“বিশ্বাস করো দাদী আমি ইচ্ছে করে যাইনি পাএপক্ষের সামনে জেঠী আম্মা বলেছে ট্রে নিয়ে যেতে”। (কান্না করতে করতে কথাটি বললো পরশি তার দাদীকে)
“তোকে লিমা যেতে বললো আর তুই চলে গেলি।মিথ্যা কথা বলছিস কেন তুই পরশি।বার বার তোর জন্য ইয়ানার বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তুই ইচ্ছে করে এমনটা করছিস।তোর এই রূপে আজ আমি গরম পানি দিব।
গরম পানির কথা শুনে পরশি ভয় পেয়ে গেল।পরশি দাদীর পা ধরে বললো,,,,
“দাদী আর এমন ভুল হবে না আমার। আমায় মাপ করে দেন”। (কান্না করতে করতে বললো পরশি)
পিছন থেকে আহাদ সিকদার পরশির রুমে ডুকতে ডুকতে বললো,,,,
— মা ছেড়ে দেও ওকে। দু’দিন পর আবার ইয়ানাকে পাএপক্ষ দেখতে আসবে। আজ যারা এসেছিল খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম তাদের ফ্যামিলি তেমন ভালো না।যা হবার ভালোই হয়েছে।
আহাদ সিকদার পরশিকে মায়ের পায়ের কাছ থেকে ওঠিয়ে বললো,,,,
“আজ তোর ভার্সিটির প্রথম দিন।যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়”।
“ঠিক আছে জেঠু”। (পরশি)
এইসব দেখে মিসেস শিখা(পরশির দাদী) রেগে পরশির রুম থেকে চলে গেল।
[পরশির বাবা-মা কেউ নেই। গাড়ি এক্সিডেন্টে পরশির বাবা-মা মারা যায়। পরশির বয়স তখন তিন বছর ছিল। পরশিরা যৌথ ফ্যামিলিতে বসবাস করতো।বাবা-মা মরার পর মিসেস শিখা (পরশির দাদী) পরশিকে সহ্য করতে পারেনা। মিসেস শিখার দু’ছেলে।বড় ছেলে আহাদ সিকদার আর ছোট ছেলে সৈয়দ সিকদার। ইয়ানা আহাদ সিকদারের মেয়ে। ইয়ানা তেমন সুন্দরী না হওয়ায় বার বার বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আর তার জন্য প্রত্যেকবার দায়ী করে দাদী পরশিকে।ইয়ানা ভীষন অহংকারী।দাদীর কাছে পরশির নামে উল্টাপাল্টা কথা বলে পরশিকে মার খাওয়ায় আর অনেক বাজে কথা শুনায়। পরশিকে আহাদ সিকদার আর তার স্রী মিসেস লিমা সিকদার ছাড়া আর কেউ ভালোবাসে না।]
সবাই টেবিলে বসে নাস্তা করছে।
পরশি গোসল করে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে আসতেই আহাদ সিকদার পরশিকে বললেন,,,,,,
“পরশি মা এইদিকে আয় আমি তোকে খাইয়ে দিব।আমার পাশে এসে বস”।
“বাবা ওর কি হাত নেই খাওয়ার জন্য খাইয়ে দেওয়ার দরকার কি” । (ইয়ানা)
“ইয়ানা চুপ থাকো” । (আহাদ সিকদার)
“জেঠু আমার ক্ষুধা নাই আমি যাই”। (পরশি মন খারাপ করে বললো)
“একটা থাপ্পড় মারব বস বলছি।না খেলে ভার্সিটি যাওয়ার দরকার নেই”। (আহাদ সিকদার)
পরশি আর কিছু না বলে চেয়ার টেনে আহাদ সিকদারের পাশে বসলো। আহাদ সিকদার পরশিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর পরশি টলমল চোখে আহাদ সিকদারের দিকে তাকিয়ে আছে। এইসব দেখে মিসেস শিখা উঠে চলে গেলেন খাবারের টেবিল থেকে।
“এই মানুষটা আমায় নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেয় না”। (পরশি মনে মনে বললো)
“হয়ে গেছে এবার যাও।সাবধানে যাবে”। (আহাদ সিকদার)
“ঠিক আছে জেঠু”। (পরশি)
আহাদ সিকদার পরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“সৈয়দ আজ তুই বেঁচে থাকলে তোর মেয়েকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।আমি যথাসম্ভব তোর মেয়েকে তোর মতো করে দেখার চেষ্টা করছি।তারপরও বাবার অভাব থেকে যায়”। (আহাদ সিকদার)
_____
রিকশায় করে ভার্সিটি যাচ্ছে পরশি।তার স্বপ্নের ভার্সিটিতে(রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) চান্স পেয়েছে। মনে আলাদা এক শান্তি লাগছে পরশির। ভাবনার মাঝে পরশির চোখ গেল রাস্তার মাঝখানে পরশি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,,,,,
“মামা রিকশা থামান”।
“কি হইছে আপা ? (রিকশাওয়ালা)
“আরে থামান বলছি”। (পরশি)
রিকশাওয়ালা রিকশা থামাতেই পরশি রিকশা থেকে নেমে পড়লো।
রাস্তার মাঝ বরাবর দু’ কি তিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে বসে বসে কান্না করছে। একটি লাল রঙের গাড়ি দ্রুত গতিতে মেয়েটির কাছে আসছে।
পরশি দৌঁড়ে এসে মেয়েটিকে সরিয়ে ফেললো মাঝরাস্তা থেকে।পরশি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
“আশ্চর্য মেয়েটির বাবা-মা কি মেয়েটিকে এখানে ছেড়ে চলে গেল নাকি।নাকি আমার মতো মেয়েটির কেউ নেই। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না”। (পরশি)
মেয়েটি কান্না করতে করতে বলছে,,,,,
“আম্মু যাব আম্মু যাব”।
পরশি কি করবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটির কান্না দেখে পরশির খুব খারাপ লাগছে।
ঠিক তখনই একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে পরশির সামনে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা কান্না করতে করতে বের হলো।
“সিফা আম্মু আমার” ।
বলেই মহিলাটি মেয়েটিকে পরশির কোল থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসল।
“তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ মা আমার মেয়েকে বাঁচানোর জন্য”। (মহিলাটি কান্না করতে করতে বললো)
“আন্টি আপনার মেয়ে রাস্তা মাঝমাখে কিভাবে আসলো? (পরশি)
“মা আমাদের অনেক শএু তারাই আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসে এখানে রেখে গেছে। আমায় ফোন দিয়ে হুমকি দিয়েছে। আর আমার মেয়েকে একটু পর গাড়ি চাপা দিবে এটাও বলেছে।আচ্ছা এখন যাই পরে তোমার সাথে কথা বলব”।
“ঠিক আছে আন্টি সাবধানে যাবেন”। (পরশি)
“সত্যি মানুষ কত নিষ্ঠুর একটা বাচ্চা মেয়েকে মারতে ও কলিজা কাঁপলো না”। (পরশি)
রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখেছে।
“সত্যি এখনকার যুগে ও এমন মেয়ে আছে যে নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে বাচ্চা মেয়েটাকে বাঁচালো”। (রিকশাওয়ালা মনে মনে বললো)
পরশি রিকশায় ওঠে বললো,,,,,
“মামা চলেন” ।
_____
বিশ মিনিট পর ভার্সিটির সামনে রিকশা থামলো।পরশি রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা টাকা দিতে যাবে তার আগেই রিকশাওয়ালা বলে উঠলো,,,,,
“আপা টাকা লাগবে না”।
পরশি জোর করে রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে ভার্সিটির গেইটে পা রাখলো।পা রাখতেই পুরো শরীর হালকা কাঁপুনি দিয়ে উঠলো পরশির।
পরশি গেইট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,,,,,,
“হেই সুন্দরী এদিকে আসো” !!
‘
চলবে…….
#মিস্টার__সিনিয়র
#সূচনা_পর্ব
®ফিহা আহমেদ
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন।পাঠক-পাঠিকাদের ভালো রেসপন্স ফেলে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]