#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১৬
®ফিহা আহমেদ
জোভান বাড়ি এসে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বাড়িটা ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। জোভানকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিহা জোভানের কাছে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস স্বর্ণা জোভানের হাত ধরে জোভানের রুমে গেল।
“কি হলো মম হঠাৎ এইভাবে নিয়ে এলে যে ,,,,
“বেশি কথা না বাড়িয়ে সেরোয়ানিটা পড়ে নে”। (মিসেস স্বর্ণা)
মায়ের কথায় জোভান অবাকের ওপর অবাক।মম এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেন?
“মম আজ বাড়ি এইভাবে সাজাচ্ছো কেন? আজ কি কোনো বিশেষ দিন? (জোভান)
“সেরোয়ানিটা পড়ে তৈরি হয়ে নে দেরি হয়ে যাচ্ছে”। (মিসেস স্বর্ণা)
“আজব তো আমার কি বিয়ে নাকি যে আমি বরের মতো সেরোয়ানি পড়তে যাব”। (জোভান কিছুটা রেগে বললো)
“স্টপ জোভান।আমি যা বলছি তাই কর।আর হ্যাঁ আজ তোর বিয়ে।কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ তৈরি হয়ে নে”। (মিসেস স্বর্ণা)
“ইম্পসিবল” (জোভান চিৎকার দিয়ে বললো)
“পসিবল। তোকে পারতেই হবে জোভান। তুই যদি এই বিয়ে না করিস পুরো ফ্যামিলি মৃত্যুর মুখে পড়বে। জেদ না করে তৈরি হয়ে নে। তুই যদি কথা না শুনিস তাহলে আমায় আর মা বলে ডাকবি না”। (মিসেস স্বর্ণা)
বলে মিসেস স্বর্ণা কাঁদতে কাঁদতে জোভানের রুম থেকে বের হয়ে গেল।
জোভান ধপ করে নিচে বসে পড়লো।চুলগুলো টেনে ধরলো।রাগে জোভানের মাথায় ব্যথা শুরু হলো।
“না আমার মিষ্টি পরীকে আমি সেই ছোট বেলায় কথা দিয়েছিলাম আমি তাকে চৌধুরী বাড়ির বউ করে নিয়ে আসব।এইদিকে মম ও পাগলামি করছে।আর আমার পরশির কি হবে।ওকে ছাড়া আমার দম বন্ধ বন্ধ লাগে।কিছু একটা করতে হবে।এভাবে আমি আমার পরশিকে হারাতে পারব না।নিশ্চয়ই এই বিয়ের পিছনে কোনো রহস্য আছে।মম যে বললো আমি বিয়ে না করলে সবাই মৃত্যুর মুখে পড়বে”।
_____
মিসেস স্বর্ণা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কান্না শুরু করে দিলো।
“আমায় মাপ করে দিও মিতালি আমি তোমার মেয়ে পরশিকে আমার বাড়ির বউ করতে পারব না।তোমাদের কথা রাখতে পারিনি।আমার যে হাত-পা বাঁধা। তোমার মেয়েকে বাড়ির বউ করলে আমার পুরো ফ্যামিলি মেরে ফেলবে ওই লোকটা।আমায় মাপ করে দিও সৈয়দ ভাই”।
(ছোট থেকেই জোভান আর পরশির বিয়ে হবে বলে ঠিক ছিল।কিন্তু একটা এসে ঝড় সবকিছু তছনছ করে দিল।)
জিহা দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে ,,,,,
“আম্মু দরজা খুলো কথা আছে তোমার সাথে”।
মিসেস স্বর্ণা চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দিল।
“আম্মু তুমি এমনটা করতে পার না।ভাই একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসে।তার সাথে ভাইয়ের বিয়ে দেও।ওই অসভ্য মেয়েটার সাথে ই ভাইয়ের বিয়ে দিতে হবে তোমায়”। (জিহা কিছুটা রেগে বললো)
কথা শেষ হতেই জিহার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মিসেস স্বর্ণা। মিসেস স্বর্ণা রাগী দৃষ্টিতে জিহার দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,
“বড়দের মাঝে কথা বলতে এসে না। নিজের রুমে যাও”।
“আম্মু ,,,,, (জিহা)
জিহা কিছু বলতে যাবে মিসেস স্বর্ণা আবার ধমক দিলেন জিহাকে। জিহা গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে সেখান থেকে বের হয়ে ভাইয়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
_____
“ভাই” (জিহা)
জোভান মাথা ওপরে তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে জিহা টলমল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। জিহা নিজের ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল।
“ভাই কান্না করছে।তার মিস জুনিয়রের জন্য কান্না করছে। ভাইকে কখনো তেমন কাঁদতে দেখিনি।ছোট বেলায় বাবা একবার মেরেছিল তখন অনেক কান্না করতে দেখেছি ভাইকে।আজ ভাই তার মিষ্টি পরীর জন্য কান্না করছে। আমি যদি ভাইকে সাহায্য করতে পারতাম”। (জিহা জোভানের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে)
জোভান দ্রুত চোখের পানি মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে ,,,,,
“কিছু বলবি জিহা” ।
“বাহ্ ভাই তুই তো ভালো অভিনয় করতে পারিস।তা কার জন্য কান্না করা হচ্ছে”। (জিহা)
“আরে কিছু না।তুই যা এখন আমায় একা থাকতে দে”। (জোভান)
“তুই একা থাকতে চাস বললেই হলো নাকি।আমি তোর বোন জিহা কি করতে আছি।আমি তোকে সাহায্য করব তুই কষ্ট পাইছ না ভাই”। (জিহা)
জিহার কথায় জোভান অ/বা/ক হলো।
“এই পিচ্চি নাকি আমায় সাহায্য করবে”। (জোভান জিহার দিকে তাকিয়ে কথাটি ভাবলো)
“এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুন ভাইয়া”। (জিহা)
“(………………………..)”
“বুঝলি কি করতে বললাম”। (জিহা)
“কিন্তু মম যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে”। (জোভান)
“তুই যা ভাই আমি এইদিকটা সামলে নিব”। (জিহা)
“পারবি তো পিচ্চি ,,,,, (জোভান)
“আমি তোর বোন ভাই আমায় পারতে ই হবে”৷ (জিহা)
জোভান হেসে জিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
_____
“হ্যালো কে বলছেন ? (পরশি)
“মিস জুনিয়র দ্রুত গেইটের সামনে আসো।আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য”। (জোভান)
“আসছি” (পরশি)
পরশি গায়ে চাদর জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
°
“হঠাৎ ডাকলেন কেন ? (পরশি)
জোভান কোনো কথা না বলে পরশির হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে আসলো।
“কি হলো বলুন এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
“সময় অনেক কম পরশি দ্রুত গাড়িতে উঠে বসো”। (জোভান)
“কিন্তু ,,,,, (পরশি)
জোভান পরশির দুই কাঁধে হাত রেখে পরশির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো ,,,,
“আমায় বিশ্বাস করো ?
পরশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
“তাহলে কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ো”। (জোভান)
পরশি আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো। জোভান গাড়ি স্টার্ট দিল।
_____
চৌধুরী বাড়িতে ই বিবাহ হচ্ছে। অরিনের সাথে জোভানের বিবাহ। দুই পক্ষ দুই দিকে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝখানে সাদা পর্দা দেওয়া।জোভান আর অরিনের
বিবাহ শুরু হলো।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আগে
মেয়েকে কবুল বলতে বললো।অরিন দেরি করলো না সাথে সাথে কবুল বলে দিল। অরিনকে সাথে সাথে কবুল বলতে দেখে জিহা মনে মনে বলে উঠলো ,,,,,
“কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা। কাজি কবুল বলতে বললো তো হুর হুর করে বলে দিল।কয়েক মিনিট পরে ও তো বলতে পারতো কবুল।বিয়ে পাগল নির্লজ্জ মেয়ে”।
এরপর ছেলেকে কবুল বলতে বললো।ছেলে কবুল বলার সাথে সাথে সবাই চমকে উঠলো।অরিন সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। অরিন দৌঁড়ে পর্দা সরিয়ে ছেলের সামনে দাঁড়ালো।ছেলেটার মাথার টুপি থেকে কাপড় সরিয়ে দিতেই দু’পা পিছিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো ,,,,,
“রিহান তুই” ।
বলেই অরিন মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
এইদিকে মিসেস স্বর্ণা পাথর হয়ে গেলেন নিজের ছেলের জায়গায় অন্য কাউকে দেখে।জিহা মায়ের পাশে বসে আছে চুপ করে। মাকে কিভাবে স্বান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না।
ঠিক তখনই বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো জোভান।জোভানকে দেখে মিসেস স্বর্ণা ধীর পায়ে ছেলের সামনে এসে জোরে থাপ্পড় মারলো জোভানের গালে।মায়ের হাতের থাপ্পড় খেয়ে জোভান বাম গালে হাত দিয়ে টলমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।
‘
চলবে…..
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
‘
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]