারাদিন অনিয়াকে সময় দেয় বলে টেবলেট মহাশয়ের চোখেও রাতে ঘুম ভির করে।চাইলে অন্য কুকুরের মতো টেবলেটও সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাতে পারে।কিন্তু সেটা সে করে না।অনিয়া জেগে থাকুক বা ঘুমিয়ে সবসময় ওর দোলনার পাশে কিংবা ওর সাথে থাকবে।মনে হয় না সারাদিনে এক মিনিটের জন্যও চোখ দুটো লাগায় টেবলেট।

ফিহাঃ জানিস টেবলেট যতদিন যাচ্ছে ততই তোর,অনির আর বাবার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি।জানি না এই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারবো কি না।রাতে ঘুমের ঘোরে, সকাল ভোরে অনির মুখটা না দেখলে মনটা ছটফট করে।তোকে সকালের ব্রেকফাস্টে খুঁজে না পেলে মনে হয় কি যেনো একটা নেই নেই। বাবার সাথে রাতের খাবার না খেলে মনে হয় সারাদিন কিছু একটা বাকি পরে গেছে। যখন তোর মালিক আকশি আসবে তখন তো তার হাতে সব তুলে দিয়ে আমি চলে যাবো।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তখন ভালো থাকবো না রে।আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসবে।সেসব কথা ভাবলেই এখনি আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে।

একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো ফিহা।অনির মুখটা কি মায়াবী! এই মুখের হাসির জন্য সে শত কষ্ট করতেও রাজী আছে।কারণ সে যে এখন অনিয়ার মা।হোক সে জন্ম দেয়নি কিন্তু দায়িত্ব তো ওালন করছে।তাতেই ফিহা দাবী করতে পারে এটা ওর মেয়ে।টেবলেটও বেশ কয়েকবার কুই কুই করে শব্দ করে ফিহার সাথে ঘেঁষে বসলো।

ফিহাঃ মায়া জিনিসটা বড় অদ্ভুত। যার ওপর পরে যায় হাজার চেষ্টা করেও তার থেকে উঠানো যায় না।তোদের সবার ওপর আমার এই কয়েকদিনে এতো মায়া হয়ে গেছে যে আমার মনে হয় তুই, অনিয়া,বাবা সবাই আমার আপনজন।সবকিছু আমার, আমার মনে হয়।কোথা থেকে যেনো অধিকাটা পেয়ে যাই।আল্লাহ বাচ্চাদের জন্মের সাথে সাথে চেহারায় অনেক মায়া দিয়ে দেয়।যাতে করে মা-সহ সবাই বাচ্চার মায়ায় পরে যায়। তাহলে আমি কেন অনির মায়ায় পরবো না বলতো।যেখানে ও নিজেই জানছে আমি ওর মা।আমিতো দিনকে দিন শুধু ওর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি।আমি এটাও বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছি যে অনি আমার নিজের মেয়ে। আমার মনে হয় ও আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। এখন ওকে আলাদা করে বাঁচা বোধ হয় আমার সম্ভব নয় রে টেবলেট। আমি যে অনিকে সত্যি নিজের মেয়ে ধরে নিয়েছি।ও বোধ হয় আমাকে নিজের মা মনে করে।তাহলে আমি ওকে ছেড়ে কি করে যাই বলতো।

ফিহা হঠাৎ থেমে গেল।আজ সব কিছু টেবলেটের সাথে শেয়ার করলো সে।নিজের মনটা অনেক হালকা মনে হচ্ছে। টেবলেটও বুঝতে পেরে চুপটি করে ওর দিকে তাকিয়ে ওর মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে।ফিহা সেটা বুঝে টেবলেটের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
তারপর জোর খাটিয়ে কড়া গলায় বললো।

ফিহাঃ কোথাও যাবো না আমি তোদের ছেড়ে। বাকি জীবনটা আমি তোদের সাথেই কাটাতে চাই।এখন যে তোরাই আমার সব।

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে অনিয়াকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ফিহা।মনে হচ্ছে ফিহা ছেরে দিলেই কেউ অনিয়াকে ওর কাছে থেকে নিয়ে যাবে বহুদূরে। অনিয়াও মায়ের উষ্ণ পরশ পেয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।
#মিসেস_চৌধুরী
#Part_09
#Writer_NOVA

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে ব্যস্ত আকশি।আজকাল তার কিছুই ভালো লাগে না।অবশ্য দুদিন আগে ফিহাকে দেখার পর থেকেই এসব সমস্যা হচ্ছে। কেন জানি খুব শূন্য শূন্য লাগে জীবনটা।পড়াশোনায় ভীষণ ভালো ছিলো আকশি।সবসময় শুধু পড়া আর পড়া।যার কারণে কখনও মেয়েদের সময় দেওয়া তো দূরে থাক তাকানোর সময়টুকু হয়নি।ওর সমাবয়সীরা যখন মাঠে ফুটবল খেলছে কিংবা কোথাও বসে আড্ডা দিচ্ছে সেখানে আকশি পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে। যার কারণে ওর বন্ধুও তেমন ছিলো না।নবম শ্রেণিতে আদিয়াতের সাথে পরিচয়। আজও সেই বন্ধুত্ব অটুট আছে।বন্ধুর মতো বন্ধু একটা হলেই যথেষ্ট। দশটার প্রয়োজন নেই।

সবকিছুতে আকশির এখন ফিহাকে মনে পরে।হঠাৎ করে ফিহার হাসি হাসি মুখ মনে পরে যায়।ওর চাহনি,কথা বলার স্টাইল, মায়াবী চেহারা, সেই ইনসেন্ট ফেস সবকিছু যেনো ওর চোখে ভাসছে।নিজের মাথার পেছনের চুলগুলো মুঠ করে ধরে কয়েকটা ঝারা মারলো। তারপর মুচকি হাসলো।

আকশিঃ আমি বুঝতে পারছি না বারবার আমার ঐ মেয়েটার কথা মনে পরছে কেন?সবচেয়ে সুন্দর ছিলো ওর হাসিটা।আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাবো।কি ভাবছি আমি?ভাবনায়, কল্পনায়,স্বপ্নে সব জায়গায় শুধু ঐ মেয়েটা।ওর হাসির ঝংকার এখনো আমার কানে বাজছে।আমি যে কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছি না।এবার মনে হয় সত্যি কোন মেয়ের প্রেমে পরলাম।তাও মেয়েটার হাসি দেখে।

পাগলীরে তোর মুখের হাসিতে,
পরবো আমি প্রেমের ফাঁসিতে।
তুই কি আসবি দেখিতে??
আমায় একটু ভালবাসিতে।
পাগল করা তোর ঐ চাহনীতে,
আমি হাজারবারও পারিবো মরিতে
ভাবনার সাগরে ফেলে জল
শুধু একটিবার আসবি বল।
(লেখনীতেঃ নোভা)

নিজের মনে কবিতা আবৃত্তি করে আপন মনে হেসে উঠলো আকশি।নাহ্ সত্যি তাকে প্রেমের ভূতে ধরেছে।সেটা হলো ফিহার প্রমের ভূত।সেটাকে কি করে সামলাবে তা আকশি জানে না।এই দুই দিনে সারা দিন রাত ফিহার ওপর নজর রেখেছে সে।এতে করে আকশি ফিহার কোন বেড হেবিটতো পাইনি বরং আরো দূর্বল হয়ে পরেছে ।সবজায়গায় ফিহাকে দেখে,কোন মেয়ে কথা বললেই মনে হয় ফিহা কথা বলছে।এমনকি স্বপ্নে পর্যন্ত ফিহার হাসির শব্দ শুনতে পায়।তার মানে আমাদের আকশি মহাশয় পুরো দমে ফিহা নামক অসুখে অসুস্থ হয়ে পরেছে।ফিহার মিটিংয়ের শুরুতে ইনোসেন্ট ফেস মনে করে মিটমিট করে হেসে উঠলো আকশি।ঠিক তখনি ওর পাশে এসে দাঁড়ালো আদিয়াত।ভ্রু কুঁচকে আকশির দিকে তাকিয়ে আছে সে।অথচ আকশি দ্বীন-দুনিয়া ভূলে ফিহার ভাবনায় মগ্ন।আদিয়াত শেষে আকশিকে জোরে একটা ধাক্কা দিলো।ভাবনা থেকে ফিরে ওর দিকে তাকালো আকশি।

আকশিঃ কি হলো এভাবে ধাক্কা মারলি কেন?

আদিয়াতঃ পাগলের মতো হাসছিস কেন? আমি কয়েক মিনিট ধরে তোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ তুই কি জানি ভেবে নিজের মনে হেসেই চলেছিস।তোর কি হয়েছে বলতো?দুই দিন ধরে তোর মতি গতি আমার ভালো ঠেকছে না।

আকশিঃ ক ক কই আমার আবার কি হবে?আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।(আমতা আমতা করে)

আদিয়াতঃ এই তুই কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে।একদম মেয়েদের মতো ন্যাকামো করবি না।তোর ভাব-ভঙ্গি আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।সেদিন তোদের অফিস থেকে আসার পর থেকে তোর আচার-আচারণ কিছুই আমার সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।কি রকম কি রকম জানি করিস?

আকশিঃ আমি ঠিকই আছি।শুধু তোর মাথাই গিয়েছে।

আদিয়াতঃ এক মিনিট, এক মিনিট।তুই আবার প্রেমে পরিস নি তো।তোর মাঝে আমি প্রেমে পরার লক্ষ্যণ গুলো খুঁজে পাচ্ছি।

আকশিঃ এসব ফালতু পেচাল বাদ দিয়ে আমি যে কাজে পাঠিয়েছিলাম তার খবর বল।

আদিয়াতঃ ঐ মেয়েটা সম্পর্কে এতো কেন জানার আগ্রহ তোর?আমার কাছে ব্যাপারটা কি রকম জানি রহস্য রহস্য লাগছে।

আকশিঃ তোর রহস্য তোর কাছে রাখ।আর কাজের কথায় ফিরে আয়।সকল ইনফরমেশন জলদী করে দে।আমার পরবর্তী স্টেপ নিতে হবে।

আদিয়াতঃ দিচ্ছি দিচ্ছি। মেয়েটার ইনফরমেশনের জন্য মনে হচ্ছে তোর জানটা বের হয়ে যাচ্ছে।

আকশি বারান্দা থেকে চলে এলো।ওর পেছন পেছন আদিয়াতও রুমে ঢুকলো। আকশি সোফায় বসে ল্যাপটপ ওন করতে করতে বললো।

আকশিঃ বেশি বকবক না করে বলতো।
আদিয়াতঃ মেয়েটার নাম ফিহা।
আকশিঃ ফিহা,বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো।
(বিরবির করে)
আদিয়াতঃ কিছু বললি??
আকশিঃ না না কিছু বলি নি।তুই বলতে থাক।

আদিয়াতঃ ফিহা ছোট থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে। আপন বলতে এতিমখানার মানুষ। সাথে আছে ওর এক বেস্ট ফ্রেন্ড। পাবলিক ভার্সিটিতে নিজের খরচে পড়াশোনা করেছে।পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা টিউশনি করতো।তারপর ম্যানেজমেন্টে অনার্স পাস করে সেই এতিমখানায় বাচ্চাদের টিচার হিসেবে যোগ দেয়।

আকশিঃ হুম তারপর।বাবা কি করে চিনলো ফিহাকে?
আদিয়াতঃ প্রায় সময় আঙ্কেল মানে তোর বাবা, ফিহা যে এতিমখানায় চাকরী করতো সেখানে বাচ্চাদের জন্য পোশাক, খাবার নিয়ে যেতো।সেখানেই ফিহাকে দেখতে পায় আঙ্কেল। তার অনেক পছন্দ হয় ফিহাকে।ভাই-ভাবী মারা যাওয়ার পর অনিয়াকে লালন-পালন করা টাফ হয়ে যাচ্ছিলো।তাই আঙ্কেল ফিহাকে নিয়ে আসে।কিন্তু ফিহাকে কি পরিচয় দিবে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন তিনি। তখন তার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে।তিনি সবার কাছে প্রচার করে দেন ফিহা তোর স্ত্রী। অনিয়া তোর ও ফিহার সন্তান। আর তোদের দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এতে করে কেউ ফিহার দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারেনি,কেউ বাজে মন্তব্য করেনি।যেহেতু তুই দুই বছর লন্ডনে ছিলি তাই ব্যাপারটা কোন ঘোলাটে হয় না।সবাই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেয়।

আকশিঃ কিন্তু বাবা ওকে রাজী করালো কিভাবে?যতটা মনে হলো ফিহার টাকার কোন লোভ নেই।

আদিয়াতঃ তুই ঠিক ধরেছিস।ফিহাকে আঙ্কেল অনেক টাকা দিবো বলেছিলো।কিন্তু ফিহা সাফ সাফ মানা করে দেয়।সে নিজেকে মিথ্যা পরিচয়ে গড়তে পারবে না।কিছুতেই ফিহা রাজী হচ্ছিল না।কিন্তু অনির দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছে। অনিকে কোন টাকা ছাড়া লালন-পালন করার দায়িত্ব নেয় সে। আঙ্কেল অনিকে দেখে রাখার জন্য ফিহাকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিলো।ফিহা সেটা নিতে রাজী হয়নি।বরং আঙ্কেলকে সোজা সাপটা ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে সে মাতৃত্বকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবে না।বেচারী প্রথমে কোনকিছু তে রাজী হতে চাই নি।শুধুমাত্র অনির মুখেের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়েছে। ফিহা চায়নি অনিও ওর মতো এতিম হয়ে বেড়ে উঠুক।এই হলো ফিহার যাবতীয় বায়োডাটা।

আকশিঃ আই সি।তাহলে তো এবার মিসেস চৌধুরীকে একটু জ্বালাতন করাই যায়।দেখি চেষ্টা করে, মিথ্যে মিসেস চৌধুরীকে সত্যিকারের মিসেস চৌধুরী বানাতে।

মনে মনে কথাগুলো বলে টেডি স্মাইল দিলো আকশি।ওর মনে এখন শয়তানি বুদ্ধি এসে ভিড় করেছে।

আদিয়াতঃ মিটমিট করে হাসছিস কেন?
আকশিঃ সময় হলে জানতে পারবি।এখন আমি তোকে কিছু বলবো না।
আদিয়াতঃ তোর ভাব-সাব আমি কিছু বুঝছি না আকশি।আমায় এখন একটু বুঝিয়ে বলবি তোর মনে কি চলছে?
আকশিঃ আমি জানি না ওকে ভালবেসেছি কি না।তবে ওর জন্য আমি অন্য রকম কিছু ফিল করছি।আমি খুব জলদী সব ঠিক করে তোকে জানাবো আদিয়াত।(মনে মনে)
আদিয়াতঃ তুই হঠাৎ, হঠাৎ কোথায় হারিয়ে যাস বল তো?
আকশিঃ এক জায়গায় যেতে হবে তারাতাড়ি চল।
আদিয়াতঃ কোথায় যাবো?
আকশিঃ বেশি কথা বলিস না। গেলেই দেখতে পারবি।

ল্যাপটপ বন্ধ করে আদিয়াতকে টানতে টানতে কোথায় জানি নিয়ে গেলো আকশি।আদিয়াত বার বার ওকে জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাবে?কিন্তু আকশির একি উত্তর গেলেই দেখতে পারবি।আপাতত আকশির সাথে যাওয়া ছারা আদিয়াতের অন্য কোন উপায় নেই।

মন খারাপ থাকলেই ফিহা অফিসের কেবিনের আবছা সবুজ রঙের কাচের সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকে।অনিয়াকে নিয়ে আবদুল সাহেবে বাইরের বাগানে গিয়েছে। সাথে টেবলেটও যোগ দিয়েছে। ফিহার একা একা ভালো লাগছে না।হঠাৎ করে একটা ছেলে পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ছেলেটার হাতে নানা রংয়ের অনেকগুলো হার্ট শেইপ বেলুন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here