মিসেস চৌধুরী পর্ব ১০+১১

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_10
#Writer_NOVA

হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ব্যক্তিটার হাতে অনেকগুলো নানা রংয়ের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহার নাকে মন মতোয়ারা একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে।কেন জানি পারফিউমের ঘ্রাণটা নাকে আসতেই মুহূর্তে মনটা ভালো হয়ে গেল তার।ছেলেটা কানের কাছে মুখটা এনে লো ভয়জে বললো।

—Many many happy returns of the day.Happy birthday too you,my dear Mrs.Chowdhury.May Allah bless you.Now you are my sweet heart.Don’t wary dear I am always with you.Because you are only mine.Take care yourself.Allah Hafiz.❤️❤️

ফিহা এই ভয়েজটা সে আগেও কোথাও শুনেছে।কিন্তু কোথায় শুনেছে তাতো মনে নেই। চোখ ধরে থাকা ব্যাক্তিটা কে সেটা ফিহা জানে না।তবে নিজের চোখকে তার হাত থেকে ছুটাতেও ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটাই আজ এমন বিশেষ দিনে তাকে সর্বপ্রথম জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানালো।ফিহা নিজের মনের মাঝে অন্য রকম একটা ফিলিংস খুঁজে পাচ্ছে।
আস্তে আস্তে চোখের বাঁধন ঢিলে হয়ে এলো ফিহার।কিন্তু ফিহা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।বেশ কিছু সময় পর চোখ খুলে অবাক হলো ফিহা।কারণ ওর আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না সে। ফিহার অবাক সাত আসমানের চূড়ায় উঠলো যখন সে দেখলো দরজা ভেতর থেকে লক করা।সারা কেবিনের এদিক সেদিক মানুষটাকে খুঁজতে লাগলো সে।কিন্তু কাউকে দেখলো না।

ফিহাঃ আশ্চর্য কে ছিলে এখানে?আমার চোখ ধরেছিল কে?আমাকে জন্মদিনের উইশ করে গেল।এটা কি ভ্রম ছিলো।না,এমন টাতো হওয়ার কথা নয়।তাহলে কে এসেছিলো এখানে?তার লো ভয়েজটা আমার কাছে অন্যরকম কিছু মনে হলো কেন?যদি কেউ এসে থাকতো তাহলে গেলো কোথায়?এতো তাড়াতাড়ি তো যাওয়ার কথা নয়।আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি দরজাটা ভেতর থেকে লক করা।সে আসলো কি করে আর গেলোই কিভাবে?আমি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি।আমার মাথা ঘুরছে।কি হলো আমার সাথে?হঠাৎ করে কি ম্যাজিক হয়ে গেলো।আমার যে জন্মদিন সে জানলোই বা কি করে?

মাথায় হাত দিয়ে ডোভেনে বসে পরলো ফিহা।সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে গেছে তার।হঠাৎ টেবলের দিকে তাকাতেই ফিহার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেল।চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে অনেকগুলো রং-বেরঙের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহা প্রায় দৌড়ে সেখানে চলে গেল।একটা টকটকে লাল বেলুনে ছোট একটা চিঠির খাম।চিঠির খামটা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো।চিঠির ভাজ আস্তে আস্তে খুললো ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন। চিঠির মধ্যে লেখা ছিলো।

“This is only for you. My little surprise. You are my sweet heart dear.Because you are only me Mrs. Chowdhury.”

চিঠিটা হাতে নিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। একটু পরেই সব আগের মতো হয়ে যাবে।নিজের গায়ে চিমটি কেটলো সে।ব্যাথা পেয়ে মৃদু শব্দও করলো।কিন্তু এখনো ঘোর কাটেনি ফিহার।বুকের বা পাশটা সমান তালে ঢিপঢিপ শব্দ করেই যাচ্ছে। কে হতে পারে? এই চিন্তায় বিভোর সে।তার তো কোন বয়ফ্রেন্ডও নেই যে এভাবে হুট করে এসে উইশ করে যাবে।কিছু একটা ভেবে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলো ফিহা।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ ওর সামনে
একজন পিয়নকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো ফিহা।

ফিহাঃ এই যে শুনুন।
—জ্বি বলুন।
ফিহাঃ আমার কেবিন থেকে কি কাউকে বের হতে দেখেছেন?
—ম্যাম, আমি অনেক সময় ধরে এখানে আছি।কিন্তু আপনার কেবিনে কাউকে ঢুকতেও দেখিনি আবার বের হতেও দেখেনি।
ফিহাঃ তাহলে কি করে ভেতরে আসলো সে?
(বিরবির করে)
–কিছু বললেন ম্যাম??
ফিহাঃ না কিছু না।আপনি এখন আসতে পারেন।
—ওকে ম্যাম।
ফিহাঃ উনার কণ্ঠটাও এতো চেনা চেনা মনে হলো কেন?পুরো চেহারাও তো দেখলাম না।ক্যাপ পরা ছিলো বলে মুখটা দেখতে পায়নি।নিচের দিকে তাকিয়ে সব কথার উত্তর দিলো।অদ্ভুত লাগলো তো ব্যাপারটা।আমার চেহারার দিকে তাকালো না কেন?

নিজের মনে কথাগুলো বলে পেছন দিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো
ফিহাঃ আপনার সাথে আমার—–যাক বাবা, কোথায় গেলো?মাত্র তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। এই লোকটাও তো হাওয়া হয়ে গেলো।আমার সাথে আজ হচ্ছেটা কি?আজ সবকিছু অদ্ভুত, অদ্ভুত লাগছে।ভূতের পাল্লায় পরলাম নাকি আমি।

মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে কেবিনে ঢুকলো ফিহা।চেয়ারে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে পুরো অঙ্ক মিলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

সিঁড়ি বেয়ে খুব জলদী করে নেমে পরলো আদিয়াত।আরেকটু সময় থাকলে সে ধরা পরে যেতো ফিহার কাছে। আদিয়াতের গায়ে অফিসের পিয়নের পোশাক,মাথায় বিশাল বড় ক্যাপ।তখন ফিহা আদিয়াতকেই ডাক দিয়ে কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।আদিয়াত বুঝে যায় যে ফিহা ওর দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে। মানে সন্দেহ করছে।বেশ কয়েকবার ফিহা ওর মুখ দেখার জন্য উঁকি ঝুঁকিও মেরেছে।কিন্তু মুখ দেখতে পারে নি।

আদিয়াতঃ এই আকশির জন্য যে আমাকে আরো কত কিছু করতে হবে আল্লাহই জানে।আর এক মিনিট থাকলেই ধরা খেয়ে যেতাম।তারপর নির্ঘাত চোর ভেবে গণ ধোলাই দিতো।আকশিটা শেষ পর্যন্ত আমাকে ওদের অফিসের পিয়নের ড্রেসও পরালো।একবার ফিহার কেবিন থেকে নিচে নামুক ও।আজ ওর খবর আছে। আকশির একদিন কি আমার যতদিন লাগে।এই ছেলেটার কখন কি হয় আমি নিজেই বুঝি না।

আপন মনে কথা বলতে বলতে আদিয়াত অফিসের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তখনি পেছন দিক থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে এলো আকশি।ফিহাকে পেছন থেকে চোখ আটকিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আকশিই জানিয়েছে। আর আদিয়াতকে পিয়নের পোশাক পরিয়ে বাইরে পাহারা দিতে রেখে গিয়েছিলো।ফিহার রুমের দক্ষিণ দিকে একটা ছোট জানালা আছে। যেটায় কোন গ্রীল নেই।অবশ্য অনেক উচুতে থাকার কারণে গ্রীল বা কাচ লাগানোর প্রয়োজন মনে করেন নি আকশির বাবা।জানালা না বলে ছোট খুপরী বললেও ভূল হবে না।পাইপ বেয়ে উঠে সেই জানালা দিয়ে কেবিনে প্রবেশ করা যায়।তাই আকশি টুপ করে চোরের মতো সবার অগোচরে বেলুন নিয়ে ফিহার কেবিনে ঢুকে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিরে এসেছে।

আকশিঃ বাপ রে আরো কত কি যে করতে হবে?

শরীরের ধূলা ঝারতে ঝারতে আকশি কথাটা বললো।আদিয়াতের দিকে তাকাতেই দেখে আদিয়াত ওর দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।

আকশিঃ কি হয়েছে? চোখ দুটোকে এমন করে রেখেছিস কেন?মুখটাও তো পটকা মাছের মতো ফুলিয়ে রেখেছিস।

আদিয়াতঃ ইচ্ছে করছে তোর মাথাটা সামনের ঐ ইট দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতে।আমাকে শেষ পর্যন্ত তুই তোদের অফিসের পিয়ন বানিয়ে ফেললি।

আকশিঃ ওহ এবার বুঝেছি তোর মুখটা পটকা মাছের মতো ফুলানো কেন?তুই পারমানেন্টভাবে পিয়নের চাকরীটা চাচ্ছিস ভাই। দেখ আমি তো এখন এই কোম্পানির মালিক নই তাই আমাকে এসব বলে লাভ হবে না।তুই বরং এই ব্যাপার নিয়ে ফিহার সাথে কথা বল।ফিহা চাইলে তোকে দয়া মায়া করে পিয়নের পোস্টে চাকরী দিতে পারে।ও যদি নাও দেয় তাহলে তুই কান্না করিস না।আমি যখন মালিক হবো তোকে তখন অবশ্যই পিয়নের পোস্টে একটা চাকরী দিবোই দিবো।(এক চোখ মেরে)

এমনিতে আদিয়াত আকশির ওপর রেগে বোম হয়ে ছিলো।আর এখন আকশির কথাগুলো ঠিক আগুনে ঘি ঢালার মতো ওর মনে কাজ করলো।

আদিয়াতঃ শালা,তোর জন্য এতকিছু করছি আর তুই আমাকে কি না তোর কোম্পানিতে পিয়নের চাকরী দিবি।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।আমার বাপের টাকা কি কম পরছে নাকি?তোর অফিসে আমাকে পিয়নের চাকরী করতে হবে।আমি আমাদের এতো বড় কোম্পানি ছেরে তোর পিছনে সময় নষ্ট করছি।আর তুই কি না বলছিস আমাকে পিয়নের চাকরী দিবি।যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর।তুইও তো এই প্রবাদ বাক্যের মতো করলি।যা তোর সাথে কোন কথা নেই। (রেগে)

আদিয়াত রেগে চলে যেতে নিলে আকশি ওর হাত ধরে ফেলে।আকশি মিটমিট করে হাসছে।একটু বেশি রাগানো হয়ে গেছে আদিয়াতকে।এখন নিজেদের রাগ মিটিয়ে না নিলে পরে আরো দুরত্ব বেড়ে যেতে পারে।সেটা ভেবে আকশি বললো।

আকশিঃ ধূর আমি তো মজা করছিলাম।আর তুই সত্যি ভেবে নিয়েছিস।তুই না থাকলে আজ আমি সবার আগে ফিহাকে বার্থ ডে উইশ করতে পারতাম না।

আদিয়াতঃ ফিহার যে আজ বার্থ ডে সেটা তুই জানলি কি করে?

আকশিঃ ঐদিন মিটিংয়ে ফাইল চেক করে জানতে পারি।ওর নামের জন্য ফাইল ওপেন করলেও ওর নাম জানতে পারি নি।কিন্তু তখন বার্থ ডে মনে রাখি।তাই আজ উইশ করে দিয়েছি।এমনভাবে উইশ করেছি যে আজ সারাদিন ওর সাথে কি হয়েছে সেটা ভেবে কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবে না।

আদিয়াতঃ আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি??
আকশিঃ হুম বল।
আদিয়াতঃ তুই কি ফিহাকে ভালবাসিস?
আকশিঃ হুম।(অন্য দিকে তাকিয়ে)
আদিয়াতঃ সত্যি 😲।
আকশিঃ হুম😐।
আদিয়াতঃ ভাই তাহলে অবশেষে তুইও কারো প্রেমে পরলি।আমারতো বিশ্বাস হচ্ছে না।
আকশিঃ তোর বিশ্বাসের জন্য আমি কি করতে পারি?
আদিয়াতঃ ধূর এটাতো কথার কথা।আমার এমনি তোর ওপর সন্দেহ হচ্ছিল। তুই যখন ফিহাকে দালানের পাইপ বেয়ে বেলুন নিয়ে গিয়ে উইশ করে এলি তখনি আমি সিউর হয়ে গেছি।
আকশিঃ হবিই তো।তুই তো আবার প্রেমে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিস।
আদিয়াতঃ একটা কথা।তুই যে গ্যাস বেলুন কোমরের সাথে বেঁধে ওপরে উঠলি তখন যদি বাতাস বইতো তাহলে তোর অবস্থা কি হতো ভাব তো।তোকে তো বেলুনসহ উড়িয়ে নিয়ে যেত।অবশ্য তোকে তো আকাশে তুলতে পারবে না।তোর যা বডি।
(মুখ টিপে হেসে)
আকশিঃ খুব মজা নিচ্ছিস।আমার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিলো।কি করে যে উঠলাম তা ভেবে এখন আমার হাত-পা কাঁপছে।
আদিয়াতঃ বলতে হবে তোর ভালবাসার পাওয়ার আছে।যে ছেলে একতলার থেকে দোতালায় উঠতে চাইতো না সে পাইপ বেয়ে চার তালায় উঠে গেছে। ভাবা যায় এগুলো।ভালবাসার মানুষের জন্য কতকিছু করে আসলি।সবে তো শুরু। আরো কত কি যে দেখতে হবে রে।

—-কে কে রে ঐ খানে কথা বলে কে??

দারোয়ানের গলার স্বর পেয়ে দুই বন্ধু পরিমরি করে উল্টো দিকের গেইট দিয়ে দৌড়।তাদের আর পায় কে?নিজের অফিসের দারোয়ানের ধাওয়া খেয়ে আকশি এখন আপাতত রাস্তা দিয়ে দিশাহারা হয়ে দৌড়াচ্ছে।

অন্য দিকে ফিহা চিঠির খামের এক কোণা ঠোঁট দিয়ে ধরে রেখে ভেবেই চলেছে।কে দিতে পারে এটা?মানুষটাই বা কে ছিলো?সবকিছু তার কাছে এখন ধোঁয়াসা, ধোঁয়াসা লাগছে।আজ সারাদিন তার এই কথা চিন্তা করতে করতেই কাটবে।
#মিসেস_চৌধুরী
#Part_11
#Writer_NOVA

সারাটা দিন ভাবনার মাঝে ডুবে চলে গেল ফিহার।কোন কেক কাটা বা পার্টি করেনি।নিজের জীবন একটা গোলক ধাঁধায়। সবকিছু এখন ঘোরের মাঝে মনে হয়।টেবলেটের গলার বেল্ট একহাতে ধরে আরেক হাতে অনিকে কোলে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করলো ফিহা।সোফায় আরাম করে পায়ের ওপর তুলে বসে আছে সাফান।ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো ফিহা।
সাফানকে সে খেয়াল করে নি।হঠাৎ সাফানের গলা পেয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালো।

সাফানঃ শুভ পয়দা দিবস ফিহু,বান্দরনী,শয়তাননি।
জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ফিহাঃ যেই না জীবন তার আবার জন্মদিন।
(তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

কথা না বাড়িয়ে ফিহা উপরে উঠে গেল।সাফান বেশ বুঝতে পেরেছে ফিহা ওর সাথে রাগ করে আছে।থাকাটাই স্বাভাবিক।এমন একটা দিনে সবাই চায় তার প্রিয় মানুষটার সাথে কাটাতে।কিন্তু সাফান আজ সারাদিন খুব ব্যস্ত ছিলো যার কারণে ফিহার জন্মদিনের কথা প্রায় ভুলতেই বসেছিলো।হঠাৎ বেকারীর সামনে দিয়ে আসতে গিয়ে কেক দেখে মনে পরে যায়।তাই দেরী না করে চৌধুরী বাড়ি চলে এলো।আসার সময় ফিহার খুব প্রিয় একটা জিনিস নিয়ে এসেছে।যেটা ওর প্যান্টের পকেটে আছে।

সাফানঃ মহারাণী মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে আমার ওপর। এখনি যেতে হবে নয়তো আরো রাগবে।আজকে যে আমার কি হবে আল্লাহ জানে?আল্লাহ আমার পিঠ আজ সাথে থাকবে না।পিঠে আজ বস্তা বেঁধে আসলে ভালো হতো।আল্লাহ, আমার মতো মাসুম একটা কিউট বাচ্চাকে ফিহার মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিও।

আল্লাহের নাম নিতে নিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলো সাফান।ফিহা অনিয়াকে দোলনায় খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই টেবলেট সাফানকে দেখে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো।

সাফানঃ কি রে তুই কি শুরু করলি?চুপ কর মেরি বাপ।তুই এভাবে চিৎকার, চেঁচামেঁচি করলে সবাই আমাকে চোরভেবে গণপিটুনি দিবে।দাঁড়া তোকে আমি ঘুষ দিচ্ছি।

সাফানের পকেট হাতিয়ে একটা ছোট বিস্কুটের প্যাকেট পেলো।কি মনে করে জানি কিনেছিলো।এখন কাজে লাগছে।বিস্কুটের প্যাকেট খুলে দুটো বিস্কুট ছুঁড়ে মারলো সাফান।টেবলেট এগিয়ে এলো বিস্কুটের দিকে।
সাফানঃ তোমাদের কি করে হাত করতে হয় সেটা এই সাফান জানে😎।ভাগ্যিস,বিস্কুটের প্যাকেট ছিলো।

কিন্তু টেবলেট বিস্কুটের সামনে গিয়ে কিছু সময় ঘ্রাণ শুকলো।তারপর বিস্কুট দুটোকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে সাফানের দিকে আসতে শুরু করলো।সেটা দেখে সাফানও উল্টো দিকে দৌড়।সাফান তো জানে না টেবলেট যেই সেই কুকুর নয় ভি.আই.পি কুকুর। যার কারণে সে অচেনা মানুষের খাবার মুখে দেয় না। টেবলেট সাফানের পিছু নিলো।যদিও সাফান কুকুর ভয় পায় না।কিন্তু টেবলেটকে ওর কেন জানি অনেক ভয় করে।ওর বিশ্বাস টেবলেট ওকে কাছে পেলে কামড় দিবে।সারা বাড়ি দৌড়াচ্ছে সাফান।তার পেছন পেছন টেবলেট ঘেউ ঘেউ করছে।

সাফানঃ বাপ, এবারের মতো ছেড়ে দে।এই কানে ধরছি আর কখনও তোর সামনে আসবো না।এভাবে দৌড়ালে আমার শক্তি সব ফুরিয়ে যাবে।এবার তো থাম রে।ফিহু কই তুই? এবারের মতো বোইন তোর কুত্তার থেকে আমাকে বাঁচা।

কিন্তু টেবলেট ওর কোন কথায় গলছে না।হিংস্রভাবে ওর পিছনে ধাওয়া করছে।আসলে সারাদিন ফিহার মন খারাপ ছিলো।যার কারণে টেবলেটের সাথে কোন কথা বলেনি।যাতে করে টেবলেটের মনও ভীষণ খারাপ।এখন সাফানকে দেখে সে চোর ভেবেছে।তাই ওর পিছু নিয়ে সারাদিনের রাগ কমাবে।

সাফানঃ ফিহা কোথায় তুই? আমাকে বাঁচা বোন।আমি আজকে শেষ। টেবলেট আজ ওর সব দাঁত আমার ওপর প্রয়োগ করবে।তারপর আমাকেই বস্তা বস্তা টেবলেট গিলতে হবে। ফিহু?????

ফ্রেশ হয়ে ফিহা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ডেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনি এখনো খেলনা নিয়ে একা একা খেলছে।ফিহা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তোয়ালেটা বেডে রাখলো।অনিয়ার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো।অনি ওর মাকে দেখে খুশি হয়ে হাত দুটো ফিহার দিকে বাড়িয়ে দিলো।ফিহা অনিকে কোলে তুলে নিলো।তখনি ওর কানে সাফানের চিৎকার ভেসে এলো।

ফিহাঃ এরকম করে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছে কে?গলাটা সাফানের মতো লাগছে।টেবলেট গেল কোথায়?(একটু ভেবে)এই রে টেবলেট আবার সাফানকে চোর ভেবে দৌড়ানি দিচ্ছে না তো।গিয়ে দেখে আসি তো।

অনিয়াকে কোলে নিয়ে এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো ফিহা।
ফিহাঃ যা ভেবেছিলাম তাই হলো।টেবলেট আজ সাফানকে আচ্ছা শিক্ষা দিয়ে দিবে।

সাফানের কান্ড দেখে ফিহার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়। সারা ড্রয়িং রুমে চক্কর কাটছে সাফান।ওর পিছনে পিছনে ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড়াচ্ছে টেবলেট। ফিহাকে দেখে সাফান চিৎকার করে বলে উঠলো।
সাফানঃ বোইন আমারে বাঁচা। আমি আজকে শেষ।আর দৌড়াতে পারতাছি না।ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁত না কেলিয়ে তোর এই কুত্তা সরা আমার পেছন থেকে।
ফিহাঃ একদম ঠিক আছে।এবার বোঝ ঠেলা।এটায় তোর শাস্তি। শয়তান একটা।
সাফানঃ ফিহু ওকে সরা।আমাকে একটু পর হসপিটালে ভর্তি পাবি।(দৌড়াতে দৌড়াতে)
ফিহাঃ টেবলেট চলে আয়।টেবলেট ওর নাম সাফান।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

এই কথাটা পুরো ম্যাজিকের মতো কাজে লাগলো।টেবলেট চুপচাপ সাফানের পিছু ছেড়ে ফিহার সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। সাফান হাঁটুতে দুই হাত রেখে হাঁপাতে লাগলো।অবাক চোখে টেবলেট ও ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে সাফান।

সাফানঃ শালার কুত্তা। তোকে আমি দেখে নিবো। শালার শয়তান।আমি এতখণ ধরে এতো কিছু বললাম তোর গায়ে লাগলো না।শুধু তোর পায়ে ধরার বাকি ছিলো।তাও আমার ওপর তোর দয়া হলো না।আর ফিহু যেই তোকে সরতে বললো সেই সরে গেলি।তোকে শালা একদিন একলা পেলে যে আমি কি করি তুই দেখে নিস।আজকে আমাকে দিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা করালি না তোকে দিয়ে সেদিন হয় কাবাডি খেলবো নয়তো তোকে ফুটবল বানাবো।

সাফানের কথা শুনে ফিহা হাসি কিছুতেই থামাতে পারছে না।পেট ব্যাথা হয়ে গেছে ওর।অনিয়াকে কোলে নিয়ে পেট ধরে সোফায় বসে পরলো ফিহা।
সাফানঃ হাসো হাসো বেশি করে হাসো। কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।সত্যি আমি যদি তোর এই কুত্তাকে একদিন পাই তাহলে ওর খবর আছে।শালা,আমায় আজ যে দৌড়ানি দিয়েছে তা আমি জীবনেও ভুলবো না।
ফিহাঃ সাফান ভাই আমার, কেমন লাগলো আজ🤭?
(মুখ টিপে হেসে)
সাফানঃ তুই তো এখন মজা নিবিই।আমার ইচ্ছে করছে এটাকে উল্টো করে চার পা ধরে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসতে।
ফিহাঃ টেবলেটের কোন বোন নেই। তাই তুই ওর দুলাভাই হতে পারছিস না।থাকলে নিশ্চয়ই তোর মতো একটা ষাঁড়ের সাথে বিয়ে দিতাম।
সাফানঃ মানে কি বলছিস তুই🤨?
ফিহাঃ মানেটা খুব সিম্পল। তুই যেভাবে বারবার টেবলেট কে শালা বলছিস আমার তো মনে হচ্ছে ওর কোন বোন থাকলে তাকে বিয়ে করে নিতি😂।
সাফানঃ তুই আবার আমাকে নিয়ে মজা করছিস।একগ্লাস পানি দে ফিহু।
ফিহাঃ আমি পারবো না।নিজেরটা নিজে এনে খা।
সাফানঃ কেন?
ফিহাঃতোর সাথে আমি কোন কথা বলবো না।তুই সারাদিনে আমাকে একবার কলও দিসনি।
সাফানঃ বোন তোকে আমি সব বলছি।এবার জলদী করে আমাকে একগ্লাস পানি খাওয়া।
ফিহাঃ আনতে পারি একটা শর্তে।
সাফানঃ আবার কি শর্ত।এমনিতে তোর কুত্তার ধাওয়া খেয়ে আমার সব এনার্জি লস হয়ে গেছি। আবার তুই কোন শর্ত দিবি।তুই যে আমার হাল বেহাল করবি সেটা আমি ভালো করেই জানি।
ফিহাঃ আচ্ছা তুই বকবক কর।আমি পানি এনে দিবো না।ভেবে দেখ কোনটা করবি?
সাফানঃ বল কি শর্ত?
ফিহাঃ এখন ১০০ বার কান ধর উঠবস করবি তুই। যদি রাজী হোস তাহলে পানি এনে দিবো।নইলে নিজেরটা নিজে নিয়ে আয়।
সাফানঃ হাতি ফাঁদে পরলে চামচিকায়ও লাথি মারে।এমনিতে তোর টেবলেট আমায় বেশ নাকানি-চুবানি খাইয়েছে।আবার তুই আমাকে শাস্তি দিতে চাইছিস।
ফিহাঃ এটা আমাকে সারাদিন ফোন না দেওয়ার শাস্তি। 😎😎
সাফানঃ একগ্লাস পানির জন্য এমন করলি না।মনে রাখিস তুই। আল্লাহর কাছে ঠেকা থাকবি তুই। হাশরের ময়দানে আল্লাহ তোকে পানি দিবো না।হু হু মনে রাখিস কথাটা।এই সাফানের কথা কখনও ভূল হয় না।
ফিহাঃ কি বললি তুই? তোর ছোট বেলার এই অভ্যাসটা এখনো যায় নি।দাঁড়া তোর একদিন কি আমার একদিন।

ফিহা অনিয়াকে কোলে নিয়েই সাফানের পিঠে দুড়ুম দাড়ুম তাল ফেলতে লাগলো।সাফানকে মারতে দেখে অনিয়া খিলখিল করে হাসছে।
সাফানঃ বোন এবার আমাকে ছেড়ে দে।আমি টেবলেটের হাতে যে ধাওয়া খেয়েছি তাতে হাঁপিয়ে উঠেছি।এখন তুই যদি এই মাসুম বাচ্চাটাকে এভাবে মারিস তাহলে মরেই যাবো।তোরা কি শুরু করলি বলতো।প্রথমে এই টেবলেট তারপর তুই। আহ্ ফিহু লাগছে।এবারের মতো মাফ কর বোন।এই জীবনে ২য় ভূল হবে না।যত কাজ থাকুক তোর জন্মদিনে আমিই প্রথম উইশ করবো।হু হু তুই দেখিস।
ফিহাঃ মনে থাকবে তো।
সাফানঃ আলবাত থাকবে।আজকে যেই ধাওয়া খেয়েছি সেটা কি ভুলতে পারি।এই ধাওয়ার কথা মনে হলেই তোর জন্মদিনের কথা মনে পরে যাবে।
ফিহাঃ মনে রাখিস কথাটা। যদি ভুলে যাস তাহলে তোকে আমি আবার টেবলেটের ধাওয়া খাওয়াবো।
সাফানঃ ছাইরা দে বোইন,কাইন্দা বাঁচি। এমন ভূল কখনও করিস না তুই ।আমার আজ ঢের শিক্ষা হয়েছে।

ফিহা হাসতে হাসতে ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে এলো।সাফানের হাতে দিতেই ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললো।ফিহা গ্লাসটা ডাইনিং টেবিলে রাখতে গেল।সাফানের চোখটা টেবলেটর ওপর পরতেই রেগে বললো।
সাফানঃ তোকে একদিন হাতে পাই শুধু। আজ শরীরে শক্তি নেই বলে বেঁচে গেলি।যেদিন তোকে হাতে পাবো সেদিন তোর বাপ,দাদা চৌদ্দ গুষ্ঠির নাম ভূলিয়ে দিবো। নয়তো আমার নামও সাফান হাসান নয়।

টেবলেট মুখ গুজে চুপচাপ সোফার পাশে বসে আছে।টেবলেট মনে হয় বুঝতে পারলো সাফান ওকে বকছে।তাই মুখ তুলে সাফানকে দুই বার ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ করে আবার মুখ গুঁজে রাখলো।
সাফানঃ আবার ঘেউ ঘেউ করিস।দাঁড়া তোকে তে–

কথাগুলো বলে সাফান আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো। একসময় টি-টেবিলে থাকা ফুলদানি হাতে নিয়ে টেবলটকে ছুরে মারতে নিলো।ফুলদানি হাতে নিয়ে উঁচু করে যেই ছুঁড়ে মারবে সেই ফিহা চলে এলো।
ফিহাঃ কি করছিলি তুই?
সাফানঃ কই কিছু না তো।আমিতো ফুলদানিটা হাতে নিয়ে দেখছিলাম কি রকম দেখতে।
ফিহাঃ 🤨🤨
সাফানঃ অমন করে তাকাস না।আমি সত্যি বলছি।
ফিহাঃ তোকে কি বলেছিলাম?
সাফানঃ এবারের মতো মাফ করে দে।আর জীবনে ভুল হবে না।
ফিহাঃ আমি মানছি না।নে শুরু কর।
সাফানঃ কানে ধরে উঠবস করতেই হবে😔।
ফিহাঃ হুম 😎।
সাফানঃ না করলে হয় না।
ফিহাঃ তুই যদি এখন ১০০ বার কান ধরে উঠবস না করিস তাহলে তোর সাথে কথা বলবো না।আর তুই ভালো করে জানিস আমি যা বলি তাই করি।
সাফানঃ আজ সকালে যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম কে জানে?আমার দিনটাই খারাপ গেলো

সাফান চুপচাপ কানে ধরে উঠবস করা শুরু করলো। যদি এই শাস্তি মেনে না নেয় তাহলে নিশ্চয়ই ফিহা কথা বলবে না।আর ফিহা ওর কথা না বললে তো ওর কিছু ভালো লাগে না।সোফায় বসে মিটমিট করে হাসছে ফিহা।আনিস চৌধুরী এই সময় রুম থেকে বের হয় না।তাছারা তার রুম সাউন্ড প্রুফ করা।যার কারণে তিনি এতো হুলস্থুলের কিছুই জানেন না।

সাফানঃ আর পারছি না।এবারের মতো মাফ করে দে।তুই যদি এখন আমাকে এভাবে শাস্তি দিস তাহলেতোর জন্য যে গিফট এনেছি তা কিন্তু দিবো না।
ফিহাঃ কি এনেছিস?(খুশি হয়ে)
সাফানঃ আমার শাস্তিটা মাফ করে দে।তাহলে দিব।
ফিহাঃ(একটু ভেবে) আচ্ছা যা মাফ করে দিলাম।এবার আমার গিফট দে।
সাফানঃ চোখ বন্ধ কর।

ফিহা চোখ বন্ধ করতেই সাফান ওর মাথায় একটা গোলাপি কালার কি জানি কি ফুল হবে,সেটা মাথায় পরিয়ে দিলো।পকেটে এত সময় থাকার কারণে অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। কাঁচা ফুল এত সময় থেকেছে এই তো বেশি। ফিহা খুব খুশি হলো।

সাফানঃ সরি বেলি ফুলের মালা পাই নি।তাই এটা গিফট করলাম।তোর নিশ্চয়ই পছন্দ হয়নি আমার এই সামান্য উপহার।এখন তো তোর অনেক টাকা।আমার মতো গরীবের এই সামান্য উপহার তোর পছন্দ হবে না।
ফিহাঃ একটা চড় দিবো।আমি কি বলেছি আমার পছন্দ হয়নি।খুব সুন্দর হয়েছে।আমার ভাই ভালোবেসে আমার জন্য একটা চকলেট আনলেও সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

ফিহার কথা শুনে সাফানের মুখে হাসি ফুটলো।ফুলের কারণে ফিহাকে খুব সুন্দর লাগছে।মা ও মেয়ের দুজনের পরনে হালকা গোলাপি কালার ড্রেস।ফিহার মাথায় গোলাপি ফুল আর অনিয়ার মাথায় ছোট গোলাপি ফুলের রাউন্ড বেন।ফিহাকে অনেক সুন্দর লাগছে।অনিয়ার মুখে ছোট বেবী চুষনি।এটা থাকার কারণে অনিয়া এত সময় শান্ত ছিলো।ওদের দুজনকে এভাবে দেখে অনেক খুশি হলো সাফান।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here